vaishnava babajis are paramahamsa

vaishnava babajis are paramahamsa

প্রশ্ন:- ষড়গোস্বামী ও তাদের অনুসরণকারী বৈষ্ণব বাবাজীগণ কি পরমহংস ছিলেন? 

সিদ্ধান্ত:- অনেকে ষড় গোস্বামী ও তদাশ্রিত জনকে বৈরাগী বাবাজী মাত্র বলে মনে করেন। বৈদিক শাস্ত্রে বাবাজী বা বৈরাগী বলে কোনো স্তর নেই। উত্তর ভারতে সাধু দের কে সাধারন মানুষ বাবাজী বলে যেমন বাঙালীরা সাধুবাবা বলে। সনাতন গোস্বামীকে ব্রজবাসীরা বাবাজী বলে ডাকতো তাই তার মতো যারা পরমহংস বেষ গ্রহণ করেন তারাও বাবাজী নামে লোকমুখে পরিচিত হয়। বৈদিকশাস্ত্র অনুসারে মানবজীবনে চারটি আশ্রম আছে প্রথম ব্রহ্মচর্য্য, দ্বিতীয় গার্হস্থ্য, তৃতীয় বানপ্রস্থ, ও তুরীয় বা চতুর্থ আশ্রম সন্ন্যাস এবং এই চারটি আশ্রমের ঊর্দ্ধে যে স্তর তা তুরীয়াতীত বা পরমহংস বা অবধূত। (কিছু বৈদিক শাস্ত্রে পরমহংস, অবধূত ও তুরীয়াতীত কে পৃথক তিনটি স্তর বলা হয়েছে তবে এই দুটি স্তরের সাধকের লক্ষণ ও বৈশিষ্ট্য প্রায় একই।) প্রত্যেক মানুষ তার জীবনকালে এই ছয়টি স্তরের কোনোনা কোনো স্তরে থাকে। সম্পূর্ণ বৈদিক বাঙ্ময়ে এর অতিরিক্ত বৈরাগী বাবাজী নামে কোনো স্তর বা আশ্রম নেই।
যথা প্রমাণ— 
সন্ন্যাসঃ ষড়বিধো ভবতি। কুটীচকো বহূদকো হংসঃ পরমহংসঃ তুরীয়াতীতোঽবধূতশ্চেতি।। 
নারদ পরিব্রাজক উপনিষদ পঞ্চম উপদেশ ১২ মন্ত্র

চতুর্বিধং ভৈক্ষবস্তু কুটীচকবহূদকৌ। 
হংসঃ পরমহংসশ্চ যো যঃ পশ্চাত্স উত্তমঃ ॥১৮ 
একদণ্ডী ত্রিদণ্ডী বা যোগী মুচ্যতে বন্ধনাত্ ।১৯
অগ্নিপুরাণম্/অধ্যাযঃ ১৬১/১৮-১৯
অনুবাদ:- সন্ন্যাসী চার প্রকারের হয় কুটীচক, বহুদক, হংস, ও পরমহংস। একদণ্ড বা ত্রিদণ্ড ধারণকারী যোগী সংসার বন্ধন থেকে মুক্ত হয়।  

শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে শুদ্ধ বৈষ্ণব গণ পরমহংস স্তরে অবস্থান করেন।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উদ্ধবকে উপদেশ করেছেন ভক্তের উচিত চিহ্ন সহিত চার আশ্রম এর ধর্ম পরিত্যাগ করে সকল বিধি নিষেধের ঊর্দ্ধে তুরীয়াতীত পরমহংস আশ্রম গ্রহণ করতে ও অবধূতের ন্যায় বিচরণ করতে। 
জ্ঞাননিষ্ঠো বিরক্তো বা মদ্ভক্তো বানপেক্ষকঃ । 
সলিঙ্গানাশ্রমাংস্ত্যক্ত্বা চরেদবিধিগোচরঃ ।। 
ভাঃ ১১/১৮/২৮
অনুবাদ:- যিনি বাহ্যবিষয়ে বিরক্ত হইয়া মোক্ষ কামনায় কেবলমাত্র জ্ঞাননিষ্ঠ অথবা মোক্ষবিষয়েও আকাঙ্ক্ষাশূন্য হইয়া মদীয় ভক্ত হন, তিনি চিহ্নের সহিত আশ্রমধৰ্ম্মসকল ত্যাগ করিয়া বিধিনিষেধের অনধীনরূপে যথোচিত ধর্মাচরণ করিবেন ৷৷ ২৮ ৷৷
বুধো বালকবৎ ক্রীড়েৎ কুশলো জড়বচ্চরেৎ । 
বদেদুন্মত্তবদ্বিদ্বান্ গোচর্য্যাং নৈগমশ্চরেৎ ।। 
ভাঃ ১১/১৮/২৯
অনুবাদ:- বিবেকী হইয়াও বালকের ন্যায় মানাপ মানবুদ্ধিশূন্যরূপে বিহার করিবেন । নিপুণ হইয়াও জড়ের ন্যায় আচরণ করিবেন । বিদ্বান্ হইয়াও উন্মত্তের ন্যায় রাক্যালাপ করিবেন এবং বেদার্থনিষ্ঠ হইয়াও অনিৰ্দ্দিষ্ট আচার পালন করিবেন ।। ২৯ ৷৷

