Rudra in vedas

Rudra in vedas

                               রুদ্রতত্ত্ব
১) ঋগ্বেদে রুদ্রের উদ্দেশ্যে তিনটি সূক্ত আছে। ১ম মন্ডলে ১১৪ সূক্ত, ও ৪৩ সূক্ত ২য় মন্ডলে ৩৩সূক্ত, ৭ম মন্ডলে ৪৬ সূক্ত ও অপর কিছু সূক্তের কয়েকটি মন্ত্রে বর্ননা আছে। ১/২৭/১০, ২/১/৬, ৩/২/৫, ৮/৭২/৩
২) একাদশ রুদ্র
ঋগ্বেদে রুদ্র হলেন সংহারের দেবতা, তার এই সংহার কাজে সহায়তা করে রুদ্ররা। এই রুদ্ররা রুদ্রের অনুচর। রুদ্রের দ্বারা পৃশ্নি গর্ভে রুদ্র গনের জন্ম হয়। আবার কোথাও বলা হয়েছে রুদ্রের থেকে রুদ্ররা সৃষ্টি হয়েছে। তাদের রুদ্রাঃ বলে বলা হয়েছে। পৃশ্নি হল গোমাতা সুরভী। মরুতগন কেও পৃশ্নি ও রুদ্রের সন্তান বলা হয়েছে। কখনো মরুত দের ও রুদ্রীয় বা রুদ্রাঃ বলা হয়েছে।
ঋগ্বেদ ১/২৩/১০
সমস্ত মরুত দেবগন কে সোমপানের জন্য আহ্বান করি তারা উগ্র ও পৃশ্নির সন্তান।
ঋক ২/৩৪/২
হে সুবর্নবক্ষ মরুতগন যেহেতু সেচনসমর্থ রুদ্র পৃশ্নির র নির্ম্মল উদরে তোমাদের উৎপন্ন করেছে।
ঋক ২/৩৪/১০
হে মরুতগন তোমরা যখন পৃশ্নির উধঃ দোহন করেছিলে...
একাদশ রুদ্রেরা ও মরুতেরা পৃথক দেবতা।
ঋক ২/৩৪/৯
যো নো মরুতো বৃকতাতি মর্ত্যো রিপুর্দধে বসবো রক্ষতারিষঃ
বর্ত্তয়ত তপুষা চক্রিয়াভি তমব রুদ্রা অশসো হস্তনা বধঃ
হে মরুতগন যে মনুষ্য বৃকের ন্যায় আমাদের শত্রুতাচরন করে সেই হিংসকের হাত থেকে আমাদের রক্ষা কর। হে বসুগন তোমরা তাকে তাপপ্রদ চক্র দ্বারা বন্দী কর। হে রুদ্রগন তোমরা তার অস্ত্রসকল দূরে নিক্ষেপ কর।
এই শ্লোক থেকে বোঝা যাচ্ছে একাদশ রুদ্র ও মরুত রা পৃথক দেবতা।
এই শ্লোকের সায়নভাষ্যে রুদ্রাঃ শব্দের অর্থ সায়ন রুদ্রপুত্রাঃ বলেছেন। ভাগবতমে ৩/১২/১৬ তে রুদ্রের থেকে রুদ্রদের সৃষ্টি বর্ননা আছে।
একাদশ রুদ্র দের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন পুরানে  বিভিন্ন কল্পের কথা বলা আছে।
হরিবংশে কশ্যপ ও সুরভীর পুত্র একাদশ রুদ্র।
বামনপুরানে একাদশ রুদ্র রা হল কশ্যপ ও অদিতির পুত্র। ও রুদ্রের অনুচর। মরুৎরা দিতির পুত্র। ও ইন্দ্রের অনুচর
রামায়ণে কশ্যপ অদিতির ৩৩ জন পুত্র ১২জন আদিত্য, ৮জন বসু, ১১  জন রুদ্র ২ জন অশ্বিনী
মৎস্য পুরাণে গোমাতা সুরভী ও ব্রহ্মার পুত্র একাদশ রুদ্র।
মহাভারতে আদিপর্বে
বিষ্ণু পুরানে ব্রহ্মার ক্রোধ থেকে রুদ্র জন্ম নিয়েছিল ১/৭/১০
