Prediction of incarnation of Chaitanya Mahaprabhu in scripture

Prediction of incarnation of Chaitanya Mahaprabhu in scripture





শাস্ত্রে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভূর আবির্ভাব সম্পর্কে বিভিন্ন প্রমাণ রয়েছে। যথা —
১) শ্রীমদভাগবতম গর্গমুনি নন্দ মহারাজকে বলছেন
আসন বর্ণাস্ত্রয়োহ্যস্য গৃহ্নতোহনুযুগং তনুঃ।
শুক্লোরক্তস্তথাপীত ইদানীং কৃষ্ণতাং গতঃ।।  ভাঃ ১০/৮/১৩  
অনুবাদ:- তোমার পুত্র কৃষ্ণ প্রতি যুগে তার শ্রীমূর্তি প্রকাশ করেন। পূর্বে ইনি শুক্ল, রক্ত, পীতবর্ণ ধারণ করে প্রকাশিত হয়েছিলেন, সম্প্রতি কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করে প্রকট হয়েছেন। 
সত্য যুগে ভগবান শুক্ল বর্ণ, ত্রেতাযুগে রক্তবর্ণ যজ্ঞ অবতার ধারণ করে যুগধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এই দ্বাপর যুগে কৃষ্ণ বর্ণ শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং অবতীর্ণ হয়ে যুগধর্ম স্থাপন করেন। অতএব কলিযুগে ভগবান পীত বর্ন।
নিমি মহারাজকে করভাজন ঋষি চারযুগের  অবতার সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন—
“কৃতে শুক্লশ্চতুর্বাহুর্জটিলো বল্কলাম্বরঃ।" ১১/৫/২১
সত্য বা কৃতাযুগে ভগবান শ্বেতবর্ণ, চতুর্ভূজ, জটাধারী, বল্কল পরিহিত।
“ত্রেতায়াং রক্তবর্ণোঽসৌ চতুর্বাহুস্ত্রিমেখলঃ।" ১১/৫/২৪
ত্রেতাযুগে ভগবান রক্তবর্ণ, চতুর্ভূজ, তিনটি বেদশাস্ত্রের প্রত্যেকটিতে দীক্ষিত হওয়ার লক্ষণ স্বরূপ তিনটি মেখলা ধারণ করেন।
“দ্বাপরে ভগবান্ শ্যামঃ পীতবাসা নিজায়ুধঃ।" ১১/৫/২৭
দ্বাপরযুগে ভগবান শ্যামবর্ণ, পীতবাস, শঙ্খ,চক্রাদি নিজ আয়ুধ ধারণ করে অবতীর্ণ হন।
এভাবে সত্য, ত্রেতা ও দ্বাপর যুগের অবতার ও তাদের উপাসনার পদ্ধতি বর্ননা করে কলিযুগের উপাস্য স্বরূপ ও তার উপাসনার পদ্ধতি বলছেন।
কৃষ্ণবর্ণং ত্বিষাকৃষ্ণং সাঙ্গোপাঙ্গাস্ত্রপার্ষদম্।
যজ্ঞৈঃ সঙ্কীর্তনপ্রায়ৈর্যজন্তি হি সুমেধসঃ।।  (১১/৫/৩২)
যিনি মুখে সর্বদা কৃষ্ণ এই বর্ণদ্বয় উচ্চারণ করেন, যদিও তার‌ দেহ অকৃষ্ণ অর্থাাৎ কৃষ্ণবর্ণ নয়, তা হলেও তিনি স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ। তিনি অন্তরঙ্গ সঙ্গী, পার্ষদ, অস্ত্র সমূহ পরিবেষ্টিত হয়ে কলিযুগে বুদ্ধিমান মানুষ দের দ্বারা সঙ্কীর্তন যজ্ঞের মাধ্যমে পূজিত হন।
২) মহাভারত অনুশাসন পর্ব দানধর্ম ১৪৯ অধ্যায় বিষ্ণু সহস্রনাম বর্ণনায় ৯২ ও ৭৫ শ্লোকে puna edition পৃঃ
মহাভারতে ভগবান বিষ্ণুর সন্ন্যাসরূপ ধারণের কথা বলা আছে।
সন্ন্যাসকৃচ্ছমঃ শান্তো নিষ্ঠা শান্তি পরায়ণম্। ৭৫
যদি বলা হয় এখানে রাম বা বুদ্ধ অবতারের কথা বলা হয়েছে, রাম অবতারে স্ত্রী কে সঙ্গে নিয়ে শ্রীরামচন্দ্র বনবাসে গেছিলেন‌ সন্ন্যাস গ্রহণ করেননি।
আচার্য্য শঙ্কর তার ভাষ্যে এখানে সন্ন্যাস করেছিলেন  এর অর্থ “সন্ন্যাস আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন" করেছেন।
আবার বিষ্ণুসহস্রনামেই  ৯২ শ্লোকে সুবর্ণবর্ণ, হেমাঙ্গ ইত্যাদি বিশেষণ থেকে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকেই বোঝায় কারন অন্যান্য বিষ্ণুতত্ত্ব শ্যামবর্ণ। বিশেষত ভাগবত ও অন্যান্য পুরাণ এর প্রমাণ অনুসারে ভগবানের গৌরাঙ্গ অবতার যখন স্বীকৃত হয়েছে।
সুবর্ণবর্ণ হেমাঙ্গো বরাঙ্গশ্চন্দনাঙ্গদী। ৯২

