বাসন্তিকা পরিণয়ম
শ্রীশতকোপ যতীন্দ্র মহাদেশিকান রচিত অহোবিলা নরসিংহ ও চেঞ্চুলক্ষ্মী দেবীর বিবাহ কাহিনী।
মূল সংস্কৃত শ্লোক ও বাংলা অনুবাদ সহ
আবির্ভাব চক্রবর্তী
নরসিংহ দেবের শৃঙ্গার রসসমৃদ্ধ লীলা একমাত্র এই গ্রন্থে পাওয়া যায়। অহোবিলেশ্বর শ্রী উগ্রনরসিংহ দেবের ক্রোধ শান্ত করতে অহোবিলমের চেঞ্চু উপজাতির কন্যা রূপে প্রকট হয়ে লক্ষ্মীদেবী নরসিংহ দেবের ক্রোধ শান্ত করেন। তার প্রণয় সূত্রে আবদ্ধ হয়ে নরসিংহ দেব তাকে বিবাহ করে সুখে সেখানে বাস করতে থাকেন। এখনো ব্রহ্মোৎসবের সময় নরসিংহ দেবের উৎসব বিগ্রহ বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে চেঞ্চু উপজাতির লোকেদের সেবা গ্রহণ করেন। মূল গ্রন্থটি সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষায় রচিত।
পাত্র পরিচয়
দেবঃ অহোবিলেশ্বর নায়ক
প্রহ্লাদঃ হিরণ্যকশিপু পুত্রঃ অহোবিলেশ্বর ভক্ত
পিতামহঃ চতুর্মুখ ব্রহ্মা
নারদঃ দেবর্ষিঃ
মহেন্দ্রঃ দেবলোকাধিপতি
মাতলিঃ ইন্দ্রস্য রথসারথিঃ
শূরসেনঃ কিরাতরাজ বাসন্তিকায়াঃ পিতা
ব্রাহ্মণঃ ভদ্রাণ্যা প্রেষিতো দূতঃ
শিষ্যঃ উদ্বাহপুরোহিতস্য অন্তেবাসী
বিদূষকঃ কথানায়কস্য দেবস্য সখা
কাদম্বকঃ বৃদ্ধকঞ্চুকী, অন্তঃপুরচরঃ, শূরসেনস্য ভৃত্যঃ
মায়াময়ঃ অহোবিলেশ্বরানুচরঃ, ঐন্দ্রজালিকঃ
সূত্রধারঃ নাটকস্য নিয়োজোকঃ
নটঃ সূত্রধারস্য উপকর্তা
মারিষঃ রঙ্গস্থল নির্বাহকঃ
শুকঃ শুকবেষধারী মায়াময়ঃ
ভ্রমরঃ ষটপদঃ পুষ্পরসাস্বাদনশীলঃ
চারণঃ গূড়চারী
বেত্রিণঃ চারপুরূষাঃ
স্ত্রী পাত্রী
দেবী মহালক্ষ্মী
বাসন্তিকা কথানায়িকা শূরসেনস্য দুহিতা
বিজ্ঞানবতী জ্যোতিষশাস্ত্রনিপুণা
ভ্রমরিকা বাসন্তিকায়াঃ চেটী
চতুরিকা বাসন্তিকায়াঃ চেটী
শাম্বরী= মায়াময়স্য পত্নী
মধুপ্রিয়া= ষটপদস্য সহচরী, ভ্রমরপত্নী, ভ্রমরী
বনদেবতা= অহোবিলবনানাং অধিষ্ঠানদেবতা
ভদ্রাণী= মহালক্ষ্ম্যাঃ অনুচরী
শ্রীমতে শ্রী লক্ষ্মীনৃসিংহ পরব্রহ্মণে নমঃ।
শ্রীমতে রামানুজায় নমঃ।
শ্রীমতে নিগমান্ত মহাদেশিকায় নমঃ।
শ্রীমতে আদিবণশঠকোপযতীন্দ্র মহাদেশীকায় নমঃ।
শ্রীমতে শ্রীবণশঠকোপ শ্রীশঠকোপযতীন্দ্র মহাদেশীকায় নমঃ।।
শ্রীপরাঙ্কুশযোগীন্দ্র চরণাম্বুজশেখরম্। সমস্তশাস্ত্রপারীণম্ শঠকোপমুনিং ভজে।।
নান্দী
ধত্তে হস্তযুগী সুদর্শন দরৌ দেবস্য যস্যেত্যলং
সাসূয়ং নু তদন্যহস্তযুগলী তৎসাম্যলাভাশয়া।
পারাবারসুতা পয়োধরতটী কন্ঠং সমালম্বতে
সঃ শ্রেয়াংসি চতুর্ভূজো রচয়তাং লক্ষ্মীনৃকণ্ঠীরবঃ।।১
চতুর্ভূজ লক্ষ্মীনরসিংহ স্বামী আমাদের আশীর্বাদ করুন, ও যা আমাদের শ্রেয় তা দান করুন। এ অতি আশ্চর্য্য দৃশ্য যে দুই হস্তে পরাক্রমী সুদর্শন চক্র ও পাঞ্চজন্য মহাশঙ্খ ধারনে গর্বোদ্ধত হয়ে উর্দ্ধমুখী। তাই অন্যদুই হস্ত তাদের সৌভাগ্যে ঈর্ষাবশতঃ সমতালাভের জন্য সমুদ্রসুতা মহালক্ষ্মী দেবীর পীন পয়োধর ও কন্ঠালিঙ্গন করতে ভগবান কে সহায়তা করার সৌভাগ্য লাভ করেছে।
অকুতো জনুষাহভাবি ভাবয়া যস্য হেষয়া।
অস্তু মে বস্তু মেধায়ৈ কন্ধরোপরি সৈন্ধবম্।। ২
ভগবান হয়গ্রীব যার বাণী বা হ্রেষাধ্বনি অশ্রুতপূর্ব #
তা আমাদের বুদ্ধি সঞ্চার করুক।
নান্দ্যন্তে সূত্রধারঃ
নান্দীপাঠের পর সূত্রধারের প্রবেশ।
অয়ে মারিষ, ইতস্তাবৎ, আদিষ্টোহস্মি, নিরন্তরনমস্ক্রিয়াহলঙ্কর্মীণসুররীজ মকুটমণিকিরণ কির্মীরিত চরণারবিন্দস্য গরুড়াচলকুটুম্বিনঃ ভগবতঃ শ্রীমদহোবিলেশ্বরস্য বসন্তোৎসব বিলুলোকয়িষয়া সমাগতৈঃ ভাগবতৈঃ।
সূত্রধার:- হে মারীষ তুমি কি এখানে আসবে? ভগবান অহোবিলেশ্বরের ভক্তগন বসন্তোৎসবের জন্য এখানে সমবেত হয়েছেন। তারা #
তুমি তো জানো যে গরুড়াচল এ অধিষ্ঠিত ভগবান অহোবিলেশ্বরের বা গরুড়াচল বাসীগন যার কুটুম্ব সেই অহোবিলেশ্বরের চরণকমল প্রতিনিয়ত দেবরাজ ইন্দ্র দ্বারা পূজিত হয়। ও ইন্দ্রের মুকুটস্থ মণির দ্যুতি তে সেই চরণকমল শোভিত হয়।
মারীষঃ—কথমিব?
মারীষ— কিরূপে? (ভক্তগন কিভাবে আনন্দ লাভ করতে চায়?
সূত্রধার— অয়ে নৃকন্ঠীরব বিহারনিরূরকং প্রাথমিকরসোদ্দীপকং রূপকম্ নব্যমভিনেতব্যং ইতি।
সূত্রধার— তুমি তো জানো তারা ভগবান নরসিংহ দেবের ভক্ত। তারা ভগবান নরসিংহদেবের লীলা সমন্বিত একটি নাটক দর্শন করতে চায়। নরসিংহদেবের শৃঙ্গাররস সমৃদ্ধ একটি নব নাট্য আছে, তারা চায় আমরা সেই নাটক করি।
নটঃ(সবিতর্কম্)— ভাব, মমৈতদ্ আকর্ণ্য চিন্তাড়োলাময়তে চেতঃ। অবশ্যমনতিলঙ্ঘনীয়মাজ্ঞাপনম্ প্রাজ্ঞানাম্। কিন্তু প্রত্যেকশঃ ন বিশোধিতৈব নটনসামগ্রী। ন সন্নিহিতা এব সর্বে পারিপার্শ্বিকাঃ। সমস্তমিদমাস্তাম্ নাম।
কিন্তু বসন্তবনবিহারিণ্যা কয়াচন তরূণ্যা বিবশীকৃতান্তরঙ্গঃ তদুপলম্ভন সম্ভাবনয়া অনাগত এব নটনকর্মানুসারী নট(নর) কেশরী। তদুপরি কিং বিধেয়ং ইতি।
নট—(চিন্তান্বিত ভাবে) হে ভ্রাতঃ তোমার কথা শুনে আমার মন এক চিন্তা ও আশঙ্কায় আলোড়িত হচ্ছে। একদিকে তো আমরা এই প্রাজ্ঞগনের অভিলাষ কে অসম্মান করতে পারিনা। অপরদিকে আমরা এই নব নাট্যের জন্য প্রস্তুত নই ও আমাদের কাছে নাট্যসামগ্রীর ও ব্যাবস্থা নেই। গন ও নিকটে নেই। যা হোক সেসকল সমস্যা তো আমরা ব্যাবস্থা করে নেব। কিন্তু আমার প্রধান দুশ্চিন্তা এই যে আমাদের প্রধান নট, নায়ক নটকেশরী(নৃকেশরী) তিনি এই মূহুর্তে বসন্তবনে বিহার করছেন। তিনি এক তরুণীর প্রেম এ বিবশ অঙ্গ হয়ে তার মন জয়ের জন্য সকল প্রচেষ্টায় ব্যাস্ত রয়েছেন। তাকে নিয়ে এখন কি করি সে বিষয়েই আমি এখন চিন্তান্বিত।
সূত্রধারঃ— অয়ে তৎকিং ন জানাসি? স কিল নিখিলতন্ত্রবেদী, নির্ব্যূট তদীয় পরিণয়ঃ তয়া সহ সমাগত ইতি।
ওঃ তবে তুমি জানোনা। আমাদের নায়ক নিখিল তন্ত্র বিদ্যায় পারঙ্গম। তিনি সেই তরুণীর মন জয় করে তাকে বিবাহ করে অবিলম্বে ফিরছেন।
নটঃ—( সহর্ষম) ন গুণং গণয়তি নৈব হি জাতিং জানাতি নোচিতং মনুতে। প্রায়েণ স্ত্রীপুংসৌ প্রভবতি যোক্তুং মিথোহনুরাগবিধিঃ।। ৩
নটঃ—( আনন্দিত হয়ে) প্রীতির কি অদ্ভূত ক্ষমতা। যে ব্যাক্তির কারো প্রতি প্রীতি থাকে সে ঐ ব্যাক্তির গুণ বংশ, জাতি, জন্মপরিচয়াদি ও জানতে চায়না। কেবল প্রেমে উন্মত্ত হয়ে একে অপরের প্রতি অনুরক্ত থাকে।
সূত্রধারঃ— তৎসত্যমেব, সর্বমপি উপপন্নং গুরুপ্রসাদেন, তৎ আরভ্যতাং তৌর্যত্রিকম্।
সত্য বলেছ। এখন শ্রীগুরু কৃপায় আমাদের সমস্ত প্রস্তুত। তা নয় কি?
