Rudra shiva was born from brahma

Rudra shiva was born from brahma

Rudra was born : not the origin of everything
৬)শুক্লযজুর্বেদের শতপথ ব্রাহ্মন ৬ষষ্ঠ কান্ডে ১/৩/৭-১৪  মন্ত্রে রুদ্রের জন্মের কাহিনী আছে। রুদ্রকে উষা প্রজাপতির সন্তান বলা হয়েছে। একবার প্রজাপতি সন্তান লাভের জন্য এক বছর ধরে যজ্ঞ করেন। ও তার কন্যা উষার গর্ভে বীজ ফেলেন। তা থেকে এক কুমারের জন্ম হয়। জন্মেই যে তীব্র শব্দ করে কেঁদে ওঠে। তাকে প্রজাপতি জিজ্ঞাসা করেন হে কুমার তুমি কাঁদছ কেন। কুমার বলে আমি অনপহতপাপ্মা আমার পরিচয় প্রদান করুন। তবে পাপ দূর হবে। প্রজাপতি একে একে আটটি নাম দেন। যথা রুদ্র, উগ্র সর্ব ভব মহাদেব পশুপতি ঈশান অশানি। অশানি বাদে রুদ্রের এই সাতটি নাম অথর্ববেদেও আছে।
অভূদ্বা'ইয়ং প্রতিষ্টেতি তদ্রুমিরভবত তামপ্রথয়ত প্তা পৃথিব্যভবত। তস্যামস্যাং প্রতিষ্টায়াং ভূতানি চ, ভূতানাংচ পতিঃ সম্বত্সরায়াদীক্ষন্ত।  ভূতানাং পতির্গৃহপতিরাসীক, ঊষাঃ পত্নী।। ৭
তদ যানি তানি ভূতানি ঋতবস্তে। অথ যঃ স ভূতানাং পতি সম্বত্সরঃ সঃ। অথ যা সোপাঃ পত্নী ঔপসী সা। তানীমানি ভূতানি চ, ভূতানাং চ পতিঃ সম্বত্সর'উপসি রেতো'সিজ্চন। স সংবত্সরে কুমারো'জায়ত। সো'রোদীত।। ৮
তং প্রজাপতিরব্রবীত কুমার! কিং রোদিষি। যচ্ছূমান্তপসো'ধিজাতো'সীতি।  সো'ব্রবীত্ অন'পহতপাপ্মা বা'অস্মি অহিতনামা। নাম মে ধেহীতি। তস্মাত্পুত্রস্য জাতস্য নাম কুর্যাত। পাপ্মানমেবাস্য তদপহান্তি। অপি দ্বিতীয়ম, অপি তৃতীয়ম।  অভিপূর্বমেবাস্য তত্ পাপ্মানমপহন্তি।। ৯
তমব্রবীত্ রুদ্রো'সীতি। তদ যদস্য তন্নামাকরোত্ অগ্নিস্তদ্রূপমভবত্। অগ্নির্বৈ রুদ্রঃ। যদরোদীত্ তস্মাদ্রুদ্রঃ। সো'ব্রবীত্ জ্যায়ান্বা'অতো'স্মি। ধেহ্যেব মে নামেতি।। ১০
তমব্রবীত্ সর্বো'সীতি। তদ যদস্য তন্নামাকরোত্ আপস্তদ্রূপমভবত্। আপোবৈ সর্বঃ। অড্যোহীদং সর্ব জায়তে। সো'ব্রবীত্ জ্যায়ান্বা'অতো'স্মি। ধেহ্যেব মে নামেতি।। ১১
তমব্রবীত্ পশুপতিরসীতি। তদ যদস্য তন্নামাকরোত্ ওষধযস্তদ্রূপমভবন্। ঔষধয়ো বৈ পশু, পতিঃ। তস্মাদ্যদা পশব ঔষধির্লভন্তে অথ পতীয়ন্তি। সো'ব্রবীত্ জ্যায়ান্বা'অতো'স্মি। ধেহ্যেব মে নামেতি।। ১২
তমব্রবীত্ উগ্র'সী। তদ যদস্য তন্নামাকরোত্ বায়ুস্তদ্রূপমভবদ্। বায়ুর্বা'উগ্রঃ। তস্মাদ্যদা বলবদ্রানি উগ্রো বাতীত্যাহুঃ। সো'ব্রবীত্ জ্যায়ান্বা'অতো'স্মি। ধেহ্যেব মে নামেতি।। ১৩
তমব্রবীত্ অশানিরসীতি। তদ যদস্য তন্নামাকরোদ্। বিদ্যুন্তদ্রূপমভবত্। বিদ্যুদ্রা'অশনিঃ। তস্মাদ্যং বিদ্যুদ্রান্তি অশনিরবধীদিত্যাহুঃ। সো'ব্রবীত্ জ্যায়ান্বা'অতো'স্মি। ধেহ্যেব মে নামেতি।। ১৪
এখন কেউ বলতে পারে রুদ্র অজ জন্মরহিত কোনো কল্পে রুদ্র এরকম প্রজাপতি থেকে জন্ম নিয়েছিল। কিন্তু এই একই কাহিনী ঋগ্বেদের কৌষিতকী বা সাংখ্যায়ন ব্রাহ্মনে ও আছে। পুরানের মধ্যে ভাগবতম ৩/১২/১-২০ মার্কন্ডেয়পুরান,১/৫ বিষ্ণু পুরানে ১/৫/৩ বায়ুপুরানে এভাবে রুদ্রের উৎপত্তি বলা আছে।
কৌ.ব্রা ৬/১-৯
অথর্ববেদ ১৫-১/১/২।
ভাগবতম ৩/১২/১-২০
কূর্ম পুরান ১/১০/২৩
বায়ু পুরান ৯/৬৭ থেকে ১০/৪৩
বায়ূ পুরানেও এই কাহিনী টি আছে এবং রুদ্র কে ব্রহ্মা এই নাম গুলি দেন।  রুদ্র ভব শিব পশুপতি ঈশ ভীম উগ্র মহাদেব।
সামবেদীয় ছান্দোগ্য ব্রাহ্মণে বলা হয়েছে রুদ্র (বিরুপাক্ষ)  ব্রহ্মার প্রথম সন্তান: ছা.ব্রা ১
"বিরুপাক্ষায় ব্রহ্মণঃ পুত্রায় জ্যেষ্ঠায় শ্রেষ্ঠায়"
মহাভারতে কৃষ্ণ থেকে রুদ্রের উৎপত্তি বলা আছে (শান্তি পর্ব ৩৪২ অধ্যায়)।
ঋগ্বেদীয় কৌষীতকী ব্রাহ্মনে ৬/১-৯
প্রজাপতি সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করলেন, তিনি তপঃ করলেন, তার থেকে সূর্য চন্দ্র অগ্নি বায়ূ ও এক কন্যা উষার জন্ম হল। উষা কে দেখে তারা কামার্ত হল।
ব্রহ্মা নিজের পুত্রদের রেতঃ সংগ্রহ করলেন একটি সুবর্ণ পাত্রে। তা থেকে এক দেবতার উৎপত্তি হল। যার সহস্র পা, সহস্র চক্ষু, সহস্রধনুর্বান হাতে। জন্মেই তিনি প্রজাপতির দিকে বান সংযোগ করলেন। প্রজাপতি বললেন কেন আমাকে হত্যা করতে চাও? সদ্যোজাত দেবতা বললেন আমাকে একটি নাম দিন। নাম না হলে অন্ন গ্রহন করতে পারবনা(যজ্ঞ ভাগ পাবোনা)।
প্রজাপতি তাকে ভব নাম দিলেন। তাও সে ধনুকে বান সংযোগ করে আরেকটি নাম চাইল। প্রজাপতি তাকে সর্ব নাম দিলেন। এভাবে পশুপতি, উগ্র, মহাদেব, রুদ্র, ঈশান, অশানি এই আটটি নাম প্রাপ্ত হলেন।
প্রজাপতি প্রজাতিকামস্তপো অতপ্যত তস্মান্তপ্তাত্যঞ্চাজায়ন্ত অগ্নির্বায়ূরাদিত্যশ্চন্দ্রমা উষাঃ পঞ্চমী তানব্রবীদ্যুয়মপি তণ্যধ্বমিতি তে অদীজ্ঞন্ত তান্দীজ্ঞিতাংস্তেপানানুষাঃ প্রাজাপত্যাপ্সরোরূপোং কৃত্বা পুরস্তাত্       মনঃ সমপতন্তে রেতো অসিঞ্চন্ত তে প্রজাপতিং পিতরমেত্যাব্রুবন রেতো বা অসিচামহা ইদং নো মামুয়া ভূদিতি স প্রজাপতির্হিরন্ময়ং চমসমকরোদিষুমাত্র মূর্দ্ধমেবং তির্যঞ্চ তস্মিন রেতঃ  সমাসীঞ্চন তত উদতিষ্ঠত সহস্রাক্ষসহস্রপাত সহস্রেণ প্রতিহিতাভিঃ (কৌ.ব্রা ৬/১)
 স প্রজাপতিং পিতরমভ্যায়চ্ছত তমব্রবীত কথা মাভ্যায়চ্ছসীতি নাম মে কুর্বিত্যব্রবীন্ন বা ইদমবিহিতেন নাম্নান্নমত্স্যামীতি সবৈ ত্বমিত্যব্রবীত ভব এবেতি যদ্ভব আপস্তেন ন হ বা এনং ভবো হিনস্তি নাস্য প্রজাং নাস্য পশুন্নাস্য ব্রুবাণং চনাথ য এনং দ্বেষ্টি স এব পাপীয়ান্ভবতি ন স য এবং বেদ তস্য ব্রতমার্দ্রমেব বাসঃ পরিদধীতেতি। ৬/২
 তং দ্বিতীয়মভ্যায়চ্ছত তমব্রবীত কথা মাভ্যায়চ্ছসীতি দ্বিতীয়ং মে নাম কুর্বিত্যব্রবীন্ন বা ইদমেকেন নাম্নান্নমত্স্যামীতি সবৈ ত্বমিত্যব্রবীত সর্ব এবেতি যদ সর্ব অগ্নি স্তেন ন হ বা এনং সর্বো হিনস্তি নাস্য প্রজাং নাস্য পশুন্নাস্য ব্রুবাণং চনাথ য এনং দ্বেষ্টি স এব পাপীয়ান্ভবতি ন স য এবং বেদ তস্য ব্রতম সর্বমেব নাশ্রীয়াদিতি। ৬/৩
 তং তৃতীয়মভ্যায়চ্ছত তমব্রবীত কথা মাভ্যায়চ্ছসীতি তৃতীয়ং মে নাম কুর্বিত্যব্রবীন্ন বা ইদম দাভ্যাং নামভ্যামন্নমত্স্যামীতি সবৈ ত্বমিত্যব্রবীত পশুপতিঃ এবেতি যদ পশুপতির্বায়ূ স্তেন ন হ বা এনং পশুপতির্হিনস্তি নাস্য প্রজাং নাস্য পশুন্নাস্য ব্রুবাণং চনাথ য এনং দ্বেষ্টি স এব পাপীয়ান্ভবতি ন স য এবং বেদ তস্য ব্রতম ব্রাহ্মণম এব ন পরিবদেদিতি। ৬/৪
 তং চতুর্থমভ্যায়চ্ছত তমব্রবীত কথা মাভ্যায়চ্ছসীতি চতুর্থং মে নাম কুর্বিত্যব্রবীন্ন বা ইদম ত্রিভিঃ নামভিরন্নমত্স্যামীতি সবৈ ত্বমিত্যব্রবীত উগ্র এবেতি যদ উগ্রদেব ঔষধয়ো বনস্পতয়স্তেন ন হ বা এনং উগ্রদেবো হিনস্তি নাস্য প্রজাং নাস্য পশুন্নাস্য ব্রুবাণং চনাথ য এনং দ্বেষ্টি স এব পাপীয়ান্ভবতি ন স য এবং বেদ তস্য ব্রতম স্ত্রিয়া এব বিবরং নেক্ষেতেতি। ৬/৫
 তং পঞ্চমমভ্যায়চ্ছত তমব্রবীত কথা মাভ্যায়চ্ছসীতি পঞ্চমং মে নাম কুর্বিত্যব্রবীন্ন বা ইদম চতুর্ভিঃ নামভিরন্নমত্স্যামীতি সবৈ ত্বমিত্যব্রবীত মহাদেব এবেতি যদ মহাদেব আদিত্যস্তেন ন হ বা এনং মহানদেবো হিনস্তি নাস্য প্রজাং নাস্য পশুন্নাস্য ব্রুবাণং চনাথ য এনং দ্বেষ্টি স এব পাপীয়ান্ভবতি ন স য এবং বেদ তস্য ব্রতমুদ্যন্তমেবৈনং নেক্ষেতাস্তং যন্তং চেতি। ৬/৬
 তং ষষ্ঠমভ্যায়চ্ছত তমব্রবীত কথা মাভ্যায়চ্ছসীতি ষষ্ঠং মে নাম কুর্বিত্যব্রবীন্ন বা ইদম পঞ্চভিঃ নামভিরন্নমত্স্যামীতি সবৈ ত্বমিত্যব্রবীত রুদ্র এবেতি যদ রুদ্রঃ চন্দ্রমা স্তেন ন হ বা এনং রুদ্রো হিনস্তি নাস্য প্রজাং নাস্য পশুন্নাস্য ব্রুবাণং চনাথ য এনং দ্বেষ্টি স এব পাপীয়ান্ভবতি ন স য এবং বেদ তস্য ব্রতম বিমুর্তম এব বিবরং নাশ্নীয়ান্মজ্জানং চেতি। ৬/৭
 তং সপ্তমমভ্যায়চ্ছত তমব্রবীত কথা মাভ্যায়চ্ছসীতি সপ্তমং মে নাম কুর্বিত্যব্রবীন্ন বা ইদম ষড়ভিঃ নামভিরন্নমত্স্যামীতি সবৈ ত্বমিত্যব্রবীত উগ্র এবেতি যদ ঈশানো অন্নং স্তেন ন হ বা এনং ঈশানো হিনস্তি নাস্য প্রজাং নাস্য পশুন্নাস্য ব্রুবাণং চনাথ য এনং দ্বেষ্টি স এব পাপীয়ান্ভবতি ন স য এবং বেদ তস্য ব্রতম অন্নমেবেচ্ছমানং ন প্রত্যাচক্ষীতেতি। ৬/৮
 তংঅষ্টমমভ্যায়চ্ছত তমব্রবীত কথা মাভ্যায়চ্ছসীতি অষ্টমং মে নাম কুর্বিত্যব্রবীন্ন বা ইদম সপ্তভিঃ নামভিরন্নমত্স্যামীতি সবৈ ত্বমিত্যব্রবীত অশনিঃ এবেতি যদ অশনিঃ ইন্দ্র স্তেন ন হ বা এনং অশনিঃ হিনস্তি নাস্য প্রজাং নাস্য পশুন্নাস্য ব্রুবাণং চনাথ য এনং দ্বেষ্টি স এব পাপীয়ান্ভবতি ন স য এবং বেদ তস্য ব্রতম সত্যম এব বদেড্ডিরণ্যং চ বিভৃয়াদিতি স এষো অষ্টনামষ্টধাবিহিতো মহান্দেব আ হ বা অস্যাষ্টমাত পুরুষাত প্রজান্নমস্তি বসীয়ান বসীয়ান্হেবাস্য প্রজায়ামাজায়তে য এবং বেদ । ৬/৯
শ্রীমদভাগবতম ৩য় স্কন্দে ১২ অধ্যায়ে রুদ্রের জন্ম
ব্রহ্মা প্রথমে তমঃ মোহ মহামোহ তামিস্র ও অন্ধতামিস্র এই সকল অজ্ঞান বৃত্তিসকল সৃষ্টি করলেন। এই পাপবহুল সৃষ্টিতে সন্তুষ্ট না হয়ে ব্রহ্মা ভগবানের ধ্যান করে অন্তঃকরণ শুদ্ধ করলেন। ও চতুঃসনের সৃষ্টি করলেন তাদের কে ব্রহ্মা প্রজা সৃষ্টি করতে অনুরোধ করলেও ঐ বাসুদেবাশ্রয় উর্দ্ধরেতাঃ মুনিগন তাতে সম্মত হলেন না। আজ্ঞালঙ্ঘণকারী পুত্রগন কর্তৃক এভাবে অবমানিত হওয়ায় ব্রহ্মার ক্রোধ সঞ্চার হল। যদিও ব্রহ্মা সেই ক্রোধ মনের মধ্যে সংবরন করার চেষ্টা করলেন তা ও তার ভ্রুদ্বয়ের মধ্যস্থল থেকে সেই ক্রোধ নির্গত হয়ে নীললোহিতাকার এক পুরুষরূপে রোদন করতে করতে আবির্ভূত হল। দেবগনের পূর্বজ ও শক্তিশালী সেই পুরুষ ব্রহ্মার কাছে কাঁদতে কাঁদতে নিজের নাম ও স্থানাদি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। জন্মেই কান্না বা রোদন করেছিলেন বলে ব্রহ্মা তাকে রুদ্র নাম দিলেন।  এবং মন্যু মনু শিব প্রভৃতি ১১টি নাম দিলেন।
 ক্রোধ থেকে রুদ্র জন্ম নিয়েছিল।
 ধিয়া নিগৃহ্যমানোহপি ভ্রুবোর্মধ্যাৎ প্রজাপতেঃ
 সদ্যোহজায়ত তৎ মন্যুঃ কুমারো নীললোহিতঃ (ভাঃ ৩/১২/৭)
 অনুবাদ:- ব্রহ্মা বুদ্ধির দ্বারা সেই ক্রোধ মনের মধ্যে সংবরন করার চেষ্টা করলেও তার ভ্রুদ্বয়ের মধ্যস্থল থেকে সেই ক্রোধ নির্গত হয়ে নীললোহিতাকার এক পুরুষরূপে রোদন করতে করতে আবির্ভূত হল।
 বিশ্বনাথ চক্রবর্তীপাদ কৃত টীকা:- ব্রহ্মাতে বিদ্যার উদয় থাকলেও অবিদ্যার বৃত্তি সমূহের মধ্যে মুখ্য যে তামিস্র নামক ক্রোধ সেই ক্রোধ ই রুদ্র রূপে আবির্ভাব হল। তৎ মন্যুঃ মন্যু শব্দের অর্থ ক্রোধ। সেই প্রজাপতি ব্রহ্মার ক্রোধ ভ্রুযুগলের মধ্য দিয়ে নীললোহিত কুমার রূপে প্রকট হল।
 স বৈ রুরোদ দেবানাং পূর্ব্বজো ভগবান ভবঃ
 নামানি কুরু মে ধাতঃ স্থানানি চ জগদগুরো।। ১২/৮
 অনুবাদ:- সেই নীললোহিত পুরুষ ই দেবগনের পূর্বজ ও শক্তিশালী। তিনি ব্রহ্মার নিকট রোদনপূর্ব্বক বলতে লাগলেন হে বিধাতঃ হে জগদগুরো আমার নাম ও স্থান সমূহ নির্দেশ করে দিন।
 ইতি তস্য বচঃ পাদ্মো ভগবান পরিপালয়ন
 অভ্যধাদ্ভদ্রয়া বাচা মা রোদীস্তৎ করোমি তে।। ১২/৯
 অনুবাদ:- পদ্মযোনি ব্রহ্মা ও তার ঐ বাক্য প্রতিপালনপূর্ব্বক সান্তনা বাক্যে বলিলেন বৎস রোদন কোরোনা তোমার এই বাঞ্ছা পরিপূরণ করছি।
 যদরোদীঃ সুরশ্রেষ্ঠ সোদ্বেগ ইব বালকঃ
 অতস্ত্বামভিধাস্যন্তি নাম্না রুদ্র ইতি প্রজাঃ।।১২/১০
 অনুবাদ:- হে সুরশ্রেষ্ঠ যেহেতু তুমি বালকের মত উৎকন্ঠিত হয়ে রোদন করেছিলে এই জন্য প্রজা সকল তোমাকে রুদ্র নামে বলবে।
 হৃৎ ইন্দ্রিয়াণ্যসুর্ব্যোম বায়ূঃ অগ্নিঃ জলং মহী
 সূর্য্যঃ চন্দ্রঃ তপশ্চৈব স্থানান্যগ্রে কৃতানি তে।।১২/১১
অনুবাদ :- হৃদয় ইন্দ্রিয় প্রাণ আকাশ বায়ূ অগ্নি জল পৃথিবী সূর্য্য চন্দ্র এবং তপস্যা এই সকল স্থান তোমার জন্য পূর্বেই করা আছে।
 বিশ্বনাথ চক্রবর্তী কৃত টীকা:- হৃদয় ক্রোধের জন্মস্থান। হৃদয়ে উৎপন্ন হয়ে সেই ক্রোধ চোখে হাত পা ও ইন্দ্রিয় গুলিতে অবস্থান করে সেই সেই ইন্দ্রিয়ের কাজ করায়। তেমন পঞ্চপ্রান বায়ুতে প্রবেশ করে শ্বাসাদি ক্রিয়ার আধিক্য করে, তেমন বাইরে আকাশে সিংহনাদাদি শব্দ দ্বারা, বায়ু জল অগ্নি তে শোষকত্ব দাহকত্ব প্লাবকত্ব দ্বারা, পৃথিবীর বিকার মুগুর আদি অস্ত্র দ্বারা ক্রোধের প্রকাশ হয়ে থাকে।
 তপস্যা ও ভক্তি দেবীর দ্বারা পালিত না হলে ক্রোধের স্থানত্ব দৃষ্ট হয়। তাই পরম বৈরাগ্যপূর্ন ঋষিরাও ক্রোধ নিয়ন্ত্রন করতে না পেরে বড় বড় অভিশাপ দিয়ে ফেলেন।
 মন্যু্র্ম্মনুর্ম্মহিনসো মহাঞ্ছিবঃ ঋতধ্বজঃ
 উগ্ররেতা ভবঃ কালো বামদেবো ধৃতব্রতঃ ১২/১২
অনুবাদ হে রুদ্র মন্যু, মনু, মহিনস, মহান, শিব, ঋতধ্বজ, উগ্ররেতা, ভব, কাল, বামদেব,ও ধৃতব্রত তোমার এই একাদশটি নাম।
তারপর প্রজাপতি তাকে প্রজা সৃষ্টি করার জন্য বললেন। এইরূপ আদেশ পেয়ে ভগবান নীললোহিত নিজ স্বভাব অনুসারে আত্মসম প্রজা সৃষ্টি করলেন।
রুদ্রাণাং রুদ্রসৃষ্টানাং সমস্তাদ গ্রসতাং জগত
নিশাম্যাসংখ্যশো যূথান প্রজাপতিরশঙ্কত১২/১৬
অনুবাদ:-সেই রুদ্র হতে যে সকল রুদ্র সৃষ্টি হল তারা অসংখ্য দলবদ্ধ হয়ে জগত কে গ্রাস করতে উদ্যত হল। তা দেখে ব্রহ্মা শংকাযুক্ত হলেন।
এভাবে ব্রহ্মা থেকে রুদ্র ও রুদ্র থেকে একাদশ রুদ্রেরা জন্মাল।
শতপথ ব্রাহ্মণে ৯/১/১/৬ এ রুদ্রের জন্মের অন্য একটি কাহিনী আছে।  প্রজাপতি যখন সৃষ্টি কার্য্যে ব্যাস্ত ছিলেন তখন সব দেবতা রা তাকে ত্যাগ করে গেলেন কেবল মন্যু ছাড়া। প্রজাপতি কাঁদতে থাকলে তার অশ্রুজল মন্যুর ওপরে পড়ে। মন্যু এক সহস্রশীর্ষ, সহস্রচক্ষু, সহস্রধনুর্বান ধারী দেবতায় পরিনত হয়। এভাবে রুদ্রের জন্ম হয়। আগেই আমরা দেখেছি মন্যু শব্দের অর্থ হল ক্রোধ, অর্থাৎ  প্রজাপতির ক্রোধ থেকে রুদ্রের জন্ম হয়।
অথর্ববেদে ১৫কান্ডে ১ম সূক্তে
ব্রাত্য আসীদীয়মান এব স প্রজাপতিং সমৈরয়ৎ।
স প্রজাপতিঃ সুবর্ণমাত্মন্নপশ্যৎ তৎ প্রাজনয়ৎ।।
তদেকমভবৎ তল্ললামমভবৎ তন্মহদভবৎ।
তজ্জ্যেষ্ঠমভবৎ তদ ব্রহ্মাভবৎ তৎ।।
তপোহভবৎ তৎ সত্যমভবৎ তেন প্রাজায়ত।
সোহবর্ধত স মহানভবৎ স মহাদেবোহভবৎ।।
স দেবানামীশাং পর্যৈৎ স ঈশানোহভবৎ
স একব্রাত্যোহভবৎ স ধনুবাদত্ত তদেবেন্দ্রধনুঃ।।
নীলমস্যোদরং লোহিতং পৃষ্ঠম
নীলেনৈবাপ্রিয়ং ভ্রাতৃব্যং প্রোর্ণোতি লোহিতেন দ্বিষন্তং
বিধাতীতি ব্রহ্মবাদিনো বদন্তি।।
অনুবাদ:- ব্রাত্য ছিলেন। ব্রাত্য বা তমগুন প্রজাপতিকে জাগ্রত/ অস্থির করলেন, প্রজাপতি তার সুবর্ণ অন্ডকে প্রসব করলেন। তার থেকে একজন জন্ম নিল যে অদ্বিতীয় হল, মহৎ হল, জ্যেষ্ঠ হল, তপঃ হল, সত্য হল, মহাদেব হল, দেবতাদের অধিপতি হল, তাই তার নাম ঈশাণ। একব্রাত্য হল। অর্থাৎ ব্রাত্য দের অধীশ্বর হলেন।  তিনি হাতে ইন্দ্রের ধনু পিণাক ধারন করলেন, তার উদর নীল পিঠ লাল বর্নের তাই তার নাম নীললোহিত।
বিশ্লেষণ :- ভাগবতম ও শতপথব্রাহ্মণে আমরা দেখেছি ব্রহ্মার ক্রোধ ব্রহ্মাকে অস্থির করে ও ব্রহ্মার থেকে রুদ্রের জন্ম হয়। তাই এখানেও ব্রাত্য অর্থ তমগুন। এই তমগুন রুদ্র সৃষ্টির আগেই সৃষ্টি হয়েছিল তা ভাগবতে ও শতপথ ব্রাহ্মণে পাই। তমগুনের প্রভাবেই ব্রহ্মা নিজ কন্যা উষাকে কামনা করেছিলেন।
এবং রুদ্র ব্রাত্যদের অধিপতি হলেন অর্থে রুদ্র তমগুণের অধীশ্বর হলেন।
শতপথ ও ঐতরেয় ব্রাহ্মণের মন্ত্রে পাওয়া যায় জন্মের পর রুদ্র প্রজাপতি কে আক্রমন করেছিলেন। শ.ব্রা ১ম কান্ড ৭ম প্রপাঠক ৪র্থ ব্রাহ্মনে এখানে তার অনুবাদ দিচ্ছি।
প্রজাপতি নিজের কন্যা উষা কে দেখে চিন্তা করলেন আমি ইহার দ্বারা মিথুনবান হব। এই চিন্তা করে তিনি উষার সাথে মিলিত হলেন। সকল দেবগন বললেন যিনি নিজের দুহিতার প্রতি এরূপ ব্যাবহার করেন তিনি অপরাধী। ইনি মর্যাদা অতিক্রম করে এই আচরন করছেন ইহাকে তাড়ণা কর। রুদ্র ধনুকে বান যোগ করে তাকে তাড়না করলেন।
ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ৩/৩৩/১-৯ এ কাহিনী টি এইরূপ যে
পুরাকালে প্রজাপতি নিজের কন্যা উষার কথা চিন্তা করে কামার্ত হয়েছিলেন। প্রজাপতি ঋশ্যরূপ ধরে রোহিতরূপিনী কন্যার সাথে মিথুনবান হয়েছিলেন। তা দেখে দেবগন বললেন যা কেউ করেনা প্রজাপতি সেই নিন্দনীয় কর্ম করছে, এই বলে তাকে শাস্তি দিতে পারে এমন ব্যাক্তির তারা খোঁজ করতে লাগলেন কিন্তু নিজেদের মধ্যে তেমন কোনো ব্যাক্তিকে না দেখে তাদের যে ঘোরতম অতিউগ্র শরীর ছিল(তম গুন বা ক্রোধ ) তা তারা একত্রিত করলেন।  সেই সকল শরীর একত্র হয়ে এক দেবের উৎপত্তি হল।  তার নাম ভূতবান। তিনি পশুগনের আধিপত্য বর চাইলেন ও পশুপতি নামে পরিচিত হলেন। দেবতারা তাকে বললেন প্রজাপতি কে বানবিদ্ধ করতে। তিনি মৃগরূপী প্রজাপতি কে বানবিদ্ধ করলেন।  (পুরানেও এরকম কাহিনী আছে প্রজাপতি নিজ কন্যার প্রতি কামনা করলে শিব তাকে শাস্তি দেন পঞ্চমুখ প্রজাপতির এক মুখ ছেদন করেন। ফলে ব্রহ্মা চতুর্মুখ হন, কিন্তু ব্রহ্মহত্যার পাপে ঐ মুন্ডের কপাল শিবের হাতে লেগে থাকে তাই তার এক নাম কপালী)  সিদ্ধান্ত :-এই মন্ত্র সকল থেকে সিদ্ধান্ত করা যায় যে প্রজাপতির নিজকন্যার প্রতি কাম হয়, এই তম গুন তাকে অস্থির করে ফলে রুদ্রের সৃষ্টি হয়। কোনো কল্পে দেবতারা প্রজাপতির আচরনে ক্রুদ্ধ হয়ে রুদ্রের সৃষ্টি করেছে।  রুদ্র জন্মগ্রহন করে পশুপতি ইত্যাদি নাম ও স্থান প্রাপ্ত হন। কোনো কল্পে জন্মগ্রহন করে রুদ্র প্রজাপতির পাপকর্মের জন্য তাকে বানবিদ্ধ করেন। কোনো কল্পে প্রজাপতিকে বানবিদ্ধ করতে গেলে ভয়ে তিনি তাকে আট টি নাম দেন।  কোনো কল্পে তিনি প্রজাপতি কে বলেন আমাকে নাম দিন নয়ত আমি আপনার পাপকর্ম থেকে  জন্মের গ্লানি থেকে মুক্ত হবনা। অর্থাৎ রুদ্র প্রজাপতি থেকে জাত। তাই রুদ্র বা শিব বেদ এর পরমতত্ত্ব নন। কারন পরমপুরুষ সৃষ্টির পূর্বে ছিলেন, তার থেকেই সমস্ত কিছুর প্রকাশ।

৭) ঋগ্বেদে শৈব পাশুপত মত কে বহিষ্কার করা হয়েছে। শিবলিঙ্গ যারা পূজা করে তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে তারা যজ্ঞভূমিতে এলে যজ্ঞ নষ্ট হয়।
বশিষ্ঠ মুনি ইন্দ্রকে বলছেন, লিঙ্গপূজক রা যেন যজ্ঞভূমির কাছে না আসে। মা শিশ্নদেবাঃ অপি গুর্ঋৃতং নঃ ঋগ্বেদ ৭/২১/৫

                                সিদ্ধান্ত
রুদ্রাধ্যায়ে রুদ্রকে কোথাও জগতের অধিপতি বলা হয়েছে এর অর্থ জড় জগতের অধিপতি বোঝায়। তাই রুদ্রের অন্য নাম ঈশ, ভব। শতরুদ্রীয় স্তোত্রে দেখা যায় রুদ্র জড় জগতের সর্বত্র অবস্থিত। নদীতে বনে পর্বতে চোর গুপ্তঘাতক দের মধ্যে,
কিন্তু ঋগ্বেদে বলা হয়েছে বিষ্ণু র এক পাদেই সমস্ত জড় ব্রহ্মান্ড অবস্থিত অন্য ত্রিপাদ বিভূতির কথা ধারনা ও করা যায় না। বিষ্ণু ই সেই পরমলোকের কথা জানেন (৭/১০০/১) ইত্যাদি
বেদ ও উপনিষদে ব্রহ্মের লক্ষণ সম্পর্কে বলা হয়েছে তদ বিজিগাস্য তদ ব্রহ্ম
সেই ব্রহ্ম কে জানতে হবে ও তার ধাম লাভ করতে হবে। যিনি ব্রহ্ম কে জানেন তিনিই পরম পদ প্রাপ্ত হন। ব্রহ্মবিদাপ্নোতি পরম। তৈত্তীরিয় উপনিষদ ২/১
ব্রহ্মানন্দবল্লী ১ম অনুবাক ১ম মন্ত্র
এখন ঋগ্বেদে বলা হয়েছে সেই বিষ্ণু কে প্রাপ্ত করতে হবে। তার ধাম লাভ করতে হবে(ঋক ১/১৫৪/৫) বিষ্ণুতে সমস্ত ত্রিভূবন অবস্থিত, বিষ্ণু থেকে জগতের উৎপত্তি
অথচ রুদ্রকে লাভ করতে হবে, তার ধাম লাভ করা সাধ্য কোথাও বলা নেই। রুদ্রকে বলা হয়েছে তিনি যেন আমাদের হত্যা না করেন, ধ্বংস না করেন। রুদ্রাধ্যায়ে কোথাও রুদ্র থেকে সৃষ্ট্যাদি হয়েছে বলা নেই। রুদ্র থেকে জগত সমস্ত দেবতা ও জীবের উৎপত্তি এরকম বেদ এ কোথাও বলা নেই বরং প্রজাপতি থেকে রুদ্রের জন্ম প্রমানিত।

Next Page>>>