Abhiram Lilamrita Chapter 1
ভক্ততিলক "রামদাস" বিরচিত
অভিরাম লীলামৃত
ভক্ততিলক "রামদাস" বিরচিত
অভিরাম লীলামৃত
।।মঙ্গলাচরণ।।
বন্দেহহং শ্রী শ্রীগোপীনাথ মহাপ্রভূর্বিজয়তে
যত্রাভিরামো মহান গোস্বামী শ্রীযুত পদকমলং।
মালিনী সহিতং শক্ত্যাবতারং সহগণ চরণাম্বুজে সদা শরণমিতি।। ১
বন্দেহহং শ্রীগুরোঃ শ্রীযুত পদকমলং শ্রীগুরুন বৈষ্ণবাংশ্চ।
শ্রীরূপং সাগ্রজাতং সহগণ রঘুনাথান্বিতং তং সজীবং
সাদ্বৈতং সাবধূতং পরিজন সহিতং শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যদেবং
শ্রী রাধাকৃষ্ণপাদান্ সহগণ ললিতা বিশাখান্বিতাং শ্রীবৃন্দাবনানুগতাংশ্চ।। ২
কৃষ্ণায় বাসুদেবায় দেবকীনন্দনায় চ
নন্দগোপকুমারায় গোবিন্দায় নমো নমঃ।। ৩
নমঃ পঙ্কজনাভায় নমঃ পঙ্কজমালিনে
নমঃ পঙ্কজনেত্রায় নমস্তে পঙ্কজাঙ্ঘ্রয়ে।। ৪
শ্রী শ্রী অভিরাম চন্দ্রায় নমঃ।
তথাহি তন্ত্রেঃ—
শঙ্খে চ ভরতশ্চৈব শ্রীদামনিগূঢ়োত্তমঃ।
কৃষ্ণ সঙ্গে সদানন্দঃ শ্রীদামাভিরামস্তথা।। ৫
জয় জয় শ্রীচৈতন্য জয় নিত্যানন্দ।
জয়াদ্বৈত চন্দ্র জয় গৌরভক্তবৃন্দ।। ৬
এসব চরণ সদা করিয়া বিশ্বাস।
অভিরামলীলা কিছু করি যে প্রকাশ।। ৭
।। নবদ্বীপ লীলায় মহাপ্রভূর ব্রজের শ্রীদাম সখাকে স্মরণ।।
সবে মিলি নবদ্বীপে করিয়ে কীর্ত্তন।
শ্রীদাম লাগিয়া প্রভূ ভাবেন তখন।। ৮
প্রেমে পুলকিত হয়ে করেন ক্রন্দন।
"কাঁহা গেলা শ্রীদাম" বলি হৈলা অচেতন।। ৯
তখন আসি নিত্যানন্দ কোলেতে করিলা।
চেতন করিয়া তাঁহে কহিতে লাগিলা।। ১০
শ্রীদাম রহিলা কোথা বলহ আমারে।
যাইব এখনি আমি আনিব তাঁহারে।। ১১
তখন বলেন প্রভূ নিত্যানন্দ প্রতি।
বৃন্দাবনে রহে তিঁহো যাহ শীঘ্রগতি।। ১২
শ্রীদামে আনিয়া মোরে দেহত সত্বর।
শ্রীদাম লাগিয়া মোর ফাটয়ে অন্তর।। ১৩
শুনি নিত্যানন্দ তবে বলে করপুটে।
বৃন্দাবনে রহে যদি আনিব নিকটে।। ১৪
সান্ত্বনা করিয়া তারে করেন গমন।
খুঁজিতে খুঁজিতে গেলা যথা গোবর্ধন।। ১৫
।।বৃন্দাবনে শ্রীদাম সখার নিত্যানন্দ প্রভূ কে পরীক্ষা।।
নীলধরা পরি চূড়া গুহাতে আছিলা।
হেনকালে নিত্যানন্দ ডাকিতে লাগিলা।। ১৬
ঘন ঘন ডাকে তিঁহো "শ্রীদাম" বলিয়া।
শুনিয়া দেখেন শ্রীদাম বাহিরে আসিয়া।। ১৭
দেখিয়া শ্রীদাম তারে বলেন বচন।
কিবা নাম হয় তব, ডাক কি কারন।। ১৮
শুনি নিত্যানন্দ তাঁরে দিলা পরিচয়।
পূর্ব্বেতে "বলাই" নাম কহি যে নির্ণয়।। ১৯
শ্রীদাম বলেন, "যদি তুমি রে বলাই।
দুঁহাতে সমান বটি জানেন সবাই।। ২০
করতালি দিয়ে তবে যাই দেখি আমি।
ধরিতে পারহ মোরে বলাই বটো তুমি।।"২১
এতেক শুনিয়া তারে বলেন নিতাই।
কেমন করিয়া যাবে যাও দেখি ভাই।। ২২
তবে করতালি দিয়ে বলেন শ্রীদাম।
ধরিতে নারিবে মোরে ওরে বলরাম।। ২৩
দৌড়িতে লাগিলা তিঁহো গোবর্দ্ধন বেড়িয়া।
চারিবার ঘোরাইয়া দেখেন চাহিয়া।।২৪
মালশাট মারি শ্রীদাম পাছু পানে চায়।
