Radha in veda and purana 3

Radha in veda and purana 3

১০) মৎস্য পুরাণে দক্ষের প্রতি দেবী বাক্য
রুক্মিনী দ্বারাবত্যাং তু রাধা বৃন্দাবনে বনে
চিত্রকূটে তথা সীতা বিন্ধ্যে বিন্ধ্যনিবাসিনী।।
১১) আদিবরাহ পুরানে মথুরাখন্ডে
দীপোৎসবে কার্ত্তিকে চ রাধাকুন্ডে যুধিষ্ঠির।
দৃশ্যতে সকলম বিশ্বম ভৃত্যৈর্বিষ্ণু পরায়ণৈঃ।।
হে যুধিষ্ঠির দীপাবলি উৎসবে বিষ্ণুভক্ত গন রাধাকুন্ডে সমস্ত বিশ্বকে দর্শন করে।
১২) স্কন্দপুরানে বিষ্ণুখন্ডে কার্ত্তিক মাহাত্ম্যে
ব্রতিনঃ কার্ত্তিকে মাসি স্নানস্য বিধিবন্মম
দামোদর গৃহানার্ঘ্যং দনুজেন্দ্র নিসূদন।।
নিত্যে নৈমিত্তিকে কৃৎস্নে কার্ত্তিকে পাপশোষণে।
গৃহানার্ঘ্যং ময়া দত্তং রাধয়া সহিতো হরে।।

১২) অন্যান্য উপপুরাণে ও পাঞ্চরাত্র শাস্ত্রে রাধারানীর মাহাত্ম্য।
ব্রহ্মান্ডপুরান
ব্রহ্মবৈবর্তে
নারদ পঞ্চরাত্র ২/৩/৬০
রাধাবামাংশসম্ভূতা মহালক্ষ্মীঃ প্রকীর্তিতা।
ঐশ্বর্যাধিষ্ঠাত্রী দেবীশ্বরস্যৈব নারদ।।
তদংশা সিন্ধুকন্যা চ ক্ষীরোদমন্থনোদভূতা।
মর্ত্যলক্ষ্মীশ্চ সা দেবী পত্নী ক্ষীরোদ শায়িনঃ
তদংশা স্বর্গলক্ষ্মীশ্চ শক্রাদীনাং গৃহে গৃহে।
রাসাধিষ্ঠাত্রী দেবী চ স্বয়ং রাসেশ্বরী পরা।
বৃন্দাবনে চ সা দেবী পরিপূর্ণতমা সতী।।
নারদ পঞ্চরাত্র ২/৩/৫১
যথা ব্রহ্মস্বরূপশ্চ শ্রীকৃষ্ণঃ প্রকৃতেঃ পরঃ।
তথা ব্রহ্মস্বরূপা সা নির্লিপ্তা প্রকৃতে পরা।।
গর্গ সংহিতায়
গৌতমীয় তন্ত্রে
দেবী কৃষ্ণময়ী প্রোক্তা রাধিকা পরদেবতা।
সর্ব্বলক্ষ্মীময়ী সর্ব্বকান্তিঃ সম্মোহিনী পরা।।
নারদ পুরানে রাধাষ্টমী ব্রত করলে ব্রজের দুর্লভ রহস্য জ্ঞাত হয় বলে উল্লেখ আছে।

১৩) প্রাচীন আচার্য্য গন কৃত স্তোত্রে
শঙ্করাচার্য্য কৃত যমুনাস্তোত্রে
"বিধেহি তস্য রাধিকাধবাঙ্ঘ্রিপঙ্কজে রতিমতি"
এই বাক্যটি শ্রীকৃষ্ণ সন্দর্ভে শ্রীজীবগোস্বামীপাদ উদ্ধৃত করেছেন শঙ্করাচার্য্য কৃত যমুনাস্তবে আছে বলে। আচার্য্য শঙ্কর কৃত যমুনাষ্টক বা যমুনাস্তোত্রে এই বাক্যটি না পেলেও অন্য শ্লোকে শ্রীরাধিকার নাম পাওয়া যায়। যথা
জলান্ত কেলিকারি চারু রাধিকাঙ্গ রাগিণী
স্বভর্তুরন্য দুর্লভাঙ্গতাঙ্গতাংশ ভাগিনী।
............................................................
জলচ্যুতাচ্যুতাঙ্গরাগ লম্পটালি শালিনী
বিলোল রাধিকা কচান্ত চম্পকালি মালিনী।
শঙ্করাচার্য্য কৃত কৃষ্ণ স্তোত্রে
বিধেহি গোপিকা

