বিদূষকঃ—(উপসৃত্য দেবীং প্রণম্য)
ভগবন্ অত্রভবতঃ উপরি কুপিতায়াঃ ন গতির্দেব্যাঃ। কেবলং সকলাগম রহস্য বিজ্ঞাননিপুণায়াঃ আত্মনো মাঙ্গল্য সূত্রস্য স্থিরস্য লাভার্থ যুষ্মাকং অভিমত কন্যকাদানব্রত বিধিৎসয়া ইমাং বাসন্তিকাং আকারয়িতুং উদ্যোগঃ। অস্তি খল্লেবং সুমঙ্গলীব্রতকল্পঃ।
বিদূষক—(এগিয়ে এসে দেবী কে প্রণাম করে ভগবান কে বললেন)
ভগবান! দেবী র আপনার প্রতি কোনো ক্রোধ নেই। তিনি সকল আগমশাস্ত্রের বিজ্ঞান রহস্য জানেন। তিনি নিজ অভিলাষ পূরণ করার জন্য আপনাকে
আপনার পছন্দমত কন্যা রত্ন দান করতে উদ্যোগ করেছেন। যাতে তার মঙ্গলসূত্র ঠিক থাকে।
(সংস্কৃতমাশ্রিত্য)
মঙ্গল্যসূত্রস্থাস্নুত্বং কাঙ্ক্ষমাণাঃ পতিব্রতাঃ।
কামপ্যভিমতাং ভর্ত্রে কন্যাং দধুরিতি স্মৃতিঃ।। ১০
অতিবহুলং লোকে অস্য আচরণমপি প্রতিবর্ষমেতৎ ব্রতং কুর্বন্তি সিন্ধুরাজং ক্ষুদ্রনদীকুলং প্রাপয্য ভাগীরথীপ্রমুখা মহানদ্যঃ।
(সংস্কৃতে বললেন)
যে পতিব্রতা নারী তার মঙ্গলসূত্রের স্থিরতা চায়, শাস্ত্র বলে তার পতির জন্য কুমারী কন্যা সন্ধান করে বিবাহ দিতে।
এই প্রক্রিয়া পৃথিবীতে বহুল প্রচলিত, ভাগীরথির মতো বড়নদী যদিও সমুদ্রের অঙ্কশায়িনী হন তাও ক্ষুদ্রনদী গুলিও তার ক্রোড়ে অবস্থান করেন।
ভদ্রাণী—অপবার্য স্মরণং অভিনীয় অত্থি খু বদম্ এদং ইমিনা বব এসেণ পুরেহি সামিণো মণোরহং।
ভদ্রাণী— (কিছু স্মরণ করে) মনে হয় সেখানে কোনো ব্রত আছে। তাই নয় কি? হে মহাদেবী যান ও স্বামীর অভিলাষ পূরণ করতে তাকে সহায়তা করুন।
দেবী— তহ তথা ইতি মনসি কৃত্বা দেবং প্রতি
আর্যপুত্র প্রসীদ। কথং অস্থানে ময়ি কোপারোপঃ? অত্রভবতঃ প্রসাদনিমিত্তং গালবোক্তং ব্রতমাচরিতুং এষ উদ্যোগঃ।
দেবী—(মনে মনে সম্মত হয়ে দেব কে উদ্দেশ্য করে) আর্যপুত্র! প্রসন্ন হোন। আপনি কি করে আমার প্রতি ক্রুদ্ধ হতে পারেন। গালব যেমন বলেছে সেইরূপ আপনার সন্তুষ্টির জন্য ব্রতের আয়োজন করা হয়েছে।
বাসন্তিকা—(সহর্ষাতিশয়ং স্বগতম্)
ফলিতং ইদানীং চিন্তালতায়াঃ।
(দেবঃ সাঙ্গীকারব্রীদং অধোমুখস্তিষ্টতি।)
বাসন্তিকা—(অতিশয় হর্ষিত হয়ে স্বগত) আমার চিন্তালতা ফলদায়ী হতে চলেছে।
(দেব লজ্জিত হয়ে অঙ্গীকার পূর্বক মাথা নত করে রইলেন)
(নেপথ্যে)
দূরে ধাবয় ধাবয়াঞ্জনগজং মত্তোহয়মৈরাবতো
মুক্তোহয়ং কপিলাপতিনির্গলিতো মা পুষ্পদন্তোহন্তিকে।
ক্রুদ্ধো বামন এষ মা কুরু পুরস্তে সার্বভৌমং গজং
কামান্ধঃ কুমুদো নিবারয় গজং তে সুপ্রতীকং রয়াৎ।।১১
(নেপথ্যে)
অঞ্জন নামক গজরাজ কে যেতে দাও। ঐরাবত মত্ত হয়ে উঠেছে। কপিলাপতি মুক্ত হয়েছে। পুষ্পদন্তের কাছে যেওনা। এই বামন কুপিত হয়ে রয়েছে। সার্বভৌমের কাছে যেওনা। কুমুদ হস্তী কামান্ধ হয়ে রয়েছে। সুপ্রতীক নামক হস্তীর পথ ছেড়ে দাও।
(এই নামগুলি অষ্টদিকপালের বাহন অষ্ট দিগগজ। তারা আট দিকের রক্ষক। তাদের প্রভূ দিকপাল গন দেব অহোবিলেশ কে দর্শন করতে ও বাসন্তিকাকে আশীর্বাদ করতে এসেছে। হস্তীপৃষ্ঠ থেকে নামার পর এই দিগগজ গন মুক্ত হয়ে নানা দিকে ছুটেছে।
দেবঃ—কথং আগতা এব দিক্পতয়ঃ। যৎ ইদানীং পরস্পরগজাভিগমন পরিহরণ বিহিত কোলাহলাঃ। শ্রুয়ন্তে দিব্যাঃ হস্তিপকাঃ।
দেব—দিকপতি গন হয়ত এসে পৌছালেন। তাদের মাহুত গন তাদের দায়িত্ব শেষ করে হস্তীপৃষ্ঠ থেকে নামার সময় এই কোলাহল ধ্বনি করছে।
বিদূষকঃ—অম্ব এতেষু যথা সমুচিতালাপ ইতি ভবিষ্যতি কালাতিপাতঃ। তস্মাৎ ইদানীং এব আরভস্ব ব্রতম্।
বিদূষক— হে মাতঃ এই দিকপাল গন এক এক করে দেবের সাথে দর্শন করবেন। এতে অনেক সময় লাগবে। আপনি এই সময় ব্রত শুরু করেন না কেন?