নিকটেতে বলরাম দেখিবারে চায়।।২৫
তখন ভাবিলা মনে বটে বলরাম।
বড় দুঃখ পাইলে ভাই করহ বিশ্রাম।। ২৬
কলিকালে সেই বেশ না দেখি তোমার।
অতএব সংশয় মনে জন্মিল আমার।। ২৭
মোর সনে গোবর্ধনে ফিরে চারিবার।
তোমা ভিন্ন পরিবারে শক্তি আছে কার? ২৮
পুনশ্চ শ্রীদাম তারে বলেন বচন।
কি কারনে আইলে হেথা কোন প্রয়োজন।। ২৯
এতেক শুনিয়া তিঁহো কহিতে লাগিলা।
তোমা না দেখিয়া কৃষ্ণ অচৈতন্য হৈলা।। ৩০
শুনি শ্রীদাম তাঁরে বলেন তথাই।
মোরে না বলিয়া কোথা গেলেন কানাই।।৩১
ইহা শুনি নিত্যানন্দ বলেন বচন।
বিবরিয়া কহি তাহা শুনহ কারণ।। ৩২
।। শ্রীদাম কে নিত্যানন্দ প্রভূ কর্তৃক নবদ্বীপ লীলার বর্ণনা।।
সবে মিলি গেছে ভাই নবদ্বীপপুরী।
তুমি গেলে লীলা হবে চল ত্বরা করি।। ৩৩
তথাহি শ্রীমদভাগবতমে
কৃষ্ণবর্ণং ত্বিষা কৃষ্ণং সাঙ্গোপাঙ্গাস্ত্র পার্ষদং
যজ্ঞৈ সঙ্কীর্তন প্রায়ৈর্যজন্তি হি সুমেধসঃ।। ৩৪
শুনিয়া শ্রীদাম বলে "না যাইব ভাই।
গর্ভবাস বুঝিলাম হইবে তথাই।। ৩৫
বহু ক্লেশ তথা কেবা চাহে গর্ভবাস।
আমি না যাইব তাই কহিনু নির্য্যাস।।৩৬
ইহা শুনি নিত্যানন্দ বলেন বচন।
শ্রীকৃষ্ণ সহিত আগে করহ মিলন।।৩৭
সবে মিলি যাই চল পরামর্শ করি।
তবে সে থাকিবে তুমি এই বেশ ধরি।।৩৮
শ্রীদাম বলেন পুনঃ তাঁহারে হাসিয়া।
আমারে লইয়া চল কাঁধেতে করিয়া।।৩৯
দৌড়িয়া চরণ ভারি হইল এখন।
শুনি নিত্যানন্দ তাঁরে বলেন বচন।।৪০
আমি না বলিতে তুমি করিলে প্রচার।
হাঁটিয়া দৌড়িতে চরণ ভারি যে আমার।।৪১
প্রধান গোপাল তুমি দেখহ বিচারি।
সকলের দুঃখ সুখ কর অঙ্গীকারি।।৪২
তখন শ্রীদাম শুনি করেন বিনয়।
তোমাতে আমাতে সম জানিহ নিশ্চয়।।৪৩
শ্রীকৃষ্ণ হারিলে কভু তোমা কাঁধে করি।
এবে কেন প্রয়োজন দেখহ বিচারি।।৪৪
শুনিয়া নিত্যানন্দ বলেন বচনে।
কানায়ের বশ তুমি সকলেই জানে।।৪৫
দিবারাত্র যত লীলা ব্রজেমাত্র হয়।
তোমার যে অগোচর কোনো লীলা নয়।।৪৬
তব গুনগানে কেবা নাহি হেন জন।
গৌরাঙ্গ সহিত তুমি মিলহ এখন।।৪৭
গোপাল যতেক আর চৌষট্টি মহান্ত।
জানিয়া তোমার গুণ ঘোষেন একান্ত।।৪৮
এতেক শুনিয়া তবে ঠাকুর শ্রীদাম।
বেশ ভূষা কৈল শীঘ্র অতি অনুপম।।৪৯
কিবা সে চূড়ার ঠাম দেখি মন হরে।
শীঘ্রগতি আইলা চলি নদীয়া নগরে।।৫০
।। শ্রীদাম সখার নবদ্বীপে আগমন ও অভিরাম নামকরণ।।
তখন শ্রীদামে দেখি শ্রীশচীনন্দন।
আলিঙ্গন করি দুঁহে কথোপকথন।।৫১
মহাপ্রভূ বলে ভাই “কোন সুখে ছিলে।
নিত্যানন্দে পাঠাইনু তবে সে আইলে।।"৫২
শুনিয়া শ্রীদাম তবে বলেন বচন।
“এখানে আইলে কহ কোন প্রয়োজন।।৫৩
দ্বাপর যুগের সেই বেশ গেল কোথা।
এবে কেন সবে দেখি হৈলে নেড়া মাথা।।৫৪
তোমা সবা দশা দেখি ফাটয়ে অন্তর।
প্রাণস্থির নহে মোর কহ না উত্তর।।"৫৫
এত শুনি মহাপ্রভূ বলেন বচন।
শুনহ শ্রীদাম সখা ইহার লক্ষণ।।৫৬
দ্বাপরের শেষে কলি হইল মিশ্রিত।