শ্রীমদ্ভাগবতে রাজা চিত্রকেতু বৈষ্ণবগণের পরমহংস বা অবধূত বেষ গ্রহণের কথা বলেছেন—
শ্রী রাজোবাচ
কৌ যুবাং জ্ঞান সম্পন্নৌ মহিষ্ঠৌ চ মহীয়সাম্।
অবধূতেন বেষেণ গূঢ়াবিহ সমাগতৌ।।
চরন্তি হ্যবনৌ কামং ব্রাহ্মণা ভগবৎপ্রিয়াঃ
মাদৃশাং গ্রাম্যবুদ্ধিনাং বোধায়োন্মত্তলিঙ্গিনঃ।। 
ভাঃ ৬/১৫/১০-১১ 
অনুবাদ:- রাজা চিত্রকেতু বললেন হে মহাপুরুষদ্বয় অবধূতবেশে আত্মগোপন করে এখানে সমাগত আপনারা দুজন কে? আমি দেখছি যে আপনারা মহাজ্ঞানী এবং মহৎ থেকেও অতিশয় মহৎ। 
বৈষ্ণবের পদ প্রাপ্ত হয়েছেন যে ব্রাহ্মণেরা তাঁরা ভগবানের অত্যন্ত প্রিয় সেবক, কখনো কখনো তাঁরা উন্মত্তের মতো বেশ গ্রহণ করে, আমাদের মতো বিষয়াসক্ত মুর্খদের অজ্ঞানতা দূর করার জন্য এই পৃথিবীতে যথেচ্ছভাবে বিচরণ করেন। 

সংশয়:- প্রাচীন গৌড়ীয় বৈষ্ণব আচার্য্য রা কি বাবাজী বেষ গ্রহণ কে তুরীয়াতীত পরমহংস বেষ বলে স্বীকার করেন? 
সিদ্ধান্ত:- শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে মহাপ্রভু বলেছেন চার বর্ণ ও চার আশ্রমের ধর্ম এর ঊর্দ্ধে তুরীয়াতীত স্তরে না উঠলে কৃষ্ণ কে লাভ করা যায় না। 
এত সব ছাড়ি আর বর্ণাশ্রম ধর্ম।
অকিঞ্চন হঞা লয় কৃষ্ণৈকশরণ।।
চৈতন্যচরিতামৃত/মধ্য/২২/৯০ 
মহাপ্রভু এখানে উপদেশ করেছেন বৈষ্ণবদের বর্ণাশ্রম ধর্ম ত্যাগ করার। অর্থাৎ বর্ণ ধর্ম ও আশ্রম ধর্ম এর ত্যাগ করতে বলেছেন। বৈদিক বাঙ্ময়ে চারটি আশ্রমের ঊর্দ্ধে যে স্তর তা তুরীয়াতীত পরমহংস স্তর, এবং অবধূত স্তর। শুদ্ধ বৈষ্ণব গণ চার আশ্রমের ধর্ম ত্যাগ করে তুরীয়াতীত পরমহংস স্তরের। 