দেবী—তথা ইতি নিষ্ক্রান্তা।
দেবী—তাই হোক বলে চলে গেলেন।
বেত্রিণঃ—প্রবিষ্য স্বস্তি সমস্ত ভুবনশরণ্য! হিরণ্যকশিপু বিদারণ কারণপুরুষ! প্রহ্লাদ বরদ দেবাধিদেব! দৃষ্তিরিতো দীয়তাম্।
ইন্দিরা মন্দিরায়মাণ বাহান্তরাল নিরন্তরাল মন্তরান্তর সন্দানিত সন্তান কুসুমবন্ধুর হরিচন্দন সরোপহারধর করারবিন্দঃ পুরন্দরোষ্যং, ভক্তজন চিত্তানুবর্তন সানুকংপ হস্ততল নিস্তৃত দীপিকা রাত্রিকাপাত্রৌ বীতিহোত্রোহয়ং, উদ্দণ্ডাসুর বেতণ্ডকণ্ঠীরব নরকণ্ঠীরব ভবদুপকণ্ঠং যুগপৎ অভিবন্দনাপতদমর মণ্ডলনিবারণ প্রচণ্ডতরো দণ্ডধরোহয়ং মাতঙ্গপুঙ্গব বিপ্রদ্ভঙ্গ সাধক ভবদীয় মঙ্গল সদনাভিজিগমিষুঃ মহাভূত বেতালজাত নিষেধাবধান সুমতিঃ নিঋর্তিরয়ং, প্রকৃতিবিকৃতি বাহ্য প্রভাব প্রতিবিশিখমতিশিশির সলিলাসেচনোপচার নিপুণো বরূণোহয়ং, জঠর পিঠরস্থিত জগৎত্রয় ভরণ জাগরূক প্রতিচত্বর সত্বর বিসৃত্বর গন্ধকুসুম সন্দোহ বিকিরণ প্রবীণো জগৎপ্রাণোহয়ং, নন্দগৃহাভিনীত নবনীতচৌর্যনাটক নিকটানীত হাটক কোটীরহার কেয়ূরাদি মঙ্গলালঙ্কার নিকরঃ কুবেরোহয়ং গরুড়গিরি কূটকোটি প্রকটিত বিহার! মকুটশশিকলাকিরণকলিকা কলিত সুধালেপ ধবলমণ্ডপপ্রদেশঃ ইশানোহয়ং, দুগ্ধজলধি মধ্যকলিত যোগনিদ্রাবিশেষ! তত্তদুচিতোপহারহস্তাঃ সিদ্ধসাধ্য বিদ্যাধর কিন্নর কিংপুরুষ গন্ধর্বাঃ সর্ব ইমে মহোৎসব দিদৃক্ষয়া সমক্ষং পরাপতন্তি।
(দেবঃ আমন্ত্রয় যথোচিতং আসনেষু সর্বান্ উপবেশয়তি)
বেত্রিগন—স্বস্তিবাচন করে। হে দেব আপনি সমস্ত জগতের শরণ্য। হে দেব আপনি সমস্ত জগতের কারনপুরুষ। হিরণ্যকশিপু র উদর বিদারন কারী। ও প্রহ্লাদ কে বরদানকারী। সকল দেব গনের অধিপতি। কৃপা করে এদিকে আপনার করুণা দৃষ্টি বর্ষন করুন। এদিকে পুরন্দর ইন্দ্র আপনার বক্ষস্থল কে সজ্জিত করতে পারিজাত, মন্দার, কল্পক, সন্তান পুষ্প দ্বারা গাঁথা মালা নিয়ে উপস্থিত, যে বক্ষস্থল মাতা ইন্দিরার বাসস্থল, ও হরিচন্দন লিপ্ত।
এইখানে করূণাময় ও প্রভাময় অগ্নিদেব ও উপস্থিত। যিনি ভক্ত দের দ্বারা নিবেদিত আহুতি তার শিখাময় হস্ত দ্বারা প্রেরণ করেন।
হে নৃসিংহদেব আপনার গর্জনে উদ্দন্ড অসুরেরা হরিণীর মতো কাঁপতে শুরু করে দেয়। আপনার সামনে দন্ডধর যম উপস্থিত হয়েছেন। যিনি দন্ডধারন করে আপনার দর্শনে উপস্থিত দেবগন কে নিয়ন্ত্রণে ব্যাস্ত।
দেব নিঋৃতি যিনি আপনার মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে প্রবেশ করে বিঘ্ন সৃষ্টি কারী ভূত বেতাল গন কে বিতারিত করছেন।
বরূণদেব ও এখানে আছেন যার প্রকৃতি ও বিকৃতি সম্পর্কে সমস্ত জ্ঞান আছে। শীতল শিশির জল সিঞ্চনে আপনার সেবায় সমাগত।
জগতের প্রাণবায়ু রূপে যিনি ত্রিজগতে সমস্ত গর্ভজাত জীব গনকে জীবিত রাখেন ও পুষ্পের সুগন্ধ বহন করে আনেন সেই বায়ুদেব আপনার দর্শনে উপস্থিত।
হে ভগবান! আপনি নন্দ মহারাজের ঘরে যে মাখন চুরি লীলাদি করেন তা এই গরুড়াদ্রী পর্বতের সকল অধিবাসী গন আলোচনা করেন, এখানে আপনার দর্শনে উপস্থিত বিবিধ রত্ন হার মুকুট ও কেয়ূর কুন্ডল রত্নালঙ্কার নিয়ে এসেছেন।
হে দেব পরমেশ্বর ঈশান আপনার দর্শনে উপস্থিত যার তুষার ধবল ধাম কৈলাস তার মস্তকস্থিত চন্দ্রকিরণে উদ্ভাসিত।
হে ভগবান আপনি ক্ষীরসাগরের মধ্যে শয়ন করে যোগনিদ্রায় লীন হয়ে থাকেন। সমস্ত সিদ্ধ, সাধ্য, বিদ্যাধর, কিন্নর,গন্ধর্ব ও কিম্পুরুষ গন আপনার বিবাহ উৎসবে সামিল হতে ছুটে এসেছেন।
(দেব অহোবিলেশ সমস্ত অতিথিদের যথাযোগ্য সম্ভাষনে স্বাগত জানালেন, ও আসন প্রদান করলেন।)
বিদূষকঃ—কথং অদ্যাপি চিরায়তে দেবো পিতামহঃ। অত্র তেনৈব পুরোহিতেন ভবিতব্যম্।
ততঃ প্রবিশতি গগনবর্ত্মনা পিতামহঃ শিষ্যশ্চ।
বিদূষক—হে দেব পিতামহ ব্রহ্মা এখনো এত বিলম্ব করছেন কেন? তাকেই তো এই বিবাহের পৌরোহিত্য করতে হবে।
(এমন সময় নিজ শিষ্য সহ পিতামহ ব্রহ্মার আগমন)
পিতামহঃ—(নির্বর্ণ্য) কথং আরব্ধ এব মহোৎসবঃ!
