Purush bodhini upanishad | vaishnav upanishad

Purush bodhini upanishad | vaishnav upanishad

পুরুষ বোধিনী শ্রুতি
মুক্তিকোপনিষদে বর্নিত ১০৮ টি উপনিষদের মধ্যে এই উপনিষদের নাম পাওয়া যায় না।  কিন্তু শ্রীজীবগোস্বামীপাদ বলদেব বিদ্যাভূষনপাদ এই উপনিষদ থেকে তাদের গ্রন্থে অনেক স্থানে উদ্ধৃত করেছেন। তাই এই উপনিষদ টি বাংলায় প্রকাশ করা হল। বৃন্দাবন শোধসংস্থান থেকে প্রাপ্ত গ্রন্থের সংস্কৃত পাঠ  থেকে বাংলায় দেওয়া হল।
                        প্রথম প্রপাঠক
ॐ অথ সুষুপ্তৌ রামঃ স্ববোধম আধায় এব কিম মে দেবী ক্বাসৌ কৃষ্ণঃ যোহয়ম্ মম ভ্রাতেতি। তস্য কান্তিচ্ছায়ে ব্রূহীতি।
অনুবাদ:- বলরাম বললেন  সেই কৃষ্ণের স্বরূপ সম্পর্কে আমায় অবগত করান যে আমার ভ্রাতা, এবং সেই দেবী কে তার স্বরূপ সম্পর্কেও আমায় বলুন, যিনি কৃষ্ণের স্বরূপশক্তি।
সা বৈষ্ণব্য হ্যুবাচ, রাম শৃণূ! ভূর্ভূবঃ স্বর্মহঃ জনস্তপঃ সত্যম অতলং বিতলং সুতলং রসাতলং তলাতলং মহাতলং পাতালম এব পঞ্চশতকোটিযোজন বহুলাম্ স্বর্ণান্ডম্ ব্রহ্মান্ডম ইতি। অনন্ত কোটি ব্রহ্মান্ডানাম উপরি কারণজলোপরি মহাবিষ্ণোর্নিত্যস্থলম বৈকুন্ঠম।
অনুবাদ:- তিনি বললেন হে রাম শোনো এই ভূ লোকের উর্দ্ধে ভূবঃ লোক তার উর্দ্ধে স্বর্গলোক, তার উর্দ্ধে মহঃলোক, তার উর্দ্ধে জনলোক, তার উর্দ্ধে তপঃলোক, তার উর্দ্ধে সত্য লোক এবং ভূলোকের নীচে অতল, বিতল, সুতল, রসাতল, তলাতল মহাতল, পাতাল, এই পঞ্চাশকোটি যোজন বিস্তৃত হিরণ্যগর্ভ রূপ ব্রহ্মান্ড।  এরকম অনন্তকোটি ব্রহ্মান্ডের উর্দ্ধে মহাবিষ্ণুর নিত্যস্থল বৈকুন্ঠ।
স হ পৃচ্ছতি।  কথং শূন্যমন্ডলে নিরালম্বনম।
সাহনুয়ুক্তা পদ্মাসনাসীনঃ কৃষ্ণ ধ্যান পরায়নঃ শেষ দেবোহস্তি তস্যানন্তরোমকূপেষু অনন্তকোটি ব্রহ্মান্ডানি অনন্তকোটি কারনজলানি।  তস্য সপ্তকোটিপরিসহস্রপরিমিতাঃ ফণাঃ। তদুপরি রুদ্রলোকম শিব বৈকুন্ঠম ইতি দশকোটিযোজন বিস্তীর্ণো রুদ্রলোকঃ।  তদুপরি বিষ্ণুলোকঃ। সপ্তকোটিযোজনবিস্তীর্নো বিষ্ণুলোকঃ। তদুপরি সুদর্শন চক্রম ত্রিকোটিযোজনবিস্তীর্নম, তদুপরি কৃষ্ণস্য স্থানং গোকুলাদ্যং মাথুরমন্ডলম মহৎপদং  সুধাময় সমুদ্রেণাবেষ্টিতম ইতি। তত্রাষ্টদলকেশর মধ্যে মণিপীঠে সপ্তাবরণকমিতি।
