Are the brahimns best by birth

Are the brahimns best by birth

ভাগবতে কি জন্মগতভাবে ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে? 




প্রশ্ন:- ভাঃ ১০/৮৬/৫৩ তে জন্মগতভাবে ব্রাহ্মণ সমস্ত জীবের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। “ব্রাহ্মণঃ জন্মনা শ্রেয়ান্" 
উত্তর:- শ্রীমদ্ভাগবতে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন—
ব্রাহ্মণো জন্মনা শ্রেয়ান্ সর্বেষাং প্রাণিনামিহ ।
তপসা বিদ্যয়া তুষ্‍ট্যা কিমু মত্কলয়া যুতঃ ॥ 
ভাঃ ১০/৮৬/৫৩ 
অনুবাদ:- জন্মগতভাবে একজন ব্রাহ্মণ এই জগতের সমস্ত জীবের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং তিনি যখন তপস্যা , বিদ্যা ও আত্মসন্তুষ্টি যুক্ত হন , তিনি আরও উন্নত হয়ে ওঠেন , আমার প্রতি ভক্তির আর কি কথা ।

মুর্খ্য রুহুল জন্মগত শব্দ দেখেই আনন্দে আত্মহারা। মাতৃযোনী থেকে শরীরের জন্ম হয় মাত্র, তাকে ব্রাহ্মণের জন্ম বলেনা। 
প্রথমত জানতে হবে ব্রাহ্মণ কে? যার মধ্যে শম, দম, সত্য শৌচ জ্ঞান জিজ্ঞাসা গুণাবলী রয়েছে তিনিই ব্রাহ্মণ। বৃহদারণ্যক উপনিষদে ৩/৮/১০ এ বলা হয়েছে "অথ য এতদক্ষরং গার্গি বিদিত্বাস্মাল্লোকাত্প্রৈতি স ব্রাহ্মণঃ ॥"  যিনি অক্ষর ব্রহ্মকে জানেন তিনিই ব্রাহ্মণ। (1) 

জন্ম তিন প্রকারের হয়। ত্রিবিধ জন্ম — শৌক্র, সাবিত্র ও দৈক্ষ বা যাজ্ঞিক। পিতার শুক্রের দ্বারা মাতৃকুক্ষি হতে প্রথম জন্মই শৌক্র জন্ম। শৌক্র অর্থে বীর্য বা শুক্র। দ্বিতীয় জন্ম হচ্ছে— সাবিত্রী জন্ম, অর্থাৎ পবিত্র সংস্কার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গুরুদেবের কাছ থেকে উপনয়ন দীক্ষা বা ব্রাহ্মণ দীক্ষা লাভ হয় তাকেই বলা হয় দ্বিতীয় জন্ম বা সাবিত্রী জন্ম। আর তৃতীয় জন্মকেই বলা হয় দৈক্ষ বা যাজ্ঞিক জন্ম, অর্থাৎ যজমান অগ্নিষ্টোম জ্যোতিষ্টোম প্রভৃতি যজ্ঞে দীক্ষিত হলে তখন তাকে বলা হয় দৈক্ষ বা যাজ্ঞিক জন্ম।

মাতুরগ্রেঽধিজননং দ্বিতীয়ং মৌঞ্জিবন্ধনে ।
তৃতীয়ং যজ্ঞদীক্ষায়াং দ্বিজস্য শ্রুতিচোদনাৎ ॥ 
মনুস্মৃতি ২.১৬৯
অন্বয়:- মাতুঃ= মাতার থেকে, অগ্রে= প্রথম অধিজননং= জন্ম, দ্বিতীয়ং= দ্বিতীয়, মৌঞ্জিবন্ধনে= উপনয়ণ সংস্কারের দ্বারা। তৃতীয়ং= তৃতীয়, যজ্ঞদীক্ষায়াং= যজ্ঞে দীক্ষা গ্রহণের দ্বারা, দ্বিজস্য= দ্বিজাতিদের, শ্রুতিচোদনাৎ= শ্রুতির নির্দেশ অনুসারে, ॥
অনুবাদ:- শ্রুতি তে কথিত হয়েছে যে দ্বিজাতিদের প্রথম জন্ম মাতৃ গর্ভ থেকে, দ্বিতীয় জন্ম হয় উপনয়ণ সংস্কারের দ্বারা, তৃতীয় জন্ম হয় জ্যোতিষ্টোমাদি যজ্ঞে দীক্ষার দ্বারা। 

