Radha in veda and purana

Radha in veda and purana

Radha in veda and purana
রাধারানীর লীলা ও রাধাতত্ত্ব অনুভব করা দুরূহ বিষয়। এই গ্রন্থে আমি তাই রাধাতত্ত্ব ও তার মহিমা অনুভব করার চেষ্টাও করিনি, তা অনুভবী বৈষ্ণব গনের পক্ষেই সম্ভব। কেবল রাধারানীর কথা প্রামানিক শাস্ত্রে কোথায় কোথায় পাওয়া যায় তা অনুবাদ সহ উল্লেখ করেছি মাত্র। শাস্ত্র প্রমানের সাথে ইতিহাসের প্রমান ও দিতে হয়েছে যা প্রমান করে খ্রীষ্টের জন্মের বহুশতাব্দী পূর্বেই রাধা সহ গোপীজনবল্লভের উপাসনা হত। ইতিহাস থেকে প্রমান দেওয়ার আরো কারন এই যে বর্তমানে অনেক পন্ডিতেরা ও মনে করেন (যাদের মধ্যে বাংলার একজন সাহিত্যসম্রাট ও আছেন) যে চৈতন্যমহাপ্রভূর মনগড়া এই রাধাকৃষ্ণ উপাসনা ও গোপীদের সাথে কৃষ্ণের রাসলীলা কোনো প্রামানিক শাস্ত্রে নেই, মহাপ্রভূ জয়দেব বড়ূচন্ডীদাস, বিদ্যাপতি, চন্ডীদাসের কবিতা থেকে রাধা চরিত্রের উপাদান সংগ্রহ করে রাধা কে সর্বেশ্বরী বানিয়েছেন।
কি কারনে জানিনা বর্তমান সময়ে অনেকে এও ধারনা করেন যে রাধারানীর নাম কোনো শাস্ত্রে নেই, তার কোনো অস্তিত্ব ও নেই, পরবর্তী কালে কৃষ্ণের সঙ্গে গোপীদের কাহিনী জড়িয়ে কৃষ্ণ চরিত্র কে বিকৃত করা হয়েছে। মুসলিম শাসন কালে মুসলিম শাসকদের আনুকূল্যে কৃষ্ণ চরিত্র কে বিকৃত করার জন্য ব্রহ্মবৈবর্ত পুরান রচিত হয়। সেখানে রাধাকৃষ্ণের কামলীলা লিখে কৃষ্ণচরিত্র কে বিকৃত করা হয়েছে। মুসলমানরা হিন্দুর মন্দির ধ্বংস করেই হিন্দুধর্মকে দমন করতে পছন্দ করে তারা হিন্দুশাস্ত্র রচনা করতে উৎসাহ দেন কিনা জানিনা।  তবে ইসলাম শাসনকাল বা চৈতন্য মহাপ্রভূর আবির্ভাবের বহু আগেই রাধাকৃষ্ণ যুগল উপাসনার কথা ইতিহাস বলে। গাথাসপ্তশতী, ভাসের রচিত বালচরিত তার প্রমান। বৃহদারণ্যক উপনিষদের ৬ষষ্ঠ আরণ্যকের ৪র্থ ব্রাহ্মণে পিতা মাতা কিভাবে মৈথুন করবে ও পুত্র উৎপাদন করবে তা বলা হয়েছে। এখন কেউ এটা ও বলতে পারে এই অংশ টি প্রক্ষিপ্ত, বেদ কে অপবিত্র করার জন্য কেউ এসব প্রক্ষিপ্ত করেছে। বা বৃহদারণ্যক উপনিষদ মুসলমান মৌলবী উলেমারা বসে লিখেছে।
কৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান হয়েও গোপীদের সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক করেন কি করে? রাসলীলা শোনার পর পরীক্ষিত মহারাজের ও মনে এই প্রশ্ন এসেছে
সংস্থাপনায় ধর্ম্মস্য প্রশমায়েতরস্য চ।
অবতীর্ণো হি ভগবানংশেন জগদীশ্বরঃ।। ৩৩/২৬
স কথং ধর্ম্মসেতুনাং বক্তা কর্ত্তাভিরক্ষিত।
প্রতীপমাচরদব্রহ্মন পরদারাভিমর্শনম।। ৩৩/২৭
মহারাজ পরীক্ষিত বললেন হে ব্রহ্মন জগদীশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ধর্মসংস্থাপন ও অধর্ম বিনাশের জন্য নিজ অংশ সহ অবতীর্ণ হয়েছেন। তিনি কি করে পরদারাদি আলিঙ্গন রূপ প্রতিকূল কার্যাদি করেন?
তার উত্তরে শুকদেব বলছেন ৩৩/৩৫
গোপীনাং তৎপতীনাঞ্চ সর্বেষামেব দেহিনাম।
যোহন্তশ্চরতি সোহধ্যক্ষঃ ক্রীড়নে নেহ দেহভাক।।
অনুগ্রহায় ভূতানাং মানুষং দেহমাশ্রিতঃ।
ভজতে তাদৃশীঃ ক্রীড়া যাঃ শ্রুত্বা তৎপরোভবেৎ।।
গোপীদের ও তাদের স্বামীদের ও সকল জীবের হৃদয়ে অন্তর্যামী রূপে যিনি বিরাজমান তিনি আলিঙ্গন করলে দোষ কি, আর
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভক্তদের প্রতি অনুগ্রহ করার জন্যই গোলকগত রাসলীলা প্রপঞ্চে প্রকট করেছেন যা শ্রবন করে মনুষ্যদেহধারী প্রানীগন ভগবৎসেবাপর হয়।
বিষ্ণু পুরানে ৫/১৩/৫৯-৬০ এও পরাশর মুনি বলছেন পরমাত্মা কৃষ্ণ সকল জীবের অন্তরে বাইরে ব্যাপ্ত হয়ে রয়েছেন তাই তার কাছে কে পর কে পৃথক?
