Dana keli Cintamani| Raghunath das goswami books

Dana keli Cintamani| Raghunath das goswami books



Dan keli Cintamani | Raghunath das goswami books

Dana keli Cintamani By Raghunath Das Goswami


 Mukta carita  Raghunath Das Goswami Books: Dedication
এই গ্রন্থরত্নটি আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সঙ্ঘ  ইসকন প্রতিষ্ঠাতা আচার্য্য কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল অভয়চরনারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভূপাদের করকমলে উৎসর্গীকৃত।


কুর্বানৈঃ শতম আশিষম্ নিজ নিজ প্রেয়ো জয়ায়োৎসুকৈঃ।
স্বীয় স্বীয় গণৈঃ স্ফুটম কুটিল্য বাচতি তুঙ্গীকৃতঃ
গব্যানাং নব দানকল্পনা কৃতে প্রৌঢ়ং মিথঃ 
স্পর্ধিনোর্গান্ধর্বা গিরিধারীণোর্গিরিতটে কেলিকলৈঃ পাতু বঃ।।১
 অনুবাদ:-গোবর্দ্ধন গিরিতটে দানঘাটীতে দুগ্ধদধি সামগ্রীর দান আদান প্রদানের জন্য নিজ নিজ বয়স্য গন সহ শ্রী রাধা গিরিধারী উপস্থিত হয়েছেন। যাদের বয়স্য গন নিজ প্রিয়সখা র বা নিজপ্রিয় সখীর জয়ের জন্য উৎসুক হয়ে পরষ্পর কুটিল বক্রোক্তি করছেন। তাদের এইরূপ শত শত বাঞ্ছা পূরণে যে নবীন যুগল নব দানকেলি লীলা রচনা করেছেন সেই রাধা গিরিধারী তোমাদের রক্ষা করুক।
অনুব্যাখ্যা:- কেলি কলৈঃ ইত্যাদি পদে বস্তু নির্দেশ রূপ মঙ্গলাচরণ করেছেন। নন্দেরনন্দন, ব্রজবিলাসী, রাধা সহিত গিরিধারীই পরম তত্ত্ব। সেই লীলা কর্ণচষক দ্বারা পানে সকলে উন্নত উজ্জ্বল রসাবিষ্ট হউক এই আশীর্বাদ করেছেন।
উদ্দাম নর্মরস রঙ্গ তরঙ্গ কান্ত 
রাধা সরিদ গিরিধরার্ণব সঙ্গমোত্থম।
শ্রীরূপচারুচরনাম্বুজরজঃ প্রভাবাদ
 অন্ধোহপি দান নব কেলি মণিম চিনোমি।।২
যদিও আমি অন্ধ(অজ্ঞতার অন্ধকারে দৃষ্টিশক্তিহীন) কিন্তু শ্রীরূপগোস্বামীপাদের চরণকমলের ধূলি প্রভাবে নব দান কেলি লীলা রূপ চিন্তামণি সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি। (কুন্ডল করে কর্ণদ্বয় অলঙ্কৃত করতে সংগ্রহ করেছি, এই অর্থে)
চিন্তামণি কি দিতে পারে?
সমুদ্র ও নদীর মিলনে যেমন অসংখ্য তরঙ্গ উৎপন্ন হয় তেমন সখীগন সহ রাধাও গিরিধারীর মিলনে উৎপন্ন উদ্দাম কৌতুক রস বাক্যের অসংখ্য তরঙ্গ আনন্দসমুদ্রে নিমজ্জিত করে।
সহারাখ্যং জয়তি সদনম গোকুলে গোকুলেশ
ভ্রাতা মন্ত্রী বসতি সুমতিস্তত্র নাম্নোপানন্দঃ।
তস্য শ্রীমাননিখিলগুণবানসূনুর্আদ্যঃ সুভদ্রো 
ভার্য্যা তস্যাতুলাকুলবতী কুন্দপর্বালতান্তে।। ৩
সহরগ্রামের জয় হোক।  যেখানে গোকুলপতি নন্দ মহারাজের ভ্রাতা ও মন্ত্রী উপানন্দ বাস করেন। উপানন্দের সর্বগুনবান পুত্র শ্রীমান সুভদ্র।  তার স্ত্রী কুলবতী কুন্দলতাদেবী।
পুষ্পৈর্ভৃঙ্গৈর্বিবিধবিহগৈর্ভ্রাজদঊর্বীরূহানাং 
শন্দৈঃ সম্যগবিলাসিতত্মে নিষ্কুটে সৌরভাঢ্যে।
খেলন্ত্যোরু প্রণয়ম অনয়া হন্তা কুত্রাধুনা তৌ 
কুর্বতে কিং কিম ইতি সুমুখী তত্র পৃষ্টা বয়স্যা।। ৪
সুভদ্রের গৃহের নিকটে অপূর্ব সুগন্ধ সৌরভে আমোদিত, ভ্রমর, পুষ্প, ও বিবিধ পক্ষী সুশোভিত বৃক্ষ সমন্বিত কুঞ্জে কেলি করতে করতে কুন্দলতা তার সখী সুমুখীকে জিজ্ঞাসা করলেন হে বয়স্যা তারা (শ্রীরাধা কৃষ্ণ) এখন কোথায় ও কি করছেন?
