Vrindavan parikrama

Vrindavan parikrama


পঞ্চক্রোশী বৃন্দাবন পরিক্রমা
দামোদর মাসে ব্রজমন্ডল পরিক্রমা শুরু হয় মথুরায় বিশ্রাম ঘাটে স্নান করে। ব্রজবাসী রা ভাদ্র মাসে জন্মাষ্টমীর পর ভুতেশ্বর মহাদেব দর্শন করে পরিক্রমা শুরু করে।  ইসকনের ভক্তরা প্রথমে পঞ্চক্রোশী বৃন্দাবন পরিক্রমা করে ব্রজমন্ডল পরিক্রমা শুরু করে।  আমরা ও প্রথম দিন পঞ্চক্রোশী পরিক্রমা দিয়ে শুরু করলাম।  পঞ্চক্রোশ অর্থাৎ ৫ ক্রোশ=১০ মাইল।  কিন্তু বর্তমানে বৃন্দাবন পরিক্রমা পথ ৬ মাইল। যমুনার গতি পরিবর্তনের সাথে পরিক্রমা পথ বর্তমানে বদলে গেছে।  পঞ্চক্রোশ পরিক্রমা ছাড়াও বৃন্দাবন ১২ টি উপবন নিয়ে বিস্তৃত সেগুলি আমরা বন পরিক্রমার সময় দর্শন করব। প্রথমে পরিক্রমা পথে দর্শন হয়।  
১)গোবিন্দ_কুন্ড
২)রাজঘাট
•প্রয়াগ কে তীর্থরাজ বলাহয় যেখানে গঙ্গা যমুনা সরস্বতীর মিলন স্থল। একবার নারদমুনি প্রয়াগরাজের কাছে এসে বলেন হে প্রয়াগ তোমাকে ভগবান তীর্থরাজ ঘোষনা করেছে,  কিন্তু তুমি কেমন তীর্থ রাজ যে বৃন্দাবনবাসী রা তোমার কাছে আসেনা।  বৃন্দাবন যদি তোমায় রাজা বলে না মানে তাহলে আর তোমায় তীর্থরাজ হওয়া কেন।
•তীর্থরাজ প্রয়াগ এখানে বৃন্দাবনের ধুলিতে গড়াগড়ি যাওয়ার জন্য এই ঘাটের নাম রাজ ঘাট। 
৩) মহাপ্রভূ_বৈঠক
•এখানে দুপুর বেলা যমুনাতীরে বটগাছের তলায় মহাপ্রভূ বসে ভজন করতেন। পাশে মন্দিরে মুরারীগুপ্তের সেবিত জগন্নাথ বিগ্রহ আছে। মন্দির টিতে গৌড়ীয় মঠের সেবা।  জগন্নাথ দেব বিগ্রহের একটি বিশেষত্ব আছে এখানে জগন্নাথের কান আছে
৪)গোরে দাউজী
রাধারানী এখানে বলরাম সেজে শ্যামসুন্দরের সাথে মিলিত হয়েছিলেন। 
রাধারানী বলরামের রূপ ধরেন। 
৫) ভাতরোল_বিহারী
৬) অক্রুর_মন্দির
•বিষ্ণু লোক প্রদ তীর্থ মুক্ত অক্রুর প্রদায়িনে।
কৃষ্ণক্ষোন প্রসাদায় নমস্তে বিষ্ণু রূপিণে।। (আদিবরাহপুরান)
৭) পাগলাবাবা মন্দির
৮)রাধাকূপ
৯) রমনরেতি ,ইসকন কৃষ্ণ বলরাম মন্দির
•একসময় এই স্থান কোমল মিহি বালি আবৃত ছিল,  বর্তমানে তা অপ্রকট হয়ে গেছে।
•এখানে কৃষ্ণ বলরাম সখাদের সাথে গোরু চরাতে এসে বালিতে গড়াগড়ি খেত,  খেলত। 
•পরিক্রমা মার্গে ইসকন মন্দিরের পিছনে দুটি গাছ আছে ব্রজবাসী রা কৃষ্ণ বলরাম হিসাবে পূজা করে।  বর্তমানে একটি গাছ অপ্রকট হয়ে গেছে। 
•১৯৭৭ সালে শ্রীল প্রভূপাদ এই মন্দিরে অপ্রকট হন।  •এই মন্দিরে কৃষ্ণ বলরাম রাধাশ্যামসুন্দর নিতাই গৌর বিগ্রহ দর্শনীয় নাট মন্দিরে অষ্টপ্রহর হরিনাম সংকীর্তন চলছে। 
#বরাহ_ঘাট
