Bhaktivinoda Thakur and Bipin Bihari Goswami

Bhaktivinoda Thakur and Bipin Bihari Goswami

 প্রশ্ন:- মায়াপুরে গৌরজন্মস্থান আবিষ্কারের কারনে শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরকে তার গুরুদেব বিপিনবিহারী গোস্বামীকি ত্যাগ করেছিলেন?
উত্তর:- এটি কিছু মৎসর ব্যাক্তির অপপ্রচার মাত্র, বরং শ্রী বিপিনবিহারী গোস্বামী মায়াপুরে গৌর জন্মস্থান আবিষ্কারের পরেও শ্রীলভক্তিবিনোদ ঠাকুরের প্রশংসা করেছেন যে কেদারনাথ দত্ত ভক্তিশাস্ত্রের একজন তত্ত্বজ্ঞ ব্যাক্তি, তিনি শাস্ত্রে অনুসন্ধান করে নবদ্বীপের মধ্যে মায়াপুর গ্রামে গৌর জন্মস্থান প্রকাশিত করেছেন।
শ্রীলবিপিনবিহারী গোস্বামী তার রচিত দশমূলরস ও বৈষ্ণবজীবন গ্রন্থে ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের প্রশংসা করে বলেছেন
ভক্তিশাস্ত্রে কেদারের যত অধিকার।
তৎকৃতগ্রন্থাদি আছে প্রমাণ তাহার।‌
নবদ্বীপ মায়াপুর গৌরজন্মস্থান।
প্রকাশ করিলা যিঁহ করিয়া সন্ধান।।
দশমূলরস পৃঃ
এবং শ্রী কেদারনাথ দত্ত যে বাঘনাপাড়া শ্রীপাটের গোস্বামীগণ দ্বারা ভক্তিবিনোদ উপাধি পেয়েছিলেন তা ও এইগ্রন্থে বর্ণনা করা হয়েছে
“অতো ভক্তিবিনোদাখ্য উপাধি প্রতিগৃহ্যতাং"
এখানে লক্ষ্যণীয় যে ভক্তিবিনোদ উপাধি যখন পেয়েছেন তার আগেই তিনি নবদ্বীপের অন্তর্দ্বীপে বা মায়াপুরে গৌরজন্মস্থান আবিষ্কার করেছেন। এবং বিপিনবিহারীগোস্বামী গৌরজন্মস্থান আবিষ্কারের পরেও ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের প্রশংসাই করেছেন।
তাই মায়াপুরে গৌরজন্মস্থান আবিষ্কারের জন্য ভক্তিবিনোদ ঠাকুর কে বিপিনবিহারী গোস্বামী ত্যাগ করেছিলেন। তার ভক্তিবিনোদ উপাধি কেড়ে নেওয়া হয়েছিল এটি একটি অপপ্রচার মাত্র।

প্রশ্ন:- শ্রীলভক্তিবিনোদ ঠাকুরের গুরু কে? 
উত্তর:- শ্রীলভক্তিবিনোদ ঠাকুর সালে বাঘনাপাড়ার বিপিনবিহারী গোস্বামীর থেকে মন্ত্র দীক্ষা লাভ করেন।