তস্যাঃ শ্রীমদবদনকমলাৎ জল্প মাধ্বীক ধারাস্যন্দম
রাধাগিরিবরধর প্রশ্ন কর্পূরকাম্রম।
পীত্বানন্দোচ্ছলিত পুলকোজ্জৃম্ভ সম্ভাবুক শ্রীঃ
স তদ বার্তাং প্রথায়িতুম অথারম্ভম উৎকা চকার।।

যখন সে কুন্দলতার মুখ নিঃসৃত মাধ্বীকধারার ন্যায় অমৃতবর্ষী বাক্যধারা শ্রবণ করল যা রাধা গিরিধারীর বিষয়ক প্রশ্ন রূপ কর্পূর যুক্ত ছিল। অত্যন্ত উৎসুক হয়ে আনন্দে উচ্ছল সুমুখী র সর্বাঙ্গে রোমাঞ্চ হতে লাগল।  সে বলতে আরম্ভ করল—
শস্তস্যার্থে স্বসুতহলিনো মিত্র পুত্রাঘশত্রোর্হপি 
আসক্ত্যা প্রতিনিধিতায়া শৌরিণাসন্নিযুক্তঃ।
শাত্রং কর্তুং রহসি ভগবান ভাগুরির্দীক্ষিতোহভূৎ
স্নেহোল্লাসৈঃ সহমুনিগনস্তত্র গোবিন্দকুন্ডে।। ৬
মহারাজ বসুদেব তার নিজপুত্র হলধর বলরাম ও মিত্রপুত্র অঘশত্রু কৃষ্ণের মঙ্গলের জন্য গোপনে ভগবন ভাগুরীর দ্বারা এক যজ্ঞের আয়োজন করেছেন। বহু শিষ্য সহ মহামুনি ভাগুরী গোবর্ধন গিরিতটে গোবিন্দকুন্ডে কৃষ্ণ বলরামের প্রতি স্নেহোল্লাসে যজ্ঞানুষ্ঠান করছেন।
তস্মিন শত্রে রুচিরাম অচিরাম্ নব্য গব্যং স্বয়ং যঃ 
ধৃত্বা নীতং শিরসি শূচয়োদদ্যুর্আভীরবামাঃ।
তাভ্যাঃ কামান অথ মণিগণালঙ্কৃতীঃ সৌভাগম্ চ
প্রীত্যা সত্যং সদসী মুনয়ো হন্তা যচ্ছন্তি সদ্যঃ।। ৭
তাই জন্য শুদ্ধাহৃদয় গোপীগণ মাথায় করে ঘৃতাদি গব্য সামগ্রী নিয়ে সেই যজ্ঞক্ষেত্রে উপস্থিত হলেন ও ঋষিদের প্রদান করলেন। ঋষিরা অত্যন্ত খুশি হয়ে তাদের আশীর্বাদ করলেন ও নানা মণিরত্নালঙ্কার উপহার দিয়ে মনোবাঞ্ছা পূরণ করলেন।
নানাবৃক্ষৈর্মধুকররুতস্যন্দিপুষ্পাভিরাময়ৈঃ
কুঞ্জস্তোমৈর্হপিচ পরিতঃ তাদৃশৈঃ ভ্রাজিতস্য
সৌরভ্যাঢ্যৈঃ কুমুদকমলৈঃ সাধুফুল্লৈঃ বিরাজৎ
পানীয়স্য স্বকৃত সরসস্তীর কুঞ্জে বসন্তি।। ৮
শ্রুত্বৈতান নিভৃতবিবৃতিং সুক্ষ্মধীশারিকাস্যাদ
উৎকন্ঠাভিঃ তকলিত মনাঃ স প্রিয়ালিগণা স।
স্নাত্বা সম্যগ বিবিধ বসনৈর্ভূষণৈর্ভূষিতা 
দ্রাক্কাশ্মীরৈস্ততপ্রণয়পটলৈর্হপি অলম রূষিতা চ।। ৯
কৃত্বা পূজাম অথ দিনপতেঃ শুদ্ধভাবেন 
শুদ্ধাবদ্ধাকাঙ্ক্ষাম্ হৃদয়গগনে গোষ্ঠচন্দ্রম্ স্মরন্তি।
হৈমম্ কুম্ভম্ নিহিতা বিকসৎ গন্ধহৈয়ঙ্গবীনম্
ধৃত্বা প্রীত্যা শিরসি চলিতা রাধিকা স্বীয়কুণ্ডাৎ।।১০
মধুকর গুঞ্জিত পুষ্প সমন্বিত নানা বৃক্ষ লতা পরিপূর্ণ কুঞ্জ দিয়ে ঘেরা ও কুমুদ, পদ্ম ইত্যাদি পুষ্প সুশোভিত জলপূর্ণ স্বকৃত কুন্ডতীরে (রাধাকুন্ড) বসে রাধিকা তার প্রিয় শারী সুক্ষ্মধীর মুখে মহারাজ বসুদেব দ্বারা গোপনে অনুষ্ঠিত সেই যজ্ঞের ব্যাপারে শুনলেন। সেই কথা শুনে তার চিত্ত চঞ্চল হয়ে উঠল।  তিনি তার সখীদের সাথে সেখানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। সখীরা তাকে স্নান করিয়ে নতুন বস্ত্র ও নানা অলঙ্কার দিয়ে শৃঙ্গার করিয়েদিলেন। কুঙ্কুম ও চোখে কৃষ্ণ প্রণয় রূপ কাজল লাগিয়ে পরম পবিত্রতার সাথে সূর্যপূজা করলেন। তারপর শুদ্ধ ও সদ্য নির্মিত সোনালী রঙের সুগন্ধী ঘৃত পূর্ণ কলস মাথায় করে, হৃদয়াকাশ রূপ ব্রজে উদিত কৃষ্ণ চন্দ্রের ধ্যান করতে করতে অত্যন্ত আনন্দের সাথে রাধারানী সখীদের সাথে রাধাকুন্ড থেকে গোবিন্দকুন্ডের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন।
