Nrisingha dev stories | basantika parinayam
বিদূষকঃ—দেব, সত্যং আলপিতং ষুষ্মাভিঃ। যৎ ইদানীং অভিনবাবতীর্ণ মধুমাসবাসরতয়া দোহলধূপাদি মায়াসমন্তরেণ কন্দলিত বিবিধপল্লব কুসুম ফলসমগ্রা ভবন্তি পাদপাঃ।
বিদূষক—হে দেব আপনি যথার্থ ই বলেছেন। যেহেতু আপনি সদ্য অবতীর্ণ মধুমাসে(বসন্তঋতুর প্রথম মাসে) এসেছেন। তাই এখানে বৃক্ষগুলি নবীন বিবিধ পল্লবে শোভিত, নানান সুগন্ধী পুষ্প ও বিচিত্র ফলে ভরা। এবং বৃক্ষগুলিকে করার জন্য দোহল ও ধূপাদি উৎসবের আবশ্যকতা নেই।
দেবঃ—(পরিতঃ পশ্যন্ সানুস্মরণাভ্যসূয়ম্)
তন্বী শ্লিষ্যতি দোহলে কুরবকং তৎপুণ্যশীলো হ্যয়ং
গায়ত্বেব শনৈঃ প্রিয়ালুনিকটে সায়ং সুজন্মা ন কিম্।
ধত্তে দৃষ্টিবিনোদনানি তিলকে ধন্যোহথ মেবাহধুনা
মাকন্দং মৃদুপাণিনা স্পৃশতি চেৎ মান্যোদয়োহয়ং ন বা।। ২৩
দেব—(আশেপাশে দৃষ্টিপাত করে ও
অহো এই কুরবক পুষ্পের বৃক্ষের কি সৌভাগ্য সেই তন্বী কন্যার দ্বারা এর দোহাল উৎসব(বট সাবিত্রী ব্রত) হয়।
এই প্রিয়ালু বৃক্ষ ও কি পূণ্যশীলা যে তার সঙ্গীতে পুষ্পিত হয়। তার দৃষ্টিপাতে এই তিলক বৃক্ষ ধন্য।
এই মাকন্দ বৃক্ষের কি সৌভাগ্য যে তার মৃদু হস্ত স্পর্শ লাভ করে।
বিদূষকঃ —অহো অচেতনানামপি অনোহানাং উপরিং অসূয়াবেশো দেবস্য।
বিদূষকঃ—(স্বগত) হায় দেব এই অচেতন বৃক্ষের প্রতিও ঈর্ষান্বিত হচ্ছেন।
দেবঃ—(পুনর্বিমৃশ্য)
পশ্যামি তামিহ দদর্শ বন শ্রিয়ং যাং
শুশ্রাব যৎ পিকরূতং তদহং শৃণোমি।
ছায়াদ্রুমং যমভজৎ প্রমদা ভজেতং
প্রায়স্তয়ৈষ সুতরাং উপ ভোগ ভেদঃ।। ২৪
দেব—(পুনরায় সেই দৃশ্য দেখে) আমিও অরণ্যের সেই সৌন্দর্য্য দেখছি। যা সেও উপভোগ করে। আমি যে কোকিলের কুহুরব শুনছি তা সেও শ্রবণ করে থাকে। হয়ত আমি এই যে বৃক্ষতলে বিশ্রাম করছি সেও হয়ত এই বৃক্ষতলে বিশ্রাম করে থাকে। কিন্তু আমরা পৃথক পৃথক ভাবে একাকী তা উপভোগ করছি। # 124
বিদূষকঃ —দেব অস্যাঃ ক্ষণমাত্রেণৈব স্বাভাবিকং উপভোগ সৌখ্যং অনুভবিষ্যসি।
বিদূষক—হে দেব আর কিছুক্ষণ পরেই আপনি তার সঙ্গে এই অরণ্যে বিহার করতে পারবেন।
দেবঃ—
অনবদ্য গুণনিবন্ধাং আবাহিতমদনমূলমন্ত্রকলাম্।
আনন্দমূলিকামহমধূনা পশ্যামি কিং ন হৃষ্যামি।। ২৫
দেব—আমি কি সত্যই তাকে দর্শন করতে চলেছি? যিনি অনবদ্য গুনের আশ্রয়। যিনি তার চরিত্রে আচার আচরণে ব্যাক্তিত্বে মদন মূল মন্ত্র কলা কে আবাহন করেছেন। যাকে আমি আনন্দ দায়ী জড়িবুটী মনে করি। আমি কি সত্যই এই আনন্দ লাভ করতে পারবো।
(নেপথ্যে)
অলমলং সখ্যৌ মুখরত্বেন।
নেপথ্যে
সখী তোমরা কি হাস্য পরিহাস বন্ধ করবেনা?
দেবঃ—(আকর্ণ্য সকৌতুকম্) কোহয়মুত্তরেণ মালতীমন্ডপং আলাপঃ?
দেব— (তা শুনে কৌতুকের সহিত) উত্তরদিকের মালতী মন্ডপ থেকে কাদের বার্তালাপ শুনছি?
(পুনর্বিভাব্য) অথবা, কৌমুদী মন্তরেণ কুতঃ প্রসাদসৌলভ্যং? যতঃ তস্যা এবেদং আলপিতং তৎ আবাং অস্যাঃ সহ সখীভ্যাং বিস্রম্ভ কথিতং অন্তরিতাবেব শ্রীষ্যাবঃ।
(পুনরায় দেখে) চন্দ্রমা ভিন্ন অন্য কি থেকে জ্যোৎস্না বিকিরিত হয়ে কুমুদ কে বিকশিত করতে পারে? তেমন সেই কন্যার বাক্যরূপ প্রসাদ ভিন্ন অন্য আর কি আমার চিত্ত কে বিচলিত করতে পারে? আসো আমরা কোথাও লুকিয়ে থেকে শুনি সে তার সখীদের সাথে কি বার্তালাপ করে।
(ইত্যুভৌ তথা কুরূতঃ।)
(এই বলে তারা গোপনে তাদের বার্তালাপ শ্রবণ করতে লাগলেন।)
ততঃ প্রবিশতি সহ সখীভ্যাং শুকমনুসরন্তী বাসন্তিকা।
শুক কে অনুসরণ করে সখীগন সহ বাসন্তিকার প্রবেশ।
বাসন্তিকা— সখ্যৌ যুবাভ্যাম্ মুখরত্বেন অপসার্যতে এষ শুকঃ।
বাসন্তিকা— হে সখী তোমাদের কলরবে এই শুক বিচলিত হয়ে গেছে। (তোমরা এত কোলাহল করা বন্ধ করো নয়ত সে উড়ে পালিয়ে যাবে।)
চতুরিকা—অত্র শুকপলায়নং অস্মাসু কথং আরোপয়সি? তব নূপুরশব্দ এব অপরাধ্যতি।
চতুরিকা—হে সখী এই শুকের পলায়নের কারনে আমাদের কেন অপরাধী করো। তোমার নূপূর ধ্বনীই অপরাধী। (প্রিয় দর্শনাকাঙ্খায় উৎকন্ঠিত হওয়ায় দৌড়াতে থাকায় তোমার চরণ এ নূপূর চঞ্চল হয়ে পড়েছে)
দেবঃ—(সানুস্মরণকৌতুকম্) অয়মগ্রতঃ শুকবেষধারী মায়াময়ঃ, অস্য তাবৎ অনর্ঘতর রমণীয়ানি অঙ্গানি।
বিদ্রুংকণ্ঠং চঞ্চুঃ নীলোপল শকলমক্ষিপক্ষ্মযুগম্।
অরূণ মণি ময়মঙ্গং মরকতমংঘ্রিযুগমস্য গাঙ্গেয়ম্।। ২৬
দেব—(কৌতুকের সহিত স্মরণ করে) হ্যাঁ এ আমাদের মায়াময়। যে অপূর্ব শুকের রূপ ধারণ করেছে। এই শুকের সকল অঙ্গ অত্যন্ত রমণীয়।
তার চঞ্চু দ্বয় প্রবাল কন্ঠ সদৃশ। তার চক্ষুপল্লব নীল কমল দল সদৃশ। তার মরকত মণি সদৃশ অঙ্গ অরূণ বর্ন মণি ময়, ও পদদ্বয় সুবর্ণ মন্ডিত।
ভ্রমরিকা—সখি স্বপ্ন বিপ্রলব্ধঃ অয়ময়ং গৃহীতঃ গৃহীতঃ ইতি ইদানীমপি বিপ্রলব্ধা অনেন দূরমানীতা।
ভ্রমরিকা—সখি স্বপ্নে একজনকে দেখে তুমি মনে করেছিলে তাকে তুমি ধরে ফেলে ফেলেছ। এখন এই শুকের পিছনে এতদূর দৌড়ে এসে মিথ্যাই কল্পনা করছো তাকে তুমি লাভ করবে।
বিপ্রলব্ধা= সঙ্কেত নিকেতনে প্রিয়মনোবলোক্য সমাকুলহৃদয়া।
বিদূষকঃ—দেব ত্রিভূবনবঞ্চকস্ত্বং অসয়াঃ স্বপ্নবিপ্রলম্ভকঃ আসীঃ।
বিদূষক—হে দেব তোমার মায়া য় তুমি ত্রিভূবন কে মোহিত করো। এই অবলা বিপ্রলম্ভা কন্যা কে কেন স্বপ্নে দর্শন দিয়ে বঞ্চিত করো।
দেবঃ—অলং অন্যথারোপেণ।
দেব— যথেষ্ঠ হয়েছে এবার আমার ওপর দোষারোপ করা বন্ধ করো।
বাসন্তিকা—ইলা সখ্যৌ তরূমূলনানন্তরিতয়া ময়া আসন্ন এষ স্পৃষ্টপক্ষাঞ্চলোহপি উড্ডয়ন লাঘবেন মাং বঞ্চয়তি।
