Varanasi

Varanasi



আদিকেশব মন্দির 
এখান থেকে ২ কিলোমিটার‌ দূরে ব্যাটারী রিক্সা ধরে আদিকেশব মন্দির দর্শনে গেলাম। আদিকেশব মন্দিরের কাছে বরুণা ও গঙ্গা নদীর সঙ্গম আছে। স্কন্দ পুরাণ কাশীখন্ড উত্তরার্দ্ধে বর্ণনা রয়েছে—  ভগবান বিষ্ণু কাশীতে প্রথম পদার্পন করেন এই গঙ্গা বরুণা সঙ্গম ঘাটে। তাই এই স্থান বিষ্ণু পাদোদক তীর্থ নামে পরিচিত হয়।
গঙ্গাবরণয়োর্বিষ্ণুঃ সম্ভেদে স্বচ্ছমানসঃ।
প্রক্ষাল্য পাণিচরণং সচৈলঃ স্নাতবানথ।। ১৭
তদা প্রভৃতি তত্তীর্থং পাদোদকমিতীরিতম্।
পাদৌ যদাদৌ শুভদৌ ক্ষালিতৌ পীতবাসসা।। ১৮
তত্র পাদোদকে তীর্থে যে স্নাস্যন্তীহ মানবাঃ।
তেষাং বিনশ্যতি ক্ষিপ্রং পাপং সপ্ত ভবার্জ্জিতম্।। ১৯
শ্রী বিষ্ণু গঙ্গা ও বরুণার সঙ্গমস্থলে হস্তপাদ প্রক্ষালন পূর্বক স্নান‌ করলেন। পীতাম্বর শ্রী বিষ্ণু প্রথমে মঙ্গলপ্রদ স্বীয় চরণদ্বয় সেখানে প্রক্ষালিত করায় সেই তীর্থ বিষ্ণুপাদোদক তীর্থ নামে অভিহিত হয়েছে। যেসব মানুষ সেই পাদোদক তীর্থে স্নান করে তাদের সপ্তজন্মার্জ্জিত পাপ শীঘ্র বিনষ্ট হয়। 
এখানে ভগবান তার নিজ বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন যা আদিকেশব নামে পরিচিত। 
কৃত্যনিত্যক্রিয়ো বিষ্ণুঃ সলক্ষ্মীকঃ সকাশ্যপিঃ।
উপসংহৃত্য তাং মূর্ত্তিং ত্রৈলোক্যব্যাপিনীং তথা।। ২৭
বিধায় দার্ষদীং মূর্ত্তিং স্বহস্তেনাদিকেশবঃ।
স্বয়ং সম্পূজয়ামাস সরৃবসিদ্ধিসমৃদ্ধিদাম্।।২৮
আদিকেশব নাম্নীং তাং শ্রীমূর্ত্তিং পারমেশ্বরীম্।
সম্পূজ্য মর্ত্ত্যো বৈকুন্ঠং মন্যতে স্বগৃহাঙ্গনম।। ২৯
অনুবাদ:- তারপর ভগবান বিষ্ণু ত্রৈলোক্যব্যাপিনী নিজ মূর্তি সম্বরণ করে স্বহস্তে প্রস্তরময়ী  লক্ষ্মী গরুড় সমভিব্যাহারে আদিকেশব মূর্ত্তি‌ নির্মাণ করলেন। আদিকেশব নামক সেই পরমেশ্বরের শ্রীমূর্ত্তি পূজা করলে মানবের নিজ গৃহপ্রাঙ্গন বৈকুন্ঠবৎ বোধ হয়। 
স্কন্দ পুরাণে একটি কাহিনী আছে যে একবার কাশীতে রিপুঞ্জয় নামে এক রাজা ছিল, তিনি অমরত্ব পাওয়ার জন্য কঠিন তপস্যা করেন। তার তপস্যার তেজ প্রভাবে কাশীতে খরা হয়ে যায়, সৃষ্টি নষ্ট হয় দেখে ব্রহ্মা তাকে বর দিতে চাইলে রিপুঞ্জয় অমরত্ব বর চেয়ে বসে। ব্রহ্মা তাকে অমরত্ব দিতে না চাইলে সে বলে কাশীতে তার একচ্ছত্র রাজত্ব দিতে, এখানে কোনো দেবতার পূজা হবেনা। ব্রহ্মা তাকে বলে যদি তুমি ধর্ম পরায়ণ হয়ে রাজত্ব করো, তোমার রাজত্বে প্রজারা ধার্মিক থাকে তবেই তুমি কাশীর একচ্ছত্র আধিপত্য পাবে। রিপুঞ্জয় তাতে রাজি হলে ব্রহ্মা তার রাজ্যাভিষেক করেন ও দিবোদাস নাম দেন। রাজা দিবোদাস দশটি অশ্বমেধ যজ্ঞ করে