Mukta carita Raghunath Das Goswami Books

Mukta carita Raghunath Das Goswami Books

Mukta carita |Raghunath Das Goswami Books 


Mukta carita Raghunath Das Goswami Books

 শ্রীশ্রী রঘুনাথদাসগোস্বামী পাদ বিরচিত "মুক্তাচরিত"
মূল শ্লোক ও বঙ্গানুবাদ 
বৈষ্ণব শাস্ত্র মন্দিরের পক্ষ থেকে আবির্ভাব চক্রবর্তী (অর্জুনসখা দাস) কর্তৃক অনুবাদিত ও প্রকাশিত।
প্রথম প্রকাশ গৌরপূর্ণিমা ২০১৯

Mukta carita  Raghunath Das Goswami Books: Dedication

                             Mukta carita  Raghunath Das Goswami Books: Dedication
এই গ্রন্থরত্নটি আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সঙ্ঘ  ইসকন প্রতিষ্ঠাতা আচার্য্য কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরনারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভূপাদের করকমলে উৎসর্গীকৃত।

 Mukta carita Raghunath Das Goswami Books : Srila prabhupadas quotes
 Mukta carita Raghunath Das Goswami Books : Srila prabhupadas quotes

     গোস্বামী গ্রন্থ অধ্যয়ন বিষয়ে শ্রীল প্রভূপাদ
আমাকে সমস্ত পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত, ও বহু শাস্ত্র যা গৌড়ীয় বৈষ্ণব আচার্য্য গন মুখ্যত রূপ, সনাতন, জীব এই ষড়গোস্বামী গন দ্বারা রচিত শাস্ত্র গ্রন্থ অনুবাদ করতে হবে (দীননাথ কে পত্র জুলাই ১৯৭৫)
সকলের উচিত কোন পবিত্র তীর্থ স্থানে অবস্থান করে বৃন্দাবনের ষড়গোস্বামী গন দ্বারা রচিত শাস্ত্র গ্রন্থ শ্রবণ ও কীর্তন করতে সকল সময় ও শক্তি ব্যায় করা।  (শ্রীমদভাগবতম তাৎপর্য্য ১/৬/১৩)
প্রকৃতপক্ষে বৃন্দাবন যাওয়া র তাৎপর্য্য এই যে ষড়গোস্বামী গনের আশ্রয় নেওয়া, ভক্তিরসামৃতসিন্ধু, বিদগ্ধমাধব, ললিতমাধব ও অন্য যে সকল গ্রন্থ তারা রচনা করেছেন তা পাঠের মাধ্যমে। (চৈতন্যচরিতামৃত তাৎপর্য্য আদি ৮/৩১)

Mukta carita Raghunath Das Goswami Books : Full Text and bengali translation
                         
                              মুক্তা চরিত
            নমঃ শ্রী গান্ধর্বিকা গিরিধরাভ্যাম
কন্দর্প কোটি রম্যায় স্ফুরদ ইন্দিবর ত্বিষে
জগন্মোহনলীলায় নমো গোপেন্দ্র সূনবে।।১
সদ্য প্রস্ফুটিত নীল পদ্মের মত যার রূপ, মদনের রূপের কোটি গুন সুন্দর , যিনি নানান লীলায় জগতবাসী কে মুগ্ধ করেন , সেই গোপকূলরাজ নন্দের পুত্র কে বন্দনা করি।
কার্য্য বিকার্য্য খেলাব্দৌ মুক্তানাং মজ্জিতাত্মনোঃ
মিথো জয়ার্থিনোর বন্দে রাধা মাধবয়োর্যুগম।।২
মুক্তা ক্রয় বিক্রয়ে র খেলা রূপ লীলাসমুদ্রে নিমজ্জিত হয়ে একে অপর কে হারাতে উল্লসিত শ্রী শ্রী রাধা কৃষ্ণ যুগল কে বন্দনা করি।
নিজাম উজ্জ্বলিতাং ভক্তি সুধাম অর্পয়িতুং ক্ষিতৌ
উদিতং তং শচীগর্ভব্যোম্নি পূর্ণং বিধূম ভজে।।৩
যিনি নিজ পদে উজ্জ্বল ভক্তিরস দান করতে শচী গর্ভরূপ আকাশে উদিত হয়েছেন সেই পূর্ন চন্দ্রের বন্দনা করি। চন্দ্র উদিত হয়ে স্নিগ্ধ কিরনে যেমন ক্ষিতি আলোকিত করে তেমন গৌরচন্দ্রের আবির্ভাবে জগতবাসী উন্নত উজ্জ্বল ব্রজরসে স্নাত হয়েছ।
নাম শ্রেষ্ঠং মনুমপি শচীপুত্রম অত্রস্বরূপং
শ্রীরূপম তস্যাগ্রজম উরু পুরীং মাথূরীং গোষ্ঠবাতীম
রাধাকুন্ডং গিরিবরম অহো রাধিকা মাধবাশাং
প্রাপ্তো যস্য প্রার্থিতকৃপয়া শ্রী গুরুং তাং নতোস্মি।।৪
  যার কৃপায় সকল নামের মধ্যে শ্রেষ্ঠ শ্রী হরিনাম মহামন্ত্র , শচীসূত গৌরাঙ্গ, স্বরূপ দামোদর প্রভূ, রূপ গোস্বামী, ও তার অগ্রজ ভ্রাতা সনাতন গোস্বামী মথুরা মন্ডল, ব্রজের গোষ্ঠ,(ব্রজমন্ডল) রাধাকুন্ড, গিরি গোবর্ধন ও রাধামাধবের বিভিন্ন সেবা পাওয়ার আশা ইত্যাদি পূরণ হয়েছে সেই শ্রীগুরুদেবকে প্রনাম করি।
হরি চরিতামৃত লহরীম বৃন্দা বিপিনাম্বু রাশীম্ভূতাম
রসব্দ বৃন্দার্কগণ পরমানন্দায় সন্তনূমঃ।।৫
সমু্দ্র যেমন অসংখ্য তরঙ্গে পরিপূর্ণ ব্রজভূমি বৃন্দাবনে তেমন অসংখ্য কৃষ্ণের লীলা। আর সেই লীলারসিক ব্রজবাসী বৈষ্ণব গনকে প্রনাম করে তাদের আনন্দবর্ধনের জন্য শ্রীহরিরলীলা বিস্তার রূপে বর্নন করছি।
একদা কিঞ্চিনমাত্র শ্রুত পূর্ব বৃত্তান্তয়া সত্যভাময়া কৃষ্ণঃ সাকূতং পৃষ্ঠঃ।।৬
লতাস্তা মধুরাঃ কস্মিন জায়ন্তে ধন্যনিবৃতি।
নাথ মৎ কঙ্কন ন্যাস্তম যাসাম মুক্তাফলং ফলম।। ৭
একবার দেবী সত্যভামা মুক্তাচরিত লীলা সম্পর্কে লোক পরম্পরায় কিছু শুনেছিলেন তাই তা বিশদে জানতে অত্যন্ত আগ্রহের সাথে শ্রীকৃষ্ণ কে জিজ্ঞাসা করলেন হে নাথ আমার হাতের কঙ্কনে যে মুক্তা গুলি রয়েছে সেগুলি কোথা থেকে এলো, শুনেছি মুক্তালতা গাছে এরকম মুক্তা হয়, কোথায় এই মধুর লতাবলী পাওয়া যায়?
ততস্তদ বৃতান্ত স্মরনাৎ কৃষ্ণঃ স্বান্তরগ্লানির বহির্বিহস্যাহ।।৮
গতঃ স কালো যত্রাসিত মুক্তানাং জন্ম বলিষু
বর্তন্তে সাম্প্রতং তাসাং হেত্বাঃ শুক্তি সম্পূটাঃ।।৯
মুক্তালতালীলার কথা স্মরন করে কৃষ্ণ অন্তরে বিহ্বল হয়েও বাইরে আনন্দ প্রকাশ করে বললেন সত্যা একসময় মুক্তালতা গাছে মুক্তা হত। কিন্তু এখন কেবল মাত্র শুক্তিতেই মুক্তা পাওয়া যায়।
ততস্তদ অপূর্বম্ শ্রুত্বা স বিশেষ শ্রবণোৎকন্ঠিতয়া তয়া বাধম আম্রেদিতঃ কৃষ্ণঃ পুনর আহ।
এই আশ্চর্য্য ঘটনা শুনে সত্যভামা আগ্রহান্বিত হয়ে বারবার কৃষ্ণ কে বলতে লাগলেন বিশদে পুরো কাহিনী তাকে বলতে, কৃষ্ণ তখন বলতে লাগলেন
একদা কার্তিকে মাসি গোকুলে গোবর্ধন গিরৌ দীপ মালিকা মহোৎসব আসিৎ।
তত্র সর্বো জনো বিচিত্র নেপথ্য সামগ্রীণাম্ সংস্কারায় সাধনায় চ পরমাশক্তো বভূব।
গোপাস্তু স্বাম্ স্বাম্ ভূষয়ন্তোপি  বিশেষতঃ গবাদি পশূনাম্ প্রসাধনার্থম উদ্যুক্তা আসন।
গোপ্যাঃ কীল প্রসাধিত সদনা আত্মনাম্ ভূষণার্থম্ নানলঙ্কার সংস্কার সাধন পরা বভূবুঃ।
একবার কার্তিক মাসে গোবর্ধনের কাছে গোকুল গ্রাম বাসী রা দীপাবলী উৎসবের জন্য আয়োজন করছিল। সকলে নিজের নিজের পূজার্চনের দ্রব্যাদি সংস্কার ঘর সাজানো পোশাকাদি বেশভূষা প্রস্তুত করাচ্ছিল গোপগন গোরুদের সাজাচ্ছিল ও গোপীরা তাদের শৃঙ্গার কক্ষে কে কি গয়ণা পড়বে ঠিক করছিল।
রাধা তু মাল্যহরণাখ্য সরস তিরোপান্ত মাধবী চতুঃ শালিকায়াম্ স্ব সখী সমুদায়েন পরমোত্তম মুক্তাভির্বিবিধ ভূষণানি রচয়িতুম আরেভে।
রাধারানী ও তার সখীগন রাধাকুন্ডের কাছে মাল্যহারী কুন্ডের তীরে এক চতুঃশালায় মুক্তোর গয়না দিয়ে কে কবে কি সাজগোজ করবে তার প্রস্তুতি করছিলেন,
ময়া চ বিচক্ষন ইতি যথার্থ নাম কীর কুমার মুখতস তন নিশম্য সকৌতুকম্ তত্র গত্বাতিপ্রেমাস্পদস্য হংসী হরিনীতি নাম্নো ধেনু যুগলস্য ভূষণৌৎসুক্যেন তাসাম্ সকাশে মৌক্তিকানি প্রার্থিতানি।।
আমি সে কথা আমার বিচক্ষন নামের যোগ্য নামা বুদ্ধিমান শুকের থেকে জানতে পেরে অত্যন্ত আগ্রহের সাথে সেখানে গেলাম।
সেই মুক্তা দিয়ে আমার হংসী ও হরিনী নামে দুটি গাভীকে সাজাতে কিছু মুক্তা চাইলাম।
ততঃ সুবিবিধ বৈদগ্ধ্য পরিমল পরিলসিত সামি নিমিলিত বাম নয়ন নীলোৎপল দলাঞ্চলেন সাবহেলনম ইব মনাগেব মাম অবলোক্য মুনি ব্রত জতু মুদ্রিত হসিত হীরকানর্ঘ্য মহা রত্ন বহিঃ প্রকাশম্ নির্ভরআবেশ বিশেষণ হারাদি গুম্ফন বিলাসম বিতান্বতীস্তাঃ প্রতি সস্মিতম ইদম অহম আভাষিত্বান।।
কিন্তু বিদগ্ধ গোপিকারা হেলাভরে নীলপদ্মের মত বামচোখের কোনে আমার দিকে একবার তাকালো।  তারপর তপস্যাব্রতী মুনি দের মতো অর্ধ নিমিলিত ও বস্ত্রাঞ্চলে অর্ধেক ঢাকা চোখে অবজ্ঞা ভরে আমার দিকে তাকিয়ে কোনো উত্তর না দিয়ে তারা তাদের গলার মালা গাঁথতে কোন মনি রত্ন হীরক খন্ড ব্যাবহার করবে তা ভাবার ভান করে লাক্ষা(জতু) রন্জিত মেঝেতে নানান হীরা মনি মানিক্য বের করে ফেলতে লাগল, আমায় দেখানোর জন্য।
অভিনব যৌবনা মূল্য চিন্তামণি লব্ধি বিবর্ধিতোত্তুঙ্গ গর্ব মহা পর্বতাবগুন্ঠিত কর্ণ্যঃ! প্রিয় বয়স্যস্য মম প্রার্থিতে ক্ষনমপি কর্ণান উদঘাট্যন্তু ভবত্যঃ।।
আমি বললাম হে সখীগন তোমরা যৌবন রূপ বহুমূল্য চিন্তামনি পেয়েছ তার গর্ব পর্বতের মত তোমাদের কান দুটিকে ঢেকে দিয়েছে তাই তোমরা আমার কথা শুনতে পাচ্ছনা। আমি প্রার্থনা করছি বন্ধু মনে করে অল্পকিছুক্ষনের জন্য আমার কথায় কান দাও।
ততস্তাসাম ঈষৎ স্মিত্বান্যোন্যম আলোক্যন্তিনাং মধ্যে প্রগলভা ললিতা বিহস্য সরোষম ইব ব্যাজহার। অয়ে নাগর! এতানি বহুমূল্যানি মৌক্তিকানি রাজ মহিষী যোগ্যানি। তব মহিষীনাম এবালঙ্করিয়ায়ৈ সত্যম অভিরূপাণি কথম্ ন দাস্যামঃ?
