Govinda devji temple

Govinda devji temple

Replica deity of Sri govinda devji at vrindavan
গোবিন্দদেবজী মন্দির 
বজ্রনাভ মহারাজ ৫০০০ বছর আগে যোগপীঠে বৃন্দাদেবী ও রাধাগোবিন্দদেবের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে গোবিন্দদেবের অবস্থান সম্পর্কে বলা আছে 
পুনর্বৃন্দাবনেচৈব বৃন্দাদেবী প্রসাদতঃ।
বৃন্দাদেবী প্রসক্তায় পূর্ণকামস্য হেতবে।।
হৃষীকেশো করোদ্রূপং নাম্নাং গোবিন্দ সংস্থিতঃ।
চতুর্দশা সমাবস্থঃ অবতারো বিরাজতে।।
অনুবাদ:- বৃন্দাবনের অধিষ্ঠাত্রী দেবী বৃন্দার কামনা পূর্ণ করার জন্য ভগবান গোবিন্দদেব নামক ১৪ বছরের কৈশোর বিগ্রহ রূপে বৃন্দাবনে অবস্থান করেন।
Yoga pitha


Yoga pitha 

Govinda devji Established by Vajranava Maharaj

গজনীর সুলতান মামুদের ভারত আক্রমনের সময় ব্রজবাসীরা ব্রজমন্ডলের সমস্ত বিগ্রহ বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে ফেলে। তার প্রায় ৫০০ বছর পর শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রকট হয়ে ষড় গোস্বামীদের দ্বারা ব্রজমন্ডলের তীর্থ ও শ্রীবিগ্রহ সমূহ প্রকট করেন। 
শ্রীলরূপগোস্বামী বৃন্দাবনে এসে সর্বত্র গোবিন্দদেবের শ্রীবিগ্রহের সন্ধান করতেন। বহু অনুসন্ধান করেও কোথাও খুঁজে না পেয়ে বিফলমনোরথ হয়ে একদিন পানিঘাটের কাছে বসে হা চৈতন্য হা চৈতন্য বলে ডাকছেন এমন সময় এক ব্রজবাসী বালক এসে তাকে বলে যে রোজ আমার গোরুর দুধ কমে যাচ্ছে, একদিন সেই গোরুর পিছন পিছন গিয়ে দেখি সেই গোরুটি গোমা টীলার ওপর উঠে দাড়িয়ে আছে আর তার বাঁট থেকে দুধ ঝরে পড়ছে। তাই আমার মনে হয় ওখানে কোন বিগ্রহ আছে, হয়ত বাবাজী আপনি যাকে খুঁজছেন তাকে সেখানে পেতে পারেন।  রূপগোস্বামী ওখানে গিয়ে দেখেন একটা গোরুর বাঁট থেকে দুধ ঝরে পড়ছে। তিনি বুঝতে পারেন স্বয়ং কৃষ্ণই বালকের বেশে তাকে সন্ধান দিয়ে গেছেন।  সকল ব্রজবাসী রা খবর পেয়ে চলে আসে,  মাটি খুঁড়তেই গোবিন্দদেব দেবজী প্রকাশ হলেন। সমস্ত বৃন্দাবনে জয় গোবিন্দ জয় গোবিন্দ ধ্বনি উঠল, গোবিন্দদেবজী যেখান থেকে প্রকট হয়েছিলেন সেটি ই যোগপীঠ। সেখানে গোবিন্দদেব ও পাশেই যোগমায়ার বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করে কূটীর নির্মান করে দেওয়া হয়।  পরে রঘুনাথ ভট্ট গোস্বামীর শিষ্য অম্বরের রাজা মানসিংহ লালপাথর দিয়ে সাততলা মন্দির নির্মান করে দেন। যে লাল পাথর আগে কেবল মাত্র মুঘল স্থাপত্য নির্মানে ব্যাবহার হত। মন্দির শিখরে প্রতিদিন সোয়া মন ঘি এর প্রদীপ জ্বলত। অষ্টদল যুক্ত কূর্মাকার যোগপীঠের আধারের উপরে এই মন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল।
Govinda devji temple Vrindavan

