Refutation of shaktivad and supremacy of shakti from veda
শক্তিতত্ত্ব
দূর্গা কালী র সম্পর্কে ঋগ্বেদে কোনো সূক্ত বা মন্ত্র নেই।
১) ঋগ্বেদের ১০/১২৫ এ একটি সূক্ত আছে অনেকে একে দেবী সূক্ত বলেন। কিন্তু তার নাম বলা নেই কোনো। তিনি দূর্গা কিনা বা কোনো দেবী কিনা তাও বোঝা যায় না। বরং আমি সকলের পিতা, সমুদ্রে অবস্থান করি এই শব্দের দ্বারা নারায়ন কেই বোঝায়। এই সূক্তের দেবতা বলা হয়েছে পরমাত্মা কে। পরিশিষ্টে সম্পূর্ন দেবীসূক্ত ও অনুবাদ দেওয়া আছে।
২)এবার দূর্গা সূক্ত বলে যে শ্রুতি আছে তা দেখি। এটি সাতটি মন্ত্র বিশিষ্ট মহানারায়ণোপনিষদের দ্বিতীয় অনুবাকের শ্লোক। রামানুজ তার শ্রীভাষ্যে এই উপনিষদ থেকে কয়েকটি মন্ত্র সংগ্রহ করেছেন যা প্রমান করে নারায়ন ই পরম তত্ত্ব। শংকরাচার্য্য এই উপনিষদের ব্যাখ্যা করেননি বলে অদ্বৈতবাদী রা বলেন এই উপনিষদ টি অর্বাচীন। তাদোর যুক্তি মেনে নিলে দূর্গাসূক্ত ও অর্বাচীন। মহানারায়ন উপনিষদে লেখা দূর্গাসুক্তের ৭টি শ্লোকের মধ্যে ৫টি শ্লোক ঋগ্বেদের অগ্নিসূক্ত থেকে নেওয়া। সায়নাচার্য্যের মতে শ্লোকগুলিতে দূর্গা শব্দ ব্যাবহার করা হয়েছে দুর্গম, বিপত্তি, আপৎ এই অর্থে।
জাতবেদসে সূনবাম সোমমরাতীয়তো নিদহতি বেদঃ
স নঃ পর্ষদতি দুর্গানি বিশ্বা নাবেব সিন্ধুম দুরিতাত্যগ্নি।। মহানারায়ন উপনিষদ১
এটি ঋগ্বেদের ১/৯৯/১ মন্ত্র
জাতবেদ ও সোম কে প্রণাম, সর্বজ্ঞ অগ্নি আমাদের শত্রুদের ভস্মীভূত করুক। অগ্নি আমাদের সমস্ত বিপদ মুক্ত করুক। নাবিক যেমন নৌকার দ্বারা সমুদ্র অতিক্রম করে সেই রূপ অগ্নি আমাদের পাপ দূর করুক।
এরপরে মহানারায়নোপনিষদ একটি শ্লোক প্রক্ষিপ্ত করেছে
তামগ্নিবর্নাং তমসা জ্বলন্তীং বৈরোচনীং কর্মফলেষু জুষ্টাম।
দুর্গাদেবীম শরণমহম প্রপদ্যে সুতরসি তরসে নমঃ।।২
আমি অগ্নিবর্ন সদৃশ সন্তাপের দ্বারা শত্রুবিনাশী পরমাত্মদৃষ্টা স্বর্গপশু পুত্রাদিদলের নিমিত্ত উপাসক গণ সেবিতা দূর্গা দেবীর শরণ প্রাপ্ত হই। হে সংসার তারিণী দেবী তুমি আমাদের সংসার সমুদ্র থেকে উত্তরণ করাও। তারজন্য তোমায় নমস্কার।
তারপর আবার ঋগ্বেদীয় অগ্নিসূক্তের মন্ত্র রয়েছে
অগ্নে ত্বং পারম্না নব্যো অস্মান স্বস্তিভিরতি দুর্গাণি বিশ্বা
পুশ্চ পৃথ্বী বহুলা ন উর্বী ভবা তোকায় তনয়ায় শংয়ো।। মহানারায়ন উপনিষদ ৩
ঋগ্বেদ ১/১৮৯/২