আমার কথায় তারা একে অপরের দিকে তাকালো ও তাদের ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসির তরঙ্গ খেলে গেল।
তাদের মধ্যে প্রগলভা ললিতা রাগের সাথে বললেন ওহে নাগর এই মুক্তা গুলি রাজমহিষী গনের প্রার্থিত তুমি চাইছ তা দিয়ে তোমার গোরু মহিষ দের সাজাতে (অলঙ্কৃত)। বেশ তা সব রত্ন গুলিই নাওনা তোমার গোরু সাজাতে। আরো কিছু চাই কি।
অন্য অর্থ এই বহুমূল্য রত্নাদি রাজমহিষী গনের যোগ্য তো তোমার মহিষী দের জন্যও হবে বৈকী সব মুক্তাই নিতে পারো।
ততস্তদ বচঃ শ্রুত্বা ময়া কৌতূকেনাবিষ্টেন সাম্না পুনঃ পুনরিদম এবোক্তম। ভোঃ প্রিয় ভূষণাঃ সর্বানি যদি ন দেয়ানি তদা মদ অত্যন্ত প্রিয় ধেনু যুগলশৃঙ্গ পর্যাপ্তান্য এবাবশ্যম্ দিয়ন্তাম।।১৩
তাদের বক্রোক্তিতে কৌতুকাবিষ্ট হয়ে আমি বার বার মিষ্ট বাক্যে তাদের বলতে লাগলাম হে প্রিয়ভূষনাঃ তোমরা নিজেরাই সুন্দর অলঙ্কার তুল্য, তোমাদের রূপ অলঙ্কারের অপেক্ষা রাখেনা। (অন্য অর্থে তোমাদের অলঙ্কার ই বেশী প্রিয়) তোমাদের বেশী মুক্তা দিতে হবেনা, কেবল আমার প্রিয় এই দুটি গাভীর শিঙ সাজাতে কয়েকটি মুক্তা দিলেই হবে।
ততো ললিতা সর্বাসাম্ মৌক্তিকানি পুনঃপুনশ্চাল্যন্তি ভূয়ঃ প্রাহ। হে কৃষ্ণ! কিম্ কর্তব্যম? তব ধেনু যোগ্যম একমপি নাস্তি।।১৪
আমার কথা শুনে ললিতা সব সখীদের হাত থেকে মুক্তা চেয়ে এদিক ওদিক সেগুলো নাড়িয়ে চারিয়ে দেখে বললো হে কৃষ্ণ তোমার গোরুর যোগ্য একটাও ভালো মুক্তা দেখছিনা। কি করি?
তদাহম উক্ত্বান। অয়ি পরমা চতুরে ললিতে! তিষ্ঠ তিষ্ঠ। অহম কার্পণ্য ভাক পশ্চাৎ ত্বয়া বক্তুম ন শক্য ইত্য উপালভ্য সত্বরম অম্বাম্ ব্রজেশ্বরীম আগত্য মাতর্দেহিমে মৌক্তিকানি। অহম তু তানি কৃষ্টকেদারিকায়াম এব বাপ্স্যামিতি পুনঃ পুনর্বোচম।
ততো মাতঃ বিহাস্যোক্তম্। বৎস ন মৌক্তিকান্য উপ্তানি প্ররোহন্তি।।
থাক থাক হে পরমা চতুরা ললিতে আমায় মুক্তা দিতে হবেনা। পরে কিন্তু আমায় কখনো কৃপন বলতে পারবেনা। এই বলে আমি মায়ের কাছে এসে মা কে বললাম মা আমাকে কিছু মুক্তা দাওতো। আমি জমিতে পুঁতব। আমি মুক্তা চাষ করব। এভাবে বার বার বলে মায়ের কাছে বায়না করলে মা যশোদা হেসে বললেন বাছা গোপাল মাটিতে মুক্তা পুঁতলে কখনো গাছ হয়না।
তদা ময়োক্তম। মাতঃ অবশ্যমেব দিয়ন্তাম্ দিন ত্রয়াভ্যন্তরে প্ররূধানি ভবত্য এব সাক্ষাত কর্তব্যানিত্য অস্মন নির্বন্ধ পরিহারাসমর্থয়া তয়া দত্তানি বহুনি মৌক্তিকানি। ময়া গোকুল জলাহরণ ঘট্টা সমীপ বর্তিনি যমুনোপকন্ঠে পৌরুষত্রয়ম অবগাধাম কেদারিকাম নিষ্পাদ্য সহাসম্ পশ্যন্তিষু কাসুচিদ গোপিকাসু  তান্য উপ্ত্বা সা পুনর্পুরি। পরিতো বৃতিশ্চ কাষ্ঠৈর নিবিদা কৃতা।।১৫
আমি বললাম মা তুমি আমায় কিছু মুক্তা দিয়েই দেখোনা তিন দিনের মধ্যে তা থেকে গাছ হবে, তুমি নিজের চোখেই দেখে নিয়ো। এভাবে আমার বায়না শুনে মা আর না করতে পারলেননা তিনি কিছু মুক্তা এনে আমায় দিলেন। একটা কাপড়ে বেঁধে মুক্তা গুলি নিয়ে আমি যমুনা তীরে যেখানে সবাই জল নিতে আসে তার কাছে তিন জন ব্যাক্তি(পুরুষ) হাত ছড়িয়ে শুতে পারে এরকম লম্বা ও চওড়া বর্গাকার জায়গায় মাটি প্রস্তুত করে বাগিচা(কেদারিকা বা কেয়ারী) বানিয়ে মুক্তা গুলো পুঁতে দিলাম। যখন আমি এসব কাজে ব্যাস্ত ছিলাম তখন যমুনায় জল নিতে আসা কয়জন গোপী আমার কাজ দেখে হাসাহাসি করতে করতে চলে গেল। সব মুক্তা গুলি পুঁতে দিয়ে মাটি তুলে সেগুলিকে চাপা দিলাম, তারপর সেই জমি কে ঘিরে কাঁটা ঝোপের বেড়া দিলাম।
ততস্তাসাম মৌক্তিকপ্রার্থন্বাচনাস্বরনিরাসার্থম্ কেদারিকাষেকায়া বয়স্যদ্বারা গব্যেষু প্রার্থ্যমানেষু সোল্লুন্ঠম্ বিহস্য তাঃ প্রোচূঃ।তন্মৌক্তিকা কেদারিকাষেকো অস্মাকম্ গব্যেন কথমুচিতঃ।
যৎপ্রিয়গোভূষণার্থম্ কৃতমৌক্তিকা কেদারিকাষেকস্তাসাম্ গবাম্ দুগ্ধেনৈব ক্রিয়তাম।
তৎকেদারিকোৎপদ্যমানে ফলে নাসমাভিরাভিলাষঃ কর্তব্যঃ। ইতি শ্রুত্বা ময়া স্বগৃহানাম গবাম বহুভিঃ পয়োভিরেব তা দর্শয়তা প্রত্যহম সেকঃ ক্রিয়তে স্ম।।১৬
 যাতে পরে গাছে মুক্তা হলে গোপীদের চাইবার মত মুখ না থাকে তাই জমিতে দুধ সিঞ্চন করার জন্য আমার সখাদের গোপীদের কাছে দুধ চাইতে পাঠালাম। সখাদের কথা শুনে তারা হেসে গড়াগড়ি যায়। বললো আমাদের গোরুর দুধে কি কাজ হবে? তোমরা বরং কৃষ্ণ কে বলো তার যে গোরুদের সাজানোর জন্য মুক্তাচাষ করছে সেই গোরুদের দুধ জমিতে দিতে। তোমাদের চাষ করা গাছের মুক্তাফলে আমাদের কোনো দরকার নেই। তা শুনে আমি ও আমার সখারা নিজেদের গোশালা থেকে প্রচুর দুধ এনে গোপীদের দেখিয়ে দেখিয়ে জমিতে ঢালতাম।
ততশ্চতুর্থদিবস এব মৌক্তিকানি প্রৌধানি।তদ্দরশনেনোল্লাসিকেন ময়া মাতুর্'ঞ্চলম গৃহিত্বানীয় তদঙ্কুরা দর্শিতাঃ। তান দৃষ্ট্বা তু মাতা কিমেতদিতি মনসি বিচার্যন্তি সন্দিগ্ধা সতী ব্রজাম্ জগাম।।১৭ গোপ্যাস তু তচ্ছ্রুত্বা হিংস্রা লতাঃ প্ররূধা ইতি পরষ্পরম্ সহাসমূচিরে।।১৮
চারদিনের দিন অঙ্কুর দেখাদিল, তা দেখে আমি খুশিতে মায়ের আঁচল ধরে এখানে এনে দেখালাম। মা দেখে না জানি কিফলের অঙ্কুর এসব ভাবতে ভাবতে ঘরে চলে গেলেন। গোপীরা যখন অঙ্কুর ওঠার কথা শুনলো তারা নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করতে লাগল কোন কাঁটা গাছের বুনো বিষ ফলের অঙ্কুর হয়েছে,
ততো নাতি বিলম্বেন মূর্বাকারিণ্যস্তা মৌক্তিকালতা বিষ্টারিণ্যঃ সমালোচ্য সমীপবর্তিনাম কদম্বানামুপরিষ্ঠাত ক্রমেণাবরোহিতাঃ। ততঃ কতিপয়ৈর্দিবসৈস্তাঃ সৌরভন্মাদিতমধুব্রতৈঃ কুসুমানিচয়ৈর্গোপীনাম্ চমৎকারমাতন্বানাঃ সকলাম্ গোকুলমেবাঢ্যবসায়ন।। ১৯