অনুবাদ:- রাম জিজ্ঞাসা করলেন মহাশূন্যে কোন অবলম্বন কে আশ্রয় করে এই ব্রহ্মান্ড সমূহ অবস্থিত। তিনি বললেন অনন্তশেষ পদ্মাসন করে কৃষ্ণ ধ্যান করছেন, তার অনন্ত রোমকূপে অনন্ত কোটি ব্রহ্মান্ড অবস্থান করছে।  তার সপ্তকোটিপরিসহস্র ফনার উর্দ্ধে রুদ্রলোক, যা দশকোটিযোজন বিস্তৃত। তার উর্দ্ধে  বিষ্ণুলোক, যা সাত কোটি যোজন বিস্তৃত। তার উপরে সুদর্শন চক্র তিন কোটি যোজন বিস্তৃত। তার উপরে অমৃত সমুদ্রবেষ্টিত গোকুলাদি মথুরামন্ডল। এটিই কৃষ্ণের স্থান। এই মাথুরমন্ডলে অষ্টদলকেশর মধ্যে মণিপীঠে শ্রীকৃষ্ণ বিরাজমান। তার বাইরে সপ্ত আবরণ।
স পৃচ্ছতি। কিম্ রূপম্ কিম স্থানম, কিম পদ্মম কিম অনন্তকেশর কিম সেবকাঃ কিম আবরণাঃ ইতি উক্তে সাহনুয়ুক্তা গোকুলাদ্যে মথুরামন্ডলে বৃন্দাবন মধ্যে সহস্রদল পদ্মে ষোড়শ দল মধ্যে অষ্টদলকেশরে কল্পতরোর্মূলে গোবিন্দহপিশ্যামঃ পীতাম্বরো দ্বিভূজো ময়ূরপিচ্ছশিরো বেণু বেত্র হস্তো নির্গুণঃ সগুণো নিরাকারঃ সাকারো নিরীহঃ সচেষ্টতে বিরাজত ইতি।
তিনি জিজ্ঞাসা করলেন সেই গোকুল নামে ধাম কিরকম, কেমন স্থান, কেমন পদ্মাকৃতি, সেই পদ্মের কোথায় কে অবস্থান করেন, কারা তার সেবক, কারা তার আবরণ দেবতা তা সবিস্তারে বলুন।
তিনি বললেন সেই গোকুল নামা বৃন্দাবন ধাম সহস্রদল পদ্মের আকৃতি বিশিষ্ট। তার মধ্যে অষ্টদলকেশরে কল্পতরুর মূলে (বংশীবটে) শ্যামসুন্দর গোবিন্দ বিরাজ করছেন। তিনি দ্বিভূজ, পীতবাস, মাথায় ময়ূর পাখা, বেনু বেত্র হাতে। তিনি নির্গুন অর্থাৎ মায়ার তিন গুনের উর্দ্ধে। আবার সগুন অর্থাৎ ৬৪ টি গুন বিশিষ্ট। তিনি নিরাকার অর্থাৎ পঞ্চভূত দ্বারা তার শরীর গঠিত নয়, রক্তমাংসের জড় শরীর নয়। তিনি সাকার অর্থাৎ আকৃতি বা রূপ বিশিষ্ট। তিনি নিরীহ অর্থাৎ জড় কামনা বশীভূত হয়ে কর্ম করেন না কর্মচক্রের অধীন নন। তিনি সচেষ্ট অর্থাৎ ভক্ত দের মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্য তিনি নানা অদ্ভূত কর্ম করেন।
