Chaitanya upanishad| vaishnav upanishad

Chaitanya upanishad| vaishnav upanishad

॥ শ্রীশ্রীচৈতন্যোপনিষদ ॥
অথ পিপ্পলাদঃ সমিত্পাণির্ভগবন্তং ব্রহ্মাণমুপসন্নো, ভগবন্ মে শুভং কিমত্র চক্ষস্বেতি ॥ ১॥
অনুবাদ:- একবার ঋষি পিপ্পলাদ ব্রহ্মার নিকট গিয়ে করজোড়ে বললেন হে ভগবান কৃপা করে আমায় বলুন এই জগতে কি আমার পক্ষে শুভ ও কল্যাণপ্রদ

স হোবাচ । ভূয় এব তপসা ব্রহ্মচার্যেণ শশ্বৎ রমস্ব মনো বশেতি ॥ ২॥
ব্রহ্মা পিপ্পলাদকে বললেন তিনি তপস্যাচরণ করবেন, ষষ্ঠেন্দ্রিয় মন কে বশীভূত করার জন্য স্বেচ্ছাকৃত কঠোরতা স্বীকার করবেন, ব্রহ্মচর্য দ্বারা ইন্দ্রিয়তৃপ্তি থেকে মনকে নিবৃত্ত করে পরমার্থ চিন্তায় নিয়োজিত করবে।

স তথা ভূত্বা ভূয় এনমুপসদ্যাহ - ভগবন্ কলৌ পাপাচ্ছন্নাঃ প্রজাঃ কথং মুচ্যেরন্নিতি ॥ ৩॥
 উপদেশ মত সবকিছু সম্পন্ন করীর পর ঋষি পিপ্পলাদ পুনরায় ব্রহ্মার কাছে উপস্থিত হলেন। ও বললেন হে গুরুদেব কলিযুগে কিভাবে মানুষ পাপ থেকে মুক্ত হতে পারবে?

কো বা দেবতা কো বা মন্ত্রো ব্রূহীতি ॥ ৪॥
তারা  কোন ভগবানের আরাধনা করবে? কোন মন্ত্রে তার আরাধনা করবে?

স হোবাচ । রহস্যং তে বদিষ্যামি - জাহ্নবীতীরে নবদ্বীপে গোলোকাখ্যে ধাম্নি গোবিন্দো দ্বিভুজো গৌরঃ সর্বাত্মা মহাপুরুষো মহাত্মা মহায়োগী ত্রিগুণাতীতঃ সত্ত্বরূপো ভক্তিং লোকে কাশ্যতীত । তদেতে শ্লোকা ভবন্তি ॥ ৫॥
ব্রহ্মা বললেন আমি তোমাকে সেই রহস্য বলব গোলোক নামে খ্যাত নবদ্বীপ ধামে জাহ্নবীতীরে ভগবান শ্রী গোবিন্দ ত্রিগুনাতীত সর্বাত্মা মহাযোগী মহাপুরুষ মহাত্মা দ্বিভূজ গৌর রূপে অবতীর্ণ হবেন।  নিত্য শ্বাশ্বতস্বরূপে সেই ভগবান পৃথিবীতে ভক্তিরহস্য প্রকাশ করবেন। এবিষয়ে আরো বহু শ্লোক আছে।

একো দেবঃ সর্বরূপী মহাত্মা গৌরো রক্ত-শ্যামল-শ্বেতরূপঃ । চৈতন্যাত্মা স বৈ চৈতন্যশক্তির্ভক্তাকারো ভক্তিদো ভক্তিবেদ্যঃ ॥ ৬॥
সেই এক অদ্বয় পরমেশ্বর ভগবান গৌর রূপে অবতীর্ণ হন।  পূর্বে তিনি রক্ত, পীত,  শ্বেত কান্তি পরিগ্রহ করে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। ভগবান তার এই আদি শ্রীচৈতন্য রূপে তিনি সকলের চেতন শক্তি তিনি ভক্তির মূর্ত বিগ্রহ, তিনি ভক্তিদাতা, তিনিই আবার ভক্তির বেদ্য, এবং সর্বজ্ঞ।

