<<<Previous verse Next verse>>>
মন্ত্র ৪
মন্ত্র ৪
তমেকনেমিং ত্রিবৃত্তং ষোড়শান্তং
শতার্দ্ধারং বিংশতি প্রত্যারাভিঃ।
অষ্টকৈঃ ষড়ভির্বিশ্বরূপৈকপাশং
ত্রিমার্গভেদং দ্বিনিমিত্তৈকমোহম্।। ১/৪
অনুবাদ:- সিদ্ধমুনিগণ ধ্যানযোগে যে জগৎকারণবস্তুকে দর্শন করেছিলেন তা একটি চক্ররূপী। এই চক্র একটি নেমিযুক্ত(নেমি বলতে চক্রের পরিধি কে বোঝায় যা ভূমিস্পর্শ করে।) এটি তিনটি পদার্থ দ্বারা নির্মিত, ষোলটি অন্ত ও পঞ্চাশটি অরযুক্ত (চক্রশলাকা) কুড়িটি প্রত্যরযুক্ত (চক্রশলাকা চক্রে দৃঢ়ভাবে বদ্ধ রাখার জন্য কীলক) ছয়প্রকার অষ্টকযুক্ত ও বিশ্বরূপ নামক একটি পাশ বা বন্ধনরজ্জুযুক্ত। এই চক্র তিনটি পথে ভ্রমন করে। ও তার মধ্যে দুই প্রকার পথের কারন মোহ।
রঙ্গরামানুজ ভাষ্য:- তং পরমাত্মানং প্রকৃত্যাখ্যৈকনেমিযুক্তং সত্ত্বরজস্তমোগুণৈস্ত্রিপ্রকারতয়া ত্রিবৃত্তং ষোড়শসংখ্যাযুক্তান্তঃশব্দিত বিকারোপেতং বাচকভূতাকারাদি পঞ্চাশদ্বর্ণলক্ষণারোপেতং দ্বাদশমাস ষড়র্ত্বয়নদ্বয়রূপসংবৎসরাত্মকবিংশতি প্রত্যরযুক্তমিত্যর্থঃ প্রত্যরাভিরিতি লিঙ্গব্যত্যয়ঃ ছান্দসঃ অরা নেমিমধ্যবর্তী কাষ্ঠবিশেষাঃ প্রত্যরাশ্চতদ্দার্ঢ্যার্থনিহিতাস্তন্মধ্যবর্ত্তিনঃ কাষ্ঠবিশেষাঃ, অষ্টকৈঃ ষড়ভির্হি অণিমাদ্যৈশ্চর্য্যাষ্টকমেকং প্রাচ্যাদি দিগষ্টকমপরং দিকপালাষ্টকমেকং ভূমিরাপোনলোবায়ুঃ খং মনো বুদ্ধিরেব চ অহঙ্কার ইতীয়ং মে ভিন্না প্রক্যতিরষ্টধেতি গীতোক্তং প্রকৃত্যষ্টকমন্যৎ ব্রহ্মাপ্রজাপতির্দেবা গন্ধর্বা যক্ষরাক্ষসাঃ পিতরঃ পিশাচাশ্চেতি দেবাষ্টকমেকং অষ্টবসব ইত্যুক্তং বস্বষ্টকং অপহতপাপমত্বাদি ব্রহ্মগুণাষ্টকং দয়া সর্বভূতেষু শান্তিরনসূয়া শৌচমনায়াসো মঙ্গলমকার্পণ্যং অস্পৃহা ইতি আত্মগুণাষ্টকমেকং বা এভিঃ ষড়ভিরষ্টকৈঃ উপেতং। বিশ্বরূপো বিরাট্ পুরুষঃ স এব মুখ্যঃ, পাশঃ স্বাশ্রিতজগন্নৈশ্চল্যহেতুতয়া বন্ধকপাশবদ্বিরাটপুরুষরূপ ব্রহ্মচক্রস্য পাশরূপ ইত্যর্থঃ। ত্রিমার্গভেদং দেবযান পিতৃযান ক্ষুদ্রজন্তুভবনলক্ষণমার্গত্রয়যুক্তং তত্র চ পিতৃযান ক্ষুদ্রজস্তুভবনলক্ষণমার্গদ্বয়হেতুভূত দেহাত্মৈক্যরূপং মোহমিত্যর্থঃ। অপশ্যন্নিতি পূর্বেশ সম্বন্ধঃ।। ১/৪
রঙ্গরামানুজ ভাষ্যের অনুবাদ:-মুনি গণ ধ্যানের দ্বারা সেই পরমাত্মা কে একটি চক্র রূপে দর্শন করলেন। এই চক্রের প্রকৃতি নামক একটি নেমি আছে। নেমিরূপী এই প্রকৃতি সত্ত্ব, রজঃ তমঃ এই তিনপ্রকার গুণ যুক্ত। এবং অন্ত শব্দে কথিত ষোলটি বিকারযুক্ত(একাদশ ইন্দ্রিয় ও পঞ্চভুত)।পঞ্চাশটি বর্ণ এই চক্রের পঞ্চাশটি অর।