কিছুদিনের মধ্যেই যখন পাটগাছের মত বড় হয়ে গেল, দ্রুত বাড়ছে দেখে পাশের কদমগাছে লতা গুলি চড়িয়ে দিলাম, কিছুদিনের মধ্যে গাছে ফুল এলো, ফুলের অপূর্ব সুগন্ধে উন্মত্ত হয়ে ভ্রমর রা চারদিকে গুনগুন করতে লাগল, সারা গোকুল সেই ফুলের সুগন্ধে ভরে গেল। গোপীরা এসব দেখে অবাক হয়ে গেল।
ততো অষ্টবিধ যোনিজ মৌক্তিকেভ্যো বিলক্ষণাম শ্রীয়াম্ দধতি মুক্তাফলানি তাসু জাতানি তানি দৃষ্ট্বা ব্রজ বাসীনাম বিস্ময়ো'ত্যর্থম জাতঃ।
বিশেষতশ্চ গোপীনাম। ততঃ প্রত্যহম এব তদ দর্শনেন জাতলোভাসতাঃ মন্ত্রয়াঞ্চক্রীড়ে। ভোঃ সখ্যঃ ভদ্রেন জ্ঞাতম অস্মভ্যঃ কৃষ্ণো মৌক্তিকানি সর্বথা এব ন দাস্যত্যেব। ভবতু। তত কৃত মৌক্তিক কৃষি প্রক্রিয়াস্মাভির্ন দৃষ্টাস্তীতি ন স্যাত। তত্রানধ্যবস্যাম্ ত্যাক্ত্বা তদ দ্বিগুণিকায়াঃ কেদারিকায়য়া আরম্ভ কথম ন ক্রিয়তে? ২০
ফুল ফোটার কিছুদিনের মধ্যে ফল ও ধরতে থাকে, এই মুক্তা ফল গুলি আট রকমের যে মুক্তা হয় সেগুলির থেকেও সুন্দর শোভা যুক্ত ছিল,
মুক্তা শুক্তিতে, শঙ্খে,  হাতীর মাথায় গজমুক্তা, সাপের মাথায়, শূকরের মাথায়, জলে মেঘ থেকে পদ্ম থেকে হয়,
এই মুক্তা গুলি দেখে ব্রজবাসী রা বিস্মিত হয়ে যায়।  বিশেষতঃ গোপিকারা, যমুনা ঘাটের কাছেই এই বাগিচা ছিল। যমুনায় জল আনতে যেতে আসতে রোজ তারা গাছে মুক্তা গুলি দেখত, একসময় তাদের এই অতি সুন্দর দুর্লভ মুক্তা গুলির প্রতি লোভ হল, একদিন জল আনার পথে তারা মন্ত্রনা করছিল। এই সুন্দর মুক্তা গুলি যদি গয়না বানানোর জন্য পেতাম।  যদিও এখন চাইতে গেলে কৃষ্ণ আমাদের দেবেনা সেটা আমরা ভালো মত জানি।না দিক। কৃষ্ণ কিভাবে মুক্তা চাষ করেছে সেটাতো আমরা দেখেইছি, তাই নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। আমরা সব গোপীরা মিলে এর দ্বিগুন জমিতে মুক্তা চাষ করিনা কেন?
ইতি শ্রুত্বা অতিচতুরা ললিতা প্রাহ ভোঃ পবন ব্যাধি ব্যাপৃতা গোপ্যঃ! গোবর্ধনোদ্ধারনাদি ভূমি মৌক্তিকৎপাদনাদিকম্ লোকত্তরণাম অপি দুষ্করম্ কর্ম। তেন যদ অঞ্জসা ক্রীয়তে তৎ কিল মহা সিদ্ধতো লব্ধা সিদ্ধৌষধি মন্ত্রাদি প্রভাবাদ এবেতি সমস্ত ব্রজজনৈর্নিশ্চিতমেব।  অন্যথাস্মদ ব্রজেন্দ্রগৃহিনী গর্ভ সরোবরোৎপন্ন সুকোমল নীলোৎপলস্য জ্ঞাত স্ব গোপ জাতি ক্রিয়া কলাপ মাত্রস্য গোপালকস্য তাস্য তৎ তৎ করণে কথম এতাবতী শক্তিঃ স্বতঃ সম্ভবেদ ইতি জ্ঞানন্ত্যোপি ভবত্যঃ সিদ্ধৌষধি মন্ত্রাদ্য অন্তরেণ যত তত কর্মণি প্রবর্তিতুম অভিললষন্তি। তৎ খলু পরিণতাবগাধ লজ্জা পরিহাস সাগরান্তঃ স্বপতনায়ৈবেতি সত্যম অবধার্যতাম।।২১
সখীদের এই মন্ত্রণা শুনে সুচতুরা ললিতা দেবী বললেন অারে সখী তোমাদের নিশ্চই বায়ুরোগে মাথার গন্ডগোল হয়েছে। গোবর্ধন পর্বত উঠানো, মাটিতে মুক্তা চাষ করা দেবতাদের ও অসম্ভব। যা কৃষ্ণ অনায়সেই করেছে। সে নিশ্চই কোনো সিদ্ধ মহাপুরুষের থেকে সিদ্ধ মহৌষধি বা সিদ্ধ মন্ত্র পেয়েছে। যার প্রভাবে অসম্ভব কে সম্ভব করছে। বয়োজ্যেষ্ঠ ব্রজবাসী রা ও তাই বলাবলি করেন। নয়ত আমাদের ব্রজরাজ গৃহীনির গর্ভ সরোবরে জাত নীলকমল সদৃশ কোমল কৃষ্ণের পক্ষে এই সব কঠিন কাজ কি করে সম্ভব হল। অর্থাত গোপজাতির কাজ জানা কৃষ্ণের মধ্যে এই অদ্ভূত ক্ষমতা কি আপনা আপনি হতে পারে? এসব জেনেও তোমরা কোনো সিদ্ধ ঔষধি বা মন্ত্র ছাড়া এই অসম্ভব কাজে যদি হাত দিতে যাও। তোমরা এর ফল স্বরূপ অগাধ লজ্জা পরিহাস সমুদ্রে পড়বে। এই সত্যটা বুঝে নাও।
ততস্তুঙ্গবিদ্যাপ্রাহ অস্মাভিরপি শ্রীভগবতী পাদপদ্মসিদ্ধ মন্ত্রশিষ্যা নান্দীমুখী সকাশাত সিদ্ধমেকমাদায় কথং ন তথোদ্যমঃ ক্রিয়তে?।।২২
ললিতা র কথা শুনে তুঙ্গবিদ্যা বললো আমরা কি ভগবতী শ্রী পৌর্ণমাসীর চরনকমলাশ্রিত শিষ্যা নান্দীমুখীর থেকে সিদ্ধ মন্ত্র লাভ করে এই কাজ করতে পারিনা?
সর্বাঃ ভদ্রং বদতি তুঙ্গবিদ্যেতি নির্ন্নীয় তত্পার্শ্বমুপেত্য  সবিনয়মাত্মাভিলাষং নিবেদয়ামাসুঃ।। ২৩
সব গোপীরা বিবেচনা করে তুঙ্গবিদ্যার কথাই ঠিক, এই সিদ্ধান্তে এসে নান্দীমুখীর কাছে গিয়ে তাদের অভিলাষা ব্যাক্ত করল।
ততঃ অয়ে নিজনয়নযুগ্মদ্দষ্টি সাফল্যায় চিরদিন মস্মদ্বিধাভিলষ্যমাণক্রয় বিক্রয় ক্রীড়াকূতূহল কল্পতরোবার্ঢ়মকস্মাদদ্দশাং ভাগ্যাতিশয়বশাত সাক্ষাদ্বীজরূপোহয়মবসরঃ প্রত্যাসন্নো বভূব।  তদবিদগ্ধানাং শিরোমণীরপ্যোতাস্তথা যুক্তিসৌষ্ঠবাতিশয়েণ কৃতোহত্র প্রবর্ত্তয়ামি।  যথা স তরুস্ত্বরিতমেব প্ররূঢ় ফলবান ভবেদিতি মনসি বিচিন্ত্য সান্তরানন্দং নান্দী প্রাহ ভোঃ সখ্যঃ! সত্যং মুকুন্দস্য ন মন্ত্রকৃতেয়ং মূদি মৌক্তিকসৃষ্টিঃ।। ২৪
গোপীদের কথা শুনে নান্দীমুখী মনে মনে বিচার করল, অনেকদিন ধরে মনে এই ইচ্ছাযে মুক্তাক্রয়বিক্রয় বিষয়ক রাধা মাধবের লীলা দর্শন করি। বড়ই সৌভাগ্য যে সেই লীলা রুপ কল্পবৃক্ষের বীজ আজ প্রাপ্ত হয়েছি, তাই চতুর শিরোমনি এই গোপীদের পরম সুন্দর যুক্তি দ্বারা এই কার্যে প্রবৃত্ত করাব, যাতে শীঘ্রই কল্পবৃক্ষ অঙ্কুরিত হয়ে ফলবান হয়। এরূপ ভেবে পরমানন্দিত হয়ে নান্দীমুখী গোপীদের বললেন হে সখীগন ইহা সর্বাংশে সত্য যে মাটি থেকে যে মুক্তা উৎপন্ন হয়েছে তা কৃষ্ণের কোনো মন্ত্রের প্রভাবে নয়।
সর্বা তন্নিজজনন কারণশুক্ত্যাদিমাত্রমন্তরেণ কথং মৃত্তিকায়ামসম্ভবেয়ং তদুৎপত্তিঃ প্রতীয়তে? ২৫
তখন সব গোপীরা বললেন মুক্তো তো সুক্তি আদি থেকে উৎপন্ন হয় বলে জানতাম। মাটি তে চাষ করে মুক্তো হওয়ার মত অসম্ভব কাজ কি করে হয়?