হে অগ্নি তুমি আমাদের স্তবযোগ্য হয়ে কল্যাণপ্রদ উপায়সমূহের দ্বারা সমস্ত আপৎ হইতে উত্তীর্ন করে আমাদের সংসার সমুদ্রের পরপারে নিয়ে যাও। তোমার অনুগ্রহে আমাদের বাসভূমি পৃথিবী ও শস্যনিস্পাদন যোগ্য ভূমি ও বিস্তৃতি লাভ করুক। তুমি আমাদের পুত্র দেওয়ার জন্য সুখপ্রদ হও।
বিশ্বানি নো দূর্গহা জাতবেদঃ সিন্ধুং ন নাবা দুরিতাতি পর্ষ্নি।
অগ্নে অত্রিবন নমসা গৃণাণো অস্মাকম বোধ্য অবিতা তনূনাম।। মহানারায়ন উপনিষদ ৪
ঋগ্বেদ ৫/৪/৯
হে জাতবেদঃ তুমি আমাদের সমস্ত আপদের বিনাশক হয়ে নৌকার দ্বারা সমুদ্রের ন্যায় আমাদের সমস্ত পাপ হইতে উত্তরণ কর। হে অগ্নে তুমি অত্রি ঋষির ন্যায় তাপত্রয়রহিত হয়ে মনের দ্বারা আমাদের কল্যাণ চিন্তা কর, আমাদের শরীরের রক্ষক হয়ে সাবধান হও।
পৃতনাজিতং সহমানমুগ্রমগ্নিং হুবেম পরমাৎ সধস্থাৎ। স নঃ পর্যদতি দুর্গাণি বিশ্বা ক্ষামদ্দেবো অতিদুরিতত্যগ্নিঃ।। মহানারায়ন উপনিষদ ৫
ঋগ্বেদ৭/৬৩/১
আমরা পরসেণাজয়ী শত্রুগণের অভিভবকারী ভীতি হেতু অগ্নিকে উৎকৃষ্ট স্বীয় ভৃত্যগণের সহ অবস্থানযোগ্য দেশ হইতে আহ্বান করি। সেই অগ্নি আমাদের সমস্ত আপৎ দূরীভূত করেছেন। অগ্নিদেব আমাদের মত অপরাধীর সমস্ত দোষ সহ্য করে ব্রহ্মহত্যাদি যাবতীয় পাপ নষ্ট করেন।
প্রত্নোষি কমীড্য অধ্বরেষু সনাচ্চ হোতা নব্যশ্চ সৎসি। স্বা চাগ্নে তনুবং পিপ্রয়স্বাস্মভ্যং চ সৌভগমায়জস্ব।। মহানারায়ন উপনিষদ ৬
ঋগ্বেদ ৮/১১/১০
হে অগ্নি তুমি কর্নসমূহে স্তবযোগ্য হয়ে সুখবিস্তার কর। তুমি কর্মফল দাতা। হোমনিষ্পাদক, স্তবযোগ্য হয়েও কর্ণদেশে অবস্থান করে থাক, তুমি হবির দ্বারা স্বকীয় শরীরের প্রীতি সম্পাদন কর। আমাদের সৌভাগ্য প্রদান করে থাকো।
এরপর মহানারায়ণোপনিষদে দূর্গা গায়ত্রী প্রক্ষিপ্ত হয়েছে।
ওঁ কাত্যায়ণায় বিদ্মহে কণ্যাকুমারী ধীমহি তন্নো দুর্গি প্রচোদয়াৎ।। মহানারায়ন উপনিষদ ৭
৩) যজুর্বেদের রুদ্রাধ্যায়ে দূর্গার নাম আছে
অম্বিকাপতয়ে উমাপতয়ে পশুপতয়ে নমো নমঃ
কিন্তু এখানে তাকে রুদ্রের স্ত্রী উমা অম্বিকা বলা হয়েছে, তাকে পরম ব্রহ্ম বলা হয়নি।
৪)কেনোপনিষদে উমা র তাৎপর্য্য চন্ডী থেকে ব্যাখ্যা
কেনোপনিষদে একটি কাহিনী আছে একবার দেবতা রা অসুর দের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করে নিজেদের বল বিক্রম সম্পর্কে অহঙ্কার করছিল যে আমাদের শক্তিতেই যুদ্ধ জয় করেছি।
