Srimad bhagabatam 10.1.1 with multiple commentaries
Next verse>>>
শ্রীরাজোবাচ
কথিতো বংশবিস্তারো ভবতা সোমসূর্যয়োঃ।
রাজ্ঞাঞ্চোভয়বংশ্যানাং চরিতং পরমাদ্ভুতং।। ১
অনুবাদ:- পরীক্ষিত মহারাজ বললেন—হে প্রভূ! আপনি ইতিপূর্বেই চন্দ্র ও সূর্যবংশের রাজাদের অত্যন্ত মহান ও বিস্ময়জনক চরিত্র বিস্তারিত ভাবে বর্ননা করেছেন।
শ্রীধরস্বামী টীকা
ॐ নমঃ কৃষ্ণায়।
বিশ্বসর্গবিসর্গাদি নবলক্ষণ লক্ষিতং।
শ্রীকৃষ্ণাখ্যং পরং ধাম জগদ্ধাম নমামি তৎ।। ১
দশমে দশমং লক্ষ্যমাশ্রিতাশ্রয়বিগ্রহং।
ক্রীড়দ যদুকুলাম্ভোধৌ পরানন্দ মুদীর্য্যতে।। ২
দশমে কৃষ্ণসৎকীর্ত্তিবিতানায়ানুবর্ন্যতে।
ধর্ম্মগ্লানি নিমিত্তন্তু নিরোধো দুষ্টভূভূজাং।। ৩
প্রাকৃতাদি চতুর্দ্ধা যো নিরোধঃ সতু বর্ণিতঃ।
তত্তৎ প্রসঙ্গতঃ সৃষ্টি সংহারাদি নিরূপনৈঃ।। ৪
কৃতা নবতিরধ্যায়া দশমে কৃষ্ণকীর্ত্তয়ে।
আদ্যৈশ্চতুর্ভিরধ্যায়ৈ র্ব্রহ্ম প্রার্থনয়াবনেঃ।
ভারং হর্ত্তুং হরের্জন্ম সপ্রসঙ্গং নিরূপ্যতে।। ৫
গোকুলে মথুরায়াঞ্চ দ্বারাবত্যাং ততঃ ক্রমাৎ।
কৃষ্ণলীলা ত্রিধা প্রোক্তা তত্তদ্ভেদৈস্ত্বনেকধা।। ৬
সপঞ্চত্রিংশতাধ্যায়ৈর্বৃহদ্বৃন্দাবনাদিষু।
গোকুলে বসতো লীলা বর্ণ্যতে সুরদুষ্করা।। ৭
একেন যমুনা বারিণ্যক্রুরেণ কৃতা স্তুতিঃ।
একাদশভি রাখ্যাতা লীলা মধুপুরে কৃতা।। ৮
শেষৈর্দ্বারাবতী লীলা তন্নির্মাণাদি বর্ণ্যতে।
এবং নবতিরধ্যায়া দশমে বিশদার্থকাঃ।। ৯
তত্র তু প্রথমে কংসঃ স্বমৃত্যুং দেবকীসুতাৎ। শ্রুত্বা তীতোহবধীত্তস্যাঃ ষড়গর্ভানিতি বর্ণ্যতে। কৃষ্ণাবতারচরিতশ্রবণামৃতনির্বৃতঃ। উক্তানুবাদেনৌৎসুক্যাদ্রাজা পৃচ্ছতি তৎ পুনঃ।।
কথিতো বংশবিস্তার ইতি। ১
টীকারঅনুবাদ:- সর্গ বিসর্গাদি নয়টি লক্ষণের পরম আশ্রয়,এই জগতের পরম আশ্রয় ও পরম ধাম শ্রীকৃষ্ণ কে নমস্কার।
দশমস্কন্দের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য দশম পদার্থ, যিনি শরণাগত জনের আশ্রয় বিগ্রহ, যিনি পরম আনন্দ স্বরূপ, ও লীলা বিলাসের জন্য যিনি যদুবংশ রূপ সমুদ্র হতে উদিত হয়েছেন।
দশমস্কন্দে ধর্মের গ্লানি উপস্থিত হওয়ার কারনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা দুষ্ট রাজা গনের ধ্বংস হওয়ার কথা বর্ননা করে শ্রীকৃষ্ণের সৎকীর্ত্তি সমূহ ঘোষণা করা হয়েছে।
যদিও নিরোধ অর্থাৎ প্রাকৃত বস্তুর যে সৃষ্টি সংহারাদি চারটি অবস্থা আছে তা বিভিন্ন কথা প্রসঙ্গে বর্ননা করা হয়েছে।
দশম স্কন্দের ৯০টি অধ্যায়ে কৃষ্ণের লীলা মাহাত্ম্য বর্ননা রয়েছে। প্রথম চারটি অধ্যায়ে ভূভার হরণের জন্য ব্রহ্মার প্রার্থনায় শ্রীহরির জন্মাদি লীলা প্রসঙ্গক্রমে নিরূপন করা হয়েছে।
গোকুলে, মথুরায় ও দ্বারকায় এই ক্রমে কৃষ্ণ লীলা বর্ননা করা হয়েছে। যদিও এই তিনটি লীলায় বহুবিধ ভেদ রয়েছে।
এরপর ৩৫ টি অধ্যায়ে গোকুল লীলা বর্ননা করা হয়েছে যে সময় শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে বাস করেছিলেন, যে লীলা অনুভব করা দেবগনের ও দুষ্কর।