নান্দী। অস্যা ভূবঃ স্বাভাবিকেদ্দকপ্রভাবাদেব। যদ্বিবিধরত্নজননীয়ং ব্রজবনভূরিতি শ্রীভগবতীপাদপদ্মেঃ পুনঃ পুনর্নিবর্ণ্যতে।  ঋতমপ্যনুভূয়তে তথা।  যতঃ প্রবালনবপল্লব মরকতচ্ছদ ব্রজ মৌক্তিকপ্রকরকোরক কমলরাগ নানাফলাদিমন্তো হিরণ্ময়মহীরুহাঃ স্ফুটমত্র জাতা জায়মানাশ্চ দৃশ্যন্তে, অতোহস্যামুপ্তমুক্তাফলানি জনিষ্যন্তে ফলিষ্যন্তি চেতি কিং চিত্রম? তদভবতীভিরপি সুরভিতরনব নবনীতাদিসেক পূর্বকম অতিপ্রযত্নেন তথা তত্কৃষিঃ ক্রিয়তাং যথা ততোহপ্যধিকতমানি পরমোত্তমফলানি লভ্যন্তে।। ২৬
নান্দীমুখী বললেন তোমরা যা আশ্চর্য্য ভাবছ তা তো এই মাটির স্বাভাবিক গুণ। ভগবতী পৌর্ণমাসী দেবী ও অনেকবার বলেছেন যে এই ব্রজভূমি র মাটি রত্ন প্রসব করে। এখানকার স্বর্ণময় বৃক্ষ গুলিতে প্রবালের মত নতুন পাতা, হীরা মোতির মত নতুন কলিকা, পদ্মরাগাদি রত্নের মত ফল হয়।  ভবিষ্যতেও হতে দেখতে পাবে। তাই এই ব্রজভূমিতে যদি মুক্তা বরন করলে তা অঙ্কুরিত হয়ে মুক্তালতাগাছ হবে ও তাতে মুক্তা ফল ধরবে এতে আর আশ্চর্য্য কি আছে।  তাই তোমরা ও ভূমি কে পরম সুগন্ধী সদ্যতোলা মাখন দিয়ে সেঁচে মুক্তা চাষ করা শুরু করো। শ্রীকৃষ্ণের মুক্তোর থেকেও সুন্দর পরম উত্তম মুক্তাফল ধরবে।
ইতি তদবচনমাধুরীমাপীয় সসন্তোষং সশ্লাঘম প্রত্যযন্ত্যঃ সর্বাস্তামালিঙ্গয় নিজাং স্থলীমাগত্য স্পর্দ্ধয়া মজ্জয়ায় সমুচিতবেতনতো দ্বিগুন ত্রিগুন গোরসপ্রদানেন কর্মকারানানায্য স্থানে স্থানে কেদারিকা কৃত্বা পেটিকায়ামগ্রথিতানি গ্রথিতান্যঙ্গভূষণরূপাণি চ যাবন্তি স্থিতানি তাবন্তি যথাযুক্তমল্পান্যেব সংরক্ষঙ্গতঃ সমুত্তারিতানি চ মৌক্তিকানি নিরবশেষং উপ্ত্বা প্রত্যহমেব ত্রিসন্ধ্যংশ গোদুগ্ধ নবনীতসুবাসিতঘৃতৈরেব সেকং কত্তুর্মারব্ধবত্যঃ।। ২৭
নান্দীমুখী র এইপ্রকার মধুরবচন পান করে ব্রজাঙ্গণা রাও প্রসন্ন হয়ে তার প্রশংসা করতে লাগলেন। তাকে আলিঙ্গন করে নিজ নিজ ঘরে গেলেন।  এবং আমায় (কৃষ্ণকে) জিতবার জন্য স্পর্ধা করতে লাগলেন ও সেবক দের দ্বারা স্থানে স্থানে অনেক কেয়ারী(বাগান) নির্মান করালেন ও তার জন্য তাদের বেতনের দ্বিগুন ত্রিগুন গোদুগ্ধ বেতন স্বরূপ দিলেন। তারপর নিজেদের পেটিকায় (সিন্দুকে) গয়ণায় গাঁথা ও না গাঁথা যত মুক্তা ছিল, ও যতো গয়ণা তারা পড়েছিল সব থেকে মুক্তো নিয়ে একত্রিত করল।  তারপর সবাই সবার মুক্তো নিয়ে কেয়ারী তে রোপণ করল।  এবং প্রতিদিন সকালে দুপুরে ও সন্ধ্যায় গোদুগ্ধ, মাখন, সুগন্ধী ঘৃত দিয়ে সিঞ্চন করতে লাগলেন।
ততস্তাসাং মুক্তাকৃষিকরণশ্রবণান্মৎসর্য্যতো লোভতশ্চ চন্দ্রাবলীপ্রভৃতয়োহপি সর্বা বল্লব্যস্ততোপ্যধিককেদারিকাঃ স্থানে স্থানে কৃত্বা দেহ গেহয়োরেকমপ্য সংরক্ষ্য সমস্তমৌক্তিকান্যুপ্তবত্যঃ।। ২৮
যখন রাধািকা ও তার সখীগণের দ্বারা এই মুক্তাচাষের কথা তার প্রতিদ্বন্দ্বীনি চন্দ্রাবলীর কানে পৌছালো তখন তিনি ও তার সখীরা মিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বশত তার থেকে ও বেশী জমিতে আরো আরো বেশী কেয়ারী বানিয়ে নিজেদের ঘরে যত মুক্তা ছিল ও যত গয়ণা তারা পরেছিল তা থেকে সব মুক্তা নিয়ে কেয়ারী তে রোপন করলেন।
তত কতিপয় দিনান্তরে স্ব স্ব কেদারিকাসু জাতান হিংস্রলতাংকুরান দৃষ্ট্বা অন্তর্গর্ভিত গর্বাভিঃ বল্লভীভিস্তাভিঃ সর্বাভিশছলতো মৎপ্রিয়বয়স্যাঃ পরিহস্যন্তে স্ম।। ২৯
কিছুদিন পর তাদের ক্ষেতে কাঁটাদার ঝোপের হিংস্র লতার অঙ্কুর উৎপন্ন হতে দেখে সেগুলিকে মুক্তালতার অঙ্কুর মনে করে ব্রজাঙ্গনাগন আমার প্রিয় মিত্র সুবল মধুমঙ্গল দের সাথে গর্বের সাথে ছল পূর্বক পরিহাস করতে লাগলেন (যে কেবল তোমাদের মিত্র ই মুক্তাচাষ করতে পারে? আমরা পারিনা? আমরাও মাটিতে মুক্তা ফলাব আরো অনেক বেশী বেশী ফলাব।)
একস্মিন দিনে গৌরসানামতীবব্যয়ং স্বস্বগৃহস্য চ নিম্মৌক্তিকতাং বীক্ষ্য গোরাঃ সসংরভ্যং কারণং প্রপচ্ছুঃ।। ৩০
ব্রজগোপ রা নিজ নিজ ঘরে গোরস এর কমতি দেখে ও ঘরে মুক্তোর গয়না উধাও দেখে গোপীদের ওপর ক্রুদ্ধ হয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে লাগলেন।
তচ্ছ্রুত্বা বৃদ্ধা উচুঃ। ভো আয়ুষ্মন্তঃ! নানুযোগবিষয়ো অয়মাভির্বালাভিঃ কৃতো মৌক্তিক কেদারিকাণাং নিমিত্তং বহুলো ব্যায়ঃ অচিরাদেব বহুতরলাভো ভবিষ্যতি।  যৎকৃষ্ণকেদারিকায়াং রাজদারাণামপি দুর্লভাণি মুক্তাফলান্ কিল দৃষ্টানি সন্তীতি।। ৩১
গোপ দের ক্রোধযুক্ত বাক্য শুনে তাদের ঘরের বৃদ্ধা গোপীরা বুঝালেন হে চিরন্জীবি পুত্র।  এই বেচারী দের ওপর কেন রাগারাগি করছ এরা ঘরের লাভের জন্যই মুক্তা চাষ করছে।  তারজন্য সব মুক্তা তারা জমিতে পুঁতে দিয়েছে। আর দুধ মাখন জমিতে সিঞ্চন করেছে। কিছুদিন পর অনেক লাভ হবে।  কৃষ্ণ যেমন ক্ষেতে মুক্তো চাষ করেছে। আর সেই সব গাছে রাজরানীদেরও দুর্লভ মুক্তো উৎপন্ন হয়েছে,  তেমন আমাদের ক্ষেতেও মুক্তা লতার অঙ্কুর দেখা যাচ্ছে।
অথৈকদা বিশাখায়া স্বকেদারিকাসু তানংকুরান্নিরীক্ষ্য কাসাঞ্চিৎকর্ণে নিভৃতমিদমুক্তং ভোঃ সখ্যঃ!  কৃষ্ণকেদারিকামধ্যে ময়া যাদৃশা অঙ্কুরা দৃষ্টা,  এতে তু তাদৃশা ন দৃশ্যন্তে, ন জানে পশ্চাত কিং ভবেত কৃষ্ণবয়স্যদৃষ্টিনিবারণার্থ ছলতঃ সুষ্ঠু বেষ্টয়ন্তাম।।  ৩২
তারপর একদিন বিশাখা তার কেয়ারীর অঙ্কুর গুলিকে ভালো করে নিরীক্ষন করতে করতে সন্দিগ্ধ মনে কোনো সখীর কানে গোপনে বললেন হে সখি শ্রীকৃষ্ণের কেয়ারী তে যেমন অঙ্কুর দেখেছিলাম আমাদের অঙ্কুর গুলি কিন্তু সেরকম দেখতে লাগছেনা। কি জানি পরে কি হবে।  যা হোক এই ক্ষেত এর চারদিকে বড়বড় বেড়া দিয়ে দাও যাতে কৃষ্ণের সখাদের চোখে না পড়ে।
অথ কতিপয়দিবসৈঃ তাসাং রাধাদীনাং অন্যাসাঞ্চ কেদারিকাসু কন্টকাদিচিহ্নেন লতাভির্নিজরূপে প্রকাশ্যমানে গোপীকেদারিকাসু হিংস্রালতা জাতা ইতি সকলগোকুল এব খ্যাতং।। ৩৩
কিছুদিন পর রাধা  ও চন্দ্রাবলী আদি সমস্ত সখীদের কেয়ারী তে কাঁটা ভরা লতা উৎপন্ন হল। সারা গোকুলে এই খবর ছড়িয়ে গেলো কি গোপীদের কেয়ারী তে হিংস্র লতা উৎপন্ন হয়েছে।
এতদাকর্ণ্য বয়স্যদ্বারা গান্ধর্বা গোষ্ঠয়াং ময়েদং সোৎপ্রাসং বিজ্ঞাপিতং ট,  শ্রুতং ভবতীতাং কেদারিকাসু বহুনি মুক্তাফলানি জাতানি সন্তি। অহং তাবৎ স্নিগ্ধস্তৎসবস্যায় মহ্যং প্রথমফলানি দীয়ন্তাম।।  ৩৪