ইন্দ্র সেই যক্ষের কাছে ফিরে যেতেই সেই যক্ষ অন্তর্হিত হয়ে গেল। সেখানে আকাশে হৈমবতী উমাদেবী প্রকট হলেন তাকে ইন্দ্র জিজ্ঞাসা করলেন এই যক্ষ কে ছিল? দেবী উমা তখন বললেন হে দেবগন উনি স্বয়ং ব্রহ্ম তার শক্তিতেই শক্তিমান হয়ে তোমরা অসুর দের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছো। তোমাদের অহঙ্কার দুর করতে যক্ষ রূপে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাই তোমরা ঐ তৃন খন্ড দগ্ধ করতে পারোনি।
অথেন্দ্রম অব্রুবন মঘবন এতৎ বিজানীহি কিমেতদ যক্ষমিতি। তথেতি তদভ্যদ্রবৎ। তস্মাৎ তিরোদধে। ৩/১১
স তস্মিন্নেবাকাশে স্ত্রিয়মাজগাম বহু শোভমানাম উমা হৈমবতীম তাঁহোবাচ কিমেতদ যক্ষমিতি।৩/১২
সা ব্রহ্মেতি হোবাচ। ব্রহ্মণো বা এতদ্বিজয়ে মহীয়ধ্বমিতি, ততো হৈব বিদাঞ্চকার ব্রহ্মেতি।৪/১
এই শ্রুতি কাহিনী থেকে বোঝা যায় উমা দেবী যিনি ব্রহ্মের পরিচয় প্রদান করছিলেন ও ব্রহ্ম ভিন্ন।
নয়ত ইন্দ্র যখন প্রশ্ন করলেন এই যক্ষ কে? তার উত্তরে তিনি বলতেন না সেই যক্ষই ব্রহ্ম( সা ব্রহ্মেতি) । বরং বলতেন আমি ব্রহ্ম (অহং ব্রহ্মেতি)।
৫) মহাভারতে অর্জুন যুদ্ধের আগে দূর্গা স্তোত্র পাঠ করেছিল। ভীষ্ম পর্ব ২৩ অধ্যায়
৬) বাল্মিকী রামায়নে উমার সাথে শিবের বিবাহ, স্কন্দের জন্মের কথা আছে। বাল্মিকী রামায়ণ ১/৩৫/১৬
৭) এরপর মার্কন্ডেয়পুরানের অন্তর্গত শ্রী শ্রী চন্ডীতে দেবী দূর্গা সম্পর্কে বিশদ বর্ননা রয়েছে। ঋষি মেধা রাজা সুরথ ও বৈশ্য সমাধিকে দেবী দূর্গার পরিচয় প্রদান করেছেন এই বলে যে
মহামায়া হরেশ্চৈতত্তয়া সংমোহ্যতে জগৎ ১/৪৯
মহামায়া শ্রীহরির শক্তি এই জগত কে মায়াতে মুগ্ধ করে রাখে।
যা দেবী সর্বভূতেষু বিষ্ণুমায়েতি শব্দিতা ৫/১৬
বিষ্ণু মায়া নামে পরিচিত যে দেবী সকল জীবে শক্তি রূপে, শ্রদ্ধা রূপে অবস্থান করেন
ত্বং বৈষ্ণবী শক্তিরনন্তবীর্য্যা বিশ্বস্যবীজং পরমাসি মায়া
সম্মোহিতং দেবী সমস্তামেতৎ ত্বং বৈ প্রসন্নাভুবি মুক্তিহেতুঃ ১১/৫
ত্বং বৈষ্ণবী শক্তিরনন্তবীর্য্যা তুমি বিষ্ণু র মায়াশক্তি।
শক্তি শক্তিমানের ইচ্ছায় সব কাজ করেন। বিষ্ণুর ইচ্ছায় দেবী দূর্গা জগত কে মায়ায় মুগ্ধ করে রাখেন।
১১ অধ্যায়ে ৯ থেকে ২৩ মন্ত্রে নারায়নী নমোস্তুতে কথাটি আছে। অর্থাৎ নারায়নের শক্তি।