এবং স্বয়ং মহাপ্রভুর মুখোক্তি—
নাহং বিপ্রো ন চ নরপতিঃ নাপি বৈশ্যো ন শূদ্রো
নাহং বর্ণী ন চ গৃহপতিঃ ন বনস্থ যতির্বা।
কিন্তু প্রোদ্যন্নিখিলপরমানন্দ পূর্ণামৃতাব্ধে-
র্গোপীভর্ত্তুঃ পদকমলয়োর্দাস দাসানুদাসঃ।। 
আমি ব্রাহ্মণ নই, ক্ষত্রিয় নই, বৈশ্য নই, শূদ্র নই, ব্রহ্মচারী নই, গৃহস্থ নই, বানপ্রস্থী নই এবং যতি ও নই। কিন্তু সম্যক উদয়শীল ও নিখিল পরমানন্দ পূর্ণ অমৃতের সাগর স্বরূপ গোপীপতি শ্রীকৃষ্ণের পাদপদ্ম যুগলের যিনি দাসের দাস তার অনুদাস। 

গোপালভট্ট গোস্বামীর শিষ্য ও রাধারমণের পূজারী শ্রী গোপীনাথ গোস্বামী রচিত বেষাশ্রয় পদ্ধতি অনুসরণে বৈষ্ণবগণ তুরীয়াতীত পরমহংস বেষ বা বাবাজী বেষ ধারণ করতেন। 
গোপীনাথ পূজারী গোস্বামী বেষাশ্রয় পদ্ধতি গ্রন্থে বলেছেন—
কৃত্বা স্বাত্মাৰ্পণং বিষ্ণৌ ভক্তো বেষাশ্রিত মতঃ । 
সৰ্ব্বং সন্ন্যস্য পুরুষোহবধূতঃ কীৰ্ত্ত্যতে যথা ॥ 
কিঞ্চ ৷৷ 
বর্ণাশ্রমাদ্যবিজ্ঞাতোহবধূতঃ প্রোচ্যতে জনঃ ! 
অর্হস্তথাত্বাদস্যাপি রূপং বেষঃ শুকাদিবৎ ॥ ৪ ॥ 
যথোক্তং প্রথমস্কন্ধে "বৃতশ্চ বালৈরবধূতবেষ ইতি। 
সৰ্ব্বা ভক্তিষ শ্রেষ্ঠৎ চরমাত্যার্পণঃ যা
অনুবাদ:- ভক্তব্যক্তি শ্রীকৃষ্ণে আত্মসমর্পণপূৰ্ব্বক বেষাশ্রিত হইবেন ইহাই শাস্ত্রের বিধি । পুরুষ সমস্ত সন্ন্যাস ( পরিত্যাগ ) করিলে ‘ অবধূত ’ নামে কীৰ্ত্তিত হয়েন ॥ ৩ ॥ অপিচ , যাহার বর্ণ ও আশ্রমাদি কিছুই জানা যায় না তাঁহাকে ‘ অবধূত ’ কহে , সুতরাং এই ‘ বেষাশ্রিত, ব্যক্তিরও তদ্রূপ বোধ হওয়ায় ইহারও রূপকে শেষ বলা যাইতে পারে , যেমন মহামুনি শ্ৰীশুকদেব ॥ ৪ ॥ এই বিষয়ের প্রমাণ শ্রীমদ্ভাগবতে ১ স্কন্ধে ১৯ অধ্যায়ে ১৩ শ্লোকে যথা শুকদেব যখন রাজা পরীক্ষিতের সভায় আগমন করেন , তখন তাঁহার দেহে কোন আশ্রমের চিহ্ন ছিল না , কতগুলি বালক চারদিকে ঘিরে কৌতুক করছিল এবং অবধূত বেষ ধারণ করেছিলেন। 

শ্রী সনাতন গোস্বামী ও এই বেষাশ্রয় বিধি পালন করেই বাবাজী বেষ বা তুরীয়াতীত পরমহংস বেষ গ্রহণ করেছিলেন যা শ্রী চৈতন্য চরিতামৃতে ও দেখা যায়। 
তপনমিশ্র তবে তাঁরে কৈলা নিমন্ত্রণ।
প্রভু কহে ক্ষৌর করাহ যাহ সনাতন।।
.........
মিশ্র কহে সনাতনের কিছু কৃত্য আছে।
.........
তবে মিশ্র পুরাতন এক ধুতি দিলা।
তিঁহো দুই বহির্বাস কৌপীন করিলা।। 
চৈতন্যচরিতামৃতে মধ্য/২০/

চৈতন্যচরিতামৃত মধ্যলীলা ২৫ অধ্যায়ে কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী কৃত মঙ্গলাচরণে
বৈষ্ণবী কৃত্য সন্ন্যাসীমুখান্ কাশী নিবাসিনঃ।
সনাতনং সুসংস্কৃত্য প্রভুর্নীলাদ্রীমাগমৎ।। 
সনাতন গোস্বামীকে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বৈষ্ণব পরমহংস বেষ সংস্কার করেছিলেন। 