সর্বে স্বস্তি জপন্তি যোগি পুরুষাঃ গায়ন্ত্যমী শোভনং
গন্ধর্বাঃ সরসং নয়ন্তি পুরতঃ স্বারাজ্যবারাঙ্গনাঃ।
দিব্যা বন্দিজনাঃ স্তুবন্তি বিরূদং দীপোৎসবং পঙ্ক্তিশঃ
সূর্যা দ্বাদশা সাধয়ন্তি সুধয়া চন্দ্রো ভুবং সিঞ্চতি।। ১২
পিতামহ—(চারপাশে দেখে) মহোৎসবের আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। সকলে স্বস্তিবাচন করছে। যোগি পুরুষ গন মঙ্গলগান করছে। আমাদের সম্মুখে গন্ধর্বগন কিন্নরীদের সাথে সঙ্গীত করছে, বন্দিগন স্তুতি বন্দনা গান করছে। দ্বাদশ আদিত্য গন দীপমালার মতো চারিদিক আলোকজ্জ্বল করে তুলছে। চন্দ্র অমৃত জ্যোতি সিঞ্চনে ভুবন ভরিয়ে দিচ্ছে।
শিষ্যঃ—(কক্ষ্যান্তরে নির্দিশন্)
কা ইমাঃ সংঘীভূতাঃ স্ত্রিয়ঃ?
শিষ্যগন—(অন্যদিকে তাকিয়ে) এদিকে এই স্ত্রীলোকেরা কারা?
পিতামহঃ—(নির্বর্ণ্য) আঃ প্রসাধয়ন্তি শবরীং অমরীজনাঃ আক্ষিপ্য বর্হ অবতংসপদে প্রসূনং
গুঞ্জাবলীং সমপনীয় কুচেহপি হারং।
প্রাবালমংশুকমপোহ্য কটৌদুকূলং
সন্ধার্যতে শবরিকা সুরসুন্দরীভিঃ।। ১৩
পিতামহ—(সেদিকে তাকিয়ে) দিব্য স্ত্রীগন শবরকন্যাদের সজ্জিত করছে। প্রথমে সুরসুন্দরীগন শবরকুমারী দের মাথায় ময়ূর পালক খুলে সুন্দর পুষ্পমালা দিয়ে শৃঙ্গার করেছে। তাদের বক্ষস্থলে গুঞ্জামালা খুলে রত্নমন্ডিত স্বর্ণালঙ্কার পরিয়েছে। তাদের বল্কল বেশ ছাড়িয়ে দূকুলবস্ত্র পরিয়েছে।
দেবঃ—(উর্ধ্বমবলোক্য) আঃ কথমিতোহভিমুখং অবতরতি পিতামহঃ!
(ইত্যভ্যুপগম্য সহস্তাবলম্বং নিজাসনার্ধে পিতামহমুপবেশয়তি।)
দেব—(উর্দ্ধলোকে তাকিয়ে) বাঃ পিতামহ ব্রহ্মাও তার বিমান হতে অবতরণ করছেন।
(এই বলে নিজ হাত এগিয়ে দিয়ে পিতামহ ব্রহ্মাকে নিজের পাশে বসালেন।)
পিতামহঃ—ভো ভো পরিচারিকাঃ অতিক্রামতি কালো লঘ্নস্য। আকার্যতাং বাসন্তিকা।
পিতামহ—হে পরিচারিকা গন, লগ্ন অতিক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। বাসন্তিকাকে শীঘ্র নিয়ে আসো।
ভদ্রাণী—(প্রবিশ্য, বাসন্তিকাং পুরস্কৃত্য)
পরিসমাপিতব্রতা দেবী পরিগৃহাণেতি ইমাং তব সমীপং প্রাপয়তি।
ভদ্রাণী—(বাসন্তিকাকে নিয়ে ভদ্রাণীর প্রবেশ।) হে দেব! দেবী মহালক্ষ্মী তার ব্রত সম্পন্ন করেছেন। ও এই কন্যাকে আপনার কাছে প্রেরণ করেছেন।
(ইতি দত্বা নিষ্ক্রান্তা।)
(এই বলে বাসন্তিকা কে রেখে ভদ্রাণী র প্রস্থান)
বাসন্তিকা—(পুরো নির্বর্ণ্য, অপবার্য)
সখি চতুরিকে, কঃ এষ একোহপি সমসময়মেব সর্বতোমুখো বহুজনৈঃ ব্যাহরতি?
বাসন্তিকা—(সামনে দেখে, গোপনে সখীদের কানে বললেন) হে চতুরিকে এই ঋষি কে যে একই সাথে চারদিকে তাকিয়ে সবদিকের লোকদের সাথে কথা বলছে।
চতুরিকা—এষ স এব পিতামহঃ, যং চতুর্মুখং জনাঃ কথয়ন্তি।
চতুরিকা—ইনি হলেন পিতামহ। যাকে লোকে চতুর্মুখ বলে।
(বাসন্তিকা সপ্রশ্রয়ং নিভৃতং প্রণমতি)
(বাসন্তিকা সশ্রদ্ধায় প্রণাম নিবেদন করলেন।)
পিতামহঃ—সমাগতৈব কল্যাণিনী বৎসা। কুতঃ শবররাজঃ?
পিতামহ—কল্যাণী বাসন্তিকা উপস্থিত। তার পিতা শবররাজ কোথায়?
