বারানসী তে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভূর লীলা
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর সাথে সনাতন গোস্বামীর মিলন লীলা। চৈতন্যচরিতামৃত মধ্যলীলা ২০ অধ্যায়
শ্রী রূপ গোস্বামী সনাতন গোস্বামীকে পত্রে সঙ্কেতে জানিয়েছিলেন শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভূ মথুরার উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা করেছেন। তাই বাদশাহের কারাগার থেকে বেরিয়ে সনাতন গোস্বামী মথুরা র উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা করেন। কিছুদিন পর বারাণসী পৌছে সেখানে লোককে জিজ্ঞাসা করে মহাপ্রভূর ভক্ত চন্দ্রশেখরের ঘরে পৌছেতার গৃহ দ্বারে বসে রইলেন। তা জানতে পেরে অন্তর্যামী মহাপ্রভূ চন্দ্রশেখর আচার্য্য কে বললেন তোমার বাড়ির বাইরে এক বৈষ্ণব বসে আছে তাকে গিয়ে ডেকে আনো। সনাতন গোস্বামী বহুদিন কারাগৃহে বন্দী ছিলেন, তারপর এতদিন পথে হেঁটে এসছেন তাই তার বস্ত্র সব মলিন হয়েছিল, মুখ দাঁড়ি গোঁফে ভরা ছিল। তাই তাকে দেখে মুসলিম দরবেশের মত লাগছিল। তাই চন্দ্রশেখর আচার্য্য বাড়ির বাইরে এসে চারপাশ ঘুরে দেখে মহাপ্রভূ কে এসে বললেন, প্রভূ আমি তো বাইরে চারদিকে খুঁজে দেখলাম কোথাও তো কোনো বৈষ্ণবকে দেখলাম না। প্রভূ বললেন কেউ কি বসে আছে? চন্দ্রশেখর বললেন হ্যাঁ এক দরবেশ কে বসে থাকতে দেখলাম। মহাপ্রভূ হেসে বললেন, তাকেই নিয়ে আসো। তিনি বাইরে এসে সনাতন গোস্বামীকে ডেকে বললেন ওহে দরবেশ প্রভূ তোমায় ডাকছেন ভেতরে আসো। ততক্ষনে মহাপ্রভূ বাইরে এসে অঙ্গণে সনাতনকে দেখতে পেয়ে আনন্দে তাকে জড়িয়ে ধরলেন।
তবে বারাণসী গোসাঞী আইলা কতদিনে।
শুনি আনন্দিত হইলা প্রভুর আগমণে।। ৪৫
চন্দ্রশেখরের ঘরে আসি দ্বারেতে বসিলা।
মহাপ্রভু জানি চন্দ্রশেখরে কহিলা।। ৪৬
দ্বারে এক বৈষ্ণব হয়, বোলাহ তাঁহারে।
চন্দ্রশেখর দেখে ‘বৈষ্ণব' নাহিক দ্বারে।। ৪৭
‘দ্বারেতে বৈষ্ণব নাহি প্রভুরে কহিল।
‘কেহ হয়' করি প্রভু তাহারে পুছিল।। ৪৮
তিঁহো কহে,— এক দরবেশ আছে দ্বারে।
‘তাঁরে আন' প্রভুর বাক্যে কহিল আসি তারে।। ৪৯
‘প্রভু তোমায় বোলায়, আইস দরবেশ!
শুনি' আনন্দে সনাতন করিলা প্রবেশ।। ৫০
তাহারে অঙ্গণে দেখি' প্রভু ধাইয়া আইলা।
তারে আলিঙ্গণ করি প্রেমাবিষ্ট হৈলা।। ৫১
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভূ তাকে স্পর্শ করতে প্রেমাবিষ্ট হয়ে গদগদ স্বরে সনাতন বলতে লাগলেন হে প্রভূ আমাকে তুমি স্পর্শ করোনা। আমি যবনের সংস্পর্শে থেকেছি, যবনের অন্ন গ্রহণ করেছি, আমি অতি নীচ, নরাধম। দুইজনের এই প্রেমলীলা দর্শন করে চন্দ্রশেখর ও অন্যান্য ভক্ত রা বিস্মিত হলেন। মহাপ্রভূ বললেন সনাতন তোমাকে স্পর্শ করে আমার আত্মাও পবিত্র হয়। তোমার ভক্তি বলে তুমি ব্রহ্মান্ডকেও শোধন করো। পরম ভাগবত গণ জগতে সুদুর্ল্লভ তাদের দর্শন করাই চক্ষুর সফলতা, তাদের গুণকীর্তন করাই জিহ্বার সফলতা, তাদের সঙ্গ ও স্পর্শ করাই অঙ্গের সফলতা। এই বলে প্রভূ সনাতনকে ঘরে নিয়ে এসে নিজের কাছে এনে বসালেন। নিজ কমল হস্ত দ্বারা সনাতনের গায়ের ধুলা ময়লা মুছিয়ে দিতে লাগলেন। ও বললেন সনাতন শ্রীকৃষ্ণ করুণাসাগর ও পতিতপাবন, তিনি তোমায় এই মহারৌরব থেকে উদ্ধার করেছেন। সনাতন বললেন প্রভূ আমি কৃষ্ণকে জানিনা তোমার কৃপাতেই আমার উদ্ধার হয়েছে।
প্রভূস্পর্শে প্রেমাবিষ্ট হইলা সনাতন।
মোরে না ছুঁইহ কহে গদগদ বচন।। ৫২
দুইজনে গলাগলি রোদন অপার।
দেখি চন্দ্রশেখর হইল চমৎকার।।
তবে প্রভূ তাঁর হাত ধরি লঞা গেল।
পিন্ডার ওপরে তাঁরে আপন পাশে বসাইল।।
শ্রীহস্তে করেন তাঁর অঙ্গ সম্মার্জন।
তিঁহো কহে মোরে প্রভূ না কর স্পর্শন।।
প্রভূ কহে তোমা স্পর্শি আত্ম পবিত্রিতে।
ভক্তি বলে পার তুমি ব্রহ্মান্ড শোধিতে।।
তোমা দেখি তোমা স্পর্শি গাই তোমার গুণ।
সর্বেন্দ্রিয় ফল এই শাস্ত্রের নিরূপণ।।
এত কহি কহে প্রভূ শুন সনাতন।
কৃষ্ণ বড় দয়াময়, পতিতপাবন।।
মহারৌরব হৈতে তোমায় করিলা উদ্ধার।
কৃপার সমুদ্র কৃষ্ণ গম্ভীর অপার।।
সনাতন কহে কৃষ্ণ আমি নাহি জানি।
আমার উদ্ধার হেতু তোমার কৃপা মানি।।