অতএব বৈরাগ্য ধর্ম হয় যে উচিত।।৫৭
বৈরাগ্যের ধর্মে সব জীব হবে পার।
মোর বাঞ্ছা আছে তাহা করিব প্রচার।।৫৮
পুনশ্চ শ্রীদাম কহে নাম ফিরাফিরি।
বিবরিয়া কহ মোরে বুঝিতে না পারি।।৫৯
এত শুনি মহাপ্রভূ পুনশ্চ কহিলা।
সত্য ত্রেতা দ্বাপর কলি চারি যুগ হৈলা।।৬০
সত্য ত্রেতা দ্বাপর নহে অবতার পূর্ণ।
কলিতে পূর্ণ অবতার শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য।।৬১
কলির প্রথম এই দ্বাপরের শেষে।
সাঙ্গপাঙ্গ লয়ে এবে করিব প্রকাশে।।৬২
ইহার প্রমাণ সত্য কহে শাস্ত্র রীতে।
শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য এক জান তাহা হৈতে।।৬৩
কৃষ্ণলীলা গৌরলীলা দুই এক হয়।
ভক্তরূপ হয়ে সবে রস আস্বাদয়।।৬৪
শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য নাম তেঁই সে আমার।
এবে অভিরাম বলি খ্যাতি যে তোমার।।৬৫
নিত্যানন্দে ডাকি তবে বলেন হাসিয়া।
আজি হৈতে ডাক সবে অভিরাম ভায়া।।৬৬
এই নাম রাখিলাম করিয়া নিশ্চয়।
শ্রীদাম আমায় কভু ভিন্ন ভেদ নয়।।৬৭
অভিরাম চৈতন্য এবে একই শরীর।
পশ্চাতে জানিবে তাহা যেই ভক্ত ধীর।।৬৮
হেনকালে নিত্যানন্দ বলেন বচন।
দীর্ঘ হৈলা অভিরাম না হয় শোভন।।৬৯
ইঙ্গিত পাইয়া তাঁরে বলেন তখন।
শুন ভায়া অভিরাম আমার বচন।।৭০
যেমত খেলিতে সেই বংশীবট তলে।
সেইমত খেল এবে লয়ে কুতূহলে।।৭১
দুই করে দুই ভাই তব কাঁধে ধরি।
দোলনা দোলিব মোর এই বাঞ্ছা করি।।৭২
এত শুনি নিত্যানন্দ আনন্দিত হয়ে।
দোলনা দুলেন দুঁহে কাঁধেতে ধরিয়ে।।৭৩
তথাহি অষ্টকে—
গৌর হস্ত ভ্রান্তি নিত্যানন্দ হস্ত স্কন্ধকঃ।
পূর্বজন্ম দীর্ঘগর্ব গৌরভাব পোষকঃ।।৭৪
অদ্ভূত আত্মবৈভব লোক হর্ষবর্দ্ধনঃ।
মাম্পুনাতুসোহভিরাম নামভক্তি বন্দনঃ।।৭৫
রহস্য দেখিয়া সবে করে ঠারাঠারি।
আপন সমান কৈল শক্তি যে সঞ্চারী।।৭৬
সেই হৈতে অভিরাম দীর্ঘে কিছু খাট।
প্রেমে পুলকিত অঙ্গ হইলা লম্পট।। ৭৭
সহজে রাখাল ভায়া করেন নর্ত্তন।
নৃত্য দেখি সবাকার আনন্দিত মন।।৭৮
তবে নৃত্যরাখি ভায়া বলেন বচন।
অনুজ দেখিয়া মোর রাখহ জীবন।।৭৯
চৈতন্য দেখিয়া বলে ভায়া আভিরাম।
সবাই আইলা এই নবদ্বীপ গ্রাম।।৮০
সবার সহায় তুমি শুনহ বচন।
বৃন্দাবনে ক্রীড়া কৈল যত গোপীগণ।।৮১
শক্তি সঞ্চারিয়া তুমি কৈলে বৃন্দাবতী।
শ্রীমতীর সনে তার সদাই বসতি।।৮২
শক্তিতে তোমার এত করে যে সহায়।
প্রকটেতে আসিয়াছে না জান তাহায়।।৮৩
আমার মনের কথা জানহ নিশ্চয়।
কৃপা করি কহ ভাই যাউক সংশয়।।৮৪
কৃষ্ণলীলা গৌরলীলা দুই এক হয়।
বুঝাইয়া কহিবে তুমি ইহার আশ্রয়।।৮৫
।। অভিরাম গোপালের দ্বারা গৌরলীলার রহস্য বর্ণন।।
শুনিয়া শ্রীদাম তবে বলেন বচন।
মনোবৃত্তি বুঝি সব বলেন তখন।।৮৬
তথাহি —শ্রীমুখ বচনং
পুরা ব্রজাঙ্গনাযোষিৎ ইদানীং পুরুষোঽভবৎ।
যোষিৎ যস্মাৎ কলৌ বিষ্ণুস্ততোহি পুরুষোঽঙ্গনা।।৮৭