শ্রীকৃষ্ণ সত্যভামা কে বললেন হে প্রিয়ে এই খবর শুনে আমি আমার এক সখার দ্বারা রাধার গোষ্ঠী তে  পরিহাস করতে এই খবর পৌছলাম যে হে সখী আমি শুনলাম তোমাদের ক্ষেতে নাকি অনেক মুক্তো হয়েছে তাই আমি আপনার মিত্র বলে আপনার কাছে আবেদন করছি প্রথমে উৎপন্ন কিছু মুক্তো আমি কিনতে চাই আমার এই সখার হাত দিয়ে পাঠিয়ে দাও। আর কি মূল্য হবে জানিয়ে দাও।
ততস্তাভিরুক্তম। যদি বয়ম কৃষিম অকরিষ্যামঃ তদা সকলগোষ্ঠং মৌক্তিকময়মভবিষ্যৎ পশুপাল্যস্বধর্মমপহায় স ইব কঃ কীলাসবৃত্তিমাশ্রয়েৎ।। ৩৫
আমার সন্দেশ শুনে উত্তরে রাধিকা বললেন যদি আমরা চাষ করতে শুরু করি তো সারা ব্রজে মুক্তায় ভরে যাবে।  কিন্তু আমরা তোমার ও রাখাল দের মতো নই যে গোপালন ছেড়ে চাষবাসের মত নীচ কাজ ধরব।
তদাকর্ণ্য ময়া নিখিলবয়স্যাঃ সবৎসা গাবঃ শকটবহা মহিষ্যঃ, সশাবকমেষাঃ, সবর্করা অজা,  বৃন্দাবনবর্ত্তিন্যো বানর্য্যশ্চ মৌক্তিকময়ৈঃ মালাদ্যলঙ্কারৈর্মন্ডিতাঃ।। ৩৬
তাদের এই কথা শুনে আমি আমার সব সখাদের, গাই বাছুর দের গাড়ী টানা বলদদের মহিষদের ছাগল আর তাদের বাচ্চা দের এমনকি বৃন্দাবনের বানর বানরী দের ও মুক্তার মালা ও গয়ণা দিয়ে সাজিয়ে দিলাম।
ততশ্চ গোপ্যো লজ্জয়া স্বভূষণব্যাতিরেকেণ বহুধনবিনাশেন গোপভিয়া চ কিমত্র যুক্তমিতি মন্ত্রয়িতুমারেভিরে। অয়ে! গৃহীতকৃষ্ণপক্ষয়া ধূর্তনান্দীমুখ্যাহভদ্রেণ প্রতারিতাঃ স্ম ইত্যাভাষ্য সরোষং তন্নিকটমাগত্য তৎকথন পূর্বকং বহুশস্তাভির্নির্ভৎসিতা। নান্দীমুখী প্রাহ - ভোঃ তপোভ্যঃ শপে ন ময়া সর্বথৈব প্রতারিতাঃ স্ম কিন্তু যুষ্মাভিরেব তৎসর্ব বিনাশিতম।। ৩৭
সমস্ত গোপীরা যখন ব্রজের গাভী গোবৎস এমনকী বানরীদের ও মুক্তামালায় অলংকৃত দেখলেন ও নিজেদের কাছে একটাও মুক্তোর গয়ণা নেই দেখে অত্যন্ত লজ্জিত হলেন। আর এত মূল্যবান গয়ণা সব নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নিজেদের স্বামীরা কি বলবে তা ভেবে ভীত ও চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তারা সকলে এখন কি করা যায় এই মন্ত্রণা করতে লাগলেন। কোনো গোপী বললেন ওরে সখী রা কৃষ্ণের পক্ষ নিয়ে ধূর্ত নান্দীমুখী আমাদের খুব বাজে ভাবে ঠকিয়েছে। এরকম মন্ত্রণা করে তারা অত্যন্ত রাগের সাথে নান্দীমুখী র কাছে গেলেন ও সব বৃত্তান্ত বলে তাকে অনেক ভাবে ভর্ৎসনা করলেন। গোপীদের কথা শুনে নান্দীমুখী বললেন হে সখীগন আমি আমার তপস্যার শপথ নিয়ে বলছি আমি তোমাদের সাথে কোনো প্রতারণা করিনি। বরং তোমরা নিজেরাই সব কিছু পন্ড করেছ।
সর্বাঃ -কপটিনি! কথংকারম।। ৩৮
সব গোপী রা বললেম ওরে কপটিনি (তোমার বুদ্ধিতে ই সব কিছু করলাম) বল তবে আমরা কিকরে সব পন্ড করলাম?
নান্দী—  যতো গর্বিতাভির্যুষ্মাভির্দক্কাবাদ্যবৎ কোলাহলপ্রপঞ্চেন সবয়স্যাগণস্য তস্য শ্রবণকুহরে সুষ্ঠুগোচরীকৃত্য কেদারিকাসু মুক্তাঃ স্ফুটমুপ্তাঃ তথা কোহপ্যেকঃ প্রহরিকো অপি তত্র ন রক্ষিতঃ।। ৩৯
নান্দীমুখী— তোমরা গর্বভরে ঢাক ঢোল বাজিয়ে কোলাহল করে (সারা ব্রজে জানিয়ে) শ্রীকৃষ্ণ ও তার বন্ধুদের কানে খবর পৌছে কেয়ারী তে মুক্তা তো চাষ করেছ কিন্তু ঐ কেয়ারী গুলির রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এক জন প্রহরী ও নিযুক্ত করোনি।
সর্ব্বাঃ —  এতাবতা কিং ন জাতম।। ৪০
সব গোপীরা একসাথে বললেন— তাতে কি হয়েছে?
নান্দী সরোষম- যজ্জাতম তচ্চতুরম্মন্যাভিঃ শ্রুয়তাম।  যুষ্মান বিজেতুমভীষ্টমিষ্টান্নপ্রদানেন সুষ্ঠুপ্রলোভ্য ধুর্ত্তগুরূণা যুষ্মন্নাগরেণ তেন প্রেরিত লোলুপ ভন্ড মধুমঙ্গলেনাতিনির্ব্বন্ধতো বিচিত্য কিঞ্চিত কিঞ্চিতজাতাঙ্কুরাঃ সর্ব্বা মুক্তা নিরবশেষং সমাদায় তত্র তত্র হিংস্রাবল্লীকদম্বান সমারোপ্য কিয়ত্যঃ পৃথক স্বকৃত একস্মিন কেদারে প্রযত্নতঃ সংরোপিতাঃ। তথান্যাসান্তু তথৈবানীয় কালিন্দী গভীরনীরান্তঃ প্রক্ষিপ্তাঃ। ইতি ময়া সুদৃঢ়ং জ্ঞাতমস্তি।। ৪১
নান্দীমুখী রাগের সাথে বললেন— তোমরা নিজেদের খুব চতুর ভাবো না। তার ফলে যা হয়েছে তা শোনো। তোমাদের নাগর ধূর্তগুরু শ্রীকৃষ্ণ তোমাদের পরাজিত করার জন্য লোভী মধুমঙ্গল কে খুব করে মিঠাই খাইয়েছে। যখন তোমাদের মুক্তা গুলিতে অঙ্কুর এসেছিল তখন মধূমঙ্গলের দ্বারা সমস্ত মুক্তা উঁপড়ে ফেলে তোমাদের কেয়ারীতে হিংস্রলতা(কাঁটা লতা) রোপণ করে দেয়। আর মুক্তার অঙ্কুর কিছু নিজের কেয়ারী তে লাগিয়ে দিয়েছে বাকি কিছু যমুনা জলে ফেলে দিয়েছে।  এই সব আমি নিশ্চিত রূপে জ্ঞাত আছি।
ইতি নিশম্য সর্ব্বা আহুঃ- অয়ি কূটত্ব নাটক নটন প্রকটনৈককার্য্যানিন্দ্য মহানান্দি! অয়ি ভন্ড মধুমঙ্গল গুরুপ্রায়মহাসতীর্থে! অয়ি ব্রজপ্রথিত শঠনটসহিত নাট্যযোগ্যে! ততপ্রিয়তমে নটি! অয়ি কলিযুগতপস্বিনি! তিষ্ঠ তিষ্ঠেতি সভ্রুভঙ্গ তামাক্ষিপ্য স্বগেহমাগত্য পুনঃ পুনঃ স্তদেব বিচারয়ন্তী তাসু রাধাঃ ভো সখ্যঃ! নান্দীমুখী বা প্রতারয়তু স ধূর্তস্তথা বা করোতু অধুনা তদ্বিচারেণ কো লাভঃ সাম্প্রতমন্যদদুঃখং ন গণ্যতে গুর্বাদিতো ভয়মেব ন খেদয়তি।  তদভয়ন্তু তেভ্যো মৌক্তিকেষু দর্শিতেষ্বেব শিথিলী ভবেত।  তাদৃশানি সর্ব্বথৈবাত্র সুদুর্ল্লভানি কিন্তু কৃষ্ণাদেব মূল্যেন যথা গৃহীতানি স্যুঃ তত্রোপায়শ্চিন্ততাম।। ৪২
এই কথা শুনে সবাই বলতে লাগল অয়ি নান্দীমুখী! তুমি কুটিলতা ভরা নাটক রচনায় অত্যন্ত দক্ষ, ভণ্ড মধুমঙ্গলের গুরু ও প্রধান সহায়িকা। ব্রজে প্রসিদ্ধ ধূর্ত নট শ্রীকৃষ্ণের সাথে নাটক রচনা করো। ও তার অত্যন্ত প্রিয় নটী। আরে কলিযুগের তপস্বিনী (ভণ্ডামিতে দক্ষ) থামো এবার। এই ভাবে ভ্রুকুটি করে তিরস্কার করে সব গোপীরা ঘরে এলেন। ও মুক্তার ব্যাপারে পরামর্শ করতে লাগলেন। তখন শ্রীরাধিকা বললেন হে সখীগন নান্দীমুখী ই আমাদের সাথে প্রতারণা করুন বা ঐ ধূর্ত নন্দকুমার। এই নিয়ে যাওয়ার বিচার করে কি লাভ? এখন আমরা অন্য কোন দুঃখের কথা ভাবছিনা বাড়িতে গুরুজন দের কিবলব এই ভয় ই আমাদের পীড়া দিচ্ছে। হ্যাঁ যদি নষ্ট হওয়া মুক্তার গয়ণা তাদের আবার দেখিয়ে দি তো তাদের থেকে আর ভয় নেই। যদিও এই কাজ সমস্ত ভাবে অসম্ভব তবুও শ্রীকৃষ্ণের কাছে মূল্য দিয়ে যদি মুক্তা ক্রয় করা যায় সেই বিষয়ে ভাবতে হবে।
ততঃ সর্বাভির্বিভাব্যোক্তম- চন্দ্রমুখী চতুরা ভবতি সুবর্ণানি গৃহীত্বা গত্বা সমুচিতমূল্যেন মৌক্তিকান্যানয়তু।। ৪৩
তখন সকলে শ্রীরাধিকার এই প্রস্তাব স্বীকার করে বললো ও আমাদের মধ্যে বিশেষ চতুর চন্দ্রমুখী সখী স্বর্ণ নিয়ে যাক ও মুক্তা ক্রয় করে আসুক।