পুষ্টিমার্গীয় সম্প্রদায় আচার্য্য বিঠ্ঠলনাথ কৃত পদ্যে
যদৈব শ্রীরাধে রহসি মিলতি ত্বাং মধূপতি
স্তদৈবাকার্য্যা নিজচরণদাসীতি গদিতা

 ১৪) ঋক পরিশিষ্ট শ্রুতিতে
রাধয়া মাধবো দেবো মাধবেনৈব রাধিকা।
বিভ্রাজন্তে জনেষ্বা।
 রাধা দ্বারা মাধব ও মাধব দ্বারা রাধা সর্বতোভাবে দীপ্তিমান।

( ঋক পরিশিষ্ট শ্রুতি তে শ্রীসূক্তে ৫ম অষ্টক ৪র্থ অধ্যায় ২২ বর্গ ৪র্থ মন্ত্র।
 ঋগ্বেদ৫/৮৮/৯ শ্রীসূক্তে
গন্ধদ্বারাং দুরাধর্ষাং নিত্যপুষ্টাং করীষিণীম
ঈশ্বরীং সর্বভূতানাং তামিহোপহ্বয়ে শ্রিয়ম
অনুবাদ:- গন্ধলক্ষণা, দুরাধর্ষা, নিত্যপুষ্টা, গোময়বতী ও সর্বভূতের ঈশ্বরী সেই শ্রীদেবী কে আহ্বান করি।
এখানে শ্রীদেবী, যিনি গোপী অর্থে রাধারানী কে বোঝাচ্ছে।
মহাভারতে শ্রী যুধিষ্ঠিরের উক্তি তেও এরকম একটি শ্লোক আছে। অনুশাসন পর্ব, ৮২/১
গবাং পুরীষং বৈ শ্রিয়া জুষ্টম। গোময়ে বাস কারী বিষ্ণু শক্তি শ্রীদেবী
শ্রীবৈষ্ণব সম্প্রদায়ী অনেকে প্রশ্ন করেন ঋকপরিশিষ্ট শ্রুতি আদৌ কোনো প্রামানিক শ্রুতি কিনা? আশ্চর্য্য প্রশ্ন তাহলে তারা শ্রীসূক্ত পাঠ করেন কেন?  সেটাও তো পরিশিষ্ট শ্রুতির সূক্ত।)


১৫) ঋগ্বেদ এ
 স্তোত্রং রাধানাং পতে গির্বাহো বীর যস্য তে।
বিভূতিরস্তু সূনৃতা।।
তিনটি বেদেই এই মন্ত্রটি পাওয়া যায়।
ঋগ্বেদ ১ম মন্ডল ৩০ সূক্ত ৫ম মন্ত্র, অথর্ববেদে ২০কান্ড ৪৫ সূক্ত ২য় মন্ত্র বা ২০ কান্ড ৫ম অনুবাকের ৮ম সূক্তের ২য় মন্ত্র, সামবেদের উত্তরার্চিক ১৬ অধ্যায়ে তৃতীয় খন্ডে ১১ সূক্ত বা ১৬০০ সাম মন্ত্র।
অন্বয়:- স্তোত্রং= রাধানাংপতে= রাধানাথ গির্বাহো= বাহুতে গিরি ধারন কারী তে= তোমার, বিভূতি= ঐশ্বর্য্য, অস্তু= হোক, সুনৃতা= সত্য বা অক্ষয়,

সায়ন ভাষ্য অনুযায়ী অনুবাদ:- হে ধনপালক স্তুতিভাজন বীর তোমার এইরূপ স্তোত্র তোমার বিভূতি প্রিয় ও সত্য হোক।
সায়নভাষ্য:- হে ইন্দ্র রাধানাং পতে ধনানাং পালক গির্ব্বাহো গীর্ভরুহ্যমান বীর শৌর্যোপেত। যস্যতে তব স্তোত্রমীদৃশং ভবতি তস্য তব বিভূতিলক্ষ্মী সুনৃতা পরসত্যরূপাস্তু।
এই মন্ত্রের সায়ন যাই অর্থ করুন না কেন রাধানাথ, গিরিগোবর্ধন কে যিনি বাহুতে ধারন করেছেন তোমার এইসকল স্তুতি  আমাদের পক্ষে ঐশ্বর্য্যসমৃদ্ধ প্রিয় ও সত্ত্বভাবসম্পন্ন হোক। এই অর্থ ই স্পষ্ট।
কারন ব্যাকরণ মতে যেখানে মুখ্য অর্থ স্পষ্ট সেখানে লক্ষণা বৃত্তি তে রাধা শব্দের অর্থ ধনসম্পত্তি, রাধানাথ শব্দের অর্থ ধনপালক, গির্বাহো শব্দের অর্থ স্তুতিভাজন করার কোনো দরকার নেই। ব্যাকরনের নিয়মে মুখ্য অর্থ স্পষ্ট হলে লক্ষনা বৃত্তির আশ্রয় নেওয়া হয় না।

১৬৫ সামে ইদং হ্যন্বোজসা সুতং রাধানাং পতে। পিবা ত্বাতস্য গির্বণঃ
সায়ন ভাষ্য অনুযায়ী অনুবাদ:- হে রাধাপতি অর্থাৎ সর্বসিদ্ধিকর ধনের অধিপতি, হে স্তুতিপ্রিয় ইন্দ্র বলসহায়ে প্রস্তুত এই সোমরস তোমার পানের জন্য।
বরুণঃ প্রাবিতা ভুবন্মিত্রো বিশ্বাভিরুতিভিঃ করতাং ন সু রাধসঃ
(ঋগবেদ ১/২৩/০৬)
বিভক্তারং হবামহে বসোশ্চিত্র্যস্য রাধসঃ।
সবিতারং নৃচক্ষসং।
সখায় আ নিষীদত সবিতাস্তাম্যোতু নঃ। দাতা রাধাংসি শুন্তন্তি।।
(ঋগ্বেদ ১/২২/৭-৮)
শ্রীমদভাগবতমে রাধস শব্দের অর্থ ব্যাখ্যা:-
শুকদেব জী পরমপুরুষ কৃষ্ণের ধ্যান বিষয়ে বলতে গিয়ে মঙ্গলাচরণ শ্লোকে বলছেন যে পরমপুরুষ নিজধামে ব্রহ্মপুরে রাধিকার সহিত ক্রীড়মান। এই শ্লোকে তিনি রাধসা পদ ব্যাবহার করেছেন পরব্রহ্মের শক্তি কে বোঝাতে।
নমো নমস্তেহস্ত্বৃষভায় সাত্বতাং
বিদূরকাষ্ঠায় মুহুঃ কুযোগিনাম।
নিরস্তসাম্যাতিশয়েন রাধসা
স্বধামনি ব্রহ্মণি রংস্যতে নমঃ।। ভা ২/৪/১৪
অনুবাদ:- সেই ইষ্টদেবকে পুনঃ পুনঃ প্রনাম। তিনি ভক্তগনের পালক ও ভক্তিহীন মানুষদের দুর্বিজ্ঞেয়। তার সমান বা তার থেকে অধিক কেউ নেই। তিনি রাধিকার সহিত স্বধামে ব্রহ্মপুরে  (মথুরামন্ডলে) রমণ করেন
অন্বয়:- নমঃ নমঃ অস্তু। তে= তোমাকে। সাত্বতাং= ভক্তদের। ঋষভায়= পালক। বিদূরকাষ্ঠায়= দুর্বিজ্ঞেয়। মুহুঃ= কুযোগিনাম =ভক্তিহীনের।  নিরস্তসাম্যাতিশয়েন= সম ও অতিশয় বা অধিক নেই যার। রাধসা= রাধিকা।  স্বধামনি= মথুরামন্ডলে।  ব্রহ্মনি= ব্রহ্মপুরে রংস্যতে= রমন করেন।

সায়ন রাধসঃ পদে ধন সম্পদ এই অর্থ করলেও ব্যাসদেব রাধসঃ পদে পরব্রহ্মের শক্তি কেই বোঝেন। এখন বেদার্থ নির্নয় করতে গিয়ে ব্যাসদেব কি অর্থ বোঝাতে চেয়েছেন তা মানা উচিত না সায়নের কল্পিত ব্যাখ্যা মানা উচিত।
কৃষ্ণের ষড়বিধ ঐশ্বর্য্যের অধিষ্ঠাত্রী শক্তি তাই তার এক নাম রাধিকা।
যথা চৈ.চ আদি/৪/৯১ এ
কিংবা সর্ব্বলক্ষ্মী কৃষ্ণের ষড়বিধ ঐশ্বর্য্য।
তার অধিষ্ঠাত্রী শক্তি সর্ব্বশক্তিবর্য্য।।
তিনি সেবা দ্বারা সর্বভাবে কৃষ্ণের সমস্ত বাঞ্ছা পূরণ করেন তাই জন্যও তার নাম রাধিকা।
জগত কে গোপন করেন তাই তার এক নাম গোপী।
ধরুন একটি বাক্যে রয়েছে চক্রধারী পদ্মলোচন এর অর্থ নারায়ণ হয়। কিন্তু কেউ এরকম ও অর্থ করতে পারে পদ্মলোচন নামক কুমোর চাকা হাতে নিয়ে।
৮৪১ সামে পৃঃ ১০৩

যদ্বাঞ্ছয়া শ্রীর্ললনাচরৎ তপো বিহায় কামান্ সুচিরং ধৃতব্রতা। ভাঃ ১০/১৬/৩৬
লক্ষ্মীদেবী আপনার যে চরণরেণু লাভের জন্য সর্বকামনা পরিত্যাগ করে ব্রতধারনপূর্ব্বক দীর্ঘকাল তপস্যা করেছিলেন
পদ্মপুরানে এই কাহিনী টি আছে বলে লঘুভাগবতামৃতে উল্লেখ আছে।
ভ্রমরগীতে যে কাচিত বলে এক গোপীর কথা বলা আছে তা রাধারানীর কথাই বলা হয়েছে। অগ্নিপুরানে তা বলা হয়েছে শ্রীজীবগোস্বামী উদ্ধৃত প্রীতিসন্দর্ভে ১০৯ অনুচ্ছেদে অগ্নিপুরাণের শ্লোক।
গোপ্যঃ পপ্রচ্ছুরুষসি কৃষ্ণানুচরমুদ্ধবম।
হরিলীলাবিহারাংশ্চ তত্রৈকাং রাধিকাং বিনা।।
রাধা তদ্ভাবসংলীনা বাসনায়া বিরামিতা।।
অনুবাদ:- সেখানে সকল গোপীরা উষাকালে কৃষ্ণ এর অনুচর উদ্ধব কে দেখে হরিলীলাবিহার সকল জিজ্ঞাসা করলেন। একমাত্র রাধিকা বাদে। তিনি শ্রীকৃষ্ণের ভাবে লীন (কৃষ্ণ বিষয়ে নবমীদশা প্রাপ্ত) হয়েছিলেন বলে প্রশ্নাদি বাসনায় বিরতা ছিলেন।
এখানে ও সর্বগোপীদের মধ্যে রাধার প্রেমাধিক্য প্রমান হল।
ভূজদ্বয়বৃতঃ কৃষ্ণো ন কদাচ্চিত চতুর্ভূজো
গোপ্যৈকয়া বৃতস্তত্র পরিক্রীড়তি সর্ব্বদা।। পদ্মপুরাণ ৪৬/৫৫
কৃষ্ণ নিত্য দ্বিভূজ কখনো চতুর্ভূজ নন, তিনি একজন গোপিকার সাথে সর্বদা ক্রীড়া করেন।

তৈত্তীরিয় ব্রাহ্মণে বিশাখা কে নক্ষত্রগণের অধিপত্নী ও ভুবনের শ্রেষ্ঠা গোপী বলা হয়েছে
নক্ষত্রাণামধিপত্নী বিশাখে।  শ্রেষ্ঠাবিন্দ্রাগ্নী ভূবনস্য গোপৌ।। (৩/১/১/১১)
বিশাখা নক্ষত্রের ই আরেক নাম রাধা। তার পরের নক্ষত্রের নাম অনুরাধা
অথর্ব্ববেদ ১৯ অধ্যায়ের ৭ম সূক্তের ৩য় মন্ত্র,  ১৯ কান্ডের ১ম অনুবাকের ৮ম সূক্তের ৩য় মন্ত্র।
রাধে বিশাখে সুহবানুরাধা জ্যেষ্ঠা সুনক্ষত্রমরিষ্ট মূলম।।
রাধা ও বিশাখা যে একই জনের নাম তা এখানে পাওয়া যায়।
 চন্দ্র রূপ কৃষ্ণ নক্ষত্র রূপ গোপীগনের সঙ্গে বিহার করেন, সেই গোপীগণের মধ্যে বিশাখা বা রাধাই শ্রেষ্ঠ, রাধার এক নাম বিশাখা।  রঘুনাথ দাস গোস্বামীর মুক্তা চরিতে তা স্বীকৃত।
Next page>>>