বাসন্তিকা—হে সখী, এই শুকের পিছনে ছুটতে ছুটতে এই বৃক্ষতলে এসে মনে হল প্রায় এর পক্ষাঞ্চল ধরে ফেলেছি। কিন্তু কৌশলে সে আমায় বঞ্চনা করে পালিয়েছে।
দেবঃ—অয়মিদানীং প্রকৃতবেষোচিত বিভ্রমাভিনয়েন বলবদেনাং প্রলোভয়তি।
চঞ্চ্বা সমুল্লিখতি পক্ষপুতম্ ধুনোতি
বিস্তারয়ত্যপি বিকস্বররোমহর্ষম্।
আস্ফালয়ত্যপি মহীতলমীষৎ ঈষৎ
উড্ডীয় সঞ্চরতি লভ্যমিবৈষ পাণেঃ।। ২৭
দেব— নিজ বেশোচিত অভিনয় করে মায়াময় এই কন্যাকে নিজের পিছনে ধাওয়া করিয়ে বলপূর্বক অন্তঃপুর থেকে বাইরে নিয়ে এসছে।
তার চঞ্চু দ্বারা আঘাত করে, ডানা ঝটপটিয়ে সারা শরীরে রোমাঞ্চ প্রকট করে যেন ভীত হয়েছে। মাঝে মাঝে মাটিতে পড়ে যাওয়ার ছল করে আবার উড়ে গিয়ে, নীচ দিয়ে উড়ছে যাতে সে ধরতে পারে।
শুকঃ—(বালা শোকস্কন্ধমারূহ্য পরিতঃ পশ্যন্ অনতিদূরে দেবং নির্বর্ণ্য স্বগতম্)
আঃ কথমিবাগতং দেবেন। বলবৎ আয়াসিতা চেয়ং ষ্বামিনো হৃদয়বল্লভা। তদমুষ্যা বিস্ময়কৃতে আলোচনাস্পদমিদং পদ্যং গায়ামি।
শুক—(কন্যা কে শোক গ্রস্থ দেখে এদিকে দেব অহোবিলেশ ও নিকটে উপস্থিত মনে মনে বললেন)
আঃ দেব ও এখানে উপস্থিত হয়েছেন। তার প্রিয়া ও আমার পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত হয়ে শেষে ব্যার্থ মনোরথ হয়ে পড়েছে। আমি তাই তাকে বিস্ময়ান্নিত করে এই বিচার বিবেচনা যোগ্য সঙ্গীত করি।
ভ্রমরিকা—(সবিস্ময়ৌৎসুক্যম্)
সখী স্বয়ং গাতুং ইব কমপি রাগবন্ধং আলাপয়ত্যেষ শুকঃ।
ভ্রমরিকা—(বিস্ময়ান্বিত ও উৎসুক হয়ে) দেখ দেখ সখী এই শুক যেন কোন রাগে আলাপ করতে যাচ্ছে।
শুকঃ—প্রকটিত হিরণ্যদানঃ প্রাপ্তপ্রহ্লাদ সংভ্রমোদারঃ।
পূরয়তু বাঞ্ছিতং তে পুরূষকঙ্ঠীরবো বিভুঃ কোহপি।। ২৮
শুক— যে পুরুষ নরের মধ্যে সিংহ সদৃশ। যিনি হিরণ্য বা সুবর্ণ দানে প্রসিদ্ধ। যার উদারতা প্রকৃষ্ট রূপে আহ্লাদ বা আনন্দ দায়ক তিনি তোমার ইচ্ছা পূরণ করুন। গূঢ়ার্থে
যে পুরুষোত্তম ভগবান নরসিংহ রূপী, যিনি দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপু কে ধ্বংস করেছিলেন বলে প্রসিদ্ধ। শরণাগত প্রহ্লাদ মহারাজের প্রতি যার ঔদার্য্য সর্বজনবিদিত। তিনি তোমার অভীষ্ট পূরণ করুন।
দেবঃ—(স্বগতম্) উভয়ার্থানুবন্ধি সন্দর্ভমুপক্রান্তং অস্যাঃ ভাবমবগন্তুম্।
দেব—(স্বগতম্) এই শব্দানুবন্ধ দ্ব্যার্থবোধক। এর দ্বারা তার হৃদয়াভিলাষ বুঝতে পারার এই সুযোগ।
বাসন্তিকা—(স্বগতম্) কেবলমুক্তানুবদনমেতেষাম্ জাতিধর্মঃ। অহো কিং এতৎ এতস্য শ্রুতিলয় স্বরবিশেষোপেতং সঙ্গীতম্।)
বাসন্তিকা—(স্বগত) সাধারনত শুক যা শোনে তাই বলতে পারে। কি করে এই শুক সুর লয় যোগে সঙ্গীত করতে পারল।
চতুরিকা—সখী সঙ্গীত লাক্ষণিকে তব বল্লভনির্দেশ পদার্থমুক্ত্বা কথমিদানীম্ সঙ্গীত শ্লাঘনম্।
চতুরিকা—সখী কিন্তু তুমি কি এই শুক বচনে দেব অহোবিলেশের নির্দেশ বুঝতে পারছোনা। কেন তুমি সঙ্গীতের উৎকর্ষতা নিয়ে বিচার করছো?
বিদূষকঃ—অপি কথং মম বচন বিশ্বাসিনস্তব চতুরিকাবচনেন সংশয়ঃ পরিচ্ছিন্নঃ।
বিদূষক—হে দেব আপনি তো আমার কথায় সংশয় প্রকাশ করছিলেন, এখন কি চতুরিকার কথায় আপনার সংশয় শাতন হয়েছে?
দেবঃ—ই পরমপি অস্তি কিঞ্চিৎ বেদিতব্যম্?
দেব—এরপর আর কি কিছু অবিদিত থাকতে পারে?
বাসন্তিকা—সখি চতুরিকে তব অব্যুৎপন্নত্বং ময়ি কথং আরোপয়সি? যদেষ শব্দশ্লেষেণ কেবলং অহোবিলেশ্বরং গম্যোপমাণং কৃত্বা কস্যাপি নিজপ্রভোঃ মাহাত্ম্যং উদ্ধাটয়তি।
বাসন্তিকা— সখী চতুরিকে তোমার অজ্ঞতা কেন আমার ওপর আরোপ করছো? এই শুক দ্ব্যর্থবোধক শব্দ প্রয়োগ দ্বারা সঙ্গীত রচনা করে অহোবিলেশ্বরের উপমা দ্বারা নিজ প্রভূর মহানতা প্রকাশ করছে।
শুকঃ—(স্বগতম্) অহো এতস্যাঃ সকৃন্দ্রাহিতা। যদনয়া কবি হৃদয়ং যাবদবধার্য পর্যয়েণ সংক্ষিপ্য সংশিতঃ শব্দার্থঃ। তস্যামদাগমনং নিবেদয়ামি। (প্রকাশম্) ভদ্রে স্বস্ত্যস্তু।
শুক(স্বগত)—অহো এই কন্যা কবির হৃদয়ের অন্তস্থঃ বার্তা যথার্থ রূপে অনুভব করতে পারছেন। ও শব্দ সকলের গূঢ়ার্থ বুঝতে পারছেন। তাকে আমার অভিবাদন জানাই।
(প্রকাশ্যে) ভদ্রে তোমার কল্যীণ হোক।
বাসন্তিকা—(স্বগতম্) অস্য খলু উত্তরপ্রত্যুত্তরেঃ পদ্য পূরণার্থ এষা পীঠিকা আত্মনৈব অস্য সমাগমনিদানং অবগচ্ছামি।
বাসন্তিকা—(স্বগতম্) মনে হয় এইকথা তার কৃত পদ্যের অন্তর্নিহিত বার্তা প্রকাশ করার জন্য উত্তর প্রত্যুত্তর আরম্ভ করার ভূমিকা মাত্র। তবে আমিই বার্তালাপ শুরু করি।
(প্রকাশম্) কো বা ত্বম্?
(প্রকাশ্যে) তুমি কে?
শুকঃ—অয়ি সুভগেহহোবিলেন্দোঃ শুকোহহম্
শুক—হে সুভগে! আমি অহোবিলচন্দ্রের শুক।
বাসন্তিকা—(সবহুমানম্) কিং আগতোহত্র?
বাসন্তিকা—(সম্মান প্রদর্শন করে) আপনি কিজন্য এখানে এসেছেন?
শুকঃ—নিত্যং তব নব বনারাম বাটীষু বস্তুম্।
শুক—আমি তোমার নব উদ্যান বাটীকায় বাসের জন্য এসেছি।
বাসন্তিকা—কিং জাতং তত্র?
বাসন্তিকা—কেন তুমি সেখানে বাস করতে চাও।
শুকঃ—দেবো ন গণয়তি মাং পূর্ববৎ
শুক—দেব অহোবিলেশ এখন আমাকে পূর্ববৎ আদর করেননা।
বাসন্তিকা—তৎ কিমর্থম্?
বাসন্তিকা—তা কি কারনে?
শুকঃ—বিশ্লেষাৎ
শুক—তার বিরহজনিত দুঃখের কারনে।
বাসন্তিকা—(সকাৎর্যাভ্যসূয়ম্) সোহপি কস্যাঃ?
বাসন্তিকা—(অসূয়া বশত কাতর হয়ে) কার জন্যে তার এই বিরহ?
শুকঃ—তব হি।
শুক—তোমার কারনে
বাসন্তিকা—মম কুতস্তাদৃশং ভাগধেয়ম্।। ২৯
বাসন্তিকা—আমার কি করে ঐরূপ সৌভাগ্য হতে পারে?
বিদূষকঃ—দেব বিদিতং বা বেদিতব্যম্।
বিদূষক—হে দেব এখন আপনার বিদিত হয়েছে যা আপনি জানতে চাইছিলেন?