স্মিত্বা স্মিত্বা পথি পথি মিথঃ কুর্বতি কৃষ্ণবার্তাম
আর্তা তস্যানবকলনতঃ স্নিগ্ধতা শালভঞ্জী।
প্রেমস্তোমোল্ললিতাললিতাম্ নর্মফুল্লদবিশাখাম্
দৃষ্ট্বা দৃষ্ট্বা সুদতি মুমুদে নর্ম ভঙ্গ্যা নিকামম।। ১১
হে সুদতি(সুন্দর দাঁত যার) সুন্দরী কুন্দলতে! কৃষ্ণ বিরহে আর্ত, কামদেবের হাতের পুতুল শ্রীরাধা প্রেমপ্রাচুর্য্যময়ী ললিতা ও প্রফুল্ল বিশাখার দিকে সলজ্জ দৃষ্টিপাত করতে করতে কৃষ্ণ কথা বলতে বলতে মৃদুমন্দ হাস্য পরিহাসের সহিত পথে চলতে লাগলেন।
স্নিগ্ধতা= প্রিয়তা শালভঞ্জী=কাষ্ঠাদিনির্মিত পুত্তলিকা, উল্লোলিতা= তরলিতা/আন্দোলিতা
গন্ধৈর্ভ্রাজৎ কুসুম পটলী মৃষ্ট মাধ্বীক মাদ্যদ ভ্রাম্যদ
 ভৃঙ্গ প্রকার বিলসচ্ছাখা সখী প্রপঞ্চঃ।
 শষ্পৈঃ  সান্দ্রৈঃ সুবলিতা ভুবঃ স্বাদু সৎ কান্ড 
মূলান্যঞ্চদধ্বানদ্বিজমৃগগণাশ্চারুনানা ফলানি।। ১২
 স্থানে স্থানে বিবিধ বিটপিক্রোড়রত্নোরুবেদ্যঃ
 স্থানে স্থানে পরিমলবলদরত্ন সিংহাসনৌঘঃ।
 স্থানে স্থানে বরঝরদারীসানবোভান্তি যস্মিন
 শৈলেন্দ্রম্ স গিরিধরকরপ্রাপ্তমানম্ দদর্শ।। ১৩
 তিনি পথে যেতে যেতে শ্রী গিরিধারীর হস্তস্পর্শ জনিত গর্বোদ্ধত regal পর্বত গোবর্দ্ধন কে দেখলেন। যেখানে নানা সুগন্ধী পুষ্পে শোভিত বৃক্ষ রয়েছে, সেই পুষ্প গুলির মকরন্দ মাধ্বীক গন্ধে মত্ত হয়ে ভ্রমরকুল গুঞ্জন করছে। কোথাও নানান ফল শোভিত বৃক্ষ সুগন্ধিত কন্দ মূল, কোথাও সুমিষ্ট তৃণ ভোজনে ব্যাস্ত ভীরু মৃগের দল, কোথাও কলতান মুখরিত পক্ষীকুল। কোথাও বৃক্ষতলে রত্নবেদী কোথাও রত্ন সিংহাসন রয়েছে। কোথাও নানা বাদ্যযন্ত্র যোগে কৃষ্ণ কীর্তনে রত তীব্রবেগশালী পাহাড়ী ঝর্না। কোথাও রাধা কৃষ্ণের গোপন মিলন স্থান "কেলি কন্দর"।
 লব্ধা গোবর্দ্ধন গিরিম অথ প্রাপ্য সৌরভ্যসারং
 শশ্বত প্রীত্যা মুনি বর গণৈর্দত্তা গব্যাহুতিনাম।
 আকৃষ্টোদ্যৎসুখভর রসেনাশু গন্তুং সমুৎকা
 স্থূলশ্রোণিকুচযুগভরানমন্থরাতাননিনিন্দ।। ১৪
 যখন তারা গোবর্দ্ধনের নিকটবর্তী হলেন তখন ঋষি গণের যজ্ঞে ঘৃতাহুতি দেওয়ার ফলে উৎপন্ন ঘৃতের সুগন্ধ পেয়ে ও কৃষ্ণ মিলনে উৎসুক হয়ে শীঘ্র গমনে বাধা রূপ স্থূল শ্রোণি ও কুচযুগের ভারকে নিন্দা করতে লাগলেন।
 জ্ঞাত্বা তাসাম্ গমনম অচিরম্ কীর বর্যস্য বক্ত্রাৎ
 স্মিত্বা নর্ম প্রিয় সখা গণৈর্আবৃতঃ সাবধানঃ।
 শৈলেন্দ্রস্যোপরি পরিলসন্ন উদ্ভটশ্যামবেদ্যাম্
 ঘট্টীপট্টম্ বিদধাদ অতুলম্ বল্লভাধীশসূনুঃ।। ১৫
 স্মেরম্ সুরক্তপট্টভূষণভূষিতাঙ্গীম্
 মূর্ধনীম্ স্ফুরৎ স ঘৃত হেম ঘটীম বহন্তীম।
 সার্ধম্ তথাবিধসখীনিবহেনরাধাম্
 যান্তীম্ মরালগতিচারু ললাপ পশ্যন।। ১৬
 এদিকে শ্রীকৃষ্ণ তার প্রিয় ও শ্রেষ্ঠ শুক পক্ষীর কাছে গোপীদের আসার খবর পেয়ে হেসে তার প্রিয় নর্মসখাদের সাবধান করলেন। ও গোবরদ্ধনের এক কৃষ্ণ বর্ণের শিলার উপর বসে সখাদের নিয়ে দানঘাটী বসালেন।
 যখন কৃষ্ণ সুন্দর রক্তবস্ত্র পরিহিতা নানা অলঙ্কারে ভূষিতা রাধা কে দেখলেন যিনি মাথায় সোনালী রঙের সুগন্ধিত ঘৃত নিয়ে স্মিতহাস্যে গর্বিতা রাজহংসীর মত গোপীগণের সাথে অগ্রসর হচ্ছিলেন। তাকে দেখে গোপরাজপুত্র বললেন