•একবার কৃষ্ণ যমুনা তীরে খেলতে খেলতে মাটি ঘাঁটাঘাটিঁ করছিল তা দেখে বন্ধুরা বলে গোপাল তুই একদম শুয়োরের মত কাদা মাখামাখি করেছিস, তোকে পুরো শুয়োর লাগছে।  তখন কৃষ্ণ বলে আমি তো আগে শুয়োর ই ছিলাম।  বরাহ দেব হয়ে অবতীর্ন হয়ে পৃথিবী উদ্ধার করেছিলাম।  বন্ধুরা তখন বলে তার বরাহ রূপ দেখাতে, শ্রীকৃষ্ণ এখানে তার বরাহ রূপ দেখান। 
•যমুনা এখান থেকে অনেক দূরে সরে গেছে পুরানো যমুনার ঘাট দেখা যায়।
#বরাহদেব_মন্দির
#গো_ঘাট
•শ্রীকৃষ্ণের কালীয়দমন লীলার পর নন্দ মহারাজ এখানে কৃষ্ণের কল্যানের জন্য ব্রাহ্মণ দের গো দান করেন। 
•বর্তমানে এখানে ইসকনের গোশালা আছে। 
#কালীয়দমন_ঘাট
পরিক্রমা মার্গে র ওপরেই কালীয়ঘাট।  একসময় যমুনা এইখান দিয়ে বইত।  এখন ১মাইল দূরে সরে গেছে।  এখানে কেলিকদম্ব গাছ, কালীয়দমন বিগ্রহ দর্শনীয়। 
কালীয় নাগ গরুড়ের ভয়ে যমুনার বাঁকের ফলে তৈরী হওয়া একটি বিশাল় সরোবরে এসে আশ্রয় নেয়, যার নাম পরে হয় কালীয়হ্রদ। একমাত্র এই স্থান ই গরুড়ের থেকে নিরাপদ ছিল।  কারন সৌভরী মুনির অভিশাপে গরুড় যমুনার কাছে আসতে পারত না। 
একবার সখাদের সাথে খেলতে খেলতে তাদের বল কালীদহে পড়ে যায়। 
যে কদম গাছে উঠে শ্রীকৃষ্ণ কালীদহে ঝাঁপ দেন সেই কদমগাছ টি এখনো আছে।  গরুড় যখন অমৃত নিয়ে আসছিল নাগমাতা কদ্রুর নির্দেশে তখন ইন্দ্রের পুত্র জয়ন্ত কাকের বেশে গরুড়ের মুখ থেকে অমৃত কেড়ে নিতে কয়েকবার ছোঁ মারে, যদিও সে অমৃত কেড়ে নিতে পারেনি কিন্তু অমৃত একটুখানি চলকে পড়ে এই গাছের ওপর তাই থেকে এই কদম্ব গাছটি চিরজীবী হয়ে আজো দর্শন দিচ্ছে। 
গৃহীত্বাহমৃতপাত্রং হি মার্গে গচ্ছন্ গরুত্মতা।
কদম্বে কলসং ন্যস্য যমুনানীর গো বিরাট্।। (মৎস্য পুরাণ)
#প্রবোধানন্দ_সরস্বতী_সমাধি
প্রবোধানন্দ সরস্বতী কাম্যবনে সুরভী কুন্ড তীরে কিছুকাল ভজন করে শেষজীবনে এখানেই ভজন করতেন।  ত্রিদন্ডী রামানুজ সম্প্রদায়ী সন্ন্যাসী প্রবোধানন্দ ছিলেন গোপাল ভট্ট গোস্বামীর কাকা। পরে তিনি বৃন্দাবনে এসে গৌড়ীয় বৈষ্ণব সম্প্রদায়ী হন। রাধারস সুধানিধি, বৃন্দাবন মহিমামৃত, চৈতন্য চন্দ্রামৃত, প্রভৃতি গ্রন্থ রচনা করেছিলেন। 
#কালীয়মর্দন_মন্দির
কালীয়ঘাটের পিছনে এই মন্দিরে সুন্দর কালীয়মর্দন বিগ্রহ দর্শনীয়। 
এরপর রাস্তার পাশে প্রস্কন্দন ঘাট ও দ্বাদশাদিত্যটীলা পড়বে।  কালীয়নাগ কে বধ করতে গিয়ে কৃষ্ণ অনেকক্ষন যমুনায় ডুবে ছিলেন। জল থেকে উঠে তার খুব ঠান্ডা লাগছিল।  তাই এই টীলার ওপর সূর্যের তাপ নিতে উঠে আসেন।  তখন দ্বাদশ ব্রহ্মান্ড থেকে দ্বাদশ সূর্য এসে প্রকট হয়।  তাই নাম হয় দ্বাদশাদিত্যটীলা। সূর্যের তাপে কৃষ্ণের গা দিয়ে ঘাম ঝরতে থাকে।  গড়িয়ে এসে যমুনার জলে মেশে।  তাই এই ঘাটের নাম প্রস্কন্দন ঘাট।