তারপর একটি অধ্যায়ে যমুনায় অক্রুর কৃত কৃষ্ণ স্তুতি বর্নন করা হয়েছে। ও ১১ টি অধ্যায়ে কৃষ্ণের মথুরা লীলা বর্ননা করা হয়েছে।
অন্তিমে শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা লীলা বর্ননা ও দ্বারকা নগরী স্থাপনের লীলা বলা হয়েছে। এভাবে দশমস্কন্দে ৯০টি অধ্যায়ে কৃষ্ণ লীলা বর্ননা হয়েছে।
দশমস্কন্দের প্রথম অধ্যায়ে কংস দৈববাণী তে দেবকী গর্ভে জাত পুত্রের দ্বারা নিজের মৃত্যু হবে শুনে দেবকীর প্রথম ছয় সন্তান কে হত্যা করেন।
শ্রীকৃষ্ণ অবতীর্ণ হয়ে কিরূপ লীলা বিলাসাদি করেছেন সেই প্রসঙ্গক্রমে কৃষ্ণলীলামৃত শ্রবণ করতে উৎসুক হয়ে কথিতো বংশবিস্তার ইত্যাদি বাক্যে রাজা পরীক্ষিত পুনরায় প্রশ্ন করেছেন।
শ্রী জীবগোস্বামী কৃত লঘুবৈষ্ণবতোষণী টীকা
শ্রীযুক্তো রাজা শ্রীরাজেতি শ্রীশব্দপ্রয়োগোহত্র শ্রীকৃষ্ণলীলারম্ভেহতিশয়েন প্রেম্না বিরাজমানত্বাৎ। টজভাবঃ সমাসান্তবিধেরনিত্যত্বাৎ। রাজোবাচেতি পাঠস্তু সাধারণ।
সর্বকথৈকমূলং শ্রীকৃষ্ণচরিতং বিস্তরেণ শ্রোতুং বক্তং শ্রীবাদরায়ণেঃ প্রহর্ষণার্থং তদুক্তমভিনন্দতি কথিত ইতি সার্দ্ধকেন। কথিতঃ প্রায়স্তত্তজ্জন্মকথা প্রবন্ধেনাপ্যুক্তঃ নতুদ্দেশমাত্রেণেত্যর্থঃ। তত্রাপি বংশানাং বিস্তারঃ প্রত্যেকং পুত্রপৌত্রাদি প্রপঞ্চো ভবতেতি পরমাদরাৎ। সোমস্য পূর্ব্বনিপাতস্তদ্বংশে সাক্ষাৎ শ্রীভগবদতরণেনাভার্হিতত্বাৎ। উভয়বংশ্যানাং চন্দ্রসূর্য্যবংশোদ্ভবানাং দিগ্বিজয়াদিচরিতঞ্চ কথিতম্। পরমম্ অদ্ভুতং বিস্ময়াবহম্। শ্রীপুরুরবঃককুৎস্বাদীনাম্ উর্ব্বশীপরিগ্রহেন্দ্রারোহণাদিনাত্যান্তালৌকিকত্বাৎ। যদ্যপি স্বায়ম্ভূবমন্বাদিবংশতদ্বংশ্যচরিতান্যপি তৃতীয়স্কন্ধাদৌ কথিতানি সন্তি তথাপি সোমসূর্যয়োরিতি উভয়বংশ্যানামিতি সর্ব্বাবতারশ্রেষ্ঠয়োঃ শ্রীযদুনাথরঘুনাথয়োস্তত্র তত্র সম্বন্ধাৎ।।১
টীকারঅনুবাদ:- শ্রীরাজ শব্দের অর্থ শ্রী যুক্তো রাজা। শ্রীকৃষ্ণ লীলা ব্যাখ্যা আরম্ভে রাজা পরিক্ষিতের হৃদয়ে অতিশয় প্রেমের স্ফূরণ হওয়ায় শ্রী এই শব্দ প্রয়োগ হয়েছে।
(প্রেম অন্তরে আবির্ভাব হলে, বাইরে ও নানা প্রকার ভাব বিকার প্রকাশ হয়ে পড়ে, নয়নে অশ্রু, অঙ্গে পুলক, বাক্যে গদগদাদি ভাব প্রকাশ করে প্রেমশোভায় শোভিত, ও প্রেমসম্পদে প্রকৃত মহারাজ হলেন। মহারাজ পরীক্ষিত রাজত্ব, রাজবেশাদি পরিত্যাগ করায় জাগতিক দৃষ্টিতে শ্রীহীন হলেও তত্ত্বজ্ঞ ব্যাক্তির দৃষ্টিতে যথার্থ শ্রী ধারণ করলেন।
তথাহি, চৈতন্য চরিতামৃতে
সম্পত্তির মধ্যে জীবের কোন সম্পত্তি গনি।
রাধাকৃষ্ণে প্রেম যার সেই বড় ধনী।। )
শ্রীরাজা শব্দের অন্তে সমাস বিধির অনিত্যতার জন্য ট চ পদের বিলোপ হয়েছে। সাধারনত রাজোবাচ এই পাঠ হয়(আর্ষ প্রয়োগ)
(শ্রী+রাজন+টচ্ (শ্রী যুক্ত রাজন) যেসব শব্দের শেষে অন থাকে, সমাসের পর টচ্ প্রত্যয় যোগ হওয়ায় অন লোপ হয়ে টচ্ এর অ জুড়ে যায়। তাই শ্রীরাজ হয়।)