পুরা ব্রজাঙ্গনা সব দেখি তোমা সঙ্গে।
সখাসখীগণ সঙ্গে আইলা সব রঙ্গে।।৮৮
বিষ্ণু অবতার হইল কলিযুগে।
প্রকৃতি পুরুষ সব দেখি অনুরাগে।।৮৯
দুই তিন কার্য্য তব না হল পূরণ।
সেই হেতু নবদ্বীপে সবার গমন।।৯০
প্রকৃতি মায়ায় সৃষ্টি হয় যায় রয়।
অতএব সবে হৈলা প্রকৃতি আশ্রয়।।৯১
স্বতন্ত্র হইলে কভু কার্য্য সিদ্ধি নয়।
এই মনোবৃত্তি তোমা কহিনু নিশ্চয়।।৯২
তোমার যতেক লীলা সব আমি জানি।
তোমা না দেখিয়া মোর আকুল পরানি।।৯৩
বৃন্দাবনে খুঁজি তোমা মুরলী পূরিয়া।
বনে বনে ডাকি সব আকুল হইয়া।।৯৪
কি করিব কোথা যাব কি হবে উপায়।
তোমা অদর্শনে মোর হিয়া না জুড়ায়।।৯৫
তোমায় আমায় দেখ এক প্রীতি হয়।
অতএব এই কথা সর্ব্বশাস্ত্রে কয়।।৯৬
।। ভাগবতে কৃষ্ণ বিরহে শ্রীদামের অবস্থা বর্ণন ও ব্রহ্মবিমোহন লীলা।।
ভাগবতে এই কথা করেন লিখন।
উচ্ছিষ্ট খাইলে বলি করেন তাড়ন।।৯৭
ব্রহ্মা বলে দেবগণ শুনহ বচন।
নন্দালয়ে বল সবে পূর্ণ ভগবান।।৯৮
আজিকার কথা সবে শুনহ আসিয়া।
শ্রীদাম আসিয়া অন্ন লইল মাগিয়া।।৯৯
অন্ন দেখিয়া সবে আনন্দিত মনে।
স্থান সংস্কার কৈল কোন কোন জনে।।১০০
কেহ আনি পাতিলেন পলাশের পাত।
সবাকার পাতে তবে শ্রীদাম দেন ভাত।।১০১
বালক বসিল সব চতুর্দ্দিক হইয়া।
শ্রীদাম ডাকেন কৃষ্ণ হেথা এস ভায়া।।১০২
তখন শ্রীদাম গিয়ে ডাহিনে বসিল।
খাইতে খাইতে তিঁহো কৃষ্ণ মুখে দিল।।১০৩
শ্রীদামের উচ্ছিষ্ট কৃষ্ণ করেন ভোজন।
সবে কেন বল তাকে পূর্ণ ভগবান।।১০৪
রাখাল উচ্ছিষ্ট সব করেন ভোজন।
স্বয়ং ভগবান বল কিসের কারণ।।১০৫
আর এক অদ্ভূত কথা শুন দেবগণে।
অধরে অধর দিয়া করে আলিঙ্গনে।।১০৬
দেখিয়া শুনিয়া রীতি হইনু বিস্ময়।
শিশু বৎস হরি আজি লইব নিশ্চয়।।১০৭
এত বলি ব্রহ্মা তবে ভাবে মনে মনে।
হেনকালে ধেনু বৎস গেল দূর বনে।।১০৮
ভোজন করিয়া সবে ফিরাইতে যায়।
হেনকালে ব্রহ্মা সব দেখিবারে পায়।।১০৯
শিশুবৎস হরি ব্রহ্মা করিলা গমন।
আকুল হইয়া সবে খুঁজেন তখন।।১১০
মনেতে ভাবিয়া কৃষ্ণ করেন বিচার।
শিশুবৎস লয়ে ব্রহ্মা গেল যে আমার।।১১১
উপায় চিন্তিয়া তার করিলা সৃজন।
অঙ্গ হৈতে কৈলা সব শিশু বৎসগণ।।১১২
পূর্বেতে তপস্যা ব্রজে ব্রজাঙ্গনা করে।
এক কৃষ্ণ হৈলা তেঁই সবাকার ঘরে।।১১৩
তা সবার বাঞ্ছা তুমি করিলে পূরণ।
আনন্দ হইয়া করে তোমার সেবন।।১১৪
প্রাতঃকালে উঠি সবে করে কানাকানি।
আমাদের গৃহে কাল ছিল নীলমণি।।১১৫
এইমত গোপাঙ্গনা করেন নির্ণয়।
তোমারে কহি যে পুনঃ শুনহ নিশ্চয়।।১১৬
পুনশ্চ গোষ্ঠেতে সাজি হৈ হৈ দিলা।
শব্দ শুনি ব্রহ্মা তবে আইল ধাইয়া।।১১৭
সেই শিশু বৎস পুনঃ দেখিলেন আসি।
ফিরিয়া দেখিলেন গোফাদ্বারে বসি।।১১৮
সেই শিশু বৎস ব্রহ্মা দেখেন সেখানে।
চমৎকার দেখি তাহা করে অনুমানে।।১১৯
গোফাদ্বারে বসি ব্রহ্মা রহিলা আপনি।
নারদে ডাকিয়া তথা কহে প্রিয়বাণী।।১২০