প্রশ্ন:- ইসকনের গুরুপরম্পরায় শ্রীবিপিনবিহারী গোস্বামীর নাম নেই কেন?
উত্তর:- শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর পরবর্তীকালে বিপিনবিহারী গোস্বামীর সঙ্গ ত্যাগ করেছিলেন। কারন ১৯১১ সালে মেদিনীপুরের বালিঘাই তে একটি সভায় ব্রাহ্মণ ও বৈষ্ণবের মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ এই বিষয়ে সমস্ত বৈষ্ণব দের নিয়ে একটি সভা ডাকা হয়। সেই সভাতে শ্রীবিপিনবিহারী গোস্বামী সভাপতিত্ব করেন। সেই সভায় শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুর অসুস্থতার কারণে যেতে পারেননি, তাঁর পুত্র বিমলাপ্রসাদ সিদ্ধান্ত সরস্বতীকে পাঠান।‌ এই সভার আলোচ্য বিভিন্ন‌ বিষয়ের একটি ছিল শূদ্র কুলে জন্মানো ব্যক্তি বিষ্ণুভক্তিপরায়ণ হলে দীক্ষা দান ও শালগ্রাম অর্চন করতে পারেন কিনা। গোস্বামী বংশোদ্ভূত অন্যান্য বৈষ্ণব সহ বিপিনবিহারী গোস্বামী সিদ্ধান্ত ও ব্যবস্থা পত্র দেন যে শূদ্র কূলে জাত রঘুনাথ দাস গোস্বামীকে মহাপ্রভূ যেহেতু শালগ্রাম সেবাধিকার দেননি, গোবর্ধন সেবা দেন ও ব্রাহ্মণ কুলে উৎপন্ন রূপ সনাতন গোপাল ভট্ট গোস্বামীদের শ্রীবিগ্রহ সেবাধিকার দিয়েছিলেন এবং রঘুনাথ ভট্ট, গোপাল ভট্ট গোস্বামীকে দীক্ষা দানের অধিকারও দেন তাই শূদ্র কুলে উৎপন্ন বৈষ্ণব এর‌ শালগ্রাম শিলা অর্চন ও দীক্ষাদানের অধিকার নেই। এবং তিনি কটূক্তি ও করেন যে রঘুনাথ গোস্বামীর মত শূদ্র কুলে যাদের জন্ম তাদের কে দীক্ষাদান ও নিত্যানন্দ প্রভুর মত মস্তকে পাদার্পণ করার তাঁর অধিকার রয়েছে।
মেদিনীপুরের বালিঘাই এর সভায় বিপিনবিহারী গোস্বামীবলেন যে ষড়গোস্বামীগণের অন্যতম শ্রীরঘুনাথদাস গোস্বামী শূদ্রোকুলোৎপন্ন তাই শালগ্রামশিলা অর্চনে তার অধিকার নেই। সেই কারনেই শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভু তাকে শালগ্রামশিলার সেবা না দিয়ে গোবর্দ্ধন শিলার সেবা দিয়েছিলেন। তাই অব্রাহ্মন বৈষ্ণব এর থেকেও ব্রাহ্মন বৈষ্ণব শ্রেষ্ঠ।
পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে যিনি বৈষ্ণবে জাতিবুদ্ধি করেন তিনি গুরু হলেও তাকে পরিত্যাগ করা উচিত। যথা—অর্চ্চ্যে বিষ্ণৌ শিলাধীর্গুরুষু নরমতির্বৈষ্ণবেজাতিবুদ্ধির্বিষ্ণোর্বা বৈষ্ণবানাং কলিমলমথনে পাদতীর্থেঽম্বুবুদ্ধিঃ।শ্রীবিষ্ণোর্নাম্নি মন্ত্রে সকলকলুষসহে শব্দসামান্যবুদ্ধির্বিষ্ণৌ সর্বেশ্বরেশে তদিতরসমধীর্যস্য বা নারকী সঃ।।~হরিভক্তিবিলাস এ উদ্ধৃত পাদ্মবচন
বিপিনবিহারী গোস্বামী বালিঘাই এর সভায় যে রঘুনাথদাস গোস্বামীকে শূদ্র বলেছিলেন তা বালিঘাই সভার কার্য্যবিবরণী থেকে দেখানো হল 


