The omnipotent paradox

The omnipotent paradox

নাস্তিক রা এরকম প্রশ্ন তোলে যে ঈশ্বর যদি সর্বশক্তিমান ই হবেন তিনি কি এমন পাথর তৈরী করতে পারেন যা তিনি নিজেই তুলতে পারবেননা?



যদি ঈশ্বর পাথর তুলতে না পারেন তবে তিনি সর্বশক্তিমাণ নন, যদি তিনি সব ই তুলতে পারেন তাহলেও সেরকম পাথর বানাতে অক্ষম হওয়ায় তিনি সর্বশক্তিমাণ নন। তাই এই প্রশ্নের উত্তরে আপনি হ্যাঁ বা না যাই বলুন তাতেই ঈশ্বরের সর্বশক্তিমত্তার হানি হয়। এই রকম কিছু প্রশ্নকে বলা হয় Omnipotent paradox. এই তত্ত্ব দিয়ে নাস্তিক রা বলে এরকম সর্বশক্তিমান কেউ হওয়া সম্ভব ই না। তাই ঈশ্বর এর কোনো অস্তিত্ব নেই।

এক্ষেত্রে তথাকথিত বৈদিক সমাজ এর দাবী না ঈশ্বর সর্বশক্তিমাণ মানে এই নয় যে তিনি সব করতে সমর্থ। সর্বশক্তিমাণ মানে তিনি অন্যের সাহায্য ছাড়া সমস্ত কাজ করতে সক্ষম। তার কাজে বাধা প্রদানে কারোর সমর্থ নেই। যেমন জগৎ সৃষ্টি, ধ্বংস বা বেদ এর জ্ঞান‌ দান এগুলো ঈশ্বর কারোর সাহায্য‌ ছাড়াই করে থাকেন তাই তিনি সর্বশক্তিমাণ। যদি বলো ঈশ্বর সব কিছু করতে পারে তাহলে এই প্রশ্ন গুলোর জবাব দাও ঈশ্বর কি নিজেকে হত্যা করতে পারে ? ঈশ্বর কোটি কোটি ঈশ্বর তৈরি করতে পারে ? ঈশ্বর নিজেকে পাগল বানাতে পারে ? ঈশ্বর মহামূর্খ হতে পারে ? ঈশ্বর কি চুরি ডাকাতি করতে পারে?

“যিনি অসম্ভব কাৰ্য্য করিতে পারেন , তাহাকেই কি সর্বশক্তিমান বলে ? যদি ঈশ্বর অসম্ভব কাৰ্য্য অর্থাৎকারণ ব্যতীত কাৰ্য্য করিতে পারেন তাহা হইলে তিনি কারণ ব্যতীত দ্বিতীয় ঈশ্বর সৃষ্টি করিতে স্বয়ং মৃত্যুগ্রস্ত হইতে এবং জড় , দুঃখী , অন্যায়কারী , অপবিত্র ও দুষ্কর্মকারী ইত্যাদিও হইতে পারেন কি না ?"
পৃঃ১৬১

এক্ষেত্রে সিদ্ধান্তী বলেন ওহে মুর্খ বৈদিকব্রুব তোমার ঈশ্বর সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই। তাই মনে করো তোমাদের কল্পিত নিরাকার ঈশ্বর এসব করতে পারেন না।
ঈশ্বর নিজেকে হত্যা করতে ও পারেন। পাগল ও বানাতে পারেন। চুরি ডাকাতি ও করতে পারেন। যেমন দেখো যে মহাভারত বলছে শ্রীকৃষ্ণ পরমব্রহ্ম সেখানেই বলা আছে জরা ব্যাধের শরাঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে।
ঈশ্বর নিজেকে পাগল ও বানাতে পারে। চৈতন্য মহাপ্রভু কৃষ্ণপ্রেমে উন্মত্ত আচরণ করতেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তো ব্রজের প্রসিদ্ধ চোর, ডাকাতি করে বিদর্ভ কুমারী কে হরণ ও করেছিলেন।
তাই ভক্ত যদি চায় ভগবান এমন পাথর ও বানাতে পারেন যা তিনি নিজেই তুলতে পারবেননা। দামবন্ধন লীলায় শ্রীকৃষ্ণ নিজের ই তৈরী সামান্য একটা দড়ি তে বন্দী হয়ে গিয়ে মুক্ত হতে পারেননা। তাই শ্রীকৃষ্ণ সর্বশক্তিমান তিনি সব ই করতে পারেন। বেদান্ত সূত্রে বলা হয়েছে লোকবত্তু লীলাকৈবল্যম ভক্ত যদি চায় ভগবান সকল লীলাই করতে পারেন।
ভগবান সামান্য নিজের ই সৃষ্ট সমুদ্র পার হতে পারেননা তাকে সেতুবন্ধন করতে হয়। অথচ তার ভক্ত হনুমান তার ই শক্তিতে সমুদ্র এক লাফে পার হয়ে যান। যে রামায়ণ বলছে হনুমান রাম নাম করে সমুদ্র পার হয়ে যান, সেই রামায়ণ ই বলছে শ্রীরামচন্দ্র ভক্তদের সেবা গ্রহণের জন্য সমুদ্র পার করতে পারেননা, তাকে সেতুবন্ধন করতে হয়।
ভগবান সূর্য্য ছাড়াই আলোকিত করতে পারেন তা গীতাতেও বলেছেন “ন তদ ভাসয়তে সূর্য্য" আমার পরম ধামে সূর্য্য চন্দ্র তারকা নেই আমার অঙ্গজ্যোতি দ্বারাই সেই পরমধাম আলোকিত।