পরীক্ষিত মহারাজ বক্তা মহর্ষি বাদরায়নি কে অভিনন্দিত ও হর্ষিত করে ছয়টি শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণের লীলাবলি যা সমস্ত তত্ত্বকথার মূল, তা বিস্তারপূর্বক শোনানোর জন্য বলছেন,
(প্রহর্ষণার্থং এই পদ ব্যাবহার করে শ্রীজীবগোস্বামী বোঝাচ্ছেন শ্রোতা যদি বক্তার বক্তব্য বিষয় হৃদয়ঙ্গম করতে পারে তবে বক্তার খুব আনন্দ ও উল্লাস হয়। তখন বক্তা আরো হর্ষিত হয়ে পরবর্তী প্রশ্নের আরো সুন্দর উত্তর দেন এই কারনে পরীক্ষিত মহারাজ পূর্ব কথিত বিষয় উল্লেখ করে বলছেন এই সকল বৃত্তান্ত শুনে আমি কৃতার্থ হলাম যে বংশে স্বয়ং ভগবান অবতীর্ন হয়েছেন সেই বংশের অদ্ভূত কীর্তি আমি জানলাম। এই মহান ধর্মশীল রাজা গনের কারনেই ভগবান এই বংশে জন্ম নিয়েছেন।)
"বংশবিস্তারো" এবং বিস্তার পূর্বক বংশের বর্ননা করার অর্থ পুত্র, পৌত্রাদির বিস্তার পূর্বক বর্নন বোঝাচ্ছে।
সোম এই শব্দটি সোমসূর্যয়োঃ এই সমাসের প্রথম পদ রূপে ব্যাবহার হয়েছে। কারন শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান তার বংশে অবতীর্ন হয়েছেন।
(সাধারনত ব্যাকরণের নিয়ম অনুসারে শ্রেষ্ঠ ও কনিষ্ঠবাচক পদে দ্বন্দ্বসমাস হলে শ্রেষ্ঠবাচক পদই প্রথমে থাকে। চন্দ্র উপগ্রহ মাত্র সূর্যের আলোকে আলোকিত, তাই সূর্য্যই শ্রেষ্ঠ হওয়া উচিত। সূর্য্যসোময়োঃ হওয়া উচিত তা না বলে পরীক্ষিত মহারাজ সোমসূর্যয়োঃ বলছেন কেন? তার উত্তরে বলা হচ্ছে পরীক্ষিত মহারাজ জাগতিক সম্বন্ধে র থেকে ভগবত সম্বন্ধকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। চন্দ্রবংশে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অবতীর্ন হয়েছেন। সূর্যবংশে তার প্রথমব্যুহ বাসুদেব শ্রীরামচন্দ্র রূপে অবতীর্ন হয়েছেন। তাই স্বয়ং ভগবানের সম্বন্ধ গৌরবে চন্দ্রই শ্রেষ্ঠ আসন লাভের উপযুক্ত)
ভবতা (আপনি) অত্যন্ত শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অর্থে ব্যাবহার করা হয়েছে।
আপনি চন্দ্র সূর্য এই উভয়বংশে যেসকল রাজন্যবর্গ
জন্ম নিয়েছেন তাদের বিস্ময় উৎপন্ন কারী বা পরমঅদ্ভূত কীর্তি দিগ্বিজয়াদি চরিত কথা বর্নন করেছেন। যেমন উর্বশীর সঙ্গে পুরুরবার বিবাহ, ককুৎস্থ রাজার ইন্দ্রকে সহায়তা করা। (শ্রীমদভাগবতম ৯.৬ ও ৯.১৪ইত্যাদি অতিলৌকিক কাহিনী আপনি বর্নন করেছেন।
যদিও তৃতীয়স্কন্ধাদি তে স্বায়ম্ভূব মনু ও তার বংশে বিভিন্ন রাজাদের কীর্তি শুকদেব গোস্বামী বর্ননা করেছেন কিন্তু মহারাজ পরীক্ষিত কেবল সোমসূর্যয়োঃ ও উভয়বংশ্যানাং বলে চন্দ্র ও সূর্য বংশের কথাই উল্লেখ করেছেন কারন এই দুই বংশের সঙ্গে শ্রীযদুনাথ ও শ্রীরঘুনাথের সম্বন্ধ রয়েছে।
(বিষয়াসক্ত ব্যাক্তির যেমন কেবল বিষয়ের সম্বন্ধে ই চিন্তা করে ও বিষয়ের কথাতেই আগ্রহ। তেমন ভক্তের স্বভাব এই যে শ্রীভগবানের সম্বন্ধ গন্ধ পেলেই তাতেই মত্ত হয়ে যান। তাই শুকদেব বংশাদির বর্ননা করলেও পরীক্ষিত মহারাজ তা সব ত্যাগ করে কেবল এই দুই বংশের কথা বলেছেন।)
শ্রীজীবগোস্বামী কৃত ক্রমসন্দর্ভ টীকা
ॐ নমঃ কৃষ্ণায়। দশমে ক্রমসন্দর্ভে সন্দর্ভাণাং সমাহৃতিঃ। ক্রিয়তে যন্নিদেশেন স মেহনন্যগতে র্গতিঃ। অথ দশমস্কন্দস্য ক্রমসন্দর্ভঃ। নবমে দ্বাদশস্কন্ধ সম্বন্ধি দশলক্ষণানুসারেণ বংশ বংশানুচরিত দ্বারা দ্বিতীয় সম্বন্ধি তদনুসারেণ তদ্রূপ মন্বন্তর কথা ভেদ দ্বারা দশমপদার্থমধিগত্য তস্যচ তদস্তে নিজাভীষ্ট শ্রীকৃষ্ণরূপত্ব পর্য্যালোচনেন সুখবিশেষমুপালভ্য তথানুবদম্ তল্লক্ষণবিশিষ্টেহত্র কথা দ্বারা সাক্ষাত্তমেবাধিগন্তুং ঔৎকন্ঠ্যেন পৃচ্ছতি। কথিত ইত্যাদিভিঃ। তত্র সার্দ্ধেন তদনুবাদঃ। তন্দ্রেত্যর্দ্ধেনাভীষ্ট বিজ্ঞপ্তিঃ।। ১
টীকারঅনুবাদ:- যার নির্দেশে ভাগবত সন্দর্ভ নামক গ্রন্থের সার রূপ ক্রমসন্দর্ভের দশমস্কন্দ ব্যাখ্যা রচনা করছি সেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ই আমার অনন্য গতি।
মহাপুরাণের দশ লক্ষণ অনুসারে নবমস্কন্ধ পর্যন্ত মন্বন্তরাদি নয়টি পদার্থ বর্ননা হয়েছে। এবার দশম বিষয় বর্ননা হবে। আবার দ্বিতীয়স্কন্ধে বংশানুচরিত বর্ননে যদুবংশ বর্নন প্রসঙ্গে ও কৃষ্ণের আবির্ভাব কথা আসছে।
এখানে পরীক্ষিত নবমস্কন্দের বর্ননা শেষে দশমস্কন্দের এই দশটি লক্ষণের আশ্রয় শ্রীকৃষ্ণের কথা বর্ননা হবে, এবং এই দশমস্কন্দ স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের রূপ, যা তার নিজের পরম অভীষ্ট, তা আলোচনা হবে বলে পরম সুখ অনুভব করলেন। ও শুকদেবজী কে ঔৎসুক্যের সাথে জিজ্ঞাসা করলেন যাতে শুকদেবজীর মুখে কৃষ্ণলীলাদি বর্ননা শুনে সাক্ষাৎ ভগবান কে লাভ করতে পারেন। কারন শ্রীকৃষ্ণের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য যে— কৃষ্ণকথা যিনি শ্রবণ করেন তিনি কৃষ্ণকে লাভ করতে পারেন।
(সর্গ, বিসর্গ, স্থিতি, পোষণ, মন্বন্তর, ঈশানুকথা, আশ্রয়, নিরোধ, মুক্তি। এই দশটি মহাপুরাণের লক্ষণ।
দশমস্কন্দের বর্নিত বিষয় স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের বিগ্রহ যিনি আশ্রিত বা সর্গাদি নব পদার্থের উৎপত্তির হেতু, সকলের মূল আশ্রয়, ও জগতসমূহের আশ্রয়। তথাহি শ্রীধরস্বামী কৃত ভাবার্থ দীপিকার ১০/১/১
দশমে দশমং লক্ষ্যমাশ্রিতাশ্রয়বিগ্রহম্।
শ্রীকৃষ্ণাখ্যং পরং ধাম জগদ্ধাম নমামি তৎ।।
শ্রীল প্রভূপাদ ভক্তিবেদান্ত ভাষ্যে ব্যাখ্যা করেছেন নবম স্কন্দের ২৪ অধ্যায়ে ৬৪-৬৬ শ্লোকে শ্রীল শুকদেব গোস্বামী সূত্র রূপে কৃষ্ণ লীলা বর্ননা করেছেন। ভূভারলাঘবের জন্য শ্রীকৃষ্ণ বসুদেবের পুত্র রূপে জন্মগ্রহন করেন, নিজ অন্তরঙ্গ ভক্তদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক বিস্তারের জন্য জন্মের পর বৃন্দাবনে স্থানান্তরিত হন। বৃন্দাবনে অসুর সংহারাদি লীলা করেন, তারপর দ্বারকায় গিয়ে বিবাহাদি করেন ও পুত্র সন্তান উৎপন্ন করেন। গৃহস্থ জীবনের আদর্শ স্থাপনের জন্য নিজ পূজার উদ্দ্যেশ্যে বহু যজ্ঞানুষ্ঠান করেছিলেন।
জাতো গতঃ পিতৃগৃহাদ্ ব্রজমেধিতার্থো
হত্বা রিপূন্ সুতশতানি কৃতোরুদারঃ।
উৎপাদ্য তেষু পুরুষঃ ক্রতুভিঃ সমীজে
আত্মানমাত্মনিগমং প্রথয়ঞ্জনেষু।। ৬৬
Next verse>>>
শ্রীরাজোবাচ
কথিতো বংশবিস্তারো ভবতা সোমসূর্যয়োঃ।
রাজ্ঞাঞ্চোভয়বংশ্যানাং চরিতং পরমাদ্ভুতং।। ১
অনুবাদ:- পরীক্ষিত মহারাজ বললেন—হে প্রভূ! আপনি ইতিপূর্বেই চন্দ্র ও সূর্যবংশের রাজাদের অত্যন্ত মহান ও বিস্ময়জনক চরিত্র বিস্তারিত ভাবে বর্ননা করেছেন।
শ্রীধরস্বামী টীকা
ॐ নমঃ কৃষ্ণায়।
বিশ্বসর্গবিসর্গাদি নবলক্ষণ লক্ষিতং।
শ্রীকৃষ্ণাখ্যং পরং ধাম জগদ্ধাম নমামি তৎ।। ১
দশমে দশমং লক্ষ্যমাশ্রিতাশ্রয়বিগ্রহং।
ক্রীড়দ যদুকুলাম্ভোধৌ পরানন্দ মুদীর্য্যতে।। ২
দশমে কৃষ্ণসৎকীর্ত্তিবিতানায়ানুবর্ন্যতে।
ধর্ম্মগ্লানি নিমিত্তন্তু নিরোধো দুষ্টভূভূজাং।। ৩
প্রাকৃতাদি চতুর্দ্ধা যো নিরোধঃ সতু বর্ণিতঃ।
তত্তৎ প্রসঙ্গতঃ সৃষ্টি সংহারাদি নিরূপনৈঃ।। ৪
কৃতা নবতিরধ্যায়া দশমে কৃষ্ণকীর্ত্তয়ে।
আদ্যৈশ্চতুর্ভিরধ্যায়ৈ র্ব্রহ্ম প্রার্থনয়াবনেঃ।
ভারং হর্ত্তুং হরের্জন্ম সপ্রসঙ্গং নিরূপ্যতে।। ৫
গোকুলে মথুরায়াঞ্চ দ্বারাবত্যাং ততঃ ক্রমাৎ।
কৃষ্ণলীলা ত্রিধা প্রোক্তা তত্তদ্ভেদৈস্ত্বনেকধা।। ৬
সপঞ্চত্রিংশতাধ্যায়ৈর্বৃহদ্বৃন্দাবনাদিষু।
গোকুলে বসতো লীলা বর্ণ্যতে সুরদুষ্করা।। ৭
একেন যমুনা বারিণ্যক্রুরেণ কৃতা স্তুতিঃ।
একাদশভি রাখ্যাতা লীলা মধুপুরে কৃতা।। ৮
শেষৈর্দ্বারাবতী লীলা তন্নির্মাণাদি বর্ণ্যতে।
এবং নবতিরধ্যায়া দশমে বিশদার্থকাঃ।। ৯
তত্র তু প্রথমে কংসঃ স্বমৃত্যুং দেবকীসুতাৎ। শ্রুত্বা তীতোহবধীত্তস্যাঃ ষড়গর্ভানিতি বর্ণ্যতে। কৃষ্ণাবতারচরিতশ্রবণামৃতনির্বৃতঃ। উক্তানুবাদেনৌৎসুক্যাদ্রাজা পৃচ্ছতি তৎ পুনঃ।।
কথিতো বংশবিস্তার ইতি। ১
টীকারঅনুবাদ:- সর্গ বিসর্গাদি নয়টি লক্ষণের পরম আশ্রয়,এই জগতের পরম আশ্রয় ও পরম ধাম শ্রীকৃষ্ণ কে নমস্কার।
দশমস্কন্দের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য দশম পদার্থ, যিনি শরণাগত জনের আশ্রয় বিগ্রহ, যিনি পরম আনন্দ স্বরূপ, ও লীলা বিলাসের জন্য যিনি যদুবংশ রূপ সমুদ্র হতে উদিত হয়েছেন।
দশমস্কন্দে ধর্মের গ্লানি উপস্থিত হওয়ার কারনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা দুষ্ট রাজা গনের ধ্বংস হওয়ার কথা বর্ননা করে শ্রীকৃষ্ণের সৎকীর্ত্তি সমূহ ঘোষণা করা হয়েছে।
যদিও নিরোধ অর্থাৎ প্রাকৃত বস্তুর যে সৃষ্টি সংহারাদি চারটি অবস্থা আছে তা বিভিন্ন কথা প্রসঙ্গে বর্ননা করা হয়েছে।
দশম স্কন্দের ৯০টি অধ্যায়ে কৃষ্ণের লীলা মাহাত্ম্য বর্ননা রয়েছে। প্রথম চারটি অধ্যায়ে ভূভার হরণের জন্য ব্রহ্মার প্রার্থনায় শ্রীহরির জন্মাদি লীলা প্রসঙ্গক্রমে নিরূপন করা হয়েছে।
গোকুলে, মথুরায় ও দ্বারকায় এই ক্রমে কৃষ্ণ লীলা বর্ননা করা হয়েছে। যদিও এই তিনটি লীলায় বহুবিধ ভেদ রয়েছে।
এরপর ৩৫ টি অধ্যায়ে গোকুল লীলা বর্ননা করা হয়েছে যে সময় শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে বাস করেছিলেন, যে লীলা অনুভব করা দেবগনের ও দুষ্কর।
তারপর একটি অধ্যায়ে যমুনায় অক্রুর কৃত কৃষ্ণ স্তুতি বর্নন করা হয়েছে। ও ১১ টি অধ্যায়ে কৃষ্ণের মথুরা লীলা বর্ননা করা হয়েছে।