 অগ্রে পূর্ণবিধূম্ তদন্তরলসদবন্ধূকপুষ্পদ্বয়ম্
 মধ্যে নিষ্টলদাড়িমীফলযুগম ভঙ্গ্যা প্রকাশ্য ক্ষণম্।
 মননেত্রস্যচকোরভৃঙ্গশুকতাম আসাদয়ন্ত্যদ্ভুতা
 কেয়ম্ মাম অপি পদ্মিনী কৃতবতী রক্তম্ মরালম্ দ্রুতম।। ১৭
 একটি পূর্ণ চন্দ্র আমার চক্ষুগোচর হল। আমার চক্ষুদ্বয় তাই চকোর পক্ষীর মত তাই সেই চন্দ্রের চন্দ্রিকা পানে আকৃষ্ট হয়ে সেদিকে চেয়ে রয়েছে।  এই চন্দ্রের মধ্যে দুটি বন্ধুক পুষ্পের মতো লাল ঠোঁট রয়েছে।  তাই আমার চক্ষু দ্বয় ভ্রমরে পরিনত হয়ে সেই পুষ্পের মকরন্দ পানে উন্মত্ত হয়ে উঠেছে। সেখানে দুটি সুগোল দাড়িম্বফল রয়েছে তাই আমার চক্ষুদ্বয় শুকপক্ষীর মত তা আস্বাদনে ব্যাস্ত। কে এই পদ্মিনী যে আমাকে মরাল পিয়াসী হংসে র মত ব্যাগ্র করে তুলেছে।
 ততো নিরীক্ষ্য সম্যক তাম্ প্রেমবিহ্বলমানসঃ।
 সাশঙ্কম্ পদ্মজাক্ষোহয়ম সোৎকন্ঠোহবর্ণয়ৎ পুনঃ।। ১৮
 যখন পদ্মলোচন শ্রীকৃষ্ণ বুঝলেন তার সামনে পদ্ম নয় সুন্দরী গোপবধূ তার হৃদয় পুনরায় প্রেমবিহ্বল হয়ে উঠল ও রাধারানীর বিরহে তার সঙ্গ আর লাভ হবে কিনা এই শঙ্কায় তিনি পুনরায় উৎকন্ঠিত হয়ে বর্ননা করতে লাগলেন
 ফুল্লচম্পকবল্লীকাবলিঃ ইয়ম কিম নো ন সা জঙ্গম
 কিম্ বিদ্যুল্লতিকাততিঃ ন হি ঘনে সা খে ক্ষণদ্যোতিনী।
 কিম্ জ্যোতির্লহরীসরিৎ ন হি ন সা মূর্তিম্ বহেত তদ ধ্রুবম্
জ্ঞাতম্ জ্ঞাতম্ অসৌ সখীকুলবৃতা রাধা স্ফুটম্ প্রাঞ্চতি।। ১৯
 একি পুষ্পশোভিত চম্পকলতা? না চম্পকলতা তো স্থির তা তো চলতে পারেনা।  তবে কি বিদ্যুৎমালা। না তা ও নয় বিদ্যুৎ তো ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু এতো এখনো দৃষ্টিগোচর রয়েছে। তবে কি তরঙ্গোচ্ছলা নদী না নদী তো আকৃতি বিহীন।  কিন্তু এর তো অপূর্ব সুন্দর রূপ রয়েছে। বুঝেছি ইনি সখী কুলবৃতা শ্রী রাধা।
 ইয়ম ইহ ন চ রাধা সা সখীভিঃ পরীতা
 বিদিতম ইদম ইদানীং বস্তুতত্ত্বম্ বিচার্য্য।
 মম স বিধম উপৈতি স্ফার শৃঙ্গারলক্ষ্মীঃ
 সহ কলিতা সুবর্ষমালিঙ্গনাদিক্রিয়াভিঃ।। ২০
 আমার মনে হয় ইনি সখী পরিবৃতা রাধিকা নয়। তত্ত্ব বস্তু বিচার করে আমার বোধ হচ্ছে যে ইনি রতি কলার অধীশ্বরী দেবী। যিনি এখন আমার সম্মুখে আলিঙ্গন চুম্বনাদি তার পারিষদ গন সহ প্রকট হয়েছেন এই গোপযুবতীর রূপে।
 গৌরী শ্রীবৃষভানুবংশবিলসৎকীর্তিধ্বজা কীর্তিদা
 গর্ভান্তঃ খনিরত্নকান্তিলহরী শ্রীদামপুণ্যানুজা।
 প্রাণপ্রেষ্ঠসখীনিকায়কুমুদোল্লাসোল্লসচ্চন্দ্রিকা
 মৎপ্রাণোরুশিখন্ডীবাসবড়ভী সেয়ং স্বয়ং রাধিকা।। ২১
 এই গৌরবর্না, শ্রীবৃষভানু মহারাজের বংশের কীর্তি ধ্বজা বিস্তার কারী। মাতা কীর্তিদার গর্ভ রূপ খনি জাত রত্ন।  শ্রীদামের ধর্মনিষ্ঠা অনুজা ভগ্নী।
 ও চন্দ্র যেমন কুমুদের পুষ্টি বর্ধন করে তেমন প্রানপ্রেষ্ঠ সখীদের আনন্দদায়ীনি। ময়ূর যেমন সেরূপ আমার প্রাণের আশ্রয় ইনি স্বয়ং সেই রাধিকা।
 ততো গোবিন্দম আলোক্য গোবর্দ্ধন শিরোমণিম।
 স্মিত্বা চারু চলাপাঙ্গী তুঙ্গবিদ্যেদম অব্রবীৎ।। ২২
 তুঙ্গবিদ্যা দেবী আড়চোখে গোবর্দ্ধন শিরোমণি গোবিন্দের দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বললেন।