দেবঃ—(সপ্রত্যয়কৌতুকম্)
পরিভ্রমসি কিং মনঃ প্রকৃতিরন্তরালম্ব্যতাং
প্রসীদফলদো বিধিঃ প্রমদমেতু পঞ্চেন্দ্রিয়ী।
মনোজবিধুমাধবাঃ মম সমানুরাগমিমাং
বিতেনুরনুতাপিনো বিরহবহ্ণিকুণ্ডে ময়ি।। ৩০
দেব—(
হে মন তবুও তুমি কেন চঞ্চল? তুমি আমার মধ্যে অবস্থান করো। বিধি তুষ্ট হয়ে অভীষ্ট ফল প্রদান করতে চলেছেন। পঞ্চেন্দ্রিয় গনের সাথে প্রমোদের আয়োজন করো। আমি বিরহাগ্নিকুন্ডে দগ্ধ হতে হতে বুঝতে পারছি, কামদেব, চন্দ্র, ও বসন্ত যারা প্রেমের দেবতা, তারা আমার প্রতি অনুরক্তা সেই কন্যাকে আমার নিকটে নিয়ে আসতে আগ্রহী।
ভ্রমরিকা—সখি অবিতথবাদিনী ভগবতী বিজ্ঞানবতী।
যৎ ইদানীং তস্যাঃ অস্যাপি ফণিতং একং ভবতি।
ভ্রমরিকা—সখী ভগবতী বিজ্ঞানবতী কোন মিথ্যা বলেননি। দেখো কিভাবে তার ভবিষ্যৎবাণী এই শুকের বচনের সাথে মিলে যাচ্ছে।
বাসন্তিকা—কতি নাম ভবন্তি ইদৃশস্য আশ্বাসন পরম্পরাঃ।
বাসন্তিকা— তুমি আমাকে এরূপ বহুতর আশ্বাস বাক্য বলতে পারো।
দেবঃ—(সকৌতুকম্)
ময়া খলু জিতং মকরকেতু রাজ্ঞা ধরো
মমাদ্য সফলং তপো মম পরিপ্রসন্নো বিধিঃ।
অপেক্ষিতদুরাসদা পুনরহো বিয়োগাকুলা
স্বয়ং মম সমাগমং সুবদনেয়মাকাঙ্ক্ষতে।। ৩১
দেব—(কৌতুকের সহিত)
আমি জয়ী হয়েছি। মকরকেতু কামদেব কে
আমার তপস্যা,ধৈর্য্যের পুরষ্কার মিলেছে। বিধি আমার ওপর প্রসন্ন হয়েছেন। এই সুবদনা কন্যা যিনি সকলের অপ্রাপ্যনীয়া,স্বপ্নে আমায় দর্শন করে বিরহ দুঃখে দুঃখিত হয়ে আছেন। ও আমার সাথে পুনরায় মিলিত হতে উৎসুক হয়ে রয়েছেন।
বিদূষকঃ—অস্য নিদানং অস্যাঃ সংকল্প বিপ্রলম্ভকস্ত্বম্। বিরহিজনামর্ষণো মদনোহপি।
বিদূষক— এর পশ্চাতে এক তো আপনি রয়েছেন যিনি এই কন্যার হৃদয়ে কামনা সঞ্চার করেছেন। আর অন্যজন কামদেব যিনি বিরহীজনের মন কে মথিত করেন।
দেবঃ—(নির্বর্ণ্য সকৌতুকম্)
তীক্ষ্ণপাতিভিরপাঙ্গসায়কৈঃ মর্মনির্মথন নর্মসাধিকা।
ধৈর্য্যবঞ্চনপরা মমাগ্রতো দৃশ্যতে হৃদয় পশ্যতোহরা।। ৩২
দেব—(কৌতুকের সহিত দর্শন করতে করতে) হে হৃদয়আমার সম্মুখবর্তী এই কন্যাকে আমি দেখছি যে তীক্ষ্ণ বান রূপ কটাক্ষপাতে দর্শককে অস্ত্রশূণ্য করাতে কৌশলী ও ধৈর্য্য কে বঞ্চনা করে হৃদয় জয় করে নেয়।
বিদূষকঃ—দেব মম ব্রাহ্মণস্য আশীর্বচনপ্রভাবেণ অবতরতি তব মনোরথঃ সিদ্ধিপদম্।
বিদূষক—হে দেব, মনে হয় আমার মতো ব্রাহ্মণের আশীর্বাদ প্রভাবে আপনার মনোভিলাষ সিদ্ধ হতে চলেছে।
দেবঃ—(সবিতর্কম্)
বীক্ষাসৈব মনোভবাস্ত্র নিগম ব্যাপাপ পারঙ্গতা
সুক্তিঃ সৈব সুধোর্মিকা বিহরণ স্বাতন্ত্রয়নিস্তন্ত্রিকা।
তন্বঙ্গ্যাঃ স্তনমণ্ডলৌ পৃথুতরৌ তাবেব যদ্যন্ময়া
দৃষ্টং তৎসকলং তদেব কিমহো দেহে নবঃ পাণ্ডিমা।। ৩৩
দেবঃ— (বিতর্কের সহিত) তার দৃষ্টি পূর্ববৎ কামদেবের অস্ত্রের মতো পারঙ্গদ। তার বাক্য পূর্ববৎ ধর্ম ও ন্যায় সঙ্গত আবার নর্মরস পূর্ণ। তার পৃথুল স্তনমন্ডল আমায় মোগিত করে। পূর্বে যেমন দেখেছি তার কিছুই পরিবর্তিত হয়নি কেবল তার মুখে এক পান্ডুরতা(বিবর্নতা) দেখা দিয়েছে।
বিদূষকঃ—অলং বিলম্বেন। উপসর্পতু ভবান্।
বিদূষক—আর দেরী করা উচিত নয়। চলুন দেব শীঘ্র সামনে চলুন।
দেবঃ—(তথেতি পাদমূলান্ নির্গত্য অন্বেষণং নাটয়ন্)
অহো কতি নাম লঙ্ঘিতানি কাননানি
(সর্বাঃ সংভ্রান্তাঃ নির্বর্ণয়ন্তি।)
দেব—(সম্মত হয়ে, বৃক্ষছায়া তল থেকে বেরিয়ে কিছু খুঁজতে লাগলেন)
আমরা মনেহয় অনেক গুলি বন পেরিয়ে এলাম।
(সকলে তার হঠাৎ উপস্থিতিতে বিস্মিত হয়ে গেলেন।)
চতুরিকা—সখী তব ফলগ্রাহী ভাগধেয়ম্।
যৎ ইদানীং বক্ষস্থলাভরণ কৌস্তুভমণি কমললোলুপচঞ্চরীক সদৃশ শ্রীবৎসলাঞ্ছনঃ কাঞ্চনবসন রোচিরিঞ্চোলিকা শবল নব জলধরানীল কলেবর কান্তিপূর এষ এব স মহাভাগঃ।
চতুরিকা—সখী, অবশ্যই তোমার সৌভাগ্যের ফলোদয় হয়েছে। আমাদের সামনে এই যে মহান পুরুষ যার বক্ষস্থল কৌস্তভমণি শোভিত ও কমল লোলুপ ভ্রমর সদৃশ শ্রীবৎস লাঞ্ছিত। অঙ্গ শোভা নবমেঘঘন নীল, পরিধানে স্বর্ন জড়িত পীতবাস। ইনি অবশ্যই ভগবান অহোবিলেশ।
ভ্রমরিকা—আম্ চতুরিকে আম্ যদেষা স্বপ্ন বিপ্রলম্ভকং দৃষ্ট্বা যথা কথিতবতী তথৈব অস্য বেষো দৃশ্যতে।
ভ্রমরিকা—ঠিক বলেছ চতুরিকে ঠিক। এই পুরুষের রূপ সৌন্দর্য্য ঠিক তার মতো বাসন্তিকা স্বপ্নে যার বর্ননা দিয়েছিল।
চতুরিকা—সখি তব হৃদয়বল্লভঃ শুকানুসরণ ব্যপদেশেন জিতশুকসারিকাং ত্বামেব অভিলষন্ পরাপততি। তস্মাৎ অভিগম্য তং সভাবয়।
চতুরিকা— সখি তোমার হৃদয়বল্লভ তার শুক কে অনুসরণ করে তোমার কাছে এসে পৌছেছে, তোমায় লাভ করার অভিলাষা নিয়ে। তুমি শুক ও সারিকা কে হারিয়েছ।
দেবঃ—সমুচিতমাহ চতুরিকা। সৈষা জিত শুকসারিকেতি। অসিতা কচে কুচাগ্রে হরিতা রদনেসিতাহধরে রক্তা। পীতা বপুষি মমাশয়পঞ্জরং অধিবসতি পঞ্চবর্ণশুকী।। ৩৪
দেব— এই চতুরিকা সমুচিত বলেছে। অবশ্যই এই কন্যা শুক সারিকা কে জয় করেছে। তার কেশ ঘন কৃষ্ণ বর্ন , কুচাগ্র হরিত বর্ন , দন্ত শুভ্র বর্ণ , ওষ্ঠ রক্তবর্ণ , কান্তি স্বর্ণাভ , এই পাঁচটি বর্নের শুক আমার হৃদয় পিঞ্জরে বাস করুক।
বাসন্তিকা—সখি চতুরিকে কিমেষ পরিহাসকৌশলং আচরিতুং অবসরঃ? অথবা ন খলু ত্বাং উপালভে। কিন্তু তং জনমেব যঃ স্বপ্নমারভ্য গতাগতৈঃ মাং বিপ্রলম্ভয়তি।
বাসন্তিকা—সখী চতুরিকে! এই কি হাস্য পরিহাসের সময়? আর তোমাকেই বা দোষ দিই কেন। দোষ তো সেই ব্যাক্তির যে আমার স্বপ্ন দর্শনের থেকে বারংবার আমার কাছে এসেও দূরে চলে গিয়ে বিরহ ব্যাথায় আমায় ব্যাথিত করছেন।
বিদূষকঃ—এষা খলু বহুধা বিপ্রলব্ধা নয়নপথাবতার্ণমপি ত্বাং ন বিশ্বসিতি যৎ ইদানীমপি ত্বাং তমিত্যেব নির্দিশতি।
বিদূষক—হে দেব! এখন আপনার উচিত তার কাছে আপনার পরিচয় জানানো। কিন্তু এই কন্যা মনে মনে আপনার কথা চিন্তা করতে করতে আকুল হয়ে রয়েছেন। সে বিশ্বাস করতে পারবেনা যা তার চক্ষুদ্বয় দেখছে।
দেবঃ—(সকাতর্যোৎকণ্ঠম্) হা হন্ত! কিং করণীয়ম্? আতঙ্কপঙ্কে নিমগ্ন ইব মে মনোরথঃ।
দেব—(উৎকণ্ঠিত ও কাতর হয়ে) হায়! এখন কি করি? আমার মন রূপী রথ এখন আতঙ্ক রূপ পঙ্কে আটকে গেছে এ থেকে এখন বেরিয়ে আসা কঠিন।
বিদূষকঃ—কিং করণীয়ং এব যেন কেনাপি প্রকারেণ।
বিদূষক— এখন কি করনীয়? কোনো প্রকারে কোনো না কোনো উপায় করতে হবে।
দেবঃ—(সোৎকণ্ঠমুপসৃত্য) বিষমশরবৈজয়ন্তি বাসন্তিকে কিংকরে ময়ি কৃতং অকৃতাধসাং আরোপণেন। কেলী নিকৃষ্টমরালিকে প্রকটিত পক্ষোল্লাসা মানসমেব মম আসীদতু ভবতী। পঞ্চশরকাঞ্চন পাঞ্চালী হৃদয়রঞ্জনায় প্রপঞ্চয় বিলাস সঞ্চরণম্। তরলতা রহিত তটিল্লতে তমালরূচিঘন অপঘনমলং কুরূ মে।
দেব—(উৎকণ্ঠার সাথে সামনে এগোলেন) বাসন্তিকে তুমি বিষমশর সন্ধানকারী কামদেবের বৈজয়ন্তী ধ্বজা। কেন তোমার সখীগন কে দোষ দিচ্ছ যা তারা করেনি। হে কেলীবিলাসপর রাজহংসিনী ফিরে এসে আমার মন রূপ সরোবর কে আশ্রয় করে পক্ষ সঞ্চারণে উল্লাস প্রকট করো। তুমি পঞ্চশর ধারী কামদেবের প্রিয় কাঞ্চন পুত্তলিকা তোমার রতি ক্রীড়ার সামগ্রী বিস্তার করে হৃদয় কে আনন্দিত করো। আমার তমালবৃক্ষ রূপ দেহ কে মেঘরূপ তুমি এসে আচ্ছাদন করো।
পাঞ্চালী= পুত্তলিকা (অমরকোশ)
বাসন্তিকা—(সহর্ষ স্বগতম্)
অবশ্যং অনেন পুনস্তেনৈব ভবিতব্যম্। সঃ স্বপ্নবিপ্রলম্ভকঃ কেবলং মম লোচনগোচরো আসীৎ।এষঃ খলু অনয়োঃ সখ্যোরপি/ সরব্যোরপি লোচনপদং অবতরতি।
বাসন্তিকা—(হর্ষিত হয়ে নিজ মনে বললেন) ইনি অবশ্যই দেব অহোবিলেশ, অন্য কেউ নন। যখন তিনি আমায় স্বপ্নে দর্শন দিয়েছিলেন তখন তাকে কেবল মাত্র আমি দর্শন করেছিলাম এখন আমার সখীরাও তাকে দর্শন করতে পারছে। তবে ইহা স্বপ্ন নয়।
(ইতি মন্দাক্ষকূণিতাক্ষা নিবৃত্য পরাপতিতুং ইচ্ছতি।)
(এই বলে তিনি এক ঝলকে তাকে দেখে তার প্রতি কটাক্ষপাত করে লজ্জায় পলায়ন করতে চাইলেন।)
ভ্রমরিকা—এষ তব বিপ্রলম্ভবচনং শ্রুতবান্ ইতি কিং নু সশঙ্কং নিবৃত্তম্।
(বাসন্তিকা সবিনোদং তির্যক্ আহিতকটাক্ষং ভ্রমরিকামবেক্ষতে।)
তিনি তোমার বিপ্রলম্ভ অবস্থায় বলা বাক্য শুনে ফেলেছেন এই আশঙ্কায় কি তুমি পালাচ্ছ?