অন্তিমে শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা লীলা বর্ননা ও দ্বারকা নগরী স্থাপনের লীলা বলা হয়েছে। এভাবে দশমস্কন্দে ৯০টি অধ্যায়ে কৃষ্ণ লীলা বর্ননা হয়েছে।
দশমস্কন্দের প্রথম অধ্যায়ে কংস দৈববাণী তে দেবকী গর্ভে জাত পুত্রের দ্বারা নিজের মৃত্যু হবে শুনে দেবকীর প্রথম ছয় সন্তান কে হত্যা করেন।
শ্রীকৃষ্ণ অবতীর্ণ হয়ে কিরূপ লীলা বিলাসাদি করেছেন সেই প্রসঙ্গক্রমে কৃষ্ণলীলামৃত শ্রবণ করতে উৎসুক হয়ে কথিতো বংশবিস্তার ইত্যাদি বাক্যে রাজা পরীক্ষিত পুনরায় প্রশ্ন করেছেন।
শ্রী জীবগোস্বামী কৃত লঘুবৈষ্ণবতোষণী টীকা
শ্রীযুক্তো রাজা শ্রীরাজেতি শ্রীশব্দপ্রয়োগোহত্র শ্রীকৃষ্ণলীলারম্ভেহতিশয়েন প্রেম্না বিরাজমানত্বাৎ। টজভাবঃ সমাসান্তবিধেরনিত্যত্বাৎ। রাজোবাচেতি পাঠস্তু সাধারণ।
সর্বকথৈকমূলং শ্রীকৃষ্ণচরিতং বিস্তরেণ শ্রোতুং বক্তং শ্রীবাদরায়ণেঃ প্রহর্ষণার্থং তদুক্তমভিনন্দতি কথিত ইতি সার্দ্ধকেন। কথিতঃ প্রায়স্তত্তজ্জন্মকথা প্রবন্ধেনাপ্যুক্তঃ নতুদ্দেশমাত্রেণেত্যর্থঃ। তত্রাপি বংশানাং বিস্তারঃ প্রত্যেকং পুত্রপৌত্রাদি প্রপঞ্চো ভবতেতি পরমাদরাৎ। সোমস্য পূর্ব্বনিপাতস্তদ্বংশে সাক্ষাৎ শ্রীভগবদতরণেনাভার্হিতত্বাৎ। উভয়বংশ্যানাং চন্দ্রসূর্য্যবংশোদ্ভবানাং দিগ্বিজয়াদিচরিতঞ্চ কথিতম্। পরমম্ অদ্ভুতং বিস্ময়াবহম্। শ্রীপুরুরবঃককুৎস্বাদীনাম্ উর্ব্বশীপরিগ্রহেন্দ্রারোহণাদিনাত্যান্তালৌকিকত্বাৎ। যদ্যপি স্বায়ম্ভূবমন্বাদিবংশতদ্বংশ্যচরিতান্যপি তৃতীয়স্কন্ধাদৌ কথিতানি সন্তি তথাপি সোমসূর্যয়োরিতি উভয়বংশ্যানামিতি সর্ব্বাবতারশ্রেষ্ঠয়োঃ শ্রীযদুনাথরঘুনাথয়োস্তত্র তত্র সম্বন্ধাৎ।।১
টীকারঅনুবাদ:- শ্রীরাজ শব্দের অর্থ শ্রী যুক্তো রাজা। শ্রীকৃষ্ণ লীলা ব্যাখ্যা আরম্ভে রাজা পরিক্ষিতের হৃদয়ে অতিশয় প্রেমের স্ফূরণ হওয়ায় শ্রী এই শব্দ প্রয়োগ হয়েছে।
(প্রেম অন্তরে আবির্ভাব হলে, বাইরে ও নানা প্রকার ভাব বিকার প্রকাশ হয়ে পড়ে, নয়নে অশ্রু, অঙ্গে পুলক, বাক্যে গদগদাদি ভাব প্রকাশ করে প্রেমশোভায় শোভিত, ও প্রেমসম্পদে প্রকৃত মহারাজ হলেন। মহারাজ পরীক্ষিত রাজত্ব, রাজবেশাদি পরিত্যাগ করায় জাগতিক দৃষ্টিতে শ্রীহীন হলেও তত্ত্বজ্ঞ ব্যাক্তির দৃষ্টিতে যথার্থ শ্রী ধারণ করলেন।
তথাহি, চৈতন্য চরিতামৃতে
সম্পত্তির মধ্যে জীবের কোন সম্পত্তি গনি।
রাধাকৃষ্ণে প্রেম যার সেই বড় ধনী।। )
শ্রীরাজা শব্দের অন্তে সমাস বিধির অনিত্যতার জন্য ট চ পদের বিলোপ হয়েছে। সাধারনত রাজোবাচ এই পাঠ হয়(আর্ষ প্রয়োগ)
(শ্রী+রাজন+টচ্ (শ্রী যুক্ত রাজন) যেসব শব্দের শেষে অন থাকে, সমাসের পর টচ্ প্রত্যয় যোগ হওয়ায় অন লোপ হয়ে টচ্ এর অ জুড়ে যায়। তাই শ্রীরাজ হয়।)
পরীক্ষিত মহারাজ বক্তা মহর্ষি বাদরায়নি কে অভিনন্দিত ও হর্ষিত করে ছয়টি শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণের লীলাবলি যা সমস্ত তত্ত্বকথার মূল, তা বিস্তারপূর্বক শোনানোর জন্য বলছেন,
(প্রহর্ষণার্থং এই পদ ব্যাবহার করে শ্রীজীবগোস্বামী বোঝাচ্ছেন শ্রোতা যদি বক্তার বক্তব্য বিষয় হৃদয়ঙ্গম করতে পারে তবে বক্তার খুব আনন্দ ও উল্লাস হয়। তখন বক্তা আরো হর্ষিত হয়ে পরবর্তী প্রশ্নের আরো সুন্দর উত্তর দেন এই কারনে পরীক্ষিত মহারাজ পূর্ব কথিত বিষয় উল্লেখ করে বলছেন এই সকল বৃত্তান্ত শুনে আমি কৃতার্থ হলাম যে বংশে স্বয়ং ভগবান অবতীর্ন হয়েছেন সেই বংশের অদ্ভূত কীর্তি আমি জানলাম। এই মহান ধর্মশীল রাজা গনের কারনেই ভগবান এই বংশে জন্ম নিয়েছেন।)
"বংশবিস্তারো" এবং বিস্তার পূর্বক বংশের বর্ননা করার অর্থ পুত্র, পৌত্রাদির বিস্তার পূর্বক বর্নন বোঝাচ্ছে।
সোম এই শব্দটি সোমসূর্যয়োঃ এই সমাসের প্রথম পদ রূপে ব্যাবহার হয়েছে। কারন শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান তার বংশে অবতীর্ন হয়েছেন।
(সাধারনত ব্যাকরণের নিয়ম অনুসারে শ্রেষ্ঠ ও কনিষ্ঠবাচক পদে দ্বন্দ্বসমাস হলে শ্রেষ্ঠবাচক পদই প্রথমে থাকে। চন্দ্র উপগ্রহ মাত্র সূর্যের আলোকে আলোকিত, তাই সূর্য্যই শ্রেষ্ঠ হওয়া উচিত। সূর্য্যসোময়োঃ হওয়া উচিত তা না বলে পরীক্ষিত মহারাজ সোমসূর্যয়োঃ বলছেন কেন? তার উত্তরে বলা হচ্ছে পরীক্ষিত মহারাজ জাগতিক সম্বন্ধে র থেকে ভগবত সম্বন্ধকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। চন্দ্রবংশে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অবতীর্ন হয়েছেন। সূর্যবংশে তার প্রথমব্যুহ বাসুদেব শ্রীরামচন্দ্র রূপে অবতীর্ন হয়েছেন। তাই স্বয়ং ভগবানের সম্বন্ধ গৌরবে চন্দ্রই শ্রেষ্ঠ আসন লাভের উপযুক্ত)
ভবতা (আপনি) অত্যন্ত শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অর্থে ব্যাবহার করা হয়েছে।
আপনি চন্দ্র সূর্য এই উভয়বংশে যেসকল রাজন্যবর্গ
জন্ম নিয়েছেন তাদের বিস্ময় উৎপন্ন কারী বা পরমঅদ্ভূত কীর্তি দিগ্বিজয়াদি চরিত কথা বর্নন করেছেন। যেমন উর্বশীর সঙ্গে পুরুরবার বিবাহ, ককুৎস্থ রাজার ইন্দ্রকে সহায়তা করা। (শ্রীমদভাগবতম ৯.৬ ও ৯.১৪ইত্যাদি অতিলৌকিক কাহিনী আপনি বর্নন করেছেন।
যদিও তৃতীয়স্কন্ধাদি তে স্বায়ম্ভূব মনু ও তার বংশে বিভিন্ন রাজাদের কীর্তি শুকদেব গোস্বামী বর্ননা করেছেন কিন্তু মহারাজ পরীক্ষিত কেবল সোমসূর্যয়োঃ ও উভয়বংশ্যানাং বলে চন্দ্র ও সূর্য বংশের কথাই উল্লেখ করেছেন কারন এই দুই বংশের সঙ্গে শ্রীযদুনাথ ও শ্রীরঘুনাথের সম্বন্ধ রয়েছে।
(বিষয়াসক্ত ব্যাক্তির যেমন কেবল বিষয়ের সম্বন্ধে ই চিন্তা করে ও বিষয়ের কথাতেই আগ্রহ। তেমন ভক্তের স্বভাব এই যে শ্রীভগবানের সম্বন্ধ গন্ধ পেলেই তাতেই মত্ত হয়ে যান। তাই শুকদেব বংশাদির বর্ননা করলেও পরীক্ষিত মহারাজ তা সব ত্যাগ করে কেবল এই দুই বংশের কথা বলেছেন।)
শ্রীজীবগোস্বামী কৃত ক্রমসন্দর্ভ টীকা
ॐ নমঃ কৃষ্ণায়। দশমে ক্রমসন্দর্ভে সন্দর্ভাণাং সমাহৃতিঃ। ক্রিয়তে যন্নিদেশেন স মেহনন্যগতে র্গতিঃ। অথ দশমস্কন্দস্য ক্রমসন্দর্ভঃ। নবমে দ্বাদশস্কন্ধ সম্বন্ধি দশলক্ষণানুসারেণ বংশ বংশানুচরিত দ্বারা দ্বিতীয় সম্বন্ধি তদনুসারেণ তদ্রূপ মন্বন্তর কথা ভেদ দ্বারা দশমপদার্থমধিগত্য তস্যচ তদস্তে নিজাভীষ্ট শ্রীকৃষ্ণরূপত্ব পর্য্যালোচনেন সুখবিশেষমুপালভ্য তথানুবদম্ তল্লক্ষণবিশিষ্টেহত্র কথা দ্বারা সাক্ষাত্তমেবাধিগন্তুং ঔৎকন্ঠ্যেন পৃচ্ছতি। কথিত ইত্যাদিভিঃ। তত্র সার্দ্ধেন তদনুবাদঃ। তন্দ্রেত্যর্দ্ধেনাভীষ্ট বিজ্ঞপ্তিঃ।। ১
টীকারঅনুবাদ:- যার নির্দেশে ভাগবত সন্দর্ভ নামক গ্রন্থের সার রূপ ক্রমসন্দর্ভের দশমস্কন্দ ব্যাখ্যা রচনা করছি সেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ই আমার অনন্য গতি।
মহাপুরাণের দশ লক্ষণ অনুসারে নবমস্কন্ধ পর্যন্ত মন্বন্তরাদি নয়টি পদার্থ বর্ননা হয়েছে। এবার দশম বিষয় বর্ননা হবে। আবার দ্বিতীয়স্কন্ধে বংশানুচরিত বর্ননে যদুবংশ বর্নন প্রসঙ্গে ও কৃষ্ণের আবির্ভাব কথা আসছে।
এখানে পরীক্ষিত নবমস্কন্দের বর্ননা শেষে দশমস্কন্দের এই দশটি লক্ষণের আশ্রয় শ্রীকৃষ্ণের কথা বর্ননা হবে, এবং এই দশমস্কন্দ স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের রূপ, যা তার নিজের পরম অভীষ্ট, তা আলোচনা হবে বলে পরম সুখ অনুভব করলেন। ও শুকদেবজী কে ঔৎসুক্যের সাথে জিজ্ঞাসা করলেন যাতে শুকদেবজীর মুখে কৃষ্ণলীলাদি বর্ননা শুনে সাক্ষাৎ ভগবান কে লাভ করতে পারেন। কারন শ্রীকৃষ্ণের এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য যে— কৃষ্ণকথা যিনি শ্রবণ করেন তিনি কৃষ্ণকে লাভ করতে পারেন।
(সর্গ, বিসর্গ, স্থিতি, পোষণ, মন্বন্তর, ঈশানুকথা, আশ্রয়, নিরোধ, মুক্তি। এই দশটি মহাপুরাণের লক্ষণ।
দশমস্কন্দের বর্নিত বিষয় স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের বিগ্রহ যিনি আশ্রিত বা সর্গাদি নব পদার্থের উৎপত্তির হেতু, সকলের মূল আশ্রয়, ও জগতসমূহের আশ্রয়। তথাহি শ্রীধরস্বামী কৃত ভাবার্থ দীপিকার ১০/১/১
দশমে দশমং লক্ষ্যমাশ্রিতাশ্রয়বিগ্রহম্।
শ্রীকৃষ্ণাখ্যং পরং ধাম জগদ্ধাম নমামি তৎ।।
শ্রীল প্রভূপাদ ভক্তিবেদান্ত ভাষ্যে ব্যাখ্যা করেছেন নবম স্কন্দের ২৪ অধ্যায়ে ৬৪-৬৬ শ্লোকে শ্রীল শুকদেব গোস্বামী সূত্র রূপে কৃষ্ণ লীলা বর্ননা করেছেন। ভূভারলাঘবের জন্য শ্রীকৃষ্ণ বসুদেবের পুত্র রূপে জন্মগ্রহন করেন, নিজ অন্তরঙ্গ ভক্তদের সাথে প্রেমের সম্পর্ক বিস্তারের জন্য জন্মের পর বৃন্দাবনে স্থানান্তরিত হন। বৃন্দাবনে অসুর সংহারাদি লীলা করেন, তারপর দ্বারকায় গিয়ে বিবাহাদি করেন ও পুত্র সন্তান উৎপন্ন করেন। গৃহস্থ জীবনের আদর্শ স্থাপনের জন্য নিজ পূজার উদ্দ্যেশ্যে বহু যজ্ঞানুষ্ঠান করেছিলেন।
জাতো গতঃ পিতৃগৃহাদ্ ব্রজমেধিতার্থো
হত্বা রিপূন্ সুতশতানি কৃতোরুদারঃ।
উৎপাদ্য তেষু পুরুষঃ ক্রতুভিঃ সমীজে
আত্মানমাত্মনিগমং প্রথয়ঞ্জনেষু।। ৬৬
তাই পরীক্ষিত মহারাজ যেহেতু স্বভাবতই কৃষ্ণ ভক্ত ছিলেন তাই শ্রীকৃষ্ণ লীলা সম্পর্কে বিস্তৃত বিবরণ জানতে শুকদেব গোস্বামীর কাছে জিজ্ঞাসা করেন।)