আরদিন আইলা প্রভূ দেখিতে বৃন্দাবনে
কালীয় হ্রদে স্নান কৈল আর প্রস্কন্দনে।। চৈ. চ
#মদনমোহন_মন্দির
দ্বাদশাদিত্যটীলার ওপরেই এই মন্দির।  গোস্বামী দের দ্বারা বৃন্দাবন পুনরুদ্ধারের পর বৃন্দাবনে প্রথম মন্দির।
•এখানে প্রাচীন মদনমোহনের মন্দির, কীর্তন মন্ডপ, সনাতন গোস্বামীর ভজন কূটীর, কৃষ্ণ কূপ দর্শনীয়।  •মদনমোহন মন্দিরে মদনমোহনের প্রতিভূ বিগ্রহ আছে।  মূল বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বজ্রনাভ। মুসলিম আক্রমনের পর মুল বিগ্রহ টি হারিয়ে যায়।  অদ্বৈত আচার্য্য বৃন্দাবন পরিক্রমায় এসে দ্বাদশাদিত্যটীলার কাছে একটি বট গাছের তলায় এই বিগ্রহ খুঁজে পান।  তিনি মহাবনবাসী এক চৌবে ব্রাহ্মন কে বিগ্রহ সেবার দায়িত্ব দিয়ে বাংলায় ফিরে আসেন।  পরবর্তী কালে সনাতন গোস্বামী মূল বিগ্রহ টি দ্বাদশাদিত্যটীলায় প্রতিষ্ঠা করেন।  মুলতান বাসী এক বনিক রামদাস কপূর মদনমোহনের জন্য এখানে মন্দির নির্মান করে দেন। 
•সনাতন গোস্বামী মদনমোহন মন্দিরের পাশে মহাপ্রভূর জন্য একটি মন্দির তৈরী করেন। কিন্তু মহাপ্রভূ পরে আর বৃন্দাবনে আসেননি।।
•সনাতন গোস্বামী গোকুল মহাবনে যখন ভজন করতেন একদিন এক বালক কে রাখাল দের সাথে রমনরেতী তে খেলতে দেখেছিলেন, সবাই তাকে মদন বলে ডাকছিল।  অদ্ভূত তার রূপ মাধুরী। এমন তার আকর্ষণ সনাতন তার দিক থেকে চোখ ফেরাতে পারেনা। তাদের খেলা শেষ হলে সনাতন তার পিছন পিছন চলতে লাগলেন পুরুষোত্তম চৌবের বাড়ি গিয়ে ছেলেটি মন্দিরে ঢুকে গেলে সনাতন তাকে আর দেখতে পেলেন না।  দেখলেন মন্দিরে মদনগোপাল দাঁড়িয়ে। পরে একদিন সেই বাড়িতে ভিক্ষা করতে এসছেন দেখলেন বাড়ির গৃহিনী তার ছেলে দের সাথে মদনকেও খেতে দিয়েছেন, তাদের এত খিদে লেগে গেছিল যে তিনি স্নান না করেই রান্না বসিয়ে তাদের খেতে দিয়েছিলেন।  সনাতন দেখলেন মদনমোহন অন্য বালকদের সাথে বালকসুলভ চপলতায় এর ওর উচ্ছিষ্ট পাত্র থেকে খাবার কেড়ে নিয়ে খাচ্ছে কেউ ভালো খাওয়ার টা উচ্ছিষ্ট হাতে মদনমোহনের মুখে দিচ্ছে, আনন্দে সনাতন চৌবে গৃহিনীর স্তব স্তূতি করতে লাগলেন। ও চৌবে গৃহিণী র থেকে বালকদের ভোজন অবশেষ চেয়ে নিলেন।  পরদিন মদনমোহন সনাতন কে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেন তুমি আমাকে চৌবে ব্রাহ্মনের থেকে চেয়ে এনে জল তুলসী দিয়ে সেবা কর।  ওদিকে চৌবে গৃহিণী কে স্বপ্ন দিয়ে বলেন বহুদিন আমি তোমার সেবা নিয়েছি কাল সনাতন গোস্বামী ভিক্ষা নিতে এলে তার হাতে আমায় দিও। পরদিন সকালে সনাতন ভিক্ষা করতে এসে স্বপ্নের কথা বললেন। চৌবে দম্পতি মদনমোহনকে তার হাতে দিয়ে বিলাপ করতে লাগলেন। সনাতন  দ্বাদশাদিত্যটীলায় কূটীর করে মদনমোহনকে স্থাপন করলেন। তিনি রোজ মুষ্টিভিক্ষা করে যে আটা পেতেন তাই দিয়ে মোটা রুটি বানিয়ে ভোগ দিয়ে অবশেষ পেতেন। রোজ নুন ছাড়া রুটি খেতে খেতে একদিন মদনমোহন বললেন
