বৈষ্ণব তন্ত্র
ভূমিকা
তন্ত্র বলতে যে কেবল শাক্ত আচার নির্দেশকারী শাস্ত্র কেই বোঝায় তা নয় অনেক বৈষ্ণব তন্ত্র ও রয়েছে। যেসব তন্ত্র বৈদিক সিদ্ধান্ত ও আচার অনুসরণ করে সেগুলি বৈষ্ণব তন্ত্র। গৌড়ীয় বৈষ্ণব আচার্য্য গণ ও এই সমস্ত তন্ত্র থেকে অনেক উদ্ধৃত করেছেন। শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী গোস্বামী প্রভুপাদ বলেছেন
"আত্মবিজ্ঞানের সাথে যে তন্ত্রের মিল আছে তা সাত্বত তন্ত্র। আত্মার যেখানে জড়ানুভূতি সেখানেই নানা বেদ বহির্ভূত মত" সনাতন গোস্বামী কৃত হরিভক্তিবিলাসেই অনেক গুলি তন্ত্রের নাম রয়েছে। বৈষ্ণব তন্ত্র কে পঞ্চরাত্র শাস্ত্র বলা হয়। পঞ্চরাত্র কথার অর্থ হল পঞ্চবিধ জ্ঞান। রাত্র শব্দের অর্থ জ্ঞান, জ্ঞান পঞ্চবিধ। নির্গুণ জ্ঞান, বিশুদ্ধসত্ত্বজ্ঞান বা অপ্রাকৃতজ্ঞান , প্রাকৃত জ্ঞান যথা সাত্ত্বিক, রাজসিক, ও তামসিক। এই পঞ্চবিধ জ্ঞান যে শাস্ত্রে বর্ণিত হয় তাকে পঞ্চরাত্র বলে। যথা নারদ পঞ্চরাত্রে—
রাত্রঞ্চ জ্ঞানবচনং জ্ঞানং পঞ্চবিধং স্মৃতম্।
তেনেদং পঞ্চরাত্রঞ্চ প্রবদন্তি মণীষিণঃ।। (নারদপঞ্চরাত্র ১/৫৭)
পঞ্চরাত্র শাস্ত্রের উৎপত্তি
পঞ্চরাত্র শাস্ত্রের উৎপত্তি সম্পর্কে ঈশ্বর সংহিতায় বলা হয়েছে শ্রীনারায়ণের পঞ্চ আয়ুধ শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম ও খড়্গ এর অবতার যথাক্রমে শান্ডিল্য, ঔপগায়ন, মৌঞ্জায়ন, কৌশিক, ও ভরদ্বাজ এই পঞ্চ ভক্ত যোগী মিলিত হয়ে শ্রীবিষ্ণুর আরাধনা প্রচারার্থে তোতাদ্রী শিখরে সুদুস্তর তপস্যা করেন। তাদের তপস্যায় তুষ্ট হয়ে জগৎ প্রভূ বাসুদেব প্রত্যেককে এক এক অহোরাত্র যে উপদেশ প্রদান করেন তা থেকে সেই মুনি শ্রেষ্ঠগণ যেসকল শাস্ত্র প্রণয়ন করেন তাই সর্বলোকে পঞ্চরাত্র নামে খ্যাত হয়।
পঞ্চায়ুধাংশাস্তে পঞ্চ শান্ডিল্যশ্চৌপগায়নঃ।
মৌঞ্জায়নঃ কৌশিকশ্চ ভারদ্বাজশ্চ যোগিন্।।
তে মিলিত্বা সমালোচ্য বিষ্ণোরারাধনেচ্ছয়া।
অভিসংগম্য তোতাদ্রৌ তপশ্চক্রুঃ সুদুস্তরম্।।
তেষাং তু তপসা তুষ্টো বাসুদেবো জগৎপতিঃ।।
আদ্যমেকায়নং বেদং রহস্যাম্নায় সংজ্ঞিতম্।
দিব্যমন্ত্রক্রিয়োপেতং মোক্ষৈকফল লক্ষণম্।।
পঞ্চাপি পৃথগেকৈকং দিবারাত্রং জগৎপ্রভূঃ।
অধ্যাপয়ামাস যতস্ততস্তৎ মুনিপুঙ্গবাঃ।
শাস্ত্রং পঞ্চজনৈর্লোকে পঞ্চরাত্রমিতীর্যতে।।
(ঈশ্বরসংহিতা ২১/৫১৯-৫৩২)
পঞ্চরাত্র শাস্ত্র তথা বৈষ্ণব তন্ত্রের প্রামাণিকতার প্রমাণ
১) মহাভারত
মহাভারতে অন্য সকল শাস্ত্র অপেক্ষা পাঞ্চরাত্রের শ্রেষ্ঠতা প্রমাণিত হয়েছে।
সাংখ্য, পাশুপত ইত্যাদি শাস্ত্র জীব রচিত। একমাত্র পাঞ্চরাত্র শাস্ত্রের ই বক্তা স্বয়ং ভগবান তাই তা শ্রুতিতুল্য। যথা—
জন্মেজয় উবাচ
সাংখ্যংযোগং পাঞ্চরাত্রং বেদারণ্যকমেবচ।
জ্ঞানান্যেতানি ব্রহ্মর্ষে! লোকেষু প্রচরন্তি হ।
কিমেতান্যেকনিষ্ঠানি পৃথঙনিষ্ঠানি বা মুনে!