তত্র যদ্ব্রহ্মজন্মাস্য মৌঞ্জীবন্ধনচিহ্নিতম্ ।
তত্রাস্য মাতা সাবিত্রী পিতা ত্বাচার্য উচ্যতে ॥ 
মনুস্মৃতি ২/১৭০
অন্বয়:- তত্র= তার মধ্যে, যদ্= যে ব্রহ্মজন্ম= ব্রাহ্মণ রূপে জন্ম, অস্য= এই (দ্বিজ বালকের) মৌঞ্জীবন্ধন=মুঞ্জ এর মেখলাদি চিহ্নিতম্= চিহ্ন। তত্র= সেই জন্মে, অস্য= এই (বালকের) মাতা= মা, সাবিত্রী=গায়ত্রী মন্ত্র পিতা=পিতা, তু= এবং আচার্য=সংস্কার প্রদানকারী আচার্য্য, উচ্যতে=বলা হয় ॥
অনুবাদ:- এই জন্মত্রয়ের মধ্যে মেখলাধারণ চিহ্নিত উপনয়ণ সংস্কার দ্বারা যে ব্রাহ্মণ রূপে জন্ম হয় সেই জন্মে দ্বিজ বালকের মাতা গায়ত্রী ও পিতা উপনয়ন দাতা আচার্য্য। 


কোনো ব্যাক্তির মধ্যে  ব্রহ্মজিজ্ঞাসা থাকলে সেই যোগ্যতার কারনে সে সাবিত্রী সংস্কার পায় একে দ্বিতীয় জন্ম বলে। এই জন্মের কারনে ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ। 
মাতৃগর্ভ থেকে জন্মের মাধ্যমে ব্রাহ্মণত্ব লাভ করা যায়না। তাই এখানে জন্ম শব্দের অর্থ সাবিত্রী সংস্কার। 
উপনয়ণ সংস্কার কে ও জন্ম বলা হয়।

বিষ্ণুধর্মোত্তর পুরাণে বলা হয়েছে—
তেষাং জন্মাদ্বিতীয়ং তু বিজ্ঞেয়ং মৌঞ্জিবন্ধনম্ ।। 
আচার্যস্তু পিতা তত্র সাবিত্রী জননী তথা ।। 
ব্রাহ্মণক্ষত্রিয়বিশাং মৌঞ্জীবন্ধনজন্মনি ।। ৯ ।।
বৃত্ত্যা দ্বিজাঃ শূদ্রা ভবন্তি যাবন্ন বেদে প্রভবন্তি রাম ।।
ততঃ পরং তে দ্বিজতাং লভন্তে সমস্তকার্যেষ্বধিদৈবতং চ ।।১০
বিষ্ণুধর্মোত্তরপুরাণম্/ খণ্ডঃ ২/অধ্যাযাঃ ৮০
অনুবাদ:- তাদের মৌঞ্জীবন্ধন কে দ্বিতীয় জন্ম বলে জানবে। মৌঞ্জীবন্ধন দ্বারা ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্যের সেই দ্বিতীয় জন্মে আচার্য্য পিতা ও সাবিত্রী মন্ত্র মাতা।
হে রাম প্রথম জন্মে বৃত্তি দ্বারা যারা দ্বিজ তারাও শূদ্রসম জন্মগ্রহণ করে যতক্ষন না তারা বেদজ্ঞান দ্বারা জন্ম লাভ করে। এবং মৌঞ্জীবন্ধনের পর তারা দ্বিজত্ব লাভ করে ও সকল দেবকার্য্যে অধিকার পায়। (2)

অতএব জন্ম দুই প্রকার আর মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম মাত্রে সকলেই শূদ্র। মনুসংহিতা আপস্তম্ব ধর্মসূত্রেও কোন জন্ম কে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে দেখুন— 