এবং দ্বাদশ মাস, ছয় ঋতু, ও দুই অয়ণ বিশিষ্ট সংবৎসররূপ কুড়িটি প্রত্যর আছে। এই মন্ত্রে প্রত্যরাভিঃ শব্দে স্ত্রীলিঙ্গের প্রয়োগ হয়েছে মন্ত্রের ছন্দ রক্ষার জন্য। ‘অর' বলতে চক্রের নেমির মধ্যবর্তী শলাকা বিশেষ বোঝায়। প্রত্যর শব্দ দ্বারা চক্র শলাকা কে দৃঢ় ভাবে ধরে রাখার জন্য কাঠের কীলক বা পেরেক বোঝায়। ইহা ছয় প্রকার অষ্টক যুক্ত। এই ছয় প্রকার অষ্টক কি কি অণিমাদি আটটি ঐশ্বর্য্য, দ্বিতীয় পূর্ব পশ্চিম ইত্যাদি আটটি দিক, তৃতীয় ভূমি, জল, অগ্নি, বায়ু, আকাশ, মন, বুদ্ধি, অহঙ্কার, এই আটটি বিভিন্ন প্রকৃতি যেগুলির সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেছেন। চতুর্থ ব্রহ্মা, প্রজাপতি, দেবগণ, গন্ধর্ব, যক্ষ, রাক্ষস, পিতৃপুরুষ ও পিশাচগণ এই আটজন দেব, পঞ্চম অষ্টবসু গণ, ষষ্ঠপাপরাহিত্য ইত্যাদি ব্রহ্মের আটটি গুণ। শ্রুতিতে বলা হয়েছে ব্রহ্মের আটটি গুণ হল অপহতপাপ্মা, বিমৃত্যুঃ, বিশোকঃ, বিজরঃ, বিজিঘৎসঃ অপিপাসঃ, সত্যকাম, সত্যসঙ্কল্পঃ। অথবা সর্বভূতে দয়া, শান্তি, অনসূয়া, শুচিতা, অনায়াস, মঙ্গল, অকার্পণ্য, অস্পৃহা এই আটটি জীবাত্মার গুণ। এই ছয় প্রকার অষ্টকযুক্ত এই চক্র।
এই মন্ত্রে বিশ্বরূপ শব্দের অর্থ বিরাট পুরুষ, তিনিই মুখ্য, তিনিই বিরাট পুরুষরূপী ব্রহ্মচক্র। নিজ আশ্রিত এই জগৎ যাতে শিথিল হতে না পারে সেজন্য তিনি স্বয়ং এই বিরাট পুরুষরূপী ব্রহ্মচক্রের পাশ বা বন্ধনরজ্জুস্বরূপ। এই ব্রহ্মচক্রটি দেবযানমার্গ পিতৃযানমার্গ এবং কীট পতঙ্গাদি ক্ষুদ্রযোনি প্রাপ্তির কারন মার্গ, এই তিনটি মার্গযুক্ত। তারমধ্যে পিতৃযান ও তির্যকযোনি প্রাপ্তির মার্গ এই দুটি মার্গ প্রাপ্তির কারন যে দেহাত্মবুদ্ধি(অনিত্য জড় দেহ কে নিত্য চেতন আত্মা মনে করা) তা হচ্ছে এই মন্ত্রের মোহ শব্দের অর্থ। এভাবেই ধ্যানস্থ মুনিগণ ব্রহ্মবস্তুকে চক্ররূপে দর্শন করেছিলেন। পূর্বের মন্ত্রে অপশ্যন্ এই ক্রিয়াপদের দ্বারা এই ব্রহ্মচক্র দর্শন ই বোঝানো হয়েছে।
রঙ্গরামানুজ ভাষ্য:- এবং চক্রত্বেন রূপয়িত্বা তচ্ছক্তিত্বেন নির্দিষ্টাং প্রকৃতিং বৈরাগ্যায় নদীত্বেন রূপয়তি।
রঙ্গরামানুজ ভাষ্যের অনুবাদ:-এভাবে ব্রহ্ম কে চক্ররূপকের দ্বারা ব্যখ্যা করে এই মন্ত্রে বৈরাগ্য উৎপাদনের জন্য তাঁর শক্তিরূপে নির্দ্দিষ্ট ব্রহ্মাত্মিকা প্রকৃতিকে (সংসারের হেতুভূত প্রকৃতিসম্ভূত বস্তু গুলিকে) নদীর রূপকে বর্ণনা করছেন।