নমো বেদান্তবেদ্যায় কৃষ্ণায় পরমাত্মনে । সর্বচৈতন্যরূপায় চৈতন্যায় নমো নমঃ ॥ ৭॥
সমগ্র চৈতন্যশক্তির প্রতিমূর্ত বিগ্রহ, সকলের পরমাত্মা, চৈতন্যস্বরূপে প্রকাশিত বেদান্তবেদ্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে আমার প্রনতি নিবেদন করি।

 বেদান্তবেদ্যং পুরুষং পুরাণং চৈতন্যাত্মানং বিশ্বয়োনিং মহান্তম্ । তমেব বিদিত্বাঽতিমৃত্যুমেতি নান্যঃ পন্থা বিদ্যতেঽয়নায় ॥ ৮॥
সেই পুরাণ পুরুষ বেদান্তসমূহের জ্ঞেয় সমগ্র মহাবিশ্ব প্রকাশের উৎস। বিশ্বযোনি মহাত্মা শ্রীচৈতন্য। একমাত্র সেই পুরুষকে জানলেই মৃত্যুকে অতিক্রম করা যায়।  এছাড়া আর অন্য কোনো পথ নেই।

স্বনামমূলমন্ত্রেণ সর্বং হ্লাদয়তি বিভুঃ ॥ ৯॥ দ্বে শক্তী পরমে তস্য হ্লাদিনী সংবিদেব চ । ইতি ॥ ১০॥
পরমেশ্বর ভগবান তার নিজের দিব্যনামসমূহ দিয়ে গঠিত মন্ত্রের (মহামন্ত্র)  দ্বারা সর্বজীবকে চিন্ময় দিব্যানন্দ আস্বাদন করান। তিনি দুটি চিন্ময় স্বরূপ শক্তি ধারণা করেন আনন্দদায়িনী হ্লাদিনীশক্তি, ও জ্ঞান প্রকাশক সংবিৎ শক্তি।

স এব মূলমন্ত্রং জপতি হরিরেতি কৃষ্ণেতি রামেতি॥১১॥
সেই আদিপুরুষ চৈতন্যাখ্যা ভগবান এই মূলমন্ত্র জপ করতে থাকেন যাতে হরি, কৃষ্ণ, রাম এই নাম সমূহ রয়েছে।

হরতি হৃদয়গ্রন্ধিং বাসনারূপমিতি হরিঃ । কৃষিঃ স্মরণে তচ্চ ণন্তদুভয়মেলনমিতি কৃষ্ণঃ । রময়তি সর্বমিতি রাম আনন্দরূপঃ । অত্র শ্লোকো ভবতি ॥ ১২॥
তিনি হৃদয়ের জড় আসক্তির গ্রন্থি বন্ধন ছেদন করেন। ও জড় বাসনার ফলে উদ্ভূত জড়দেহ হরণ করেন,  সেজন্য তিনি হরি।  কৃষ ধাতুরূপের অর্থ স্মরণ করা, এবং ণ প্রত্যয়ের অর্থ চিন্ময় দিব্যানন্দ।  এই দুই যোগে নিষ্পন্ন কৃষ্ণ শব্দের অর্থ যিনি সর্ব জীব কে দিব্যানন্দ উপভোগ করান।  তিনি সর্ব জীবের হৃদয়ে রমণ করেন তাই রাম নামে অভিহিত হন। এই প্রসঙ্গে একটি শ্লোক রয়েছে
মন্ত্রো গুহ্যঃ পরমো ভক্তিবেদ্য ॥ ১৩॥ নামান্যষ্টাবষ্টে চ শোভনানি, তানি নিত্যং য়ে জপন্তি ধীরাস্তে বৈ মায়ামতিতরন্তি নান্যঃ । পরমং মন্ত্রং পরমরহস্যং নিত্যমাবর্তয়তি ॥ ১৪॥
এই পরমরহস্যময় মহামন্ত্র সকল মন্ত্রের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কেবল প্রেমভক্তির দ্বারা এটি অবগত হওয়া যায়।  যেসমস্ত ধীর চিত্ত ব্যাক্তি দুই ছত্রে আট আট শোভন সুন্দর ভগবান নাম সমন্বিত এই মহামন্ত্র নিয়ত জপ করেন তিনি অচিরেই মায়া নামে অভিহিত অচিৎ অলীক জড়া শক্তির কবল থেকে মুক্ত হন। সকল মন্ত্রের মধ্যে গোপনীয়তম এই মন্ত্রের চেয়ে শক্তিশালী আর কোনো মন্ত্র নেই।  এই মন্ত্র নিত্যজপকারীকে অনুক্ষন এটি আবৃত্তিতে নিয়োজিত রাখে।