কলি যুগে ভগবানের অবতার যে প্রচ্ছন্ন তা প্রহ্লাদ মহারাজের উক্তিতে বলা হয়েছে—
ইত্থং নৃতির্য্যগৃষিদেবঝষাবতারৈর্লোকান বিভাবয়সি হংসি জগৎপ্রতীপান।
ধর্ম্মং মহাপুরুষ পাসি যুগানুবৃত্তং ছন্নঃ কলৌ যদভবস্ত্রিযুগোহথ স ত্বম।।
ভাঃ ৭/৯/৩৭
অনুবাদ:- হে ভগবান, আপনি বিভিন্ন অবতারকালে মানুষ, পশু, মহর্ষি, দেবতা, মীন, কিংবা কূর্ম, রূপে আবির্ভূত হন, যাতে বিভিন্ন লোকের মধ্যে সমগ্র সৃষ্টির পালন হয় এবং আসুরিক নীতি গুলি দমন করেন। যুগ অনুসারে হে ভগবান আপনি ধর্মনীতি রক্ষা করে থাকেন। অবশ্য কলিযুগে আপনি পরমেশ্বর ভগবান রূপে আবির্ভূত হননা।
এই প্রচ্ছন্ন অবতারের কারণ ভগবান‌ ভক্ত রূপে অবতীর্ণ হন। তাই আপনাকে ত্রিযুগী বলা হয়।‌
৩) বৃহন্নারদীয় পুরাণ
বৃহন্নারদীয়পুরাণ অধ্যায় ৫ শ্লোক ৩২
শ্রীভগবান উবাচ
অহমেব দ্বিজশ্রেষ্ঠ নিত্যং প্রচ্ছন্ন বিগ্রহঃ।
ভগবদ্ভক্তরূপেন লোকান রক্ষামি সর্বদা।।

৪) বায়ু পুরাণ
বায়ু পুরাণ, শেষখন্ড, ১৪ অধ্যায় ২৮ শ্লোক
শ্রী গৌতম উবাচ
স দেবানাহ তদ্ বিষ্ণু র্গুহ্যাদ্ গুহ্যতমং বচঃ।। ২৭
দিবিজা ভুবি জায়ধ্বং জায়ধ্বং ভক্তরূপিণঃ।
কলৌ সঙ্কীর্তনারম্ভে ভবিষ্যামি শচীসুতঃ।।
২৮
কৃতে জপৈর্মম প্রীতি স্ত্রেতায়াং হোম কর্মভিঃ।
দ্বাপরে পরিচর্য্যাভিঃ কলৌ সংকীর্ত্তনৈরপি।। ২৯
শ্রী গৌতম বললেন এভাবে ভগবান বিষ্ণু সর্বান্তর্যামী হয়েও ব্রহ্মার‌ দ্বারা সম্যক রূপে নিবেদিত হয়ে দেবগণকে গুহ্য থেকে ও গুহ্যতম বাক্য বললেন। হে দেবগণ তোমরা সকলে ভক্তরূপ ধারণ করে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়ে হরিনাম সঙ্কীর্তন আরম্ভ করো। তোমাদের সঙ্কীর্তনে আমি শচীগর্ভ হতে জন্মগ্রহন করবো। সত্যযুগে জপ ধ্যান, ত্রেতাযুগে হোম, দ্বাপরযুগে পূজাদি ও কলিযুগে কীর্তনের দ্বারাই  আমি প্রীত হই।