নটঃ— (পুনর্বিমৃশ্য)
অনভিনীতচরং হরিবর্ণনাসুরভিলং সুগুণোন্নত রূপকম্।
অবিরলং রসভাবগতিক্রমৈঃ অবসরোচিতমস্তু কুতস্তু নঃ।। ৪
নটঃ—(পুনরায় ) আমায় দেখতে দাও। প্রাজ্ঞ ভক্তগন এমন একটি নাটক দর্শন করতে চায় যা কখনো প্রদর্শিত হয়নি, শ্রীহরির দিব্যচরিত বর্ননায় সুরভিত। সেই গুনের কারনে তা উন্নত। এবং সেই নাটক টি রসাভাস বর্জিত ও ভাব গতি ক্রমে দোষ বর্জিত হবে। আবার বসন্তোৎসবের প্রাসঙ্গিক ও হবে।
সূত্রধারঃ— (স্মরণমভিনীয় সানন্দম) অত্র খলু, পবিত্রতর পরমভাগবতপরিবৃতে শ্রীমদহোবিলপুরে আসীদ্ ব্যাসস্য বীপ্সা শুকমুনিযমকং পুণ্ডরীকদ্বিরুক্তিঃ প্রথিতযতিকুলপ্রাগ্রণী বণশঠারিঃ।
প্রাজ্ঞানাং যস্তু রাজ্ঞাং পদবিনতিকৃতাং অষ্টবর্ণোপদেশাৎ অষ্টৈশ্চর্যাষ্টভোগান্ অদিতসমধিকামষ্টদিকখ্যাততাং চ।। ৫
সূত্রধার— (কিছু চিন্তা করে আনন্দের সাথে বললেন) হ্যাঁ এই অহোবিলপুরে যেখানে পবিত্র হতে পবিত্রতর ভক্তগন তীর্থযাত্রা করতে আসেন, সেখানে একজন মহান সন্ন্যাসী আছেন। যিনি যতিকুলের মধ্যে অগ্রগন্য তাই আদি উপাধি ধারী। যাকে লোকে মনে করে স্বয়ং ব্যাসদেব কিংবা শুকমুনি বুঝি পুনঃপ্রকট হয়েছেন। বা পুন্ডরীকমুনি বা স্বয়ং প্রহ্লাদ। তিনি তার নিকট শরণাগত পন্ডিত রাজা গনকে অষ্টাক্ষর মন্ত্র উপদেশ দ্বারা তাদের আত্মজ্ঞান দান করেছিলেন। সেই অষ্টাক্ষর মন্ত্র প্রভাবে রাজগন অষ্ট ঐশ্বর্য্য লাভ করেন ও তাদের অদ্বিতীয় খ্যাতি অষ্টদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
নটঃ(সানুস্মরণবহুমানম্)—আঃ কিং স এব অয়ম? যং কিল নিরঙ্কুশ ব্রহ্মচর্যব্রতং, অনিতরকার্যদ্রমিড়গাথাচার্যকুলধূর্য, অনিবার্যতপশ্চর্যামর্যাদানুমোদিত নৃহর্যক্ষবিতীর্ণ চতুস্সপ্ততিসংখ্যা নিষ্ণাত বৈষ্ণবকুলভদ্রাসনাধিপত্যং পুরাবিদঃ উদাহরন্তি।
প্রণামস্তৎপদাম্ভোজ পরাগ পরমাণবে। যৎসঙ্গমাত্রাদভবন্ন পরাগাঃ পুরাজনাঃ।। ৬
নট— শ্রদ্ধা সহকারে তাকে স্মরণ করে, হ্যাঁ অবশ্যই আপনি কি তার কথা বলছেন, যিনি আকুমার ব্রহ্মচর্য্য ব্রতধারী, দ্রাবিড়বেদ এ পারঙ্গদ আচার্য্য গনের শিরোমণি। নিরবচ্ছিন্ন তপশ্চর্যা দ্বারা যিনি নৃসিংহদেব কে তুষ্ট করেছেন। স্বয়ং ভগবান নৃসিংহদেব যাকে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ৭৪ জন আচার্য্যের মধ্যে প্রশ্নাতীত আধিপত্য প্রদান করেছেন। তার চরণকমল সঙ্গক্রমে তার সময়ের লোক জন সমস্ত অসৎ কে জয় করতে সক্ষম হতো। তার চরণকমল মকরন্দে প্রণাম নিবেদন করি।
সূত্রধারঃ— ততশ্চ
নারায়ণো মুনিবরোহথ পরাঙ্কুশার্যঃ
শ্রীশ্রীনিবাসমুনিরপ্যথ বণশঠারিঃ।
পশ্চাৎপরাঙ্কুশমহামুনিরাবিরাসীৎ
ইত্থং জনা জগতি হন্ত ন জানতে কিম্।। ৭
সূত্রধার— তার পরম্পরায় আমরা বহু আচার্য্য পেয়েছি। শ্রী নারায়ণ মুনি, শ্রী পরাঙ্কুশ মুনি, শ্রী শ্রীনিবাস মুনি, শ্রী শঠকোপ মুনি, পুনরায় পরাঙ্কুশ নামা আচার্য্য, এই রূপ মহান সন্ন্যাসী গন পূর্বে কখনো প্রকট হননি। তোমায় পরাঙ্কুশ মুনি সম্পর্কে কিছু বলি যার জয়গাথা জগতবিখ্যাত।
অস্য পরাঙ্কুশমুনেঃ অখিললোকবিদিতং অপদানং জানীহি।
পূর্ব যস্তু মুকুন্দদেববিভুনা স্কন্ধে ধৃতাদোলিকঃ প্রাপ্য শ্রী পুরুষোত্তমং রচিতবান্ ভক্তপ্রতিষ্ঠাপনম্।
লব্ধা দন্তিতুরঙ্গরত্নশিবিকা চত্রদ্বয়ীচামর
দ্বন্দ্বাদীনি যয়ৌ পুনশ্চ বিজয়ী কর্ণাটসিংহাসনম্।। ৮
তত্র খলু, বিচিত্রতর বাদগোষ্ঠীষু, তেষ্টীয়মানং এনং প্রতি, তদীয়দ্বারি বিদ্বৎকবিমূর্ধন্যেন বাহিনীপতিনা গদিতমিদমেব হি বিরূদপদ্যং যথা প্রথমঃ চরমাশ্রমস্থিতানাং ফণিরাজস্য পরাঙ্কুশো দ্বিতীয়ঃ।
গুরুভার্গবয়োঃ পরং তৃতীয়ঃ শিববিষ্ণুস্বভুবাং তথা তুরীয়ঃ।। ৯
পূর্বে যাকে মহান রাজা মুকুন্দদেব নিজ রাজস্কন্দে পালকি বহনের দ্বারা শ্রীপুরুষোত্তমক্ষেত্রে নিয়ে গেছিলেন। যেখানে তিনি শ্রীবৈষ্ণব সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করেন। ও বহু শিষ্য করেন। তারপর হস্তী আরোহণে বহু অশ্ব, মণি মন্ডিত পালকী সহ শোভাযাত্রা করে ছত্র চামরাদি সেবিত হয়ে তিনি কর্ণাট প্রদেশে রাজগুরু রূপে প্রবেশ করেন। সেখানে অদ্বৈতবাদী ও শৈববাদী বহু পন্ডিতগনের সভায় শাস্ত্রার্থ নির্ণয়ে বাদীশ্রেষ্ঠ গনের থেকে নিরঙ্কুশ বিজয় প্রাপ্ত হন। তিনি যতিধর্ম অনুসরনে সর্বশ্রষ্ঠ।
নাগশ্রেষ্ঠ অনন্ত দেবের পরে শাস্ত্রব্যাখ্যায় তিনি ই অদ্বিতীয়। জ্ঞানে বৃহষ্পতি ও শুক্রাচার্য্য এর পরে যিনি তৃতীয় ব্যাক্তি। দিব্য ঐশ্বর্য্যে যিনি ত্রিদেবের পরে তুরীয় বা চতুর্থ।
তস্মাল্লব্ধা তুরীয়াশ্রমমসমসমুজ্জৃম্ভি শাস্ত্রাম্বুরাশি প্রাদুর্ভূত প্রবোধামৃতকরমুষিতাশেষ মোহান্ধকারঃ।
গাঢ়াধ্বানাবধান # প্রমদবহ হয়গ্রীবদেবপ্রসাদোদঞ্চৎ
সাহিত্যমার্গো জগতি বিজয়তে বণশঠারির্যতীন্দ্রঃ।। ১০
সেই শঠকোপ যতীন্দ্রের প্রধান সন্ন্যাসী শিষ্য শ্রী শঠকোপ মহাদেশিকান। তার সংস্পর্শে যে এসেছে তার জ্ঞান রূপ আলোকরশ্মিতে অজ্ঞানতার অন্ধকার দূরীভূত হয়েছে। চন্দ্রের আকর্ষণে যেমন সমুদ্রে জোয়ার আসে তেমন তার সংস্পর্শে আসা মাত্র সকলের মধ্যে জ্ঞানের উদয় হয়েছে।
ভগবান হয়গ্রীবের একনিষ্ঠ সেবার দ্বারা তিনি উচ্চমানের শাস্ত্রজ্ঞান লাভ করেছেন। ও বহু বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করেছেন।
ভাট্টানামট্টহাসঃ ফণিপতিফণিতের্ভাগধেয়ং কণাদ
ব্যাহার প্রাণনাদী কপিলমথফলং নর্মধর্মাগমানাম্।
যোগীশ্রাবণশঠারির্জগতি বিজয়তে কিঞ্চ বেদান্তযুগ্মা
চার্যো বেদোক্তমার্গস্থিতিজনন গুরুস্সর্বতন্ত্রস্বতন্ত্রঃ।। ১১
শ্রী বণ শঠারী তার সমসাময়িক কালে পারমার্থিক জগতে একচ্ছত্র ব্যাক্তিত্ব ছিলেন।
যিনি ভট্টাদি মীমাংসক গন(প্রভাকর ভট্ট নামা) কে পরাজিত করতে ভগবান অনন্তের যথার্থ উত্তরসূরী। ও নির্ভূল ব্যাকরণ শাস্ত্র প্রচারে যিনি সুদক্ষ। তিনি তর্কশাস্ত্রে অপরিসীম জ্ঞানী ছিলেন। তিনি সত্য# প্রাণস্বরূপ। তিনি সাংখ্যবাদ মত খন্ডনে পারঙ্গদ ও ধর্মশাস্ত্রের আভ্যন্তরীণ অর্থ নির্নয়ে সুপন্ডিত ছিলেন। তিনি উভয়বেদান্তের পরমাচার্য্য। তিনি কলিজীব দের বেদ নির্দেশিত সঠিক মার্গে চলার সহায়ক। আদিবণশঠকোপযতীন্দ্রের মতো তিনিও সর্বশাস্ত্রজ্ঞানের আধার। এবং শ্রীমদবেদান্তদেশিক দের মতো সর্বতন্ত্রস্বতন্ত্র।
নটঃ— স্বস্মিন্ অবস্থিতেহপি পরাঙ্কুশমুনিরেনং অন্তেবাসিনমঙ্গীকৃত্য শশ্চদাত্মনাসমমহোবিলেশ্বর শুশ্রুষায়ৈ কিমযুঙক্ত?
