Ram ghat

Ram ghat

রামঘাট
শেরগড় থেকে ৪ কি.মি দূরে ওবা গ্রামের যমুনাতীর রামঘাট নামে পরিচিত। পূর্বে এই স্থানের নাম ছিল আকর্ষণপুরী। এখানে বলরাম রাসলীলা করেছিলেন। বলরাম দ্বারকাপুরী থেকে ব্রজে এসে দুইমাস, মধু ও মাধব মাস (চৈত্র-বৈশাখ) ব্রজে ছিলেন। তখন তিনি তার প্রিয় গোপীগণের সঙ্গে রাসলীলা করেন। যথা শ্রীমদ্ভাগবতে—
দ্বৌমাসৌ তত্র চাবৎসীন্মধু মাধবমেব চ।
রামঃ ক্ষপাসু ভগবান্ গোপীনাং রতিমাহবন।।
ভাঃ ১০.৬৫.১৭

অনুবাদ:-

রাসনৃত্যে ক্লান্ত হয়ে দাউজীর যমুনায় স্নান করতে ইচ্ছা হল। তিনি যমুনাকে আহ্বান করলেন। যমুনা কৃষ্ণ প্রেয়সী কালিন্দী, তাই তিনি দাউজীর আহ্বান কে উপেক্ষা করে আসলেন না। তিনি ভাবলেন বারুণী পানে মত্ত হয়ে প্রভূ বলদেব তাকে আহ্বান করছেন।  দাউ ক্রোধিত হয়ে তার হল দিয়ে যমুনাকে আকর্ষণ করলেন।
নিজবাক্যং অনাহুত্য মত্তইত্যাপগাং বলঃ।
অনাগতাং হলগ্রেণ কুপিতো বিচকর্ষ হ।।
ভাঃ ১০/৬৫/৩৩

অনুবাদ:-

হলের অগ্রভাগ দিয়ে যমুনাকে আকর্ষণ করেন বলে আজো যমুনা এখানে উল্টো দিকে বইছে।
খেঁচা দাউজী মন্দির
আকর্ষণ কে স্থানীয় ভাষায় খীচ্ বলে। তাই এখানে দাউজীর নাম খেঁচা দাউজী। ব্রজের অন্যান্য দাউজী কৃষ্ণ বর্ণ হলেও এখানে দাউজীর বিগ্রহ শ্বেত বর্ণ। কারন অন্যান্য স্থানে দাউজী ভাই কানাই কে রক্ষা করার জন্য নিজের গায়ে কয়লা ঘঁসে কালো রঙ করে নিয়েছিলেন। যাতে কংসের অনুচর রা তাকে কৃষ্ণ ভেবে তার সাথেই যুদ্ধ করেন। কিন্তু এখানে বলরাম এসে লীলা করেছিলেন কংস বধের পর দ্বারকা থেকে এসে তাই এখানে দাউজীর বিগ্রহ শ্বেতবর্ণের। মন্দিরের‌ পাশে একটি পিপুল বা অশ্বত্থ গাছ আছে বলা হয় এই গাছটি বলরামের একজন গোপ সখা
মন্দিরের পিছনেই যমুনার ঘাট যেখানে রাসলীলা হয়েছিল।
খেঁচা দাউজী দর্শন ও প্রণাম মন্ত্র
হলরেখা কৃতার্থায় শেষরোষনিরীক্ষক।
বলদেব স্থলায়ৈব, নমস্তে ধান্যবর্দ্ধন।।

রামঘাট স্নান মন্ত্র
সখীভির্বলী রামস্তু জলক্রীড়া বিহারিণে
নমস্তে রামতীর্থায় বলভদ্রায়তে নমঃ (ব্র.ভ.বি ৩/৮৮)

রামঘাটে নিত্যানন্দ প্রভূর লীলা
ব্রজমন্ডল পরিক্রমা করতে করতে শ্রী নিত্যানন্দ প্রভূ যখন রামঘাটে এসেছিলেন রাসবিলাসী বলরামের রাসলীলার কথা তার চিত্তে উদয় হল। কিছুকাল তিনি সেখানে তিনি অবস্থান করেন। সেখানে  বলদেব আবেশ গোপণ করতে পারতেন না, তিনি গোপবালকদের সাথে খেলাধূলা করতেন দুধ,সর ননী চুরি করে খেতেন, সবাই তাকে দেখে বলতেন রোহিনীনন্দন বলরাম বুঝি পুনরায় অবতীর্ণ হয়েছেন। রামঘাটে এক ব্রাহ্মণ বাস করতেন। তিনি বলরামের প্রতি অত্যন্ত ভক্তিমান ছিলেন। তার অনুরোধে নিত্যানন্দ প্রভূ সেই ব্রাহ্মণকে বলরাম রূপ দর্শন করিয়েছিলেন। একবার নিত্যানন্দ প্রভূ দন্তধাবন করে এখানে তার দন্তকাষ্ঠ পুঁতে দিয়েছিলেন, সঙ্গে সঙ্গে তা থেকে একটি অশ্বত্থ বৃক্ষ উৎপন্ন হয়।  শ্রীনিবাস আচার্য্য কে ব্রজদর্শন করাতে এনে রাঘব পন্ডিত সেই বৃক্ষটি দেখিয়ে ছিলেন। শ্রীনিত্যানন্দ প্রভূকে দেখে যমুনাদেবী তাকে দর্শন ও বহু স্তব স্তুতি করেছিলেন। নিত্যানন্দ প্রভূর এই লীলা দর্শন করে দেবতারাও অশ্রু পুলকাদি তে বিহ্বল হয়েছিলেন।

ভক্তিরত্নাকর ৫ম তরঙ্গ ১৫৪৯-
শ্রীরাসবিলাসী রাম নিত্যানন্দ রায়।
তীর্থপর্য্যটনকালে রহিলা এথায়।।
গোপশিশুসঙ্গে সদা খেলায় বিহ্বল।
ক্ষুধা হৈলে ভুঞ্জে দধি দুগ্ধ মূল ফল
বলদেব আবেশে নারয়ে স্থির হৈতে।
আপনা লুকায়ে না পারয়ে লুকাইতে।।
সবে কহে এই সেই রোহিনীনন্দন।
অবধূত বেশে ব্রজে করয়ে ভ্রমন।।
অহে শ্রীনিবাস দেখি নিতাইর রীত।
কিবা বাল বৃদ্ধ যুবা সবেই মোহিত।।
নিতাই চান্দের এথা অদ্ভূত বিহার।
এই যে শাকটবৃক্ষ দন্তকাষ্ঠ তার।।
এই রামঘাটে এক বিপ্র ভাগ্যবান।
বলদেব বিনু সে ধরিতে নারে প্রাণ।।
নিত্যানন্দ রাম ভক্ত রক্ষার কারণ।
বলদেবরূপে বিপ্রে দিলেন দর্শন।
শ্রীরাসবিলাসী নিত্যানন্দ বলরামে।
স্তুতি কৈল কালিন্দী দেখিয়া এইখানে।।
এথা নিত্যানন্দ রঙ্গ দেখি দেবগণ।
হইলা বিহ্বল অশ্রু নহে নিবারণ।।
এই বৃক্ষতলে ধূলাবেদীর উপর।
শয়নে বিহ্বল নিত্যানন্দ হলধর।।
শয়নে থাকিয়া প্রভূ কহে বার বার।
কতদিনে পাষন্ডীর হইবে উদ্ধার।।