Internal architecture of Govinda ji temple

গোবিন্দদেব প্রতিষ্ঠা হওয়ার সংবাদ পুরীতে পৌছালে মহাপ্রভূ গৌরগোবিন্দ বিগ্রহ ও পূজারী হিসাবে কাশীশ্বর পন্ডিতকে পাঠান।  ভক্তিরত্নাকর
গোবিন্দ প্রকট মাত্রে শ্রী রূপগোসাঁই।
ক্ষেত্রে পত্রী পাঠাইলা মহাপ্রভু ঠাঁই।।
শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য প্রভু পার্ষদ সহিতে।
পত্রী পড়ি আনন্দে না পারে স্থির হইতে।। 
কাশীশ্বর প্রতি প্রভু কহয়ে নির্জনে।
তোমারে যাইতে হইবে শ্রীবৃন্দাবনে।।
কাশীশ্বর কহে প্রভু তোমারে ছাড়িতে।
বিদরে হৃদয় যে উচিত কর ইথে।।
কাশীশ্বর অন্তর বুঝিয়া গৌর হরি।
দিলেন নিজ স্বরূপ বিগ্রহ যত্ন করি।।
প্রভু সেই বিগ্রহ সহ অন্নাদি ভুঞ্জিল।
দেখি কাশীশ্বরে পরমানন্দ হইল।।
শ্রী গৌর গোবিন্দ নাম প্রভু জানাইলা।
তারে লইয়া কাশীশ্বর বৃন্দাবনে আইলা।।
শ্রী গোবিন্দ দেব দক্ষিণে প্রভুরে বসাইয়া।
করয়ে অদ্ভুত সেবা ভাবাবিষ্ট হইয়া।।
(২/৪৩৬- ৪৪৩)

গোবিন্দদেবের রাধারানীর প্রকট কথা
ষোড়শ শতাব্দী তে যবন আক্রমনের সময়  উড়িষ্যাবাসী এক বৈষ্ণব বৃহদ্ভানু গোবিন্দদেবের রাধারানীকে বৃন্দাবন থেকে নিয়ে আসেন।  তার বাৎসল্য প্রেমে রাধারানী তার ঘরে মেয়ের মতই থাকতেন।  তার মৃত্যুর পর রাধারানী পুরীর রাজা কে স্বপ্নাদেশ দেন তার বিগ্রহ জগন্নাথ মন্দিরে রাখতে। রাজা জগন্নাথের চক্রবেড়ের মধ্যে তাকে প্রতিষ্ঠা করেন। কালক্রমে তিনি লক্ষ্মী রূপে পূজা পেতে লাগলেন।  এদিকে বৃন্দাবনে গোবিন্দজী প্রতিষ্ঠিত হলে পুরীর রাজা পুরুষোত্তম জানা কে রাধারানী স্বপ্ন দেখান আমি জগন্নাথের চক্রবেড়ের মধ্যে লক্ষ্মীদেবী রূপে পূজিত হচ্ছি। আমার বিগ্রহ বৃন্দাবনে পাঠিয়ে গোবিন্দদেবের পাশে প্রতিষ্ঠা কর। তখন রাজা রাধারানী কে বৃন্দাবনে পাঠান। গোবিন্দদেবের বামে রাধারানী কে বসানো হল।

তারপর ৪০০ বছর গোবিন্দজীর বিগ্রহ বৃন্দাবনেই ছিল। ঔরঙ্গজেবের সময়ে ব্রজমন্ডলে বড় বিপত্তি শুরু হল। একবার ঔরঙ্গজেব আগ্রার প্রাসাদ থেকে সাততলা গোবিন্দদেব মন্দিরের বারান্দায় প্রদীপ জ্বলতে দেখে কাফের দের মন্দির ধ্বংস করতে নির্দেশ দেন।  মুঘল বাহিনী বৃন্দাবন পৌছানোর আগেই সপ্তদেবালয়ের বিগ্রহ কিছুদিন রাধাকুন্ড তারপর কাম্যবন ও শেষে জয়পুরে রাজবাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।  বর্তমানে গোস্বামীদের আবিষ্কৃত ও সেবিত বিগ্রহ শ্রীগোবিন্দ গোপীনাথ মদনমোহন, রাধাদামোদর রাধাবিনোদ জয়পুরে সেবিত হচ্ছে। মন্দিরে প্রতিভূ বিগ্রহ দর্শনীয়। কেবল রাধারমন মন্দির স্থানীয় লোকের বাড়ির মত দেখতে বলে মুঘল সেনা প্রবেশ করেনি।  
ভক্তিসিদ্ধান্তসরস্বতী ঠাকুর ব্রজমন্ডল পরিক্রমার সময় তার প্রবচনে বলেছিলেন ব্রজেন্দ্রনন্দন শ্রীকৃষ্ণ কখনো রাজসেবা গ্রহন করে ব্রজের বাইরে যাননা।
“বৃন্দাবনং পরিত্যাজ্য পাদমেকং ন গচ্ছতি” জষ়পুরে ক্ষত্রিয় রাজার সেবা গ্রহন করে ক্ষত্রিয়াভিমানী শ্রীবসুদেবনন্দন ই রাজস্থান গমন লীলা করেছেন।  
বৃন্দাবনে সর্বদা বিরাজমান গোবিন্দ গোপীনাথ মদনমোহন তাই প্রতিভূ বিগ্রহ রূপে প্রকট হয়েছেন।
Gaur Nitai Govinda dev deity at Govinda ji temple vrindavan