দ্বে পার্শ্বে চন্দ্রাবলী রাধিকা চেতি যস্যাংশেন লক্ষ্মীদূর্গাদিকা শক্তিরিতি। পশ্চিমে সম্মুখে ললিতা, বায়ব্যে শ্যামলা, উত্তরে শ্রীমতি, ঐশান্যাং হরিপ্রিয়া, পূর্বে বিশাখা, চাগ্নৌ শ্রদ্ধা, য়াম্যাম পদ্মা, নৈঋৃত্যাম ভদ্রা। ষোড়শ দলাগ্রে চন্দ্রাবলী, তদ বামে চিত্ররেখা, তৎ পার্শ্বে শ্রীশশিরেখা, তৎ পার্শ্বে কৃষ্ণপ্রিয়া, তৎ পার্শ্বে কৃষ্ণবল্লভা, তৎ পার্শ্বে চন্দ্রাবতী, তৎ পার্শ্বে মনোহরা, তৎ পার্শ্বে যোগানন্দা, তৎ পার্শ্বে পরানন্দা, তৎ পার্শ্বে প্রেমানন্দাচিত্রকরা তৎ পার্শ্বে মদনসুন্দরী নন্দা, তৎ পার্শ্বে সত্যানন্দা, তৎ পার্শ্বে চন্দ্রা, তৎ পার্শ্বে কিশোরবল্লভা, করুনাকুশলা এবম বিবিধা গোপ্যাঃ কৃষ্ণ সেবাম কুর্বন্তীতি। ইতি বেদবচনম ভবতী। ইতি বেদবচনম ভবতি।
অনুবাদ:- তার দুই পাশে চন্দ্রাবলী ও রাধিকা।  এই রাধিকা হলেন কৃষ্ণের স্বরূপশক্তি যার অংশে লক্ষ্মী দূর্গাদি শক্তি। পশ্চিম দিকে সামনে ললিতা, বায়ুকোনে শ্যামলা, উত্তর দিকে শ্রীমতি, ঈশান কোনে হরিপ্রিয়া, পূর্বদিকে  বিশাখা, অগ্নিকোনে শ্রদ্ধা, দক্ষিনে পদ্মা, নৈঋৃতকোনে ভদ্রা। ষোড়শ দলের সামনে চন্দ্রাবলী, তার বামে চিত্ররেখা, তার পাশে শ্রীশশিরেখা,তার পাশে কৃষ্ণপ্রিয়া,তার পাশে কৃষ্ণবল্লভা, তার পাশে চন্দ্রাবতী, তার পাশে মনোহরা, তার পাশে যোগানন্দা, তার পাশে পরানন্দা, তার পাশে প্রেমানন্দা ও চিত্রকরা, তার পাশেমদনসুন্দরী ও নন্দা, তার পাশে সত্যানন্দা, তার পাশে চন্দ্রা, তার পাশে কিশোরবল্লভা, করুনাকুশলা এরকম সহস্র গোপীরা কৃষ্ণ সেবা করতে রত। ইহাই সমস্ত বেদ বলছে। ইহাই সমস্ত বেদ বলছে।
মানস পূজয়া জপেন ধ্যানেন কীর্তনেন স্তুতি মানসেন সর্বেণ নিত্য স্থলং প্রাপ্নোতি নান্যেনেতি নান্যেনেতি।
অনুবাদ:- এই রাধাকৃষ্ণ যুগলের মানস পূজা, জপ মানসে লীলা স্মরণ নাম সংকীর্তন স্তূতির দ্বারা এই নিত্যলীলাস্থল লাভ করা যায়।  এছাড়া কোনো উপায় নেই। কোনো উপায় নেই।
।। ইতি অথর্বাণীয় পুরুষবোধিন্যাং প্রথম প্রপাঠকঃ।।
                          দ্বিতীয়ঃ প্রপাঠকঃ
 ওঁ সাঽনুয়ুক্তা-তস্য বাহ্যেষু শতদলপদ্মপত্রেষু যোগপীঠেষু রাসক্রীড়ানুরক্তা গোপ্যস্তিষ্ঠন্তি । এতচ্চতুর্দ্বারং লক্ষসূর্যসমুজ্জ্বলম্ । তত্র দ্রুমাকীর্ণম্ । তত্ প্রথমাবরণে পশ্চিমে সম্মুখে স্বর্ণমণ্ডপে দেবকন্যা । দ্বিতীয়ে সুদামাদি । তৃতীয়ে কিঙ্কিণ্যাদি । চতুর্থে লবঙ্গাদি । পঞ্চমে কল্পতরোর্মূলে উষা তত্সহিতোঽনিরুদ্ধোঽপি । ষষ্ঠে দেবাঃ । সপ্তমে রক্তবর্ণো বিষ্ণুরিতি দ্বারপালাঃ । এতদ্ বাহ্যাং রাধাকুণ্ডম্ । তত্র স্নাত্বা রাধাঙ্গং ভবতি । ঈশ্বরস্য দর্শনয়োগ্যং ভবতি । যত্র স্নাত্বা নারদ ঈশ্বরস্য নিত্যস্থলসামীপ্যয়োগ্যো ভবতি ।