সারা জম্বুদ্বীপ জয় করে নিজেকে চক্রবর্ত্তী সম্রাট ঘোষণা করেন। তার যজ্ঞে ব্রহ্মা পৌরহিত্য করেন। কাশীতে এই দশাশ্বমেধ ঘাট খুবই বিখ্যাত। এদিকে ব্রহ্মার বরের কারনে সকল দেবগণ এবং দেবাদিদেব মহাদেব কে ও কাশী ছেড়ে চলে যেতে হয়। আর দিবোদাস ও ধর্মপরায়ণ হয়ে প্রজা পালন করতে থাকে। কিন্তু কাশী শিবের খুব প্রিয় স্থান তাই তিনি কাশীতে ফিরে আসতে চাইলেও ব্রহ্মার বরের কারনে ফিরতে পারছিলেন না। দেবতারা ও কাশীতে ফিরতে চাইছিলেন তাই তারা ভগবান বিষ্ণুর কাছে গেলেন। তাদের প্রার্থনা শুনে সর্বজীবপালক ভগবান লক্ষ্মী ও গরুড় দেব সহ কাশীতে আবির্ভূত হয়ে গঙ্গা বরুণা সঙ্গম স্থলে প্রথম চরণ স্থাপন করলেন। তাই এই স্থান বিষ্ণুপাদোদক তীর্থ নামে পরিচিত হল। এখানে তিনি নিজ বিগ্রহ আদিকেশব দেব প্রতিষ্ঠা করলেন ও নিজ অংশাংশের অংশ‌ থেকে বুদ্ধ অবতার গ্রহণ করলেন। 
তস্যাং মূর্ত্তৌ সমাবেশ্য কৈশব্যামথকেশবঃ।
শম্ভোঃ কার্য্যে কৃতমনা অংশাংশাংশেন নির্গতঃ।। ৬৬
কেশব সেই আদিকেশব মূর্ত্তিতে সমাবিষ্ট হয়ে শিবের অনুরোধে কাশীক্ষেত্র উদ্ধার করতে কৃতমনা হয়ে অংশাংশের অংশ রূপে নির্গত হলেন। 
শ্রীপতি নারায়ণ বুদ্ধ অবতার রূপে আবির্ভূত হলেন। লক্ষ্মী দেবী অতি সুন্দর পরিব্রাজিকা হলেন, ও গরুড় দেব মহাপ্রাজ্ঞ পূণ্যকীর্ত্তি নামক বৌদ্ধভিক্ষু হলেন। এই সময় তান্ত্রিক ধর্মের প্রচার হওয়ায় বৈদিক ধর্মের সাথে তন্ত্র যুক্ত হয়ে যজ্ঞের নামে পশুবলি শুরু হয়। তাই এই ধর্মের এই গ্লানি দূর করতে ও বুদ্ধ অবতারের প্রয়োজন ছিল। কাশীর কিছু উত্তর দিকে ধর্মক্ষেত্র নামক স্থানে (সারনাথ) বুদ্ধ রূপে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করেন। 
কিঞ্চিৎ কাশ্যা উদীচ্যাং চ গত্বা দেবেন চক্রিণা।
স্বস্থিত্যৈ কল্পিতং স্থিনং ধর্মক্ষেত্রমিতীরতম্।। ৭১
শ্রীঃ পরিব্রাজিকা জাতা নিতরাং সুভগাকৃতিঃ। ৭৩
গরুত্মানপি তচ্ছিষ্যো জাতো লোকোত্তরাকৃতিঃ।। ৭৪
এভাবে ভগবান শ্রী নারায়ণ বুদ্ধ অবতারে কাশীর‌ লোক দের‌ বেদ বিরুদ্ধ বিভ্রান্তিকর পথে চালিত করলেন, ও রাজা দিবোদাস ও তার কাছে দীক্ষা নিয়ে বেদ বিরুদ্ধ বৌদ্ধ মত অনুসরণ করতে লাগলেন। তাই ব্রহ্মার বর অনুসারে রাজা অধার্মিক হওয়ায় শিব সহ অন্যান্য দেবতারা কাশীতে পুনরায় অধিষ্ঠিত হলেন। 
আদিকেশব ক্ষেত্র থেকে অল্প দূরেই এই সারনাথ অবস্থিত। পরে সম্রাট অশোক বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে বুদ্ধদেবের প্রথম ধর্ম প্রচার স্থান সারনাথে ধর্মচক্র ও অশোক স্তম্ভ স্থাপন করেন।

Sri Chaitanya mahaprbhu's pastimes in Varanasi