Srimad bhagabatam 10-1-2

Srimad bhagabatam 10-1-2

Srimad bhagabatam  10.1.2 with  multiple commentaries
                                                     Next verse>>>
যদোশ্চ ধর্ম্মশীলস্য নিতরাং মুনিসত্তম। 
তত্রাংশেনাবতীর্ণস্য বিষ্ণোবীর্য্যাণি শংস নঃ।। ২
অনুবাদ:-হে মুনিশ্রেষ্ঠ আপনি অত্যন্ত পূণ্যবান এবং ধর্মনিষ্ঠ যদুবংশের ও বর্ননা করেছেন। এখন সেই যদুবংশে বলদেব সহ অবতীর্ণ ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অদ্ভুতও মহিমান্বিত লীলা সমূহ আমাদের কাছে বর্ননা করুন।
শ্রীধরস্বামীকৃত ভাবার্থ দীপিকা 
অংশেনেতি প্রতীতত্যতিপ্রায়েণোক্তং।। ২
টীকার অনুবাদ:- অংশ শব্দটি লোকপ্রতীতি অনুসারে বলা হয়েছে।
(অংশেণ শব্দ দ্বারা সাধারনে যা বলে কৃষ্ণ বিষ্ণুর অংশ ইত্যাদি রাজার প্রশ্নে ব্যাক্ত করা হয়েছে।)
জীবগোস্বামী কৃত লঘুবৈষ্ণবতোষনী 
যদোশ্চ বংশবিস্তার স্তদ্বংশ্যানাং চরিতং পরমাদ্ভুতং নিতরাং সম্যকতয়া কথিতং তত্র হেতুঃ ধর্ম্মশীলস্যেতি ধর্ম্মোহত্র ভগবদ্ভক্তি লক্ষণঃ। ধর্ম্মোমদ্ভক্তিকৃৎপ্রোক্ত ইতি শ্রী ভগবদুক্তেঃ। শ্রীযদোর্ভক্তিনিষ্ঠত্বমেকাদশস্কন্ধে প্রবন্ধেন বক্ষ্যতে। অতএবোক্তং শ্রীকুন্তীদেব্যা যদো প্রিয়স্যান্ববায় ইতি। পৃথকত্বেন তস্যোক্তিস্তদ্বংশে শ্রীযদুদেবাবতরণেন সর্ব্বতঃ শ্রৈষ্ঠাৎ। ক্রমেণাভীষ্টপ্রশ্নেচ্ছাতশ্চ।  মুনিষু সন্ উত্তমঃ মুনিসত্তমঃ শ্রীভগবদ্ভক্তঃ সত্তবঃ শ্রীকৃষ্ণে রতঃ। সত্তমস্তৎপদাব্জয়োঃ প্রেমবিশেষবানিত্যেবং সম্বোধনেন কথিতে কথ্যে চ সমর্থতোক্তা।।
অভীষ্টমাহ তত্রেত্যর্দ্ধকেন ধর্ম্মশীলত্বাদেব তত্র যদোর্বংশেহবতীর্ণস্য শ্রীগোলোকাখ্য নিজ পরম লোকাৎ স্বয়ং প্রপঞ্চেহভিব্যাক্তিমাগতস্য অংশেনেতি।  শ্রীধরস্বামীচরণৈরেব ব্যাখ্যাতং। তত্র প্রতীতিঃ সাধারণ জনানামেব জ্ঞেয়া।  নাহং প্রকাশঃ সর্ব্বস্য যোগমায়া সমাবৃত ইতি শ্রীভগবদগীতাতঃ। ততশ্চাংশেনাবতীর্ণস্যেতি অসর্ব্ব সুবোধ স্বভাবস্যেত্যর্থঃ যদ্বা অংশেন শ্রীবলদেবেন সহেতি। তস্যাপি বীর্য্যাণি শংস্যানীতি ভাবঃ। অর্থান্তরে। দর্শয়ামাস লোকং স্বং গোপানাং তমসঃ পরং। কৃষ্ণঞ্চ তত্র চ্ছন্দোভিঃ স্তূয়মানং সুবিস্মিতা ইত্যনেন সুষ্ঠু নিরূপয়িষ্যমাণব্যাখ্যাবিশেষময়বচনেন কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়মিত্যনেন চ বিরোধাপত্তেঃ। উক্তঞ্চ ব্রহ্মণা স্বসংহিতায়াং। গোলোকনাম্নি নিজধাম্নি তলেচ তস্য দেবী মহেশ হরিধামসু তেষু তেষু। তে