 চৈতন্য এব সঙ্কর্ষণো বাসুদেবঃ পরমেষ্ঠী রুদ্রঃ শক্রো বৃহস্পতিঃ সর্বে দেবাঃ সর্বাণি ভূতানি স্থাবরাণি চরাণি চ যৎকিঞ্চিৎ সদসৎ  কারণং সর্বম্ । তদত্র শ্লোকঃ ॥ ১৫॥
 শ্রীচৈতন্যই সংকর্ষণ বাসুদেব, তার থেকে ব্রহ্মা রুদ্র, ইন্দ্র, বৃহষ্পতি সহ সর্ব দেবতা বিনির্গত হয়।  তিনি সচল, অচল, ক্ষণস্থায়ী অস্তিত্বের স্তর, ও নিত্য অস্তিত্বের স্তরের জীব, সকল জীবসত্ত্বার উদ্ভবের কারন। এই সম্পর্কে একটি শ্লোক

 যৎকিঞ্চিৎ সদভূঙ্ক্তে ক্ষরং তত্কার্যমুচ্যতে ॥ ১৬॥ সত্কারণং পরং জীবন্তদক্ষরমিতীরিতম্ ॥ ১৭॥
 ইন্দ্রিয়তৃপ্তির জন্য যে ক্ষণস্থায়ী বস্তুই জীব ভোগের প্রয়াস করুক না কেন সেই বস্তু এবং তার থেকে লব্ধ আনন্দ নশ্বর, বলে কথিত হয়।  জীবের জড় ভোগবাসনা ই এই জড়জগতের উদ্ভবের কারন। কিন্তু জীব নিজে স্বরূপতঃ অবিনাশী, সত্য, সনাতন।

 ক্ষরাক্ষরাভ্যাং পরমঃ স এব পুরুষোত্তমঃ । চৈতন্যাখ্যং পরং তত্ত্বং সর্বকারণকারণম্ ॥ ১৮॥
 যিনি ক্ষর (ধ্বংশশীল জড়দেহধারী জীব) এবং অক্ষর ( অপ্রাকৃত জগতের অপরিবর্তনীয় দেহ সম্পন্ন জীব) এই উভয় প্রকার জীব থেকে পরমপুরুষ ভগবান শ্রেষ্ঠ, সেজন্য তিনি পুরুষোত্তম। সেই পুরুষোত্তম ই চৈতন্য নামে অভিহিত হন।  তিনিই পরম তত্ত্ব বস্তু। তিনি সর্ব কারনের কারন স্বরূপ।

 য এনং রসয়তি ভজতি ধ্যায়তি স পাপ্মানং তরতি, স পূতো ভবতি, স তত্ত্বং জানাতি, স তরতি শোকম্ । গতিস্তস্যাস্তে নান্যস্যেতি ॥ ১৯॥
 যিনি প্রেম ভক্তি সহকারে শ্রীচৈতন্যদেবের আরাধনা করেন ভজনা করেন, ধ্যান করেন তিনি সর্বপাপথেকে মুক্ত হন।  নিষ্কলুষ পূত পবিত্র হয়ে ওঠেন। পরম তত্ত্ব জ্ঞাত হয়ে তিনি শোক দুঃখ অতিক্রম করে আনন্দময় স্থিতিতে অধিষ্ঠিত হন।  এছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।

 ন চৈতন্যাত্ কৃষ্ণাজ্জগতি পরতত্ত্বাত্পরমিহ ॥ ইতি ।