এখানে বসিয়া আমি থাকি তপোধন।
বৃন্দাবনে দেখি আইস শিশু বৎসগণ।।১২১
তখন আছেন কৃষ্ণ ঐশ্বর্য্য প্রকাশি।
সখাগণ লৈয়া নানারঙ্গ যে বিলাসী।।১২২
সহস্র সহস্র ব্রহ্মা করেন স্তবন।
কোন কর্ম বল মোরা করিব এখন।।১২৩
শ্রীকৃষ্ণ বলেন, “ব্রহ্মা শুনহ সকলে।
চতুর্ম্মুখ ব্রহ্মা হও দেখি কুতূহলে।।" ১২৪
বিবরণ শুনি মুনি প্রণাম করিয়া।
চতুর্ম্মুখ ব্রহ্মা কাছে বলিলেন গিয়া।।১২৫
নারদ বলেন, “ব্রহ্মা শুনহ বচন।
বৃন্দাবনে দেখি এলাম অকথ্য কথন।।১২৬
সহস্র সহস্র ব্রহ্মা কোথা হইতে আইল।
শিশু বৎস লয়ে তুমি শীঘ্রগতি চল।।" ১২৭
এতেক শুনিয়া ব্রহ্মা বলে প্রিয়বাণী।
অপরাধ হৈল মোর রাখহ আপনি।।১২৮
নারদ বলেন, “শুনি যাইব তথায়।
শিশু বৎস লয়ে তুমি ধর গিয়ে পায়।।১২৯
পূর্ণ ভগবানে তুমি চিনিতে নারিলে।
অপরাধ হৈল তব কি কার্য্য করিলে।।"১৩০
ব্রহ্মা বলেন, “শুন নারদ তপোধন।
মোর রক্ষা হেতু আগে করহ গমন।।" ১৩১
এতেক শুনিয়া তিঁহ বীণা হাতে লইয়া।
নাচিতে নাচিতে গেলা কৃষ্ণ গুণ গাইয়া।।১৩২
উপনীত হৈল তিঁহ সবার সাক্ষাতে।
কহিতে লাগিলা সবে আইলে কোথা হতে।।১৩৩
যাইয়া নারদ বহু করেন সম্মান।
চতুর্ম্মুখ ব্রহ্মা মোরে সবে দেহ দান।।১৩৪
এতেক শুনিয়া কৃষ্ণ বলেন উত্তর
চতুর্ম্মুখ ব্রহ্মা কই ভুবন ভিতর।।১৩৫
এই ব্রহ্মা সহস্র মুখ সকল দেখহ।
বুঝিলাম সবাকার কৌতুক করহ।।১৩৬
দেখিয়া নারদ মুনি হইলা ফাঁপর।
মুখে না নিঃসরে বাণী কহিতে উত্তর।।১৩৭
দেখিয়া নারদ পুনঃ কহে ভগবান।
চতুর্ম্মুখ ব্রহ্মা আছে মোরে দেহ দান।।১৩৮
শিশু বৎস লৈয়া তিঁহো হৈল উপনীত।
সহস্র মুখ ব্রহ্মা দেখি হইলা লজ্জিত।।১৩৯
কাতর হইয়া ব্রহ্মা পড়িলা চরণে।
পুনঃ ভগবান বলি জানিনু এখনে।।১৪০
শিশুবৎস হরি আমি কৈনু অপরাধ।
অপরাধ ক্ষমি মোরে করহ প্রসাদ।।১৪১
এতেক শুনিয়া কৃষ্ণ বলেন বচন।
মোর ভক্ত যেই হয় সে মোর জীবন।।১৪২
তথাহি—
অস্মাকং বান্ধবা ভক্তা
ভক্তানাম্ বান্ধবা বয়ং।
অস্মাকং গুরবো ভক্তা
ভক্তানাম গুরবো বয়ম্।।১৪৩
ভক্ত মোর মাতা পিতা ভক্ত মোর গুরু।
ভক্তেতে থুইল নাম বাঞ্ছাকল্পতরু।।১৪৪
ভক্ত হৈতে আমি হৈনু আমা হৈতে ভক্ত।
অতএব ভক্ত কিছু আমা হৈতে শক্ত।।১৪৫
ভক্তের উচ্ছিষ্ট আমি করি যে ভোজন।
তাহাতে জানিহ বহু পাই আস্বাদন।। ১৪৬
রহস্য ভক্তের মুখে করি যে আস্বাদ।
তাহাতে পাই আমি বড়ই আহ্লাদ।।১৪৭
আর এক কথা বলি ব্রহ্মা তব বিদ্যমান।
সব সখাগণ মধ্যে শ্রীদাম প্রধান।।১৪৮
শ্রীদামে আমায় কভু ভিন্ন ভেদ নয়।
জানিবে দুঁহাতে এক কহিনু নিশ্চয়।।১৪৯
শ্রীদামের অপমান যেই জন করে।
বৃন্দাবন প্রাপ্তি নয় কহিনু তোমারে।।১৫০
শ্রীদাম আমারে দেখ করেন পালন।
না বলিতে করে কর্ম্ম জানিয়া তখন।।১৫১
পরের মনের কথা পর নাহি জানে।
নর্ম্ম শ্রীদাম সখা তেঁই জানে অনুমানে।।১৫২
ব্রজেতে যতেক লীলা তোমা অগোচর।
