শ্রীশ্রীহাটপত্তন
শ্রীশ্রীহাট-পত্তন।
শ্রী নরোত্তম দাস ঠাকুর
প্রণমহ কলিযুগ সৰ্ব্বযুগ সার।
হরিনাম সংকীৰ্ত্তন যাহাতে প্রচার।।
কলিঘাের পাপাচ্ছন্ন অন্ধকারময়।
পূর্ণ শশধর ভেল চৈতন্য তাহায়।।
শচীগৰ্ভসিন্ধু-মাঝে চন্দ্রের প্রকাশ।
পাপ-তাপ দূরে গেল তিমির বিনাশ।।
ভকত চকোর তায় মধুপান কৈল।
অমিয়া মথিয়া তাহা বিস্তার করিল।।
পূর্ণকুম্ভ নিত্যানন্দ অবধূত রায়।
ইচ্ছা ভরি পান কৈল অদ্বৈত তাহায়।।
চাকিয়া চাকিয়া খায় আর যতজন।
প্রেমদাতা নিতাইচাঁদ পতিতপাবন।।
প্রেমের সমুদ্র ভেল চৈতন্য গোঁসাঞি
নদী-নালা সব আসি হৈল একঠাঁই।
পরিপূর্ণ হয়ে বহে প্রেমামৃতধারা।
হরিদাস পাতিল তাহে নাম নৌকা পারা।।
সঙ্কীৰ্ত্তন-ঢেউ তাহে তরঙ্গ বাড়িল।
ভকত মকর তাহে ডুবিয়া রহিল।।।
তৃণরূপী ভাসে যত পাষণ্ডীর গণ।
ফাঁফরে পড়িয়া তারা ভাবে মনে মন।।
হরিনামের নৌকা করি নিতাই সাজিল।
দাঁড় ধরি হরিদাস বাহিয়া চলিল।।
প্রেমের পাথারে নৌকা ছাড়ি দিল যবে।।
কূল পাব বলি, কেহ নৌকা ধরে লােভে।।
চৈতন্যের হাটে নৌকা চাপিল যখন।
হাটের পত্তন নিতাই রচিল তখন।।
ঘাটের উপরে হাট থানা বসাইল।
পাষণ্ড-দলন নাম নিশান গাড়িল।।
চারি দিকে চারি রস কুঠরী পূরিয়া।
হরিনাম দিল তার চৌদিকে বেড়িয়া।
চৌকিদার হরিদাস ফুকারে ঘনে ঘন।
হাট কর বেচ কিন যার যেই মন।।
হাটে বসি রাজা হৈল প্রভু নিত্যানন্দ।
মুৎসুদ্দি হইলা তাহে মুরারি মুকুন্দ।।
ভাণ্ডারী চৈতন্য ভেল আর গদাধর।
অদ্বৈতমুন্সী ভেল পরখাই দামােদর।
প্রেমের রমণী ভেল দাস নরহরি।
চৈতন্যের হাটে ফিরে লইয়া গাগরী।।
ঠাকুর অভিরাম আইলা হাসিয়া হাসিয়া।
কৃষ্ণপ্রেমে মত্ত হয়ে ফিরেন গর্জিয়া।।
আর যত ভক্ত আইল মণ্ডলী করিয়া
হাট-মধ্যে বৈসে সব সদাগর হৈয়া ।।
দাঁড়ি ধরি গৌরীদাস পণ্ডিতঠাকুর।
তৌল করি ফিরেন প্রেম যার যতদূর।।
শ্রীনিবাস শিবানন্দ লিখে দুই জন।
এই মত প্রেমসিন্ধু হাটের পত্তন।।
সঙ্কীৰ্ত্তনরূপ মদ হাটে বিকাইল।
রাজ-আজ্ঞা শিরে ধরি সবে পান কৈল।।
পান করি মত্ত সবে হইল বিহ্বল।
নিতাই চৈতন্যের হাটে হরি হরি বােল।।
দীন হীন দুরাচার কিছু নাহি মানে।
ব্রহ্মার দুর্লভ প্রেম দিলা জনে জনে।।
এই মত গৌড়দেশে হাট বসাইয়া।
নীলাচলে বাস কৈলা সন্ন্যাস করিয়া।।
তাহা যাএা কৈলা প্রভু প্রতাপ প্রচুর।
সার্বভৌম ভট্টাচার্যের দর্প কৈলা চুর।।
প্রতাপরুদ্রেরে কৃপা কৈল গৌরহরি
রামানন্দ-সঙ্গে দেখা তীর্থ গােদাবরী।।
হাটকরি লেখা জোখা সুমার করিয়া
রামানন্দের কণ্ঠে থুইলা ভাণ্ডার পূরিয়া।।
সনাতন রূপ যবে আসিয়া মিলিলা।
ভাণ্ডার সঙরি রূপ মােহর করিলা।।
মােহর লইয়া রূপ করিল গমন।
প্রভু পাঠাইল তারে শ্রীবৃন্দাবন।।।
তাহা যাই কৈলা রূপ টাঁকশাল পত্তন।
কারিকর আইল যত স্বরূপেরগণ।।
কারিকর লঞা রূপ অলঙ্কার কৈল।
ঠাকুর বৈষ্ণব যত হৃদয়ে ধরিল।।
সােহাগামিশ্রিত কৈল রস পরকীয়া।
গলিত কাঞ্চন ভেল প্রকাশ নদীয়া।।
পাঁজা করি শ্রীরূপ গোঁসাই যবে থুইলা।
শ্রীজীব গোঁসাঞি তাহা গড়ন গড়িলা।
থরে থরে অলঙ্কার বহুবিধ কৈলা।
সদাগর আনি তাহা বিতরণ কৈলা।।
নরােত্তম ঠাকুরআর শ্রীশ্রীনিবাস।
অলঙ্কার ঝালাইয়া করিল প্রকাশ ।।
এই সব রস দেখ সৰ্ব্বশাস্ত্রে কয়।
লােক অনুসারে মিলে শ্রীরূপের কৃপায়।।
শ্রীগুরু-কৃপায় ইহা মিলিবে সৰ্ব্বথা
সংক্ষেপে কহিল কিছু এইসব কথা।।
প্রেমের হাট প্রেমের বাট প্রেমের তরঙ্গ।
প্রেমাধীন গৌরচন্দ্ৰ পূৰ্ব্বলীলা রঙ্গ।।
প্রেমের সাগরে হংস রূপগোঁসাঞি ভেল।
নীর ক্ষীর রত্ন মণি পৃথক করিল।।
মুঞি অতি ক্ষুদ্র জীব অতি মন্দ ছার।
কিজানি চৈতন্য লীলা সমুদ্র-পাথার।।
শ্রীগুরু-বৈষ্ণব পদ হৃদয়েতে ধরি।
চৈতন্যের হাটে নিত্য ঝাডুগিরি করি।।
করুণাসাগর মাের গৌর-নিত্যানন্দ
দাস নরােত্তমে কহে হাটের প্রবন্ধ।।
।। ইতি শ্রীল নরােত্তম দাস বিরচিত শ্রীশ্রীহাটপত্তন সমাপ্ত।।