তে প্রভাব নিচরা বিহিতাশ্চ যেন গোবিন্দমাদি পুরুষং তমহং ভজামীতি।। রামাদিমূর্ত্তিষু কলা নিয়মেন তিষ্ঠন্নানাবতারমকরোদ্ভুবনেষু কিন্তু। কৃষ্ণাঃ স্বয়ং সমভবৎ পরমঃ পুমান যো গোবিন্দমাদি পুরুষং তমহং ভজামি।। তত্র তত্র সন্দেহাস্তু নিরস্যন্তে। এবমন্যত্রাপি বিষ্ণোঃ সর্ব্ব ব্যাপকতয়া পরিপূর্ণতা পর্য্যবসানস্য স্বয়ং ভগবতঃ শ্রীকৃষ্ণস্যেত্যর্থঃ। নোহস্মান প্রতি বীর্য্যাণি মহাপ্রভাবময়চরিতানি শংস স্তুতিবৎ সোৎকর্ষং বর্ণয় ইতি শ্রীকৃষ্ণস্য চরিতানান্তু পরম পরমাদ্ভুতত্বং সূচিতং।  ন ইতি বহুত্বং তচ্ছুশ্রূষয়াত্মনো বহুমানাৎ। স্বসঙ্গিনামপেক্ষয়া বা সাচ কৃপয়া বিনয়েনৈব বা। যদ্বা নোহস্মাকং পান্ডবানাং যো বিষ্ণুস্তস্য স্তস্মিন ভক্তি স্তদ্বীর্য্য শ্রবণে লালসাচ সূচিতা।। ২
টীকার অনুবাদ:-রাজা যদুর বংশ সম্পর্কে ও তার বংশের রাজা দের অদ্ভূত কার্যকলাপ আপনি সম্পূর্ণ রূপে বর্ননা করেছেন। নিতরাং অর্থ সম্যকরূপে। কেন সম্পূর্ণ রূপে বর্ননা করেছেন তার কারন হলো "ধর্মশীলস্য" রাজা যদু ধার্মিক ছিলেন তাই। এখানে ধর্ম অর্থে ভগবানে ভক্তির কথা বলা হয়েছে। যেমন ভগবান বলেছেন—ধর্মো মদ্ভক্তিকৃৎ প্রোক্তঃ। (ভাঃ ১১/১৯/২৭) ধর্ম কাকে বলে যা আমার প্রতি ভক্তি জন্মায়। মহারাজ যদুর ভক্তিনিষ্ঠার কথা একাদশ স্কন্দে বর্ননা করা হবে। (ভাঃ ১১/৭-৯) তাই কুন্তী দেবী বলেছেন "যদোঃ প্রিয়স্যান্ববায়ে" (ভাঃ ১/৮/৩২)
কেচিদ আহুরজং জাতং পুণ্যশ্লোকস্য কীর্তয়ে।
যদোঃ প্রিয়স্যান্ববায়ে মলয়স্যেব চন্দনম্।।
কেউ কেউ বলেন পূণ্যবান রাজাদের মহিমান্বিত করার জন্য অজ হয়েও তিনি জন্মগ্রহন করেছেন। কেউ বলেন তোমার অন্যতম প্রিয়ভক্ত যদুর আনন্দ বিধানের জন্য জন্মরহিত হওয়া সত্ত্বেও তুমি জন্মগ্রহন করেছ। মলয় পর্বতের যশ বৃদ্ধির জন্য যেমন সেখানে চন্দন বৃক্ষের জন্ম হয় তেমনই তুমি মহারাজ যদুর বংশে জন্মগ্রহন করেছ।
(মহারাজ যদু কে ধর্মশীল বলা হয়েছে কেন? আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে পিতা যযাতির আদেশ অনুসারে পুত্র যদু তার জরাভার গ্রহন করেনি, পিতার আদেশ লঙ্ঘন করায় সে ধার্মিক নয়। তবু মহারাজ পরীক্ষিত পিতৃ আদেশ লঙ্ঘন কারী যদুকেও ধর্মশীল বলেছেন কারন উদ্ধব কে স্বয়ং ভগবান বলেছেন আমার সঙ্গে যার ভক্তি সম্বন্ধ রয়েছে তাই ধর্ম। তাই যদু পিতার আদেশ শুনে বিবেচনা করলেন এ দেহ কৃষ্ণ সেবার জন্য লাভ করেছি, তা জরাগ্রস্ত হলে শ্রীমন্দির মার্জন, পুষ্প তুলসী চয়ন, ইত্যাদি