৫) উর্দ্ধাম্নায় সংহিতায় গৌর মন্ত্র ও গৌর উপাসনা বিধি বর্ণিত হয়েছে। 

উর্দ্ধাম্নায়সংহিতা manuscript no 
শ্রী ব্যাস উবাচ।
কেন রূপেন ভগবান্ পূজিতঃ স্যাৎ সুখাবহঃ।
ঘোরে কলিযুগে প্রাপ্তে তন্মে বদ দয়ানিধে।।
শ্রী নারদ উবাচ।
কৃষ্ণরূপেন ভগবান্ কলৌ পাপপ্রণাশকৃৎ।
গৌররূপেন ভগবান্ ভাবিতঃ পূজিতস্তথা।।
শ্রীব্যাস উবাচ।
মহাপাতকরাশীংশ্চ দহত্যাশু ন সংশয়ঃ।
কেন মন্ত্রেণ ভগবান্ গৌরাঙ্গঃ পরিপূজিতঃ।
সুখাবহঃ স্যাৎ লোকানাং তন্মে ব্রুহি মহামুনে।।
শ্রীনারদ উবাচ।
অহো গূঢ়তমঃ প্রশ্নো ভবতা পরিকীর্ত্তিতঃ।
মন্ত্রং বক্ষ্যামি তে ব্রহ্মন্ মহাপূণ্যপ্রদং শুভং।।
ॐ গৌরায় নম ইত্যেষ মন্ত্রো লোকেষু পূজিতঃ।
দ্বিভূজং স্বর্ণরুচিরং বরাভয়করং তথা।।
প্রেমালিঙ্গনসম্বন্ধং গৃণস্তং হরিনামকং।
মায়ারমানঙ্গবীজৈর্বাগ্বীজেন চ পূজিতঃ।।
ষষ্ঠাক্ষরঃ কীর্ত্তীতোহয়ং মন্ত্ররাজঃ সুরদ্রুমঃ।
এবং বহুবিধা ব্রহ্মন্ মন্ত্রাস্তে পরিকীর্ত্তিতাঃ।।
বর্ণলক্ষঃ জপেৎ মন্ত্রং দশাংশশ্চ মধুপ্লুতৈঃ।
তুলসীপত্রসংযুক্তৈর্জুহুয়াৎ পঙ্কজৈঃ শুভৈঃ।।
ভক্তান্ সংভোজয়েৎ তত্র পুরশ্চর্য্যাবিধৌ সদা।
হরিসঙ্কীর্তনং ব্রহ্মন্ সদা কার্য্যং দয়ান্বিতৈঃ।।
দেবদ্বিজাতি নিন্দাঞ্চ মনসা পরিবর্জ্জয়েৎ।
গঙ্গাতীরে কুরুক্ষেত্রে বারাণস্যাং বিশেষতঃ।।
বৃন্দাবনে চ মন্ত্রোঽয়ং সাধিতঃ সিদ্ধিমাপ্নুয়াৎ।
পুরুষোত্তমে চ মন্ত্রোঽয়ং শীঘ্রং সিদ্ধ্যতি সাধিতঃ।
ইতি শ্রী উর্দ্ধাম্নায়সংহিতায়াং গৌরমন্ত্রোদ্ধারো নাম তৃতীয় অধ্যায়ঃ।।
অনুবাদ:- শ্রী ব্যাসদেব বললেন হে নারদ, হে দয়ানিধি, ঘোর কলিযুগে কোন রূপে শ্রীভগবান পূজিত হন তা আমায় বলুন।
শ্রী নারদ বললেন শ্রীকৃষ্ণ নামের দ্বারা ভগবান পাপ সমূহ নাশ করেন, ও গৌর রূপে ভগবান পূজিত হন।
ব্যাসদেব বললেন মহাপাপরাশী ও যে দগ্ধ হয় তা নিয়ে কোন সংশয় নেই। কোন মন্ত্রে ভগবান গৌরাঙ্গ পূজিত হন?
শ্রী নারদ বললেন অহো! তুমি অত্যন্ত নিগূঢ় রহস্য জিজ্ঞাসা করেছ। মহাপূণ্যপ্রদ সেই শুভ মন্ত্র আমি তোমার কাছে বর্ণনা করছি তা শ্রবণ কর। ॐ গৌরায় নম এই মন্ত্র দ্বারা তিনি সর্বলোক দ্বারা পূজিত হন। তিনি দ্বিভূজ, উজ্জ্বল স্বর্ণবর্ণ, বরাভয়দাতা, কৃষ্ণ প্রেমে সকলকে আলিঙ্গনদাতা, হরিনাম গানরত। এই ষড় অক্ষর যুক্ত মন্ত্র দ্বারা তিনি পূজিত হন, এই মন্ত্র মায়া, রাম, অনঙ্গ ও বাগ বীজ যুক্ত। এই ষড়াক্ষর মন্ত্ররাজ যা তোমার কাছে কীর্তন করলাম তা কল্পবৃক্ষ তুল্য ও কৃষ্ণপ্রেমদানকারী। এই মন্ত্র লক্ষবার জপ করে তুলসী সহ পদ্ম দ্বারা ভগবানের উপাসনা করবে। ভক্ত দের ভোজন করিয়ে পুরশ্চরণ করবে।‌ ও হরিসঙ্কীর্তন করবে।