এখন জানিলে ব্রহ্মা যাও নিজ ঘর।।১৫৩
শ্রীদামের মুখ কৃষ্ণ হেরিয়া তুরিত।
তখন হইলা সবে অঙ্গেতে মিশ্রিত।।১৫৪
প্রণাম করিয়া ব্রহ্মা গমন করিলা।
পূর্ণ ভগবান তিঁহ করে নরলীলা।।১৫৫
।। অভিরাম গোপাল দ্বারা মাধুর্য্য সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত বিচার।।
শুনিয়া চৈতন্য কহে অভিরাম ভাই।
মনের উদ্বেগ ঘুচে তোমা পানে চাই।।১৫৬
তোমাকে দেখিলে কেন মাধুর্য্য উদয়।
ইহার বিশেষ কথা কহিবে নিশ্চয়।।১৫৭
বলিতে বলিতে প্রভূ বিভোর হইলা।
শীঘ্রগতি গিয়ে তিঁহ কোলেতে করিলা।।১৫৮
অধরে অধর দিয়া করিল চেতন।
“স্থির হও" বলি ভাই করি নিবেদন।।১৫৯
তোমাতে আমাতে পুনঃ চল একস্থানে।
গোপনে কহিব সব যত আছে মনে।।১৬০
নিত্যানন্দ আদি করি যত ভক্তগণে।
সবাকে সান্ত্বনা করি করহ গমনে।।১৬১
এতেক শুনিয়া তিঁহ আনন্দিত হইয়া।
নিত্যানন্দে ডাকি তাহা বলেন বসিয়া।।১৬২
শুন শুন নিত্যানন্দ আমার বচন।
নবদ্বীপে সবে মিলি করহ কীর্তন।।১৬৩
সান্ত্বনা করিয়ে শীঘ্র চলিলা তখনে।
বৃন্দাবনে দুঁহে মিলি করিলা গমনে।।১৬৪
বেদ বিধি অগোচর হয় যেই স্থান।
সেখানে বসিয়া দুঁহে করে সম্ভাষণ।।১৬৫
মহাপ্রভূ বলে “শুন, অভিরাম সখা।
কত গুণ ধর তুমি মোরে দেহ লেখা।।"১৬৬
অভিরাম বলে, “গুণ নাহিক আমার।
মোরে দেখ রঙ্গিভঙ্গি অনুজা রাধার।।" ১৬৭
তথাহি অষ্টকে—
রাধিকাঙ্গ রত্নতুল্য দিব্যবর্ণ সুন্দরঃ।
সর্বসাধুযুক্ত নিত্য রাধিকাত্ম সোদরঃ।।১৬৮
নিত্যকাল নৃত্যগীত গৌরনাম কীর্ত্তনঃ।
মাম্পুনাতু সোহভিরাম নাম ভক্তিবন্দনঃ।।১৬৯
রাধিকার মনোবৃত্তি আমাতে আছয়।
তোমার দর্শনে মোর কোটি সুখোদয়।।১৭০
তোমার আশ্রিত আমি শুনহ বচন।
মোর কিবা গুণ আছে করি নিবেদন।।১৭১
দয়া কর মহাপ্রভূ লইনু শরণ।
মোর মুখে বক্তা হয়ে করহ শ্রবণ।।১৭২
নিজ সুখ বাঞ্ছা কভু নাহি যে আমার।
তব সুখ তাৎপর্য্য লাগি সঙ্কেত বিহার।।১৭৩
চৈতন্য বলেন “শুন অভিরাম ভাই।
নিজ সুখ কাকে বলে কহত বুঝাই।।"১৭৪
এত শুনি অভিরাম বলেন বচন।
একে একে কই তাহা শুনহ লক্ষণ।।১৭৫
নিজ সুখ বাঞ্ছে যেই অজ্ঞান হইয়া।
আপনি সামগ্রী খাই তোমাকে না দিয়া।।১৭৬
তারে বলি আত্মসুখী শুনহ বচন।
নিজ সুখ বাঞ্ছা বিনা না জানে কখন।।১৭৭
আত্মসুখী হয়ে যেই করয়ে ভ্রমণ।
সেইজন নাহি পায় ভক্তির লক্ষণ।।১৭৮
যত তত কর্ম্ম করে সকলি অসাঢ়।
কাষ্ঠের পুতলী যেন বয়ে মরে ভার।।১৭৯
যেইজন নাহি জানে পর সুখ রীতি।
পশুগণ প্রায় যেন দেখি তার নীতি।।১৮০
শুনিয়া চৈতন্য পুনঃ বলেন বচন।
তোমার আচরণ কহ শুনিব এখন।।১৮১
মোর প্রাণ সম দেখ হৈলে বন্ধু তুমি।
তোমার আচরণ শুনি আচরিব আমি।।১৮২
এতেক শুনিয়া তিঁহ বলেন হাসিয়া।
যত কর্ম্ম করি আমি তোমার লাগিয়া।।১৮৩
যে কোন সামগ্রী আমি পাই যে যখন।
অগ্রে লয়ে দেই কৃষ্ণে করিতে ভোজন।।১৮৪
খাইতে খাইতে যদি শেষ কিছু থাকে।
প্রিয় সখা বলি তবে দেহ মোর মুখে।।১৮৫