 যঃ কলকনৈর্দধিঘটম্ প্রকটম্ বিলুন্ঠ্য
 নীত্বা প্রগাঢ় তমসা মিলিতোহতিতৃষ্ণঃ।
 সোহয়ম্ গিরীন্দ্র শিখরম স্ফুটম আরূঢ়োহ
 রাধে তব প্রিয়সখো মহিলৈক চৌরঃ।। ২৩
 হে রাধিকে এ হল তোমার সেই প্রিয়বন্ধু কৃষ্ণ যে গিরিরাজ গোবর্দ্ধনের শিখরে আরোহন করেছে। এই কৃষ্ণ ই অন্ধকারে লুকিয়ে থেকে গোপীদের দধির ঘট চুরি করে। এই হল সেই কৃষ্ণ যে গোপীদের সর্বস্ব চুরি করে।
 মূর্তিম্ নির্জিতনূত্ননীরদবলদগর্বোন্নতিম্ কৈশবীম্।
 স্ফূর্জদগোপবধূধ্বনদধৃতিচমূধ্বংসে স্মরোদ্যদ গদাম।
 বিভ্রাজদগিরিবর্য্যসুন্দরশিরঃপট্টে স্ফুরন্তীম্ মনাগ
 ভঙ্গ্যালিঙ্গ্য দৃশা প্রিয়ালি বলিতা রাধাপ্যধিরাব্রবীৎ।। ২৪
 কেশব এর অঙ্গশোভা বর্ষার নবজলধরের গর্ব খর্ব করে। কামদেবের গদার মতো গোপীগনের বাহিনী কে ধ্বংস করে।  তিনি গিরিরাজ গোবর্দ্ধনের পাগড়ীর শোভাবর্দ্ধক মুকুট মণি। সখীগন পরিবেষ্টিতা রাধারাণী তাকে বক্রদৃষ্টিতে আলিঙ্গণ করে অধীর হয়ে বললেন।
 কিম্ নব্যাম্বুদ এষ ভব্য বদনাঃ কিম্ নীল রত্নাঙ্কুরঃ
 কিম্ নীলোৎপল নব্য মূর্তিঃ অপি কিম্ কস্তুরিকা বিভ্রমঃ।
 আস্তেস্ব এষ  ন কোহপি হন্ত যদ অয়ম্ নস্তাপয়েন নির্ভরম্
 তস্মাদ গোকুলচন্দ্র এব ভবিতা শ্যামোদ্ভূতক্ষমাধরে।। ২৫
 হে সুমুখী গোপীগণ আমাদের সম্মুখে এ কে? এ কি বর্ষার নবজলধর না কি প্রস্ফুটিত নীলকান্ত মণি।  না কি সদ্য প্রস্ফুটিত নীল পদ্ম? বা কস্তুরিকা
 না এগুলির কোনো টিই নয়।  কারন এর রূপ আমাকে তাপিত করছে। আমি জানি ইনি নিশ্চই গোবর্দ্ধনপরি বিরাজমান গোকুলের অদ্ভূত কৃষ্ণবর্নের চন্দ্র
 বিজিত ভ গণ দীব্যৎ পূর্ণ শুভ্রাংশু শোভাঃ
 সখী নিকর বৃত শ্রীর্নাপি কৃষ্ণেন্দুঃ এষঃ।
 অয়ি পিক মধু ভৃঙ্গ স্মের মকন্দ যুক্তঃ
 স্মর নৃপতির্উপেতঃ স্বেন বঃ সন্ধি হেতোঃ।। ২৬
 না ইনি কৃষ্ণ চন্দ্র হতে পারেন না। কারন পূর্ণিমার পূর্ণ চন্দ্রও নক্ষত্রাদির সহিত এত সুন্দর হতে পারেনা।  মনে হয় ইনি কোকিল ভ্রমর বসন্ত ইত্যাদি পারিষদ গণ সহ স্মিত হাস্যকারী কামদেব। ওহে সখীগন মনে হয় স্বয়ং কামদেব তোমাদের সাথে পরিচয় করতে এখানে এসেছেন।
 সোহয়ম গোষ্ঠ মহেন্দ্র পট্ট মহিষী বাৎসল্য লীলাকৃতিঃ
 সোহয়ম্ গোপ মহেন্দ্র পূণ্য বিটপী প্রৌঢ়ামৃতোদ্যৎ ফলম।
 সোহয়ম প্রাণ বয়স্য জীবিত ঘটা রক্ষৈক দক্ষৌষধম্
 সোহয়ম্ ধেনুকমর্দী জীবিত ঝষ স্ফারাম্বুধির্মাধবঃ।। ২৭
এই সেই গোপরাজমহিষী যশোদার বাৎসল্য প্রেমের মূর্তি।  এই সেই পরম সজ্জন নন্দমহারাজ রূপ বৃক্ষের অমৃতোপম ফল। এই সেই প্রিয় সখা গণের প্রাণ রক্ষাকারী একমাত্র ঔষধ।  সমুদ্র যেমন মৎস্য গনের খেলার আশ্রয়, এই সেই মাধব যিনি ধেনুকমর্দী বলরামের লীলার আশ্রয়।
 নিরূপ্যৈবম্ শশ্বদ গিরিধরম উরু প্রেম নিবহৈঃ
 তদা সাস্র স্বেদ স্নপিত শুভ বর্ষ্ম স্মর বশা।
 মুহুঃ কম্পাঘাত স্খলদচল দীব্যদ ঘৃত ঘটীম্
 দধারার্ত্যা শক্ত্যা সখী কর সরোজেন সূদতি।। ২৮
 প্রেমবিহ্বল হয়ে শ্রীরাধা গিরিধারীর দিকে তাকালেন। তার সম্পূর্ণ অঙ্গ অশ্রু ও স্বেদবারিতে অভিষিক্ত হল। ও সখী সুদতি তিনি এত কম্পিত হতে লাগলেন যে বহুকষ্টে ঘৃতপাত্র তার কমলহস্ত হতে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করলেন।