ভ্রুকূটীকুটিলাৎ তস্য ললাটাৎ ক্রোধদীপিতাৎ
সমুৎপন্নস্তদা রুদ্রো মধ্যাহ্নার্কসমপ্রভঃ।।১০
অর্দ্ধনারীবপুঃ প্রচন্ডোহতিশরীরবান
বিভজাত্মানমিত্যুকিত্ত্বা তৎ ব্রহ্মান্তর্দ্দধে ততঃ।।১১
ব্রহ্মার পুত্রেরা প্রজা সৃষ্টি বিষয়ে এইরূপ নিরপেক্ষ হলে মহাত্মা ব্রহ্মার ত্রৈলোক্যদহনক্ষম মহা ক্রোধ উৎপন্ন হল। হে মহামুনে সেইসময় ত্রিলোক তার ক্রোধসমুদ্ভূত জ্বালামালায় বিদীপিত হয়ে উঠল। তাহার ক্রোধদীপ্ত ভ্রুকুটি কুটিল ললাট হইতে মধ্যাহ্ন সূর্যের দীপ্তি প্রভ অর্দ্ধনারীবপু অতি শরীরবান প্রচন্ড রুদ্র উৎপন্ন হলেন।
শ্রীমদভাগবতম দক্ষকন্যা সরূপা ও ভূতের পুত্র একাদশ রুদ্ররা  ৬ষ্ঠ স্কন্দ ৬ষ্ঠঅধ্যায় ১৭-১৮ শ্লোক
যাই হোক সব পুরানেই বলা আছে রুদ্র রা রুদ্র কে সহায়তা করে প্রলয়ের সময়। শিব বা রুদ্র হলেন এই একাদশ রুদ্রের অধিপতি।
৩) ঋগ্বেদ এ রুদ্র
এবারে রুদ্রের সম্পর্কে কি বলা আছে দেখা যাক। তিনি সহজেই ক্রুদ্ধ হয়ে যান, তার ধনুকে (পিণাক শিবের ধনুক) বান যোজনা করে প্রানী জগত সংহার করে থাকেন(৭/৪৬/৩)।
ঋগ্বেদ ৬/৪৯/১০
ভূবনস্য পিতরং গীর্ভিরাভী রুদ্রং দিবা বর্ধয়া রুদ্রমক্তৌ
ইংতমৃষ্বমজরং সুষুম্নমৃধগ্ধুবেম কবিনেষিতাসঃ
সায়ন ভাষ্য অনুযায়ী অনুবাদ:-হে স্তবকারী তুমি দিবাভাগে এই সমস্ত স্তোত্রদ্বারা ভুবনের পিতা রুদ্রকে বর্ধিত কর। তুমি রাত্রি কালে রুদ্রের সংবর্ধনা কর আমরা দূরদর্শী রুদ্রকর্তৃক প্রেরিত হয়ে মহান, মনোজ্ঞ, জরারহিত, সুখসম্পন্ন ও সমৃদ্ধিমূলক সেই রুদ্রকে আহ্বান করছি।

৪) শুক্ল যজুর্বেদের বাজসনেয় সংহিতায় ষোড়শ অধ্যায় রুদ্রাধ্যায় নামে পরিচিত। এই অধ্যায়ই শিব পরত্ববাদ ও শৈবধর্মের উৎপত্তির জন্য মূল। এখানে একটা কথা জানিয়ে রাখি যজুর্বেদের শুক্ল ও কৃষ্ণ দুই ভাগ কেন হল। ব্যাসদেব তার শিষ্যদের সহায়তায় বিক্ষিপ্ত থাকা বেদ মন্ত্র গুলি সংকলন করেছিলেন।  বৈশম্পায়ন কৃষ্ণ যজুর্বেদ, জৈমিনি সামবেদ, পৈল ঋগ্বেদ, সুমন্তু অথর্ব্ব বেদ সঙ্কলনে ব্যাসদেবের সহায়তা করেন। ব্যাসের শিষ্য ব্রহ্মজ্ঞ যাজ্ঞবল্ক্য গুরুর বিরোধিতা করে শুক্লযজুর্বেদ সঙ্কলন করেন।