কামান্ মাতা পিতা চৈনং যদুৎপাদয়তো মিথঃ ।
সম্ভূতিং তস্য তাং বিদ্যাদ্ যদ্ যোনাবভিজায়তে ॥ 
মনুস্মৃতি ২/১৪৭
অন্বয়:- কামান্= সন্তান প্রাপ্তির কামনায়, মাতা পিতা চ= পিতা ও মাতা, এনং= এই মাণবকের যদুৎপাদয়তো= যে শরীর উৎপাদন করে, মিথঃ= মিথুনে উপগত হয়ে ।
সম্ভূতিং=জন্ম, তস্য তাং= তা তার বিদ্যাদ্= জ্ঞাত হয়, যৎ যোনৌ অভিজায়তে= মাতৃগর্ভ থেকে যে অঙ্গ প্রত্যঙ্গাদি লাভ হয়॥
অনুবাদ:- পিতা ও মাতা পরস্পর কামপরতন্ত্র হয়ে মৈথুনের দ্বারা বালকের যে শরীর উৎপাদন করে তাকে জন্ম বলা হয়, সে জন্মে বালক পশুদের ন্যায় মাতৃগর্ভে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সমুদায় লাভ করে , সেই জন্ম পশু প্রভৃতির মধ্যেও দেখা যায়, তাতে বিশেষ কিছু নাই । (3)


আচার্যস্ত্বস্য যাং জাতিং বিধিবদ্ বেদপারগঃ ।
উৎপাদয়তি সাবিত্র্যা সা সত্যা সাঽজরাঽমরা॥ 
মনুস্মৃতি ২/১৪৮
অন্বয়:- বেদপারগঃ= বেদাদি শাস্ত্রের পারদর্শী আচার্যঃ= আচার্য্য বিধিবদ্= বিধিপূর্বক শাস্ত্র অনুসারে সাবিত্র্যা= গায়ত্রী সংস্কার বা উপনয়ণসংস্কারের দ্বারা, তু= নিশ্চয়ার্থে, অস্য= এই মাণবকের যাং জাতিম্= যে জন্ম উৎপাদয়তি= প্রদান করেন, সা সত্য= সেই জন্ম ই সত্য, সা অজরা অমরা=সেই জন্ম ই অক্ষয় অবিনাশী।  
অনুবাদ:- সমস্ত বেদ শাস্ত্রের পারদর্শী আচার্য্য মাণবকের যথাবিধান অনুসারে উপনয়ণ সংস্কার দ্বারা যে জন্ম প্রদান করেন সেই জন্ম ব্রহ্মপ্রাপ্তির কারন বলে সত্য, অক্ষয় ও অমর রূপে গণ্য হয়ে থাকে। (3)

আপস্তম্ব ধর্মসূত্র নামক কল্পসূত্র গ্রন্থে বলা হয়েছে
স হি বিদ্যাতস্তং জনয়তি। তচ্ছ্রেষ্ঠং জন্ম। শরীরমেব মাতাপিতরৌ জনয়তঃ।
আপস্তম্ব ধর্মসূত্র ১/১/১৬-১৮ 
অনুবাদ:- তিনি (আচার্য্য) বিদ্যার দ্বারা (ব্রাহ্মণের) জন্মদান করেন। সেটিই শ্রেষ্ঠ জন্ম। পিতা মাতা কেবল বালকের শরীরের উৎপাদন করে মাত্র। (4)

তাই শ্রীকৃষ্ণ এখানে বলেছেন শম, দম, শৌচ, জ্ঞানজিজ্ঞাসা থাকায় কোনো যোগ্য ব্যাক্তি সাবিত্রী সংস্কার জনিত জন্ম লাভ করায় সে শ্রেষ্ঠ। তারপর সে যখন তপস্যা, বিদ্যার্জন করে, তখন সে আরোই শ্রেষ্ঠ। আর যদি সে শ্রীকৃষ্ণের ভক্তি করে তার কথা আর কি বলবো? রাবণ হিরণ্যকশিপুর ও ব্রাহ্মণের পুত্র রূপে জন্ম হলেও তার জন্য রাবণ হিরণ্যকশিপু শ্রেষ্ঠ নয়। বরং নিকৃষ্ট পশু জাতিতে জন্ম হয়েও হনুমানজী শ্রেষ্ঠ ও‌ পূজনীয়। 


bibliography

1) Brihadaranyaka upanishad

2) Vishnudhartmottara purana parimal publications delhi page 230 



3) Manu smriti with the commentary of medfhatithi and kulluk bhatta Basumati ed 4th page no 142
4) Apastamba dharmasutra