মদনমোহন কহে লবন বিহনে
খাইতে না পারি না রুচে বদনে
সনাতন কহে যদি খাইতে নারিব
নিত্যই লবন মুঞি কোথাপাব
আর দিন লবন মাগিয়া আনি দিল
পুনঃ কহে রুখা আঙ্গা খাইতে নারিল
তেহো কহে ঘৃত শর্করা কোথা পাব
বিষয়ীর স্থানে আমি মাগিতে নারিব (ভক্তিরত্নাকর)
তখন মদনমোহন নিজেই ব্যাবস্থা করলেন।  মূলতানের এক ব্যাবসায়ী রামদাস কপূর ব্যাবসার জন্য পন্য বোঝাই নৌকা নিয়ে যাচ্ছিলেন যমুনা দিয়ে,  দ্বাদশাদিত্যটীলার কাছে তার নৌকা চড়ায় আটকালো।  বহু কষ্টে ও নৌকা মুক্ত করতে পারলনা।  তখন এক গোপবালক এসে তাকে বলল তুমি দ্বাদশাদিত্যটীলায় যাও সেখানে সনাতন নামে এক সাধু আছে সে তোমার নৌকা মুক্ত করতে পারে।  সনাতনের কাছে সেই বনিক সব কথা জানালে সনাতন বুঝলেন এসব মদনমোহনের কাজ।  বললেন আমার কোনো ক্ষমতা নেই নৌকা ছাড়ানোর তবে ঐ কূটীরে মদনমোহন আছে তাকে বল গিয়ে। মদনমোহনের কাছে প্রার্থনা করলে তার লোকেরা এসে খবর দেয় হঠাৎ প্রবল ঝড় এসে নৌকা সব মুক্ত হয়ে গেছে। সেবার ব্যাবসায় গিয়ে তার প্রচুর লাভ হল সেই টাকায় বনিক বিশাল মদনমোহন মন্দির বানিয়ে দিলেন। সনাতন গোস্বামী কৃষ্ণদাস ব্রহ্মচারী কে সেবাইত নিযুক্ত করেন। 
•মদনমোহন ও গোবিন্দজী প্রকট হলে পুরীর রাজা পুরুষোত্তম জানা দুটি রাধারানীর বিগ্রহ তৈরী করে বৃন্দাবন পাঠান। বিগ্রহ বৃন্দাবনে পৌছালে পূজারী সমস্যায় পড়ে দুজন রাধারানী কেন। মদনমোহন স্বপ্নে দর্শন দিয়ে বলেন বড় বিগ্রহ ললিতাদেবীর, ছোটবিগ্রহ রাধারানীর,  ললিতাদেবী কে আমার ডানদিকে ও রাধারানীকে বামদিকে বসাও। 
•ঔরঙ্গজেব বৃন্দাবন আক্রমন করলে জয়পুরের রাজা সওয়াই জয়সিংহ বৃন্দাবনের সপ্তদেবালয়ের সব দেব বিগ্রহ জয়পুরে নিয়ে যান, কেবল রাধারমন বাদে। তার বোন মদনমোহনের সাথে খেলা করতেন করৌলীর রাজা গোপাল সিং এর সাথে তার বিবাহ হলে যৌতুক রূপে মদনমোহন কে নিয়ে করৌলী তে যান।  এখন মদনমোহন করৌলীতে আছেন। গোপালসিং এর গুরু সুবলদাসজী তার শিষ্য কৃষ্ণচরন দাস জী মদনমোহনের সেবাইত ছিলেন তারপর থেকে লৌকিক বংশধারায় সেবা হচ্ছে
#সনাতনগোস্বামী_সমাধি
মদনমোহন মন্দিরের পিছনে সিঁড়ি দিয়ে নেমে বাম দিকে গেলে পরিক্রমা মার্গ। ডানদিকে গেলে একটা গলিতে সনাতন গোস্বামীর সমাধি। ঐ গলির পর মদনমোহনের নূতন মন্দির।
সমাধির একপাশে তপন মিশ্র ও চন্দ্রশেখর আচার্য্যরত্নের সমাধি,  ও অন্য পাশে গ্রন্থ সমাধি আছে। 
#নূতন_মদনমোহনমন্দির