শূরসেনঃ—(প্রবিশ্য, প্রণম্য, দূরে তিষেঠন্। অঙ্গমঙ্গমবলোক্য, সানুস্মরণকৌতুকং স্বগতম্)
অহমিদানীং ভগবদনুগ্রহেণ ইন্দ্রশাপাৎ মুক্তোহস্মি।
(প্রকাশম্, সাঞ্জলিবদ্ধং হরিম্ প্রতি)
সন্দর্শনেন ভবতো শাপান্মুক্তোহস্ম্যহং হরে।
দিব্যত্বমেব মে কন্যাশুল্কং তৎ গৃহ্যতামিয়ম্।। ১৪
শূরসেন—(প্রবেশ করে প্রণাম জানালেন ও দূরে দাঁড়িয়ে নিজের প্রতি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দেখতে লাগলেন। ও অবাক হয়ে ভাবতে লাগলেন।)
শূরসেন—(স্বগত) মনে হয় ভগবান এর কৃপায় আমি ইন্দ্রের শাপ হতে মুক্ত হলাম।
(প্রকাশ্যে) হস্ত অঞ্জলীবদ্ধ করে শ্রীহরির সামনে দাঁড়ালেন।
হে ভগবান হরি আপনাকে দর্শন করে ইন্দ্রের অভিশাপ থেকে মুক্ত হলাম। আমার দিব্যতা পুনঃপ্রাপ্তির জন্য এই কন্যাশুল্ক আপনি গ্রহন করুন।
পিতামহঃ—অনুমতং দিব্যত্বমেয়ুষা শূরসেনেন।
(ইত্যুক্ত্বা দেবস্য হস্তং গৃহীত্বা বাসন্তিকায়াঃ করেণ সংযোজ্য)
উর্জিতং প্রেমসৌহার্দ উভয়োর্যুবয়োরপি।
অনন্যজনসামান্যং অন্যোন্যমভিবর্ধতাম্।। ১৫
পিতামহ—শূরসেনের দিব্যতাপ্রাপ্তি এই মিলনের সম্মতিদায়ক। #
তিনি বাসন্তিকার হাত নিয়ে দেব অহোবিলেশের হস্তে সমর্পন করলেন।
তোমাদের উভয়ের প্রতি উভয়েই প্রেম প্রকাশিত করেছো। এই অনন্য জন সামান্য প্রেম অনোন্য ভাবে বর্ধিত হোক।
চতুরিকা—সখি বাসন্তিকে কল্যাণিনী ত্বং পিতরং বন্দস্ব।
বাসন্তিকা সলজ্জং প্রণমতি।
চতুরিকা—সখি বাসন্তিকে! কল্যাণী তোমার পিতাকে প্রণাম করো। বাসন্তিকা সলজ্জ ভাবে পিতা কে প্রণাম করলেন।
শূরসেনঃ—অলংকৃতং ত্বয়া মম কুলং কন্যারত্নেন যৎ অনুগৃহীতাসি ভগবতা পীতাম্বরেণ কদাচিদপি মাং ন দুঃখাপয়তি তে পতিগৃহাধিবাসঃ।
প্রদিষ্টমনুনৈবেতৎ ভর্তৃশুশ্রূষণে রতা।
ভব ত্বং ন পিতা নৈব জননী চ জগদ্গুরোঃ।। ১৬
কিং চ ইদমেব পুনরপি আবেদয়ামি সর্বদা চ ভর্তুরনুকঘলা ভব।
আকাশে দুন্দুভিধ্বনিঃ পুষ্পবৃষ্টিশ্চ।
শূরসেন—হে কন্যা তুমি রত্ন তুল্য আমাদের শবর কুল কে অলঙ্কৃত করেছো। এখন পীতাম্বর ভগবান অহোবিলেশ তোমায় গ্রহন করেছেন, তাই তোমার পতিগৃহ গমনের জন্য আমার দুঃখিত হওয়া উচিত নয়।
জগতগুরু ভগবানের কোনো মাতা পিতা নেই তাই তোমার ভাগ্যের কাছে তুমি ঋনী যে তোমায় সম্পূর্ণ ভাবে কেবলমাত্র তোমার স্বামী র সেবাতেই নিবিষ্ট থাকতে পারবে।
আবার আমি একই উপদেশ করছি সর্বদা তোমার পতির অনুকূল ও যোগ্য হয়ে ওঠো।
আকাশে দুন্দুভিধ্বনি ও পুষ্পবৃষ্টি হলো।
পিতামহঃ—দেব কিং ন ভূয়ঃ প্রিয়মুপহরামি
এতস্যাস্তপসঃ ফলং নরহরে লব্ধস্ত্বমেব স্বয়ং
লব্ধেয়ং দয়িতা ললাম ভবতা লক্ষ্মীপ্রসাদোদয়াৎ।
ব্যাধত্বং ব্যাপনীয় তে করূণয়া বিদ্যোততেহয়ং সুরঃ
সাধ্যং কর্ম ন কিঞ্চিদপ্যভিমতং সিদ্ধং সমস্তং চ তে।। ১৭
পিতামহ—হে দেব! আপনার আর কোন সেবা কার্য্যে আমায় নিয়োজিত করতে চান? হে ভগবান নরহরি! আপনি স্বয়ং এই কন্যার তপস্যার ফল রূপে পরিনত হয়েছেন। মাতা লক্ষ্মীর কৃপায় আপনি এই কন্যা কে পত্নীরূপে লাভ করেছেন। আপনার কৃপায় এই গন্ধর্বকন্যা শবরত্ব ত্যাগ করে পুনরায় তার দিব্যতা ফিরে পেয়েছে। আপনার কোন ইচ্ছাই বা অপূর্ণ থাকতে পারে? সকল ইচ্ছাই সিদ্ধ হয়েছে।
তথাপি ইদমস্তু ভরতবাক্যম্।
অর্থানন্বহমার্জয়ন্তু বিধিবৎ ধর্মেণ সাকং নৃপাঃ
ধাত্রী সস্য সমৃদ্ধিমেতু সময়ে ধারালবর্ষৈস্সমম্।
বিদ্যাভিস্সহ সাধয়ন্তু বিনয়ং বিপ্রা বিবেকাধিকাঃ
বাগ্দেবী সুদৃশাং গৃহেষু সততং বর্তেত লক্ষ্ম্যা সমম্।। ১৮
তাই মহাভারতের বাক্যে আশীর্বাদ করি।
নৃপ গন প্রত্যহ শাস্ত্র ও ধর্ম অনুসারে ধন সম্পদ অর্জন করুন। পৃথিবী শস্যশালিনী হোক। তার জন্য সঠিক ঋতুতে বৃষ্টির প্রাচুর্য্য হোক। ব্রাহ্মণ গন বিবেকসম্পন্ন হোন। বিদ্যা সহ বিনয় লাভ করুন।
পূণ্যবান ব্যাক্তির গৃহে লক্ষ্মী সহ বাগদেবী সর্বদা বিরাজ করুন।
ইতি নিষ্ক্রান্তাঃ সর্বে।।
।। সকলের নিষ্ক্রমন।।
।। পঞ্চম অঙ্ক সমাপ্ত।।
শতলেখিনীলেখনানুগুণ কবিতা ধুরন্ধর, কবি তার্কিক কন্ঠীরব শ্রীবনশঠকোপ শ্রী শঠকোপ যতীন্দ্র মহাদেশিকান রচিত বাসন্তিকা পরিণয়ম সম্পূর্ণ।।
ভগবন্ অত্রভবতঃ উপরি কুপিতায়াঃ ন গতির্দেব্যাঃ। কেবলং সকলাগম রহস্য বিজ্ঞাননিপুণায়াঃ আত্মনো মাঙ্গল্য সূত্রস্য স্থিরস্য লাভার্থ যুষ্মাকং অভিমত কন্যকাদানব্রত বিধিৎসয়া ইমাং বাসন্তিকাং আকারয়িতুং উদ্যোগঃ। অস্তি খল্লেবং সুমঙ্গলীব্রতকল্পঃ।
বিদূষক—(এগিয়ে এসে দেবী কে প্রণাম করে ভগবান কে বললেন)
ভগবান! দেবী র আপনার প্রতি কোনো ক্রোধ নেই। তিনি সকল আগমশাস্ত্রের বিজ্ঞান রহস্য জানেন। তিনি নিজ অভিলাষ পূরণ করার জন্য আপনাকে
আপনার পছন্দমত কন্যা রত্ন দান করতে উদ্যোগ করেছেন। যাতে তার মঙ্গলসূত্র ঠিক থাকে।
(সংস্কৃতমাশ্রিত্য)
মঙ্গল্যসূত্রস্থাস্নুত্বং কাঙ্ক্ষমাণাঃ পতিব্রতাঃ।
কামপ্যভিমতাং ভর্ত্রে কন্যাং দধুরিতি স্মৃতিঃ।। ১০
অতিবহুলং লোকে অস্য আচরণমপি প্রতিবর্ষমেতৎ ব্রতং কুর্বন্তি সিন্ধুরাজং ক্ষুদ্রনদীকুলং প্রাপয্য ভাগীরথীপ্রমুখা মহানদ্যঃ।
(সংস্কৃতে বললেন)
যে পতিব্রতা নারী তার মঙ্গলসূত্রের স্থিরতা চায়, শাস্ত্র বলে তার পতির জন্য কুমারী কন্যা সন্ধান করে বিবাহ দিতে।
এই প্রক্রিয়া পৃথিবীতে বহুল প্রচলিত, ভাগীরথির মতো বড়নদী যদিও সমুদ্রের অঙ্কশায়িনী হন তাও ক্ষুদ্রনদী গুলিও তার ক্রোড়ে অবস্থান করেন।
ভদ্রাণী—অপবার্য স্মরণং অভিনীয় অত্থি খু বদম্ এদং ইমিনা বব এসেণ পুরেহি সামিণো মণোরহং।
ভদ্রাণী— (কিছু স্মরণ করে) মনে হয় সেখানে কোনো ব্রত আছে। তাই নয় কি? হে মহাদেবী যান ও স্বামীর অভিলাষ পূরণ করতে তাকে সহায়তা করুন।
দেবী— তহ তথা ইতি মনসি কৃত্বা দেবং প্রতি
আর্যপুত্র প্রসীদ। কথং অস্থানে ময়ি কোপারোপঃ? অত্রভবতঃ প্রসাদনিমিত্তং গালবোক্তং ব্রতমাচরিতুং এষ উদ্যোগঃ।
দেবী—(মনে মনে সম্মত হয়ে দেব কে উদ্দেশ্য করে) আর্যপুত্র! প্রসন্ন হোন। আপনি কি করে আমার প্রতি ক্রুদ্ধ হতে পারেন। গালব যেমন বলেছে সেইরূপ আপনার সন্তুষ্টির জন্য ব্রতের আয়োজন করা হয়েছে।
বাসন্তিকা—(সহর্ষাতিশয়ং স্বগতম্)
ফলিতং ইদানীং চিন্তালতায়াঃ।
(দেবঃ সাঙ্গীকারব্রীদং অধোমুখস্তিষ্টতি।)
বাসন্তিকা—(অতিশয় হর্ষিত হয়ে স্বগত) আমার চিন্তালতা ফলদায়ী হতে চলেছে।
(দেব লজ্জিত হয়ে অঙ্গীকার পূর্বক মাথা নত করে রইলেন)
(নেপথ্যে)
দূরে ধাবয় ধাবয়াঞ্জনগজং মত্তোহয়মৈরাবতো
মুক্তোহয়ং কপিলাপতিনির্গলিতো মা পুষ্পদন্তোহন্তিকে।
ক্রুদ্ধো বামন এষ মা কুরু পুরস্তে সার্বভৌমং গজং
কামান্ধঃ কুমুদো নিবারয় গজং তে সুপ্রতীকং রয়াৎ।।১১
(নেপথ্যে)
অঞ্জন নামক গজরাজ কে যেতে দাও। ঐরাবত মত্ত হয়ে উঠেছে। কপিলাপতি মুক্ত হয়েছে। পুষ্পদন্তের কাছে যেওনা। এই বামন কুপিত হয়ে রয়েছে। সার্বভৌমের কাছে যেওনা। কুমুদ হস্তী কামান্ধ হয়ে রয়েছে। সুপ্রতীক নামক হস্তীর পথ ছেড়ে দাও।
(এই নামগুলি অষ্টদিকপালের বাহন অষ্ট দিগগজ। তারা আট দিকের রক্ষক। তাদের প্রভূ দিকপাল গন দেব অহোবিলেশ কে দর্শন করতে ও বাসন্তিকাকে আশীর্বাদ করতে এসেছে। হস্তীপৃষ্ঠ থেকে নামার পর এই দিগগজ গন মুক্ত হয়ে নানা দিকে ছুটেছে।
দেবঃ—কথং আগতা এব দিক্পতয়ঃ। যৎ ইদানীং পরস্পরগজাভিগমন পরিহরণ বিহিত কোলাহলাঃ। শ্রুয়ন্তে দিব্যাঃ হস্তিপকাঃ।
দেব—দিকপতি গন হয়ত এসে পৌছালেন। তাদের মাহুত গন তাদের দায়িত্ব শেষ করে হস্তীপৃষ্ঠ থেকে নামার সময় এই কোলাহল ধ্বনি করছে।
বিদূষকঃ—অম্ব এতেষু যথা সমুচিতালাপ ইতি ভবিষ্যতি কালাতিপাতঃ। তস্মাৎ ইদানীং এব আরভস্ব ব্রতম্।
বিদূষক— হে মাতঃ এই দিকপাল গন এক এক করে দেবের সাথে দর্শন করবেন। এতে অনেক সময় লাগবে। আপনি এই সময় ব্রত শুরু করেন না কেন?