 নেপথ্যালীম্ ললিত ললিতাম্ দানি বর্যোচিতাম্ তাম্
 ধৃত্বা সন্তম্ ধ্বনিত মুরলী পত্র শৃঙ্গাদি জুষ্টম।
 ঘট্টী পালৈঃ কলিত লকুটৈর্বেষ্টিতম্ মিত্র বৃন্দৈঃ
 পশ্যন্ত্যস তাঃ স্মিত বলিতয়া হেলয়া চারু চেলুঃ।। ২৯
 শ্রীকৃষ্ণ বহু অলঙ্কার ও সুন্দর বেশভূষায় সজ্জিত হয়ে দানীদের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন। তার হাতে শৃঙ্গ ও বংশী, চতুর্দিকে দন্ড ও লকুটি ধারী সখা গন দ্বারা বেষ্টিত হয়ে ছিলেন। গোপীগণ হেলাভরে স্মিত হেসে কৃষ্ণ ও তার সখা গনের দিকে তাকিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলেন।
 মত্তাস্তা মধুরৈঃ ভাবৈঃ মধুরা মধুমঙ্গলঃ।
 দৃ্ষ্ট্বা স্মিত্বাথ স ক্রোধম উবাচ মধুমর্দনম।। ৩০
 মধুরভাবে মত্ত গোপীগনকে স্মিত হেসে চলে যেতে দেখে ক্রোধে মধুমর্দন শ্রীকৃষ্ণ কে বলতে লাগলেন
 গর্বেণ ফুল্লম অধুনা মধুনাতিমত্তা
 মত্তালিভিঃ  সমম অমন্দ বলাবলাপি।
 গচ্ছত্য  অসৌ স্ফুটম্ অদত্ত করা হি রাধা
 বাধাঃ কথম্ ন হি বয়স্য বলাৎ করোষি।। ৩১
 নবযৌবনগর্বে গর্বিতা গোপীগন তাদের যৌবনমদোদ্ধতা ও গর্বিতা সখী রাধার সঙ্গগুনে অধিক প্রমত্তা যদিও রাধা এক অবলা স্ত্রী মাত্র। তাই হে মিত্র সে কর না দেওয়ার জন্য তুমি তাকে বলপ্রয়োগ করো না কেন।  গুঢ়ার্থ রাধা তোমার অঙ্গে কর(হস্ত)স্পর্শের পূর্বে তুমিই বলপূর্বক তাকে আলিঙ্গন করো না কেন।
 হরিম্ জেতুম্ শক্তাম্ মদন নৃপতেঃ শক্তিম অতুলাম্
 ভ্রমদ ঘণ্টী ধ্বানম্ গতি বিলসিতৈস্তাম্ স কলয়ন্।
 উদঞ্চন মারোদ্যদ ভ্রম বিকৃতিম আগুণ্ঠ্য কপটান
 মৃষা রোষাদ এবে স্ফুটম ইদম অবাদীৎ সহচরান্।। ৩২
হরি (শ্রীকৃষ্ণ) বিলাস গতি তে অগ্রসর হলে তার কোমরবন্ধের ঘন্টা ধ্বনি রাধা কে বিমোহিত করল।
তিনি রাধার সখীদের উদ্দেশ্যে কপট ক্রোধ প্রকাশ করে বললেন
 সত্যম্ ব্রবীতি মধুমঙ্গল এষ ধূর্তা
 দানম্ নিপাট্য মম যান্তি মদোরু গর্বাঃ
 পশ্যাদ্য দর্পম অধুনা মম মিত্র বর্গ
 গৃহ্ণামি দানম অচিরাদ অহম এক এব।। ৩৩
 সত্যই বলেছ মধুমঙ্গল এই ধূর্তা গোপিকারা আমার দানঘাটীকে অবহেলা করে গর্বভরে পাশকাটিয়ে যাচ্ছে দেখ আমি একলাই এখনই এদের থেকে বলপূর্বক দান গ্রহন করবো।
 শৃঙ্গানি বাদয়ত ভো মুরলীস তথালীঃ
 সংরক্ষত স্ফুটম ইতস্তত এব যান্তীঃ।
 রাধাম অহম্ কুটিলযৌবতা বর্য্য নাথাম্
 রুদ্ধাম্ করোমি সহসা ভুজয়োর্যুগেন।। ৩৪
 মুরলী ও শিঙ্গার বাদ্য করে কৃষ্ণ বললেন এই গোপীদের আটকাও। আমি আমার ভূজদ্বয়ে এই কুটিলহৃদয় যুবতীদের প্রধানা শ্রীরাধিকা কে বন্দী করছি(আলিঙ্গন করছি)
 ঘট্টীপালসহস্রবর্য্যসুবলত্বম তাম্ বিশাখাম্ হঠাদ
 ঘট্টীকুট্টিমপট্টরক্ষক সখে চিত্রাম্ ত্বম অত্রোজ্জ্বল।
 সভ্যাশ্রেষ্ঠবসন্তচম্পকলতাম্ ত্বাম্ তুঙ্গবিদ্যাম্ তথা
 বর্ত্মপ্রেক্ষক লক্ষ দক্ষ ললিতাম্ ত্বম কোকিলাবেষ্টয়।। ৩৫
 হে সুবল! সহস্র ঘাটীপাল গনের শ্রেষ্ঠ তুমি বিশাখা কে আটকাও।  হে উজ্জ্বল তুমি দানঘাটীর রক্ষক হে সখা তুমি চিত্রা দেবী কে আটকাও।  হে বসন্ত তুমি দলের প্রধান।  তুমি চম্পকলতা ও তুঙ্গবিদ্যা কে আটকাও।  হে কোকিল তুমি লক্ষ বর্ত্মপ্রেক্ষক দের মধ্যে দক্ষ তুমি ললিতা কে (আবেষ্টন করো) ঘিরে ধরো।