কেনোপনিষদে ও মার্কন্ডেয় পুরানে দেবী কে বিষ্ণু বা ব্রহ্মের শক্তি বলা হয়েছে। যজুর্বেদ ও কেনোপনিষদে উমা র যে উল্লেখ রয়েছে তাতে তাকে জগতকারন ব্রহ্ম বোঝায় না। বিশেষত বেদ এ আর তার কোনো উল্লেখ নেই তাই বেদের পরমতত্ত্ব শক্তি বা দূর্গা এই মতবাদ ভ্রান্ত।
৮) মুন্ডকোপনিষদে ১/২/৪ এ কালী এই শব্দটি আছে। কিন্তু তাকে অগ্নির সপ্তজিহ্বার মধ্যে একটি বলে বর্ননা করা হয়েছে।
কালী করালী চ মনোজবা চ সুলোহিতা যা চ সূধুম্রবর্না।
স্ফুলিঙ্গিনী বিশ্বরুচি চ দেবী লেলায়মানা ইতি সপ্তজিহ্বাঃ। (মুন্ডকোপনিষদে ১/২/৪)
অনুবাদ:- কালী করালী মনোজবা সুলোহিতা সূধুম্রবর্না, স্ফুলিঙ্গিনী, বিশ্বরুচি দেবী এই সাতটি শিখা হবি গ্রহনের জন্য অগ্নির জিহ্বা। অর্থাত পৌরানিক বিশ্বসৃষ্টির কারন আদ্যাশক্তি কালী দেবী কেবল মাত্র হবি গ্রহনের জন্য অগ্নির জিহ্বা!
এর পরের শ্লোকে বলছে
এতেষু যশ্চরতে ভ্রাজমানেষু
যথাকালং চাহুতয়ো হ্যাদদায়ন
তং নয়ন্ত্যেতাঃ সূর্যস্য রশ্ময়ো
যত্র দেবানাং পতিরেকোহধিবাসঃ
(মুন্ডকোপনিষদে ১/২/৫)
অনুবাদ:-এই সাত শিখাযুক্ত অগ্নিতে বিধিঅনুসারে নিত্য আহুতি দিয়ে যে অগ্নিহোত্র করে সে স্বর্গসুখ লাভ করে।
বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৪/৪/২১
স বা এষ মহানজ আত্মা যোহয়ং বিজ্ঞানময়ঃ প্রানেষু য এষোহন্তর্হৃদয় আকাশস্তস্মিঞ্ছেতে সর্বস্য বশী সর্বস্যেশানঃ সর্বস্যাধিপতিঃ স ন সাধুনা কর্মণা ভূয়ান্নো এবা সাধুনা কনীয়ানেষ সর্বেশ্বর এষভূ তাধিপতিরেষ ভূতপাল....তমেতং বেদানুবচনেন ব্রাহ্মনা বিবিদিষন্তি যজ্ঞেন দানেন তপসাহনাশকেনৈতমেব বিদিত্বা মুনির্ভবতি। এতমেব প্রব্রাজিনো লোকমিচ্ছন্তঃ প্রব্রজন্তি।
অনুবাদ:- এই যে আত্মা বুদ্ধিতে উপহিত ও ইন্দ্রিয়বর্গের মধ্যে অবস্থিত আছেন তিনি মহান ও জন্মরহিত পরমাত্মাই বটে। ...ইনি সকলের নিয়ামক, সকলের ঈশ্বর, সকলের অধিপতি, ইনি শুভকর্মের দ্বারা মহীয়ান বা অশুভকর্মের দ্বারা হীনতর হন না। কারন ইনি সর্বেশ্বর, জীবসকলের অধিপতি, জীবসকলের পালক।.... ব্রাহ্মণ রা তাকে জানার জন্য বেদশাস্ত্র অধ্যয়ণ করেন, যজ্ঞাদি অনুষ্ঠান তপস্যা দান করেন। তারা এই পরমাত্মাকে জানার জন্যই মুনি হন। পরিব্রাজক গন এই পরমাত্মাকে পাওয়ার ইচ্ছাতেই পরিব্রজ্যা অবলম্বন করেন।
আত্মা বা অরে দ্রষ্টব্যঃ শ্রোতব্যো মন্তব্যো নিদিধ্যাসিতব্যো। ৪/৫/৬