১৮১৯ সালে নন্দলাল বসু এই মন্দির টি নির্মান করে দিয়েছেন। মন্দিরে মদনমোহনের প্রতিভূ বিগ্রহ রাধারানী ললিতাদেবী
#অষ্টসখী_মন্দির
ভক্তিসিদ্ধান্তসরস্বতী ঠাকুরের শিষ্য হেতমপুরের মহারাজা রামরন্জন চক্রবর্তী এই মন্দির নির্মান করেন।  অষ্টসখী ও রাধারাসবিহারী বিগ্রহ দর্শনীয়।
#অদ্বৈত_বট
•এখান থেকে অদ্বৈত আচার্য্য মদনমোহন বিগ্রহ ও নিকুন্জবনে বিশাখা দেবীর আঁকা চিত্রপট উদ্ধার করেন । বিশাখাদেবী শ্রীকৃষ্ণের চিত্র এঁকে রাধারানীকে দেখান তা দেখে রাধার পূর্বরাগ জন্মায়। মদনমোহন অদ্বৈত আচার্য্য কে স্বপ্নে দেখান নিকুন্জবনে সেই চিত্রপট আছে যা আমার সাথে অভিন্ন তুমি নবদ্বীপে গিয়ে তার সেবা কর। 
•এখানে বসে তিনি ভজন করতেন। এখানেই মাধবেন্দ্রপুরী র থেকে দীক্ষা লাভ করেন। 
তিনি নবদ্বীপে ফিরে আসার সময় মদনমোহন তাকে জানান তিনি বৃন্দাবন ছেড়ে যেতে চান না।  তাই মদনমোহনের সেবার দায়িত্ব পরশুরাম চৌবেকে দিয়ে যান। পরে শান্তিপুরে মদনমোহনের মত একটি বিগ্রহ তৈরী করে সেবা করতেন। যার নাম মদনগোপাল।  পরবর্তী কালে মদনগোপাল কে বৃন্দাবনে এনে অদ্বৈতবটে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিশাখাদেবীর আঁকা চিত্রপট শান্তিপুরে মদনগোপাল বাড়ি থেকে হারিয়ে গেছে। 
এরপর আবার পরিক্রমা মার্গে উঠতে হবে।
#ইমলীতলা_ঘাট ৫৩০১২০০ ৪০০৮০০
•যমুনাতীরে এখানে একটি তেঁতুল গাছ ছিল।  যমুনা বর্তমানে দূরে সরে গেছে। প্রাচীন তেঁতুল গাছটি অপ্রকট হয়ে গেছে।  তেঁতুল গাছের প্রাচীন গুঁড়ি র পাশে এখন নতুন গাছ উঠেছে।  এখানে ভক্তিসারঙ্গ গোস্বামী গৌড়ীয় মঠ প্রতিষ্ঠা করেছেন। গৌড়ীয় মঠে সনাতন গোস্বামী সেবিত নিতাই গৌর বিগ্রহ, চৈতন্যপাদপীঠ,  মহাপ্রভূ বৈঠক দর্শনীয়। 
•একবার কৃষ্ণ বিরহে রাধারানী ঘুরতে ঘুরতে এখানে আসেন, ও তার প্রিয় এই ইমলী বৃক্ষের তলায় বসে কৃষ্ণের কথা ভাবতে থাকেন, বিপ্রলম্ভ ভাবে কৃষ্ণলীলা ভাবতে ভাবতে তার অঙ্গ শ্যামবর্ন হয়ে যায়। 
একবার সেবাকুন্জে  রাসের সময় রাধারানীর মনে হয় কৃষ্ণ যখন সব গোপী দের সাথেই রাস করছে তাহলে তার কোন উৎকর্ষতা নেই? এই ভেবে তার অভিমান হয়।  তা বুঝতে পেরে কৃষ্ণ রাধারানী কে নিয়ে রাসমন্ডল ত্যাগ করে শৃঙ্গারবটে চলে আসেন সেখানে রাধারানী কে সাজিয়ে দেন।  এদিকে তাদের খুঁজতে খুঁজতে  গোপীরা এখানে চলে আসে।
তাই দেখে কৃষ্ণ রাধারানী কে নিয়ে শৃঙ্গারবট ছেড়ে চলে যায়, যেতে যেতে রাধারানী বলেন তার পায়ে ব্যাথা হচ্ছে আর হাঁটতে পারছেন না।  তখন কৃষ্ণ রাধারানী কে কাঁধে তুলে নেন। কাঁধে নিয়ে চলতে চলতে ঝারুমন্ডলে জাম গাছের নিচে এসে রাধারানী কে রেখে কৃষ্ণ হঠাৎ অন্তর্ধান করেন। যাতে রাধারানীর বিরহভাব আরো তীব্রতর হয়।  রাধারানী বিরহে কাতর হয়ে কৃষ্ণ কে খুঁজতে থাকেন।  বলেন ভাগবতের সেই বিখ্যাত শ্লোক