স্মেরৈঃ এতৈঃ সপদি পরিতো বেষ্ট্যমৈনৈভিঃ আভির
বাগাটোপৈঃ প্রিয়সখা কুলেশ্ব আশু সংস্তম্ভিতেষু।  
রঙ্গৈর্ভঙ্গ্যা কুটিল বচসাম্ রাধয়া সংস্তুতোহসৌ
কৃষ্ণঃ কোপাদ ইব সখী তদা গর্বিতম্ তাম অবাদীৎ।।৩৬
 গোপবালক গন রাধা ও সখীগন কে ঘিরে ধরে কড়া কথা বলতে বলতে তাদের পথ আটকালেন।  রাধা রঙ্গ পরিহাস ছলে কৃষ্ণ কে নানা বক্রোক্তি করতে লাগলেন যা গূঢ়ার্থে কৃষ্ণ স্তুতি।  শ্রীকৃষ্ণ ক্রোধভরে গর্বিতা রাধা কে বললেন
 নিত্যম্ গর্বিণি বন্যবর্ত্মনি মিষাৎ সংগোপ্য গব্যাদিকম্
 বিক্রীণাসি শঠে ত্বম অত্র পতিতা ভাগ্যেন হস্তেহদ্য মে।
 ত্বাম্ বদ্ধ্বোরুমনোজ রাজ পুরতো নেশ্যাম্য অবশ্যম্ তথা
 প্রীত্যা যাচ্ছতি মহ্যম এব স যথা তারুণ্য রত্নানি বঃ।। ৩৭
 হে প্রিয় গর্বিতা তস্কর, আমি জানি তুমি রোজই এই বনপথে যাতায়াত করো। সযত্নে গব্যসামগ্রী লুকিয়ে নিয়ে যাও ও গোপনে বিক্রি করো।  তোমার বহু ভাগ্য যে তুমি আমার হাতে ধরা পড়েছো।  আমি তোমায় বন্দী করে কামদেব রাজার কাছে নিয়ে যাব।  তোমায় বন্দী করে নিয়ে যাওয়ায় তিনি অত্যন্ত খুশী হবেন ও তোমার যৌবন রূপ রত্ন উপহার দেবেন।
 আস্ত্বদবিধান অপি অবলা গণান
 কিম নেশ্যামি তস্যোরু নৃপস্য পার্শ্বে।
 দাস্যামি শিক্ষাম অহম এব সাক্ষাৎ
 তদ অদ্বিতীয়ো ব্রজ পত্তনেহস্মিন।। ৩৮
 আঃ তোমার মতো অবলা নারী কে মহান রাজা কামদেবের কাছে নিয়ে যাওয়ারই বা কি দরকার না আমি তাকে তোমার তুচ্ছ তস্করতার জন্য বিরক্ত করবোনা।  বরং আমি তোমায় শিক্ষা দিয়ে বুঝিয়ে দেব এই ব্রজপত্তনে আমিই অদ্বিতীয়।
 বধ্নামি তূর্ণম অনয়া বন মালয়া ত্বাম্
 মথ্নামি হন্ত দশনচ্ছদম অত্র দন্তৈঃ।
 সন্দারয়ামি কুচয়োর্যুগলম্ নখাস্ত্রৈ
 র্দানম ন চেজ্ঝটিতি যচ্ছসি চৌরিকে ত্বম।। ৩৯
 হে চৌরিকে তুমি যদি এখনই কর মিটিয়ে না দাও আমি তোমায় বনফুলমালা দিয়ে বন্দী করব। তোমার অধরদ্বয় দন্তে দংশন করব। তোমার কুচযুগ দশটি সুতীক্ষ্ণ অস্ত্রে (নখ) ক্ষতবিক্ষত করবো।  এভাবে তোমায় দন্ডিত করবো।
 ইত্থম্ প্রজল্প রভসাৎ তরসা তদীয়
 রক্তাম্বরাঞ্চলম অনলপকচঞ্চলেহস্মিন।
 ধার্তুম্ সমিচ্ছতি রুষা পরুষাক্ষরম্ তম্
 চঞ্চদ্দৃগঞ্চল কলা সুকলা ললাপ।। ৪০
 চঞ্চল কৃষ্ণ এইপ্রকার বলে রাধার রক্তাম্বরের আঁচলের প্রান্ত ধরতে গেলে বিদূষী রাধা ক্রোধ প্রকাশ করে অক্ষরপুরুষ শ্রীকৃষ্ণের দিকে তীব্র কটাক্ষপাত করে বলতে লাগলেন।
 দূরেষু তিষ্ঠ ন হি মাম্ স্পৃশ ধৃষ্ট ধূর্তা
 যান্তীম্ সুযাগ ভবনম্ ব্রতিনীম্ পবিত্রাম
স্পৃষ্টাম্ তবাদ্য মরুতাপি মদীয় গব্যম্
শ্যামীভবন্ ন ভবিতা শুভ যজ্ঞ যোগ্যম।। ৪১
 দূরে থাক ধৃষ্ট।  আমায় স্পর্শ করিস না। ওরে ধৃষ্ট(নির্লজ্জ) ধূর্ত  আমি পবিত্র শুদ্ধহৃদয়া কন্যা পবিত্র যজ্ঞের জন্য ঘৃত নিয়ে যাচ্ছি।  তোর স্পর্শিত বায়ুও এই ঘৃত কে  অশুদ্ধ করবে আর তা যজ্ঞে ব্যাবহার করার যোগ্য থাকবেনা।
 কামার্ণবোচ্ছলিত ঘর্ম জলাভেষেকৈঃ
 শুদ্ধোহস্মি কিম্ ন কিল পশ্যসি দীর্ঘনেত্রে।
 তস্মাৎ ত্বয়া সহ মহোজ্জ্বল নাম সত্রম্
 কর্তুম্ লসামি সময়া শুভ ধর্ম পত্ন্যা।। ৪২