অনুবাদ:- তিনি বললেন তার বাইরে শতদলপদ্মাকৃতি অংশে যোগপীঠে গোপীরা রাসক্রীড়ায় রত রয়েছেন। এর চারটি দ্বার রয়েছে যেগুলি লক্ষ সূর্যের মত জ্যোতি বিকিরন করছে। তার বাইরে মনোহর সৌরভমোহিত অনেক বৃক্ষ লতা সমন্বিত মহোদ্যাণ রয়েছে।  প্রথম আবরণে পশ্চিম দিকে সামনে স্বর্ণ মন্ডপে দেবকণ্যাগন আছেন যারা সাধনদ্বারা গোপী স্বরূপ লাভ করেছেন। । দ্বিতীয় আবরণে সুদামাদি সখাগন। তৃতীয় আবরণে কিঙ্কিন্যাদি গোপাল গণ, চতুর্থ আবরণে লবঙ্গাদি ও পঞ্চম আবরণে উষা সহ অনিরুদ্ধ। ষষ্ঠ আবরণে দেবগন ও সপ্তমে রক্তবর্ণ বিষ্ণু দ্বারপাল রূপে আছেন।  তার বাইরে আছে রাধাকুন্ড।  যাতে স্নান করলে রাধা সম প্রেম লাভ হয়, গোপীদেহ প্রাপ্ত হয়। পরমপুরুষ গোবিন্দের সঙ্গলাভের যোগ্যতা অর্জন করে।  যেখানে স্নান করে নারদ কৃষ্ণ সামীপ্য অর্থাৎ তার নিত্যস্থল বৃন্দাবনে বাসের যোগ্যদেহ লাভ করেছিলেন (পদ্মপুরানে এই কাহিনী টি আছে)
 রাধাকৃষ্ণয়োরেকমাসনম্ । একা বুদ্ধিঃ । একং মনঃ । একং জ্ঞানম্ । এক আত্মা । একং পদম্ । একা আকৃতিঃ । একং ব্রহ্ম । তস্য সমং হেমমুরলীং বাদয়ন্ হেমস্বরূপামনুরাগসংবলিতাং কল্পতরোর্মূলে  সুরভিবিদ্যা অক্ষমালা শ্রুতিরিব পরমা শুদ্ধা সাত্ত্বিকী গুণাতীতা স্নেহভাবরহিতা । অত এব দ্বয়োর্ন ভেদঃ । কালমায়াগুণাতীতত্বাত্ । তদ্ এব স্পষ্টয়তি অথেতি ।
অনুবাদ:- রাধা কৃষ্ণের এক আসন, এক বুদ্ধি, এক মন, এক জ্ঞান, এক আত্মা, এক পদ, এক আকৃতি, এক ব্রহ্ম, উন্নত উজ্জ্বল রসে ভাবিত কল্পতরুমূলে বংশীবাদনরত (রসরাজ মহাভাব এই রূপ চৈতন্যচরিতামৃতে বর্ননা আছে) শুদ্ধসত্ত্ব তিনগুণের অতীত তাই কামাদি রজতমগুনজাত ভাব বর্জিত, অতএব দুজনের মধ্যে কোনও ভেদ নেই। কাল ও মায়া স্পর্শ রহিত,
 অথানন্তরং মঙ্গলে বা । অথ বা শ্রীবৃন্দাবনমধ্যে ঋগ্যজুঃসামস্বরূপম্ । ঋগাত্মকো মকারঃ । য়জুরাত্মক উকারঃ । শ্রীরামঃ সামাত্মকোঽপি অকারঃ । শ্রীকৃষ্ণঃ অর্ধমাত্রাত্মকোঽপি । যশোদা ইব বিন্দুঃ । পরব্রহ্ম সচ্চিদানন্দানন্দরাধাকৃষ্ণয়োঃ পরস্পরসুখাভিলাষরসাস্বাদন ইব তত্ সচ্চিদানন্দামৃতং