"হা নাথ রমন প্রেষ্ঠ ক্বাসি ক্বাসি মহাভূজ
দাস্যস্তে কৃপানায় মে সখে দর্শয় সন্নিধিম" ভাঃ১০/৩০/৩৯
এদিকে রাধারানী কে ছেড়ে আসার জন্য শ্রীকৃষ্ণ বিরহ অনুভব করেন। ইমলীতলায় বসে তিনি রাধার গুন ভাবতে থাকেন।  তথাহি চৈতন্য চরিতামৃতে
কোটিকাম জিনি রূপ যদ্যপি আমার
অসমোর্দ্ধ মাধুর্য্য সাম্য নাহি যার
মোর রূপে আহ্লাদিত হয় ত্রিভুবন
রাধার দর্শনে মোর জুড়ায় নয়ন
মোর বংশী গীত আকর্ষয়ে ত্রিভুবন
রাধার বচনে হরে আমার শ্রবণ
যদ্যপি আমার রসে জগৎ সুরস
রাধার অধর রসে আমা করে বশ।।
যদ্যপি আমার স্পর্শ কোটীন্দু শীতল
রাধিকার স্পর্শে আমায় করে সুশীতল।।
এভাবে রাধারানীর গুনমহিমা ভাবতে ভাবতে রাধাবিরহ কাতর শ্রীকৃষ্ণ সর্ব্বত্র রাধারূপ দেখতে পান, ও রাধাভাবে ভাবিত হয়ে পড়েন তার গায়ের রঙ রাধারানীর মত গৌর বর্ন হয়ে যায়। 
রাধা বিশ্লেষতঃ কৃষ্ণোহ্যেকদা প্রেমবিহ্বল
রাধামন্ত্রং জপন ধ্যায়ণ রাধাং সর্ব্বত্র পশ্যতি (আদিবরাহপুরান)
•ইমলীতলা বিপ্রলম্ভ ভাবের স্থান তাই মহাপ্রভূ বৃন্দাবনে এসে এখানে বিপ্রলম্ভ ভাবে রাধারানীর ভাব আস্বাদন করতেন। চৈতন্যচরিতামৃতে
প্রাতে বৃন্দাবনে কৈল চীরঘাটে স্নান
তেঁতুলতলাতে আসি করিলা বিশ্রাম।।
কৃষ্ণলীলা কালের সেই বৃক্ষ পুরাতন
তারতলে পিঁড়ি বাঁধা পরম চিক্কন
নিকটে যমুনা বহে শীতল সমীর
বৃন্দাবন শোভা দেখে যমুনার নীর
তেঁতুলতলে বসি করেন নাম সংকীর্তন
মধ্যাহ্ন করি আসি করেন অক্রুরে ভোজন।।
বৃন্দাবনে আসি প্রভূ বসিয়া একান্ত
নাম সংকীর্তন করে মধ্যাহ্ন পর্যন্ত।।
•এখানে রাধারানী কে বৃন্দাবনেশ্বরী ঘোষনা করে তার অভিষেক করানো হয়। রাই রাজা ঘোষণা করে সব সখীরা বৃন্দাদেবীকে  মন্ত্রী ললিতাকে সেনাপতি, ও নিযুক্ত করে।
#শৃঙ্গার_বট ৮০০১২৩০৪৩০৮০০
সেবাকুন্জে রাসস্থলীতে সব গোপীদের ছেড়ে কৃষ্ণ রাধারানী কে নিয়ে এখানে চলে আসেন। রাধারানীকে নানারকম বনফুল দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছিলেন। যখন রাধারানীকে এভাবে সাজাচ্ছিলেন তথন রাধারানী একটা আয়নায় শ্রীকৃষ্ণের মুখ দেখছিলেন। 
নিত্যানন্দ প্রভূ ব্রজ পরিক্রমায় এসে এখানে বসে ভজন ও কৃষ্ণ লীলা স্মরণ করতেন। 
শ্রীকৃষ্ণ যেখানে রাধারানী র শৃঙ্গার করেছিলেন মন্দিরের পিছনে সেই স্থানটি আছে। মন্দিরে মহাপ্রভূকে কাজী যে শ্রীখন্তা দিয়েছিল তা এখানে আছে। 
শৃঙ্গার বট প্রনাম
শৃঙ্গারেঙ্গিতভূষায় কৃষ্ণায় পরমাত্মনে
শৃঙ্গাররূপিনীভ্যস্তু গোপিকাভ্যো নমো নমঃ ৯/৩৫
#ঝাড়ুমন্ডল