নট— তার মঙ্গলময় আবির্ভাব কালে (আচার্য্য রূপে প্রকট থাকাকালীন) শ্রীপরাঙ্কুশমুনি তার এক শিষ্য কে অহোবিলেশ্বরের সেবা প্রদান করেছিলেন। এ কি সত্য?
সূত্রধারঃ—যদি ন বিদিতমিদমাকর্ণ্যতাম্। কদাচন কমললোচনঃ পরাঙ্কুশমুনেঃ স্বপ্নে, প্রকটিত প্রাদুর্ভাবঃ দেবঃ নৃকন্ঠীরবঃ তদানীং বাণীমিমাং অভাণীৎ।
যদি তুমি না জানো তবে শোনো। কমললোচন ভগবান লক্ষ্মীনৃসিংহ দেব পরাঙ্কুশ মুনির সম্মুখে প্রকট হয়ে তাকে স্বপ্নাদেশ দেন।
নটঃ—কথয় কথয়।
নট—অনুগ্রহ পূর্বক আমায় তা বলুন।
সূত্রধারঃ— অস্তি খলু, তুণ্ডীরমণ্ডলমণ্ডনায়মানঃ বালবনং নাম মহান্ অগ্রহারঃ। তত্র খলু, ভারদ্বাজান্ববায়ে প্রথিততিরুবনন্তার্যবর্যপ্রপৌত্রঃ
পৌত্রঃ শ্রীচারুরাচালয় বিবুধমণেঃ শ্রীনিবাসার্যপুত্রঃ।
প্রাতস্ত্যাংভোজ জাত স্তবক সমধিকস্যন্দিমারন্দধারা
ধারালোদারসূক্তিস্তিরূমলয়েতি রব্যাতিশালী বিভাতি।। ১২
তদেনমাকর্ণ্য মদারাধনায় নিয়ুঙক্ষ্বেতি
সূত্রধর—তুন্ডীরমন্ডলে একটি পবিত্র অগ্রহারম আছে যার নাম বালবনম্ (ইলঙ্গডু)। ভগবান শ্রীনৃসিংহদেব তাকে স্বপ্নে দর্শন দিয়ে বলেন সেইস্থানে ভরদ্বাজ গোত্রীয় একজন প্রখ্যাত পন্ডিত আছেন তিরুবনন্তাচার্য্য নামে। তার প্রপৌত্র তিরুমালাই সুবক্তা রূপে প্রসিদ্ধ, তার মুখকমলনিঃসৃত ভাগবত কথা রূপ মকরন্দ দ্বারা তিনি জগতের অজ্ঞানতা দূর করেন। এই যুবক শ্রীনিবাসাচার্য্যের পুত্র ও সুন্দরাচার্য্যের পৌত্র। এই আশ্চর্য্য যুবক কে আমার মন্দিরে নিয়ে আসো ও সন্ন্যাস দীক্ষা প্রদান করে আমার অর্চনে নিযুক্ত করো।
নটঃ—(সকৌতুকম) ততস্ততঃ
নট— অতি উৎসুক হয়ে কৌতুকের সাথে বললো তারপর?
সূত্রধারঃ—তদনু, সোহপি বিস্ময়মবাপ্য স্বপ্ন বৃত্তী তদাত্ব এব, সত্বরমেনমাকার্য, যতিবর্যপদে পুনরুপদিষ্টমন্ত্রামৃতৈঃ অভিষেচিতবান্।
সূত্রধার—শ্রীপরাঙ্কুশ মহাদেশিকান আশ্চর্যান্বিত হলেন, কিন্তু ভগবানের আদেশ ও ইচ্ছায় পূর্ণ বিশ্বাস রেখে তিনি সেই যুবকের খোঁজে লোক পাঠালেন। ও তাকে আনিয়ে সন্ন্যাস দীক্ষা দিলেন ও প্রয়োজনীয় মন্ত্রাদি উপদেশ করলেন।
নটঃ(সবিতর্কম)—অহো বরমনেনবালভাব দুঃসাধবোধ শমদমাদিনির্মলংকর্ম কথংকারমিত্যঙ্গীকৃতম্।
নট—(আশ্চর্য্য হয়ে) কি করে সেই যুবক মন ও ইন্দ্রিয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়ে যুবা বয়সে সন্ন্যাস নিলেন?
সূত্রধারঃ— অয়মপি আত্মনঃ স্বপ্নে কৃতাবির্ভাবনৃহরিদেবপ্রসাদবচনমাকর্ণ্য তদা চরিতুং নিরঙ্কুশমনাঃ পরাঙ্কুশমুনেঃ অন্তেবাসিপদময়াসীৎ।
সূত্রধার—সেই যুবক ও ভগবান নৃসিংহদেব দ্বারা আদিষ্ট হয়েছিলেন, পরাঙ্কুশ মুনির শিষ্যত্ব গ্রহন করার জন্য। তাই তিনি অত্যন্ত হৃষ্ট মনেই সন্ন্যাস গ্রহন করেছিলেন।
নটঃ(সাশ্চর্য্য বহুমানম্) অনন্যজনসামান্যম্ অস্য তাবৎ তপোবলম্।
যস্মৈ হৃষ্টমনাঃ শৌরিঃ যতিরাজপদম্ দদৌ।। ১৩
নট—(আশ্চর্য্য হয়ে ও সম্মান প্রদর্শন করে)—এই শঠকোপ মুনি যাকে স্বয়ং শৌরি প্রসন্ন হয়ে সন্ন্যাস দীক্ষা দিয়েছিলেন, তিনি অবশ্যই সাধারন মানুষ ছিলেন না।
সূত্রধারঃ অনেন খলু যুগপদেব শতলেখিনীলেখনানুগুণ কবিতাধুরন্ধরেণ "বাসন্তিকা পরিণয়ম' নাম নাটকং নির্মায় সম্মানপূর্বকং অস্মাকং হস্তে সমর্পিতম্।
সূত্রধার— এবং এই মহর্ষি যিনি শতলেখিনীলেখনানুগ কবিতাধুরন্ধর নামে পরিচিত। তিনি একটি নাটক রচনা করেছেন বাসন্তিকা পরিণয়ম নামে।
নটঃ— অস্য বিশিষ্য, তর্কসরণিকর্কশপ্রবৃত্তিরপি সূক্তিঃকথমিব জগ্রাহ, কবনমধুরিমসামগ্রীম্।
এও কি সম্ভব দার্শনিক শুষ্ক শাস্ত্র সিদ্ধান্তে নিপুন ও নীরস তর্ক এ আগ্রহী তিনি কি জনমনোরঞ্জক নাটক রচনা করতে পারেন?
সূত্রধারঃ—অস্য খলু তর্ককঠিনাপি বাণী ক্রমতে কর্ণামৃতায় কবিতায়াম।
কোকিল কূজিতময়ূজাং কুলিশং নু তদেব সম্যুজাং সরলম্।। ১৪
অথবা কবিতার্কিক কণ্ঠীরব পদাঙ্কিতং বিরুদং কথমিদং জগন্তি ন নিগদন্তি?