দেবী—তথা ইতি নিষ্ক্রান্তা।
দেবী—তাই হোক বলে চলে গেলেন।
বেত্রিণঃ—প্রবিষ্য স্বস্তি সমস্ত ভুবনশরণ্য! হিরণ্যকশিপু বিদারণ কারণপুরুষ! প্রহ্লাদ বরদ দেবাধিদেব! দৃষ্তিরিতো দীয়তাম্।
ইন্দিরা মন্দিরায়মাণ বাহান্তরাল নিরন্তরাল মন্তরান্তর সন্দানিত সন্তান কুসুমবন্ধুর হরিচন্দন সরোপহারধর করারবিন্দঃ পুরন্দরোষ্যং, ভক্তজন চিত্তানুবর্তন সানুকংপ হস্ততল নিস্তৃত দীপিকা রাত্রিকাপাত্রৌ বীতিহোত্রোহয়ং, উদ্দণ্ডাসুর বেতণ্ডকণ্ঠীরব নরকণ্ঠীরব ভবদুপকণ্ঠং যুগপৎ অভিবন্দনাপতদমর মণ্ডলনিবারণ প্রচণ্ডতরো দণ্ডধরোহয়ং মাতঙ্গপুঙ্গব বিপ্রদ্ভঙ্গ সাধক ভবদীয় মঙ্গল সদনাভিজিগমিষুঃ মহাভূত বেতালজাত নিষেধাবধান সুমতিঃ নিঋর্তিরয়ং, প্রকৃতিবিকৃতি বাহ্য প্রভাব প্রতিবিশিখমতিশিশির সলিলাসেচনোপচার নিপুণো বরূণোহয়ং, জঠর পিঠরস্থিত জগৎত্রয় ভরণ জাগরূক প্রতিচত্বর সত্বর বিসৃত্বর গন্ধকুসুম সন্দোহ বিকিরণ প্রবীণো জগৎপ্রাণোহয়ং, নন্দগৃহাভিনীত নবনীতচৌর্যনাটক নিকটানীত হাটক কোটীরহার কেয়ূরাদি মঙ্গলালঙ্কার নিকরঃ কুবেরোহয়ং গরুড়গিরি কূটকোটি প্রকটিত বিহার! মকুটশশিকলাকিরণকলিকা কলিত সুধালেপ ধবলমণ্ডপপ্রদেশঃ ইশানোহয়ং, দুগ্ধজলধি মধ্যকলিত যোগনিদ্রাবিশেষ! তত্তদুচিতোপহারহস্তাঃ সিদ্ধসাধ্য বিদ্যাধর কিন্নর কিংপুরুষ গন্ধর্বাঃ সর্ব ইমে মহোৎসব দিদৃক্ষয়া সমক্ষং পরাপতন্তি।
(দেবঃ আমন্ত্রয় যথোচিতং আসনেষু সর্বান্ উপবেশয়তি)
বেত্রিগন—স্বস্তিবাচন করে। হে দেব আপনি সমস্ত জগতের শরণ্য। হে দেব আপনি সমস্ত জগতের কারনপুরুষ। হিরণ্যকশিপু র উদর বিদারন কারী। ও প্রহ্লাদ কে বরদানকারী। সকল দেব গনের অধিপতি। কৃপা করে এদিকে আপনার করুণা দৃষ্টি বর্ষন করুন। এদিকে পুরন্দর ইন্দ্র আপনার বক্ষস্থল কে সজ্জিত করতে পারিজাত, মন্দার, কল্পক, সন্তান পুষ্প দ্বারা গাঁথা মালা নিয়ে উপস্থিত, যে বক্ষস্থল মাতা ইন্দিরার বাসস্থল, ও হরিচন্দন লিপ্ত।
এইখানে করূণাময় ও প্রভাময় অগ্নিদেব ও উপস্থিত। যিনি ভক্ত দের দ্বারা নিবেদিত আহুতি তার শিখাময় হস্ত দ্বারা প্রেরণ করেন।
হে নৃসিংহদেব আপনার গর্জনে উদ্দন্ড অসুরেরা হরিণীর মতো কাঁপতে শুরু করে দেয়। আপনার সামনে দন্ডধর যম উপস্থিত হয়েছেন। যিনি দন্ডধারন করে আপনার দর্শনে উপস্থিত দেবগন কে নিয়ন্ত্রণে ব্যাস্ত।
দেব নিঋৃতি যিনি আপনার মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে প্রবেশ করে বিঘ্ন সৃষ্টি কারী ভূত বেতাল গন কে বিতারিত করছেন।
বরূণদেব ও এখানে আছেন যার প্রকৃতি ও বিকৃতি সম্পর্কে সমস্ত জ্ঞান আছে। শীতল শিশির জল সিঞ্চনে আপনার সেবায় সমাগত।
জগতের প্রাণবায়ু রূপে যিনি ত্রিজগতে সমস্ত গর্ভজাত জীব গনকে জীবিত রাখেন ও পুষ্পের সুগন্ধ বহন করে আনেন সেই বায়ুদেব আপনার দর্শনে উপস্থিত।
হে ভগবান! আপনি নন্দ মহারাজের ঘরে যে মাখন চুরি লীলাদি করেন তা এই গরুড়াদ্রী পর্বতের সকল অধিবাসী গন আলোচনা করেন, এখানে আপনার দর্শনে উপস্থিত বিবিধ রত্ন হার মুকুট ও কেয়ূর কুন্ডল রত্নালঙ্কার নিয়ে এসেছেন।
হে দেব পরমেশ্বর ঈশান আপনার দর্শনে উপস্থিত যার তুষার ধবল ধাম কৈলাস তার মস্তকস্থিত চন্দ্রকিরণে উদ্ভাসিত।
হে ভগবান আপনি ক্ষীরসাগরের মধ্যে শয়ন করে যোগনিদ্রায় লীন হয়ে থাকেন। সমস্ত সিদ্ধ, সাধ্য, বিদ্যাধর, কিন্নর,গন্ধর্ব ও কিম্পুরুষ গন আপনার বিবাহ উৎসবে সামিল হতে ছুটে এসেছেন।
(দেব অহোবিলেশ সমস্ত অতিথিদের যথাযোগ্য সম্ভাষনে স্বাগত জানালেন, ও আসন প্রদান করলেন।)
বিদূষকঃ—কথং অদ্যাপি চিরায়তে দেবো পিতামহঃ। অত্র তেনৈব পুরোহিতেন ভবিতব্যম্।
ততঃ প্রবিশতি গগনবর্ত্মনা পিতামহঃ শিষ্যশ্চ।
বিদূষক—হে দেব পিতামহ ব্রহ্মা এখনো এত বিলম্ব করছেন কেন? তাকেই তো এই বিবাহের পৌরোহিত্য করতে হবে।
(এমন সময় নিজ শিষ্য সহ পিতামহ ব্রহ্মার আগমন)
পিতামহঃ—(নির্বর্ণ্য) কথং আরব্ধ এব মহোৎসবঃ!