প্রব্রূহি বৈ ময়া পৃষ্টঃ প্রবৃত্তিঞ্চ যথাক্রমম্।।
মহাভারত শান্তিপর্ব ৩৩৩/
(হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ সং পৃঃ ৩৭৫২
অনুবাদ:- জন্মেজয় বললেন হে ব্রহ্মর্ষি! সাংখ্যজ্ঞান, যোগজ্ঞান, পাঞ্চরাত্র জ্ঞান, ও উপনিষদুক্ত জ্ঞান, এই চার প্রকার জ্ঞান জগতে প্রচলিত আছে। এই চারটি কি একত্রে মুক্তির কারন? না পৃথক পৃথক ভাবে মুক্তির কারন? এই বিষয়ে লোকের ক্রমিক প্রবৃত্তির বিষয় টি বলুন।
সাংখ্যং যোগঃ পঞ্চরাত্রং বেদাঃ পাশুপতং তথা।
জ্ঞানান্যেতানি রাজর্ষে! বিদ্ধি নানামতানি বৈ।।
সাংখ্যস্য বক্তা কপিলঃ পরমর্ষিঃ স উচ্যতে।
হিরণ্যগর্ভো যোগস্য বেত্তা নান্যঃ পুরাতন্।।
অপান্তরতমাশ্চৈব বেদাচার্য্যঃ স উচ্যতে।
প্রাচীনগর্ভং তমৃষিং প্রবদন্তীহ কেচন।।
উমাপতির্ভূতপতিঃ শ্রীকন্ঠো ব্রহ্মণঃ সুতঃ।
উক্তবানিদমব্যাগ্রো জ্ঞানং পাশুপতং শিবঃ।।
পঞ্চরাত্রস্য কৃৎস্নস্য বক্তা নারায়ণঃ স্বয়ম্।।
মহাভারত শান্তিপর্ব ৩৩৩/
হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ সং পৃঃ ৩৭৬৫ পুণা সং মহা.শা. ৪৪৯/৬৮
অনুবাদ:- রাজর্ষি সাংখ্য যোগ পাঞ্চরাত্র বেদ ও পাশুপত নামে নানা ব্যাক্তির অভিমত এই সকল জ্ঞান ও আপনি অবগত আছেন।
সাংখ্য জ্ঞানের বক্তা কপিল, তাকে মহর্ষি বলা হয়। আর যোগের প্রবক্তা ব্রহ্মা, কিন্তু পুরাতন আর কেউই তার অভিজ্ঞ ছিল না।
অপান্তরতমা ঋষিকে বেদের আচার্য্য বলা হয়। কেউ তাকে প্রাচীনগর্ভ নামেও বলে থাকেন।
উমাপতি ভূতপতি, শ্রীকন্ঠ, ও ব্রহ্মার পুত্র শিব অনাকুল থেকে এই পাশুপত শাস্ত্র বলেছিলেন।
রাজশ্রেষ্ঠ ভগবান নারায়ণ ই সমস্ত পাঞ্চরাত্র শাস্ত্রের বক্তা।
মহাভারত পুনা সং ৩৪৯/৬৪
মহাভারতে বলা হয়েছে বদরিকাশ্রমে স্বয়ং নারায়ণ নারদ কে পঞ্চরাত্র শাস্ত্র উপদেশ করেন। নারদের থেকে শান্ডিল্য ঋষি সেই উপদেশ লাভ করেন।
(পুণা সং শান্তিপর্ব ৩৫৯/৬৮)
ইদম্ মহোপনিষদম্ চতুর্বেদ সমন্বিতম্ ।
সাঙ্খ্য যোগ কৃতান্তেন পঞ্চরাত্রানুশব্দিতম্ ॥
নারায়ণমুখোদগীতং নারদোঽশ্রাবয়ৎ পুনঃ।
শান্তিপর্ব ৩৪৮/৬২-৬৩
অনুবাদ:- প্রসিদ্ধ মহোপনিষৎ, চতুর্ব্বেদ, ও সাংখ্যযোগ সমন্বিত হয়ে পঞ্চরাত্র নামে খ্যাত হয়েছে। এই শাস্ত্রের সর্বপ্রথম বক্তা নারায়ণ, ও দ্বিতীয় বক্তা শ্রীনারদ,