(বাসন্তিকা শুনে খুশি হলেও ভ্রমরিকার প্রতি তির্যক কটাক্ষ পাত করলেন)
চতুরিকা—(সবিনোদম্)
অয়ে দেবতা প্রসাদমারভ্য তব হৃদয় বঞ্চন নিপুনং তং পরিহৃত্য আবয়োরুপরি কিমতেৎ কোপানুষঙ্গাৎ কুটিলাবলোকনম্।
চতুরিকা—(আনন্দের সাথে) অয়ে বাসন্তিকে! যখন থেকে তুমি দেবীর কাছে বর প্রাপ্ত হলে, তারপর থেকে এই পুরুষ টি তোমার হৃদয় মন কে বঞ্চনা করে চলেছেন আমাদের ওপর কেন ক্রোধ করে কুটিল কটাক্ষপাত করছো?
বিদূষকঃ—এষা তব মনোরথ সিদ্ধেঃ বেলা। যত্তে কর্তব্যং কৃতং ভবতু।
বিদূষক— হে দেব! আপনার মনোরথ সিদ্ধ হতে চলেছে, এখন যা কর্ত্তব্য করা উচিত তা করুন।
দেবঃ—(সানুরাগবন্ধং বাসন্তিকাহস্তমবলম্ব্য)
অনেনাপি কৃতার্থঃ স্যাৎ অসাবিতি কিমঞ্জসা।
পরসংপরিবৃত্তাসি সর্বাবয়বসুন্দরি।। ৩৫
অপিচ
মমেদৃশীমপি দশাং স্নেহার্দ্রাং কিমুপেক্ষসে।
চিত্রমেতৎ ন তে তন্বি চিত্রভূরত্নদীপিকে।। ৩৬
দেব—(গভীর অনুরাগের সহিত বাসন্তিকার হাত ধরে) হে সুন্দরী তোমার সর্বাঙ্গ সুন্দর। তুমি কি ভেবে নিলে এই কিছুক্ষন মাত্র আমাদের দর্শন হলেই তা আমাদের জন্য যথেষ্ট? তাই কি তুমি ফিরে যাচ্ছিলে? আর, আমার এই রূপ প্রেম বিগলিত অবস্থায় কি করে উপেক্ষা করতে পারো? হে কামদেবের হাতের রত্ন মন্ডিত দীপ তোমার এই আচরণ কি অতি অদ্ভূত নয়? # 141
ভ্রমরিকা—অয়ে প্রিয়বয়স্য এতস্যা অঙ্গজং লক্ষণং ভাবয়তু ভবান্।
ভ্রমরিকা— হে প্রিয় বন্ধু আপনি অবশ্যই এই কন্যার সৌন্দর্য্যের প্রশংসা করবেন।
দেবঃ—সাতিশয়সুষুমারতি স্বরূপায়াং অস্যাং কিং লক্ষণীয়ানি লক্ষণানি।
ভৃঙ্গারুচামরসরোরূহ তালবৃন্ত
মাল্যাসনাম্বুজ মনোহরপাণি পদ্মাঃ।
পার্শ্ব স্থিতাঃ যুবতয়ঃ পরশীলয়ন্তি
নক্তং দিবং নবনবান্ উপচার ভেদান্।। ৩৭
দেব— এই কন্যার সর্বাঙ্গের সৌন্দর্য্য লক্ষণ নির্দেশ করা আবশ্যক কি? যার অতুলনীয়া সৌন্দর্য্য কেবল রতি দেবীর সহিত ই তুলনীয়।
তুমি জানো যে শীঘ্রই সুন্দর কন্যা গন দ্বারা চামর ব্যাজনাদি, সেবা লাভ করবে। এই কন্যরা করকমলে লীলা কমল ধারন করে আছেন, কন্ঠে কমল মালা, তারা তাকে দিব্য সিংহাসনে বসিয়ে উভয় পার্শ্বে দাঁড়িয়ে দিবারাত্র বহুবিধ সেবায় পরিতৃপ্ত করবে। #142
শুকঃ—সংযক্ ইদং অধুনা শ্লেষগর্ভ আভ্যাং অভিহিতম্।
শুক—হে দেব আপনি যা বললেন তার গূঢ়ার্থ খুবই আনন্দদায়ক।
চতুরিকা—সখি কৈমুতিকন্যায়েন তব লক্ষণং ইরয়তঃ পারিতোষিকং নীবীদানং কুরূ।
চতুরিকা—হে সখী ইঙ্গিতে তোমার সৌন্দর্য্য কৈমুতিক ন্যায়ে বর্ননা কারী দেব অহোহিলেশ কে তোমার নীবিবন্ধন পারিতোষিক রূপে দাও না কেন?
ভ্রমরিকা—(সমন্দস্মিতম্)
এষা অবশ্যং কর্তুমেব সমুৎপন্ম করাঙ্গুলীধর্মোদকব্যপদেশেন দানসলিলং গৃহীতবতী।
ভ্রমরিকা—(মৃদু হাস্য সহকারে) তার স্বেদ পূর্ণ করাঙ্গুলীর দিকে দেখুন। হে দেব আপনার জন্য অর্ঘ্যবারি রূপ তা দান করছে।
(স্বেদাদি প্রেমের অষ্টসাত্ত্বিক বিকার, বাসন্তিকা এই প্রেমশোভা আপনাকে অর্ঘ্য রূপে অর্পণ করছে)
বাসন্তিকা—(স্বগতম্)
লজ্জা নির্জিতায়াঃ মম কুতঃ তাদৃশো বিভবঃ?
বাসন্তিকা—(স্বগত) আমার কি এত সৌভাগ্য হবে? আমি লজ্জা দ্বারা বিজিত হয়েছি।
দেবঃ—(সানুরাগং বাসন্তিকা মুখং উন্নময্য)
আলম্ব্যাধর পল্লবমাকাঙ্ক্ষে তন্বি তে দ্বিজোৎকর্ষম্।
উদ্বাহ্যোরূভরং চিরমনন্তু বিষাদ পরমপি লঘূকুর্বে।। ৩৮
মধ্যমালিঙ্গিতে তন্বি মনঃ সিংহাসনে স্থিতঃ।
উরোজাংশ্লেষণান্মেরোরূপরি স্থিতিমাদধে।। ৩৯
দেব—(গভীর অনুরাগে বাসন্তিকার চিবুক ধরে তুলে) হে সুন্দরী! তোমার কোমল অধর দ্বয় আকর্ষণ করে তা আস্বাদন করবো, তোমায় বিবাহ করে তোমার দুশ্চিন্তা লঘু করবো। আমার মন তোমায় আলিঙ্গন করে সিংহাসনে বসে তোমার স্পর্শ সুখ অনুভব করে সুমেরু পর্বতোপরি স্থিত হয়েছে।
চতুরিকা—ত্বং কিং ন জানাসি অপ্রতিষিদ্ধং অনুমতমেবেতি।
চতুরিকা—হে দেব জানেন কি, যাতে বাধা দেওয়া হয়না তা স্বীকার করে নেওয়া হয়।
(নেপথ্যে)
অদ্যাপি বৎসা বাসন্তিকা নাগতেতি স্নেহশালিনী পরিতপতি ভর্তৃদারিকা। অহো কৈতবমাচরতা শুকেন কিয়ৎ দূরং আনীতা।
নেপথ্যে,
ওঃ বাসন্তিকার স্নেহশালিনী মাতা স্নেহবশত মাতা অনুতাপ করছে যে তার কন্যা আজও সময়ে ফিরে আসেনি, এই শুক কপট আচরণ করে তাকে কতো দূরে নিয়ে গেছে।
শুকঃ—(স্বগতম্) হন্ত মহান্ প্রসাদঃ। অনয়া মম কৈতবং জ্ঞাতম্! তস্মাৎ ইহ স্থাতুং অনুচিতম্।
(ইতি মায়াবলেন নিরোহিতো ভবতি।)
শুক—(স্বগত) হায়! কি মহান কৃপা। এই কন্যা আমার কপটতা জেনে গেছে। এখানে আর থাকা অনুচিত।
(এই বলে মায়াবলে শুক অন্তর্হিত হলো)
ভ্রমরিকা—আসন্না খলু ভর্তৃদারিকায়াঃ পারিচারিকা। তস্মাৎ অনুমন্যস্ব অস্যাঃ গমনায়।
ভ্রমরিকা— হে দেব! রাজকন্যার এর পরিচারিকা এসে উপস্থিত হয়েছেন। তাই রাজকন্যা কে যাওয়ার অনুমতি দিন।
ভতৃদারিকা= নাট্যোক্তৌ রাজসুতা ইতি অমরকোষ
দেবঃ—কর্তব্যং কিং বিলম্বেন?
দেব—যা করতে হবে তাতে আর বিলম্ব কেন?
সখ্যৌ—স্মর্তব্যবহুলে ইয়মপি যুষমাভিঃ স্মর্তব্যা।
(ইতি নিষ্ক্রান্তাঃ)
বাসন্তিকা পদান্তরে ত্রিকমর্ধ নিবর্ত্য বিলোকয়ন্তী কথংচিৎ চক্ষুরাকৃষ্য গচ্ছতি।
সখীগন— হে দেব আপনাকে বহু কিছু স্মরণে রাখতে হয়। আমাদের ও স্মরণে রাখতে ভুলবেননা।
(তারা সকলে চলে গেলেন। বাসন্তিকা ও তিন পা এগিয়ে এলেন। আবার পিছনে ফিরে দেখলেন তারপর পুনরায় চক্ষু ফিরিয়ে নিয়ে চলতে লাগলেন।)
দেবঃ—(সোৎকণ্ঠম্)
তির্যঙ নিবর্তিত গলং দৃশি মে দৃশৌ স্বৌ সন্ধায় ধৈর্যমপকৃষ্য পুরঃ প্রয়াতা।
দেব—(উৎকণ্ঠার সহিত) সে তার গ্রীবা বক্র করে আমার দিকে দেখলো ও আমার সমস্ত ধৈর্য্য হরণ করে রাজপুরের দিকে চলে গেল।
বিদূষকঃ—যুষ্মাভিঃ প্রথমরসস্য সংকীর্তন মাত্রেণ ময়া দ্বিতীয়রসোহপি স্মর্যতে।
বিদূষক— হে দেব আপনার আবেগপূর্ণ উক্তি প্রথমরস (শৃঙ্গার রস) এর কথা বললেও আমার মনে দ্বিতীয় রস(হাস্য রস) এর কথা মনে পড়ছে।
দেবঃ—কিং তৎ?
দেব—তা কি করে?