সর্বে স্বস্তি জপন্তি যোগি পুরুষাঃ গায়ন্ত্যমী শোভনং
গন্ধর্বাঃ সরসং নয়ন্তি পুরতঃ স্বারাজ্যবারাঙ্গনাঃ।
দিব্যা বন্দিজনাঃ স্তুবন্তি বিরূদং দীপোৎসবং পঙ্ক্তিশঃ
সূর্যা দ্বাদশা সাধয়ন্তি সুধয়া চন্দ্রো ভুবং সিঞ্চতি।। ১২
পিতামহ—(চারপাশে দেখে) মহোৎসবের আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে। সকলে স্বস্তিবাচন করছে। যোগি পুরুষ গন মঙ্গলগান করছে। আমাদের সম্মুখে গন্ধর্বগন কিন্নরীদের সাথে সঙ্গীত করছে, বন্দিগন স্তুতি বন্দনা গান করছে। দ্বাদশ আদিত্য গন দীপমালার মতো চারিদিক আলোকজ্জ্বল করে তুলছে। চন্দ্র অমৃত জ্যোতি সিঞ্চনে ভুবন ভরিয়ে দিচ্ছে।
শিষ্যঃ—(কক্ষ্যান্তরে নির্দিশন্)
কা ইমাঃ সংঘীভূতাঃ স্ত্রিয়ঃ?
শিষ্যগন—(অন্যদিকে তাকিয়ে) এদিকে এই স্ত্রীলোকেরা কারা?
পিতামহঃ—(নির্বর্ণ্য) আঃ প্রসাধয়ন্তি শবরীং অমরীজনাঃ আক্ষিপ্য বর্হ অবতংসপদে প্রসূনং
গুঞ্জাবলীং সমপনীয় কুচেহপি হারং।
প্রাবালমংশুকমপোহ্য কটৌদুকূলং
সন্ধার্যতে শবরিকা সুরসুন্দরীভিঃ।। ১৩
পিতামহ—(সেদিকে তাকিয়ে) দিব্য স্ত্রীগন শবরকন্যাদের সজ্জিত করছে। প্রথমে সুরসুন্দরীগন শবরকুমারী দের মাথায় ময়ূর পালক খুলে সুন্দর পুষ্পমালা দিয়ে শৃঙ্গার করেছে। তাদের বক্ষস্থলে গুঞ্জামালা খুলে রত্নমন্ডিত স্বর্ণালঙ্কার পরিয়েছে। তাদের বল্কল বেশ ছাড়িয়ে দূকুলবস্ত্র পরিয়েছে।
দেবঃ—(উর্ধ্বমবলোক্য) আঃ কথমিতোহভিমুখং অবতরতি পিতামহঃ!
(ইত্যভ্যুপগম্য সহস্তাবলম্বং নিজাসনার্ধে পিতামহমুপবেশয়তি।)
দেব—(উর্দ্ধলোকে তাকিয়ে) বাঃ পিতামহ ব্রহ্মাও তার বিমান হতে অবতরণ করছেন।
(এই বলে নিজ হাত এগিয়ে দিয়ে পিতামহ ব্রহ্মাকে নিজের পাশে বসালেন।)
পিতামহঃ—ভো ভো পরিচারিকাঃ অতিক্রামতি কালো লঘ্নস্য। আকার্যতাং বাসন্তিকা।
পিতামহ—হে পরিচারিকা গন, লগ্ন অতিক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। বাসন্তিকাকে শীঘ্র নিয়ে আসো।
ভদ্রাণী—(প্রবিশ্য, বাসন্তিকাং পুরস্কৃত্য)
পরিসমাপিতব্রতা দেবী পরিগৃহাণেতি ইমাং তব সমীপং প্রাপয়তি।
ভদ্রাণী—(বাসন্তিকাকে নিয়ে ভদ্রাণীর প্রবেশ।) হে দেব! দেবী মহালক্ষ্মী তার ব্রত সম্পন্ন করেছেন। ও এই কন্যাকে আপনার কাছে প্রেরণ করেছেন।
(ইতি দত্বা নিষ্ক্রান্তা।)
(এই বলে বাসন্তিকা কে রেখে ভদ্রাণী র প্রস্থান)
বাসন্তিকা—(পুরো নির্বর্ণ্য, অপবার্য)
সখি চতুরিকে, কঃ এষ একোহপি সমসময়মেব সর্বতোমুখো বহুজনৈঃ ব্যাহরতি?
বাসন্তিকা—(সামনে দেখে, গোপনে সখীদের কানে বললেন) হে চতুরিকে এই ঋষি কে যে একই সাথে চারদিকে তাকিয়ে সবদিকের লোকদের সাথে কথা বলছে।
চতুরিকা—এষ স এব পিতামহঃ, যং চতুর্মুখং জনাঃ কথয়ন্তি।
চতুরিকা—ইনি হলেন পিতামহ। যাকে লোকে চতুর্মুখ বলে।
(বাসন্তিকা সপ্রশ্রয়ং নিভৃতং প্রণমতি)
(বাসন্তিকা সশ্রদ্ধায় প্রণাম নিবেদন করলেন।)
পিতামহঃ—সমাগতৈব কল্যাণিনী বৎসা। কুতঃ শবররাজঃ?
পিতামহ—কল্যাণী বাসন্তিকা উপস্থিত। তার পিতা শবররাজ কোথায়?