বিরহী প্রেমিকের কাছে কোকিলের কুহুরব ও বজ্রের থেকেও কর্কশ লাগে। কিন্তু যদি যুগল একসাথে থাকে তবে সেই কোকিলের কুহু রবই বংশীধ্বনিতে সঙ্গীতের মতো মধুর শোনায়। সত্য এই যে কোকিলের স্বর সর্বদাই মধুর। তেমনই এই যতীন্দ্রের যে বাক্য শাস্ত্রার্থ নির্ণয়ের সময় কর্কশ শোনায়, সেই বাক্যই কর্ণে অমৃত বর্ষণ করে যখন তিনি কাব্য নাটকাদি রচনা করেন। নয়ত কেন তিনি কবিতার্কিকসিংহম্ নামে খ্যাত হবেন।
নটঃ— তৎসুঘটিতমিতি ভণিতব্যম্।
যা তুমি বললে তা সত্য। এই নাটক টি সুন্দর ভাবে রচিত হয়েছে। ও সমস্ত কলাকুশলী গন ও প্রস্তুত।
সূত্রধারঃ—সুঘটিতমিতি কিমুচ্যতে যতঃ বয়ং নটনকৌশলব্যবসিনো গুণগ্রাহিণী সভা কবিরয়ং যতিঃ সরস কাব্যমার্গে সুধীঃ।
কথা নরহরেরিয়ং ঘনবিলাস শৃঙ্গারিণী
প্রকামসুকৃতোদয়াৎ ফলিতমস্মদাকাঙ্খিতম্।। ১৫
হ্যাঁ আমরা নাটকের কলা কুশলী গন নাট্যকলায় সুনিপুন। সেই রূপ রসগ্রাহী দর্শক গন ও উপস্থিত।
মহামুনি কবিবর ও সরস কাব্যমার্গে দক্ষ। কাহিনী ও স্বয়ং ভগবান নৃসিংহদেবের চরিতের বিষয়ে। ও শৃঙ্গার রস ঘন। তাই এই পরম পবিত্র নাটক পরিবেশণ অবশ্যই সার্থক হবে।
সূত্রধারঃ— (নেপথ্যাভিমুখমবলোক্য) আর্য্যে, সমযোচিতা গীতিঃ অঙ্গীক্রিয়তাম্।
সূত্রধার—(নেপথ্যের দিকে তাকিয়ে) হে আর্য্যে! সময়োচিত একটি সঙ্গীত পরিবেশণ করো।
নটীঃ—(নেপথ্যে) পহিঅ মিঅআ বিণোঅণ পরবস মাহব ণিসেবণুকণ্ঠো।
মলআঅল শিহরাদো মন্দ ওদরদি মারুদো এসো।।
(পথিকমৃগয়া বিনোদনপরবশ মাধব মলয়াচল শিখরান্ মন্দমবতরতি মারুত এষঃ)।। ১৬
মলয়াচল পর্বত শিখর হতে মৃদু মন্দ পবন বইছে বিহারকারী পথিকদের বিনোদন পূর্বক বসন্ত বা মাধব মাসের আগমন বার্তা দিচ্ছে।
সূত্রধারঃ— অয়ে সাধু সাধু, ইয়ং হি মৃগয়াবিহার বিনির্গত নৃ
সূত্রধার— সাধু, সাধু। অতি সুন্দর। ভগবান শ্রীনৃসিংহদেব মৃগয়াবিহারে বেরিয়েছেন। ও মহেন্দ্র স্বর্গ থেকে অবতরিত হয়েছেন ভগবানের ইচ্ছা পূরণের জন্য। ও তোমার সঙ্গীত ইন্দ্রের প্রবেশের সঙ্গে যথোপযুক্ত হয়েছে।
।। যবনিকা পতন।।
প্রথম অঙ্ক সমাপ্ত।
দ্বিতীয় অঙ্ক
ততঃ প্রবিশতি রথাধিরূঢ়ো মহেন্দ্রো মাতলিশ্চ।
মাতলী চালিত রথে মহেন্দ্রের প্রবেশ।।
মহেন্দ্রঃ—অয়ে রথস্ত্বর্যতাং ত্বর্যতাম্। গরুড়াচলকুটুম্বিনো ভগবতঃ প্রাতঃরভিবন্দনায়।
মহেন্দ্র—ওহে মাতলী! শীঘ্রগতিতে রথ চালাও। আমায় গরুড়াচলবিহারীর প্রাতঃকালীন অভিবন্দনায় (মঙ্গলারতি তে) যেতে হবে।
মাতলিঃ—তথা করোতি।
মাতলী শীঘ্র গতি তে অশ্বচালন করতে লাগলেন।
মহেন্দ্রঃ—(রথবেগং নিরূপ্য)
প্রবহদমরগঙ্গা পাথসা সাকমেব
প্রপতদিদমধস্তাৎ পারিজাতপ্রসূনম্।
অবতরতি বিচিত্র ব্যোমযানে ধরিত্রীম্
অপি পুনরতি বেগান্ নাকমারোহনীব।। ১৭
মহেন্দ্র—
মনে হয় স্বর্গ হতে দেবগঙ্গা পারিজাত পুষ্প নিয়ে আমাদের সাথে উপস্থিত হয়েছে ভগবানের সেবায়। এবং পৃথিবী ও যেন দ্রুত আমার রথের কাছে চলে আসছে। আমায় স্বাগত জানাতে।
মাতলীঃ—অহো বেগাতিশয়াৎ অতিলঙ্ঘিতচন্দ্রমস্তরণিতারাসরণিঃ অভ্রপদমবতীর্ণো বিমানরাজঃ।
মাতলী— আহা আমাদের রথ তার অত্যন্ত দ্রুত গতিতে নক্ষত্রলোক গ্রহলোক চন্দ্রলোক পার করে চলে এসেছে।
মহেন্দ্রঃ—(অনতিদূরে নির্বর্ণ্য) লক্ষ্যমাণ কুলক্ষ্মাভৃৎ বৃক্ষসিন্ধুবনীবৃতা। সংক্ষিপ্তবিস্তৃতা ভাতি ধাত্রীচিত্রপটা যথা।। ১৮
মহেন্দ্র— চারিপাশে তাকিয়ে
এখান থেকে পৃথিবী কি সুন্দর দেখাচ্ছে। ঘন বন গুলি বৃক্ষ ও নদী তে শোভিত। যেন এক বিরাট বটবৃক্ষ বহু কাল ধরে অনন্ত সময়ের সাক্ষী রূপে দর্শন করছে।
মাতলিঃ—অত্র তাবৎ অতিগহনে বিপিনে সহ সখীভ্যাং অবনিতলমবতীর্ণা দিব্যকন্যেব অনন্যজনসামান্য লাবণ্যধন্যা কন্যামণিঃ ইয়ং কা নাম কাসারোপবন পরিসরমপসরতি
হে প্রভূ দেখুন। কে এই অতুলনীয় সৌন্দর্য্যরত্ন স্বর্গদেবীর ন্যায় দিব্য কন্যা। এই গহন বন সন্নিকটস্থ সরোবর তীরে সখীগন সহ বিহার করছেন।
মহেন্দ্রঃ—(বিলোক্য সানুস্মরঁ বহুমানং) সখে, শ্রুয়তাং পুরা খলু গন্ধর্বরাজনন্দিনীয়ং ইন্দিরাশাপেন, পুলিন্দকুলমবতীর্ণবতী সুদতী।
মহেন্দ্র—সেদিকে তাকিয়ে কিছু স্মরণ করে, শোনো মাতলী বহুকাল আগে মাতা লক্ষ্মী(ইন্দিরা) র অভিশাপে এক গন্ধর্বরাজকন্যা পুলিন্দকন্যা রূপে জন্ম গ্রহন করেছে।
মাতলিঃ—(সকরূণম্) অস্যাঃ কেন বা কারণেন কমলামুখাৎ ইদৃশ শাপোপলম্ভঃ।
মাতলি—(দুঃখিত হয়ে) এই কন্যা কি অপরাধ করেছিলেন যে মাতা লক্ষ্মী তাকে অভিশাপ দেন?
মহেন্দ্রঃ—কদাচন গন্ধর্বকলাকৌশলনিশমন পরবশতয়া তবাভিমতং বৃণীষ্বেতি কথিতবত্যাং কমলালয়ায়াং অহোবিলেশ্বরমেব বরং বরয়ামাস গন্ধর্বনন্দিনী।
মহেন্দ্র— এই গন্ধর্বরাজকন্যা একবার লক্ষ্মীদেবীর সামনে নৃত্যপরিবেশণ করছিলেন। লক্ষ্মীদেবী তার অপূর্ব নৃত্যকলা দর্শনে প্রীত হয়ে তাকে বর প্রার্থনা করতে বলেন। কিন্তু সেই কন্যা বর হিসাবে অহোবিলেশ্বরের পাণি প্রার্থনা করেন।
মাতলিঃ—(স্বগতম্) অহো মহান প্রসাদঃ (প্রকাশং) ততঃ কিমাচরিতং দেব্যা
মাতলিঃ—(স্বগতম্) অহো কি মহান কৃপা লক্ষ্মী দেবীর তার প্রতি (প্রকাশ্যে) তখন লক্ষ্মীদেবী কি করলেন?
মহেন্দ্রঃ—মুগ্ধে মদীয়দয়িতং দয়িতং তবাহপি
সংপৃচ্ছ্য সাহসবতী যদবঞ্চয়ো মাম্।
আসাদ্য বঞ্চক কিরাতকুলেহবতারং
কাঙ্ক্ষাং ভজ ত্বমিতি তাং কমলা শশাপ।। ১৯
মহেন্দ্র—দেবী কমলা তাকে শাপে বর দিলেন। তিনি বললেন হে মুগ্ধে! আমার প্রিয় পতি র পাণি প্রার্থনা করে তুমি আমার সাথে ছল করেছ। তাই তুমি পুলিন্দ জাতির কন্যা রূপে জন্মগ্রহন করো। যারা ছল চাতুরী স্বভাবের হয় (জাল পেতে শিকার ধরে)
মাতলিঃ—অহো ন ব্যাভিচরতি কদাপি প্রতিজ্ঞাতং প্রাজ্ঞানাং যদন্যজন্মনি বা ভজত্বিত্যসম্মতমপি পৃচ্ছন্তীং ইমাং সকলাং আকলয়ৎ কমলা। অত্র কিমিতি বিবিক্তে নির্গতং একাকিনীভিরিব বালিকাভিঃ।
মাতলী— মহান ব্যাক্তির আশীর্বাদ কখনো ব্যার্থ হয়না। পুনর্জন্ম লাভ করে এই কন্যা অবশ্য তার ভুল বুঝতে পারবে এই ভেবে দেবী তাকে শাপ দেন। কিন্তু এই কন্যা একাকিনী এই জঙ্গলে দুই সখীর সাথে কেন বিচরণ করছে।
মহেন্দ্রঃ— উত্তরেণ কাসারতীরং উপস্থিতাং বনদেবতামাসাধয়িতুম্।
মহেন্দ্র— এই বনের উত্তরদিকে এক সরোবরতীরে বনদেবী র এক মন্দির আছে। এই কন্যা সেখানে পূজা দিতে যাচ্ছেন।
মাতলিঃ—(পুরো নির্বর্ণ্য সবিস্ময়ম্) অত্র খলু কে পুনঃ ইমে খাড়্গিক, কৌন্তিক, ধানুষ্ক প্রভৃতয়ঃ গৃহীত খগ মৃগাহরণোপায়করণাঃ হরিদন্তরমাক্রমন্ত ইব মৃগয়বস্সসংভ্রমং ভ্রমন্ত্যনতিদূরে পরিতো বনম্।
মাতলী—(সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে)
এখানে এরা কারা হাতে উন্মুক্ত খড়্গ, ধনুক ও বান পূর্ণ তূণীর ,শূল,শেল নিয়ে কাঁধে মৃত পশু পক্ষীর দেহ নিয়ে নানা দিক থেকে গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করছে।
মহেন্দ্রঃ—(সানুস্মরণম্) অবশ্যমত্র খলু নির্গতম্ মৃগয়াবিহরণায় হরিণা। যতঃ পূর্বেদ্যুঃ সায়ন্তনসেবাবসরে শ্যালক সুধাকরপালিতবনপ্রদেশে মৃগয়াবিহারায় দেবঃ প্রাতঃ নির্গমিষ্যতীতি শ্রুতপ্রসঙ্গঃ।
মহেন্দ্র—(কিছু স্মরণ করে) মনে হয় ভগবান নরসিংহ দেব শিকারে বেরিয়েছেন। ও নিকটেই শিবির নির্মাণ করে রয়েছেন। কাল সন্ধ্যাকালে সেবার সময় আমি শুনেছিলাম সেবকদের মুখে যে ভগবান অহোবিলেশ্বর আজ প্রাতঃকালে তার শ্যালক সুধাকরের অধীনস্থ বনে শিকারে বেরোবেন। অবশ্যই এই সেই বন।
মাতলিঃ— অত্র কুত্র বা দেবঃ?
মাতলি— ভগবান অহোবিলেশ্বর কোথায় আছেন?