বিদূষকঃ—সংস্কৃতৎমাশ্রিত্য
প্রত্যস্ত্রমোধয়িতৃ লক্ষবিবোধমুক্ত
মুক্তায়ুধামদনমূলবলোত্তমেন।। ৪০
বিদূষক— কামদেব তার সমস্ত অস্ত্র প্রয়োগ করেও আপনাকে জিততে ব্যার্থ হয়েছে। কিন্তু এই কন্যার সহায়তায় আপনাকে জিততে সমর্থ হয়েছে। #
বিদূষকঃ—দেব, সত্যং আলপিতং ষুষ্মাভিঃ। যৎ ইদানীং অভিনবাবতীর্ণ মধুমাসবাসরতয়া দোহলধূপাদি মায়াসমন্তরেণ কন্দলিত বিবিধপল্লব কুসুম ফলসমগ্রা ভবন্তি পাদপাঃ।
বিদূষক—হে দেব আপনি যথার্থ ই বলেছেন। যেহেতু আপনি সদ্য অবতীর্ণ মধুমাসে(বসন্তঋতুর প্রথম মাসে) এসেছেন। তাই এখানে বৃক্ষগুলি নবীন বিবিধ পল্লবে শোভিত, নানান সুগন্ধী পুষ্প ও বিচিত্র ফলে ভরা। এবং বৃক্ষগুলিকে করার জন্য দোহল ও ধূপাদি উৎসবের আবশ্যকতা নেই।
দেবঃ—(পরিতঃ পশ্যন্ সানুস্মরণাভ্যসূয়ম্)
তন্বী শ্লিষ্যতি দোহলে কুরবকং তৎপুণ্যশীলো হ্যয়ং
গায়ত্বেব শনৈঃ প্রিয়ালুনিকটে সায়ং সুজন্মা ন কিম্।
ধত্তে দৃষ্টিবিনোদনানি তিলকে ধন্যোহথ মেবাহধুনা
মাকন্দং মৃদুপাণিনা স্পৃশতি চেৎ মান্যোদয়োহয়ং ন বা।। ২৩
দেব—(আশেপাশে দৃষ্টিপাত করে ও
অহো এই কুরবক পুষ্পের বৃক্ষের কি সৌভাগ্য সেই তন্বী কন্যার দ্বারা এর দোহাল উৎসব(বট সাবিত্রী ব্রত) হয়।
এই প্রিয়ালু বৃক্ষ ও কি পূণ্যশীলা যে তার সঙ্গীতে পুষ্পিত হয়। তার দৃষ্টিপাতে এই তিলক বৃক্ষ ধন্য।
এই মাকন্দ বৃক্ষের কি সৌভাগ্য যে তার মৃদু হস্ত স্পর্শ লাভ করে।
বিদূষকঃ —অহো অচেতনানামপি অনোহানাং উপরিং অসূয়াবেশো দেবস্য।
বিদূষকঃ—(স্বগত) হায় দেব এই অচেতন বৃক্ষের প্রতিও ঈর্ষান্বিত হচ্ছেন।
দেবঃ—(পুনর্বিমৃশ্য)
পশ্যামি তামিহ দদর্শ বন শ্রিয়ং যাং
শুশ্রাব যৎ পিকরূতং তদহং শৃণোমি।
ছায়াদ্রুমং যমভজৎ প্রমদা ভজেতং
প্রায়স্তয়ৈষ সুতরাং উপ ভোগ ভেদঃ।। ২৪
দেব—(পুনরায় সেই দৃশ্য দেখে) আমিও অরণ্যের সেই সৌন্দর্য্য দেখছি। যা সেও উপভোগ করে। আমি যে কোকিলের কুহুরব শুনছি তা সেও শ্রবণ করে থাকে। হয়ত আমি এই যে বৃক্ষতলে বিশ্রাম করছি সেও হয়ত এই বৃক্ষতলে বিশ্রাম করে থাকে। কিন্তু আমরা পৃথক পৃথক ভাবে একাকী তা উপভোগ করছি। # 124
বিদূষকঃ —দেব অস্যাঃ ক্ষণমাত্রেণৈব স্বাভাবিকং উপভোগ সৌখ্যং অনুভবিষ্যসি।
বিদূষক—হে দেব আর কিছুক্ষণ পরেই আপনি তার সঙ্গে এই অরণ্যে বিহার করতে পারবেন।
দেবঃ—
অনবদ্য গুণনিবন্ধাং আবাহিতমদনমূলমন্ত্রকলাম্।
আনন্দমূলিকামহমধূনা পশ্যামি কিং ন হৃষ্যামি।। ২৫
দেব—আমি কি সত্যই তাকে দর্শন করতে চলেছি? যিনি অনবদ্য গুনের আশ্রয়। যিনি তার চরিত্রে আচার আচরণে ব্যাক্তিত্বে মদন মূল মন্ত্র কলা কে আবাহন করেছেন। যাকে আমি আনন্দ দায়ী জড়িবুটী মনে করি। আমি কি সত্যই এই আনন্দ লাভ করতে পারবো।
(নেপথ্যে)
অলমলং সখ্যৌ মুখরত্বেন।
নেপথ্যে
সখী তোমরা কি হাস্য পরিহাস বন্ধ করবেনা?
দেবঃ—(আকর্ণ্য সকৌতুকম্) কোহয়মুত্তরেণ মালতীমন্ডপং আলাপঃ?
দেব— (তা শুনে কৌতুকের সহিত) উত্তরদিকের মালতী মন্ডপ থেকে কাদের বার্তালাপ শুনছি?
(পুনর্বিভাব্য) অথবা, কৌমুদী মন্তরেণ কুতঃ প্রসাদসৌলভ্যং? যতঃ তস্যা এবেদং আলপিতং তৎ আবাং অস্যাঃ সহ সখীভ্যাং বিস্রম্ভ কথিতং অন্তরিতাবেব শ্রীষ্যাবঃ।
(পুনরায় দেখে) চন্দ্রমা ভিন্ন অন্য কি থেকে জ্যোৎস্না বিকিরিত হয়ে কুমুদ কে বিকশিত করতে পারে? তেমন সেই কন্যার বাক্যরূপ প্রসাদ ভিন্ন অন্য আর কি আমার চিত্ত কে বিচলিত করতে পারে? আসো আমরা কোথাও লুকিয়ে থেকে শুনি সে তার সখীদের সাথে কি বার্তালাপ করে।
(ইত্যুভৌ তথা কুরূতঃ।)
(এই বলে তারা গোপনে তাদের বার্তালাপ শ্রবণ করতে লাগলেন।)
ততঃ প্রবিশতি সহ সখীভ্যাং শুকমনুসরন্তী বাসন্তিকা।
শুক কে অনুসরণ করে সখীগন সহ বাসন্তিকার প্রবেশ।
বাসন্তিকা— সখ্যৌ যুবাভ্যাম্ মুখরত্বেন অপসার্যতে এষ শুকঃ।
বাসন্তিকা— হে সখী তোমাদের কলরবে এই শুক বিচলিত হয়ে গেছে। (তোমরা এত কোলাহল করা বন্ধ করো নয়ত সে উড়ে পালিয়ে যাবে।)
চতুরিকা—অত্র শুকপলায়নং অস্মাসু কথং আরোপয়সি? তব নূপুরশব্দ এব অপরাধ্যতি।
চতুরিকা—হে সখী এই শুকের পলায়নের কারনে আমাদের কেন অপরাধী করো। তোমার নূপূর ধ্বনীই অপরাধী। (প্রিয় দর্শনাকাঙ্খায় উৎকন্ঠিত হওয়ায় দৌড়াতে থাকায় তোমার চরণ এ নূপূর চঞ্চল হয়ে পড়েছে)
দেবঃ—(সানুস্মরণকৌতুকম্) অয়মগ্রতঃ শুকবেষধারী মায়াময়ঃ, অস্য তাবৎ অনর্ঘতর রমণীয়ানি অঙ্গানি।
বিদ্রুংকণ্ঠং চঞ্চুঃ নীলোপল শকলমক্ষিপক্ষ্মযুগম্।
অরূণ মণি ময়মঙ্গং মরকতমংঘ্রিযুগমস্য গাঙ্গেয়ম্।। ২৬
দেব—(কৌতুকের সহিত স্মরণ করে) হ্যাঁ এ আমাদের মায়াময়। যে অপূর্ব শুকের রূপ ধারণ করেছে। এই শুকের সকল অঙ্গ অত্যন্ত রমণীয়।
তার চঞ্চু দ্বয় প্রবাল কন্ঠ সদৃশ। তার চক্ষুপল্লব নীল কমল দল সদৃশ। তার মরকত মণি সদৃশ অঙ্গ অরূণ বর্ন মণি ময়, ও পদদ্বয় সুবর্ণ মন্ডিত।
ভ্রমরিকা—সখি স্বপ্ন বিপ্রলব্ধঃ অয়ময়ং গৃহীতঃ গৃহীতঃ ইতি ইদানীমপি বিপ্রলব্ধা অনেন দূরমানীতা।
ভ্রমরিকা—সখি স্বপ্নে একজনকে দেখে তুমি মনে করেছিলে তাকে তুমি ধরে ফেলে ফেলেছ। এখন এই শুকের পিছনে এতদূর দৌড়ে এসে মিথ্যাই কল্পনা করছো তাকে তুমি লাভ করবে।
বিপ্রলব্ধা= সঙ্কেত নিকেতনে প্রিয়মনোবলোক্য সমাকুলহৃদয়া।
বিদূষকঃ—দেব ত্রিভূবনবঞ্চকস্ত্বং অসয়াঃ স্বপ্নবিপ্রলম্ভকঃ আসীঃ।
বিদূষক—হে দেব তোমার মায়া য় তুমি ত্রিভূবন কে মোহিত করো। এই অবলা বিপ্রলম্ভা কন্যা কে কেন স্বপ্নে দর্শন দিয়ে বঞ্চিত করো।
দেবঃ—অলং অন্যথারোপেণ।
দেব— যথেষ্ঠ হয়েছে এবার আমার ওপর দোষারোপ করা বন্ধ করো।
বাসন্তিকা—ইলা সখ্যৌ তরূমূলনানন্তরিতয়া ময়া আসন্ন এষ স্পৃষ্টপক্ষাঞ্চলোহপি উড্ডয়ন লাঘবেন মাং বঞ্চয়তি।