ভগবানের সেবার কার্য্য থেকে বঞ্চিত হবো। তাই পিতার আদেশ লঙ্ঘন করেও কৃষ্ণ সেবার জন্য, ভক্তির জন্য কর্ম করেছিলেন তাই তা ধর্মসঙ্গত হয়েছে। শাস্ত্রে বলা হয়েছে "আজ্ঞা গুরূণাং হ্যবিচারণীয়া।" গুরুজনের আজ্ঞা অবিচারণীয়। কিন্তু এই শাস্ত্রবাক্যের উদ্দ্যেশ্য এই যে গুরুবর্গের শাস্ত্র সম্মত আদেশ ই অবিচারে পালন করতে হবে। গুরু যদি শাস্ত্রসঙ্গত উপদেশ না করেন তবে বুঝতে হবে আমায় পরীক্ষা করার জন্যই গুরু এরূপ আদেশ করছেন। একদিন গোপালভট্ট গোস্বামীর শিষ্য হরিবংশ গোস্বামী একাদশীর দিন প্রসাদী তাম্বুল চর্বন করতে করতে গুরুদেবের কাছে এলে গোপাল ভট্ট গোস্বামী তাকে বলেন একাদশীর দিন কোনো রকম বিলাস ব্যসন নিষিদ্ধ কেন তুমি তাম্বুল সেবা করছো? হরিবংশ উত্তর দেয় রাধারানী তাকে কৃপা করে নিজ উচ্ছিষ্ট তাম্বুল প্রসাদ দিয়েছেন তাই তিনি তা গ্রহন করেছেন। তখন ভট্ট গোস্বামী তাকে বলেন গুরু কৃষ্ণ পরীক্ষা করার জন্যই শাস্ত্রবিরুদ্ধ আদেশ করেন। তাই ইহা রাধারানীর কৃপা মনে না করে পরীক্ষা বলে জানো। আর কখনো তাম্বুল সেবা করোনা।)
পরীক্ষিত মহারাজ রাজা যদুর কথা বিশেষ করে উল্লেখ করেছেন কারন রাজা যদু সকলের থেকে শ্রেষ্ঠ ছিলেন। তাই শ্রী যদুদেব তার বংশে অবতীর্ন হয়েছেন।  এবং ক্রমে ক্রমে রাজা পরীক্ষিত তার অভীষ্ট প্রশ্ন জিজ্ঞাসার জন্য অগ্রসর হচ্ছেন।
(কৃষ্ণ লীলা শ্রবণ করাই রাজার একান্ত অভীষ্ট। তাই তিনি প্রথমত বললেন চন্দ্র সূর্য বংশের বৃতান্ত শ্রবণ করেছি, এসম্বন্ধে আর আমার কোনো জিজ্ঞাস্য নেই। পরবর্তী শ্লোকে বললেন আপনি ধর্মশীল রাজা যদুর বংশ সম্পর্কে বর্ননা করেছেন তাও শুনেছি। সে সম্পর্কে আমার আর কোনো জিজ্ঞাস্য নেই। কিন্তু যদুবংশ প্রসঙ্গে নবম অধ্যায়ে অতি সংক্ষেপে কৃষ্ণ লীলা বলেছেন তা অতি বিস্তার পূর্বক শুনতে চাই। )
মুনিসত্তম শব্দের তাৎপর্য্য এই যে হে শুকদেব আপনি মুনিদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ।  কারন তিনি ভগবানের উত্তম ভক্ত।  সত্তর অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণে রতঃ। (যিনি শ্রীকৃষ্ণে রতি লাভ করেছেন) সত্তম অর্থাৎযিনি শ্রীকৃষ্ণের চরণকমলের প্রতি বিশেষ প্রেম লাভ করেছেন। তাই মুনিসত্তম এই সম্বোধন দ্বারা বোঝানো হয়েছে কথিত ও কথ্য অর্থাৎ আপনি যা বর্ননা করেছেন ও আমি যা প্রশ্ন করবো তার উত্তরে যা বলা হবে তাতে মুনিসত্তম ভিন্ন অন্য কেউ সক্ষম নয়।
