--------------------------------
আ*র্যরা কি আদৌ বি*ধর্মীদের সনাতন ধর্মে ফিরিয়ে আনছে নাকি উলটো সনাতনীরা এরা প্রচারে ধর্মভ্রষ্ট হচ্ছে?
-------------------------------
বর্তমানে অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করছে যে আ*র্য্য সমাজ বি*ধর্মী দের কে সনাতন ধর্মে ফিরিয়ে এনেছে, শুদ্ধিযজ্ঞের মাধ্যমে বহু সনাতনী হচ্ছে, অ*গ্নি*বী*র ই বি*ধর্মী দের বিরুদ্ধে সনাতনী সমাজের রক্ষা কবচ ইত্যাদি।
আজকে আপনাদের একটা ইতিহাস বলি কেন অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের “লাহোর" পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হলো।
ভারত ভাগের পূর্বে অবিভক্ত পাঞ্জাবের রাজধানী ছিল লাহোর। লাহোর, শিয়াল কোট, অমৃতসর এর ভৌগোলিক অবস্থান এমন ই ছিল যা দেশভাগের সময় ভারতের অন্তর্ভুক্ত হবে সেই বিষয়ে জাতীয় কংগ্রেস নেতারাও দৃঢ় নিশ্চয় ছিল। এবং ভারত ভাগের পর লাহোর, শিয়ালকোট, অমৃতসর প্রথমে ভারতের অন্তর্ভুক্ত ই হয় কিন্তু পরে জনভোটের মাধ্যমে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারনে লাহোর এবং শিয়ালকোট, ভারত থেকে আলাদা হয়ে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। আর অমৃতসর এ শিখরা সংখ্যাগুরু ছিল তারা ভারতেই থাকতে চায়। তাই আজো লাহোর শিয়ালকোট ভারতের মানচিত্রে একটা গর্তের মতো জায়গা যা পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত।
লাহোর এ বি*ধর্মী দের সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া ও লাহোরের পাকিস্তান এ অন্তর্ভুক্তির নেপথ্যে আ*র্য্য সমা*জের বিরাট ভূমিকা রয়েছে।
তৎকালীন সময়ে লাহোর ছিল আ*র্য্য সমা*জের প্রচারের প্রধান কেন্দ্র। দ*য়ান*ন্দ সর*স্বতীর সময় আজমেঢ় ছিল আর্য্য সমাজের প্রধান কেন্দ্র, সেখানেই পরোপকারিনী সভা প্রতিষ্ঠা হয়। দ*য়ান*ন্দ সরস্বতীর মৃত্যুর পর পরোপ*কারিণী সভার কার্য্যকলাপ স্তিমিত হয়ে আসে।
১৮৮৬ সালে আ*র্য্য সমাজীরা আজমেঢ় ছেড়ে এসে তাদের প্রধান কেন্দ্র স্থাপন করে লাহোর এ। লাহোরে প্রতিষ্ঠিত হয় দ*য়ান*ন্দ অ্যাংলো বৈদিক বিদ্যালয় বা সংক্ষেপে DAV coll*ege এবং পাঞ্জাব আ*র্য্য প্রতিধিধি সভা। পণ্ডিত ভগবদ্দত্ত, পণ্ডিত ব্রহ্মদত্ত জিজ্ঞাসু, লালা হংসরাজ, গুরুদত্ত বিদ্যার্থী, ব্রহ্মমুনি পরিব্রাজক প্রভৃতিরা এই কলেজ থেকে আর্য্য সমাজীয় পদ্ধতিতে বৈদিক গবেষণা ও আর্য্য সমাজের প্রচার কার্য্য চালাতে থাকে।
১৮০১-১৮৩৯ পর্যন্ত লাহোর ছিল মহারাজ রঞ্জিত সিং এর রাজধানী। তাই ১৮০০ শতকে লাহোরে বহু হিন্দু শিখ ব্যাবসায়ী লাহোরে বাস করতেন। এমনকি লাহোরের সমস্ত সরকারী দপ্তরের আধিকারিক ছিল হিন্দু। কিন্তু ১৮৮৬ থেকে আ*র্য্য সমাজ এর প্রচারের কারনে সাধারণ হিন্দুদের মধ্যে পুরাণ, ভগবানের অবতার, হিন্দু পূজা নিত্যকর্ম পদ্ধতি, শ্রাদ্ধাদি কর্মানুষ্ঠান, হিন্দু ধর্মগুরু, আচার্য্য দের প্রতি অবিশ্বাস তৈরী হতে থাকলো।