ততস্তয়োক্তম। সংপ্রত্যস্মাভিরুপালব্ধস্য তস্য সমীপমহমেকাকিনী গন্তুমশক্তাস্মি,  কাঞ্চনলতা মম সঙ্গে সমাগচ্ছতু।  ইতি সর্বাসামনুমত্যা বহুসুবর্ণানি গৃহীত্বা মৌক্তিকবাটিকাসমীপং তে আজগ্মতুঃ। তত্র তদ্বাটিকাধিকারিণং সুবলং ময়া সহ নিবিষ্টমব্রুুতাম,- হে সুবল! শ্রুতপ্রস্মাভির্ভবদভির্নব্যমুক্তানি বিক্রীয়ন্তে। তদিমানি শুদ্ধসুবর্ণানি গৃহীত্বা সমুচিতমূল্যেন প্রবীণপ্রবীণমুক্তাফলানি দীয়ন্তাম।। ৪৪
তা শুনে চন্দ্রমুখী বললো কিছুদিন আগে আমরা সবাই তার তিরস্কার করেছি তাই একা আমি তার কাছে যেতে পারবোনা। কাঞ্চনলতা ও আমার সাথে চলুক। তখন সবার সম্মতি নিয়ে তারা এসব দুজন অনেক স্বর্নালঙ্কার নিয়ে মুক্তা বাটিকায় এলেন। সেখানে আমি ও বাগানের অধিকারী সুবল বসেছিলাম। তারা এসে সুবল কে বললো! হে সুবল আমরা শুনলাম যে তোমরা নতুন মুক্তা বিক্রয় করছো। আমাদের এই শুদ্ধ স্বর্ণ নিয়ে সমুচিত মূল্যে উত্তম উত্তম মুক্তা দাও।
ততঃ স্মিত্বা ময়োক্তম তদানীমনেকধা প্রার্থ্যমানং নৈকমপি মৌক্তিকমস্মভ্যঃ দত্তম। অস্মৎ কেদারিকা সেকার্থে দুগ্ধপারী চ ভবতীভির্নদত্তাঃ অস্মাভির্বরং কালিন্দীমধ্যে প্রক্ষেপ্তব্যং তথাপি ভবতীনাং গৃহসর্বস্বেনাপি পণীকৃতেন নিখিলমৌক্তিক বৃন্দাদপকৃষ্টমেকমপি মৌক্তিকং সর্বথা ন দাতব্যম।। ৪৫
তখন আমি হাসতে হাসতে বললাম তোমরা তো বারবার প্রার্থনা করা সত্ত্বেও আমায় একটাও মুক্তা দাওনি। কেয়ারী তে সিঞ্চন করার জন্য এক লোটা দুধ ও দাওনি। আমি আমার মুক্তা যমুনায় ভাসিয়ে দেবো তা ও ভালো কিন্তু তোমাদের কে সারা বাড়িঘর শুদ্ধ দাম দিলেও সবথেকে বাজে মুক্তাটি ও দেবোনা।
ততঃ কাঞ্চনলতয়োক্তম, - মৌক্তিকনিমিত্তং পত্যাদিভ্যা যদি তাসাং ভীর্নভবেৎ তদাস্য কদর্থ নোক্তিমীদৃশীং কা নাম সহেত। ভবতু কিং কর্তব্যং। হট্টপ্রসারিতবহুরত্না মথুরা তাবদ্দুরে তদদ্য ভোঃ সুবল! স্বয়মেব ভবতা মধ্যস্থেন আন্যত্রিক মূল্যাদস্মাভির্বিশেষোহপি দাতব্যঃ।।৪৬
আমার কথা শুনে কাঞ্চনলতা বললো মুক্তার জন্য যদি পতি ও অন্যান্য গুরুজনদের থেকে ভয় না হোত তো তোমার এই কঠোর শব্দ কে শুনতো? মথুরা নগরীর বাজারে রত্নের কিছু কম নেই কিন্তু সে বহু দুর তাই হে সুবল তুমি মধ্যস্থতা করে নাহয় একটু বেশী দাম নিয়েই আমাদের মুক্তা দাও।
ততশ্চ বিশেষশব্দশ্রবণান্ময়া বিহস্যোক্তম্ ভবতু নাম স্বভাবকোমলেন ময়া তু ভবতীভিরিব কাঠিন্যং কর্ত্তু ন শক্যতে। অদত্ত্বা বা অন্যৎ কিং কর্তব্যম।  কিন্তু মৌক্তিকার্থিনীনাং সর্ব্বাসাং মৌক্তিকমূল্যনির্নয়ঃ কিং ভবতীভ্যামেব ভবিষ্যতি? ৪৭
কাঞ্চনলতার মুখে "মূল্যবিশেষ"এই শব্দ শুনে আমি হেসে বললাম ঠিক আছে আমি তো স্বভাব কোমল তোমাদের মতো কঠোর স্বভাবের তো নই। না দিয়েই বা এত মুক্তা করব কি? কিন্তু সমস্ত মুক্তা যখন তোমরা সবাই ক্রয় করবে তো শুধু তোমরা এসে মূল্য নির্ধারন করবে তা কি উচিত হবে?
তাভ্যামুক্তম- অথ কিম।। ৪৮
তারা বললো তো আর কি?
ময়োক্তম। - কস্তাবদ্বিশেষঃ। ততশ্চন্দ্রমুখী কিঞ্চিদবিহস্য কাঞ্চনলতামালোকিতবতী কাঞ্চনলতাথ সলজ্জং সুবলং প্রতি ব্যাজহার, - সখে সুবল!  স্বয়মেব মধ্যস্থেন ভূত্বা সমাধায় সমীচীনযশোভারস্তাবদঙ্গীক্রিয়তাং ভবতা।। ৪৯
আমি বললাম বিশেষ মূল্য কি হবে তা তো বলো। তখন চন্দ্রমুখী হেসে কাঞ্চনলতার দিকে চাইলো। কাঞ্চনলতা বললো লজ্জাপূর্ব্বক সুবল কে বললো হে সুবল তুমিই মধ্যস্থতা করে এই বিষয়ের উচিত সমাধান করে যশস্বী হও।
সুবলেনোক্তম- বয়স্য! রহস্যতয়া বহুমূল্যত্বং কিয়ত কাঞ্চনলতয়া প্রকটীক্রিয়তে। আত্মনোহভীষ্টমূল্যং স্বয়মেব স্ফূটং নিগদ্য ন কথং গৃহ্যতে।। ৫০
তখন সুবল আমায় বললো মিত্র এই কাঞ্চনলতা রহস্য স্বরূপ বহুমূল্য কি নির্নয় করবে? তুমি তোমার মুক্তার মূল্য স্পষ্ট রূপে কেনো বলে দিচ্ছোনা।
ততঃ অহমব্রুবম- সখে সুবল! চন্দ্রমুখ্যা অভিপ্রায়ো জ্ঞাতঃ মুক্তাফলানি গ্রহীতং কাঞ্চনলতৈব বিচার্য্যানর্ধ মূল্যত্বেন পরিকল্প্য রাধাদিভিঃ প্রহিত্য মম দত্তাস্তীতি। কিন্তু কাঞ্চনসঞ্চয় তোহপি মুক্তাফলানামধিকং মূল্যং জগতি প্রসিদ্ধং। তস্মাদেকয়ৈব কাঞ্চনলতয়া কথমেতাসাং মূল্যপর্য্যাপ্তিঃ। যদি বা অস্যাঃ বক্ষসি স্বর্ণসম্পুটরূপফলদ্বয়ে বহবশ্চিন্তামণয়োহপি সন্তীতি চন্দ্রমুখী বক্ষতি তথাপি ন।  যতো বৈকুন্ঠনাথকন্ঠস্থিতকৌস্তুভতোহপি মমৈতদেকং মুক্তাফলং পরমপরার্দ্ধম।। ৫১
হে সত্যভামা তখন আমি বললাম হে সখা সুবল! চন্দ্রমুখীর অভিপ্রায় আমি বুঝে গেছি মুক্তা ক্রয় করার জন্য রাধাদি গোপীগন কাঞ্চনলতা কে স্বর্ণ নির্মিত লতা কেই বহুমূল্য মনে করে আমার কাছে পাঠিয়েছে। কিন্তু সারা সংসার জানে কাঞ্চন বা স্বর্ণ হতেও মুক্তা মূল্যবান। আর এক স্বর্ণলতা দিয়ে এতো মুক্তার দাম কিভাবে হতে পারে? আমার এক এক মুক্তার দাম বৈকুন্ঠনাথের কণ্ঠস্থিত কৌস্তভ মণি থেকে ও মূল্যবান। যদি চন্দ্রমুখী এও বলে যে তার বক্ষস্থল স্থিত স্বর্ণসম্পূট রূপ দুই ফলে অনেক চিন্তামণি বিদ্যমান তবুও তাতে কাজ হবেনা।
তচ্ছ্রুত্বা ভ্রূভঙ্গেন মামবলোকয়ন্তী কাঞ্চনলতা সরোষমাহ, - নির্বুদ্ধিকে চন্দ্রমুখী! তদৈব ময়োক্তং তস্য ধৃষ্টস্য সবিধে ময়া ন গন্তব্যম।  তথাপি ত্ব্যাহমাগ্রহেণানীয় কদর্থিতাস্মি।  ত্বং মুক্তা ফলান্যাদায়সমাগচ্ছ অহমিতশ্চলিতাস্মি।। ৫২
 আমার এই কথা শুনে কাঞ্চনলতা কুটিল ভ্রুকুটি করে আমার দিকে তাকিয়ে ক্রোধের সাথে বলতে লাগলেন অয়ি নির্বুদ্ধিকে চন্দ্রমুখী! আমি আগেই বলেছি এই ধৃষ্টের কাছে আমি আসবোনা। তুমিই আগ্রহপূর্বক আমায় এখানে নিয়ে এসে আমার তিরস্কার করালে। তুমি মুক্তা ফল নিয়ে আসো আমি তো যাচ্ছি।
চন্দ্রমুখী আহ- কাঞ্চনলতে সত্যং কথয়সি, তৎ কথমেকাকিন্যা ময়া মূল্যনির্নয়ো ভবতু, কথং বা নির্জ্জনেহত্র স্থাতব্যম "একযোগনির্দ্দিষ্টানাং সহ বা প্রবৃত্তিঃ সহ বা নিবৃত্তি" রিতি ময়াপি গন্তব্যম।  ইত্যুভে এব গমনোদ্যতে দৃষ্ট্বা ময়োক্তম্ সুবল! তদৈব ময়োক্তং যদেতাভ্যাং মূল্যনির্নয়ো ন ভবিষ্যতি।। ৫৩
চন্দ্রমুখী বললো— ও কাঞ্চনলতে! তুমি সত্যই বলেছো। তোমাকে বাদ দিয়ে আমি একলা কি করে মূল্য নির্ণয় করবো? এই নির্জন স্থানে একলা কি করে আমি থাকবো? এক ই কার্য্যে নিযুক্ত ব্যাক্তির প্রবৃত্তি ও নিবৃত্তি এক সাথেই হয়ে থাকে। অতএব আমি ও চললাম। এই বলে তারা দুজন চলে যেতে লাগলে আমি বললাম সুবল আমি তো তখনই বলেছিলাম এদের দ্বারা মূল্য নির্নয় হবে না।