শূরসেনঃ—(প্রবিশ্য, প্রণম্য, দূরে তিষেঠন্। অঙ্গমঙ্গমবলোক্য, সানুস্মরণকৌতুকং স্বগতম্)
অহমিদানীং ভগবদনুগ্রহেণ ইন্দ্রশাপাৎ মুক্তোহস্মি।
(প্রকাশম্, সাঞ্জলিবদ্ধং হরিম্ প্রতি)
সন্দর্শনেন ভবতো শাপান্মুক্তোহস্ম্যহং হরে।
দিব্যত্বমেব মে কন্যাশুল্কং তৎ গৃহ্যতামিয়ম্।। ১৪
শূরসেন—(প্রবেশ করে প্রণাম জানালেন ও দূরে দাঁড়িয়ে নিজের প্রতি অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দেখতে লাগলেন। ও অবাক হয়ে ভাবতে লাগলেন।)
শূরসেন—(স্বগত) মনে হয় ভগবান এর কৃপায় আমি ইন্দ্রের শাপ হতে মুক্ত হলাম।
(প্রকাশ্যে) হস্ত অঞ্জলীবদ্ধ করে শ্রীহরির সামনে দাঁড়ালেন।
হে ভগবান হরি আপনাকে দর্শন করে ইন্দ্রের অভিশাপ থেকে মুক্ত হলাম। আমার দিব্যতা পুনঃপ্রাপ্তির জন্য এই কন্যাশুল্ক আপনি গ্রহন করুন।
পিতামহঃ—অনুমতং দিব্যত্বমেয়ুষা শূরসেনেন।
(ইত্যুক্ত্বা দেবস্য হস্তং গৃহীত্বা বাসন্তিকায়াঃ করেণ সংযোজ্য)
উর্জিতং প্রেমসৌহার্দ উভয়োর্যুবয়োরপি।
অনন্যজনসামান্যং অন্যোন্যমভিবর্ধতাম্।। ১৫
পিতামহ—শূরসেনের দিব্যতাপ্রাপ্তি এই মিলনের সম্মতিদায়ক। #
তিনি বাসন্তিকার হাত নিয়ে দেব অহোবিলেশের হস্তে সমর্পন করলেন।
তোমাদের উভয়ের প্রতি উভয়েই প্রেম প্রকাশিত করেছো। এই অনন্য জন সামান্য প্রেম অনোন্য ভাবে বর্ধিত হোক।
চতুরিকা—সখি বাসন্তিকে কল্যাণিনী ত্বং পিতরং বন্দস্ব।
বাসন্তিকা সলজ্জং প্রণমতি।
চতুরিকা—সখি বাসন্তিকে! কল্যাণী তোমার পিতাকে প্রণাম করো। বাসন্তিকা সলজ্জ ভাবে পিতা কে প্রণাম করলেন।
শূরসেনঃ—অলংকৃতং ত্বয়া মম কুলং কন্যারত্নেন যৎ অনুগৃহীতাসি ভগবতা পীতাম্বরেণ কদাচিদপি মাং ন দুঃখাপয়তি তে পতিগৃহাধিবাসঃ।
প্রদিষ্টমনুনৈবেতৎ ভর্তৃশুশ্রূষণে রতা।
ভব ত্বং ন পিতা নৈব জননী চ জগদ্গুরোঃ।। ১৬
কিং চ ইদমেব পুনরপি আবেদয়ামি সর্বদা চ ভর্তুরনুকঘলা ভব।
আকাশে দুন্দুভিধ্বনিঃ পুষ্পবৃষ্টিশ্চ।
শূরসেন—হে কন্যা তুমি রত্ন তুল্য আমাদের শবর কুল কে অলঙ্কৃত করেছো। এখন পীতাম্বর ভগবান অহোবিলেশ তোমায় গ্রহন করেছেন, তাই তোমার পতিগৃহ গমনের জন্য আমার দুঃখিত হওয়া উচিত নয়।
জগতগুরু ভগবানের কোনো মাতা পিতা নেই তাই তোমার ভাগ্যের কাছে তুমি ঋনী যে তোমায় সম্পূর্ণ ভাবে কেবলমাত্র তোমার স্বামী র সেবাতেই নিবিষ্ট থাকতে পারবে।
আবার আমি একই উপদেশ করছি সর্বদা তোমার পতির অনুকূল ও যোগ্য হয়ে ওঠো।
আকাশে দুন্দুভিধ্বনি ও পুষ্পবৃষ্টি হলো।
পিতামহঃ—দেব কিং ন ভূয়ঃ প্রিয়মুপহরামি
এতস্যাস্তপসঃ ফলং নরহরে লব্ধস্ত্বমেব স্বয়ং
লব্ধেয়ং দয়িতা ললাম ভবতা লক্ষ্মীপ্রসাদোদয়াৎ।
ব্যাধত্বং ব্যাপনীয় তে করূণয়া বিদ্যোততেহয়ং সুরঃ
সাধ্যং কর্ম ন কিঞ্চিদপ্যভিমতং সিদ্ধং সমস্তং চ তে।। ১৭
পিতামহ—হে দেব! আপনার আর কোন সেবা কার্য্যে আমায় নিয়োজিত করতে চান? হে ভগবান নরহরি! আপনি স্বয়ং এই কন্যার তপস্যার ফল রূপে পরিনত হয়েছেন। মাতা লক্ষ্মীর কৃপায় আপনি এই কন্যা কে পত্নীরূপে লাভ করেছেন। আপনার কৃপায় এই গন্ধর্বকন্যা শবরত্ব ত্যাগ করে পুনরায় তার দিব্যতা ফিরে পেয়েছে। আপনার কোন ইচ্ছাই বা অপূর্ণ থাকতে পারে? সকল ইচ্ছাই সিদ্ধ হয়েছে।
তথাপি ইদমস্তু ভরতবাক্যম্।
অর্থানন্বহমার্জয়ন্তু বিধিবৎ ধর্মেণ সাকং নৃপাঃ
ধাত্রী সস্য সমৃদ্ধিমেতু সময়ে ধারালবর্ষৈস্সমম্।
বিদ্যাভিস্সহ সাধয়ন্তু বিনয়ং বিপ্রা বিবেকাধিকাঃ
বাগ্দেবী সুদৃশাং গৃহেষু সততং বর্তেত লক্ষ্ম্যা সমম্।। ১৮
তাই মহাভারতের বাক্যে আশীর্বাদ করি।
নৃপ গন প্রত্যহ শাস্ত্র ও ধর্ম অনুসারে ধন সম্পদ অর্জন করুন। পৃথিবী শস্যশালিনী হোক। তার জন্য সঠিক ঋতুতে বৃষ্টির প্রাচুর্য্য হোক। ব্রাহ্মণ গন বিবেকসম্পন্ন হোন। বিদ্যা সহ বিনয় লাভ করুন।
পূণ্যবান ব্যাক্তির গৃহে লক্ষ্মী সহ বাগদেবী সর্বদা বিরাজ করুন।
ইতি নিষ্ক্রান্তাঃ সর্বে।।
।। সকলের নিষ্ক্রমন।।
।। পঞ্চম অঙ্ক সমাপ্ত।।
শতলেখিনীলেখনানুগুণ কবিতা ধুরন্ধর, কবি তার্কিক কন্ঠীরব শ্রীবনশঠকোপ শ্রী শঠকোপ যতীন্দ্র মহাদেশিকান রচিত বাসন্তিকা পরিণয়ম সম্পূর্ণ।।