বৈষ্ণবে জাতিবুদ্ধি করা ঘোর অপরাধ। আর রঘুনাথ দাস গোস্বামীর মত পরমহংস কুল চূড়ামণির এহেন অপমান দেখে শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর স্থির থাকতে না পেরে বিপিনবিহারী গোস্বামী ও তার দলের গোস্বামীদের যুক্তি সমূহ এক এক করে খন্ডন করেন। (তার যুক্তি সমূহ ব্রাহ্মণ ও বৈষ্ণব তারতম্য মূলক আলোচনা নামে প্রকাশিত আগ্রহী পাঠক পড়তে পারেন) হরিভক্তিবিলাসে বলা হয়েছে গুরু যদি পতিত হন তাকে অবশ্য ই ত্যাগ করা যেতে পারে। পদ্মপুরাণ থেকে উদ্ধৃত করে হরিভক্তিবিলাসে বলা হয়েছে অর্চ্চ্যে বিষ্ণৌ শিলাধীর্গুরুষু নরমতির্বৈষ্ণবেজাতিবুদ্ধির্বিষ্ণোর্বা বৈষ্ণবানাং ....বা নারকী সঃ।। অর্থাৎ বৈষ্ণবে যে জাতি বুদ্ধি করে সে নরকগামী হয়। বৈষ্ণব নিন্দুক, আত্মাভিমানী, রঘুনাথ দাসগোস্বামীকে অপমানকারী, গুরু তাই ত্যাজ্য। এই কারনে ভক্তিবিনোদ ঠাকুর বিপিনবিহারী গোস্বামীর সঙ্গে আর কখনো সঙ্গ করেননি। জগন্নাথ দাস বাবাজীর থেকে তিনি ভেষ গ্রহণ করেন। এখন আপনারাই বিচার করুন এরকম গুরু কে গুরু বলে পরিচয় দিয়ে কি শ্রীদীক্ষা গুরুপরম্পরার সম্মান রক্ষিত হয়। তাই পরবর্তী কালে শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর গুরুপরম্পরা উল্লেখ করতে গিয়ে কখনো বিপিনবিহারী গোস্বামীর নাম উল্লেখ করেননি। বালিঘাই এর সভায় শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতীর বক্তৃতায় মুগ্ধ হয়ে বিপিনবিহারী গোস্বামীর কয়েকজন শিষ্যও তাদের গুরুকে পরিত্যাগ করে শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতীর কাছে দীক্ষা গ্রহণ করেন। এই সব কারনে অপমানিত হয়ে বিপিনবিহারী গোস্বামী ও বলেন “মায়াপুর কে গৌর জন্মস্থান বলায় তিনি ভক্তিবিনোদ ঠাকুর কে ত্যাগ করছেন।" অথচ ভক্তিবিনোদ ঠাকুর মায়াপুরে গৌর জন্মস্থান আবিষ্কার করার বহুদিন পর্যন্ত ও তার সাথে বিপিনবিহারী গোস্বামীর সুসম্পর্ক ছিল।

এছাড়াও শ্রীল ভক্তিবিনোদ ঠাকুরের বাঘনাপাড়ার বিপিনবিহারী গোস্বামীর সঙ্গ ত্যাগ করার আরো কয়েকটি কারন ছিল। ১) শ্রীবিপিনবিহারী গোস্বামী আফিম, তামাকের নেশা করতেন ঠাকুর ভক্তিবিনোদ তার আফিম, ধূমপানাদির নেশা ছাড়ানোর বহু চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি নেশা পরিত্যাগ করেননি। ~ সজ্জনতোষণী পত্রিকা ২) তিনি রঘুনাথ দাস গোস্বামীকে শূদ্র বৈষ্ণব মনে করতেন এবং তার মতে শূদ্রবৈষ্ণবের দীক্ষাদান ও শালগ্রাম অর্চনের অধিকার নেই বলতেন। আর নিজেকে ব্রাহ্মণ বৈষ্ণব ও দীক্ষা দানের অধিকারী ইত্যাদি জাত্যাভিমান করতেন।‌ ৩) হরিভক্তিবিলাস এ বৈষ্ণবে জাতিবুদ্ধিকে অপরাধ বলা হয়েছে তা বালিঘাই এর সভায় শ্রীল ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর বোঝালেও তিনি তা না মেনে উল্টে প্রচার করেন হরিভক্তিবিলাস বৈষ্ণবস্মৃতিশাস্ত্র নয়, গোপালভট্ট গোস্বামীর কোনো শিষ্যের লেখা। এজন্য তার প্রকাশিত গৌরাঙ্গসেবক পত্রিকায় কিছু কাল্পনিক যুক্তি দিয়ে কয়েকটি প্রবন্ধ ও প্রকাশ করেন যে হরিভক্তিবিলাস গোপালভট্ট গোস্বামীর কোনো শিষ্যের লেখা। এজন্য সজ্জনতোষণী পত্রিকায় বলা হয়েছে নিরন্তর বৈষ্ণব অপরাধের কারনে শ্রীলভক্তিবিনোদ ঠাকুর তার সঙ্গ পরিত্যাগ করেন।


Bibilography:-







যদিও শ্রীলভক্তিবিনোদ ঠাকুর শ্রীবিপিনবিহারী গোস্বামীর সঙ্গ ত্যাগ করেন ও পরমভাগবত শ্রীলজগন্নাথ দাস বাবাজীর থেকে ভেষ গ্রহন করেন কিন্তু তিনি কখনো শ্রীবিপিনবিহারী গোস্বামীর নিন্দা করেন