সোহপি কৈশোরকবয়ো মানয়ন মধূসুদনঃ।
রেমে তাভিরমেয়াত্মা ক্ষপাসু ক্ষপিতাহিতঃ।।৫৯
তদ্ভর্ত্তৃয় তথা তাসু সর্ব্বভূতেষু চেশ্বরঃ।
আত্মস্বরূপরূপোহসৌ ব্যাপ্য সর্ব্বমবস্থিতঃ।। ৬০
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সেই সকল গোপীদের স্বামীদের মধ্যে গোপীগনে এবং সর্ব্বভূতেই আত্মস্বরূপ বায়ুর ন্যায় ব্যাপ্ত হয়ে অবস্থিত আছেন, তিনি ভগবান, যেমন সর্বভূতসমূহে আকাশ অগ্নি পৃথিবী, জল,  বায়ু, ব্যাপ্ত হয়ে আছে, তিনিও সেভাবে সকল বস্তুতে ব্যাপ্ত হয়ে অবস্থান করছেন।
১) রাধাকৃষ্ণ যুগল উপাসনা খ্রীষ্টের জন্মের ও বহু শতাব্দী প্রাচীন। এই বিষয়ে প্রমান:-
ক) ২৩৫-২২৫ খ্রীঃপূঃ এ রচিত রাজা হাল সাতবাহনের গাথাসপ্তশতী তে রাধা সহ কৃষ্ণের উপাসনার কথা পাওয়া যায়
অজ্জপি বালো দামোঅরোত্তি ইঅ জপ্পিঅই জসোআএ। কণ্হ মুহ পেসিঅচ্ছং নিনুঅং হসিঅং বঅ বহূহিং।। ২/১২
অদ্যপি বালো দামোদর ইতি জল্প্যতে যশোদয়া
কৃষ্ণ মুখপ্রেষিতাক্ষং নিভৃতঃ হসিতং ব্রজবধূভিঃ
মাতা যশোদা মাতৃস্নেহে উদ্বেলিত হয়ে বলছেন কৃষ্ণ আমার এখনো দুগ্ধপোষ্য শিশু। এই কথা শুনে কৃষ্ণের মুখের দিকে আড় চোখে তাকিয়ে ব্রজরামা গন মুখ লুকিয়ে হাসছিল।
মুহ মারুএণ তং কহ্ণ গোরঅং রাহিআএ অবণেন্তো। এদাণং বল্লবীণং অণ্ণাণং বি গোরঅং হরসি।। ১/৮৯
মুখমারুতেন ত্বং কৃষ্ণ গোরজো রাধিকায়া অপনয়ন
এতাসাং বল্লবীনামন্যাসামপি গৌরবং হরসি
অনুবাদ:-  যেদিন কেশী দৈত্য বিনাশী কৃষ্ণ, রাধার চোখে পড়া ধুলো ফুঃ দিয়ে উড়িয়ে দিতে গিয়ে রাধার মুখ চুম্বন করেছিলেন সেদিন ব্রজরামা দের গর্ব ধুলোয় মিশে গেছিল।
খ) গুপ্তযুগের কবি কালিদাসের মেঘদূতে পাই বর্হেণেব স্ফুরিতরুচিনা গোপবেশস্য বিষ্ণোঃ পূর্বমেঘ/১৫।
বৃন্দাবনের কথা ও তার রচনায় পাওয়া যায়।  কালিদাস তার স্বয়ংবরা নায়িকা কে উপদেশ দিয়েছেন শূরসেন রাজ সুষেণ কেই তুমি বেছে নাও তারপর বৃন্দাবনের বনে প্রবেশ করে আপন যৌবনশ্রী সফল কর। বৃন্দাবনে চৈত্ররথাদনূনে নির্বিশ্যতাং সুন্দরী যৌবনশ্রীঃ রঘুবংশ ৬/৫০। পন্ডিতেরা রাসলীলা কারী কৃষ্ণ কে প্রক্ষিপ্ত মনে করেন কিন্তু কালিদাস বৃন্দাবনে গোপীদের সাথে কৃষ্ণের লীলা বিলাস মাথায় রেখেই এই শ্লোকটি লিখেছিলেন।
গ) দ্বাদশ শতাব্দীর ভোজবর্মার বেলাভ তাম্রশাসনে
সোপীহ গোপীশতকেলিকারঃ কৃষ্ণো মহাভারতসূত্রধারঃ। অর্ঘ্যঃ পুমানংশকৃতাবতারঃ প্রাদুর্বভূবোদ্ধৃত ভূমিভারঃ।।

২) মহাভারত
মহাভারতে কৃষ্ণ যে নন্দগোপকুমার তার কথা রয়েছে। ৪০ অধ্যায় সভাপর্ব  ৪-৬ শ্লোক
পূতনাঘাত পূর্ব্বাণি কর্ম্মাণ্যস্য বিশেষতঃ
ত্বয়া কীর্ত্তয়তাস্মাকং ভূয়ঃ প্রব্যথিতং মনঃ।।৪
অবলিপ্তস্য মূর্খস্য কেশবং স্তোতুমিচ্ছতঃ
কথং ভীষ্ম। নতে জিহ্বা শতধেয়ং বিদীর্য্যতে।।৫
যত্র কুৎসা প্রযোক্তব্যা ভীষ্ম। বালতবৈর্নরৈঃ
তমিমং জ্ঞানবৃদ্ধঃ সন্ গোপং সংস্তোতুমিচ্ছসি।।৬
অনুবাদ:- ভীষ্ম তুমি কৃষ্ণের পূতনাবধ প্রভৃতি কার্য্যের বিশেষভাবে উল্লেখ করিয়া আমাদের মনে অত্যন্ত দুঃখ দিয়েছ।
ভীষ্ম তুমি গর্ব্বিত মুর্খ  এবং কৃষ্ণেরই স্তব করিবার ইচ্ছা করিতেছ অতএব তোমার এই জিহ্বাটা কেন শতচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছেনা?
ভীষ্ম অতিবালকেরও যাকে নিন্দা করা উচিত তুমি জ্ঞানবৃদ্ধ হয়ে সেই গোয়ালা টার স্তব করছ।
৬নং শ্লোকের নীলকন্ঠ কৃত টীকা
যত্রেতি। যত্র সগুনে কুৎসা নিন্দা বালতবৈঃ আপাতত উপনিষন্মাত্রাধ্যেতৃভির্বটুভিঃ। বালেতরৈবিতি পাঠে বৃদ্ধৈবপি। "যন্মনসা ন মনুতে যেনাহুর্মনোহমতম। তদেব ব্রহ্ম ত্বং বিদ্ধি নেদং যদিদমুপাসতে।।" ইত্য ব্রহ্মত্বে কুৎসা প্রযোক্তব্যা। তমিমং গোপাযতীতি গোপঃ, তং গোপং ব্যধিকরনে দ্বিতীয়ে। তস্য শবলস্য গূহনকর্ত্তাবং শুদ্ধং সংস্তোতুং সম্যক প্রস্তোতুমিচ্ছসি। প্রার্থনায়াং পঞ্চমো লকারঃ। তং প্রস্তোতুম ইচ্ছাং কুর্ব্বিত্যর্থঃ।৬।
সভাপর্ব্বে ৪১ অধ্যায়ে১ম থেকে ৮ম শ্লোকে শিশুপাল বলছে হে ভীষ্ম দাস জাতির ছেলের সাথে যুদ্ধ করতে চায়নি বলেই জরাসন্ধ তার কাছে হেরে গেছে, তুমি কি জানো, যখন ঐ গোয়ালার ছেলে স্নাতক ব্রাহ্মনের ছদ্মবেশে গেছিল মগধে , জরাসন্ধ তার পা ধোয়াতে গেলে ঐ গয়লার ছেলে ব্রাহ্মন জরাসন্ধের হাতে পা ধোয়াতে সাহস পায়নি, আর ক্ষত্রিয় কুলে জন্মে তুমি তার প্রশংসা করছ। ১৩
এই সব স্থানে কৃষ্ণের জন্ম যে গোপকুলে তা বলা হয়েছে। আর গোপ রা থাকলে গোপী রা কেন মিথ্যা হবে? গোপী দের কথা ও পাওয়া যায় দ্রৌপদীর বস্ত্রহরনের সময় দ্রৌপদী কৃত কৃষ্ণ স্তবে।
মহাভারত সভাপর্ব ৬৫ অধ্যায় ৪১থেকে ৪৫ শ্লোকে।  কেউ এই শ্লোক প্রক্ষিপ্ত বলতে পারে তাই মহাভারতের একমাত্র টীকাকার নীলকন্ঠের ভারত ভাব দীপ টীকা ও উল্লেখ করলাম।
আকৃষ্যমাণে বসনে দ্রৌপদ্যা চিন্তিতো হরিঃ।
গোবিন্দ দ্বারকাবাসিন কৃষ্ণ গোপীজনপ্রিয়ঃ।।৪১
কৌরবৈঃ পরিভূতাং মাং কিং ন জানাসি কেশব।
হে নাথ রমানাথ ব্রজানাথার্ত্তিনাশন।। ৪২
কৌরবার্ণবমগ্নাং মামুদ্ধরস্ব জনার্দ্দন।
কৃষ্ণ কৃষ্ণ মহাযোগিন বিশ্বাত্মন বিশ্বভাবন।। ৪৩
প্রপন্নাং পাহি গোবিন্দ কুরুমধ্যেহবসীদতীম।
ইত্যনুস্মৃত্য কৃষ্ণং সা হবিং ত্রিভূবনেশ্বরম।
প্রারুদদুঃখিতা রাজন মুখমাচ্ছাদ্য ভামিনী।। ৪৫

নীলকন্ঠ কৃত ভারতভাবদীপ টীকা:-  হরিঃ সর্ব্বদুঃখসংহর্ত্তা খল সংহর্ত্তা বা। গোবিন্দো গবামিন্দ্রিয়ানাং বিন্দতীতি বিন্দো লব্ধা। সর্ব্বেন্দ্রিয়চালকত্বাৎ সন্নিহিতো মাং কথং ন জানাসি। সন্নিহিতোহপ্যশক্তঃ কিং কুর্য্যাদত আহ দ্বারকাবাসিন্নিতি। একবাত্রেণৈব স্বীযানাপদঃ সকাশাদুদ্ধর্ত্তুং সমুদ্রমধ্যে পুরীনির্ম্মাণং তাং পুরীং প্রতি সর্ব্বনগবস্য যুগপৎ প্রাপনঞ্চ কুর্ব্বতস্তব মম ত্রাণমীষৎকবমিত্যর্থঃ। ননু সন্নিহিতঃ শত্রুশ্চ কিমিতি দুষ্টাননুগৃহ্নীয়াদত আহ কৃষ্ণ। স্মৃতমাত্র এব সর্ব্বদেষকর্ষণ।  ননু তথাপি অনৃতং সাহসং মায়া মুর্খত্বমতিলোভতা।  অশৌচং নির্দ্দযত্বঞ্চ স্ত্রীণাং দোষাঃ স্বভাবজা। ইত্যুক্তেঃ স্বাভাবিক স্ত্রীদোষা নাপনেতুং শক্যো ন হ্যাশীবিষদ্রংষ্ট্রা অমৃতস্রবা কর্ত্তুং শক্যেত্যত আহ গোপীজনপ্রিয়।  নরেষু তাবদত্যন্তং নীচা গোপাস্তৎস্ত্রিযস্তু ততোহপি নীচতবাস্তাস্বপি তবানুগ্রহো দৃশ্যতে। কিমুত মাদৃশ্যাং ত্বদেকশবণাযাম, ত্বযৈব রাজসূয়াভিষেকেণানুগৃহীতাযামিতি ভাবঃ। ৪১
কেশব। কশ্চ অশ্চ ঈশশ্চ ব্রহ্মবিষ্ণুরুদ্রাস্তৈঃ সহ বাতি গচ্ছতীতি কেশব ব্রহ্মাদীনামপি প্রবর্ত্তক। তদাত্মকেতি। অতঃ সর্ব্বথা ত্বং মামনুগৃহ্নীষ্বেতি ভাবঃ।  আর্ত্তিনাশনেতি গোবর্দ্ধনোদ্ধবণদাবাগ্নিপানাদিনা ব্রজবাসিনামার্ত্তিস্তযৈব যথা নাশিতা তথা মমাপ্যার্ত্তিং নাশয়েতি ভাবঃ।। ৪২ বিশ্বাত্মন বিশ্বান্তর্যামিন্নিত্যর্থঃ বিশ্বভাবন। বিশ্বকর্ত্তঃ অন্তর্যামিত্বেন শত্রুং বাস্মিন অর্থে উদাসীনং কুরু।  অথবা বিশ্বকর্ত্তৃত্বেন বস্ত্রাণি বহূনি সমর্পয়েতি ভাবঃ।। ৪৩ ভামিনী দীপ্তিমতী, স্বস্মিন ভগবদনুগ্রহেনিশ্চযাচ্ছত্রূন ন গনযন্তীত্যর্থঃ।। ৪৪ গহ্ববিতঃ করুনাতিশয়াদগদগদকন্ঠঃ।।  ৪৫

৩) হরিবংশ
মহাভারতের খিল বা পরিশিষ্ট অংশ হরিবংশ।  বিভিন্ন পুরানে বিভিন্ন কল্পের কথা বা রাজবংশের কথা থাকে, মহাভারতে কুরু পান্ডব বংশের বর্ননা করে শ্রীকৃষ্ণের কথা বর্নন প্রসঙ্গে ব্যাস এই হরিবংশ রচনা করেছেন। হরিবংশে বিষ্ণুপর্বে গোবর্ধন ধারন ও ইন্দ্রমানভন্জনের পর রাসলীলার কথা এসছে। হরিবংশে রাসের কথা অত্যন্ত সংক্ষেপে আছে। ভাগবতে যা একটি অধ্যায় হরিবংশে একটি শ্লোকে তার বর্ননা করেছে মাত্র।  যেমন গোপীগীত, রাসে কৃষ্ণের অন্তর্ধানের পর গোপীরা কৃষ্ণ লীলার অনুকরন করতে থাকে এগুলি একটি শ্লোকে বর্ননা করা হয়েছে। রাসের মধ্যেই অরিষ্টাসুর এসে পড়েছে, তাকে বধ করে কৃষ্ণ আবার রাসে প্রবেশ করেন। যদিও অরিষ্টাসুর ইত্যাদি অসুরবধ লীলা হরিবংশে বিস্তৃত ভাবে একটি অধ্যায় জুড়ে বর্ননা করা হয়েছে। হরিবংশে বিষ্ণুপর্বে ৭৬ অধ্যায়ে রাসলীলার বর্ননা ও গোপীদের প্রসঙ্গ।
কৃষ্ণস্তু যৌবনং দৃষ্ট্বা নিশি চন্দ্রমসো বনম।
শারদীর্চ নিশাং রম্যাং মনশ্চক্রে রতিং প্রতি।। ১৫
এদিকে শ্রীকৃষ্ণ পূর্ণিমার রাতে চন্দ্রের কান্তিমান রূপ, রমনীয় বন তথা শারদ রজনীর সুরম্য শোভা দর্শন করে রমণ করতে ইচ্ছা করলেন।
স করীষাঙ্গরাগাসু ব্রজরথ্যাসু বীর্য্যবান।
বৃষাণাং জাতদর্পাণাং যুদ্ধানি সমযোজয়ত।। ১৬
গোপালংশ্চ বলোদগ্রান যোধয়ামাস বীর্যবান।
বনে স বীরো গাশ্চৈব জগ্রাহ গ্রাহবদ বিভুঃ।। ১৭
যুবতীর্গোপকণ্যাশ্চ রাত্রৌ সংকাল্য কালবিত্।
কৈশোরকং মানয়ন বৈ সহ তাভির্মুমোদ হ।। ১৮
সর্বকাল সম্পর্কে জ্ঞাতা শ্রীহরি নিজ কৈশোরবয়সোচিত গোপকন্যাদের সাথে বন বিহার লীলা করলেন।
তাস্তস্য বদনং কান্তং কান্তা গোপস্ত্রিয়ো নিশি।
পিবন্তি নয়নাক্ষেপৈর্গো গতং শশীনং যথা।। ১৯
নিশাকালে কান্তিময়ী গোপাঙ্গনা রা পৃথিবীতে দ্বিতীয় চন্দ্রের ন্যায় প্রতীত হওয়া প্রিয়তম কৃষ্ণের মুখচন্দ্র, কটাক্ষপাত পূর্বক পান করতে লাগলেন।
হরিতালাদ্রর্পিতেন স কৌশেয়েনং বাসসা
বসানো ভদ্রবসনং কৃষ্ণঃ কান্ততরোহভবত।। ২০
হরিতাল নিন্দিত পীতবর্ন কৌশেয় বস্ত্রধারী শ্রীকৃষ্ণকে  আরো মনোহর লাগছিলেন।
স বদ্ধাঙ্গদনির্ব্যুহশ্চিত্রয়া বনমালয়া।
শোভমানো হি গোবিন্দঃ শোভয়ামাস তদ ব্রজম।। ২১
বাহুযুগলে ভূজঙ্দ বেঁধে, মাথায় মুকুট পরে বিচিত্র বনমালায় সুশোভিত গোবিন্দের অঙ্গশোভায় ব্রজের শোভা বৃদ্ধি করলেন।
নাম দামোদরেত্যেবং গোপকণ্যাস্তদাব্রুবন।
বিচিত্রং চরিতং বোপে দৃষ্ট্বা তত্ তস্য ভাস্বতঃ।। ২২
গোষ্ঠমধ্যে ঐ তেজস্বী বিচিত্র চরিত্র শ্রীকৃষ্ণ কে দর্শন করে গোপকিশোরী গন তাকে দামোদর বলে ডাকতেন।
তাস্তং পয়োধরেনত্তুঙ্গৌরুরোভিঃ সমপীড়য়ন।
ভ্রামিতাক্ষেশ্চ বদনৈর্নিরীক্ষন্তে বরাঙ্গনাঃ।।  ২৩
গোপিকা গন তাকে পীন পয়োধরে আলিঙ্গন করত তার প্রতি সতৃষ্ণ নয়নে দৃষ্টিপাত করতে লাগলেন।
তা বার্যমাণাঃ পতিভির্মাতৃভির্ভাতৃভিস্তথা।
কৃষ্ণং গোপাঙ্গনা রাত্রৌ মৃগয়ন্তে রতিপ্রিয়াঃ।। ২৪
পতি পিতা মাতা জ্ঞাতিগন নিবারন করলেও কৃষ্ণ বিষয়ক রতি প্রিয়া গোপীগন কে কৃষ্ণের কে বনের মধ্যে খুঁজতে এসেছিলেন।
তাস্তু পংক্তিকৃতাঃ সর্বা রময়ন্তি মনোরমম।
গায়ন্ত্যঃ কৃষ্ণচরিতং দ্বন্দশো গোপকন্যকাঃ।। ২৫
ঐ সমস্ত গোপকিশোরী রা মন্ডলাকারে পংক্তি বানিয়েছিল, প্রত্যেক গোপীর দুদিকে শ্রীকৃষ্ণ বিরাজমান হয়ে গোপী কৃষ্ণের যুগল জোড়ী তৈরী করলেন। কৃষ্ণ চরিত্রের গান করতে করতে তারা নৃত্য করতে থাকলেন।
এরপর ৯টি শ্লোকে কৃষ্ণের সাথে গোপীদের রাসলীলার বর্ননা আছে।
এবং স কৃষ্ণো গোপীনাং চক্রবালৈরলঙ্কৃতঃ।
শারদীপু সচন্দ্রাসু নিশাসু মুমুদে সুখী।। ৩৫
অনুবাদ:- এভাবে শরৎঋতুর জ্যোৎস্নালোকিত রাত্রে গোপীমন্ডলী দ্বারা অলঙ্কৃত কৃষ্ণ রাসক্রীড়া সুখে নিমগ্ন হতেন।

৪) বিষ্ণু পুরাণ
বিষ্ণু পুরানে ৫ম খন্ডে ১৩ অধ্যায়ে শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা বর্ননা আছে। শারদ পূর্ণিমার রাতে চন্দ্রালোকিত বৃন্দাবনের কুন্জ গুলির শোভা দর্শন করে শ্রীকৃষ্ণ রাসক্রীড়া র ইচ্ছায় মধুর পদবিন্যাসে গান করতে (বংশীধ্বনি তে গান) শুরু করেন। তা শুনে গোপীরা ঘর ছেড়ে যেখানে বনের মধ্যে কৃষ্ণ সেখানে এসে উপস্থিত হলেন। কোনো গোপী সেই গানের লয়ানুসারে গাইতে লাগল, কেউ মনে মনে কৃষ্ণকেই স্মরণ করতে লাগল।  কোন গোপী বারংবার কৃষ্ণ কৃষ্ণ এই বলে ডাকতে ডাকতে লজ্জিতা হল।  কোনো গোপী লজ্জা পরিত্যাগ করে কৃষ্ণের পাশে উপস্থিত হল।  কোনো গোপী বাইরে গুরুজন কে বসে থাকতে দেখে ঘরেই থেকে তন্ময় ভাবে পরব্রহ্ম স্বরূপ গোবিন্দের কথা চিন্তা করতে করতে মোক্ষপ্রাপ্ত হল। অনন্তর রাসক্রীড়ারম্ভে উৎসুক কৃষ্ণ গোপীগন কর্তৃক বেষ্টিত হয়ে সেই শরচ্চন্দ্র মনোহরা রজনীকে বহুমানিত করলেন।  রাসের মাঝখানে হঠাৎ শ্রীকৃষ্ণ অন্তর্ধান হলে। গোপীরা কৃষ্ণ কে খুঁজতে খুঁজতে বৃন্দাবনে বিচরন করতে লাগলেন। তারা কৃষ্ণের প্রতি আসক্তচিত্ত হয়ে বলতে নিজেদের মধ্যে লাগল আমিই কৃষ্ণ আমার মনোহর গতি তোমরা দেখো, কেউ বললো আমিই কৃষ্ণ আমার মনোহর গীতি তোমরা শোনো, কেউ বাহু স্ফোট করতে করতে বললো ওরে দুষ্ট কালীয় আমি কৃষ্ণ তুই স্থির হ। কোনো গোপী বললো ওহে গোপগন তোমরা চিন্তা করো না আমি গোবর্ধন পর্বতকে ছাতার মত ধরব, বৃষ্টির ভয় আর থাকবেনা। কোনো গোপী বলল সখা তোমরা যেখানে খুশী ঘুরতে পারো আজ থেকে আর ধেনুকাসুরের ভয় থাকবেনা। এভাবে কৃষ্ণ লীলার অনুকরন করতে লাগল। তখন হঠাৎ কোনো এক গোপীর মাটিতে কৃষ্ণ পদচিহ্ন দর্শন করে আনন্দে সর্বাঙ্গ পুলকে ভরে উঠল। তখন সে সবাই কে ডেকে সেদিকে দেখিয়ে বলতে লাগল
ধ্বজবজ্রাঙ্কুশাব্জাঙ্ক রেখাবন্ত্যালি পশ্যত।
পদান্যেতানি কৃষ্ণস্য লীলালঙ্কৃতগামিনঃ।। ৩১
হে সখি এই দেখ লীলালঙ্কৃতগামী কৃষ্ণের ধ্বজ বজ্র অঙ্কুশ চিহ্নিত এই সকল পদচিহ্ন দেখা যাচ্ছে।
কাপি তেন সমং যাতা কৃতপূণ্যা মদালসা।
পদানি তস্যাশ্চৈতানি ঘনান্যল্পতনুনি চ।। ৩২
আর ও দেখো কৃষ্ণের সাথে কোনো পূন্যবতী রমণী মদালসভাবে গমন করেছে কৃষ্ণ চরন চিহ্নের পাশে পাশে তারো ছোটো ছোটো পদচিহ্ন দেখা যাচ্ছে।
পুষ্পাবচয়মত্রৌচ্চৈশ্চক্রে দামোদরো ব্রুবম।
যেনাগ্রাক্রান্তিমাত্রাণি পদান্যত্র মহাত্মনঃ।। ৩৩
সখী এখানে মহাত্মা দামোদর উঁচু হয়ে ফুল পাড়ছিলেন তাতে সন্দেহ নেই কারন এই সব জায়গায় তার পায়ের অগ্রভাগের চিহ্নই মাটিতে পড়েছে।
অত্রোপবিশ্য সা তেন কাপি পুষ্পৈরলঙ্কৃতা।
অন্যজন্মনি সর্ব্বাত্মা বিষ্ণুরভ্যর্চ্চিতো যয়া।। ৩৪
পূর্ব্বজন্মে এই ভাগ্যবতী রমণী ফুল দিয়ে সর্ব্বাত্মা বিষ্ণু র অর্চ্চনা করেছিলেন তাই ভগবান কৃষ্ণ এখানে বসিয়ে তাকে ফুল দিয়ে সাজিয়েছেন। এই তার চিহ্ন দেখো।
পুষ্পবন্ধনসম্মান কৃতমানামপাস্য তাম।
নন্দগোপসুতো যাকো মার্গেণানেন পশ্যত।। ৩৫
এই দেখো এই পথ অবলম্বন করে নন্দগোপসুত শ্রীকৃষ্ণ সেই মানময়ী রমণী কে মাথায় পুষ্পবন্ধন করে দিয়ে তাকে নিয়ে প্রস্থান করেছেন।
অনুযানেহসমর্থান্যা নিতম্বভরমন্থরা।
যা গন্তব্যে দ্রুতং যাতি নিরপদাগ্রসংস্থিতিঃ।। ৩৬
সখি এখানে কৃষ্ণপদচিহ্নের সাথে সেই রমণীর চরনচিহ্ন দেখে মনে হচ্ছে এই নারী নিতম্বভারে মন্থরগমনা। সুতরাং অনুগমনে অসমর্থা হলেও দ্রুতগন্তব্য স্থানে গমন করেছেন।  কারন তার পায়ের অগ্রভাগের স্থিতি চিহ্ন নিম্ন বলে মনে হচ্ছে।
হস্তন্যাস্তাগ্রহস্তেয়ং তেন যাতি তথা সখি।
অনায়াত্তপদন্যাসা বক্ষ্যতে পদপদ্ধতিঃ।।
 সখি এখান দিয়ে কৃষ্ণ তার হাত নিজ হাতে ধরে নিয়ে গেছেন। কারন ঐ রমণীর পদবিন্যাস অনায়াত্ত ভাবে রয়েছে।
 হস্তসংস্পর্শমাত্রেণ ধূর্ত্তেনৈষা বিমানিতা।
 নিরাশ্যমন্দগামিন্যা নিবৃত্তং লক্ষ্যতে পদম।। ৩৮
 আহা এখানে হয়ত ঐ রমণীকে ধূর্ত্তের করস্পর্শ মাত্রে পরিত্যাক্তা হয়েছেন। কারন নিরাশায় মন্দগামিনী সেই রমণীর পদচিহ্ন এই স্থানের পর আর নেই।
নূনমুক্তা ত্বরামীতি পুনরেষ্যামি তেহন্তিকম।
তেন কৃষ্ণেন যেনৈষা ত্বরিতা পদপদ্ধতিঃ।। ৩৯ এইস্থলে কৃষ্ণ সেই গোপীকে তুমি এখানে অবস্থান কর এখানে এক অসুর বাস করে আমি তাকে হত্যা করে শীঘ্র তোমার কাছে আসছি এই রকম কোনো কথা বলে চলে গেছেন। কৃষ্ণের শীঘ্র ও নিম্নপদপংক্তি দেখে এরকম মনে হচ্ছে।
প্রবিষ্টো গহনং কৃষঃ পদমত্র ন লক্ষ্যতে।
নিবর্ত্তধ্বং শশাঙ্কস্য নেতদ্দীধিতিগোচরে।। ৪০
কৃষ্ণ এইস্থান হতে গহন বনে হয়ত প্রবেশ করেছেন তার পদচিহ্ন তো আর দেখা যাচ্ছেনা। তোমরা নিবৃত্ত হও এখানে আর চন্দ্রকিরণ প্রবেশ করছে না।
নিবৃত্তাস্তাস্ততো গোপ্যো নিরাশাঃ কৃষ্ণদর্শনে।
যমুনাতীরমাগত্য জগুস্তচ্চরিতং তদা।। ৪১
তখন এভাবে গোপী রা কৃষ্ণ দর্শনে নিরাশ হয়ে যমুনাতীরে এসে কৃষ্ণ চরিত্র গান করতে আরম্ভকরল। এরপর কৃষ্ণ তাদের দর্শন দেন ও পুনরায় রাসক্রীড়া আরম্ভ করেন।
শ্রীধর স্বামী কৃত বিষ্ণুপুরানের ৩১ থেকে ৪১ শ্লোকের টীকা ।
ধ্বজবজ্রাঙ্কুশাব্জাঙ্ক রেখাবন্তি ধ্বজাদিলক্ষণাযারেখা স্তদ্যুক্তানি পশ্যত। হে আলি সখি বহুবচনার্থে চৈকবচনং লীলয়ালঙ্কৃতং যথা ভবত্যেবং গমনশীলস্য।। ৩১
ঘনানি মন্থরগতিত্বাদল্পান্তরাণি অল্পতনূনি অদীর্ঘাণ্যস্থূলানি চেতি স্ত্রীপদত্বে লিঙ্গানি।। ৩২
উচ্চৈঃ ঊর্দ্ধীভূয় স্থিত্বা পুষ্পাবচয়ং চক্রে তত্র লিঙ্গং যেনেতি। অগ্রেনৈব প্রপদেনৈষাক্রান্তিমাত্রং ঈষদ্ভূসংস্পর্শো যেষাং তানি।। ৩৩
কৃষ্ণজানুমধ্যোপবেশচিহ্নং দৃষ্ট্বাহুঃ অত্রোপবিশ্যেতি।। ৩৪
পুষ্পবন্ধনরূপেণ সম্মানেন কৃতো মানো গর্ব্বো যয়া তাম।। ৩৫
তস্যপৃষ্ঠতোহন্যস্যাঃ পদানি দৃষ্ট্বা কল্পয়ন্তি অনুযানেতি নিতম্বভরেণ মন্থরা স্থিরাপি যা কৃষ্ণেন সহ গন্তব্যে গমনে কর্ত্তব্যে সতি দ্রুতং যাতি তত্র লিঙ্গং নিম্নৈঃ পাদাগ্রৈঃ সংস্থিতির্যস্যাঃ সেয়ং তেন সহ যাতি। তত্র লিঙ্গম অনায়াত্তঃ অস্বাধীনঃ পদন্যাসো যস্যাঃ তথাভূতাহি পদপংক্তির্লক্ষ্যতে।। ৩৭
ততশ্চ হস্তগ্রহনমাত্রং কৃত্বা তেন ধূর্ত্তেন শঠেনৈষা বিমানিতা অবজ্ঞয়া ত্যাক্তা।  তত্র লিঙ্গং নৈরাশ্যমন্দগামিন্যাঃ নিরাশতয়া মন্দং গচ্ছন্ত্যা নিবৃত্তং প্রতিলোমং পদং ন লক্ষ্যতে।। ৩৮
নূনমুক্তেতি। ত্বম অত্রৈব তিষ্ঠ ইতঃ কশ্চিদ্রাক্ষসোস্তি তং হন্তুং অহন্ত্বরয়ামি শীঘ্রং যানি পুনশ্চ তবান্তিকমাগমিষ্যামিতি নূনমেব তেনোক্তা। তত্র লিঙ্গং যেনৈষা কৃষ্ণস্য পদানাং পদ্ধতিঃ পংক্তিঃ ত্বরিতা শীঘ্রা নিম্নাগ্রা লক্ষ্যতে।। ৩৯
কৃষ্ণান্বেষণাত্তাসাং নিবৃত্তিমাহ প্রবিষ্ট ইতি দ্বাভ্যাং।
গহনং নিবিড়ং দুর্গমং বনং প্রবিষ্টঃ অতএব শশাঙ্করশ্মি প্রবেশাভাবাৎ তস্য পদমত্রন লক্ষ্যতে।। ৪০
ততো নিবৃত্তাঃ সত্যো যমুনাতীরং প্রাকৃতনং রাসস্থানং শীঘ্রমাগত্য কৃষ্ণোপলব্ধয়ে তচ্চরিতং জগুঃ।। ৪১

৬) শ্রীমদভাগবতম
ভাগবতমে বর্ননা আছে রাসস্থলী থেকে মাধব হঠাৎ অন্তর্ধান হলে গোপীরা তাকে খুঁজতে খুঁজতে এক জায়গায় মাধবের চরন চিহ্ন পান ও দেখেন তার পাশে পাশে অন্য এক গোপীর পদচিহ্ন দেখতে পান। গোপীরা তখন আলোচনা করছিলেন কে এই গোপী তার চরনচিহ্ন দেখে তারা বুঝতে পারেন শ্রীকৃষ্ণের সবচেয়ে যে প্রিয়তমা,  শ্রীহরির যে সর্বশ্রেষ্ঠ ভক্ত, কৃষ্ণ ভিন্ন অন্য কিছু জানেনা সেই। অর্থাত রাধা। তাই "অনায়ারাধিতং নূন হরিরীশ্বর" এই ভাবে রাধারানীর নাম বলেছেন। হরির শ্রেষ্ঠ ভক্ত একমাত্র রাধারানী আবার আরাধিত শব্দে রাধা নাম আছে তাই এই শব্দালঙ্কার প্রয়োগ করেছেন ব্যাসদেব। এখন কেউ ভারতীয় সংস্কৃতি তে  অলঙ্কার ছাড়া যে কাব্য রচনা হয়না তা না জেনে মন্তব্য করেন ভাগবতমে রাধা নাম নেই।
তৈস্তৈঃ পদৈ তৎ পদবীম অন্বিচ্ছন্ত্যা অগ্রত অবলাঃ
বধ্বা পদৈঃ সুপৃক্তানি বিলোক্যার্তাঃ সমব্রুবন ১০/৩০/২৬
সেই সেই পদচিহ্ন ধরে কৃষ্ণের পথ অনুসরন করে যেতে যেতে গোপীরা যখন দেখলেন কৃষ্ণের পদচিহ্নের পাশে পাশে তার অন্যতম প্রিয়তমার পদচিহ্ন রয়েছে তখন তারা আকুল হয়ে বলতে লাগলেন
কস্যাঃ পদানি চৈতানি যাতায়া নন্দসূনূনা
অংসন্যস্তপ্রকোষ্ঠায়াঃ করেণেঃ করিণা যথা
১০/৩০/২৭
এখানে এক গোপীর পদচিহ্ন রয়েছে যে নন্দমহারাজের পুত্রের সাথে সাথে গেছেন এক হস্তী যেমন তার হস্তিনীর কাঁধে তার শুঁড় স্থাপন করে যায় কৃষ্ণ ও তার বাহু তার স্কন্দে স্থাপন করে গেছেন।
অনায়ারাধিতো নূনং ভগবান হরিরীশ্বরঃ
যন্নো বিহায় গোবিন্দঃ প্রীতো যামনয়দ্রহঃ
১০/৩০/২৮
কে এই গোপী? কার পায়ের ছাপ? তা বিচার করতে অন্য গোপীরা বলছেন যেই গোপী যথার্থ ভাবে ভগবান শ্রীহরির আরাধনা করেছিলেন তার প্রতি প্রীত হয়ে শ্রীগোবিন্দ তাকে নিয়ে অন্যত্র গেছেন।
এখন কেউ তার নাম রাধারানী মানুক বা না মানুক শ্রীকৃষ্ণ যে গোপীজনবল্লভ, গোপীদের সাথে যে রাসলীলাদি করেছিলেন তাদের মধ্যে ও যে এক গোপী তার অন্যতম প্রিয়তমা ছিলেন যাকে নিয়ে রাস ত্যাগ করে শ্রীহরি অন্যত্র চলে যান ও গাছ থেকে ফুল তুলে তার কেশ শৃঙ্গার করে দেন। তা মহাভারত, হরিবংশ, বিষ্ণুপুরান ভাগবতের শ্লোকে প্রমানিত। তার নাম অনায়ারাধিত শ্লোকে শুকমুনি রাধা বলে ইঙ্গিতে জানিয়েছেন।
শুকদেব কেন রাধারানীর নাম উচ্চারন করেননি সে প্রসঙ্গে সনাতন গোস্বামী ব্যাখ্যা করে বলেছেন,
গোপীনাং বিততাদ্ভুতস্ফুটতর প্রেমানলার্চিশ্ছটাদগ্ধানাং
কিল নামকীর্তনকৃতাত্তাসাং স্পর্শেন
সদ্যো মহা-
বৈকল্যং স ভজন্ কদাপি ন মুখে নমানি
কর্তুং পভুঃ ।। (বৃহদ্ভাগবতামৃতম্ – ১/৭/১৩৪)
 শুকদেব ভাগবত কথা কীর্তন করার সময় গোপীদের কারোর নাম উচ্চারণ করতে সমর্থন হননি । তার কারন গোপীদের নাম উচ্চারণ করলে বিশেষ স্মৃতিতে তাঁর চিত্ত অতি বিস্মৃত জ্বালাময় প্রেমানলে মহাবিহবল হয়ে পড়তেন, যার ফলে আর ভাগবত কথা বলতে পারতেন না ।”
Next page>>>