তচ্ছ্রুত্বা তয়োঃ সবিধমাগত্য (আসাদ্য) সুবলেনোক্তম-সখি চন্দ্রমুখী! বয়স্যস্য মূল্যবিষয়ে মহানাগ্রহো দৃশ্যতে।  তেন প্রিয়সখী রাধা, ললিতাদিভিঃ সহাগত্য সমক্ষমেব সমুচিতমূল্যং প্রদায় স্বেপ্সিতমুক্তাফলানি গৃহ্নান্তু।  তত্র ময়া মধ্যস্থেন ভূত্বা সাচিব্যং করণীয়ম।। ৫৪
তা শুনে সুবল তাদের দুজনের কাছে গিয়ে বলতে লাগলেন সখি চন্দ্রমুখী! আমার মিত্রের মূল্য নির্ধারন করতে সদিচ্ছা রয়েছে। তাই প্রিয়সখী রাধা ললিতাদির সাথে এসে তাদের সামনেই সমুচিত মূল্য প্রদান করে মুক্তা ফল ক্রয় করো।  এই বিষয়ে আমি মধ্যস্থ হবো।
ইতি নিশম্য চন্দ্রমুখী কাঞ্চনলতে তাসাং সবিধে গত্বা সরোষমিব সর্ব বৃত্তং কথয়াংচক্রতুঃ।। ৫৫
আমার কথা শুনে তারা দুজনে রাধাদি সখীর কাছে গিয়ে রাগের সাথে সম্পূর্ণ বৃত্তান্ত বললেন।
ততশ্চ রাধা ললিতাদিভিঃ সহ মৌক্তিকাবাটীপ্রান্তমাসাদ্য চন্দ্রমুখীদ্বারা সুবলমাকার্য্য তমাহ, প্রিয়বয়স্য সুবল! অস্মাসু ভবতো নিরঙ্কুশঃ স্নেহ, অতঃ স্বয়মেব তথা বিধীয়তাম, যথাস্মাভিঃ সমুচিত মূল্যেন মুক্তাফলানি লভ্যন্তে।। ৫৬
তারপর রাধা ললিতাদি সখীদের নিয়ে তারা দুজনে আবার মুক্তা বাটিকায় এলেন। ও চন্দ্রমুখীর দ্বারা সুবল কে ডাকিয়ে তাকে বললেন প্রিয় বয়স্ব সুবল! আমাদের প্রতি তোমার স্বাভাবিক প্রীতি আছে। তাই তুমিই ভেবে এমন উপায় করো যাতে আমাদের সমুচিত মূল্যে মুক্তা প্রাপ্ত হয়।
তচ্ছ্রুত্বা সুবলেন মহ্যং নিবেদ্য মদ্বচনেন মৎসন্নিধৌ তাঃ ললিতাদয়ঃ সমানীতাঃ।। ৫৭
তাদের কথা শুনে সুবল এসে আমায় বললো আমার কথানুযায়ী মুক্তার মূল্য নির্ধারণের জন্য সে ললিতাদিকে আমার কাছে নিয়ে এসেছে।
রাধা তু মমাত্রাগমনং ত্বয়া মদুপদ্রাবক স্বপ্রিয়বয়স্যায় সর্বথা ন প্রকাশমীয়মিতি সুবলমাভাষ্য সন্নিকটস্থকদম্বকুঞ্জান্তর্নিখিল বৃত্তান্তং নিশময়ন্তী নিগূঢ়মাস্থিতা।। ৫৮
রাধিকা সুবলকে বুঝিয়ে বলেছিল যে — তুমি আমার আসার সংবাদ তোমার মিত্রকে দিওনা। কেননা তার থেকে আমার উপদ্রবের আশঙ্কা আছে।  এই বলে রাধা কাছেই কদম্বকুঞ্জে লুকিয়ে লুকিয়ে সমস্ত বৃত্তান্ত শুনতে লাগলেন।
ততো ময়া তাঃ সর্বা নিভাল্য "রাধা কথং ন দৃশ্যতে" ইত্যুক্তে তুঙ্গবিদ্যয়োক্তম- গোকুল যুবরাজ! সা খলু সপ্রণয়ং আর্য্যয়া জটিলয়া কস্যচিদগৃহকার্য্যবিশেষস্য কৃতে রক্ষিতা গৃহে বিদ্যতে।। ৫৯
আমি এসে গোপীদের ভালো করে দেখে রাধা কে দেখতে না পেয়ে জিজ্ঞাসা করলাম রাধা কে কেন দেখতে পাচ্ছিনা। আমার প্রশ্ন শুনে তুঙ্গবিদ্যা বললেন — হে গোকুল যুবরাজ! রাধার শ্বশ্রুমাতা আর্য্যা জটিলা কোন গৃহকার্য্যে তাকে নিযুক্ত করেছেন তাই সে আসতে পারেনি।
ততস্তদবসর এব প্রবিষ্টেন মধুমঙ্গলেন ইঙ্গিত বিজ্ঞাপিত রাধানিগূঢ়মন্নিকট স্থিতিমবধার্য্য কিঞ্চিদ্বিহস্য ময়োক্তম, -তুঙ্গবিদ্যে! মুক্তাগ্রহণেচ্ছা তস্যা ন বিদ্যতে ইতি দৃশ্যতে।। ৬০
এই সময় মধুমঙ্গল আমার কাছে এসে ঈশারায় বললো রাধা কাছেই কদম্বকুঞ্জে লুকিয়ে আছে। তার ঈশারায় এই রহস্য বুঝে হেসে বললাম তুঙ্গবিদ্যে মনে হয় রাধার মুক্তা ক্রয়ের কোনো ইচ্ছা নেই।
ততস্তয়োক্তম, - ন হি ন হি তন্মুক্তামূল্যমস্মাভিরেব দাস্যতে।। ৬১
 তখন তুঙ্গবিদ্যা বললো— না ইচ্ছা কেন থাকবেনা তার মুক্তার মূল্য আমি দেবো।
তদা ময়োক্তম - বিশাখেব রাধা, রাধৈব বিশাখা, ততস্তন্মূল্যং বিশাখৈব দাস্যতীতি জ্ঞায়তে। ভবতু তত্র মমাগ্রহো নাস্তি কিন্তু যা খলু স্বয়মাগত্য ন গৃহ্ণাতি তস্যাশ্চতুর্গুণং মূল্যং গৃহ্যতাং, মৌক্তিকানি চ সাধারণান্যেব দীয়ন্তাম, ইতি মে সর্বেষাং সখীনাং সুদৃঢ়ো নির্ণয়ঃ।। ৬২
আমি বললাম বিশাখাই তো রাধা আর রাধাই তো বিশাখা। তাই তার হয়ে মূল্য বিশাখা দেবে বলে মনে হয়।  যাইহোক তাতে আমার কোনো আগ্রহ নেই। কিন্তু যেই গোপী নিজে এসে মুক্তা না নেবে তাকে চারগুণ মূল্য দিতে হবে।  তাকে সবচেয়ে সাধারন মুক্তাই দেওয়া হবে। আমার সব সখাদের এই সুদৃঢ় সিদ্ধান্ত।
তদনু সুবলং প্রতি ময়োন্তম, সখে সুবল! অবচিত মুক্তাপূর্ণসম্পূটানানীয় পুরতঃ প্রসার্য্য বিচিত্য সর্বকনিষ্ঠান্যেব মৌক্তিকানি পূর্বকৃতং তৎকার্পণ্যমপ্যবিগণয্য প্রথমং ততকৃতে বিশাখায়াং সমর্প্য তৎ সকাশাচ্চ তন্মূল্যং গৃহ্যতাম।  যদি বা প্রস্তুতং দাতুং ন শক্নোতি ততস্তদভিন্নেয়ম।  তাবৎ পুষ্পপ্রবালচোরিকা গোপকন্যকা যত্র রক্ষয়ন্তে তত্রৈবারান্মাধবীকুন্জকারায়াং সংরুদ্ধয় রক্ষয়তাম।। ৬৩
তারপর আমি সুবল কে বললাম— হে মিত্র সুবল!  মুক্তা পূর্ণ পেটিকা গুলি আমার কাছে  নিয়ে এসে তা থেকে সবচেয়ে বাজে মুক্তা গুলি বার করো।  আগে রাধা যে আমার সাথে কৃপণের মতো কৃষ্ণ ব্যবহার করেছে তা সব ভুলে ভালো ভালো মুক্তা গুলি প্রদান করো তথা বিশাখার থেকে তার মূল্য নাও।  যদি সে নগদ মূল্য দিতে না পারে তাহলে, তাকে কুন্জে ফুল চুরি করতে আসা গোপকন্যা দের আমরা যেখানে বন্দী করি সেই মাধবীকুঞ্জ কারাগারে বন্দী করে রাখো।
তচ্ছ্রুত্বা মধুমঙ্গলেনোক্তম- প্রিয়বয়স্য! নিশীথেহপি পররামাভিঃ পলায়নবিদ্যাঃ স্ফুটমধীতাঃ সন্তি।। ৬৪
আমার কথা শুনে মধুমঙ্গল বললো প্রিয় মিত্র! বেঁধে রাখলেও এই গোপীরা রাতে পালিয়ে যাবে।  তারা অন্য গোপীদের থেকে বাঁধন খুলে পালানোর বিদ্যা শিখে রেখেছে।
তদা ময়োক্তম- বয়স্য! ময়াণ্যেতদ জ্ঞায়তে এব।  কিন্তু চিন্তা নাস্তি, যদ্যপি পররামাস্পর্শোলজ্জা ত্যাগশ্চাস্মদ্বিধানাম স্বপ্নেহপ্যতীবায়োগ্যস্তথাপি,- "স্বকার্য্যমুদ্ধরেৎ প্রাজ্ঞঃ কুর্ব্বন্নপি বিগর্হিতম"। তথা "আহারে ব্যাবহারে চ লজ্জামপি পরিৎজেত"। ইতি সংহিতাবচনবলাদহমেব প্রহরিকো ভয়ন সর্বমেব রাত্রিম জাগ্রন্নিরন্তরং নিবৎস্যামি।। ৬৫
তখন আমি বললাম হে মিত্র! এই কথা আমি ভালো ভাবে জানি। তবুও কোনো চিন্তা নেই। যদিও পরস্ত্রী স্পর্শ জাতীয় নির্লজ্জতা আমার মতো ব্যাক্তিদের পক্ষে স্বপ্নেও ভাবার অযোগ্য। তথাপি— বুদ্ধিমান পুরুষ নিন্দনীয় কৃত্য করেও নিজ অভীষ্ট কাজ করে নেয়।  তথা আহার ব্যবহার এ লজ্জা রাখা উচিত নয়। এই প্রকার নীতি ও বচন অনুসারে আমি স্বয়ং পাহারাদার হয়ে ওখানে সারা রাত জেগে থাকব।
ইতি নিশম্য সুবলসস্মিতমাহ,— পুরুষোত্তম! প্রিয়সখ্যা বিশাখয়া এতাবতি মহাসঙ্কটে কিয়ন্তম কালম স্থাতব্যম? ৬৬
তা শুনে হেসে সুবল বলল— হে পুরুষোত্তম! প্রিয়সখী বিশাখা এই মহান সঙ্কট কে কতক্ষন সহ্য করবে?