মহেন্দ্রঃ— অস্য সানুমনঃ প্রাগ্দেশে পর্যন্ত নির্যন্ নির্ঝরসারশীতলে বালাশোকমূলে বিদূষকৈকসহায়ো নিবসতি দেবঃ, যাবন্মৃগয়াবিহারান্নিবর্তিষ্যতে দেবঃ, তাবৎ গরুড়াচলমেব অধিবসাবঃ।
মহেন্দ্র— এখানে পূর্বদিকের পর্বতমালার পাদদেশে যেখানে জলধারা(ঝর্না)আছে, সেই শীতল পরিবেশে ভগবান তার মিত্র ও বিদূষকের সঙ্গে শিবিরে বিশ্রাম করছেন। চলো আমরা গরুড়াচলে গিয়ে তার আগমনের অপেক্ষা করি।
।। ইতি নিষ্ক্রান্তৌ।।
Next page>>>
শ্রীশতকোপ যতীন্দ্র মহাদেশিকান রচিত অহোবিলা নরসিংহ ও চেঞ্চুলক্ষ্মী দেবীর বিবাহ কাহিনী।
মূল সংস্কৃত শ্লোক ও বাংলা অনুবাদ সহ
আবির্ভাব চক্রবর্তী
নরসিংহ দেবের শৃঙ্গার রসসমৃদ্ধ লীলা একমাত্র এই গ্রন্থে পাওয়া যায়। অহোবিলেশ্বর শ্রী উগ্রনরসিংহ দেবের ক্রোধ শান্ত করতে অহোবিলমের চেঞ্চু উপজাতির কন্যা রূপে প্রকট হয়ে লক্ষ্মীদেবী নরসিংহ দেবের ক্রোধ শান্ত করেন। তার প্রণয় সূত্রে আবদ্ধ হয়ে নরসিংহ দেব তাকে বিবাহ করে সুখে সেখানে বাস করতে থাকেন। এখনো ব্রহ্মোৎসবের সময় নরসিংহ দেবের উৎসব বিগ্রহ বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে চেঞ্চু উপজাতির লোকেদের সেবা গ্রহণ করেন। মূল গ্রন্থটি সংস্কৃত ও প্রাকৃত ভাষায় রচিত।
পাত্র পরিচয়
দেবঃ অহোবিলেশ্বর নায়ক
প্রহ্লাদঃ হিরণ্যকশিপু পুত্রঃ অহোবিলেশ্বর ভক্ত
পিতামহঃ চতুর্মুখ ব্রহ্মা
নারদঃ দেবর্ষিঃ
মহেন্দ্রঃ দেবলোকাধিপতি
মাতলিঃ ইন্দ্রস্য রথসারথিঃ
শূরসেনঃ কিরাতরাজ বাসন্তিকায়াঃ পিতা
ব্রাহ্মণঃ ভদ্রাণ্যা প্রেষিতো দূতঃ
শিষ্যঃ উদ্বাহপুরোহিতস্য অন্তেবাসী
বিদূষকঃ কথানায়কস্য দেবস্য সখা
কাদম্বকঃ বৃদ্ধকঞ্চুকী, অন্তঃপুরচরঃ, শূরসেনস্য ভৃত্যঃ
মায়াময়ঃ অহোবিলেশ্বরানুচরঃ, ঐন্দ্রজালিকঃ
সূত্রধারঃ নাটকস্য নিয়োজোকঃ
নটঃ সূত্রধারস্য উপকর্তা
মারিষঃ রঙ্গস্থল নির্বাহকঃ
শুকঃ শুকবেষধারী মায়াময়ঃ
ভ্রমরঃ ষটপদঃ পুষ্পরসাস্বাদনশীলঃ
চারণঃ গূড়চারী
বেত্রিণঃ চারপুরূষাঃ
স্ত্রী পাত্রী
দেবী মহালক্ষ্মী
বাসন্তিকা কথানায়িকা শূরসেনস্য দুহিতা
বিজ্ঞানবতী জ্যোতিষশাস্ত্রনিপুণা
ভ্রমরিকা বাসন্তিকায়াঃ চেটী
চতুরিকা বাসন্তিকায়াঃ চেটী
শাম্বরী= মায়াময়স্য পত্নী
মধুপ্রিয়া= ষটপদস্য সহচরী, ভ্রমরপত্নী, ভ্রমরী
বনদেবতা= অহোবিলবনানাং অধিষ্ঠানদেবতা
ভদ্রাণী= মহালক্ষ্ম্যাঃ অনুচরী
শ্রীমতে শ্রী লক্ষ্মীনৃসিংহ পরব্রহ্মণে নমঃ।
শ্রীমতে রামানুজায় নমঃ।
শ্রীমতে নিগমান্ত মহাদেশিকায় নমঃ।
শ্রীমতে আদিবণশঠকোপযতীন্দ্র মহাদেশীকায় নমঃ।
শ্রীমতে শ্রীবণশঠকোপ শ্রীশঠকোপযতীন্দ্র মহাদেশীকায় নমঃ।।
শ্রীপরাঙ্কুশযোগীন্দ্র চরণাম্বুজশেখরম্। সমস্তশাস্ত্রপারীণম্ শঠকোপমুনিং ভজে।।
নান্দী
ধত্তে হস্তযুগী সুদর্শন দরৌ দেবস্য যস্যেত্যলং
সাসূয়ং নু তদন্যহস্তযুগলী তৎসাম্যলাভাশয়া।
পারাবারসুতা পয়োধরতটী কন্ঠং সমালম্বতে
সঃ শ্রেয়াংসি চতুর্ভূজো রচয়তাং লক্ষ্মীনৃকণ্ঠীরবঃ।।১
চতুর্ভূজ লক্ষ্মীনরসিংহ স্বামী আমাদের আশীর্বাদ করুন, ও যা আমাদের শ্রেয় তা দান করুন। এ অতি আশ্চর্য্য দৃশ্য যে দুই হস্তে পরাক্রমী সুদর্শন চক্র ও পাঞ্চজন্য মহাশঙ্খ ধারনে গর্বোদ্ধত হয়ে উর্দ্ধমুখী। তাই অন্যদুই হস্ত তাদের সৌভাগ্যে ঈর্ষাবশতঃ সমতালাভের জন্য সমুদ্রসুতা মহালক্ষ্মী দেবীর পীন পয়োধর ও কন্ঠালিঙ্গন করতে ভগবান কে সহায়তা করার সৌভাগ্য লাভ করেছে।
অকুতো জনুষাহভাবি ভাবয়া যস্য হেষয়া।
অস্তু মে বস্তু মেধায়ৈ কন্ধরোপরি সৈন্ধবম্।। ২
ভগবান হয়গ্রীব যার বাণী বা হ্রেষাধ্বনি অশ্রুতপূর্ব #
তা আমাদের বুদ্ধি সঞ্চার করুক।
নান্দ্যন্তে সূত্রধারঃ
নান্দীপাঠের পর সূত্রধারের প্রবেশ।
অয়ে মারিষ, ইতস্তাবৎ, আদিষ্টোহস্মি, নিরন্তরনমস্ক্রিয়াহলঙ্কর্মীণসুররীজ মকুটমণিকিরণ কির্মীরিত চরণারবিন্দস্য গরুড়াচলকুটুম্বিনঃ ভগবতঃ শ্রীমদহোবিলেশ্বরস্য বসন্তোৎসব বিলুলোকয়িষয়া সমাগতৈঃ ভাগবতৈঃ।
সূত্রধার:- হে মারীষ তুমি কি এখানে আসবে? ভগবান অহোবিলেশ্বরের ভক্তগন বসন্তোৎসবের জন্য এখানে সমবেত হয়েছেন। তারা #
তুমি তো জানো যে গরুড়াচল এ অধিষ্ঠিত ভগবান অহোবিলেশ্বরের বা গরুড়াচল বাসীগন যার কুটুম্ব সেই অহোবিলেশ্বরের চরণকমল প্রতিনিয়ত দেবরাজ ইন্দ্র দ্বারা পূজিত হয়। ও ইন্দ্রের মুকুটস্থ মণির দ্যুতি তে সেই চরণকমল শোভিত হয়।
মারীষঃ—কথমিব?
মারীষ— কিরূপে? (ভক্তগন কিভাবে আনন্দ লাভ করতে চায়?
সূত্রধার— অয়ে নৃকন্ঠীরব বিহারনিরূরকং প্রাথমিকরসোদ্দীপকং রূপকম্ নব্যমভিনেতব্যং ইতি।
সূত্রধার— তুমি তো জানো তারা ভগবান নরসিংহ দেবের ভক্ত। তারা ভগবান নরসিংহদেবের লীলা সমন্বিত একটি নাটক দর্শন করতে চায়। নরসিংহদেবের শৃঙ্গাররস সমৃদ্ধ একটি নব নাট্য আছে, তারা চায় আমরা সেই নাটক করি।
নটঃ(সবিতর্কম্)— ভাব, মমৈতদ্ আকর্ণ্য চিন্তাড়োলাময়তে চেতঃ। অবশ্যমনতিলঙ্ঘনীয়মাজ্ঞাপনম্ প্রাজ্ঞানাম্। কিন্তু প্রত্যেকশঃ ন বিশোধিতৈব নটনসামগ্রী। ন সন্নিহিতা এব সর্বে পারিপার্শ্বিকাঃ। সমস্তমিদমাস্তাম্ নাম।
কিন্তু বসন্তবনবিহারিণ্যা কয়াচন তরূণ্যা বিবশীকৃতান্তরঙ্গঃ তদুপলম্ভন সম্ভাবনয়া অনাগত এব নটনকর্মানুসারী নট(নর) কেশরী। তদুপরি কিং বিধেয়ং ইতি।
নট—(চিন্তান্বিত ভাবে) হে ভ্রাতঃ তোমার কথা শুনে আমার মন এক চিন্তা ও আশঙ্কায় আলোড়িত হচ্ছে। একদিকে তো আমরা এই প্রাজ্ঞগনের অভিলাষ কে অসম্মান করতে পারিনা। অপরদিকে আমরা এই নব নাট্যের জন্য প্রস্তুত নই ও আমাদের কাছে নাট্যসামগ্রীর ও ব্যাবস্থা নেই। গন ও নিকটে নেই। যা হোক সেসকল সমস্যা তো আমরা ব্যাবস্থা করে নেব। কিন্তু আমার প্রধান দুশ্চিন্তা এই যে আমাদের প্রধান নট, নায়ক নটকেশরী(নৃকেশরী) তিনি এই মূহুর্তে বসন্তবনে বিহার করছেন। তিনি এক তরুণীর প্রেম এ বিবশ অঙ্গ হয়ে তার মন জয়ের জন্য সকল প্রচেষ্টায় ব্যাস্ত রয়েছেন। তাকে নিয়ে এখন কি করি সে বিষয়েই আমি এখন চিন্তান্বিত।
সূত্রধারঃ— অয়ে তৎকিং ন জানাসি? স কিল নিখিলতন্ত্রবেদী, নির্ব্যূট তদীয় পরিণয়ঃ তয়া সহ সমাগত ইতি।
ওঃ তবে তুমি জানোনা। আমাদের নায়ক নিখিল তন্ত্র বিদ্যায় পারঙ্গম। তিনি সেই তরুণীর মন জয় করে তাকে বিবাহ করে অবিলম্বে ফিরছেন।
নটঃ—( সহর্ষম) ন গুণং গণয়তি নৈব হি জাতিং জানাতি নোচিতং মনুতে। প্রায়েণ স্ত্রীপুংসৌ প্রভবতি যোক্তুং মিথোহনুরাগবিধিঃ।। ৩
নটঃ—( আনন্দিত হয়ে) প্রীতির কি অদ্ভূত ক্ষমতা। যে ব্যাক্তির কারো প্রতি প্রীতি থাকে সে ঐ ব্যাক্তির গুণ বংশ, জাতি, জন্মপরিচয়াদি ও জানতে চায়না। কেবল প্রেমে উন্মত্ত হয়ে একে অপরের প্রতি অনুরক্ত থাকে।
সূত্রধারঃ— তৎসত্যমেব, সর্বমপি উপপন্নং গুরুপ্রসাদেন, তৎ আরভ্যতাং তৌর্যত্রিকম্।
সত্য বলেছ। এখন শ্রীগুরু কৃপায় আমাদের সমস্ত প্রস্তুত। তা নয় কি?