বাসন্তিকা—হে সখী, এই শুকের পিছনে ছুটতে ছুটতে এই বৃক্ষতলে এসে মনে হল প্রায় এর পক্ষাঞ্চল ধরে ফেলেছি। কিন্তু কৌশলে সে আমায় বঞ্চনা করে পালিয়েছে।
দেবঃ—অয়মিদানীং প্রকৃতবেষোচিত বিভ্রমাভিনয়েন বলবদেনাং প্রলোভয়তি।
চঞ্চ্বা সমুল্লিখতি পক্ষপুতম্ ধুনোতি
বিস্তারয়ত্যপি বিকস্বররোমহর্ষম্।
আস্ফালয়ত্যপি মহীতলমীষৎ ঈষৎ
উড্ডীয় সঞ্চরতি লভ্যমিবৈষ পাণেঃ।। ২৭
দেব— নিজ বেশোচিত অভিনয় করে মায়াময় এই কন্যাকে নিজের পিছনে ধাওয়া করিয়ে বলপূর্বক অন্তঃপুর থেকে বাইরে নিয়ে এসছে।
তার চঞ্চু দ্বারা আঘাত করে, ডানা ঝটপটিয়ে সারা শরীরে রোমাঞ্চ প্রকট করে যেন ভীত হয়েছে। মাঝে মাঝে মাটিতে পড়ে যাওয়ার ছল করে আবার উড়ে গিয়ে, নীচ দিয়ে উড়ছে যাতে সে ধরতে পারে।
শুকঃ—(বালা শোকস্কন্ধমারূহ্য পরিতঃ পশ্যন্ অনতিদূরে দেবং নির্বর্ণ্য স্বগতম্)
আঃ কথমিবাগতং দেবেন। বলবৎ আয়াসিতা চেয়ং ষ্বামিনো হৃদয়বল্লভা। তদমুষ্যা বিস্ময়কৃতে আলোচনাস্পদমিদং পদ্যং গায়ামি।
শুক—(কন্যা কে শোক গ্রস্থ দেখে এদিকে দেব অহোবিলেশ ও নিকটে উপস্থিত মনে মনে বললেন)
আঃ দেব ও এখানে উপস্থিত হয়েছেন। তার প্রিয়া ও আমার পিছনে দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত হয়ে শেষে ব্যার্থ মনোরথ হয়ে পড়েছে। আমি তাই তাকে বিস্ময়ান্নিত করে এই বিচার বিবেচনা যোগ্য সঙ্গীত করি।
ভ্রমরিকা—(সবিস্ময়ৌৎসুক্যম্)
সখী স্বয়ং গাতুং ইব কমপি রাগবন্ধং আলাপয়ত্যেষ শুকঃ।
ভ্রমরিকা—(বিস্ময়ান্বিত ও উৎসুক হয়ে) দেখ দেখ সখী এই শুক যেন কোন রাগে আলাপ করতে যাচ্ছে।
শুকঃ—প্রকটিত হিরণ্যদানঃ প্রাপ্তপ্রহ্লাদ সংভ্রমোদারঃ।
পূরয়তু বাঞ্ছিতং তে পুরূষকঙ্ঠীরবো বিভুঃ কোহপি।। ২৮
শুক— যে পুরুষ নরের মধ্যে সিংহ সদৃশ। যিনি হিরণ্য বা সুবর্ণ দানে প্রসিদ্ধ। যার উদারতা প্রকৃষ্ট রূপে আহ্লাদ বা আনন্দ দায়ক তিনি তোমার ইচ্ছা পূরণ করুন। গূঢ়ার্থে
যে পুরুষোত্তম ভগবান নরসিংহ রূপী, যিনি দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপু কে ধ্বংস করেছিলেন বলে প্রসিদ্ধ। শরণাগত প্রহ্লাদ মহারাজের প্রতি যার ঔদার্য্য সর্বজনবিদিত। তিনি তোমার অভীষ্ট পূরণ করুন।
দেবঃ—(স্বগতম্) উভয়ার্থানুবন্ধি সন্দর্ভমুপক্রান্তং অস্যাঃ ভাবমবগন্তুম্।
দেব—(স্বগতম্) এই শব্দানুবন্ধ দ্ব্যার্থবোধক। এর দ্বারা তার হৃদয়াভিলাষ বুঝতে পারার এই সুযোগ।
বাসন্তিকা—(স্বগতম্) কেবলমুক্তানুবদনমেতেষাম্ জাতিধর্মঃ। অহো কিং এতৎ এতস্য শ্রুতিলয় স্বরবিশেষোপেতং সঙ্গীতম্।)
বাসন্তিকা—(স্বগত) সাধারনত শুক যা শোনে তাই বলতে পারে। কি করে এই শুক সুর লয় যোগে সঙ্গীত করতে পারল।
চতুরিকা—সখী সঙ্গীত লাক্ষণিকে তব বল্লভনির্দেশ পদার্থমুক্ত্বা কথমিদানীম্ সঙ্গীত শ্লাঘনম্।
চতুরিকা—সখী কিন্তু তুমি কি এই শুক বচনে দেব অহোবিলেশের নির্দেশ বুঝতে পারছোনা। কেন তুমি সঙ্গীতের উৎকর্ষতা নিয়ে বিচার করছো?
বিদূষকঃ—অপি কথং মম বচন বিশ্বাসিনস্তব চতুরিকাবচনেন সংশয়ঃ পরিচ্ছিন্নঃ।
বিদূষক—হে দেব আপনি তো আমার কথায় সংশয় প্রকাশ করছিলেন, এখন কি চতুরিকার কথায় আপনার সংশয় শাতন হয়েছে?
দেবঃ—ই পরমপি অস্তি কিঞ্চিৎ বেদিতব্যম্?
দেব—এরপর আর কি কিছু অবিদিত থাকতে পারে?
বাসন্তিকা—সখি চতুরিকে তব অব্যুৎপন্নত্বং ময়ি কথং আরোপয়সি? যদেষ শব্দশ্লেষেণ কেবলং অহোবিলেশ্বরং গম্যোপমাণং কৃত্বা কস্যাপি নিজপ্রভোঃ মাহাত্ম্যং উদ্ধাটয়তি।
বাসন্তিকা— সখী চতুরিকে তোমার অজ্ঞতা কেন আমার ওপর আরোপ করছো? এই শুক দ্ব্যর্থবোধক শব্দ প্রয়োগ দ্বারা সঙ্গীত রচনা করে অহোবিলেশ্বরের উপমা দ্বারা নিজ প্রভূর মহানতা প্রকাশ করছে।
শুকঃ—(স্বগতম্) অহো এতস্যাঃ সকৃন্দ্রাহিতা। যদনয়া কবি হৃদয়ং যাবদবধার্য পর্যয়েণ সংক্ষিপ্য সংশিতঃ শব্দার্থঃ। তস্যামদাগমনং নিবেদয়ামি। (প্রকাশম্) ভদ্রে স্বস্ত্যস্তু।
শুক(স্বগত)—অহো এই কন্যা কবির হৃদয়ের অন্তস্থঃ বার্তা যথার্থ রূপে অনুভব করতে পারছেন। ও শব্দ সকলের গূঢ়ার্থ বুঝতে পারছেন। তাকে আমার অভিবাদন জানাই।
(প্রকাশ্যে) ভদ্রে তোমার কল্যীণ হোক।
বাসন্তিকা—(স্বগতম্) অস্য খলু উত্তরপ্রত্যুত্তরেঃ পদ্য পূরণার্থ এষা পীঠিকা আত্মনৈব অস্য সমাগমনিদানং অবগচ্ছামি।
বাসন্তিকা—(স্বগতম্) মনে হয় এইকথা তার কৃত পদ্যের অন্তর্নিহিত বার্তা প্রকাশ করার জন্য উত্তর প্রত্যুত্তর আরম্ভ করার ভূমিকা মাত্র। তবে আমিই বার্তালাপ শুরু করি।
(প্রকাশম্) কো বা ত্বম্?
(প্রকাশ্যে) তুমি কে?
শুকঃ—অয়ি সুভগেহহোবিলেন্দোঃ শুকোহহম্
শুক—হে সুভগে! আমি অহোবিলচন্দ্রের শুক।
বাসন্তিকা—(সবহুমানম্) কিং আগতোহত্র?
বাসন্তিকা—(সম্মান প্রদর্শন করে) আপনি কিজন্য এখানে এসেছেন?
শুকঃ—নিত্যং তব নব বনারাম বাটীষু বস্তুম্।
শুক—আমি তোমার নব উদ্যান বাটীকায় বাসের জন্য এসেছি।
বাসন্তিকা—কিং জাতং তত্র?
বাসন্তিকা—কেন তুমি সেখানে বাস করতে চাও।
শুকঃ—দেবো ন গণয়তি মাং পূর্ববৎ
শুক—দেব অহোবিলেশ এখন আমাকে পূর্ববৎ আদর করেননা।
বাসন্তিকা—তৎ কিমর্থম্?
বাসন্তিকা—তা কি কারনে?
শুকঃ—বিশ্লেষাৎ
শুক—তার বিরহজনিত দুঃখের কারনে।
বাসন্তিকা—(সকাৎর্যাভ্যসূয়ম্) সোহপি কস্যাঃ?
বাসন্তিকা—(অসূয়া বশত কাতর হয়ে) কার জন্যে তার এই বিরহ?
শুকঃ—তব হি।
শুক—তোমার কারনে
বাসন্তিকা—মম কুতস্তাদৃশং ভাগধেয়ম্।। ২৯
বাসন্তিকা—আমার কি করে ঐরূপ সৌভাগ্য হতে পারে?
বিদূষকঃ—দেব বিদিতং বা বেদিতব্যম্।
বিদূষক—হে দেব এখন আপনার বিদিত হয়েছে যা আপনি জানতে চাইছিলেন?