ক্রমে ক্রমে লাহোর এর সাধারন হিন্দু রা সনাতন ধর্ম বিষয়ে বিভ্রান্ত হয়ে বি*ধর্মী দের প্রচারের সফ্ট টার্গেট হয়ে পড়লো। এবং কয়েক বছরের মধ্যে লাহোর মু*স*লি*ম সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে গেলো।
এবং লাহোর প্রদেশে সনাতন ধর্মীয় পণ্ডিত যারা ছিলেন তারা ধর্ম ব্যাবসায়ী, ও মন্দিরের পুরোহিত মাত্র ছিল, পণ্ডিত ভগবদ্দত্ত প্রভৃতিদের কাছে তা বালির বাঁধের মত ছিল।
এর পরিণাম হলো মু*স*লি*ম সংখ্যাগরিষ্ঠ লাহোর দেশভাগের পর জনভোটের মাধ্যমে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। আ*র্য্য সমাজীরাও বিধর্মী দের মারে লাহোর ছেড়ে পালায় তাদের নিরাকার ঈশ্বর, বা তাদের সত্যার্থ প্রকাশ পড়া অগ্নিবীর, মহাপুরুষ কেউই তাদের বাঁচাতে আসেনি।
লাহোর ও পশ্চিম পাঞ্জাব থেকে পালিয়ে আ*র্য্য সমাজীরা পূর্বপাঞ্জাব ও হরিয়াণায় বাস করতে শুরু করে ও ১৯৪৮ সালে হরিয়াণার আম্বালায় DAV college, ও হরিয়াণার কাঙরীতে গুরুকুল প্রতিষ্ঠা করে।
আ*র্য্য সমাজের শুরু থেকেই প্রধান প্রচার স্থল ছিল পশ্চিম পাঞ্জাব এর জাঠ, গুর্জর ও আভীর অধ্যুষিত অঞ্চল। বিশেষত জালন্ধর, গুজরাত(পাকিস্তানের) গুজরাবালা, রাওয়ালপিণ্ডি, ডেরাইসমাইল খাঁ, মূলতান, লাহোর, শিয়ালকোট, করনাল পানিপত প্রভৃতি অঞ্চলেই আ*র্য্য সমাজ ছিল। এছাড়া স্বাধীনতার পূর্বে সারা দেশে আ*র্য্য সমাজ এর সেরকম প্রচারকেন্দ্র ছিলনা। তাদের প্রধান প্রচার ছিল অবিভক্ত পাঞ্জাবে।
এর পরিণাম দেখা যায় সেই সব স্থান আ*র্য্য সমাজের প্রচারের কারনে বি*ধর্মী অধ্যুষিত ও বিধর্মী সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে পড়ায় দেশভাগের পর পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এত যদি তারা নাকি শুদ্ধি যজ্ঞ করে? তাহলে তারা ১৮৮৬ সাল থেকে যেখানে যেখানে প্রচার করতো সেখানে ১০০ বছরে বি*ধর্মী সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েছে কেন?
যেসবস্থানে আর্য্য সমাজ ১০০ বছর প্রচার করেছে কেন সেইসব স্থান পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হল?
রাহুল সাংকৃত্যায়ণ, ডঃ বি আর আম্বেদকর, রাজর্ষি শাহু আণি মহারাজ এরা সকলেই আ*র্য্য সমাজের সাথে প্রথম জীবনে যুক্ত ছিলেন এবং পরবর্তী কালে সনাতন ধর্মের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে বৌদ্ধ হয়ে যান। এরাই পরবর্তী কালে বই লিখে প্রচার করেন বেদ এ গোমাংস খাওয়ার কথা আছে, বিগ্রহ পূজা, অহিংসা, একেশ্বরবাদ বৌদ্ধ দের থেকে সনাতন ধর্মে আসে।
------------------------------
২) ঐক্য নাকি বিভেদ- কোনটা করছে আ*র্য সমা*জীরা?