এসম্পর্কে একটি কাহিনী পুরানে আছে একবার মেরু পর্বতে সমস্ত ঋষিদের সভা ছিল। শাস্ত্রার্থ করতে সেই সভায় বৈশম্পায়নের যাওয়ার কথা ছিল বিশেষ কারন বশত তিনি যেতে না পারায় তার শিষ্যদের মধ্যে কোনো একজন কে যেতে বলেন। তার শিষ্য যাজ্ঞবল্ক্য বলে আপনার শিষ্যদের মধ্যে আমিই একমাত্র ব্রহ্মবিদ আমিই ঋষিদের সভায় যাওয়ার যোগ্য অন্য কারো এমনকিছু বিদ্যা বা তপপ্রভাব নেই। বৈশম্পায়ন তার শিষ্য যাজ্ঞবল্ক্যের গর্বিত বচনে বিরক্ত হয়ে তার প্রদত্ত ব্রহ্মবিদ্যা ফেরত দিতে বলেন যাজ্ঞবল্ক্য বেদবিদ্যা বমন করে দিয়ে চলে যান। বৈশম্পায়নের অন্য শিষ্যরা তিত্তিরি পক্ষী রূপে সেই বমিত বিদ্যা খেয়ে নেন।  তাই তার রচিত সংহিতা তৈত্তীরিয় সংহিতা এদিকে বেদবিদ্যা হীন যাজ্ঞবল্ক্য ঠিক করেন নিজেই বেদ শিখে নেবেন। তিনি সূর্যদেবের স্তব করতে লাগলে সূর্যদেব বাজী রূপে এসে তাকে বেদ জ্ঞান দান করেন।  তাই তার রচিত যজুর্বেদসংহিতা বাজসনেয় সংহিতা নামে পরিচিত। যাজ্ঞবল্ক্য রচিত যজুর্বেদ শুক্ল নামে পরিচিত।  কৃষ্ণ যজুর্বেদ পঠনপাঠন দক্ষিনভারতে, ও শুক্লযজুর্বেদী ব্রাহ্মণ উত্তরভারত, নেপালে বিশেষ প্রচলিত।
রুদ্রাধ্যায়ে রুদ্রের শম্ভূ নীলকন্ঠ শংকর শিব প্রভৃতি নাম রয়েছে।
৪১ মন্ত্র নমঃ শম্ভবায় চ ময়োভবায় চ নমঃ শঙ্করায় চ ময়স্করায় চ নমঃ শিবায়চ শিবতরায়চ
২৮ মন্ত্র নমো নীলগ্রীবায় চ শিতিকন্ঠায় চ
২৯ মন্ত্র নমঃ কপর্দিনে চ ব্যুপ্তকেশায় চ
২৯ মন্ত্র নমো গিরিশায় চ শিপিবিষ্টায় চ
৩৯ মন্ত্র নমঃ সোমায় চ রুদ্রায় চ
৪০ মন্ত্র নমঃ শঙ্গবে চ পশুপতয়ে চ
৪০ মন্ত্র নমঃ উগ্রায় চ ভীমায় চ
রুদ্রাধ্যায়ে বলা আছে রুদ্র গুপ্তচোর দের পালক, প্রতারক বঞ্চনাকারী, যারা লোকদের মেরে চুরি করে, যারা ধান অপহরণ করে, ক্ষেত্র গৃহ অপহরন করে তাদের পালক। অর্থাৎ রুদ্র দোষী অপরাধী সকলেরই পালক, পুরানেও দেখা যায় রাবন বানাসুর এরা শিবের তপস্যা করে বর পেয়েছিল।

৫)রুদ্র ও শিব
ঋগ্বেদ ১০/৯২/৯
স্তোমং বো অদ্য রুদ্রায় শিক্কলে ক্ষয়দ্বীরায় নমসা দিদিষ্টন
যেভিঃ শিবঃ স্ববাঁ এবয়াবভির্দ্দিবঃ সিষক্তি স্বযশা নিকামভিঃ
সেই রুদ্রকে নমস্কার ও স্তব অর্পণ কর যিনি শত্রুদের ক্ষয় করেন।  যিনি অশ্বারূঢ় মরুতগন কে সহায় পেয়ে আকাশ থেকে জল সেচন করেন।সেই শিব বা সেই মঙ্গলময় রুদ্র কে নমষ্কার ও আপন যশ বিস্তার করেন।
সায়ন ভাষ্যে শিবঃ শব্দে সুখকর পরমেশ্বর এই অর্থ করেছেন।
ঋগ্বেদে ১০/৯২/৯ ও তৈত্তীরিয় সংহিতায় ৪/৫/১ রুদ্র কে মঙ্গলময় অর্থে শিব বলা হয়েছে।