দেবঃ—(সপ্রত্যয়কৌতুকম্)
পরিভ্রমসি কিং মনঃ প্রকৃতিরন্তরালম্ব্যতাং
প্রসীদফলদো বিধিঃ প্রমদমেতু পঞ্চেন্দ্রিয়ী।
মনোজবিধুমাধবাঃ মম সমানুরাগমিমাং
বিতেনুরনুতাপিনো বিরহবহ্ণিকুণ্ডে ময়ি।। ৩০
দেব—(
হে মন তবুও তুমি কেন চঞ্চল? তুমি আমার মধ্যে অবস্থান করো। বিধি তুষ্ট হয়ে অভীষ্ট ফল প্রদান করতে চলেছেন। পঞ্চেন্দ্রিয় গনের সাথে প্রমোদের আয়োজন করো। আমি বিরহাগ্নিকুন্ডে দগ্ধ হতে হতে বুঝতে পারছি, কামদেব, চন্দ্র, ও বসন্ত যারা প্রেমের দেবতা, তারা আমার প্রতি অনুরক্তা সেই কন্যাকে আমার নিকটে নিয়ে আসতে আগ্রহী।
ভ্রমরিকা—সখি অবিতথবাদিনী ভগবতী বিজ্ঞানবতী।
যৎ ইদানীং তস্যাঃ অস্যাপি ফণিতং একং ভবতি।
ভ্রমরিকা—সখী ভগবতী বিজ্ঞানবতী কোন মিথ্যা বলেননি। দেখো কিভাবে তার ভবিষ্যৎবাণী এই শুকের বচনের সাথে মিলে যাচ্ছে।
বাসন্তিকা—কতি নাম ভবন্তি ইদৃশস্য আশ্বাসন পরম্পরাঃ।
বাসন্তিকা— তুমি আমাকে এরূপ বহুতর আশ্বাস বাক্য বলতে পারো।
দেবঃ—(সকৌতুকম্)
ময়া খলু জিতং মকরকেতু রাজ্ঞা ধরো
মমাদ্য সফলং তপো মম পরিপ্রসন্নো বিধিঃ।
অপেক্ষিতদুরাসদা পুনরহো বিয়োগাকুলা
স্বয়ং মম সমাগমং সুবদনেয়মাকাঙ্ক্ষতে।। ৩১
দেব—(কৌতুকের সহিত)
আমি জয়ী হয়েছি। মকরকেতু কামদেব কে
আমার তপস্যা,ধৈর্য্যের পুরষ্কার মিলেছে। বিধি আমার ওপর প্রসন্ন হয়েছেন। এই সুবদনা কন্যা যিনি সকলের অপ্রাপ্যনীয়া,স্বপ্নে আমায় দর্শন করে বিরহ দুঃখে দুঃখিত হয়ে আছেন। ও আমার সাথে পুনরায় মিলিত হতে উৎসুক হয়ে রয়েছেন।
বিদূষকঃ—অস্য নিদানং অস্যাঃ সংকল্প বিপ্রলম্ভকস্ত্বম্। বিরহিজনামর্ষণো মদনোহপি।
বিদূষক— এর পশ্চাতে এক তো আপনি রয়েছেন যিনি এই কন্যার হৃদয়ে কামনা সঞ্চার করেছেন। আর অন্যজন কামদেব যিনি বিরহীজনের মন কে মথিত করেন।
দেবঃ—(নির্বর্ণ্য সকৌতুকম্)
তীক্ষ্ণপাতিভিরপাঙ্গসায়কৈঃ মর্মনির্মথন নর্মসাধিকা।
ধৈর্য্যবঞ্চনপরা মমাগ্রতো দৃশ্যতে হৃদয় পশ্যতোহরা।। ৩২
দেব—(কৌতুকের সহিত দর্শন করতে করতে) হে হৃদয়আমার সম্মুখবর্তী এই কন্যাকে আমি দেখছি যে তীক্ষ্ণ বান রূপ কটাক্ষপাতে দর্শককে অস্ত্রশূণ্য করাতে কৌশলী ও ধৈর্য্য কে বঞ্চনা করে হৃদয় জয় করে নেয়।
বিদূষকঃ—দেব মম ব্রাহ্মণস্য আশীর্বচনপ্রভাবেণ অবতরতি তব মনোরথঃ সিদ্ধিপদম্।
বিদূষক—হে দেব, মনে হয় আমার মতো ব্রাহ্মণের আশীর্বাদ প্রভাবে আপনার মনোভিলাষ সিদ্ধ হতে চলেছে।
দেবঃ—(সবিতর্কম্)
বীক্ষাসৈব মনোভবাস্ত্র নিগম ব্যাপাপ পারঙ্গতা
সুক্তিঃ সৈব সুধোর্মিকা বিহরণ স্বাতন্ত্রয়নিস্তন্ত্রিকা।
তন্বঙ্গ্যাঃ স্তনমণ্ডলৌ পৃথুতরৌ তাবেব যদ্যন্ময়া
দৃষ্টং তৎসকলং তদেব কিমহো দেহে নবঃ পাণ্ডিমা।। ৩৩
দেবঃ— (বিতর্কের সহিত) তার দৃষ্টি পূর্ববৎ কামদেবের অস্ত্রের মতো পারঙ্গদ। তার বাক্য পূর্ববৎ ধর্ম ও ন্যায় সঙ্গত আবার নর্মরস পূর্ণ। তার পৃথুল স্তনমন্ডল আমায় মোগিত করে। পূর্বে যেমন দেখেছি তার কিছুই পরিবর্তিত হয়নি কেবল তার মুখে এক পান্ডুরতা(বিবর্নতা) দেখা দিয়েছে।
বিদূষকঃ—অলং বিলম্বেন। উপসর্পতু ভবান্।
বিদূষক—আর দেরী করা উচিত নয়। চলুন দেব শীঘ্র সামনে চলুন।
দেবঃ—(তথেতি পাদমূলান্ নির্গত্য অন্বেষণং নাটয়ন্)
অহো কতি নাম লঙ্ঘিতানি কাননানি
(সর্বাঃ সংভ্রান্তাঃ নির্বর্ণয়ন্তি।)
দেব—(সম্মত হয়ে, বৃক্ষছায়া তল থেকে বেরিয়ে কিছু খুঁজতে লাগলেন)
আমরা মনেহয় অনেক গুলি বন পেরিয়ে এলাম।
(সকলে তার হঠাৎ উপস্থিতিতে বিস্মিত হয়ে গেলেন।)
চতুরিকা—সখী তব ফলগ্রাহী ভাগধেয়ম্।
যৎ ইদানীং বক্ষস্থলাভরণ কৌস্তুভমণি কমললোলুপচঞ্চরীক সদৃশ শ্রীবৎসলাঞ্ছনঃ কাঞ্চনবসন রোচিরিঞ্চোলিকা শবল নব জলধরানীল কলেবর কান্তিপূর এষ এব স মহাভাগঃ।
চতুরিকা—সখী, অবশ্যই তোমার সৌভাগ্যের ফলোদয় হয়েছে। আমাদের সামনে এই যে মহান পুরুষ যার বক্ষস্থল কৌস্তভমণি শোভিত ও কমল লোলুপ ভ্রমর সদৃশ শ্রীবৎস লাঞ্ছিত। অঙ্গ শোভা নবমেঘঘন নীল, পরিধানে স্বর্ন জড়িত পীতবাস। ইনি অবশ্যই ভগবান অহোবিলেশ।
ভ্রমরিকা—আম্ চতুরিকে আম্ যদেষা স্বপ্ন বিপ্রলম্ভকং দৃষ্ট্বা যথা কথিতবতী তথৈব অস্য বেষো দৃশ্যতে।
ভ্রমরিকা—ঠিক বলেছ চতুরিকে ঠিক। এই পুরুষের রূপ সৌন্দর্য্য ঠিক তার মতো বাসন্তিকা স্বপ্নে যার বর্ননা দিয়েছিল।
চতুরিকা—সখি তব হৃদয়বল্লভঃ শুকানুসরণ ব্যপদেশেন জিতশুকসারিকাং ত্বামেব অভিলষন্ পরাপততি। তস্মাৎ অভিগম্য তং সভাবয়।
চতুরিকা— সখি তোমার হৃদয়বল্লভ তার শুক কে অনুসরণ করে তোমার কাছে এসে পৌছেছে, তোমায় লাভ করার অভিলাষা নিয়ে। তুমি শুক ও সারিকা কে হারিয়েছ।
দেবঃ—সমুচিতমাহ চতুরিকা। সৈষা জিত শুকসারিকেতি। অসিতা কচে কুচাগ্রে হরিতা রদনেসিতাহধরে রক্তা। পীতা বপুষি মমাশয়পঞ্জরং অধিবসতি পঞ্চবর্ণশুকী।। ৩৪
দেব— এই চতুরিকা সমুচিত বলেছে। অবশ্যই এই কন্যা শুক সারিকা কে জয় করেছে। তার কেশ ঘন কৃষ্ণ বর্ন , কুচাগ্র হরিত বর্ন , দন্ত শুভ্র বর্ণ , ওষ্ঠ রক্তবর্ণ , কান্তি স্বর্ণাভ , এই পাঁচটি বর্নের শুক আমার হৃদয় পিঞ্জরে বাস করুক।
বাসন্তিকা—সখি চতুরিকে কিমেষ পরিহাসকৌশলং আচরিতুং অবসরঃ? অথবা ন খলু ত্বাং উপালভে। কিন্তু তং জনমেব যঃ স্বপ্নমারভ্য গতাগতৈঃ মাং বিপ্রলম্ভয়তি।
বাসন্তিকা—সখী চতুরিকে! এই কি হাস্য পরিহাসের সময়? আর তোমাকেই বা দোষ দিই কেন। দোষ তো সেই ব্যাক্তির যে আমার স্বপ্ন দর্শনের থেকে বারংবার আমার কাছে এসেও দূরে চলে গিয়ে বিরহ ব্যাথায় আমায় ব্যাথিত করছেন।
বিদূষকঃ—এষা খলু বহুধা বিপ্রলব্ধা নয়নপথাবতার্ণমপি ত্বাং ন বিশ্বসিতি যৎ ইদানীমপি ত্বাং তমিত্যেব নির্দিশতি।
বিদূষক—হে দেব! এখন আপনার উচিত তার কাছে আপনার পরিচয় জানানো। কিন্তু এই কন্যা মনে মনে আপনার কথা চিন্তা করতে করতে আকুল হয়ে রয়েছেন। সে বিশ্বাস করতে পারবেনা যা তার চক্ষুদ্বয় দেখছে।
দেবঃ—(সকাতর্যোৎকণ্ঠম্) হা হন্ত! কিং করণীয়ম্? আতঙ্কপঙ্কে নিমগ্ন ইব মে মনোরথঃ।
দেব—(উৎকণ্ঠিত ও কাতর হয়ে) হায়! এখন কি করি? আমার মন রূপী রথ এখন আতঙ্ক রূপ পঙ্কে আটকে গেছে এ থেকে এখন বেরিয়ে আসা কঠিন।
বিদূষকঃ—কিং করণীয়ং এব যেন কেনাপি প্রকারেণ।
বিদূষক— এখন কি করনীয়? কোনো প্রকারে কোনো না কোনো উপায় করতে হবে।
দেবঃ—(সোৎকণ্ঠমুপসৃত্য) বিষমশরবৈজয়ন্তি বাসন্তিকে কিংকরে ময়ি কৃতং অকৃতাধসাং আরোপণেন। কেলী নিকৃষ্টমরালিকে প্রকটিত পক্ষোল্লাসা মানসমেব মম আসীদতু ভবতী। পঞ্চশরকাঞ্চন পাঞ্চালী হৃদয়রঞ্জনায় প্রপঞ্চয় বিলাস সঞ্চরণম্। তরলতা রহিত তটিল্লতে তমালরূচিঘন অপঘনমলং কুরূ মে।
দেব—(উৎকণ্ঠার সাথে সামনে এগোলেন) বাসন্তিকে তুমি বিষমশর সন্ধানকারী কামদেবের বৈজয়ন্তী ধ্বজা। কেন তোমার সখীগন কে দোষ দিচ্ছ যা তারা করেনি। হে কেলীবিলাসপর রাজহংসিনী ফিরে এসে আমার মন রূপ সরোবর কে আশ্রয় করে পক্ষ সঞ্চারণে উল্লাস প্রকট করো। তুমি পঞ্চশর ধারী কামদেবের প্রিয় কাঞ্চন পুত্তলিকা তোমার রতি ক্রীড়ার সামগ্রী বিস্তার করে হৃদয় কে আনন্দিত করো। আমার তমালবৃক্ষ রূপ দেহ কে মেঘরূপ তুমি এসে আচ্ছাদন করো।
পাঞ্চালী= পুত্তলিকা (অমরকোশ)
বাসন্তিকা—(সহর্ষ স্বগতম্)
অবশ্যং অনেন পুনস্তেনৈব ভবিতব্যম্। সঃ স্বপ্নবিপ্রলম্ভকঃ কেবলং মম লোচনগোচরো আসীৎ।এষঃ খলু অনয়োঃ সখ্যোরপি/ সরব্যোরপি লোচনপদং অবতরতি।
বাসন্তিকা—(হর্ষিত হয়ে নিজ মনে বললেন) ইনি অবশ্যই দেব অহোবিলেশ, অন্য কেউ নন। যখন তিনি আমায় স্বপ্নে দর্শন দিয়েছিলেন তখন তাকে কেবল মাত্র আমি দর্শন করেছিলাম এখন আমার সখীরাও তাকে দর্শন করতে পারছে। তবে ইহা স্বপ্ন নয়।
(ইতি মন্দাক্ষকূণিতাক্ষা নিবৃত্য পরাপতিতুং ইচ্ছতি।)
(এই বলে তিনি এক ঝলকে তাকে দেখে তার প্রতি কটাক্ষপাত করে লজ্জায় পলায়ন করতে চাইলেন।)
ভ্রমরিকা—এষ তব বিপ্রলম্ভবচনং শ্রুতবান্ ইতি কিং নু সশঙ্কং নিবৃত্তম্।
(বাসন্তিকা সবিনোদং তির্যক্ আহিতকটাক্ষং ভ্রমরিকামবেক্ষতে।)
তিনি তোমার বিপ্রলম্ভ অবস্থায় বলা বাক্য শুনে ফেলেছেন এই আশঙ্কায় কি তুমি পালাচ্ছ?