নটঃ— (পুনর্বিমৃশ্য)
অনভিনীতচরং হরিবর্ণনাসুরভিলং সুগুণোন্নত রূপকম্।
অবিরলং রসভাবগতিক্রমৈঃ অবসরোচিতমস্তু কুতস্তু নঃ।। ৪
নটঃ—(পুনরায় ) আমায় দেখতে দাও। প্রাজ্ঞ ভক্তগন এমন একটি নাটক দর্শন করতে চায় যা কখনো প্রদর্শিত হয়নি, শ্রীহরির দিব্যচরিত বর্ননায় সুরভিত। সেই গুনের কারনে তা উন্নত। এবং সেই নাটক টি রসাভাস বর্জিত ও ভাব গতি ক্রমে দোষ বর্জিত হবে। আবার বসন্তোৎসবের প্রাসঙ্গিক ও হবে।
সূত্রধারঃ— (স্মরণমভিনীয় সানন্দম) অত্র খলু, পবিত্রতর পরমভাগবতপরিবৃতে শ্রীমদহোবিলপুরে আসীদ্ ব্যাসস্য বীপ্সা শুকমুনিযমকং পুণ্ডরীকদ্বিরুক্তিঃ প্রথিতযতিকুলপ্রাগ্রণী বণশঠারিঃ।
প্রাজ্ঞানাং যস্তু রাজ্ঞাং পদবিনতিকৃতাং অষ্টবর্ণোপদেশাৎ অষ্টৈশ্চর্যাষ্টভোগান্ অদিতসমধিকামষ্টদিকখ্যাততাং চ।। ৫
সূত্রধার— (কিছু চিন্তা করে আনন্দের সাথে বললেন) হ্যাঁ এই অহোবিলপুরে যেখানে পবিত্র হতে পবিত্রতর ভক্তগন তীর্থযাত্রা করতে আসেন, সেখানে একজন মহান সন্ন্যাসী আছেন। যিনি যতিকুলের মধ্যে অগ্রগন্য তাই আদি উপাধি ধারী। যাকে লোকে মনে করে স্বয়ং ব্যাসদেব কিংবা শুকমুনি বুঝি পুনঃপ্রকট হয়েছেন। বা পুন্ডরীকমুনি বা স্বয়ং প্রহ্লাদ। তিনি তার নিকট শরণাগত পন্ডিত রাজা গনকে অষ্টাক্ষর মন্ত্র উপদেশ দ্বারা তাদের আত্মজ্ঞান দান করেছিলেন। সেই অষ্টাক্ষর মন্ত্র প্রভাবে রাজগন অষ্ট ঐশ্বর্য্য লাভ করেন ও তাদের অদ্বিতীয় খ্যাতি অষ্টদিকে ছড়িয়ে পড়ে।
নটঃ(সানুস্মরণবহুমানম্)—আঃ কিং স এব অয়ম? যং কিল নিরঙ্কুশ ব্রহ্মচর্যব্রতং, অনিতরকার্যদ্রমিড়গাথাচার্যকুলধূর্য, অনিবার্যতপশ্চর্যামর্যাদানুমোদিত নৃহর্যক্ষবিতীর্ণ চতুস্সপ্ততিসংখ্যা নিষ্ণাত বৈষ্ণবকুলভদ্রাসনাধিপত্যং পুরাবিদঃ উদাহরন্তি।
প্রণামস্তৎপদাম্ভোজ পরাগ পরমাণবে। যৎসঙ্গমাত্রাদভবন্ন পরাগাঃ পুরাজনাঃ।। ৬
নট— শ্রদ্ধা সহকারে তাকে স্মরণ করে, হ্যাঁ অবশ্যই আপনি কি তার কথা বলছেন, যিনি আকুমার ব্রহ্মচর্য্য ব্রতধারী, দ্রাবিড়বেদ এ পারঙ্গদ আচার্য্য গনের শিরোমণি। নিরবচ্ছিন্ন তপশ্চর্যা দ্বারা যিনি নৃসিংহদেব কে তুষ্ট করেছেন। স্বয়ং ভগবান নৃসিংহদেব যাকে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ৭৪ জন আচার্য্যের মধ্যে প্রশ্নাতীত আধিপত্য প্রদান করেছেন। তার চরণকমল সঙ্গক্রমে তার সময়ের লোক জন সমস্ত অসৎ কে জয় করতে সক্ষম হতো। তার চরণকমল মকরন্দে প্রণাম নিবেদন করি।
সূত্রধারঃ— ততশ্চ
নারায়ণো মুনিবরোহথ পরাঙ্কুশার্যঃ
শ্রীশ্রীনিবাসমুনিরপ্যথ বণশঠারিঃ।
পশ্চাৎপরাঙ্কুশমহামুনিরাবিরাসীৎ
ইত্থং জনা জগতি হন্ত ন জানতে কিম্।। ৭
সূত্রধার— তার পরম্পরায় আমরা বহু আচার্য্য পেয়েছি। শ্রী নারায়ণ মুনি, শ্রী পরাঙ্কুশ মুনি, শ্রী শ্রীনিবাস মুনি, শ্রী শঠকোপ মুনি, পুনরায় পরাঙ্কুশ নামা আচার্য্য, এই রূপ মহান সন্ন্যাসী গন পূর্বে কখনো প্রকট হননি। তোমায় পরাঙ্কুশ মুনি সম্পর্কে কিছু বলি যার জয়গাথা জগতবিখ্যাত।
অস্য পরাঙ্কুশমুনেঃ অখিললোকবিদিতং অপদানং জানীহি।
পূর্ব যস্তু মুকুন্দদেববিভুনা স্কন্ধে ধৃতাদোলিকঃ প্রাপ্য শ্রী পুরুষোত্তমং রচিতবান্ ভক্তপ্রতিষ্ঠাপনম্।
লব্ধা দন্তিতুরঙ্গরত্নশিবিকা চত্রদ্বয়ীচামর
দ্বন্দ্বাদীনি যয়ৌ পুনশ্চ বিজয়ী কর্ণাটসিংহাসনম্।। ৮
তত্র খলু, বিচিত্রতর বাদগোষ্ঠীষু, তেষ্টীয়মানং এনং প্রতি, তদীয়দ্বারি বিদ্বৎকবিমূর্ধন্যেন বাহিনীপতিনা গদিতমিদমেব হি বিরূদপদ্যং যথা প্রথমঃ চরমাশ্রমস্থিতানাং ফণিরাজস্য পরাঙ্কুশো দ্বিতীয়ঃ।
গুরুভার্গবয়োঃ পরং তৃতীয়ঃ শিববিষ্ণুস্বভুবাং তথা তুরীয়ঃ।। ৯
পূর্বে যাকে মহান রাজা মুকুন্দদেব নিজ রাজস্কন্দে পালকি বহনের দ্বারা শ্রীপুরুষোত্তমক্ষেত্রে নিয়ে গেছিলেন। যেখানে তিনি শ্রীবৈষ্ণব সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করেন। ও বহু শিষ্য করেন। তারপর হস্তী আরোহণে বহু অশ্ব, মণি মন্ডিত পালকী সহ শোভাযাত্রা করে ছত্র চামরাদি সেবিত হয়ে তিনি কর্ণাট প্রদেশে রাজগুরু রূপে প্রবেশ করেন। সেখানে অদ্বৈতবাদী ও শৈববাদী বহু পন্ডিতগনের সভায় শাস্ত্রার্থ নির্ণয়ে বাদীশ্রেষ্ঠ গনের থেকে নিরঙ্কুশ বিজয় প্রাপ্ত হন। তিনি যতিধর্ম অনুসরনে সর্বশ্রষ্ঠ।
নাগশ্রেষ্ঠ অনন্ত দেবের পরে শাস্ত্রব্যাখ্যায় তিনি ই অদ্বিতীয়। জ্ঞানে বৃহষ্পতি ও শুক্রাচার্য্য এর পরে যিনি তৃতীয় ব্যাক্তি। দিব্য ঐশ্বর্য্যে যিনি ত্রিদেবের পরে তুরীয় বা চতুর্থ।
তস্মাল্লব্ধা তুরীয়াশ্রমমসমসমুজ্জৃম্ভি শাস্ত্রাম্বুরাশি প্রাদুর্ভূত প্রবোধামৃতকরমুষিতাশেষ মোহান্ধকারঃ।
গাঢ়াধ্বানাবধান # প্রমদবহ হয়গ্রীবদেবপ্রসাদোদঞ্চৎ
সাহিত্যমার্গো জগতি বিজয়তে বণশঠারির্যতীন্দ্রঃ।। ১০
সেই শঠকোপ যতীন্দ্রের প্রধান সন্ন্যাসী শিষ্য শ্রী শঠকোপ মহাদেশিকান। তার সংস্পর্শে যে এসেছে তার জ্ঞান রূপ আলোকরশ্মিতে অজ্ঞানতার অন্ধকার দূরীভূত হয়েছে। চন্দ্রের আকর্ষণে যেমন সমুদ্রে জোয়ার আসে তেমন তার সংস্পর্শে আসা মাত্র সকলের মধ্যে জ্ঞানের উদয় হয়েছে।
ভগবান হয়গ্রীবের একনিষ্ঠ সেবার দ্বারা তিনি উচ্চমানের শাস্ত্রজ্ঞান লাভ করেছেন। ও বহু বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করেছেন।
ভাট্টানামট্টহাসঃ ফণিপতিফণিতের্ভাগধেয়ং কণাদ
ব্যাহার প্রাণনাদী কপিলমথফলং নর্মধর্মাগমানাম্।
যোগীশ্রাবণশঠারির্জগতি বিজয়তে কিঞ্চ বেদান্তযুগ্মা
চার্যো বেদোক্তমার্গস্থিতিজনন গুরুস্সর্বতন্ত্রস্বতন্ত্রঃ।। ১১
শ্রী বণ শঠারী তার সমসাময়িক কালে পারমার্থিক জগতে একচ্ছত্র ব্যাক্তিত্ব ছিলেন।
যিনি ভট্টাদি মীমাংসক গন(প্রভাকর ভট্ট নামা) কে পরাজিত করতে ভগবান অনন্তের যথার্থ উত্তরসূরী। ও নির্ভূল ব্যাকরণ শাস্ত্র প্রচারে যিনি সুদক্ষ। তিনি তর্কশাস্ত্রে অপরিসীম জ্ঞানী ছিলেন। তিনি সত্য# প্রাণস্বরূপ। তিনি সাংখ্যবাদ মত খন্ডনে পারঙ্গদ ও ধর্মশাস্ত্রের আভ্যন্তরীণ অর্থ নির্নয়ে সুপন্ডিত ছিলেন। তিনি উভয়বেদান্তের পরমাচার্য্য। তিনি কলিজীব দের বেদ নির্দেশিত সঠিক মার্গে চলার সহায়ক। আদিবণশঠকোপযতীন্দ্রের মতো তিনিও সর্বশাস্ত্রজ্ঞানের আধার। এবং শ্রীমদবেদান্তদেশিক দের মতো সর্বতন্ত্রস্বতন্ত্র।
নটঃ— স্বস্মিন্ অবস্থিতেহপি পরাঙ্কুশমুনিরেনং অন্তেবাসিনমঙ্গীকৃত্য শশ্চদাত্মনাসমমহোবিলেশ্বর শুশ্রুষায়ৈ কিমযুঙক্ত?