Giriraj shila With krishna,s Foot print in it
গোবিন্দদেব মল্দিরে শ্রীকৃষ্ণের চরণচিহ্নিত গোবর্দ্ধন শিলা, গোবিন্দদেবের প্রতিভূ বিগ্রহ, নিতাই গৌর জগন্নাথ, মন্দিরের পাশে একটি ছোট মন্দিরে যোগমায়ার বিগ্রহ ও মন্দিরের পিছনে যোগপীঠ ও  নতুন গোবিন্দদেব মন্দির দর্শনীয়।
                                                   
Yogamaya Temple
Yoga maya devi 
Dauji temple on left side of Main temple
                                                 

যবন প্রবেশ হওয়ায় মন্দির অপবিত্র হয়ে গেছিল তাই বলদেব বিদ্যাভূষণ প্রভুর আদেশ অনুসারে প্রাচীন মন্দিরের পাশেই গোবিন্দদেবের প্রতিভূ বিগ্রহ সেবা শুরু হয়। ১৮১৯সালে কলকাতা বাসী ভক্ত নন্দকুমার বসু সেখানে নতুন গোবিন্দদেবের মন্দির নির্মান করে দেন,  এই মন্দিরে রাধা গোবিন্দদেবজী বিরাজমান।
New govinda ji temple vrindavan entry gate

New Govindaji temple
Photograph of replica deity at new Govinda ji temple, Vrindavan 


গোবিন্দদেব মন্দিরের পাশে একটি মন্দিরে সাক্ষীগোপাল মন্দির আছে,  এখানে বজ্রনাভ মহারাজ গোপাল বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন,  যিনি ভক্তের কাছে সত্যবদ্ধ হয়ে সাক্ষী দিতে পুরীর কাছে বিদ্যানগর গ্রামে চলে যান।  সাক্ষীগোপাল নামে সুবিখ্যাত। বর্তমানে এই মন্দিরে কোনো বিগ্রহ নেই, সেবকরা থাকে।

Sakhshi Gopal temple

সিংহপৌরী হনুমান মন্দির
গোবিন্দজী মন্দিরের সামনে ডানদিকের রাস্তায়  সিংহপৌরী হনুমানজী মন্দির আছে। ঔরঙ্গজেব মথুরার সব মন্দির ধ্বংস করে বৃন্দাবনে এসে গোবিন্দদেব সহ সব দেব মন্দির ভাঙ্গতে নির্দেশ দেন। গোবিন্দদেব মন্দির ভাঙ্গতে শুরু করলে কাছেই মন্দিরে হনুমানজী বহু বানর সৈন্য নিয়ে মুঘল সেনা দের আঁচড়ে কামড়ে কারোর চোখ উপড়ে ফেলে, কাউকে মন্দিরের ওপর থেকে ধাক্কা মেরে নীচে ফেলে দিতে লাগলেন। তাই ভয়ে মুঘল সেনারা সাততলা মন্দির অর্ধেক ভেঙ্গেই পালিয়ে যায়। তাই হনুমানজী সিংহপৌরী নামে বিখ্যাত। এখনো এখানে বাঁদরের খুব উৎপাত।
Simhapauri hanuman tempe

Sinmhapauri Hanuman Deity

গোবিন্দজীর প্রণাম মন্ত্র
দিব্যদ্ বৃন্দারণ্য কল্পদ্রুমাধঃ
শ্রীমদ রত্নাগার সিংহাসনস্থৌ।
শ্রীমদ রাধা শ্রীল গোবিন্দ দেবৌ
প্রেষ্ঠলীভিঃ সেব্য মানৌ স্মরামি।।
দিব্য বৃন্দাবন ধামে কল্পবৃক্ষের নীচে মণিময় মন্দিরে রত্নজড়িত সিংহাসনে বিরাজমান প্রিয় সখি মঞ্জরী গণ দ্বারা সেবিত শ্রী রাধা গোবিন্দ দেব কে প্রণাম করি।

দর্শনের সময়:- 8:00-11:30am and 4:30-7:30 pm

কি কি দর্শন করবেন 
1) প্রাচীন গোবিন্দজী মন্দির, মন্দিরে গৌর নিতাই জগন্নাথ ও গোবিন্দজীর প্রতিভূ বিগ্রহ, কৃষ্ণ চরণাঙ্কিত গোবর্ধন শিলা
2) দাউজী মন্দির, দাউজী বিগ্রহ বর্তমানে বাঁকেবিহারী বাজারে কারে দাউজী নামে সেবিত হচ্ছেন। 
3) যোগমায়া মন্দির, মন্দিরটি বন্ধ থাকে পূজারী কে বললে দর্শন করায়। 
4) মন্দিরের পিছনে যোগপীঠ 
5) নতুন গোবিন্দজী মন্দিরে গোবিন্দজীর প্রতিভূ বিগ্রহ। 
কিভাবে যাবেন:- গোবিন্দজী মন্দির বৃন্দাবন শহরের একটি বিখ্যাত মন্দির।  টোটো ধরে এই মন্দিরে সহজেই আসা যায়।

Google Map Direction:-