 তখন কৃষ্ণ বললেন হে দীর্ঘনেত্রে! তুমি দেখোনি যে আমি হৃদয়ে প্রেমার্ণব প্রকাশিত হয়েছে তার বহিঃপ্রকাশ রূপ স্বেদবারিতে অভিষিক্ত হয়েছি। আমি এখানে উপস্থিত হয়েছি বিশেষত মহাউজ্জ্বলরসযজ্ঞ করতে যেখানে আমার ধর্মপত্নী রূপে তুমি উপস্থিত থাকবে।
 এতাম্ বয়স্য মৃদু হৃদ্য বচঃ প্রবন্ধ
 রঙ্গৈঃ সুরঞ্জিততরাম্ নিতরাম্ বিধায়।
 দানম্ গৃহাণ নিজম আশ্ব ইতি কোকিলোক্তম
 আশ্রুত্য স স্মিতম অনন্ত বিচিত্র লীলাঃ।। ৪৩
 সব্যম্ করেণ সুভগ সব্য কটৌ নিধায়া
 সব্যেন কৃষ্ট পট সৃষ্ট মুখার্ধ গুণ্ঠাম
 শীর্ষণি স্ফুরন্নব ঘৃতোজ্জ্বল হেম কুম্ভাম্
 ভঙ্গ্যা ভ্রমৎ স্মিত দৃশম্ স জগাদ রাধাম।। ৪৪
 তখন সখা কোকিল বললো হে মিত্র মিষ্ট বন্ধুত্বপূর্ণ কথা বলে শীঘ্র দান আদায় করে নাও।  এই কথা শুনে অনন্ত বিচিত্র লীলাময় শ্রীকৃষ্ণ তার বামহস্ত মঙ্গলপ্রদ বামকটিতে স্থাপন করে স্মিত হাস্য করতে লাগলেন। মাথায় উজ্জ্বল ঘৃত কলস ধারণ করে শ্রীরাধা শ্রীকৃষ্ণের দিকে চঞ্চল কটাক্ষপাত করে লজ্জাপূর্বক তার মুখ বস্ত্রাঞ্চল দিয়ে ঢাকলেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ রাধা কে বললেন—
 ঘট্টীকুট্টিমসৃষ্পট্টনিকটে রাধে ঘটীম্ স্থাপয়
 প্রোদ্যৎসৌরভসদ্মপদ্মপবনৈঃ শ্রান্তিম্ ক্ষণম্ বারয়।
 দীব্যন্নব্যসুগব্যদানবিলসল্লেখম্ মুহুঃ কারয়
 ক্রূরস্যালিকুলস্য দানম অচিরাদ আরাৎ স্বয়ম্ দাপয়।। ৪৫
 হে প্রিয় সখী রাধিকে কিছুক্ষণ এই দানঘাটীতে দাঁড়াও। মৃদু পদ্মগন্ধবহ বাতাসে শ্রান্তি দূর কর। আমার সখাদের তোমাদের গব্য সামগ্রীর কর এর হিসাব করতে কিছু সময় দাও। ও তোমার ক্রুর সখীদেরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলো।
 আগচ্ছ হে লিপিপতে মধুমঙ্গলেহ
 পঞ্জিম্ পঠন দৃঢ় মতিঃ কুরু সত্য লেখম।
 উৎকোচ লোভ ভরতো যদি নাশয়েস্ত্বম্
 দ্রব্যাণি মে কিল তদা ভবিতাসি দণ্ড্যঃ।। ৪৬
 হে লিপিপতি(করণিক) মধুমঙ্গল আসো। সততাপূর্বক আমার দানঘাটীতে দেয় কর সতর্ক হয়ে পঞ্জিকৃত করো। ও উচ্চস্বরে পাঠ করে সবাই কে শোনাও। যদি উৎকোচের লোভে কিছু কম কর লেখো তো অবশ্যই দন্ডপ্রাপ্ত হবে।
 আগচ্ছ কচ্ছম অবধেহি বিধেহি লেখম্
 দানম নু দেহি ন হি দেহি কলিম্ হি রাধে।
 বীটীম্ চ ভুঙ্কষ্ব সরসম্ কুরু বক্ত্রা বিম্বম্
 পুণ্যাহম আচর পুরঃ সময়ঃ শুভোহয়ম।।  ৪৭
 হে রাধিকে আসো অবধানতা পূর্বক শোনো মধুমঙ্গল যে দান হিসাব করছে, কলহ না করে সেই দান দিয়ে যাও। তারপর তাম্বুলাদি চর্বন করে সরসমুখে চলে যাও, আজ অত্যন্ত শুভ দিন।
 যস্য যন্নিয়ত দানম অমুষ্য
 বস্তুনঃ সুদৃঢ়ম উচ্যতে ময়া।
 তৎ তদ এব কিল লিখ্যতাম্ ত্বয়া।
 যত্নতো লিখন শূর বয়স্য।। ৪৮
 হে মধুমঙ্গল হে শ্রেষ্ঠ লিপিকার হে সখা আমি তোমায় যথার্থ রূপে গব্যসামগ্রীর দানের হিসাব বলছি তুমি যথাযথ রূপে লিখে নাও।
 গব্যস্য ভব্য বদনে প্রতি পাত্রম অত্র
 দানম্ কিল প্রতি জনম্ ব্রজ সুন্দরীণাম্।
 বৃন্দানি পঞ্চ বিলসন্নবহীরকাণাম্
 যৎ সৌভগাদিকম অলভ্যম অনেন লভ্যম।। ৪৯
প্রতিজন সুবদনী ব্রজগোপীরা প্রতিপাত্র গব্যঘৃতের জন্য পাঁচটি উজ্জ্বল হীরার দেবে। এই সব অমূল্য সম্পত্তি এখন আমার হবে।
Next Page >>>

Other Books By Sri Raghunath Das Goswami