এখানে একটি জামগাছ আছে যেখানে  রাধারানী কে কাঁধে নিয়ে চলতে চলতে কৃষ্ণ রাধারানীকে রেখে অন্তর্হিত হন। শ্রীকৃষ্ণ কেন রাধারানীকে ত্যাগ করে চলে গেছিলেন? তার প্রতি রাধারানীর লালসা বাড়ানোর জন্যই রাধারানীকে ত্যাগ করে চলে যাওয়া। ময়া পরোক্ষং ভজতা তিরোহিতং ভাঃ ১০/৩২/২১  কারন আমি অন্তর্হিত হয়ে আমার প্রতি রাধারানীর যে গাঢ় প্রেম তার মাধুর্য্য আস্বাদন করি।
এখানে এক বৃদ্ধা ব্রজবাসী চাকিতে গম ভাঙ্গত,  সে কানে কম শুনত চোখেও দেখতে পেতনা। তার গম ভাঙ্গার জন্য চাকিতে খুব আওয়াজ হত, কাছেই বাবাজীরা ভজন করতেন,  কৃষ্ণকথা আস্বাদন করতেন,  ঐ আওয়াজে তাদের অসুবিধা হত,  কিন্তু বৃদ্ধা মাতাজীর এই একমাত্র জীবন ধারণের উপায় বলে তারা কিছু বলতেন না।
একদিন বালক শ্রীকৃষ্ণ এসে তার চাকিতে পা রেখে চাকি থামিয়ে দিয়ে বলে মাঈয়া তোর চাকির আওয়াজে বাবাজী দের ভাগবত পাঠে অসুবিধা হয়।  তাই আমি চাক্কি থামিয়েছি। মাঈয়া তোকে আর চাক্কি চালাতে হবেনা।  আমার চরন চিহ্ন এই চাক্কিতে পড়েছে যা দেখতে ব্রজবাসীরা আসবে তারা যা প্রণামী দেবে তাতে তোর চলে যাবে। এখানে শ্রীকৃষ্ণচরনচিহ্ন দেখাযায়।
#চীরঘাট
এখানে শ্রীকৃষ্ণ গোপীদের বস্ত্র চুরি করেন। 
কেশী দৈত্যকে বধের পর কৃষ্ণ এখানে বিশ্রাম করেছিলেন। রাসের পর গোপীরা ক্লান্ত হয়ে যমুনার জলে স্নান করতে যায়।  তারা তাদের বস্ত্র বেশভূষা যমুনার তীরে রেখে জলে নামলে কৃষ্ণ সেগুলি নিয়ে ঘাটের কাছে কদম গাছে উঠে যান। তারা যখন স্নান করে উঠতে যাবে তখন তারা দেখল যেখানে তারা কাপড় গুলি রেখেছিল সেগুলি আর নেই। তারা লজ্জায় ভয়ে চারদিকে কাপড় গুলি খুঁজতে থাকে।  এভাবে বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণ তার অন্তরঙ্গ জন দের সাথে অনেক মজার লীলা করেছিলেন। 
বৃন্দাবন পরিক্রমার সময় চৈতন্য মহাপ্রভূ এই ঘাটে স্নান ও বিশ্রাম করেছিলেন।
#কেশীঘাট
কেশীদৈত্যকে বধ করে শ্রীকৃষ্ণ এখানে যমুনায় স্নান করেছিলেন। 
কংসের অনুচর কেশী দৈত্য ব্রজমন্ডলে অনেক দিন ধরে অত্যাচার করে বেড়াচ্ছিল,  তার অত্যাচারে নন্দমহারাজের পিতা পর্জন্য মহারাজ তড়াগ তীর্থ ছেড়ে গোকুলে বসবাস শুরু করেন। 
কংসের নির্দেশে কেশী দৈত্য কৃষ্ণ কে বধ করতে বৃন্দাবনে আসে,  একদিন মধুমঙ্গল কৃষ্ণ কে বলে দেখো তোমার বাঁশী আর  ময়ূরপুচ্ছ র জন্যই সবাই তোমায় ভালোবাসে তোমার ময়ূরপুচ্ছ বাঁশী পীতবাস আমি পড়লে সবাই আমাকে ও ভালোবাসবে লাড্ডু খাওয়াবে, তার কথা শুনে তাকে খুশি করার জন্য কৃষ্ণ তাকে সেগুলো দিয়ে দেয়। এদিকে কৃষ্ণ কে হত্যা করার জন্য কেশী বৃন্দাবনে এসছিল, কংস তাকে বলে দিয়েছিল কৃষ্ণ কে কেমন দেখতে মাথায় ময়ূর পাখা হলুদ ধুতি পরা  হাতে বাঁশী থাকে। সেখানে যমুনাতীরে কৃষ্ণের মত বেশধারী মধুমঙ্গল দেখে কেশী দৈত্য এক বিরাট ঘোড়ার রূপ ধরে তাকে আক্রমন করে,  হ্রেষা ধ্বনিতে সবাইকে ভয়ভীত করে সে যখন ছুটে আসছিল তার পায়ের ভরে মাটি কাঁপছিল। সে যখন মধুমঙ্গলের দিকে ছুটে আসছিল তাকে দেখেই সে অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যায়।  