কথ্যতে। তল্লক্ষণং যত্ প্রণবং ব্রহ্মবিষ্ণুশিবাত্মকমিচ্ছাজ্ঞানশক্তিনিষ্ঠং কায়িকবাচিকমানসিকভাবং সত্ত্বরজস্তমস্বরূপং সত্যত্রেতাদ্বাপরানুগীতম্ । দ্বাপরস্য পশ্চাদ্ বর্ততে কলিঃ । এতচ্চতুর্যুগেষু গীয়তে। তদ্ ভূর্ভুবঃস্বর্লক্ষণমোঙ্কার এব । য়চ্চান্যদ্ অতিরিক্তং কালাতীতং তদ্ অপ্যোঙ্কার এব । সর্বং হ্যেতদ্ ব্রহ্ম আত্মা সোঽহমস্মি ইতি ধীমহি চিন্তয়েমহি । ``আদিত্যো বা এষ এতন্ মণ্ডলং তপতি'' ইতি যত্ শ্বেতাখ্যং শ্বেতদ্বীপনাম স্থানং তুরীয়াতীতং গোকুলমথুরাদ্বারকাণাং তুরীয়মেতদ্ দিব্যং বৃন্দাবনমিতি পুরৈবোক্তং সর্বং সম্পত্সম্প্রদায়ানুগতং যত্র ।
।।ইতি অথর্বাণীয় পুরুষবোধিন্যাং দ্বিতীয় প্রপাঠকঃ।।
 অনুবাদ:- বৃন্দাবন মধ্যে তিনবেদ স্বরূপ, ঋগাত্মক ম কার, যজুর্বেদ রূপ উকার, সামবেদ রূপ অকার, শ্রীরাধাকৃষ্ণযুগল ও বলরাম অবস্থান করেন, প্রণবের ম শব্দে রাধিকা, উ অর্দ্ধমাত্রা দ্বারা কৃষ্ণ, ও অ দ্বারা বলরাম কে বোঝায়। যশোদা প্রণবের বিন্দু, রাধাকৃষ্ণ যুগল একে অন্যের সুখের অভিলাষে সেবায় নিরত, তাই সচ্চিদানন্দ পরব্রহ্ম বলা হয়। এই পরব্রহ্ম ই প্রণবের লক্ষণ। এই প্রণব ব্রহ্মা বিষ্ণু শিব বোধক   ইচ্ছাশক্তি, জ্ঞানশক্তি, ক্রিয়াশক্তি বোধক, সত্ত্ব, রজ, তম গুণ বোধক, ভূ ভূবঃ স্বর্গলোক বোধক ওঁকার বলে চতুর্যুগে বলা হয়।  এই ব্রহ্মই সর্বব্যাপী হয়ে আছেন,  সেই ব্রহ্মের মতই সচ্চিদানন্দ ময় আত্মা আমি এই রূপ ধ্যান করলে বৃন্দাবন ধাম লাভ হয়। যা শ্বেতদ্বীপ বা বৈকুন্ঠ, মথুরা, দ্বারকা এই তিনের অতীত তুরীয় ধাম,

                           তৃতীয়ঃ প্রপাঠকঃ
ওঁ অথ অনন্তরং ভদ্রশ্রীলোহভাণ্ডীরমহাতালখদিরবকুলকুমুদকাম্যমধুবৃন্দাবনানি দ্বাদশবনানি । কালিন্দ্যাঃ পশ্চিমে সপ্তবনানি পূর্বস্মিন্ পঞ্চবনানি উত্তরস্মিন্ গুহ্যানি সন্তি ।
অনুবাদ:- অনন্তর দ্বাদশবন সমন্বিত বৃন্দাবনের মাহাত্ম্য বলা হচ্ছে। দ্বাদশ বন যথা ভদ্রবন, শ্রীবন বা বেলবন, লোহবন, ভান্ডীরবন, মহাবন, তালবন, খদিরবন, বকুলবন, কুমুদবন, কাম্যবন, মধুবন,
যমুনার পশ্চিমে সাতটি বন ও পূর্বদিকে পাঁচটি বন আছে।