মহাভারতে ভীষ্মদেব বলেছেন
ব্রাহ্মণৈঃ ক্ষত্রিয়ৈর্বৈশ্যৈঃ শূদ্রৈশ্চ কৃতলক্ষণৈঃ।
অর্চনীয়শ্চ সেব্যশ্চ পূজনীয়শ্চ মাধবঃ।
সাত্বতং বিধিমাস্থায় গীতঃ সঙ্কর্ষণেন যঃ।।
মহাভারত ভীষ্মপর্বে ৬৬/৩৯
অনুবাদ:- যথাবিধি দীক্ষাগ্রহণ পূর্বক ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্রগণ কর্ত্তৃকও শ্রীমাধব অরৃচনীয়, সেব্য ও পূজণীয় হন। সাত্বত বিধি অবলম্বন পূর্ব্বক সঙ্কর্ষণ কর্ত্তৃক শ্রীকৃষ্ণ ই কীর্তিত হয়েছেন।
মহাভারত শান্তিপর্বে ৩৩৭ অধ্যায়ে নারদ নারায়ণ এর ২০০টি নাম বলেছেন তার মধ্যে পঞ্চযজ্ঞ, পঞ্চরাত্রিক, পঞ্চকালকর্তৃপতি
যিনি পঞ্চযজ্ঞের ভোক্তা, পঞ্চকাল ব্যাপী আচার এর ভোক্তা, ও পঞ্চরাত্র অনুসারী গণের আশ্রয়।
পঞ্চকাল ব্যাপি আচার হল
২) শতপথ ব্রাহ্মণ
শতপথ ব্রাহ্মণ এ বলা হয়েছে পরম পুরুষ নারায়ণ পাঁচদিন ধরে পুরুষমেধ যজ্ঞ করেন ও পঞ্চরাত্র শাস্ত্র এর উৎপত্তি হয়। এই শাস্ত্র তাই সকল শাস্ত্রের সার ও শ্রেষ্ঠ।
“স এতং পুরুষমেধ পঞ্চরাত্র যজ্ঞক্রতুমপশ্যৎ"
শতপথ ব্রাহ্মণ ১৩কান্ড ৬ষ্ঠ অধ্যায় ১ম ব্রাহ্মণ অথবা ১৩ কান্ড ৪র্থ প্রপাঠক ১ম ব্রাহ্মণ
৩) বিষ্ণুসহস্রনাম শঙ্কর ভাষ্য
মহাভারতে বিষ্ণু সহস্রনামে ৬৭ শ্লোকে ও ৫১২ সংখ্যক নাম “সাত্বতাংপতিঃ" এর ব্যাখ্যায় শঙ্করাচার্য্য বলেছেন সাত্বতং নাম তন্ত্রং তৎকরোতি তদাচষ্টে ইতি পদং ‘সাত্বৎ' তেষাং পতির্যোগক্ষেমকরঃ ইতি। অর্থাৎ সাত্বত নামক একটি তন্ত্র তা যিনি আচরণ ও প্রচার করেন এই অর্থে পদটি হয় সাত্বৎ তাদের পতি। যোগ ক্ষেমকারী অর্থাৎ অলব্ধ বস্তু লাভ করিয়ে তা রক্ষা করেন যিনি সাত্ত্বতপতি শ্রীকৃষ্ণ। তাই সাত্বত তন্ত্র যে অতি প্রাচীন শাস্ত্র তা শঙ্করভাষ্য থেকে জানা যায়।
৪) রামায়ণ
পুরাণৈশ্চ বেদৈশ্চ পাঞ্চরাত্রৈস্তথৈব চ ।
ধ্যায়ন্তি যোগিনো নিত্যম্ ক্রতুভিশ্চ যজন্তি তম্॥ রামায়ণ ৭.১৬
৫) অষ্টাদশ পুরাণ
বরাহ পুরাণে ৬৬ অধ্যায়ে বলা হয়েছে
বেদেন পঞ্চরাত্রেণ ভক্ত্যা যজ্ঞেন চ দ্বিজ।
প্রাপ্যোঽহং নান্যথা প্রাপ্যো বর্ষলক্ষশতৈরপি।। ১৮
অনুবাদ:- আমি বেদ পঞ্চরাত্র শাস্ত্রানুসারে ভক্তির দ্বারা যেরূপ প্রাপ্য অন্য কোন উপায়ের দ্বারা সেইরকম ভাবে সহস্র বছর সাধনের দ্বারাও প্রাপ্য নই।
পঞ্চরাত্রং সহস্রাণাং যদি কশ্চিদ্গ্রহীষ্যতি।
কর্মক্ষয়ে চ মাং কশ্চিদ্ যদি ভক্তো ভবিষ্যতি।।
তস্য বেদাঃ পঞ্চরাত্রং নিত্যং হৃদি বসিষ্যতি।।
অনুবাদ:- সহস্র ব্যাক্তির মধ্যে কোনো কোনো ব্যাক্তি পঞ্চরাত্র শাস্ত্র অবলম্বন করে। কর্মক্ষয়ে সে আমার ভক্ত হয় ও আমাকে লাভ করে। তার হৃদয়ে সর্বদা বেদ ও পঞ্চরাত্র বাস করে।
যদিদং পঞ্চরাত্রং মে শাস্ত্রং পরমদুর্লভম্।
তদ্ভবান্ বেৎস্যতে সর্বং মৎপ্রসাদাদসংশয়ম্।।
অনুবাদ:- আমার কৃপায় তুমি জানতে পারবে এই পঞ্চরাত্র শাস্ত্র পরমদুর্লভ, ও সর্বশ্রেষ্ঠ শাস্ত্র। এতে কোনো সংশয় নেই।
এই পঞ্চরাত্র শাস্ত্র গুলি বহু প্রাচীন ও বেদানুসারী তাই প্রামাণিক জগৎ কল্যানের জন্য স্বয়ং ভগবান শ্রীহরি সাত্বত তন্ত্র, পৌষ্কর সংহিতা, জয়াখ্য তন্ত্র
প্রমুখ দিব্য শাস্ত্র সঙ্কর্ষণ ও শিবের কাছে বলেছেন। শ্রীভগবৎপ্রোক্ত এই তন্ত্র শাস্ত্র গুলির ব্যাখ্যার জন্য ঋষিগণ অন্যান্য কয়েকটি পঞ্চরাত্র শাস্ত্র প্রণয়ন করেন যথা ঈশ্বর সংহিতা, পাদ্মসংহিতা, পারমেশ্বরসংহিতা। যথা ঈশ্বর সংহিতায় —
সাত্বতং পৌষ্করঞ্চৈব জয়াখ্যঞ্চ তথৈব চ।
এবমাদীনি দিব্যানি শাস্ত্রাণি হরিণা স্বয়ম্।
মূলবেদানুসারেণ প্রোক্তানি হিতকাম্যয়া।
সাত্বতাদ্যং ত্রিকং চৈতদ্ ব্যাপকং মুনিসত্তমা্।।
(ঈশ্বর সংহিতা ১/৬৪-৬৬)
সাত্বত তন্ত্র, পৌষ্কর সংহিতা ও জয়াখ্য তন্ত্রের বিধি অনুসারেই এখনো শ্রীযাদবাদ্রী শ্রীরঙ্গক্ষেত্র ও শ্রীবিষ্ণুকাঞ্চীতে (প্রাচীন শ্রী হস্তিশৈল বা গজেন্দ্র মোক্ষণ স্থান) ভগবৎসেবা প্রচলিত আছে।
এতৎ তন্ত্রত্রয়োক্তেন বিধিনা যাদবাচলে।
শ্রীরঙ্গে হস্তিশৈলে চ ক্রমাৎ স পূজ্যতে হরিঃ।।
পঞ্চরাত্র শাস্ত্র চার প্রকার
পঞ্চরাত্র শাস্ত্র চার প্রকার। আগমসিদ্ধান্ত, মন্ত্রসিদ্ধান্ত, তন্ত্রসিদ্ধান্ত, তন্ত্রান্তরসিদ্ধান্ত যথা কল্প, যামল, রহস্য, সংহিতা
যথা ঈশ্বর সংহিতায়—
চতুর্ধা ভেদভিন্নোহয়ং পঞ্চরাত্রাখ্য আগমঃ।
পূর্ব্বমাগম সিদ্ধান্তং দ্বিতীয়ং মন্ত্রসংজ্ঞিতম্।
তৃতীয়ং তন্ত্রমিত্যুক্তমন্যৎ তন্ত্রান্তরং ভবেৎ।।
(ঈশ্বর সংহিতায় ২১/৫৬০)
পঞ্চরাত্র
পঞ্চরাত্র শাস্ত্রের বিশেষ লক্ষণ সম্পর্কে বলা হয়েছে—
তৎ পরব্যুহ বিভব স্বভাবাদি নিরূপণম্।
পঞ্চরাত্রাহ্বয়ং তন্ত্রং মোক্ষৈক ফল লক্ষণম্।।
অহির্বুধ্ন্য সংহিতা ১১ অধ্যায়
অনুবাদ:- তৎ অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ, পর অর্থাৎ শ্রীনারায়ণ, ব্যুহ অর্থাৎ বাসুদেব, সঙ্কর্ষণ, প্রদ্যুম্ন, অনিরুদ্ধ, বিভব অর্থাৎ অবতার গণ, স্বভাব অর্থাৎ জীবতত্ত্ব এই পাঁচটি রাত্র বা জ্ঞান যে শাস্ত্রে আলোচিত হয় তাকে পঞ্চরাত্র বলে।
প্রধান কয়েকটি পঞ্চরাত্র:- নারদপঞ্চরাত্র, হয়শীর্ষপঞ্চরাত্র,
আগম
পঞ্চরাত্র শাস্ত্রের মধ্যে যে শাস্ত্র পঞ্চানন শ্রী সদাশিবের শ্রীমুখ থেকে আগত ও গিরিজা পার্ব্বতী দেবীর কর্ণে গত এবং সর্বান্তর্যামী শ্রীবাসুদেব শ্রীকৃষ্ণের মত সম্মত তাকে আগম বলে।
আগতং পঞ্চবক্ত্রাত্তু গতঞ্চ গিরিজাননে।
মতঞ্চ বাসুদেবস্য তস্মাদাগামমুচ্যতে।।
প্রধান কয়েকটি আগম স্বায়ম্ভূবাগম।
যামল
যেই সকল পঞ্চরাত্র শাস্ত্রে সৃষ্টিপ্রক্রিয়া, জ্যোতিষতত্ত্ব, নিত্যকর্ম, ক্রমসূত্র, বর্ণভেদ, জাতিভেদ, ও যুগধর্ম বর্ণন হয় তাকে যামল বলে।
সৃষ্টিশ্চ জ্যোতিষাখ্যানং নিত্যকৃত্যপ্রদীপনম্।
ক্রমসূত্রং বর্ণভেদো জাতিভেদস্তথৈব চ।
যুগধর্মশ্চ সংখ্যাতো যামলশ্চাষ্টলক্ষণম্।।
প্রধান কয়েকটি যামল:- ব্রহ্মযামল, শ্রীকৃষ্ণযামল, বিষ্ণুযামল।
সংহিতা
যেসব পঞ্চরাত্র শাস্ত্র দ্বাদশ সহস্র বা ততোধিক শ্লোকযুক্ত তাদের সংহিতা বলে।
দ্বিষট্সহস্র পর্য্যন্তং সংহিতাখ্যং সদাগমম্।
যে চান্যে চান্তরালা বৈ শাস্ত্রার্থেনাধিকাঃ শতৈঃ।
সর্বেষাং সংহিতা সংজ্ঞা বোদ্ধব্যা কমলোদ্ভব।।
পৌষ্কর সংহিতা ৪০/১৫৬
ভগবান শ্রী হয়গ্রীব বললেন হে কমলোদ্ভব ব্রহ্মা যেসকল সাত্ত্বিক আগম শাস্ত্রে দ্বাদশ সহস্র শ্লোক আছে তাদের সংহিতা বলে। তার মধ্যবর্তী বা অধিক সংখ্যাযুক্ত সকল ও সংহিতা নামে জানবে।
প্রধান কয়েকটি সংহিতা:-
ব্রহ্মসংহিতা, সনৎকুমারসংহিতা, অনন্তসংহিতা, প্রহ্লাদসংহিতা, সাত্বতসংহিতা, অগস্ত্যসংহিতা,
তন্ত্র
শ্রুতির যে শাখায় মানুষের সর্ববিধ প্রয়োজন বিস্তৃতরূপে বর্ণিত আছে, এবং যা ভয় থেকে ত্রাণ করে তাকেই তন্ত্র বলে।
সর্বেঽর্থা যেন তন্যন্তে ত্রায়ন্তে চ ভয়াজ্জনাঃ।
ইতি তন্ত্রস্য তন্ত্রত্বং তন্ত্রজ্ঞা পরিচক্ষতে।।
প্রধান কয়েকটি তন্ত্র:- সনৎকুমারতন্ত্র, সম্মোহন তন্ত্র, সাত্বততন্ত্র, রাধাতন্ত্র, গৌতমীয় তন্ত্র,