আনন্দিত হয়ে তবে করি যে ভোজন।
নিজদেহে সুখ নাই শুনহ বচন।।১৮৬
গোষ্ঠেতে যখন যাই সখাগণ সঙ্গে।
পাতিয়া বিনোদ খেলা কত খেল রঙ্গে।।১৮৭
সখাগণ বলে তবে শুনহ কানাই।
খেলাতে হারিবে যেই বহিবেক সেই।।১৮৮
এখন খেলিতে যদি তুমি গেলে হারি।
তুমি না বলিতে দেখ তারে কাঁধে করি।।১৮৯
এই মোর আচরণ শুনহ বচন।
আত্মসুখ নাহি মোর জানে সর্বজন।।১৯০
তব সুখে সুখী আমি তোমারে কহিনু।
প্রয়োজন নিজ সুখে কভু না করিনু।।১৯১
মাধুর্য্যে আশ্রিত হয়ে সেবা যেই করে।
নিজ সুখ কভু সেই করিতে না পারে।।১৯২
শুনিয়া চৈতন্য পুনঃ কহে অভিরাম।
মাধুর্য্য কাহাকে বলি কিবা তার কাম।।১৯৩
এতেক শুনিয়া তিঁহো বলেন তথাই।
নিজ সুখ নাহি বাঞ্ছে মাধুর্য্য বলাই।।১৯৪
আত্মা দিয়া করে যদি তোমার সেবন।
মাধুর্য্য তাহার নাম শুনহ বচন।।১৯৫
আত্ম নিবেদন দেখ করে ত সকলে।
বিবরিয়া কহ ভাই শুনি কুতূহলে।।১৯৬
এতেক শুনিয়া তিঁহো বলেন বচন।
আত্মা নিবেদন কথা অপূর্ব্ব কথন।।১৯৭
বিক্রয় করিলে যেন অশ্বপশুগণে।
তারে না আর করিতে হয় ভরণপোষণে।।১৯৮
যারে দিল অশ্বপশু তার হৈল দায়।
তারা তাকে তৃণ জল সকলি যোগায়।।১৯৯
জানিয়া শুনিয়া যেই আত্মসমর্পিল।
মাধুর্য্যে আশ্রয় হৈয়া সে জন রহিল।।২০০
নিজ সুখ বাঞ্ছে কেহ আত্মা সমর্পিয়া।
যত কর্ম করে সেই কাম বশ হইয়া।।২০১
কাম প্রেম দুঁহাকার বিভিন্ন লক্ষণ।
লৌহ আর হেম যৈছে স্বরূপ লক্ষণ।।২০২
আত্মসুখ বাঞ্ছে যেই তারে বলি কাম।
কৃষ্ণসুখ বাঞ্ছে যেই ধরে প্রেম নাম।।২০৩
শুনিয়া চৈতন্য পুনঃ কহে অভিরাম।
দেহ দিয়া ভজে তবু তারে বল কাম।।২০৪
ইহা শুনি অভিরাম বলেন বচন।
দেহ দিয়া ভজে যদি সহস্র জনম।।২০৫
মোর বাক্য শুনি যদি করিলে সংশয়।
বিবরিয়া কহি পুনঃ শুনহ নিশ্চয়।। ২০৬
শাস্ত্রভাবে যেইজন করয়ে ভজন।
নিজসুখ দেখ তার যত প্রয়োজন।।২০৭
নিজসুখ বস্তু তার ভজনে মিশ্রিত।
না হয় গোলোক প্রাপ্তি শ্রীকৃষ্ণ সহিত।।২০৮
ঐশ্বর্য্য মাধুর্য্য দেখ দুইত প্রকার।
শাস্ত্রভাবে যেই ভজে ঐশ্বর্য্য তাহার।।২০৯
ঐশ্বর্য্যের গুণে হয় দ্বারকা যে প্রাপ্তি।
পুনঃ পুনঃ গতায়াত সংসারে খ্যাতি।।২১০
ঐশ্বর্য্যের পাত্র যেই আপনা না জানে।
কামের গরিমা সদা কবে অনুমানে।।২১১
তাহাতে প্রমাণ সত্য চন্দ্রাবলী রীত।
কৃষ্ণসুখ নাহি বাঞ্ছে স্বমুখ পিরীত।।২১২
স্বপতির ধর্ম্ম বিনা নাহি জানে আন।
ভাগবতে দেখ তাহা আছয়ে প্রমাণ।।২১৩
আমার কৃষ্ণ বলিয়া করেন গরিমা।
বিবরিয়া কহি তার কামের মহিমা।।২১৪
একদিন তাহা সনে মিলন করিলা।
তব মনোবৃত্তি আমি তখন জানিলা।।২১৫
বহুত ভর্ৎসনা সেই করিতে লাগিলা।
মিলনে কবজ দেহ তোমারে কহিলা।।২১৬
অন্যান্য যুবতী সনে না কর মিলন।
তবে সে মিলিব আমি শুনহ বচন।।২১৭
তব সুখ বাঞ্ছা তিঁহ না করিল মনে।
মান করি তাহা হৈতে আইলে তখনে।।২১৮
আত্মসুখী হৈয়া সেই থাকেন ভুলিয়া।