------------------------------
আ*র্য্য রা বলে সনাতনী দের মধ্যে ঐক্য নেই শৈব বৈষ্ণব শাক্ত ভেদ আছে তাই সনাতনী দের বৈদিক ধর্মের মাধ্যমে তারা ঐক্য আনতে চায়। আ*র্য্য সমাজের ঐক্যের কিছু ইতিহাস দেখে নিন ১৮৮৬ সালে লাহোরে গুরুদত্ত বিদ্যার্থী, লালা হংসরাজ প্রভৃতিরা DAV college লাহোর, এবং জালন্ধরে আ*র্য্য প্রাদেশিক প্রতিনিধি সভা প্রতিষ্ঠা করে ছিল। ১৮৯২ তে আ*র্য্য সমা*জীদের মধ্যে বিরোধ চরমে ওঠে। ১৮৯৩ সালে পণ্ডিত লেখ*রাম ও স্বামী শ্রদ্ধা*নন্দ এর নেতৃত্বে পাঞ্জাব আ*র্য্য প্রতিনিধি সভা ডিএ*ভি কলেজ ও পাঞ্জাব প্রাদেশিক আ*র্য্য প্রতিনিধি সভা থেকে আলাদা হয়ে যায় । পরবর্তীকালে মতবিরোধের কারনে আ*র্য্য সমা*জী পণ্ডিত বিশ্ববন্ধু বেদ শাস্ত্রী, প্রোফেসর রাজবীর শাস্ত্রী আ*র্য্য প্রতিনিধি সভা ত্যাগ করেন।
লালা লাজপত রায়, লালা হংসরাজ এর লোকেরা মুন্সীরাম জীর লোকদের ডান্ডা মেরে ডিএ*ভি কলেজের অধিবেশন থেকে বার করে দেয়। লালা লাজপত রাই ও তার বই তে লিখেছেন সাধারন আ*র্য্য সমা*জীরাও বুঝতে পারছিল উভয় পক্ষই (কলেজপার্টি ও মহাত্মা পার্টি) কে কত বেশি চাঁদা আদায় করবে তাই নিয়েই আ*র্য্য সমা*জীদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল।
যদিও সাধারণ আ*র্য্যসমা*জীদের থেকে কারা চাঁদা তুলবে সেটিই মতভেদের প্রধান কারন ছিল। এছাড়াও তাদের মধ্যে কয়েকটি গৌণ বিষয়েও মতপার্থক্য ছিল যেমন মাংস ভক্ষণ, দ*য়া*ন*ন্দের গ্রন্থ অভ্রান্ত কিনা, ইত্যাদি যার ফলে আ*র্য্য সমাজে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়।
১৮৮৩ তে প্রতিষ্ঠিত একটি সংগঠন ১৮৯৩ এর মধ্যে লাঠালাঠি করে মাথা ফাটিয়ে আলাদা হয়ে যায় তারা বলে বেড়ায় বেদ প্রচার করে তারা সনাতনী দের মধ্যে ঐক্য স্থাপন করবে। আগে নিজেদের মধ্যে ঐক্য করুক।
এই পাকিস্তানেই ইসকন সনাতন ধর্ম প্রচার করছে। মন্দির নির্মাণ করছে। ইসকন পাকিস্তানের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ
১) ছবিতে বুদ্ধদেব বিদ্যালঙ্কার আর্য্য রচিত স্বামী শ্রদ্ধানন্দ বই তে অবিভক্ত পাঞ্জাবে আর্য্য সমাজের বিভিন্ন প্রচার স্থল।
২) আর্য্য পণ্ডিত বুদ্ধদেব বিদ্যালঙ্কার রচিত গ্রন্থে আর্য্য সমাজের গৃহযুদ্ধ ও ভাঙ্গন।
৪) লাহোর ডিএভি কলেজের অধিবেশনে আর্য্য সমাজীদের মধ্যে লাঠালাঠি ও সংঘর্ষে সদস্য দের মাথা ফেটে যায়।
৫) লালা লাজপত রাই তার গ্রন্থে স্বীকার করেন যে “সাধারন আর্য্য রাও বুঝতে পারছিলো সদস্যদের থেকে চাঁদা কারা সংগ্রহ করবে তাই নিয়ে আর্য্য সমাজের দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ।"
কতিপয় শঙ্কা ও তার উত্তর
প্রশ্ন:- বাংলায় তো আর্য্য সমাজের প্রচার ছিলনা তবে বাংলা কেন ভাগ হল?
উত্তর:- ব্রিটিশ শাসনের পূর্বেও বাংলায় নবাবী শাসন ছিল তাই বাংলায় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। কিন্তু পাঞ্জাব ব্রিটিশ শাসনের পূর্বে রাজা রঞ্জিত সিং এর শাসনাধীন ছিল সেখানে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল।