Vishnu is supreme in veda

Vishnu is supreme in veda

৫) বেদ এ কোথায় বলা আছে পরমতত্ত্ব বিষ্ণুতত্ত্ব।
ক) ঋগ্বেদের ঐতরেয় ব্রাহ্মণের প্রথম মন্ত্র১/১/১
ওঁ অগ্নির্বৈ দেবানাম অবমো বিষ্ণুঃ পরমস্তদন্তরেণ সর্বা অন্যা দেবতাঃ
 সায়ণভাষ্য অনুযায়ী অনুবাদ দেবতাদের মধ্যে অগ্নি অধম বা প্রথম। বিষ্ণু পরম অর্থাত উত্তম।  এবং তাদের মধ্যবর্তী অন্য সমস্ত দেবতা।
 সায়নাচার্য্যের টীকা- যোহয়মগ্নিঃ সর্বেষাং দেবানাং প্রথমঃ যশ্চ বিষ্ণুঃ সর্বেষামুত্তমঃ তাবুভৌ দেবানাং মধ্যে দীক্ষাখ্যস্য চ ব্রতস্য পালয়িতারৌ।
তৎ বিষ্ণুঃ প্রথমঃ প্রাপ, স দেবানাং শ্রেষ্ঠোহভবৎ। তস্মাদাহুঃ বিষ্ণুর্দেবানাং শ্রেষ্ঠ ইতি
(শব্দকল্পদ্রুমে অবম শব্দের অর্থ অধমঃ। নিন্দিতঃ।
অবতি অস্মাত আত্মানম অব রক্ষণাদৌ অবদ্যেতি সূত্রেণ অবতেঃ অমঃ প্রত্যয়ো নিপাতিতঃ)
খ)তৈত্তীরিয় সংহিতা ৫/৫/১
অগ্নিরঅবমো দেবানাং বিষ্ণুঃ পরমো
গ) ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ১/১/৪
বিষ্ণুঃ সর্বা দেবতাঃ। অনুবাদ :-বিষ্ণু সর্বদেবময়
ঘ)ঐ.ব্রা১/১/৫
অগ্নিশ্চ হবৈ বিষ্ণুশ্চ দেবানাং দীক্ষাপালৌ
ঐ.ব্রা ১/৩/৪
বৈষ্ণবো ভবতি বিষ্ণুর্বৈযজ্ঞ স্বয়মেবৈনং
তদ্দেবতয়া স্বেন চ্ছন্দসা সম্বর্দ্ধয়ত
বিষ্ণুমন্ত্রে দীক্ষিত ব্যাক্তি বৈষ্ণব। যজ্ঞই বিষ্ণু। সেই বিষ্ণু স্বয়ং এর স্বয়ং। তিনি স্বয়ংই স্বাধীনভাবে সেই পুরুষের(বৈষ্ণবের) বর্ধন করে থাকেন।
ঙ) শতপথ ব্রাহ্মণ ১৪/১/১/৫
যজ্ঞো বৈ বিষ্ণুঃ
যজ্ঞ বিষ্ণুর উদ্দেশ্যই করা হয়। সকল যজ্ঞ মন্ত্র বিষ্ণুর স্তব কীর্তন।
চ) শতপথ ব্রাহ্মণ ১ম কান্ড ১/২/১৩ মন্ত্র
সায়ন ভাষ্য অনুযায়ী অনুবাদ:-যজ্ঞই বিষ্ণু। তিনি দেবগনের এখন এই যে শক্তি রহিয়াছে তার উদ্দেশ্যে পদবিক্ষেপ করিয়াছিলেন। তিনি ভূস্থানকে প্রথম পদের দ্বারা, অন্তরীক্ষ কে দ্বিতীয় পদের দ্বারা, ও দ্যুস্থানকে শেষপদের দ্বারা পালন করিয়াছিলেন। আবার শতপথ ব্রাহ্মণের ১ম কান্ড ৭ম প্রপাঠক ৪র্থ ব্রাহ্মণে:- তিনি যে বিষ্ণুক্রম নামক পদবিক্ষেপ করেছিলেন তার কারন এই যজ্ঞ রূপ বিষ্ণু দেবতাদের এখন যে শক্তি রয়েছে তার উদ্দেশ্যে পদক্ষেপন করেছিলেন। তিনি ভূলোক কে প্রথম পদের দ্বারা, অন্তরীক্ষকে দ্বিতীয় পদের দ্বারা ও দ্বৌকে শেষ পদের দ্বারা পালন করেছিলেন।
ছ) যজ্ঞো বৈ বিষ্ণুঃ তৈত্তীরিয় সংহিতা ২/৬/৪, তৈত্তীরিয় সংহিতা ৭/৪/৪
গীতা ৯/২৪ অহম হি সর্ব যজ্ঞানাং ভোক্তা
অনুবাদ:- আমিই সমস্ত যজ্ঞের ভোক্তা ও প্রভূ।
গীতা ৫/২৯ ভোক্তারং যজ্ঞ তপসাং সর্ব লোক মহেশ্বরং
অনুবাদ:- আমাকে সমস্ত যজ্ঞ ও তপস্যার পরম ভোক্তা সর্বলোকের মহেশ্বর....
মহাভারতে মোক্ষধর্মে বলা হয়েছে বিষ্ণু ই পরম দেবতা ও সকলের আদি।
কেন সৃষ্টং ইদম সর্বং জগত স্থাবর জঙ্গমম
প্রলয়ে চ কমভেতি তন্মে ব্রুহি পিতামহ ১৮১/১
নারায়ণ জগন্মূর্ত্তি অনন্তাত্মা সনাতনঃ ১৮১/১২
ঋষয়ো পিতরো দেবা মহাভূতানি ধাতবঃ
জঙ্গমাজঙ্গমঞ্চেদং জগন্নারায়ণোদ্ভবম। ২২৯ অনুবাক
অনুবাদ:-যুধিষ্ঠির ভীষ্ম দেবকে প্রশ্ন করলেন স্থাবরজঙ্গমাত্মক এই জগত কার থেকে সৃষ্টি হয়ে প্রলয়ে কার মধ্যে প্রবিষ্ট হয়?
সনাতন নারায়ণ এই জগতের অন্তর্যামী অন্তরাত্মা এই জগত তারই মূর্তি।
ঋষিগন পিতৃগন দেব মহাভূতগন ধাতু স্থাবরজঙ্গমাত্মক এই জগত নারায়ণ থেকে উদ্ভূত।
এতৌ দ্বৌ বিবুধশ্রেষ্ঠৌ প্রসাদক্রোধজৌ স্মৃতৌ
তদাদর্শিতপন্থানৌ সৃষ্ট্সংহারকারকৌ (মহাভারত মোক্ষধর্ম ১৬৯/১৯)
অনুবাদ:-এই দুইজন দিব্যপুরুষ (ব্রহ্মা ও রুদ্র) প্রসাদ ও ক্রোধ হতে উৎপন্ন। তাহার (বিষ্ণুর) প্রদর্শিত মার্গে তারা সৃষ্টি ও সংহার করে থাকেন।
এই মহাভারত বাক্যের তাৎপর্য্য নারায়ন ই ব্রহ্মা ও রুদ্রের অন্তরে থেকে তাদের দ্বারা সৃষ্টি সংহারাদি কার্য্য করিয়ে থাকেন।
জ) ঋগ্বেদ ১/১৫৬/২ মন্ত্রে
য: পূর্ব্ব্যায় বেধসে নবীয়সে সুমৎহজানয়ে বিষ্ণবে দদাশতি।
যঃ জাতম অস্য মহতঃ মহি ব্রবৎ সেদু শ্রবঃহভিঃ যুজ্যম চিদভ্যসৎ।।
সায়নভাষ্য অনুযায়ী অন্বয়:- যঃ=যো মর্ত্যঃ। পূর্ব্ব্যায় = নিত্যায়েত্যর্থঃ। বেধসে= বিবিধজগতকর্ত্রে। নবীয়সে= নিত্যনতুনায়। সুমজ্জানয়ে= স্বয়মেবোৎপন্নায় ,সুমৎ স্বয়মিত্যর্থঃ ইতি যাস্কঃ (নিরুক্ত ৬/২২)। বিষ্ণবে= উক্তগুনকায় বিষ্ণু। দদাশতি= হবিরাদিকং দদাতি। জাতম= হিরণ্যগর্ভাদি রূপং জন্ম। মহতঃ মহি= মহানুভাবস্য  মহত পূজ্যং। ব্রবৎ=ব্রূয়াৎ, সংকীর্ত্তয়েৎ। সেদু= সঃ +ইৎ+উম ইতি সোহপি দাতা স্তোতা চ। শ্রবঃহভিঃ=শ্রবোভিরন্নৈঃ কীর্তিভির্ব্বা।যুজ্যম= যুক্তঃ। চিদভ্যসৎ =সর্ব্বৈর্গন্তব্যমেব তৎ পদম আভিষুখ্যেন গচ্ছতি ,প্রাপ্নোতি।
সায়নভাষ্য অনুযায়ী অনুবাদ:- যে ব্যাক্তি প্রাচীন জগতসৃষ্টাদি কর্তৃ, নিত্য নবীন স্বয়ং উৎপন্ন বিষ্ণুকে হবি প্রদান করে। যে ব্যাক্তি মহানুভব বিষ্ণুর কথা বর্ননা করে সে (বিষ্ণু লোকে) সমীপে স্থান লাভ করে।
এই শ্লোকে স্পষ্ট যে বিষ্ণুই স্বয়ং উৎপন্ন কারোর দ্বারা সৃষ্ট নন, সকলের আদি এবং তার ধাম লাভের জন্য উপদেশ করা হচ্ছে।

ঝ) ঋগ্বেদ  ১০/৮২/৬
তমিদগর্ভং প্রথমং দধ্র আপো যত্র দেবাঃ সমগচ্ছন্ত বিশ্বে
অজস্য নাভাবধ্যেকমর্পিতং যস্মিন বিশ্বানি ভুবনানি তস্থূঃ
 অনুবাদ :- সেই অজাত পুরুষের নাভিদেশে যে সৃষ্টি সংস্থাপিত হয়েছিল তাতে সমস্ত ব্রহ্মান্ড অবস্থিত আছে। ইহাই জলগন আপন গর্ভ স্বরূপ ধারন করেছিল। দেবগন এখানেই বসবাস করেন।
ব্রহ্মান্ডের স্রষ্টা পুরুষ যাকে বিশ্বকর্মা পুরুষ বলা হয়েছে তার নাভিতে সমস্ত ব্রহ্মান্ড স্থাপিত বলতে বিষ্ণু কেই সেই জন্মরহিত পুরুষ বোঝাচ্ছে।
মহাভারতে ভীষ্মবাক্যে তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে
অজস্য নাভাব অধ্যেকম যস্মিন বিশ্বম প্রতিষ্ঠিতম
পুষ্করম পুষ্করাক্ষস্য তস্মৈ পদ্মাত্মনে নমঃ
মহাভারতে শান্তিপর্ব/৪৭/৪০ BORI critical edition, শান্তিপর্ব/৪৭/৬০ বাদিরাজ তীর্থ কৃত লক্ষালঙ্কার সং
অনুবাদ :-আমি সেই পদ্মের বন্দনা করি যা জন্মরহিত পদ্মলোচন ভগবানের নাভি থেকে জাত, যাতে সমস্ত ত্রিভূবন অবস্থিত।

ঞ) শুক্ল যজুর্বেদ 31অধ্যায়.22 মন্ত্র। ৩১ অধ্যায়ে পুরুষ সূক্তের মন্ত্র রয়েছে, বিরাট পুরুষ থেকে সমস্ত জগত ও জীবসমূহের উৎপত্তি ইত্যাদি বলে শেষ শ্লোকে বিরাট পুরুষের পরিচয় দেওয়া হয়েছে যে ইনিই বিষ্ণু। ২২ মন্ত্রে
শ্রীশ্চ তে লক্ষ্মীশ্চতে পত্নৌ অহোরাত্রে পার্শ্বে নক্ষত্রাণি রূপমশ্বিণৌ ব্যাত্তম। ইষ্ণন্নিষাপমুং ম ইষাণ সর্বলোকং ম ইষাণ।
অনুবাদ: শ্রী ও লক্ষ্মী সেই বিরাট পুরুষের পত্নী, দিনরাত তার পার্শ্বস্থানীয়, নক্ষত্রগুলি তোমার রূপ, দ্যাবাপৃথিবী তোমার মুখ সদৃশ, পরলোকে আমাদের ইষ্ট হোক, আমরা যেন সর্বলোকাত্মক (মুক্ত) হই।
অথর্ববেদ ৭ম কান্ড ৩য় অনুবাক ১ম সূক্ত ৪-৬ মন্ত্র
বিষ্ণোর্নু কং প্রা বোচং বীর্যাণি যঃ পার্থিবানি বিমমে রজাংসি যো অস্কভায়দুত্তরং সধস্থং বিচক্রমাণস্ত্রেধোরুগায়ঃ। ৪
প্র তদ বিষ্ণু স্তবতে বীর্যাণি মৃগো ন ভীমঃ কুচরো গিরিষ্ঠাঃ পরাবত আ জগভ্যাং পরস্যাঃ। ৫
যস্যোরুষু ত্রিষু বিক্রমণেষ্বধিক্ষয়ন্তি ভূবনানি বিশ্বা
উরু বিষ্ণো বি ক্রমস্বোরু ক্ষয়ায় নস্কৃধি। ৬
সায়ন ভাষ্য অনুযায়ী অনুবাদ- বিষ্ণু র বীরকর্মের কথা বলছি যিনি পৃথিব্যাদি লোকসকল অথবা পার্থিব অগ্নি বিদ্যুৎ ও সূর্যরূপ জ্যোতি নির্মান করেছেন। যিনি পৃথিবী অন্তরীক্ষ ও দ্যুলোকে পাদবিক্ষেপ করে স্বর্গলোককে ধারণ করেছেন।  যিনি মহাত্মা গনের দ্বারা স্তূত সেই বিষ্ণুর বীর্য্য বলছি। যে মহানুভব বিষ্ণুর বীরকর্ম লক্ষ্য করে স্তূতি করা হচ্ছে, যিনি সিংহের মত ভয়ঙ্কর ভূমিতে ও পর্বতে সঞ্চরণশীল, সে বিষ্ণু অতিদূরদেশ হতেও আসুক। যার বিস্তীর্ণ পাদবিক্ষেপস্থানে সকল প্রানী অবস্থিত( প্রথম বিক্রমে পার্থিব, দ্বিতীয়ে অন্তরীক্ষবাসী ও তৃতীয়ে দিব্য প্রাণীসকল বাস করছে)
শতপথ ১ম কান্ড/২য় অধ্যায়/৫ম ব্রাহ্মণ ও তৈত্তীরিয় ব্রাহ্মণে ৩/২/৯/৭
ঋগ্বেদ ৬মন্ডল ৪৯ সূক্ত ১৩
রজাংসি বিমমে পার্থিবানি ত্রিশ্চিদ্বিষ্ণুর্মনবে বাধিতায়
সায়ন ভাষ্য অনুযায়ী অনুবাদ :- যে বিষ্ণু উপদ্রুত মনুর জন্য ত্রিপাদ বিক্রম দ্বারা পার্থিব লোক সকল নির্মান করেছিলেন। সেই বিষ্ণু কর্তৃক প্রদত্ত পার্থিব লোকে বাস করে আমরা যেন ধন দেহ ও পুত্র দ্বারা আনন্দ অনুভব করি।
ট)  ঋগ্বেদ ৭/১০১/৫
প্রততে অদ্য শিপিবিষ্ট নামার্য্যঃ শংসামি বয়ূনানি বিদ্বান
তং ত্বা গৃণামি তবসমতব্যান ক্ষয়ন্তমস্য রজসঃ পরাকে।।
সায়ন ভাষ্য:- হে শিপিবিষ্ট রশ্মিভিরাবিষ্ট বিষ্ণো তে তব তৎ প্রসিদ্ধং বিষ্ণুরিতি প্রখ্যাতং নাম। অর্য্যঃ স্বামী স্তুতিনাং হবিষাং বা।  তথা বয়ূনানি জ্ঞাতব্যান্যর্থজাতানি বিদ্বান জানন্নতং অদ্যেদানীং প্রশংসামি।  প্রকর্ষেণ স্তৌমি।।তবলং প্রবৃদ্ধং তং ত্বা ত্বাং বিষ্ণুং অতব্যান অতবীয়ান অবৃদ্ধতরোহহং গৃণামি স্তৌমি। কীদৃশং অস্য রজসো লোকস্য পরাকে দূরদেশে ক্ষয়ন্তং নিবলন্তম।
অনুবাদ:- হে শিপিবিষ্ট আজ আমরা স্তুতির স্বামী ও জ্ঞাতব্য অবগত হয়ে তোমার সেই প্রসিদ্ধ নাম কীর্তন করব। তুমি প্রবৃদ্ধ ও আমরা অবৃদ্ধ হলেও তোমার স্তুতি করব যেহেতু তুমি রজোলোকের পারে বাস কর। (বিরজা অতিক্রম করে পরব্যোমে বৈকুন্ঠে বিষ্ণু র স্থান এরকম পুরানে ও বর্ননা পাওয়া যায়।  বিরজা শব্দের অর্থ রজ তম গুনের উর্দ্ধে)
কিমিত্তে বিষ্ণো পরিচক্ষ্যং ভৃৎ প্রযদ্ববক্ষে শিপিবিষ্টো অস্মি। ৭/১০০/৬ অনুবাদ :- হে বিষ্ণু এই শিপিবিষ্ট নাম আপনি গ্রহন করুন।
বষট তে বিষ্ণবাস আ কৃণোমি তন্মে জুষস্ব শিপিবিষ্ট হব্যং ৭/১০০/৭ অনুবাদ:- হে বিষ্ণু তোমার উদ্দেশ্যে বষটকার করিতেছি, হে শিপিবিষ্ট আমার সেই হব্য সেবা কর।
শিপিবিষ্ট নামের কারন মহাভারতে শান্তিপর্বে ৩৪২/৭১ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
শিপিবিষ্টেতি চাখ্যায়ং হনিরোমা চ যো ভবেত।
তেনাবিষ্টং তু যত্কিঞ্চিচ্ছিপিবিষ্টেতি চ স্মৃতঃ
অনুবাদ :- আমি শিপি অর্থাৎ তেজ প্রকাশ করে সমস্ত পদার্থে প্রবেশকরি তাই আমার নাম শিপিবিষ্ট হয়েছে।
ব্রহ্মান্ডে সমস্ত কিছুতে অবস্থিত, বেদ এ বর্নিত, সেই পরমাত্মা বিষ্ণুই। সকলের অন্তর্যামী বলে তার নাম শিপিবিষ্ট।
৫) পুরুষসূক্তে পুরুষ কে?
পুরুষসূক্ত সকলবেদ এ রয়েছে ঋকবেদ এ ১০ম মন্ডলের ৯০ সূক্ত, শুক্ল যজুর্বেদের ৩১ অধ্যায়, কৃষ্ণ যজুর্বেদের তৈত্তিরীয় আরন্যকে ৩/১২/১৩, সামবেদের ৬/৪ ও অথর্ববেদের ১৯/৬। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সূক্ত।
পুরুষ সূক্তের পুরুষ হলেন ভগবান বিষ্ণু। তা এই শ্লোক গুলিতে বলা হয়েছে
ত্রিপাৎ উর্দ্ধং উদৈৎ পুরুষঃ পাদোহস্যেহানবৎ পুনঃ
ততো  ব্যাক্রামৎ সাশনানশনে অভি।। ঋক১০/৯০/৪, যজু ৩১/৪
সায়ন ভাষ্য অনুযায়ী অনুবাদ :- ত্রিপাদ পুরুষ উর্দ্ধে অর্থাৎ পরব্যোমে থাকলেও এক অংশের দ্বারা সর্বত্র চেতন ও অচেতন বস্তুতে ব্যাপ্ত হয়ে আছেন।
"ত্রিপাদ বিস্তার কারী" ও "উরুক্রম" এই শব্দ ঋগ্বেদে বিষ্ণু কে বোঝাতে ব্যাবহার করা হয় তা বহু মন্ত্রে দেখানো হয়েছে । যেমন ১৫৪ সূক্তের ২য় মন্ত্রে দেখি বিষ্ণুর ত্রিপাদেই সমস্ত জগত অবস্থিত। তাই বিষ্ণু ই পুরুষ সূক্তের পরম পুরুষ পরবর্তী মন্ত্র গুলিতে বলা হয়েছে তারদ্বারাই জগত ব্রহ্মান্ড চতুর্দশ ভুবন, কাল বর্ষ মাস ঋতু দেবতা পশুও মনুষ্যগন বেদ, গায়ত্রী, ছন্দ, বর্নাশ্রম ধর্ম ইত্যাদি উৎপন্ন হয়। অতএব বেদ এ পরমতত্ত্ব একজনই বিষ্ণু।
শ্রীমদভাগবতম এই মন্ত্রের অর্থ ব্যাখ্যা করেছে
বিক্রমো ভূর্ভূবঃ স্বশ্চ ক্ষেমস্য শরণস্য চ
সর্ব্বকাম বরস্যাপি হরেশ্চরণ আস্পদম ভাঃ২/৬/৭
সেই পুরুষের পাদবিক্ষেপ ভূর্লোক, ভূবর্লোক ও স্বর্লোকের আশ্রয়। সেই হরির চরণ, কল্যাণ শরণ  সর্ব্ববিধ কাম ও সকল প্রকার বরণের আশ্রয় স্থল।
যজ্ঞেন যজ্ঞমযজন্ত দেবাস্তানি ধর্ম্মাণি প্রথমান্যাসন
তে হ নাকং মহিমানঃ সচন্ত যত্র পূর্ব্বে সাধ্যা সন্তি দেবাঃ ১০/৯০/১৬
সায়ন ভাষ্য অনুযায়ী অনুবাদ:- দেবতারা যজ্ঞদ্বারা যজ্ঞ সম্পাদন করলেন। উহাই সর্ব্বপ্রথম ধর্মানুষ্ঠান। যে স্বর্গলোকে প্রধান প্রধান দেবতারা আছেন মহিমান্বিত দেবতাবর্গ সেই স্বর্গলোক প্রতিষ্ঠা করলেন।
মন্ত্রব্যাখ্যা:- দেবগন যজ্ঞের দ্বারা যজ্ঞপুরুষ কে পূজা করেছিলেন। বেদ এ বলা হয়েছে যজ্ঞপুরুষ হলেন বিষ্ণু। যজ্ঞো বৈ বিষ্ণু (তৈত্তীরিয় সংহিতা ১/৭/৪/৪) অতএব পুরুষ সূক্তে এই পুরুষ হলেন বিষ্ণু।
শ্রীমদভাগবতমে এই মন্ত্রটির ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে যদাহস্য নাভ্যান্নলিনাদহমাসং মহাত্মনঃ ২/৬/২৩-
নাবিদংযজ্ঞসম্ভারান পুরুষাবয়বানৃতে।। ২৩
অনুবাদ:-হে নারদ যখন আমি সেই বিরাট পুরুষের নাভিকমল থেকে উৎপন্ন হলাম তখন সেই পুরুষের অবয়ব ভিন্ন আর পৃথক যজ্ঞ সম্ভার দেখতে পেলাম না।
তেষু যজ্ঞস্য পশবঃ সবনষ্পতয়ঃ কুশাঃ
ইদঞ্চ দেবযজনং কালশ্চোরুগুণান্বিতঃ।। ২৪
অনুবাদ:- তখন যজ্ঞীয় পশু, যূপ, কুশ, যজ্ঞভূমি, এবং বহুগুনান্বিত বসন্তাদিকাল এই সকল নিত্যসিদ্ধ যজ্ঞসম্ভার সেই পুরুষের অবয়ব দ্বারা সম্পাদন করলাম।
ইতি সম্ভৃতসম্ভারঃ পুরুষাবয়ৈবরহম
তমেব পুরুষং যজ্ঞং তেনৈবাযজমীশ্বরম।। ২৮
অনুবাদ:- এইরূপে সেই পুরুষের অবয়ব দ্বারা যজ্ঞসম্ভার সম্পাদন করে তার দ্বারাই আমি যজ্ঞেশ্বর পুরুষের উদ্দেশ্যে যজ্ঞ করেছি।
শুক্ল যজুর্বেদে ও এই পুরুষসূক্ত আছে সেখানে ৩১/২২ মন্ত্রে "শ্রীশ্চতে লক্ষ্মীশ্চতে পত্নৌ" বলা হয়েছে অনুবাদ:- শ্রী ও লক্ষ্মী যার পত্নী। ইহা বিষ্ণু কেই নির্দেশ করে।
৬) ঋগ্বেদে বিষ্ণুই পরম তত্ত্ব নিরূপন করে, বিষ্ণুর সেই পরমপদ ই সম্বন্ধ তত্ত্ব ১/২২/২০ ইত্যাদি মন্ত্রে বলে তারপর প্রয়োজন ও অভিধেয় সম্পর্কে বলা হচ্ছে।
ক) যথা ঋগ্বেদে প্রয়োজন তত্ত্ব
তদস্য প্রিয়মভি পাথো অশ্যাং নরো যত্র দেবযবো মদন্তি।
উরুক্রমস্য স হি বন্ধুরিত্থা বিষ্ণোঃ পদে পরমে মধ্ব উৎসঃ ১/১৫৪/৫
সায়ন ভাষ্য অনুযায়ী অনুবাদ:-দেবাকাঙ্খী মনুষ্যগন যে প্রিয় পথ প্রাপ্ত হয়ে হৃষ্ট হন। আমি সেই পথ যেন প্রাপ্ত হই। উরুবিক্রমী বিষ্ণুর পরম পদে মধুর উৎস। তিনি প্রকৃতই বন্ধু।
সায়ন ভাষ্য:-
মাধবো মধুঃ মহাভারতে অনুশাসন পর্ব ১৪৯/৩১
১/৭৫/৫ ঋকমন্ত্রে সাধনার লক্ষ্য বলাহয়েছে
প্রিয়, ঋত(সত্য), বৃহৎ। তাই বিষ্ণুতত্ত্ব ই ভক্তির বিষয়
খ) ঋগ্বেদে অভিধেয় তত্ত্ব বা সাধন সম্পর্কে বলা হয়েছে
বৈষ্ণবো ভবতি বিষ্ণুর্বৈযজ্ঞ স্বয়মেবৈনং
তদ্দেবতয়া স্বেন চ্ছন্দসা সম্বর্দ্ধয়ত ঐ.ব্রা ১/৩/৪
২ অষ্টক ২ অধ্যায় ২৬
বিষ্ণুমন্ত্রে দীক্ষিত ব্যাক্তি বৈষ্ণব। যজ্ঞই বিষ্ণু। সেই বিষ্ণু স্বয়ং এর স্বয়ং। তিনি স্বয়ংই স্বাধীনভাবে সেই পুরুষের(বৈষ্ণবের) বর্ধন করে থাকেন।
শতপথ ব্রাহ্মণে স হোবাচ যাজ্ঞবল্ক্যস্তৎ পুমানাত্মহিতায় প্রেমণা হরিং ভজেৎ। ভক্তিসন্দর্ভে ২৩৪ অনুচ্ছেদ ধৃত শতপথব্রাহ্মণ মন্ত্র
জীবগোস্বামী কৃত ব্যাখ্যা:- প্রেমণা প্রীতিমাত্রকামনয়া যদাত্মহিতং তস্মৈ ইত্যর্থঃ।
অর্থাৎ মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য বলেছেন মনুষ্যের আত্মমঙ্গল ভগবানের প্রীতিমাত্র কামনায় তার জন্য প্রেমের সাথে শ্রীহরিকে ভজনা করবেন।
ঋগ্বেদ ১মন্ডল ১৫৬ সূক্ত ৩ মন্ত্র
তমু স্তোতারঃ পূর্ব্যং যথা বিদ ঋতস্য গর্ভং জনুষা পিপর্তন।
আস্য জানন্তো নাম চিদবিবক্তন মহস্তে বিষ্ণো সুমতিং ভজামহে
সায়ন ভাষ্যের অনুবাদ হে স্তোতৃগন তোমরা সেই বিষ্ণু কে যতটুকু জান, তদনুরূপ স্তোত্রাদিদ্বারা তাকে প্রীত কর। তিনি সকলের আদি, তিনি যজ্ঞরূপে অবস্থিত, তিনিই সর্বাগ্রে জল সৃষ্টি করেছেন।  তার অনুগ্রহ হলেই তার স্তুতি করতে পারা যায়।  তার নামই সকলের উপাস্য ও জ্যোতির্ময় সেই নামকে সকলপ্রকার পুরুষার্থ সিদ্ধির উপায় জেনে তার উচ্চারন করতে থাক।  হে বিষ্ণো এভাবে তোমার নাম করতে করতে আমরা তোমারই কৃপায় তোমার স্বরূপ সাক্ষাতকার রূপ সুমতি লাভ করতে সমর্থ হব।
ভগবতসন্দর্ভে শ্রীলজীবগোস্বামীপাদ কৃত এই মন্ত্রটির দ্বিতীয়ার্ধের ব্যাখ্যা:- হে বিষ্ণো। তে তব নাম চিৎ চিৎস্বরূপম, মহঃস্বপ্রকাশরূপম, তস্মাৎ অস্য নাম্নঃ আ ঈষদপি জানন্তঃ, ন তু সম্যক উচ্চারমাহাত্ম্যাদিপুরস্কারেণ। তথাপি বিবক্তন ব্রুবাণাঃ কেবলং তদক্ষরাভ্যাসমাত্রং কুর্বাণাঃ সুমতিং তদ্বিষয়াং বিদ্যাং ভজামহে প্রাপ্নুমঃ। ৪৬ অনুচ্ছেদ।
অনুবাদ:- হে বিষ্ণো তোমার নাম চিৎ অর্থাৎ চৈতন্যস্বরূপ এবং সেজন্য তা মহঃ অর্থাৎ স্বয়ংপ্রকাশ।  সেই নামের ঈষৎ মহিমা জেনেও অর্থাৎ উচ্চারণাদির মাহাত্ম্যাদি পূর্ণভাবে না জেনেও যদি অক্ষরমাত্র উচ্চারণ করা হয় তবে তোমার বিদ্যা বা সাক্ষাতকার লাভ করতে সমর্থ হব।
ঋগ্বেদ ৭/১০০/৩ ও তৈত্তীরিয় ব্রাহ্মণে ২/৪/৩/৫ ভগবানের নাম মাহাত্ম্য বলা হয়েছে
 ঋগ্বেদ ৭ম মন্ডল ১০০ সূক্ত ৩য় মন্ত্র
ত্রির্দেব পৃথিবীমেষ এতাং বিচক্রমে শতর্চসং মহিত্বা।
প্রবিষ্ণুরস্ত তবসস্তবীযান ত্বেষাং হ্যস্য স্থবিরস্য নাম।।
সায়ন ভাষ্য অনুযায়ী অনুবাদ:-স্বমহিমায় লোকত্রয় কে যে বিষ্ণু পরিব্যাপ্ত করেছেন, যিনি প্রাচীনদেরও প্রাচীন, সেই বিষ্ণু কে সকলের প্রভূ রূপে ও তার নাম কে জ্যোতির্ময় রূপে বলা হয়েছে।
Next page>>>