নট— তার মঙ্গলময় আবির্ভাব কালে (আচার্য্য রূপে প্রকট থাকাকালীন) শ্রীপরাঙ্কুশমুনি তার এক শিষ্য কে অহোবিলেশ্বরের সেবা প্রদান করেছিলেন। এ কি সত্য?
সূত্রধারঃ—যদি ন বিদিতমিদমাকর্ণ্যতাম্। কদাচন কমললোচনঃ পরাঙ্কুশমুনেঃ স্বপ্নে, প্রকটিত প্রাদুর্ভাবঃ দেবঃ নৃকন্ঠীরবঃ তদানীং বাণীমিমাং অভাণীৎ।
যদি তুমি না জানো তবে শোনো। কমললোচন ভগবান লক্ষ্মীনৃসিংহ দেব পরাঙ্কুশ মুনির সম্মুখে প্রকট হয়ে তাকে স্বপ্নাদেশ দেন।
নটঃ—কথয় কথয়।
নট—অনুগ্রহ পূর্বক আমায় তা বলুন।
সূত্রধারঃ— অস্তি খলু, তুণ্ডীরমণ্ডলমণ্ডনায়মানঃ বালবনং নাম মহান্ অগ্রহারঃ। তত্র খলু, ভারদ্বাজান্ববায়ে প্রথিততিরুবনন্তার্যবর্যপ্রপৌত্রঃ
পৌত্রঃ শ্রীচারুরাচালয় বিবুধমণেঃ শ্রীনিবাসার্যপুত্রঃ।
প্রাতস্ত্যাংভোজ জাত স্তবক সমধিকস্যন্দিমারন্দধারা
ধারালোদারসূক্তিস্তিরূমলয়েতি রব্যাতিশালী বিভাতি।। ১২
তদেনমাকর্ণ্য মদারাধনায় নিয়ুঙক্ষ্বেতি
সূত্রধর—তুন্ডীরমন্ডলে একটি পবিত্র অগ্রহারম আছে যার নাম বালবনম্ (ইলঙ্গডু)। ভগবান শ্রীনৃসিংহদেব তাকে স্বপ্নে দর্শন দিয়ে বলেন সেইস্থানে ভরদ্বাজ গোত্রীয় একজন প্রখ্যাত পন্ডিত আছেন তিরুবনন্তাচার্য্য নামে। তার প্রপৌত্র তিরুমালাই সুবক্তা রূপে প্রসিদ্ধ, তার মুখকমলনিঃসৃত ভাগবত কথা রূপ মকরন্দ দ্বারা তিনি জগতের অজ্ঞানতা দূর করেন। এই যুবক শ্রীনিবাসাচার্য্যের পুত্র ও সুন্দরাচার্য্যের পৌত্র। এই আশ্চর্য্য যুবক কে আমার মন্দিরে নিয়ে আসো ও সন্ন্যাস দীক্ষা প্রদান করে আমার অর্চনে নিযুক্ত করো।
নটঃ—(সকৌতুকম) ততস্ততঃ
নট— অতি উৎসুক হয়ে কৌতুকের সাথে বললো তারপর?
সূত্রধারঃ—তদনু, সোহপি বিস্ময়মবাপ্য স্বপ্ন বৃত্তী তদাত্ব এব, সত্বরমেনমাকার্য, যতিবর্যপদে পুনরুপদিষ্টমন্ত্রামৃতৈঃ অভিষেচিতবান্।
সূত্রধার—শ্রীপরাঙ্কুশ মহাদেশিকান আশ্চর্যান্বিত হলেন, কিন্তু ভগবানের আদেশ ও ইচ্ছায় পূর্ণ বিশ্বাস রেখে তিনি সেই যুবকের খোঁজে লোক পাঠালেন। ও তাকে আনিয়ে সন্ন্যাস দীক্ষা দিলেন ও প্রয়োজনীয় মন্ত্রাদি উপদেশ করলেন।
নটঃ(সবিতর্কম)—অহো বরমনেনবালভাব দুঃসাধবোধ শমদমাদিনির্মলংকর্ম কথংকারমিত্যঙ্গীকৃতম্।
নট—(আশ্চর্য্য হয়ে) কি করে সেই যুবক মন ও ইন্দ্রিয়ের উপর নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়ে যুবা বয়সে সন্ন্যাস নিলেন?
সূত্রধারঃ— অয়মপি আত্মনঃ স্বপ্নে কৃতাবির্ভাবনৃহরিদেবপ্রসাদবচনমাকর্ণ্য তদা চরিতুং নিরঙ্কুশমনাঃ পরাঙ্কুশমুনেঃ অন্তেবাসিপদময়াসীৎ।
সূত্রধার—সেই যুবক ও ভগবান নৃসিংহদেব দ্বারা আদিষ্ট হয়েছিলেন, পরাঙ্কুশ মুনির শিষ্যত্ব গ্রহন করার জন্য। তাই তিনি অত্যন্ত হৃষ্ট মনেই সন্ন্যাস গ্রহন করেছিলেন।
নটঃ(সাশ্চর্য্য বহুমানম্) অনন্যজনসামান্যম্ অস্য তাবৎ তপোবলম্।
যস্মৈ হৃষ্টমনাঃ শৌরিঃ যতিরাজপদম্ দদৌ।। ১৩
নট—(আশ্চর্য্য হয়ে ও সম্মান প্রদর্শন করে)—এই শঠকোপ মুনি যাকে স্বয়ং শৌরি প্রসন্ন হয়ে সন্ন্যাস দীক্ষা দিয়েছিলেন, তিনি অবশ্যই সাধারন মানুষ ছিলেন না।
সূত্রধারঃ অনেন খলু যুগপদেব শতলেখিনীলেখনানুগুণ কবিতাধুরন্ধরেণ "বাসন্তিকা পরিণয়ম' নাম নাটকং নির্মায় সম্মানপূর্বকং অস্মাকং হস্তে সমর্পিতম্।
সূত্রধার— এবং এই মহর্ষি যিনি শতলেখিনীলেখনানুগ কবিতাধুরন্ধর নামে পরিচিত। তিনি একটি নাটক রচনা করেছেন বাসন্তিকা পরিণয়ম নামে।
নটঃ— অস্য বিশিষ্য, তর্কসরণিকর্কশপ্রবৃত্তিরপি সূক্তিঃকথমিব জগ্রাহ, কবনমধুরিমসামগ্রীম্।
এও কি সম্ভব দার্শনিক শুষ্ক শাস্ত্র সিদ্ধান্তে নিপুন ও নীরস তর্ক এ আগ্রহী তিনি কি জনমনোরঞ্জক নাটক রচনা করতে পারেন?
সূত্রধারঃ—অস্য খলু তর্ককঠিনাপি বাণী ক্রমতে কর্ণামৃতায় কবিতায়াম।
কোকিল কূজিতময়ূজাং কুলিশং নু তদেব সম্যুজাং সরলম্।। ১৪
অথবা কবিতার্কিক কণ্ঠীরব পদাঙ্কিতং বিরুদং কথমিদং জগন্তি ন নিগদন্তি?