(যিনি জগতের অতীত সচ্চিদানন্দ বস্তু মননে রত থাকেন তাকে মুনি বলা হয়।  মুনি গনের মধ্যে যিনি কৃষ্ণ ভক্ত তাকে সৎ বলা হয়। আর যিনি নিরন্তর শ্রীকৃষ্ণের ভজনে রত তিনি সত্তর। আর যিনি দাস্য সখ্য বাৎসল্যাদি সম্বন্ধে কৃষ্ণসেবা করেন তিনিই সত্তম। তাই পরীক্ষিত মহারাজ বলছেন হে শুকদেব গোস্বামী আপনি মুনিসত্তম, আপনি শ্রীকৃষ্ণের সহিত প্রেম সম্বন্ধে যুক্ত হয়ে নিরন্তর কৃষ্ণ লীলাবলি মনন করছেন, যে কৃষ্ণ লীলা ব্রহ্মা শিব অনন্তাদির ও দুর্জ্ঞেয়, কিন্তু প্রেম সম্বন্ধের দ্বারা আপনি তা সর্বদাই অনুভব করছেন তাই আপনিই কৃষ্ণলীলা বর্ননা করতে সমর্থ।)
এই দুই শ্লোকে পরীক্ষিত মহারাজ তার মনোভীষ্ট বলছেন। যিনি তার গোলোক নামক নিজ পরম ধাম থেকে এই জগতে আবির্ভূত হয়েছেন। ও ধর্মশীলতার কারনে রাজা যদুর বংশে অবতীর্ন হয়েছেন তার কীর্তিকলাপ বর্ননা করুন।
(তত্র অর্থাৎ সেই যদুরাজার বংশে ভগবান অবতীর্ণ হয়েছেন। ভগবানের ঐশ্বর্য্যময় লীলায় কারো সাথে পিতা মাতা প্রভৃতি সম্বন্ধ থাকেনা নিজ অচিন্ত্য শক্তি দ্বারা ভক্তমনোরথ পূর্ণ করার জন্য অবতীর্ন হন। যেমন ধ্রুবপ্রিয়, নরসিংহ, হংসাদি রূপে অবতীর্ণ হওয়া। আর মাধুর্য্যময়লীলায় পিতা মাতা ইত্যাদি সম্বন্ধ স্থাপন করে ভক্ত মনোরথ পূর্ণ করেন। তাই ভগবান যার সাথে সম্বন্ধ স্থাপন করবেন তিনি অবশ্যই শুদ্ধসত্ত্ব হবেন।
চৈতন্য চরিতামৃতে বলা হয়েছে—
মাতা, পিতা, স্থান, গৃহ, শয্যাসন আর
এসব কৃষ্ণের শুদ্ধসত্ত্বের বিকার।। আদি/৪/৬৫
এই জন্য কুন্তীদেবীর প্রার্থনায় বলেছেন
চন্দন যেমন মলয় পর্বতেই জন্মায় আপনিও তেমন নিজ প্রিয় ভক্তের কুলেই জন্মগ্রহন করেন। সেজন্যই ভগবান নিজ প্রিয় ভক্ত যদুর বংশেই অবতীর্ণ হয়েছেন। এখানে জন্মগ্রহন না বলে অবতীর্ণ কেন বলা হয়েছে? প্রাকৃত জীবদেহ মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম বা উৎপন্ন হয়। কিন্তু সচ্চিদানন্দময় ভগবান নিত্যসিদ্ধ তার শ্রীবিগ্রহ উৎপন্ন হয়না। জন্ম বলতে বোঝায় যার পূর্বে কোনো অস্তিত্ব ছিলনা ও মৃত্যুর পর আবার যার কোনো অস্তিত্ব থাকবেনা। কিন্তু ভগবানের দেবকী গর্ভ হতে আবির্ভাব এরকম নয়। জীবগন নিজ নিজ কর্মফল ভোগের জন্য ব্রহ্মান্ডে জন্ম নেয়, কিন্তু ভগবান মনোহর লীলায় তার ভক্তদের মন হরণ করার জন্য এই পৃথিবীতে আসেন তাই অবতীর্ণ বলা হয়েছে। ব্রহ্মস্তুতি তে তাই বলা হয়েছে
প্রপঞ্চ নিষ্প্রপঞ্চোহপি বিড়ম্বয়সি ভূতলে।
প্রপন্নজনতানন্দসন্দোহং প্রহিতুং প্রভো।।