মানসেও ভগবান, ভগবদভক্ত নিন্দা পরিত্যাগ করে গঙ্গাতীরে যেমন বারানসী, কুরুক্ষেত্রে এই মন্ত্র জপ করবে। বিশেষত বৃন্দাবন ও পুরুষোত্তম ক্ষেত্রে এই মন্ত্র জপ দ্বারা শীঘ্রই সিদ্ধি লাভ হয়।
৬) নারদ পঞ্চরাত্র
ভক্তপ্রিয়ো ভক্তিদাতা দামোদর ইভস্পতিঃ।
ইন্দ্রদর্পহরোঽনন্তো নিত্যানন্দচিদাত্মকঃ।।
চৈতন্যরূপশ্চৈতন্যশ্চেতনাগুণবর্জ্জিতঃ।
অদ্বৈতাচারনিপুনোঃ অদ্বৈতঃ পরমনায়কঃ।।
নারদ পঞ্চরাত্রে চতুর্থ রাত্রের ৮ম অধ্যায়ে ১১৬-১১৭ সংখ্যক শ্লোকে ভগবানের শ্রী চৈতন্য, নিত্যানন্দ, অদ্বৈত ইত্যাদি নামের উল্লেখ আছে।
৭) ব্রহ্মযামল তন্ত্র
ভবিষ্যামি শচীপুত্রঃ কলৌ সঙ্কীর্তনাগমে।
হরিনাম প্রদানেন লোকান সংতারয়াম্যহং।।4th page  অধ্যায়
ব্রহ্মযামল তন্ত্র manuscript no
দ্বিতীয় অধ্যায়
শিব উবাচ
ততঃ স ভগবান্ কৃষ্ণঃ লোক নিস্তার হেতুনা।
অনন্তমুক্তবানদেবো জায়স্ব পৃথিবীতলে।।
গোকুলে বলরামায় পাতু ত্বাং শৃণু পার্বতী।
নিত্যানন্দঃ স হি ভাবি লোকানাং হিতকাম্যয়া।।
শচী চ দেবকী দেবী বসুদেবঃ পুরন্দরঃ।
তয়োঃ প্রীতে স ভগবান্ চৈতন্যত্বং গতঃ স্বয়ং।।
কলৌ প্রবৃত্তে লোকানাং গৌরচন্দ্রঃ শচীসুতঃ।
আবিরাসীৎ গৌররূপী হরিনামেতি সংস্মরন্।।
কলৌ পূজাদিকং নাস্তি ধ্যান যজ্ঞাদিকী ক্রিয়া।
হরিনাম বিনা দেবী নাস্তি সত্যং ব্রবীম্যহম্।।
অনুবাদ:- তখন ভগবান শ্রী কৃষ্ণ লোক নিস্তারের জন্য অনন্তদেব কে প্রেরণ করলেন, হে পার্বতী গোকুলে  যিনি বলরাম তিনিই লোক হিতার্থে  নিত্যানন্দ প্রভু রূপে প্রকট হলেন, দেবকী দেবী শচীমাতা রূপে ও বসুদেব পুরন্দর মিশ্র রূপে আবির্ভূত হলেন।
কলির প্রারম্ভ হলে হরিনাম দ্বারা ত্রিলোক উদ্ধার করতে গৌরচন্দ্র নিজলোক সহ  আবির্ভূত হলেন। হে দেবী আমি সত্য করে বলছি কলিতে কোন পূজাদি, ধ্যান যজ্ঞ ক্রিয়া নেই কেবল হরিনামের দ্বারাই জীব উদ্ধার হয়। 



৮) অগ্নিপুরাণ 
শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর শ্রীনবদ্বীপধাম মাহাত্ম্য প্রমাণখন্ডে অগ্নিপুরাণস্থ একটি মন্ত্র উদ্ধার করেছেন
শান্তাত্মা লম্বকন্ঠশ্চ গৌরাঙ্গশ্চ সুরাবৃতঃ।
অনুবাদ:- প্রশান্তাত্মা, লম্বকন্ঠ, দেবগণপরিবেষ্টিত গৌরাঙ্গরূপে আবির্ভূত হবেন। 
অগ্নিপুরাণ অধ্যায় ৪৯ শ্লোক ৮