বিরহী প্রেমিকের কাছে কোকিলের কুহুরব ও বজ্রের থেকেও কর্কশ লাগে। কিন্তু যদি যুগল একসাথে থাকে তবে সেই কোকিলের কুহু রবই বংশীধ্বনিতে সঙ্গীতের মতো মধুর শোনায়। সত্য এই যে কোকিলের স্বর সর্বদাই মধুর। তেমনই এই যতীন্দ্রের যে বাক্য শাস্ত্রার্থ নির্ণয়ের সময় কর্কশ শোনায়, সেই বাক্যই কর্ণে অমৃত বর্ষণ করে যখন তিনি কাব্য নাটকাদি রচনা করেন। নয়ত কেন তিনি কবিতার্কিকসিংহম্ নামে খ্যাত হবেন।
নটঃ— তৎসুঘটিতমিতি ভণিতব্যম্।
যা তুমি বললে তা সত্য। এই নাটক টি সুন্দর ভাবে রচিত হয়েছে। ও সমস্ত কলাকুশলী গন ও প্রস্তুত।
সূত্রধারঃ—সুঘটিতমিতি কিমুচ্যতে যতঃ বয়ং নটনকৌশলব্যবসিনো গুণগ্রাহিণী সভা কবিরয়ং যতিঃ সরস কাব্যমার্গে সুধীঃ।
কথা নরহরেরিয়ং ঘনবিলাস শৃঙ্গারিণী
প্রকামসুকৃতোদয়াৎ ফলিতমস্মদাকাঙ্খিতম্।। ১৫
হ্যাঁ আমরা নাটকের কলা কুশলী গন নাট্যকলায় সুনিপুন। সেই রূপ রসগ্রাহী দর্শক গন ও উপস্থিত।
মহামুনি কবিবর ও সরস কাব্যমার্গে দক্ষ। কাহিনী ও স্বয়ং ভগবান নৃসিংহদেবের চরিতের বিষয়ে। ও শৃঙ্গার রস ঘন। তাই এই পরম পবিত্র নাটক পরিবেশণ অবশ্যই সার্থক হবে।
সূত্রধারঃ— (নেপথ্যাভিমুখমবলোক্য) আর্য্যে, সমযোচিতা গীতিঃ অঙ্গীক্রিয়তাম্।
সূত্রধার—(নেপথ্যের দিকে তাকিয়ে) হে আর্য্যে! সময়োচিত একটি সঙ্গীত পরিবেশণ করো।
নটীঃ—(নেপথ্যে) পহিঅ মিঅআ বিণোঅণ পরবস মাহব ণিসেবণুকণ্ঠো।
মলআঅল শিহরাদো মন্দ ওদরদি মারুদো এসো।।
(পথিকমৃগয়া বিনোদনপরবশ মাধব মলয়াচল শিখরান্ মন্দমবতরতি মারুত এষঃ)।। ১৬
মলয়াচল পর্বত শিখর হতে মৃদু মন্দ পবন বইছে বিহারকারী পথিকদের বিনোদন পূর্বক বসন্ত বা মাধব মাসের আগমন বার্তা দিচ্ছে।
সূত্রধারঃ— অয়ে সাধু সাধু, ইয়ং হি মৃগয়াবিহার বিনির্গত নৃ
সূত্রধার— সাধু, সাধু। অতি সুন্দর। ভগবান শ্রীনৃসিংহদেব মৃগয়াবিহারে বেরিয়েছেন। ও মহেন্দ্র স্বর্গ থেকে অবতরিত হয়েছেন ভগবানের ইচ্ছা পূরণের জন্য। ও তোমার সঙ্গীত ইন্দ্রের প্রবেশের সঙ্গে যথোপযুক্ত হয়েছে।
।। যবনিকা পতন।।
প্রথম অঙ্ক সমাপ্ত।
দ্বিতীয় অঙ্ক
ততঃ প্রবিশতি রথাধিরূঢ়ো মহেন্দ্রো মাতলিশ্চ।
মাতলী চালিত রথে মহেন্দ্রের প্রবেশ।।
মহেন্দ্রঃ—অয়ে রথস্ত্বর্যতাং ত্বর্যতাম্। গরুড়াচলকুটুম্বিনো ভগবতঃ প্রাতঃরভিবন্দনায়।
মহেন্দ্র—ওহে মাতলী! শীঘ্রগতিতে রথ চালাও। আমায় গরুড়াচলবিহারীর প্রাতঃকালীন অভিবন্দনায় (মঙ্গলারতি তে) যেতে হবে।
মাতলিঃ—তথা করোতি।
মাতলী শীঘ্র গতি তে অশ্বচালন করতে লাগলেন।
মহেন্দ্রঃ—(রথবেগং নিরূপ্য)
প্রবহদমরগঙ্গা পাথসা সাকমেব
প্রপতদিদমধস্তাৎ পারিজাতপ্রসূনম্।
অবতরতি বিচিত্র ব্যোমযানে ধরিত্রীম্
অপি পুনরতি বেগান্ নাকমারোহনীব।। ১৭
মহেন্দ্র—
মনে হয় স্বর্গ হতে দেবগঙ্গা পারিজাত পুষ্প নিয়ে আমাদের সাথে উপস্থিত হয়েছে ভগবানের সেবায়। এবং পৃথিবী ও যেন দ্রুত আমার রথের কাছে চলে আসছে। আমায় স্বাগত জানাতে।
মাতলীঃ—অহো বেগাতিশয়াৎ অতিলঙ্ঘিতচন্দ্রমস্তরণিতারাসরণিঃ অভ্রপদমবতীর্ণো বিমানরাজঃ।
মাতলী— আহা আমাদের রথ তার অত্যন্ত দ্রুত গতিতে নক্ষত্রলোক গ্রহলোক চন্দ্রলোক পার করে চলে এসেছে।
মহেন্দ্রঃ—(অনতিদূরে নির্বর্ণ্য) লক্ষ্যমাণ কুলক্ষ্মাভৃৎ বৃক্ষসিন্ধুবনীবৃতা। সংক্ষিপ্তবিস্তৃতা ভাতি ধাত্রীচিত্রপটা যথা।। ১৮
মহেন্দ্র— চারিপাশে তাকিয়ে
এখান থেকে পৃথিবী কি সুন্দর দেখাচ্ছে। ঘন বন গুলি বৃক্ষ ও নদী তে শোভিত। যেন এক বিরাট বটবৃক্ষ বহু কাল ধরে অনন্ত সময়ের সাক্ষী রূপে দর্শন করছে।
মাতলিঃ—অত্র তাবৎ অতিগহনে বিপিনে সহ সখীভ্যাং অবনিতলমবতীর্ণা দিব্যকন্যেব অনন্যজনসামান্য লাবণ্যধন্যা কন্যামণিঃ ইয়ং কা নাম কাসারোপবন পরিসরমপসরতি
হে প্রভূ দেখুন। কে এই অতুলনীয় সৌন্দর্য্যরত্ন স্বর্গদেবীর ন্যায় দিব্য কন্যা। এই গহন বন সন্নিকটস্থ সরোবর তীরে সখীগন সহ বিহার করছেন।
মহেন্দ্রঃ—(বিলোক্য সানুস্মরঁ বহুমানং) সখে, শ্রুয়তাং পুরা খলু গন্ধর্বরাজনন্দিনীয়ং ইন্দিরাশাপেন, পুলিন্দকুলমবতীর্ণবতী সুদতী।
মহেন্দ্র—সেদিকে তাকিয়ে কিছু স্মরণ করে, শোনো মাতলী বহুকাল আগে মাতা লক্ষ্মী(ইন্দিরা) র অভিশাপে এক গন্ধর্বরাজকন্যা পুলিন্দকন্যা রূপে জন্ম গ্রহন করেছে।
মাতলিঃ—(সকরূণম্) অস্যাঃ কেন বা কারণেন কমলামুখাৎ ইদৃশ শাপোপলম্ভঃ।
মাতলি—(দুঃখিত হয়ে) এই কন্যা কি অপরাধ করেছিলেন যে মাতা লক্ষ্মী তাকে অভিশাপ দেন?
মহেন্দ্রঃ—কদাচন গন্ধর্বকলাকৌশলনিশমন পরবশতয়া তবাভিমতং বৃণীষ্বেতি কথিতবত্যাং কমলালয়ায়াং অহোবিলেশ্বরমেব বরং বরয়ামাস গন্ধর্বনন্দিনী।
মহেন্দ্র— এই গন্ধর্বরাজকন্যা একবার লক্ষ্মীদেবীর সামনে নৃত্যপরিবেশণ করছিলেন। লক্ষ্মীদেবী তার অপূর্ব নৃত্যকলা দর্শনে প্রীত হয়ে তাকে বর প্রার্থনা করতে বলেন। কিন্তু সেই কন্যা বর হিসাবে অহোবিলেশ্বরের পাণি প্রার্থনা করেন।
মাতলিঃ—(স্বগতম্) অহো মহান প্রসাদঃ (প্রকাশং) ততঃ কিমাচরিতং দেব্যা
মাতলিঃ—(স্বগতম্) অহো কি মহান কৃপা লক্ষ্মী দেবীর তার প্রতি (প্রকাশ্যে) তখন লক্ষ্মীদেবী কি করলেন?
মহেন্দ্রঃ—মুগ্ধে মদীয়দয়িতং দয়িতং তবাহপি
সংপৃচ্ছ্য সাহসবতী যদবঞ্চয়ো মাম্।
আসাদ্য বঞ্চক কিরাতকুলেহবতারং
কাঙ্ক্ষাং ভজ ত্বমিতি তাং কমলা শশাপ।। ১৯
মহেন্দ্র—দেবী কমলা তাকে শাপে বর দিলেন। তিনি বললেন হে মুগ্ধে! আমার প্রিয় পতি র পাণি প্রার্থনা করে তুমি আমার সাথে ছল করেছ। তাই তুমি পুলিন্দ জাতির কন্যা রূপে জন্মগ্রহন করো। যারা ছল চাতুরী স্বভাবের হয় (জাল পেতে শিকার ধরে)
মাতলিঃ—অহো ন ব্যাভিচরতি কদাপি প্রতিজ্ঞাতং প্রাজ্ঞানাং যদন্যজন্মনি বা ভজত্বিত্যসম্মতমপি পৃচ্ছন্তীং ইমাং সকলাং আকলয়ৎ কমলা। অত্র কিমিতি বিবিক্তে নির্গতং একাকিনীভিরিব বালিকাভিঃ।
মাতলী— মহান ব্যাক্তির আশীর্বাদ কখনো ব্যার্থ হয়না। পুনর্জন্ম লাভ করে এই কন্যা অবশ্য তার ভুল বুঝতে পারবে এই ভেবে দেবী তাকে শাপ দেন। কিন্তু এই কন্যা একাকিনী এই জঙ্গলে দুই সখীর সাথে কেন বিচরণ করছে।
মহেন্দ্রঃ— উত্তরেণ কাসারতীরং উপস্থিতাং বনদেবতামাসাধয়িতুম্।
মহেন্দ্র— এই বনের উত্তরদিকে এক সরোবরতীরে বনদেবী র এক মন্দির আছে। এই কন্যা সেখানে পূজা দিতে যাচ্ছেন।
মাতলিঃ—(পুরো নির্বর্ণ্য সবিস্ময়ম্) অত্র খলু কে পুনঃ ইমে খাড়্গিক, কৌন্তিক, ধানুষ্ক প্রভৃতয়ঃ গৃহীত খগ মৃগাহরণোপায়করণাঃ হরিদন্তরমাক্রমন্ত ইব মৃগয়বস্সসংভ্রমং ভ্রমন্ত্যনতিদূরে পরিতো বনম্।
মাতলী—(সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে)
এখানে এরা কারা হাতে উন্মুক্ত খড়্গ, ধনুক ও বান পূর্ণ তূণীর ,শূল,শেল নিয়ে কাঁধে মৃত পশু পক্ষীর দেহ নিয়ে নানা দিক থেকে গভীর জঙ্গলে প্রবেশ করছে।
মহেন্দ্রঃ—(সানুস্মরণম্) অবশ্যমত্র খলু নির্গতম্ মৃগয়াবিহরণায় হরিণা। যতঃ পূর্বেদ্যুঃ সায়ন্তনসেবাবসরে শ্যালক সুধাকরপালিতবনপ্রদেশে মৃগয়াবিহারায় দেবঃ প্রাতঃ নির্গমিষ্যতীতি শ্রুতপ্রসঙ্গঃ।
মহেন্দ্র—(কিছু স্মরণ করে) মনে হয় ভগবান নরসিংহ দেব শিকারে বেরিয়েছেন। ও নিকটেই শিবির নির্মাণ করে রয়েছেন। কাল সন্ধ্যাকালে সেবার সময় আমি শুনেছিলাম সেবকদের মুখে যে ভগবান অহোবিলেশ্বর আজ প্রাতঃকালে তার শ্যালক সুধাকরের অধীনস্থ বনে শিকারে বেরোবেন। অবশ্যই এই সেই বন।
মাতলিঃ— অত্র কুত্র বা দেবঃ?
মাতলি— ভগবান অহোবিলেশ্বর কোথায় আছেন?
মহেন্দ্রঃ— অস্য সানুমনঃ প্রাগ্দেশে পর্যন্ত নির্যন্ নির্ঝরসারশীতলে বালাশোকমূলে বিদূষকৈকসহায়ো নিবসতি দেবঃ, যাবন্মৃগয়াবিহারান্নিবর্তিষ্যতে দেবঃ, তাবৎ গরুড়াচলমেব অধিবসাবঃ।
মহেন্দ্র— এখানে পূর্বদিকের পর্বতমালার পাদদেশে যেখানে জলধারা(ঝর্না)আছে, সেই শীতল পরিবেশে ভগবান তার মিত্র ও বিদূষকের সঙ্গে শিবিরে বিশ্রাম করছেন। চলো আমরা গরুড়াচলে গিয়ে তার আগমনের অপেক্ষা করি।
।। ইতি নিষ্ক্রান্তৌ।।
Next page>>>