ততো ময়োক্তম যদর্থমিয়ম রক্ষতে সা যাবৎ নিঃশেষং মূল্যদ্রব্যম ন প্রস্থাপয়তি, কিম্বা কিয়দদ্রব্যং গৃহীত্বা স্বয়মেবাগত্য ধ্রুবমস্যাঃ স্নেহাদিত্থমত্র স্থিত্বা অবশিষ্টদ্রব্যানয়নার্থমেনাং প্রস্থাপয়তি। তাবদনয়া স্থাতব্যম।। ৬৭
আমি উত্তর দিলাম যারজন্য তাকে বেঁধে রাখা হবে যতক্ষন না সে সম্পূর্ণ মূল্য না পাঠাবে, বা তার প্রতি স্নেহবশত স্বয়ং যদি বন্ধন স্বীকার করে বিশাখার দ্বারা স্বর্ণ জোগাড় করে মূল্য না মিটিয়ে দেয় ততক্ষন তাকে এখানে থাকতে হবে।
ইতি শ্রুত্বা মধুমঙ্গলঃ প্রাহ- সখে! এতদগোষ্ঠীনামধীশা সা সর্বাভ্যোহপি সর্বকর্ম্মণি বিচক্ষণা, বিশেষতঃ পলায়নে, গব্যঘট্টয়াম দানাদিষু সর্ব্বৈরস্মাভিঃ পুনঃ পুনঃ প্রত্যক্ষীকৃতাস্তিত্বন্ত্বনিশমুতঘুর্ণসে তেন মে মহতী চিন্তা জায়তে।। ৬৮
তা শুনে মধুমঙ্গল বলল, — ওহে মিত্র এই সম্পূর্ন গোপীদের অধীশ্বরী রাধা সমস্ত কাজেও এদের থেকে চতুরা। বিশেষ করে পালাতে। দানঘাটী আদি স্থানে গোরস দানের সময় আমরা অনেকবার তা প্রত্যক্ষ দেখেছি। তুই তো নিরন্তর উদঘূর্ণা দশায় থাকিস। তাই আমার বড় চিন্তা হচ্ছে।
ততঃ স্মিতমপবায্যহিমবদম, - সখে! অলমনয়া চিন্তয়া।  তন্নিকটে মমোদঘূর্ণা ন জনিষ্যত এব। যদি বা জায়েন তর্হি মদুত্তমাঙ্গস্য তদ্বামভূজামৃণানোমুপধানীকৃত্য তদুরস্তল্পোল্লসিত পীতপট্টাম্বর বরবিধূপধানোপরি মদ্বামকরপল্লবমরূণমভিন্যস্য তথা মৌক্তিক পণনিমিত্তকবাগ্বিলাসমুল্লাসয়িষ্যামি যথা মুখেন জাগয্যর্য়ৈব চত্বারো রজনিষামা দ্রুতমেব বিরমন্তি।  অথবা মদুরোনাম ঘনান্ধকার বিষমকারাগারান্তস্তাং প্রবিশ্য তৎপার্শ্বযুগলং কঠোরভূজগারুত্মতার্গলাভ্যাং দৃঢ়ং সংরুদ্ধয় সুখেন নিরাতঙ্কঃ স্বপ্নবিলাসং বিতরিষ্যামি।। ৬৯
তখন আমি হেসে মধুমঙ্গল কে বললাম— আরে মিত্র এসব চিন্তা ছাড় ঐ রাধার সামনে থাকলে আমার একটু ও তন্দ্রা আসবেনা।  আর যদি এসে ও যায় তো কি আমি তার কমলনাল রূপী বাম ভূজা কে আমার মাথা রাখার তাকিয়া বানিয়ে নেব। তার বক্ষস্থলে আমার পীতাম্বর চন্দ্রাতপের মত রেখে তার উপর আমার অরূনবামকরপল্লব স্থাপন করব।  তারপর মুক্তার মূল্য ছাড় দেওয়া নিয়ে কথা বলতে থাকব।  এই কথা বলতে বলতে ই চারপ্রহর রাত্রি কেটে যাবে।  অথবা আমার বিষম অন্ধকারময় মহাকারাগার রূপী উরঃস্থলে স্থাপন করে নীলমণি হতেও কঠিন দুই বাহু দ্বারা দৃঢ় করে ধরে থাকব। তারপর নিঃশঙ্ক চিত্তে আমার স্বপ্নবিলাস বিস্তার করব।
ইতি শ্রুত্বা সর্বাঃ স্ময়মানা বভূবুঃ। রাধা তূদগ্রীবিকয়া মাং বিশাখ্যং সর্বাশ্চ সখীরবলে কয়ন্তী আহ, -চন্দ্রাবলীকেলিকুরঙ্গং! তিষ্ঠ তিষ্ঠেতি অনুচ্চৈর্মা তর্জ্জয়ন্তী সুস্মিতাসীত।। ৭০
আমার এই কথা শুনে সব সখীরা হাসতে লাগল। কিন্তু রাধা কুঞ্জলতার আড়াল থেকে মুখ তুলে আমার ও সব সখীদের দিকে তাকিয়ে বললো— হে চন্দ্রাবলীর ক্রীড়ামৃগ! দাঁড়াও দাঁড়াও — এই ভাবে মৃদুস্বরে তর্জন করতে করতে হাসতে লাগলেন।
বিশাখা তু কুটিলট্টষ্টয়া মামবলোকয়ন্তী আহ, - ব্রজধূর্ত্তধৃষ্ট! অপেহি অপেহীতি বদন্তী সখীমধ্যে লীনা বভূব।। ৭১
কিন্তু বিশাখা কুটিল দৃষ্টিতে আমায় দেখতে দেখতে বললো— হে ব্রজ ধূর্ত শ্রেষ্ঠ। পালিয়ে যা এখান থেকে পালিয়ে যা।— এরূপ বলে তিনি গোপীদের সঙ্গে মিলিত হলেন
ততঃ সর্বাভিঃ সবলংপ্রত্যুক্তম, - সুবল! বিদূষকতাম্ ত্যজঃ যদি ভবতাং বিক্রয়েচ্ছা বর্ত্ততে, তর্হি মুক্তাঃ প্রদর্শ্য সমুচিতমূল্যেন প্রদীয়ন্তাম, নোচেদ্ধয়ম গৃহং গচ্ছামঃ। মথুরান এব মৌক্তিকান্যানয়িতব্যানি।।  ৭২
তারপর সব গোপীরা সুবল কে বলতে লাগল — হে সুবল! পরিহাস ছাড়ো। যদি তুমি মুক্তাফল বিক্রয় করতে চাও তো মুক্তা দেখিয়ে আমাদের সমুচিত মূল্যে দাও। নয়ত আমরা ঘরে ফিরে যাচ্ছি।  মথুরা থেকেই আমরা মুক্তা কিনে নেবো।
ইতু নিশম্য সুবলেন সম্পূটানুদ্ঘাটয় তাভ্যো মৌক্তিকানি প্রদর্শ্য মাং প্রযুক্তম্- প্রিয়বয়স্য! ইমানি মৌক্তিকান্যমূল্যানি আভিগৃহপত্যাদিক্যং সমস্তগোধনানি চ বিক্রীয়াপি একস্যাপি মূল্যং দাতুমশক্যং। এতাঃ খলু ভবত স্নিগ্ধাঃ সর্বানুপেক্ষ্য ত্বামেব জানন্তি। তস্মাদেতৎপূর্ব্বকৃতকার্পণ্যমপি বিস্মৃত্য মাঞ্চ ত্বদনুগতমবেক্ষ্য যৎকিঞ্চিন্মূলং গৃহীত্বা বিনামূল্যেন দত্তবদাসামভীপ্সিতমৌক্তিকানি দাতুমাজ্ঞাক্রিয়তাম্।। ৭৩
তার কথা শুনে সুবল মুক্তার পেটিকা তাদের সামনে এনে খুলে খুলে দেখাতে লাগলো। ও আমাকে বললো হে প্রিয় মিত্র! এই সকল মুক্তা অমূল্য। এই গোপীরা নিজেদের ঘরের সমস্ত সামগ্রী ও গোপদের সমস্ত গোধন বিক্রয় করেও একটি মুক্তার ও মূল্য দিতে পারবেনা। কিন্তু এরা তোমার অনুরাগিনী, তোমার সখী। সকলকে উপেক্ষা করে কেবল তোমাকেই জানে। তাই এদের পূর্বকৃত কৃপণ ব্যবহার কে ভুলে আমাকেও তোমার অনুগত জেনে নামমাত্র মূল্যে বা ধরো বিনামূল্যেই এদের বাঞ্ছিত মুক্তা দিতে আমায় আজ্ঞা দাও।
ততোহহং সখে ন হি ন হি বয়ং বাণিজ্যব্যাবসায়িনঃ। ভবতু কিং কর্তব্যং ভবদ্বচনঞ্চ রক্ষণীয়ম, তদঘত কিঞ্চিদল্পমেব ময়া মৃগ্যতে, তদ্দাপয়িত্বৈব দীয়ন্তাম। কিঞ্চ উৎকোচং গৃহীত্বা বারম্বার মম ঘট্টীদানদ্রব্যাণি ভবতা বিনাশিতানি সন্তীতি মম কেনাপি কথিতমস্তি তস্মান্মূল্যদ্রব্যং সমক্ষমেব ময়ৈবাভ্যো গৃহীতব্যম।।৭৪
আমি বললাম— হে সখে! না না তা হোতে পারেনা। আমরা তো বৈশ্যজাতি বানিজ্য করাই আমাদের ধর্ম। আবার তোমার কথাও আমি ফেলতে পারিনা। যা হোক আমি সামান্য যা মূল্য চাইছি তা এদের থেকে নিয়ে আমায় দিয়ে এদের বাঞ্ছিত মুক্তা দাও।
কিন্তু তুমি আগে বারবার এদের থেকে উৎকোচ নিয়ে দানঘাটিতে আমার দানের প্রাপ্ত রাশির থেকে অনেক কম পেয়েছি— এরকম আমি কারো কারো মুখে শুনেছি। তাই তাদের কাছে গিয়ে আমি মূল্য স্বয়ং ই আদায় করে নেবো।
সুবলঃ কিঞ্চিদ্বিহস্যাহ, - ভদ্রং বচঃ, কিঞ্চ এতাভিঃ স্বীয়স্বীয়াভীপ্সিতমৌক্তিকানি বিচিত্য পৃথক পৃথক কুটীকৃতানি দৃষ্ট্বা ভবতাপি স্বাভীপ্সিতমূল্যং কথ্যতাম।। ৭৫
সুবল হেসে বললো— উত্তম প্রস্তাব। গোপীরা মুক্তা পছন্দ করে বেছে নিয়ে নিয়েছে।  সেগুলি দেখে তুমিও তোমার ইচ্ছা অনুসার মূল্য বলো।
ততোহহমব্রবম, - ভদ্রং দর্শয়স্তু স্বস্বাভীপ্সিত মৌক্তিকানি মূল্যং কথ্যতে ময়া।। ৭৬
তখন আমি বললাম তোমরা যেসব মুক্তা নিয়েছ সেগুলি আমাকে দেখাও তারপর আমি তার মূল্য বলবো।
সুবলঃ প্রাহ, প্রিয়বয়স্য! এতাঃ বিনয়েন যন্নিবেদয়ন্তি তৎ কৃপয়াবধার্য্য ভবতে যদি রোচতে তদা বিধীয়তাম।। ৭৭
সুবল বললো হে প্রিয় মিত্র! এরা বিনয়পূর্বক তোমার কাছে যা নিবেদন করছে তা কৃপা করে শুনে বুঝে নাও। তারপর যা তোমার অভিরুচি তাই করো।
ততোহহম,-সুবল! কথ্যতাং, কিং নিবেদয়ন্তি, যুক্তঞ্চেৎকর্ত্তব্যম।। ৭৮
আমি বললাম — সুবল! বলো এরা কি বলতে চায়? যদি উচিত হয় তো করবো।
next page>>>