শ্রীচৈতন্যভাগবতে
দবিরখাসেরে প্রভু বলিতে লাগিলা।
এখানে তোমার কৃষ্ণপ্রেম ভক্তি হৈলা।।
শাকরমল্লিক নাম ঘুচাইলা তান।
সনাতন অবধূত থুইলেন নাম।।
অদ্যাপিহ দুই ভাই রূপ সনাতন।
চৈতন্যকৃপায় হৈলা বিখ্যাত ভুবন।। 
চৈতন্যভাগবত অন্ত্যখণ্ড ৯/২৬৮, ২৭৩-২৭৪

এবং পরবর্তীকালে সনাতন গোস্বামীর অনুসরণেই সকলে তুরীয়াতীত পরমহংস বাবাজী বেষ গ্রহণ করতেন।

প্রশ্ন:- বৈষ্ণবগণ যে তুরীয়াতীত পরমহংস সেবিষয়ে শাস্ত্র প্রমাণ কি? 
সিদ্ধান্ত:- শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে ভাগবত ধর্ম অনুশীলন কারী বৈষ্ণবগণ পরমহংস। 
ভাগবতে ব্যাসদেব বলেছেন পরমহংসগণ ও অচ্যুত শ্রীকৃষ্ণের অত্যন্ত প্রিয় ভাগবত ধর্ম আমি নিরূপন করিনি তাই আমার হৃদয়ে অপূর্ণতা অনুভব করছি। 
কিং বা ভাগবতা ধর্মা ন প্রায়েণ নিরূপিতাঃ । 
প্রিয়াঃ পরমহংসানাং ত এব ঽচ্যুতপ্রিয়াঃ ॥
ভাঃ ১/৪/৩১
অনুবাদ:- আমি যে বিশেষভাবে ভগবদ্ভক্তি বর্ণনা করিনি , যা পরমহংসদের এবং অচ্যুত পরমেশ্বর ভগবানের অত্যন্ত প্রিয় , তাই হয়ত আমার এই অসন্তোষের কারণ।
অতএব ভাগবত ধর্ম প্রিয় বৈষ্ণব গণ অবশ্যই পরমহংস। তাই ষড়গোস্বামীগণ যে তুরীয়াতীত পরমহংস স্তরে ছিলেন তা সন্দেহাতীত। 

এবং নৃসিংহদেবের কাছে প্রহ্লাদ মহারাজের প্রার্থনায় বলা হয়েছে ষড়ঙ্গ সেবার দ্বারা একমাত্র পরমহংসগণেরাই ভগবদ্ভক্তি লাভ করে থাকেন। 
তৎ তেঽর্হত্তম নমঃস্তুতিকর্মপূজাঃ 
কর্ম স্মৃতিশ্চরণয়োঃ শ্রবণং কথায়াম্ । 
সংসেবয়া ত্বয়ি বিনেতি ষড়ঙ্গয়া কিং 
ভক্তিং জনঃ পরমহংসগতৌ লভেত ৷৷ 
ভাঃ৭/৯/৫০
অনুবাদ:- অতএব , হে পূজ্যতম ভগবান , আপনাকে আমি আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি , কারণ স্তব , কর্মফল অর্পণ , পূজা , কর্ম - সমর্পণ , চরণযুগল স্মরণ এবং লীলা শ্রবণ— এই ষড়ঙ্গ সেবা ব্যতীত কে পরমহংসগণের প্রাপ্য আপনার প্রতি ভক্তি লাভ করতে পারে ?

বৃত্রাসুরের প্রার্থনাতেও বলা হয়েছে একমাত্র পরমহংস পরিব্রাজকগণ ই সমাধিযোগে ভগবান কে দর্শন করে। 
ভাঃ৬/৯/৩৩ 

ভাঃ ৫/৯২০ তে শুকদেবগোস্বামী বলেছেন “তৎপাদমূলমকুতশ্চিদ্ভয়মুপসৃতানাং ভাগবত পরমহংসানাং" পরমহংস ভাগবতগণ ভগবানের চরণকমলকে আশ্রয় করেছেন তাই তারা অকুতোভয়।  