হে ভগবন আপনি প্রাকৃত জগতের অতীত হয়েও প্রাকৃত জীবের অনুকরনে প্রাকৃত জগতে আবির্ভূত হন। আপনার শ্রীচরনাশ্রিত ভক্তবৃন্দের আনন্দবর্ধন ই আপনার এই করুণালীলার হেতু।)
অংশেনেতি এই পদের শ্রীধরস্বামী ব্যাখ্যা করেছেন যে "অংশেনেতি প্রতীতত্যতিপ্রায়েণোক্তং"। প্রতীতি অর্থাৎ সাধারন জনের বিশ্বাস অনুসারে অংশ বলা হয়েছে।
(সাধারন লোক যারা কৃষ্ণ তত্ত্ব সম্পর্কে অবগত নয় তারা কৃষ্ণ কে অংশাবতার ভাবে তাই লোকপ্রতীতি অনুসারেই পরীক্ষিত মহারাজ প্রশ্ন করেছেন নয়ত সভাস্থ লোকদের মনে প্রথম থেকেই সন্দেহ উৎপন্ন হতো। তাদের চিত্তচাঞ্চল্য উপস্থিত হলে বক্তার ও উল্লাস হবেনা।)
গীতায় ভগবান বলেছেন নাহং প্রকাশঃ সর্ব্বস্য যোগমায়া সমাবৃতঃ।। ৭/২৫ আমি যোগমায়া দ্বারা আবৃত থাকায় সকলের কাছে প্রকাশিত হইনা। তাই এই অর্থে অংশেন অবতীর্ণস্য এই পদের অন্য আরেকটি ব্যাখ্যা হয় যে অসর্ব্বসুবোধস্বভাবস্য— যার স্বরূপ সকলে পরিপূর্ণ রূপে জানতে সক্ষম নয়।
(যার যেই পরিমান যোগমায়ার আবরণ উন্মোচন হয়েছে সে সেই পরিমান ভগবান কে জানতে সক্ষম হয়। তাই যার অবতীর্ণ হয়ে এই জগতে লীলাদি অংশ মাত্রেই লোকে বুঝতে পারে সেই কৃষ্ণের লীলাদি আপনি বলুন। )
অথবা অংশেন পদের আরেকটি অর্থ হয়। যিনি তার অংশ বা বলদেবের সহিত অবতীর্ণ হয়েছেন। এবং বলদেবের ও কীর্তিকলাপ স্তুতি সহিত বর্ননা করুন।
(অংশেন পদের সহার্থে তৃতীয়া যোগে নিষ্পন্ন ধরা হলে অংশের সহিত এই অর্থ হয়। দশমস্কন্দে যেমন কৃষ্ণ লীলা বর্ননা আছে তেমন বলদেবের ও বিভিন্ন লীলা বর্ননা আছে যথা—প্রলম্ব বধ, ধেনুকাসুর বধ, বলরাম রাসলীলা, যমুনাকর্ষণ, তাই মহারাজ পরীক্ষিতের প্রশ্নে বলরামের লীলার কথাও এসছে।)
যদি অংশেন শব্দের যথাশ্রুত অর্থ ধরা হয় যে বিষ্ণুর অংশ শ্রীকৃষ্ণ অবতীর্ন হয়েছেন বা শ্রীকৃষ্ণ অংশাবতার তবে এই শাস্ত্রবাক্য সমূহের বিরোধ হয় যথা—
দর্শয়ামাস লোকং স্বং গোপানাং তমসঃ পরম্।(ভাঃ ১০/২৮/১৪) শ্রীকৃষ্ণ গোপগন কে তার পরম ধাম দর্শন করালেন। যা জড়াপ্রকৃতির অতীত।
কৃষ্ণঞ্চ তত্র চ্ছন্দোভিঃ স্তূয়মানং সুবিস্মিতা (ভাঃ১০/২৮/১৭)
এই শ্লোকের বিশেষ ব্যাখ্যা শ্লোকের টীকায় করা হবে।
কৃষ্ণস্তু ভগবান স্বয়ম (ভাঃ ১/৩/২৮)
আবার ব্রহ্মা কৃত সংহিতায় বলেছেন—
গোলোকনাম্নি নিজধাম্নি তলেচ তস্য
দেবী মহেশ হরিধামসু তেষু তেষু।
তে তে প্রভাব নিচরা বিহিতাশ্চ যেন
গোবিন্দমাদি পুরুষং তমহং ভজামি।। ৫/৪৩

রামাদিমূর্ত্তিষু কলা নিয়মেন তিষ্ঠন নানাবতারমকরোদ্ভুবনেষু কিন্তু।