সবাই ভয়ে পালালেও কৃষ্ণ স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে থাকে আর যখন বিশাল সেই ঘোড়া তার কাছাকাছি আসে তার দুই পা ধরে ঘুরিয়ে ছুড়ে ফেলে দেন।  পড়ে গিয়ে কেশী মুহুর্তের জন্য বিহ্বল হয়ে গেলেও আবার উঠে শ্রীকৃষ্ণের দিকে ধেয়ে আসে।  তার পায়ের ধাক্কায় বালক কৃষ্ণ কে মাটিতে ফেলে বধ করার মানসে উল্লসিত দৈত্য শ্রীকৃষ্ণের খুব কাছে আসতেই কৃষ্ণ তার দিকে ঘুষি ছোঁড়ে,  কিন্তু দৈত্য তার আঘাত বাঁচিয়ে তার হাত মুখে ঢুকিয়ে ফেলে।  তখন কৃষ্ণ তার হাতের আকার বাড়াতে থাকে ফলে দৈত্যের শ্বাসরুদ্ধ হয়ে যায়।  তার বিশাল চোখ দুটি ঠেলে বেরিয়ে আসে। মল মূত্র ত্যাগ করতে করতে কেশী দৈত্য মারা যায়। তারপর মধুমঙ্গলের জ্ঞান ফিরলে সে কৃষ্ণের চূড়া বাঁশী ফেরত দিয়ে বলে তোমার জিনিস কোমার রাছেই রাখো। লাড্ডুর থেকে আমার জীবনের দাম বেশী। 
#যুগলকিশোর_মন্দির
বরাহে নিধুবনে ললিতাকুন্ড
সর্বদা প্রীতিদে দেবী ললিকে কৃষ্ণবল্লভে
তীর্থরাজ নমস্তুভ্যং ললিতাকুন্ডসংজ্ঞক ৯/৪
ভবিষ্যত্তোরে বিশাখা কুন্ড প্রনাম মন্ত্র
বিশাখারমণতীর্থ নমো বৈমাল্যরূপিণে
শ্রীকৃষ্ণায় নমস্তুভ্যং যশোদানন্দনায় চ ৯/৫
ব্রাহ্মে রাধাবল্লভ দর্শন মন্ত্র
রাধাবল্লভরূপায় বিষ্ণবে ব্রজকেলিনে
নমঃ প্রগলভকান্তায় সর্বার্থসুখদায়িনে ৯/৬০
বৃন্দাবন প্রার্থনা মন্ত্র
বৃন্দাবিপিন রম্যায় ভগবদবাসহেতবে
পরমাহ্লাদরূপায় বৈষ্ণবায় নমো নমঃ ১০/৭০
কেশী ঘাট
কেশীমুক্তিদায়ৈব কেশবায় নমোস্তুতে
চতুর্ভূজায় কৃষ্ণায় কেশীতীর্থ নমোস্তুতে ১০/৭২
চীর ঘাট
অনেকবর্ন বস্ত্রৈস্তু ভূষিতায় ব্রজৌকসে
নানাচীরপ্রবেষ্টায় নমস্তে গোপীবল্লভ ১০/৭৩
বংশীবট
দশাব্দকৃষ্ণপাদাঙ্কলাঞ্ছিতায় নমো নমঃ
বংশীরবসমাকীর্ন বংশীবট নমোস্তুতে ১০/৭৪
মদনগোপালাবলোকনন মন্ত্র
যশোদানন্দনায়ৈব শ্রীমতগোপালমূর্তয়ে
কৃষ্ণায় গোপীনাথায় নমস্তে কমলেক্ষনঃ ১০/৭৫
যজ্ঞপত্নী স্থল
ব্রহ্মযজ্ঞায় তীর্থায় যজ্ঞপত্নীকৃতায় চ
যজ্ঞপত্নী মনোরম্য সুস্থলায় নমোস্তুতে১০/৭৭
অক্রুর ঘাট স্নান আচমন মন্ত্র
বিষ্ণুলোকপ্রদস্তীর্থ মুক্তাক্রুরপ্রদায়িনে
কৃষ্ণেক্ষনপ্রসাদায় নমস্তে বিষ্ণুরূপিনে ১০/৭৮
রাসমন্ডল
গোপিকাশতকান্তিভিঃ কৃষ্ণ রাসোৎসবায়চ
নমস্তে রাস গোষ্ঠায় বৈমাল্যবরদায়িনে ১০/৭৯