অতএব ভগবৎচরণারবিন্দে যাদের মতি স্থির হয়েছে সেই শুদ্ধ বৈষ্ণব গণ পরমহংস স্তরে স্থিত হয়েছেন। 


প্রশ্ন:- ষড় গোস্বামীগণ তো কখনো সন্ন্যাস গ্রহণ করেননি? সন্ন্যাস গ্রহণ ছাড়া কি করে পরমহংসত্ব লাভ করা যায়? 
(সংশয়:- প্রথমে বিরজা হোম অষ্টকা শ্রাদ্ধ করে গেরুয়া বস্ত্র ও দণ্ড ধারণ করে সন্ন্যাস গ্রহণ করা হয় তারপর দণ্ড ত্যাগ করে পরমহংস সন্ন্যাসী হয়।)
সিদ্ধান্ত:- নারদ পরিব্রাজক উপনিষদে কূটীচক, বহুদক ও হংস প্রভৃতি স্তরের সন্ন্যাস বিধি বলা হয়েছে—এই তিন স্তরের ক্রম সন্ন্যাস কর্তব্য।
কূটীচকবহূদকহংসানাং ব্রহ্মচর্য্যাশ্রমাদিতুরীয়াশ্রমবৎ কুটীচকাদীনাং সন্ন্যাস বিধিঃ
নারদ পরিব্রাজক উপনিষদ পঞ্চম প্রশ্ন/১৯ মন্ত্র 
অনুবাদ:-  কুটীচক, বহুদক, ও হংস নামক তিন স্তরের সন্ন্যাসীদের ব্রহ্মচর্য্য, গৃহস্থ এবং বানপ্রস্থ ক্রমানুসারে চতুর্থ আশ্রম অর্থাৎ সন্ন্যাস আশ্রমে প্রবেশ করার নিয়ম।  

ক্রম সন্ন্যাস এর বিধি কিরকম? 
নারদ পরিব্রাজক উপনিষদ চতুর্থ প্রশ্ন ৩৭ মন্ত্রে নারদ মুনি ব্রহ্মাজীকে প্রশ্ন করেছেন— 
অথ নারদঃ পিতামহং সন্ন্যাসবিধিং নো ব্রুহীতি প্রপচ্ছ। পিতামহস্তথেত্যঙ্গীকৃত্য আতুরে বা ক্রমে বাপি তুরীয়াশ্রমস্বীকারার্থ কৃচ্ছপ্রায়শ্চিত্তপূর্বকম অষ্টশ্রাদ্ধং কুর্য্যাৎ..... 
অনুবাদ:- তারপর নারদমুনি ব্রহ্মাজীকে প্রশ্ন করেন হে ভগবন! সন্ন্যাসের বিধি কি? তা কৃপা করে আমায় বলুন। পিতামহ তা অঙ্গীকার করে বললেন আতুর সন্ন্যাস ও ক্রম সন্ন্যাস এ চতুর্থ আশ্রম স্বীকারের জন্য কৃচ্ছ সাধন পূর্বক আটপ্রকার শ্রাদ্ধ (দেব, ঋষি, দিব্য, মনুষ্য, ভুত, পিতৃশ্রাদ্ধ, মাতৃশ্রাদ্ধ, আত্মশ্রাদ্ধ) করে, ক্ষৌরকর্ম করতে হবে, তারপর বিরজাহোম করতে হবে, তারপর শিখা, সূত্রাদি বিসর্জন দিয়ে সন্ন্যাস বেশ গ্রহণ করতে হবে। এবং গুরুর কাছে মহাবাক্যাদির উপদেশ গ্রহণ করতে হবে। 

কিন্তু পরমহংসাদি তিনটি স্তরের জন্য সন্ন্যাসবিধি বলা হয়েছে—
পরমহংসাদিত্রয়াণাং ন কটিসূত্রং ন কৌপীনং ন বস্ত্রং ন কমণ্ডলুর্ন দণ্ডঃ সর্ববর্ণৈকভৈক্ষাটনপরত্বং জ্ঞানরূপধরত্বং বিধিঃ। 
নারদ পরিব্রাজক উপনিষদ পঞ্চম প্রশ্ন/২০ মন্ত্র 
অনুবাদ:- পরমহংস, তুরীয়াতীত ও অবধূত এই তিন স্তরের ব্যাক্তিদের সন্ন্যাসবিধি হচ্ছে— কটিসূত্র, কৌপীন, বস্ত্র, কমণ্ডলু, দণ্ড ধারণের প্রয়োজন নেই, তারা সকল বর্ণের মানুষের থেকে ভিক্ষা গ্রহণ করবে। 