কৃষ্ণাঃ স্বয়ং সমভবৎ পরমঃ পুমান যো
গোবিন্দমাদি পুরুষং তমহং ভজামি।। ৫/৩৯
এই সমস্ত বাক্য জনিত সন্দেহ পরবর্তী শ্লোক সমূহে নিরসন করা হবে।
তাই অংশেন শব্দের সাধারনের প্রতীত অর্থ পরিত্যাগ করা হল।
বিষ্ণু শব্দে স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে বোঝাচ্ছে। কারন বিষ্ণু শব্দের অর্থ হল যিনি সর্বত্র ব্যাপ্ত হয়ে আছেন, একমাত্র স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণই প্রাকৃত অপ্রাকৃত সর্বত্র ব্যাপ্ত হয়ে জগতে পরিপূর্ণ রূপে অবস্থান করছেন তাই তার এক নাম বিষ্ণু।
(বিষ্ণু শব্দের ধাতুপ্রত্যয় বিশ্লেষণ করে পাওয়া যায় বেবেষ্টি প্রাকৃতাপ্রাকৃতং সর্ব্বং ব্যাপ্নোতীতি বিষ্ণুঃ।)
বীর্য্য শব্দে মহাপ্রভাবময় চরিত্র বোঝাচ্ছে।
শংস শব্দের দ্বারা স্তুতিবৎ সোৎকর্ষং বর্নয় বোঝাচ্ছে।
(কিভাবে বর্ননা করবেন? পরীক্ষিৎ মহারাজ বলছেন লীলার উৎকর্ষ প্রকাশ করে বর্ননা করুন। নয়ত আমার মতো ভক্তিহীন প্রেমগন্ধলেশ শূন্য জীব কিভাবে তা আস্বাদন করবে। প্রেমিক ভক্তগন তো কৃষ্ণ লীলা বললেই আনন্দে বিভোর হয়।  কিন্তু যার প্রেম নেই সে তো কৃষ্ণ লীলা গ্রহন করতে পারেনা। তাই তার রুচির অনুকূল রূপে বলুন যাতে সে মাধুর্য্য গ্রহনে সমর্থ হয়।)
নঃ এই বহুবচন ব্যাবহারের কারন শ্রীকৃষ্ণ লীলা কথা প্রশ্ন করে নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করছেন তাই গৌরবার্থে বহুবচন হয়েছে।
অথবা তার সঙ্গে উপস্থিত সকল ঋষি মুনি ও সাধু জনের কাছে বর্ননা করুন এই অর্থে। এই যে সকলকে শোনানোর জন্য প্রার্থনা তা আমাদের প্রতি অপার কৃপা ও ভক্তোচিত বিনয়ের কারনে।
(কৃষ্ণ লীলা কথা ছিল ভক্ত চূড়ামনি গন শুকদেব ব্যাসদেব নারদাদি দের আস্বাদনের বস্তু, কিন্তু পরীক্ষিত মহারাজের কারনেই আজ ও আমরা কৃষ্ণ লীলা কথা শ্রবন করার সৌভাগ্য লাভ করছি। তাই কৃপা। বিনয় কেন? পরীক্ষিত মহারাজের মনের ভাব এই যে শ্রীকৃষ্ণ লীলা শ্রবণে আমার তো যোগ্যতা নেই। তাই সমবেত ভক্ত গনের নিকট তা বর্ননা করলে তাদের সঙ্গ প্রভাবে আমার ও শ্রবণ করা হবে।)
অথবা নঃ শব্দ দ্বারা আমরা পান্ডব রা বোঝাতে ব্যাবহার হয়েছে। পান্ডব গন বিষ্ণুর ঐকান্তিক ভক্ত তাই তার অনন্ত বীর্য্য পরাক্রম কীর্তিকলাপ আদি শ্রবণে লালসা বোঝাচ্ছে।
জীবগোস্বামী কৃত ক্রমসন্দর্ভ 
অংশেন শ্রীবলদেবেন সহ।। ২।৩
টীকার অনুবাদ:- অংশেন শব্দের অর্থ বলদেবের সাথে যিনি যদুবংশে অবতীর্ণ হয়েছেন।

<<< Previous Page