মথুরাবনমধুবনমহাবনখাদিরবনভাণ্ডীরবননন্দীশ্বর- বননন্দবনানন্দবনখাণ্ডববনপলাশবনাশোকবনকেতক- বনদ্রুমবনগন্ধমাদনবনশেষায়িবনশ্যামায়ুবনভুজ্যুবনদধি- বনবৃষভানুবনসঙ্কেতবনদীপবনরাসবনক্রীড়াবনোত্সুকবনান্যেতানি চতুর্বিংশতিবনানি নিত্যস্থলানি নানালীলয়াধিষ্ঠায় কৃষ্ণঃ ক্রীড়তি ।
 অনুবাদ:- মথুরাবন, মধুবন, মহাবন, খদিরবন, ভান্ডীরবন, নন্দীশ্বরবন বা নন্দগাঁও, নন্দবন, আনন্দবন, খান্ডব বন, পলাশবন, অশোকবন, কেতকবন, দ্রুমবন, গন্ধমাদনবন, শেষশায়ীবন, শ্যামবন(শ্যামডাক), ভুজ্যুবন (ভোজনস্থলী), দধিবন, বৃষভানুবন(বর্ষাণা), সঙ্কেতবন, দীপবন, রাসবন, ক্রীড়াবন, উৎসুকবন, এইপ্রকার ২৪টি বন অধিবন উপবন সমন্বিত বৃন্দাবন শ্রীকৃষ্ণের নিত্যস্থল। এখানে শ্রীকৃষ্ণ নিত্যলীলা বিহার করেন।
তানি বনানি বসন্তঋতুসেবিতানি মন্দাদিপবনয়ুক্তানি সন্তিযত্র দুঃখং নাস্তি সুখং নাস্তি জরা নাস্তি মরণং নাস্তি ক্রোধো নাস্তি, তত্র পূর্ণানন্দময়ঃ শ্রীকৈশোরকৃষ্ণঃ শিখণ্ডিদললম্বিতত্রিয়ুমগুঞ্জাবতংসমণিময়কিরীটশিরাঃ গোরোচনাতিলকঃ কর্ণয়োর্মকরকুণ্ডলো বন্যস্রগ্বী মালতীদামভূষিতশরীরঃ করে কঙ্কণং বাহৌ কেয়ূরং পাদয়োঃ কিঙ্কিণীং কট্যাং পীতাম্বরং চ ধারয়ন্ গম্ভীরনাভিকমলঃ সুবৃত্তনাসায়ুগলো ধ্বজবজ্রাদিচিহ্নিতপাদপদ্মো মহাবিষ্ণুরাস্তে। এবংরূপং কৃষ্ণচন্দ্রং চিন্তয়েন্ নিত্যশঃ সুধীঃ ॥ ইতি
অনুবাদ:- এই বনসকল নিত্য বসন্তঋতু সেবিত, মলয়পবনযুক্ত, সেখানে দুঃখও নেই সুখ ও নেই অর্থাৎ কর্মফলাদিবাসনা মুক্ত। জরা মৃত্যু ইত্যাদি কালের প্রভাব নেই। ক্রোধ ইত্যাদি সত্ত্ব রজ তমাদি মায়ার তিন গুনের প্রভাব নেই। সেখানে পূর্নানন্দময় ময়ূরপুচ্ছ, গুন্জামালাদি বনমালা, মনিময় মুকুটধারী নিত্যকিশোর কৃষ্ণ বিরাজ করেন তার কপালে গোরোচনার তিলক, কানে মকরকুন্ডল, মালতীলতা ভূষিত শৃঙ্গার করপদ্মে কঙ্কন বাহুতে কেয়ূর চরনে কিঙ্কিনী, কোমরে পীতধড়া, সুগভীর নাভিকমল, সুন্দর গোল নাসা যুগল। ধ্বজবজ্র চিহ্নিত পাদপদ্ম। বুদ্ধিমান ব্যাক্তি এইরূপ মানসে স্মরণ করবেন।

তস্যাদ্যা প্রকৃতী রাধিকা নিত্যা নির্গুণা সর্বালঙ্কারশোভিতা প্রসন্নাশেষলাবণ্যসুন্দরী । অস্মদাদীনাং জন্ম তদধীনং অস্যাংশাদ্ বহবো বিষ্ণুরুদ্রাদয়ো ভবন্তি । এবম্ভূতস্যাগাধমহিম্নঃ সুখসিন্ধোরুত্পন্নমিতি মানসপূজয়া ধ্যানেন কীর্তনেন স্তুত্যা মানসেন সর্বেণ নিত্যস্থলং প্রাপ্নোতি । নান্যেনেতি । নান্যেনেতি । নান্যেনেতি । ইতি বেদবচনং ভবতি । ইতি বেদবচনং ভবতি । ইতি বেদবচনং ভবতি।