তপ্ত লৌহ যৈছে যায় ক্ষণেকে মিলিয়া।।২১৯
দেহ সুখ দেখ কভু চিরকাল নয়।
ক্ষণেকেতে সেই সুখ পাশরণ যায়।।২২০
নিম্ব কভু মধু নহে জানে সর্বজনে।
এমতি জানিবে প্রেম চন্দ্রাবলী সনে।।২২১
শুনিয়া চৈতন্য পুনঃ বলেন হাসিয়া।
আত্মসুখ কিসে যায় কহ বিবরিয়া।।২২২
ইহা শুনি অভিরাম বলেন বচন।
পুনশ্চ জন্মিতে হয় শুনহ লক্ষণ।।২২৩
জানিয়া শুনিয়া কৃষ্ণ না করে ভজনা।
পুনঃ পুনঃ পায় সেই গর্ভের যাতনা।।২২৪
জননীর গর্ভবাস দারুণ বন্ধন।
তাহাতে প্রবিষ্ট হয় মহাপাপীগণ।।২২৫
একবার জনমিয়া আর বার মরে।
তথাপি কৃষ্ণপদ ভজিতে না পারে।।২২৬
পারিলেও করিতে নারে এমনি স্বভাব।
জানিয়া না করে কার্য্য এই মহাপাপ।।২২৭
জন্মমাত্র পড়ে মহামায়ার বন্ধনে।
ভজিতে অভয় পদ নাহি পড়ে মনে।।২২৮
মনেতে পড়িলে তবু তাচ্ছিল্য প্রকাশ।
ইহাতেই হয় জীবের মহাসর্বনাশ।।২২৯
দিবা অর্থ চিন্তা কিবা কুটুম্ব ভরণ।
রাত্রে রতি ক্রীড়াদি নিদ্রাতে মগন।।২৩০
অনিত্য দেহকে সেই নিত্য ভাবি মনে।
পিতৃ আদির মৃত্যু দেখি না দেখে নয়নে।।২৩১
উর্দ্ধপদে হেঁট মুখে পুনঃ গতাগতি।
বিপদ সময়ে কৃষ্ণ হয় তবে মতি।।২৩২
এবার জন্মিলে কৃষ্ণ করিব ভজনা।
পুনর্বার গর্ভে হেন না পাব যাতনা।।২৩৩
নিষ্ঠা হয়ে করিবে কৃষ্ণের আগমনে।
মাধুর্য্যে আশ্রিত সেই শুনহ লক্ষণে।।২৩৪
।। রাধা প্রেমের মহিমা।।
বিবরিয়া কহি তাহা শ্রীচৈতন্যভাই।
শ্রীমতী রাধার দেখ আত্মসুখ নাই।।২৩৫
তথাহি ভৈরবী রাগেন গীয়তেঃ—
“পহি লহি রাগ নয়ন ভঙ্গ ভেল।
অনুদিন বাড়ল অবধি না গেল।।২৩৬
না সো রমন না হাম রমণী।
দুই মন অনুভব পৈশলঃ জানি।।২৩৭
এ সখী সে সব প্রেম কাহিনী।
কানু ঠামে কহবি বিশরহ জানি।।২৩৮
না খুঁজিনু দূতি না খুঁজিনু আন।
দুঁহু কা মিলনে মধ্যস্থ পাঁচবান।।" ২৩৯
।। জন্মগ্রহণের পর রাধারাণীর কৃষ্ণদর্শনে প্রথম চক্ষু উন্মীলন।।
তোমাকে কহি যে ইহা শুনহ নিশ্চয়।
আমার অনুজা তেঁই জানিয়া আশয়।।২৪০
যখন হইলা রাধার মুদিত নয়ন।
দেখিতে আইল তথা যত বন্ধুগণ।।২৪১
রাধার বরণ দেখি কাঞ্চনের ন্যায়।
মুদিত দেখিয়া সবে করে হায় হায়।।২৪২
উজ্জ্বল বরণ দেখি আনন্দিত মন।
সকল দেখি যে ভাল নাহি তিনগুণ।।২৪৩
নয়ন বদন নাসা কর্ণ ছিদ্র নাই।
শুনিয়া যশোদা তবে আইলা তথায়।। ২৪৪
কৃষ্ণ কোলে করি তিঁহ দাঁড়ায়ে আছিলা।
কৃষ্ণ অঙ্গ বায়ু রাধার নাসাতে পশিলা।।২৪৫
নয়ন মিলিত হৈল দেখেন চাহিয়া।
হাস্য কটাক্ষ দুঁহে করেন বসিয়া।।২৪৬
রমণী নহেন তবু করেন নিয়ম।
কৃষ্ণ ত' রমণ নহে বাসেন সঙ্গম।।২৪৭
সনক নারদ আদি যত মুনিগণ।
রাধার নিয়ম দেখি আনন্দিত মন।।২৪৮
রাধিকার সঙ্গে যেই থাকে নিরন্তর।
নিজ সুখ নাহি তার ভুবন ভিতর।।২৪৯
শ্রীচৈতন্য অভিরাম পদে যার আশ।
অভিরাম লীলামৃত কহে রামদাস।।২৫০
ইতি শ্রী অভিরাম লীলাসূত্র বর্ণনে মহাপ্রভূ সহ বৃন্দাবনে কথোপকথন নামক প্রথম অধ্যায় সমাপ্ত।