শ্রীমদ্ভাগবতে শুকদেব গোস্বামী, বিদুরজী, জড় ভরত প্রভৃতি ভগবদ্ভক্তদের পরমহংস অবধূত বেষাদির কথা জানা যায়। 
তত্রাভবদ্ভগবান্ ব্যাসপুত্রো 
যদৃচ্ছয়া গামটমানোঽনপেক্ষঃ । 
অলক্ষ্যলিঙ্গো নিজলাভতুষ্টো 
বৃতশ্চ বালৈরবধূতবেষঃ ৷৷ 
ভাঃ ১/১৯/২৫
অনুবাদ:- তখন ব্যাসদেবের শক্তিমান পুত্র যদৃচ্ছক্রমে পৃথিবী পর্যটন করতে করতে সেখানে এসে উপস্থিত হলেন । তিনি ছিলেন বহির্বিষয়ে উদাসীন , কোন আশ্রম বিশেষের চিহ্নবিহীন , আত্মারাম এবং অবধূত বেশধারী । তাঁকে পাগল ভেবে নারী ও বালকেরা বেষ্টন করেছিল।

গাং পর্য্যটন মেধাবিবিক্তবৃত্তিঃ
সদাপ্লুতোঽধঃ শয়নোঽবধূতঃ।
অলক্ষিতঃ স্বৈরবধূতবেশো
ব্রতানি চেরে হরিতোষণানি।।
ভাঃ ৩/১/১৯ 
অনুবাদ:- বিদুর তীর্থ পর্য্যটনকালে পবিত্র ও বৃত্ত্যন্তর সহ অমিশ্রবৃত্তি অবলম্বনপূর্ব্বক জীবিকা নির্ব্বাহ করতেন। প্রতি তীর্থে স্নান, ভূমিতে শয়ন, দেহাদির সংস্কার বর্জ্জন ও বল্কলধারণকারী অবধূতের বেষ ধারণ করে আত্মীয়গণের অলক্ষিতভাবে বাস করতেন এবং হরিতোষণ ব্রতসমূহ পালন করতেন।

রহুগণ উবাচ
নমো নমঃ কারণবিগ্রহায়
স্বরূপতুচ্ছীকৃতবিগ্রহায়।
নমো অবধূত দ্বিজবন্ধুলিঙ্গ
নিগূঢ়নিত্যানুভবায় তুভ্যং।। 
ভাঃ ৫/১২/১ 
অনুবাদ:- মহারাজ রহুগণ জড় ভরতকে বললেন, হে অবধূত আপনি ভগবানের থেকে অভিন্ন, আপনার স্বরূপের প্রভাবে সমস্ত শাস্ত্র বিরোধ দূর হয়েছে। আপনি ব্রহ্মবন্ধুর বেশে আপনার দিব্য আনন্দময় স্বরূপ গোপন করে রেখেছেন। আমি আপনাকে আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি। 

উপনিষদেও বলা হয়েছে 
“অথ পরমহংসানাং সংবর্তকারূণিশ্বেতকেতু জড়ভরত দত্তাত্রেয় শুক বামদেব হারীতক প্রভৃতয়ো...
ভিক্ষুকোপনিষদ ৫ম মন্ত্র

তত্র পরমহংসা নাম সংবর্তকারূণিশ্বেতকেতুদুর্বাসঋভুনিদাঘজড়ভরতদত্তাত্রেয়রৈবতকপ্রভৃতয়োঽব্যাক্তলিঙ্গা অব্যাক্তিচারা...
জাবাল উপনিষদ ৬ষ্ঠ খণ্ড ১ম মন্ত্র 
অনুবাদ:- সংবর্তক, আরূণি, শ্বেতকেতু, দুর্বাসা, ঋভু, নিদাঘ, জড়ভরত, দত্তাত্রেয়, রৈবতক আদি পরমহংস ছিলেন। তারা কোনো আশ্রমের চিহ্নাদি রহিত ছিলেন। 


Bibliography
(1)
EPN 362 Agni purana, dwivedi, shivaprasada, ed 
(2)
Chaitanya bhagavata, Thakura, vrindavana das, 



 








EPN 144 108 upanishad vol 1 rama sharma NPU 5/19