আত্মা সম্পর্কে শ্রবন বিচার দর্শন ও জ্ঞান লাভ করা উচিত।
Next Page>>>
শক্তিতত্ত্ব
দূর্গা কালী র সম্পর্কে ঋগ্বেদে কোনো সূক্ত বা মন্ত্র নেই।
১) ঋগ্বেদের ১০/১২৫ এ একটি সূক্ত আছে অনেকে একে দেবী সূক্ত বলেন। কিন্তু তার নাম বলা নেই কোনো। তিনি দূর্গা কিনা বা কোনো দেবী কিনা তাও বোঝা যায় না। বরং আমি সকলের পিতা, সমুদ্রে অবস্থান করি এই শব্দের দ্বারা নারায়ন কেই বোঝায়। এই সূক্তের দেবতা বলা হয়েছে পরমাত্মা কে। পরিশিষ্টে সম্পূর্ন দেবীসূক্ত ও অনুবাদ দেওয়া আছে।
২)এবার দূর্গা সূক্ত বলে যে শ্রুতি আছে তা দেখি। এটি সাতটি মন্ত্র বিশিষ্ট মহানারায়ণোপনিষদের দ্বিতীয় অনুবাকের শ্লোক। রামানুজ তার শ্রীভাষ্যে এই উপনিষদ থেকে কয়েকটি মন্ত্র সংগ্রহ করেছেন যা প্রমান করে নারায়ন ই পরম তত্ত্ব। শংকরাচার্য্য এই উপনিষদের ব্যাখ্যা করেননি বলে অদ্বৈতবাদী রা বলেন এই উপনিষদ টি অর্বাচীন। তাদোর যুক্তি মেনে নিলে দূর্গাসূক্ত ও অর্বাচীন। মহানারায়ন উপনিষদে লেখা দূর্গাসুক্তের ৭টি শ্লোকের মধ্যে ৫টি শ্লোক ঋগ্বেদের অগ্নিসূক্ত থেকে নেওয়া। সায়নাচার্য্যের মতে শ্লোকগুলিতে দূর্গা শব্দ ব্যাবহার করা হয়েছে দুর্গম, বিপত্তি, আপৎ এই অর্থে।
জাতবেদসে সূনবাম সোমমরাতীয়তো নিদহতি বেদঃ
স নঃ পর্ষদতি দুর্গানি বিশ্বা নাবেব সিন্ধুম দুরিতাত্যগ্নি।। মহানারায়ন উপনিষদ১
এটি ঋগ্বেদের ১/৯৯/১ মন্ত্র
জাতবেদ ও সোম কে প্রণাম, সর্বজ্ঞ অগ্নি আমাদের শত্রুদের ভস্মীভূত করুক। অগ্নি আমাদের সমস্ত বিপদ মুক্ত করুক। নাবিক যেমন নৌকার দ্বারা সমুদ্র অতিক্রম করে সেই রূপ অগ্নি আমাদের পাপ দূর করুক।
এরপরে মহানারায়নোপনিষদ একটি শ্লোক প্রক্ষিপ্ত করেছে
তামগ্নিবর্নাং তমসা জ্বলন্তীং বৈরোচনীং কর্মফলেষু জুষ্টাম।
দুর্গাদেবীম শরণমহম প্রপদ্যে সুতরসি তরসে নমঃ।।২
আমি অগ্নিবর্ন সদৃশ সন্তাপের দ্বারা শত্রুবিনাশী পরমাত্মদৃষ্টা স্বর্গপশু পুত্রাদিদলের নিমিত্ত উপাসক গণ সেবিতা দূর্গা দেবীর শরণ প্রাপ্ত হই। হে সংসার তারিণী দেবী তুমি আমাদের সংসার সমুদ্র থেকে উত্তরণ করাও। তারজন্য তোমায় নমস্কার।
তারপর আবার ঋগ্বেদীয় অগ্নিসূক্তের মন্ত্র রয়েছে
অগ্নে ত্বং পারম্না নব্যো অস্মান স্বস্তিভিরতি দুর্গাণি বিশ্বা
পুশ্চ পৃথ্বী বহুলা ন উর্বী ভবা তোকায় তনয়ায় শংয়ো।। মহানারায়ন উপনিষদ ৩
ঋগ্বেদ ১/১৮৯/২
হে অগ্নি তুমি আমাদের স্তবযোগ্য হয়ে কল্যাণপ্রদ উপায়সমূহের দ্বারা সমস্ত আপৎ হইতে উত্তীর্ন করে আমাদের সংসার সমুদ্রের পরপারে নিয়ে যাও। তোমার অনুগ্রহে আমাদের বাসভূমি পৃথিবী ও শস্যনিস্পাদন যোগ্য ভূমি ও বিস্তৃতি লাভ করুক। তুমি আমাদের পুত্র দেওয়ার জন্য সুখপ্রদ হও।
বিশ্বানি নো দূর্গহা জাতবেদঃ সিন্ধুং ন নাবা দুরিতাতি পর্ষ্নি।
অগ্নে অত্রিবন নমসা গৃণাণো অস্মাকম বোধ্য অবিতা তনূনাম।। মহানারায়ন উপনিষদ ৪
ঋগ্বেদ ৫/৪/৯
হে জাতবেদঃ তুমি আমাদের সমস্ত আপদের বিনাশক হয়ে নৌকার দ্বারা সমুদ্রের ন্যায় আমাদের সমস্ত পাপ হইতে উত্তরণ কর। হে অগ্নে তুমি অত্রি ঋষির ন্যায় তাপত্রয়রহিত হয়ে মনের দ্বারা আমাদের কল্যাণ চিন্তা কর, আমাদের শরীরের রক্ষক হয়ে সাবধান হও।
পৃতনাজিতং সহমানমুগ্রমগ্নিং হুবেম পরমাৎ সধস্থাৎ। স নঃ পর্যদতি দুর্গাণি বিশ্বা ক্ষামদ্দেবো অতিদুরিতত্যগ্নিঃ।। মহানারায়ন উপনিষদ ৫
ঋগ্বেদ৭/৬৩/১
আমরা পরসেণাজয়ী শত্রুগণের অভিভবকারী ভীতি হেতু অগ্নিকে উৎকৃষ্ট স্বীয় ভৃত্যগণের সহ অবস্থানযোগ্য দেশ হইতে আহ্বান করি। সেই অগ্নি আমাদের সমস্ত আপৎ দূরীভূত করেছেন। অগ্নিদেব আমাদের মত অপরাধীর সমস্ত দোষ সহ্য করে ব্রহ্মহত্যাদি যাবতীয় পাপ নষ্ট করেন।
প্রত্নোষি কমীড্য অধ্বরেষু সনাচ্চ হোতা নব্যশ্চ সৎসি। স্বা চাগ্নে তনুবং পিপ্রয়স্বাস্মভ্যং চ সৌভগমায়জস্ব।। মহানারায়ন উপনিষদ ৬
ঋগ্বেদ ৮/১১/১০
হে অগ্নি তুমি কর্নসমূহে স্তবযোগ্য হয়ে সুখবিস্তার কর। তুমি কর্মফল দাতা। হোমনিষ্পাদক, স্তবযোগ্য হয়েও কর্ণদেশে অবস্থান করে থাক, তুমি হবির দ্বারা স্বকীয় শরীরের প্রীতি সম্পাদন কর। আমাদের সৌভাগ্য প্রদান করে থাকো।
এরপর মহানারায়ণোপনিষদে দূর্গা গায়ত্রী প্রক্ষিপ্ত হয়েছে।
ওঁ কাত্যায়ণায় বিদ্মহে কণ্যাকুমারী ধীমহি তন্নো দুর্গি প্রচোদয়াৎ।। মহানারায়ন উপনিষদ ৭
৩) যজুর্বেদের রুদ্রাধ্যায়ে দূর্গার নাম আছে
অম্বিকাপতয়ে উমাপতয়ে পশুপতয়ে নমো নমঃ
কিন্তু এখানে তাকে রুদ্রের স্ত্রী উমা অম্বিকা বলা হয়েছে, তাকে পরম ব্রহ্ম বলা হয়নি।
৪)কেনোপনিষদে উমা র তাৎপর্য্য চন্ডী থেকে ব্যাখ্যা
কেনোপনিষদে একটি কাহিনী আছে একবার দেবতা রা অসুর দের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করে নিজেদের বল বিক্রম সম্পর্কে অহঙ্কার করছিল যে আমাদের শক্তিতেই যুদ্ধ জয় করেছি।
ইন্দ্র সেই যক্ষের কাছে ফিরে যেতেই সেই যক্ষ অন্তর্হিত হয়ে গেল। সেখানে আকাশে হৈমবতী উমাদেবী প্রকট হলেন তাকে ইন্দ্র জিজ্ঞাসা করলেন এই যক্ষ কে ছিল? দেবী উমা তখন বললেন হে দেবগন উনি স্বয়ং ব্রহ্ম তার শক্তিতেই শক্তিমান হয়ে তোমরা অসুর দের বিরুদ্ধে জয়লাভ করেছো। তোমাদের অহঙ্কার দুর করতে যক্ষ রূপে তিনি আবির্ভূত হয়েছিলেন। তাই তোমরা ঐ তৃন খন্ড দগ্ধ করতে পারোনি।
অথেন্দ্রম অব্রুবন মঘবন এতৎ বিজানীহি কিমেতদ যক্ষমিতি। তথেতি তদভ্যদ্রবৎ। তস্মাৎ তিরোদধে। ৩/১১
স তস্মিন্নেবাকাশে স্ত্রিয়মাজগাম বহু শোভমানাম উমা হৈমবতীম তাঁহোবাচ কিমেতদ যক্ষমিতি।৩/১২
সা ব্রহ্মেতি হোবাচ। ব্রহ্মণো বা এতদ্বিজয়ে মহীয়ধ্বমিতি, ততো হৈব বিদাঞ্চকার ব্রহ্মেতি।৪/১
এই শ্রুতি কাহিনী থেকে বোঝা যায় উমা দেবী যিনি ব্রহ্মের পরিচয় প্রদান করছিলেন ও ব্রহ্ম ভিন্ন।
নয়ত ইন্দ্র যখন প্রশ্ন করলেন এই যক্ষ কে? তার উত্তরে তিনি বলতেন না সেই যক্ষই ব্রহ্ম( সা ব্রহ্মেতি) । বরং বলতেন আমি ব্রহ্ম (অহং ব্রহ্মেতি)।
৫) মহাভারতে অর্জুন যুদ্ধের আগে দূর্গা স্তোত্র পাঠ করেছিল। ভীষ্ম পর্ব ২৩ অধ্যায়
৬) বাল্মিকী রামায়নে উমার সাথে শিবের বিবাহ, স্কন্দের জন্মের কথা আছে। বাল্মিকী রামায়ণ ১/৩৫/১৬
৭) এরপর মার্কন্ডেয়পুরানের অন্তর্গত শ্রী শ্রী চন্ডীতে দেবী দূর্গা সম্পর্কে বিশদ বর্ননা রয়েছে। ঋষি মেধা রাজা সুরথ ও বৈশ্য সমাধিকে দেবী দূর্গার পরিচয় প্রদান করেছেন এই বলে যে
মহামায়া হরেশ্চৈতত্তয়া সংমোহ্যতে জগৎ ১/৪৯
মহামায়া শ্রীহরির শক্তি এই জগত কে মায়াতে মুগ্ধ করে রাখে।
যা দেবী সর্বভূতেষু বিষ্ণুমায়েতি শব্দিতা ৫/১৬
বিষ্ণু মায়া নামে পরিচিত যে দেবী সকল জীবে শক্তি রূপে, শ্রদ্ধা রূপে অবস্থান করেন
ত্বং বৈষ্ণবী শক্তিরনন্তবীর্য্যা বিশ্বস্যবীজং পরমাসি মায়া
সম্মোহিতং দেবী সমস্তামেতৎ ত্বং বৈ প্রসন্নাভুবি মুক্তিহেতুঃ ১১/৫
ত্বং বৈষ্ণবী শক্তিরনন্তবীর্য্যা তুমি বিষ্ণু র মায়াশক্তি।
শক্তি শক্তিমানের ইচ্ছায় সব কাজ করেন। বিষ্ণুর ইচ্ছায় দেবী দূর্গা জগত কে মায়ায় মুগ্ধ করে রাখেন।
১১ অধ্যায়ে ৯ থেকে ২৩ মন্ত্রে নারায়নী নমোস্তুতে কথাটি আছে। অর্থাৎ নারায়নের শক্তি।
কেনোপনিষদে ও মার্কন্ডেয় পুরানে দেবী কে বিষ্ণু বা ব্রহ্মের শক্তি বলা হয়েছে। যজুর্বেদ ও কেনোপনিষদে উমা র যে উল্লেখ রয়েছে তাতে তাকে জগতকারন ব্রহ্ম বোঝায় না। বিশেষত বেদ এ আর তার কোনো উল্লেখ নেই তাই বেদের পরমতত্ত্ব শক্তি বা দূর্গা এই মতবাদ ভ্রান্ত।
৮) মুন্ডকোপনিষদে ১/২/৪ এ কালী এই শব্দটি আছে। কিন্তু তাকে অগ্নির সপ্তজিহ্বার মধ্যে একটি বলে বর্ননা করা হয়েছে।
কালী করালী চ মনোজবা চ সুলোহিতা যা চ সূধুম্রবর্না।
স্ফুলিঙ্গিনী বিশ্বরুচি চ দেবী লেলায়মানা ইতি সপ্তজিহ্বাঃ। (মুন্ডকোপনিষদে ১/২/৪)
অনুবাদ:- কালী করালী মনোজবা সুলোহিতা সূধুম্রবর্না, স্ফুলিঙ্গিনী, বিশ্বরুচি দেবী এই সাতটি শিখা হবি গ্রহনের জন্য অগ্নির জিহ্বা। অর্থাত পৌরানিক বিশ্বসৃষ্টির কারন আদ্যাশক্তি কালী দেবী কেবল মাত্র হবি গ্রহনের জন্য অগ্নির জিহ্বা!
এর পরের শ্লোকে বলছে
এতেষু যশ্চরতে ভ্রাজমানেষু
যথাকালং চাহুতয়ো হ্যাদদায়ন
তং নয়ন্ত্যেতাঃ সূর্যস্য রশ্ময়ো
যত্র দেবানাং পতিরেকোহধিবাসঃ
(মুন্ডকোপনিষদে ১/২/৫)
অনুবাদ:-এই সাত শিখাযুক্ত অগ্নিতে বিধিঅনুসারে নিত্য আহুতি দিয়ে যে অগ্নিহোত্র করে সে স্বর্গসুখ লাভ করে।
বৃহদারণ্যক উপনিষদ ৪/৪/২১
স বা এষ মহানজ আত্মা যোহয়ং বিজ্ঞানময়ঃ প্রানেষু য এষোহন্তর্হৃদয় আকাশস্তস্মিঞ্ছেতে সর্বস্য বশী সর্বস্যেশানঃ সর্বস্যাধিপতিঃ স ন সাধুনা কর্মণা ভূয়ান্নো এবা সাধুনা কনীয়ানেষ সর্বেশ্বর এষভূ তাধিপতিরেষ ভূতপাল....তমেতং বেদানুবচনেন ব্রাহ্মনা বিবিদিষন্তি যজ্ঞেন দানেন তপসাহনাশকেনৈতমেব বিদিত্বা মুনির্ভবতি। এতমেব প্রব্রাজিনো লোকমিচ্ছন্তঃ প্রব্রজন্তি।
অনুবাদ:- এই যে আত্মা বুদ্ধিতে উপহিত ও ইন্দ্রিয়বর্গের মধ্যে অবস্থিত আছেন তিনি মহান ও জন্মরহিত পরমাত্মাই বটে। ...ইনি সকলের নিয়ামক, সকলের ঈশ্বর, সকলের অধিপতি, ইনি শুভকর্মের দ্বারা মহীয়ান বা অশুভকর্মের দ্বারা হীনতর হন না। কারন ইনি সর্বেশ্বর, জীবসকলের অধিপতি, জীবসকলের পালক।.... ব্রাহ্মণ রা তাকে জানার জন্য বেদশাস্ত্র অধ্যয়ণ করেন, যজ্ঞাদি অনুষ্ঠান তপস্যা দান করেন। তারা এই পরমাত্মাকে জানার জন্যই মুনি হন। পরিব্রাজক গন এই পরমাত্মাকে পাওয়ার ইচ্ছাতেই পরিব্রজ্যা অবলম্বন করেন।
আত্মা বা অরে দ্রষ্টব্যঃ শ্রোতব্যো মন্তব্যো নিদিধ্যাসিতব্যো। ৪/৫/৬
আত্মা সম্পর্কে শ্রবন বিচার দর্শন ও জ্ঞান লাভ করা উচিত।
Next Page>>>