(বাসন্তিকা শুনে খুশি হলেও ভ্রমরিকার প্রতি তির্যক কটাক্ষ পাত করলেন)
চতুরিকা—(সবিনোদম্)
অয়ে দেবতা প্রসাদমারভ্য তব হৃদয় বঞ্চন নিপুনং তং পরিহৃত্য আবয়োরুপরি কিমতেৎ কোপানুষঙ্গাৎ কুটিলাবলোকনম্।
চতুরিকা—(আনন্দের সাথে) অয়ে বাসন্তিকে! যখন থেকে তুমি দেবীর কাছে বর প্রাপ্ত হলে, তারপর থেকে এই পুরুষ টি তোমার হৃদয় মন কে বঞ্চনা করে চলেছেন আমাদের ওপর কেন ক্রোধ করে কুটিল কটাক্ষপাত করছো?
বিদূষকঃ—এষা তব মনোরথ সিদ্ধেঃ বেলা। যত্তে কর্তব্যং কৃতং ভবতু।
বিদূষক— হে দেব! আপনার মনোরথ সিদ্ধ হতে চলেছে, এখন যা কর্ত্তব্য করা উচিত তা করুন।
দেবঃ—(সানুরাগবন্ধং বাসন্তিকাহস্তমবলম্ব্য)
অনেনাপি কৃতার্থঃ স্যাৎ অসাবিতি কিমঞ্জসা।
পরসংপরিবৃত্তাসি সর্বাবয়বসুন্দরি।। ৩৫
অপিচ
মমেদৃশীমপি দশাং স্নেহার্দ্রাং কিমুপেক্ষসে।
চিত্রমেতৎ ন তে তন্বি চিত্রভূরত্নদীপিকে।। ৩৬
দেব—(গভীর অনুরাগের সহিত বাসন্তিকার হাত ধরে) হে সুন্দরী তোমার সর্বাঙ্গ সুন্দর। তুমি কি ভেবে নিলে এই কিছুক্ষন মাত্র আমাদের দর্শন হলেই তা আমাদের জন্য যথেষ্ট? তাই কি তুমি ফিরে যাচ্ছিলে? আর, আমার এই রূপ প্রেম বিগলিত অবস্থায় কি করে উপেক্ষা করতে পারো? হে কামদেবের হাতের রত্ন মন্ডিত দীপ তোমার এই আচরণ কি অতি অদ্ভূত নয়? # 141
ভ্রমরিকা—অয়ে প্রিয়বয়স্য এতস্যা অঙ্গজং লক্ষণং ভাবয়তু ভবান্।
ভ্রমরিকা— হে প্রিয় বন্ধু আপনি অবশ্যই এই কন্যার সৌন্দর্য্যের প্রশংসা করবেন।
দেবঃ—সাতিশয়সুষুমারতি স্বরূপায়াং অস্যাং কিং লক্ষণীয়ানি লক্ষণানি।
ভৃঙ্গারুচামরসরোরূহ তালবৃন্ত
মাল্যাসনাম্বুজ মনোহরপাণি পদ্মাঃ।
পার্শ্ব স্থিতাঃ যুবতয়ঃ পরশীলয়ন্তি
নক্তং দিবং নবনবান্ উপচার ভেদান্।। ৩৭
দেব— এই কন্যার সর্বাঙ্গের সৌন্দর্য্য লক্ষণ নির্দেশ করা আবশ্যক কি? যার অতুলনীয়া সৌন্দর্য্য কেবল রতি দেবীর সহিত ই তুলনীয়।
তুমি জানো যে শীঘ্রই সুন্দর কন্যা গন দ্বারা চামর ব্যাজনাদি, সেবা লাভ করবে। এই কন্যরা করকমলে লীলা কমল ধারন করে আছেন, কন্ঠে কমল মালা, তারা তাকে দিব্য সিংহাসনে বসিয়ে উভয় পার্শ্বে দাঁড়িয়ে দিবারাত্র বহুবিধ সেবায় পরিতৃপ্ত করবে। #142
শুকঃ—সংযক্ ইদং অধুনা শ্লেষগর্ভ আভ্যাং অভিহিতম্।
শুক—হে দেব আপনি যা বললেন তার গূঢ়ার্থ খুবই আনন্দদায়ক।
চতুরিকা—সখি কৈমুতিকন্যায়েন তব লক্ষণং ইরয়তঃ পারিতোষিকং নীবীদানং কুরূ।
চতুরিকা—হে সখী ইঙ্গিতে তোমার সৌন্দর্য্য কৈমুতিক ন্যায়ে বর্ননা কারী দেব অহোহিলেশ কে তোমার নীবিবন্ধন পারিতোষিক রূপে দাও না কেন?
ভ্রমরিকা—(সমন্দস্মিতম্)
এষা অবশ্যং কর্তুমেব সমুৎপন্ম করাঙ্গুলীধর্মোদকব্যপদেশেন দানসলিলং গৃহীতবতী।
ভ্রমরিকা—(মৃদু হাস্য সহকারে) তার স্বেদ পূর্ণ করাঙ্গুলীর দিকে দেখুন। হে দেব আপনার জন্য অর্ঘ্যবারি রূপ তা দান করছে।
(স্বেদাদি প্রেমের অষ্টসাত্ত্বিক বিকার, বাসন্তিকা এই প্রেমশোভা আপনাকে অর্ঘ্য রূপে অর্পণ করছে)
বাসন্তিকা—(স্বগতম্)
লজ্জা নির্জিতায়াঃ মম কুতঃ তাদৃশো বিভবঃ?
বাসন্তিকা—(স্বগত) আমার কি এত সৌভাগ্য হবে? আমি লজ্জা দ্বারা বিজিত হয়েছি।
দেবঃ—(সানুরাগং বাসন্তিকা মুখং উন্নময্য)
আলম্ব্যাধর পল্লবমাকাঙ্ক্ষে তন্বি তে দ্বিজোৎকর্ষম্।
উদ্বাহ্যোরূভরং চিরমনন্তু বিষাদ পরমপি লঘূকুর্বে।। ৩৮
মধ্যমালিঙ্গিতে তন্বি মনঃ সিংহাসনে স্থিতঃ।
উরোজাংশ্লেষণান্মেরোরূপরি স্থিতিমাদধে।। ৩৯
দেব—(গভীর অনুরাগে বাসন্তিকার চিবুক ধরে তুলে) হে সুন্দরী! তোমার কোমল অধর দ্বয় আকর্ষণ করে তা আস্বাদন করবো, তোমায় বিবাহ করে তোমার দুশ্চিন্তা লঘু করবো। আমার মন তোমায় আলিঙ্গন করে সিংহাসনে বসে তোমার স্পর্শ সুখ অনুভব করে সুমেরু পর্বতোপরি স্থিত হয়েছে।
চতুরিকা—ত্বং কিং ন জানাসি অপ্রতিষিদ্ধং অনুমতমেবেতি।
চতুরিকা—হে দেব জানেন কি, যাতে বাধা দেওয়া হয়না তা স্বীকার করে নেওয়া হয়।
(নেপথ্যে)
অদ্যাপি বৎসা বাসন্তিকা নাগতেতি স্নেহশালিনী পরিতপতি ভর্তৃদারিকা। অহো কৈতবমাচরতা শুকেন কিয়ৎ দূরং আনীতা।
নেপথ্যে,
ওঃ বাসন্তিকার স্নেহশালিনী মাতা স্নেহবশত মাতা অনুতাপ করছে যে তার কন্যা আজও সময়ে ফিরে আসেনি, এই শুক কপট আচরণ করে তাকে কতো দূরে নিয়ে গেছে।
শুকঃ—(স্বগতম্) হন্ত মহান্ প্রসাদঃ। অনয়া মম কৈতবং জ্ঞাতম্! তস্মাৎ ইহ স্থাতুং অনুচিতম্।
(ইতি মায়াবলেন নিরোহিতো ভবতি।)
শুক—(স্বগত) হায়! কি মহান কৃপা। এই কন্যা আমার কপটতা জেনে গেছে। এখানে আর থাকা অনুচিত।
(এই বলে মায়াবলে শুক অন্তর্হিত হলো)
ভ্রমরিকা—আসন্না খলু ভর্তৃদারিকায়াঃ পারিচারিকা। তস্মাৎ অনুমন্যস্ব অস্যাঃ গমনায়।
ভ্রমরিকা— হে দেব! রাজকন্যার এর পরিচারিকা এসে উপস্থিত হয়েছেন। তাই রাজকন্যা কে যাওয়ার অনুমতি দিন।
ভতৃদারিকা= নাট্যোক্তৌ রাজসুতা ইতি অমরকোষ
দেবঃ—কর্তব্যং কিং বিলম্বেন?
দেব—যা করতে হবে তাতে আর বিলম্ব কেন?
সখ্যৌ—স্মর্তব্যবহুলে ইয়মপি যুষমাভিঃ স্মর্তব্যা।
(ইতি নিষ্ক্রান্তাঃ)
বাসন্তিকা পদান্তরে ত্রিকমর্ধ নিবর্ত্য বিলোকয়ন্তী কথংচিৎ চক্ষুরাকৃষ্য গচ্ছতি।
সখীগন— হে দেব আপনাকে বহু কিছু স্মরণে রাখতে হয়। আমাদের ও স্মরণে রাখতে ভুলবেননা।
(তারা সকলে চলে গেলেন। বাসন্তিকা ও তিন পা এগিয়ে এলেন। আবার পিছনে ফিরে দেখলেন তারপর পুনরায় চক্ষু ফিরিয়ে নিয়ে চলতে লাগলেন।)
দেবঃ—(সোৎকণ্ঠম্)
তির্যঙ নিবর্তিত গলং দৃশি মে দৃশৌ স্বৌ সন্ধায় ধৈর্যমপকৃষ্য পুরঃ প্রয়াতা।
দেব—(উৎকণ্ঠার সহিত) সে তার গ্রীবা বক্র করে আমার দিকে দেখলো ও আমার সমস্ত ধৈর্য্য হরণ করে রাজপুরের দিকে চলে গেল।
বিদূষকঃ—যুষ্মাভিঃ প্রথমরসস্য সংকীর্তন মাত্রেণ ময়া দ্বিতীয়রসোহপি স্মর্যতে।
বিদূষক— হে দেব আপনার আবেগপূর্ণ উক্তি প্রথমরস (শৃঙ্গার রস) এর কথা বললেও আমার মনে দ্বিতীয় রস(হাস্য রস) এর কথা মনে পড়ছে।
দেবঃ—কিং তৎ?
দেব—তা কি করে?
বিদূষকঃ—সংস্কৃতৎমাশ্রিত্য
প্রত্যস্ত্রমোধয়িতৃ লক্ষবিবোধমুক্ত
মুক্তায়ুধামদনমূলবলোত্তমেন।। ৪০
বিদূষক— কামদেব তার সমস্ত অস্ত্র প্রয়োগ করেও আপনাকে জিততে ব্যার্থ হয়েছে। কিন্তু এই কন্যার সহায়তায় আপনাকে জিততে সমর্থ হয়েছে। #