এরকম আর কতো উদাহরণ দেবো। তাই ভক্ত চাইলে ভগবান সব ই করতে পারেন।‌
তাই সর্বশক্তিমাণ মানে ভগবান সর্বসমর্থ। হ্যাঁ সব কিছুই করতে পারেন।‌ এমনকি চতুর্ভূজ বৃত্ত ও আঁকতে পারেন।

কিন্তু ভগবান যদি সামান্য দড়ির বন্ধন থেকে মুক্ত হতে না পারেন তাহলে তো তার অক্ষমতাই প্রকাশ পায় তিনি সর্বশক্তিমাণ কি করে?
না কোনো দড়িই ভগবান কে বাঁধতে পারেনা।
হস্তিনাপুরে দূত হিসাবে শান্তিপ্রস্তাব দিতে গেলে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে দুর্যোধন বন্দী করে। শিকলের বন্ধন ছিন্ন করে শ্রীকৃষ্ণ বিরাট রূপ প্রকাশ করেন। তাই ভক্ত চাইলে ভগবান লীলার জন্য নিজের সৃষ্ট দড়ির বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারেননা, কান্নাকাটি অনুনয় বিনয় করেন।
সর্বত্রগামী ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের সমুদ্র পার হওয়ার জন্য সেতুবন্ধনের প্রয়োজন‌ নেই। সর্বজ্ঞ ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের সীতার সংবাদ জানার জন্য বানরদের পাঠানোর দরকার নেই। তবে হনুমানের মতো ভক্তদের সেবা গ্রহণের জন্য ই ভগবান সমুদ্র পার হতে পারেননা, সেতুবন্ধন করেন। সীতার সংবাদ না পেয়ে শোকে আকুল হন। হনুমান গিয়ে সংবাদ নিয়ে আসে। গরুড়ের সেবা গ্রহণ করার জন্য নিজের সৃষ্ট সাপ দের দ্বারা নাগপাশে বন্দী হয়ে মুক্ত হতে পারেননা। গরুড় এসে তাকে মুক্ত করেন।

বৈদিকব্রুব সমাজ এর ভ্রান্ত মতবাদ দেখুন
ঈশ্বর সর্বশক্তিমাণ অর্থাৎ তিনি জগৎ সৃষ্টি সংহার অন্য কোনো কিছুর সহায়তা ব্যাতীত ই করে থাকেন।
“প্রশ্ন –ঈশ্বর সর্বশক্তিমান কি না ? উত্তর –হ্যা , কিন্তু তুমি সর্বশক্তিমান শব্দের অর্থ যাহা জানাে তাহা নহে । সর্বশক্তিমান্‌শব্দের অর্থ এই যে , ঈশ্বর স্বীয় কর্ম অর্থাৎ সৃষ্টি - স্থিতি- প্রলয়াদি এবং সর্বজীবে পাপ পুণ্যের যথাযােগ্য ব্যবস্থা করিতে , কাহারও কিছুমাত্র সহায়তা গ্রহণ করেন না । অর্থাৎ তিনি তাহার অনন্ত সামর্থ্য দ্বারা নিজের যাবতীয় কর্ম পূর্ণ করিয়া থাকেন।"
পৃঃ১৩৪
আবার তারাই বলছে জগৎ সৃষ্টিতে পরমেশ্বর নিমিত্তকারন, প্রকৃতি উপাদান কারন। পরমেশ্বর প্রকৃতি এই উপাদান দ্বারা জগৎ সৃষ্টি করেন।
“প্রশ্ন । জগতের কারণ কতগুলি ? উত্তর – তিনটি । প্রথম নিমিত্ত , দ্বিতীয় উপাদান এবং তৃতীয় সাধারণ । যদ্বারা নির্মিত কোন কিছু নির্মিত হয় , যদ্ব্যতীত হয় না , তাহাকে ‘ নিমিত্ত ’ কারণ বলে । উহা স্বয়ং হয় না , কিন্তু অপরকে প্রকারান্তর করিয়া নির্মাণ করে । দ্বিতীয় উপাদান কারণ । যদ্ব্যতীত কোন কিছু নির্মিত হয় না এবং যাহা অবস্থান্তররূপ হইয়া নির্মিত অথবা বিকৃত হয় , তাহাই উপাদান কারণ । তৃতীয় সাধারণ কারণ ’ যাহা নির্মাণ কার্যের সাধন এবং সাধারণ নিমিত্ত তাহাকে সাধারণ কারণ বলে ।"
পৃঃ ১৫৯

অতএব পরমেশ্বরের জগৎ সৃষ্টিতে অন্য কিছুর প্রয়োজন আছে। তাহলে অন্যাপেক্ষা থাকলে সর্বশক্তিমাণ কি করে হয়? বৈদিকব্রুব সমাজ এর দর্শন এরকম পরষ্পর বিরোধী মতবাদ দোষে দুষ্ট।