অনুবাদ:- তার আদি প্রকৃতি রাধিকা। তিনি ও নিত্যা অর্থাৎ কেবল দ্বাপরে কুব্জাদির ন্যায় কৃষ্ণ লীলা সঙ্গিনী নন। তিনি ও নির্গুনা। সর্ব অলঙ্কারে সুশোভিতা, প্রসন্না অশেষলাবণ্যবতী আমাদের সকলের আদি তার অংশে কোটি বিষ্ণুরুদ্রাদি জন্ম হয়। এইরূপ যার মহিমা তার ধ্যানে সুখসাগরে নিমজ্জিত হয়। এই রাধাকৃষ্ণ যুগলের মানস পূজা, জপ মানসে লীলা স্মরণ নাম সংকীর্তন স্তূতির দ্বারা এই নিত্যলীলাস্থল লাভ করা যায়।  এছাড়া কোনো উপায় নেই। কোনো উপায় নেই।  এইকথাই বেদ সকল বলে।
।।ইতি অথর্বাণীয় পুরুষবোধিন্যাং তৃতীয় প্রপাঠকঃ।।
                         চতুর্থঃ প্রপাঠকঃ
ওঁ অথ পুরুষোত্তমো য়স্যাং নিশায়াং তুরীয়ং সাক্ষাদ্ ব্রহ্ম । যত্র পরমসন্ন্যাসস্বরূপঃ কৃষ্ণঃ কল্পপাদপঃ । যত্র লক্ষ্মীর্জাম্ববতী রাধিকা বিমলা চন্দ্রাবলী সরস্বতী ললিতাদিরিতি । সাক্ষাদ্ ব্রহ্মস্বরূপো জগন্নাথঃ অহংশেষাংশজ্যোতীরূপঃ সুদর্শনো ভক্তশ্চ । এবং পঞ্চধা বিভূতিমিতি । য়ত্র চ মথুরা গোকুলং দ্বারকা বৈকুণ্ঠপুরী রামপুরী য়মপুরী নরনারায়ণপুরী কুবেরপুরী গণেশপুরী শক্রপুরী এতা দেবতাস্তিষ্ঠন্তি । য়ত্র রসাতলপাতালগঙ্গারোহিণীকুণ্ডমমৃতকুণ্ডমিত্যাদি নানাপুরী ।
অনুবাদ:- অনন্তর পুরুষোত্তম কৃষ্ণের মাহাত্ম্য বলা হচ্ছে। যিনি তুরীয় সাক্ষাত ব্রহ্ম। যেখানে কৃষ্ণ পরমসন্ন্যাসস্বরূপ। যেখানে লক্ষ্মী জাম্ববতী রাধিকা বিমলা চন্দ্রাবলী সরস্বতী ললিতাদির সাথে সাক্ষাত ব্রহ্মস্বরূপ জগন্নাথ, ও আমি বলরাম যার অংশ শেষ সুদর্শন ও অন্যান্য ভক্ত সহ বিরাজমান। যেখানে মথুরা গোকুল দ্বারকা বৈকুন্ঠ রাম নরনারায়ণ সকলের নিত্যধাম ও দেবগনের ধাম যথা যমপুরী, ইন্দ্রের অমরাবতী কুবেরের পুরী, গণেশের পুরী বিরাজমান।  যেখানে রসাতল, পাতাল, গঙ্গা, রোহিনী কুন্ডের ন্যায় অমৃতকুন্ড বিদ্যমান।