এখন কেউ যদি বলে যে রুদ্র শিবের অংশ যার সৃষ্টি বিনাশ আছে কিন্তু শিব সর্বোত্তম যার থেকে ব্রহ্মা বিষ্ণু ও রুদ্র তৈরী হয়। তাহলে সেই শিবের কথা বেদ এ কোথায় আছে? বরং রুদ্রের মঙ্গলময় রূপ শিবের কথাই দেখা যায়।
৬)স জাত এবারোদীৎ তদরুদ্রস্য রুদ্রত্বম (ঐতরেয় ব্রাহ্মণ) তিনি জন্মেই কান্না করেছিলেন তাই তার নাম রুদ্র। অতএব রুদ্রের জন্ম সৃষ্টি আছে।
৭)বিষ্ণু রুদ্রের আত্মা রূপে অবস্থিত হয়ে রুদ্রকে রুদ্রীয় মহিমা প্রদান করেছেন।
ঋগ্বেদ ৭/৪০/৫
অস্য দেবস্য মীড়্ হুষো বয়া বিষ্ণোরেষস্য প্রভৃথেহবির্ভি
বিদে হি রুদ্রো রুদ্রীয়ং মহিত্বং যাসিস্টং বর্ত্তিরশ্বিনাবিরাবৎ।।
সায়ন ভাষ্য অনুযায়ী অনুবাদ:-অন্যদেবগন যজ্ঞে হবীদ্বারা প্রাপনীয়, অভীষ্টবর্ষী বিষ্ণুর শাখাস্বরূপ। (বিষ্ণুই) রুদ্রকে রুদ্রীয় মহিমা প্রদান করেন। হে অশ্বীদ্বয় তোমরা আমাদের হব্যযুক্ত গৃহে আগমন কর।
সায়নভাষ্য অনুযায়ী অন্বয়: রুদ্রো= রুদ্রদেব। রুদ্রীয়= রুদ্রসম্বন্ধী সুখং। মহিত্বং= মহত্বং।
সায়ন ভাষ্য: প্রভৃণে হবির্ভিহবীরূপৈরশ্নৈরেষস্য প্রাপণীয়স্য মীহ্লুষঃ কামানাং সেক্তুঃ। বিষ্ণোঃ সর্ব্বদ্বাত্মকস্য অস্য দেবস্য বিষ্ণুঃ সর্ব্বাদেবতা ইতি শ্রুতেঃ। অন্যেদেবাঃ বয়া শাখাইব ভবন্তি রুদ্রোদেবঃ রুদ্রিয়ং রুদ্রসম্বন্ধি সুখং মহিত্বং মহত্বং চ বিদেহি অস্মান প্রাপয়তি খলু অপিচ হে অশ্বিনৌ দেবৌ যুবাং ইরাবৎ হবির্লক্ষণান্নযুক্তং বর্ত্তিরস্মদীয়ং গৃহং যালিষ্টং অযাসিষ্টং আগচ্ছতং।।
অথর্বশিরোপনিষদে ২য় মন্ত্রে শিব তার সর্বৈশ্বর্য্যতার কারন বলেছেন। পরে তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
মহাভারতে কর্ণ পর্ব ৩৫/৫০
বিষ্ণুরাত্মা ভগবতো ভবস্যাঅমিততেজসঃ
তস্যাদ্ধনুর্জ্যাসংস্পর্শং স বিষেহে মহেশ্বরঃ
অনুবাদ:- অমিততেজা ভগবান রুদ্রের মধ্যে আত্মারূপে বিষ্ণু অবস্থিত সেই জন্য তিনি ধনুকের জ্যা সংস্পর্শ সহ্য করতে পেরে ছিলেন।
মহাভারতে মোক্ষধর্ম১৭৯/৪  ব্রহ্মা রুদ্র সংবাদে রুদ্রের প্রতি ব্রহ্মার বাক্য
তবান্তরাত্মা মম চ যে চান্যে দেহি সংজ্ঞিতাঃ
অণ্যেষাং চ দেহিণাং পরমেশ্বরো নারায়ণঃ অন্তরাত্মতয়াবস্থিতঃ
অনুবাদ:-তোমার আমার এবং অপরাঅপর যে সব দেহধারী আছেন তাদের অন্তরাত্মা রূপে পরমেশ্বর নারায়ণ অবস্থিত আছেন। 
Next Page>>>