যত্রান্নং সিদ্ধান্নম্ । শূদ্রাদিস্পর্শদোষরহিতং ব্রহ্মাদিসংস্কারাপেক্ষারহিতং যত্র শ্রীজগন্নাথস্য যোগমিত্যর্থঃ । ``নাভ্যা আসীত্'' ইতি মন্ত্রেণ, ``অন্নপতেঽন্নস্য'' ইতি মন্ত্রেণ, ``অন্নাদ্যায় ব্যূহধ্বং সোমো রাজায় ভাগমত্সমে সুখং প্রমার্যতে য়শসা চ বলেন চ'' ইতি মন্ত্রেণ, ``বিশ্বকর্মণি স্বাহা'' ইতি মন্ত্রেণ, ``আপো জ্যোতী রসোঽমৃতং ব্রহ্ম ভূর্ভুবঃ সুবরোম্'' ইতি মন্ত্রেণ, ``পৃথিবী তে পাত্রং দ্যৌরপিধানং ব্রহ্মণস্ত্বা মুখে জুহোমি স্বাহা'' ইতি মন্ত্রেণ, ``অন্নং ব্রহ্ম'' ইতি শ্রুত্যা চ কৈবল্যমুক্তিরুচ্যতে । যত্রান্নং ব্রহ্ম পরমং পবিত্রং শান্তো রসঃ কৈবল্যমুক্তিঃ সিদ্ধা ভূর্ভুবঃস্বর্মহত্তত্ত্বমিত্যাদি যত্র ভার্গবী যমুনা সমুদ্রমমৃতময়ং বৃন্দাবনানি নীলপর্বতগোবর্ধনসিংহাসনং প্রাসাদো মণিমণ্ডপো বিমলাদিষোড়শচণ্ডিকাগোপ্যো যত্র সমুদ্রতীরে চ নিরন্তরং কামধেনুবৃন্দং যত্র নৃসিংহাদয়ো দেবতা আবরণানি যত্র ন জরা ন মৃত্যুর্ন কালো ন ভঙ্গো ন জয়ো ন বিবাদো ন হিংসা ন শান্তির্ন স্বপ্ন এবং লীলাকামশরীরী স্ববিনোদার্থং ভক্তৈঃ সহোত্কণ্ঠিতৈস্তত্র ক্রীড়তি কৃষ্ণঃ ।
অনুবাদ:- যেখানে অন্ন মহাপ্রসাদ ই ব্রহ্ম, চন্ডাল স্পর্শ হলেও তা ব্রাহ্মন গন গ্রহন করতে পারে, ব্রাহ্মণ্য সংস্কারের অপেক্ষা রাখেনা।  পরম পুরুষোত্তম জগন্নাথের অবস্থান হেতু।  "নাভ্যা আসীত্''  ``অন্নপতেঽন্নস্য'' ইত্যাদি ঋগ্বেদের মন্ত্রে এই পুরুষোত্তমের মাহাত্ম্য বলা হয়েছে। এখানে অন্নমহাপ্রসাদ গ্রহণে কৈবল্যমুক্তি লাভ হয়।  এখানে যমুনা রূপী অমৃতময়ী সমুদ্র, গোবর্ধন রূপ নীলপর্বত, বৃন্দাবন রূপ সমুদ্রতীরে কামধেনুগন বিচরণ করছে,  মণিমন্ডপ প্রাসাদ,  যেখানে বিমলাদি ষোড়শ চন্ডিকা, নৃসিংহাদি আবরণ দেবতা আছেন, যেখানে জরা, মৃত্যু, কাল, জন্ম বিবাদ হিংসাদি নেই, ভক্তদের বিনোদের জন্য শ্রীকৃষ্ণ সেখানে বিহার করেন ভক্তরা তার সেবায় উৎকন্ঠিত থাকে।
একো দেবো নিত্যলীলানুরক্তো
ভক্তব্যাপী ভক্তহৃদ্যন্তরাত্মা ।
কর্মাধ্যক্ষঃ সর্বভূতাধিবাসঃ
সাক্ষী চেতা কেবলো নির্গুণশ্চ ॥
অনুবাদ:- একজনই দেবতা। তিনি নিত্যলীলানুরক্ত। ভক্তদের অন্তরে ব্যাপ্ত হয়ে নিত্য বিহার করছেন, কর্মফলদাতা সর্বভূতে তিনি বাস করছেন।
মানসপূজয়া জপেন ধ্যানেন কীর্তনেন স্তুত্যা মানসেন সর্বেণ নিত্যস্থলং প্রাপ্নোতি । নান্যেনেতি । নান্যেনেতি । নান্যেনেতি । ইতি বেদবচনং ভবতি । ইতি বেদবচনং ভবতি । ইতি বেদবচনং ভবতি ॥
।।ইতি অথর্বাণীয় পুরুষবোধিন্যাং চতুর্থঃ প্রপাঠকঃ।।
ইতি অথর্বাণীয় পুরুষবোধিন্যাং শ্রতি সমাপ্ত।