নবদ্বীপ মন্ডল পরিক্রমা

নবদ্বীপ মন্ডল পরিক্রমা

নবদ্বীপ ধাম ঔদার্য্য ধাম, কোন অবতারে যা হয়নি, এমনকি স্বয়ং ভগবান কৃষ্ণ ব্রজধামে ও যে লীলা করেননি তা নবদ্বীপ লীলায় করেছেন। ভক্তিবিনোদ ঠাকুর নবদ্বীপ ভাবতরঙ্গে বলেছেন—
অন্য তীর্থে অপরাধী দন্ডের ভাজন।
নবদ্বীপে অপরাধ সদাই মার্জন।।
তার সাক্ষী জগাই মাধাই দুই ভাই।
অপরাধ করি পাইল চৈতন্য নিতাই।। 
অন্যান্য তীর্থের কথা রাখ ভাই দূরে।
অপরাধী দৈত্য দন্ড পায় ব্রজপুরে।।
অন্য সকল অবতারে এমনকি ব্রজলীলায় ও দৈত্য সকল শ্রীকৃষ্ণের হাতে বধ হয়ে মুক্তি লাভ করেছে। কিন্তু নবদ্বীপ লীলায় অপরাধীর চিত্তশুদ্ধি হয়েছে। নিকুঞ্জলীলায় সেবাধিকার পেতে গেলে প্রথমে চিত্তশুদ্ধি হতে হবে। এই লীলায় ভগবান অপরাধীদের ও তার নিজজন করে নিয়ে সেবা অধিকার দান করেছেন। 
ষোল ক্রোশ নবদ্বীপ মন্ডল ভূমির মধ্যদিয়ে গঙ্গা প্রবাহিতা। গঙ্গার পূর্বদিকে অন্তর্দ্বীপ, সীমন্তদ্বীপ, গোদ্রুমদ্বীপ, ও মধ্যদ্বীপ এই চারটি দ্বীপ আছে। আর গঙ্গার পশ্চিমদিকে কোলদ্বীপ, ঋতুদ্বীপ, জহ্নুদ্বীপ, মোদদ্রুমদ্বীপ ও রুদ্রদ্বীপ এই পাঁচটি দ্বীপ আছে। এই নয়টি দ্বীপের জন্য নাম নবদ্বীপ। 
ভক্তিরত্নাকরে বলা হয়েছে—
পূর্বে অন্তর্দ্বীপ, শ্রীসীমন্তদ্বীপ হয়।
গোদ্রুমদ্বীপ, শ্রীমধ্যদ্বীপ চতুষ্টয়।।
কোলদ্বীপ, ঋতু, জহ্নু, মোদদ্রুম আর।
রুদ্রদ্বীপ এই পঞ্চ পশ্চিমে প্রচার।।
এই নবদ্বীপে নবদ্বীপাখ্যা এথায়।
প্রভূপ্রিয় শিবশক্ত্যাদি শোভে সদায়।।
পূর্বে এই নয়টি দ্বীপ কে পৃথক পৃথক ভাবে দেখা যেত। কারন সেই সময় দিব্য পবিত্র নদী সকল এখান দিয়ে বইত। এই নদী গুলির দ্বারা নয়টি দ্বীপ তৈরী হয়েছিল। বর্তমানে অধিকাংশ ই শুকিয়ে গেছে বা জলাশয়ের আকারে দেখতে পাওয়া যায়। এই ১৬টি নদী হল—
১) যমুনা বর্তমানে জলঙ্গী বা খয়রা নদী নামে পরিচিত স্বরূপ গঞ্জের ঘাট পেরিয়ে মায়াপুর আসতে এই নদী দর্শন করা যায়। 
২) গঙ্গা মায়াপুর থেকে কোলদ্বীপ যাওয়ার পথে দর্শন হয়। 
৩) ভোগবতী গৌরাঙ্গসেতুর কাছে দর্শন হয়। 
৪) অলকানন্দা নৃসিংহপল্লীতে দর্শন হয়। 
৫) কাবেরী
৬) সরস্বতী বর্তমানে পাতালগামিনী তাই অদৃশ্য। 
৭) তাম্রপর্ণী
৮) ব্রহ্মপুত্র 
৯) সরযূ
১০) মানস গঙ্গা গৌরাঙ্গসেতুর কাছে দর্শন হয়। 
১২) কৃতমালা
১৩) বিদ্যাধরী
১৪) নর্মদা
১৫) গোমতী বর্তমানে মধ্যদ্বীপে হংসবাহন শিব, নৈমিষারণ্য দর্শন করে পুষ্কর তীর্থ যাওয়ার পথে দর্শন হয়। 
১৬) গোদাবরী বা গন্ডকী নদী হরিহর ক্ষেত্রের পাশেই দর্শন হয়। 
নবদ্বীপ ধাম মাহাত্ম্যে—
মধ্যে মূল গঙ্গাদেবী রহে অনুক্ষণ।
অপর প্রবাহে অন্য পূণ্যনদীগণ‌।
গঙ্গার নিকটে বহে যমুনাসুন্দরী।
অন্য ধারা মধ্যে সরস্বতী বিদ্যাধরী।।
তাম্রপর্ণী কৃতমালা ব্রহ্মপুত্র ত্রয়।
যমুনার পূর্বভাগে দীর্ঘধারাময়।।
সরযূ নর্ম্মদা সিন্ধু কাবেরী গোমতী।
প্রস্থে বহে গোদাবরী সহ দ্রুতগতি।।
এই সব ধারা পরস্পর করি ছেদ।
এক নবদ্বীপে নববিধ করে ভেদ।।
যোগমায়া শক্তির প্রভাবে কখনো এই সকল ধারা শুষ্ক হয়, কখনো আবার জলময় হয়, কখনো নদীগর্ভে গিয়ে সেই সব স্থান অদৃশ্য হয় আবার পুনরায় দর্শন দেয়। 
নবদ্বীপের প্রতিটি দ্বীপ নবধা ভক্তির একেকটি অঙ্গকে নির্দেশ করে। 
১) সীমন্তদ্বীপ শ্রবণ
২) গোদ্রুমদ্বীপ কীর্তন
৩) মধ্যদ্বীপ স্মরণ
৪) কোলদ্বীপ পাদসেবন
৫) ঋতুদ্বীপ অর্চন
৬) জন্হুদ্বীপ বন্দন
৭) মোদদ্রুম দ্বীপ দাস্য
৮) রুদ্রদ্বীপ সখ্যম
৯) অন্তর্দ্বীপ আত্মনিবেদনম। 
পূর্ব পূর্ব অবতারে ভগবান যে ধামে যে লীলা করে থাকেন, নবদ্বীপে গুপ্তভাবে সে সমস্ত লীলা প্রকাশ করেছেন। 
বৃন্দাবনের‌‌ দ্বাদশ বন যেভাবে নবদ্বীপে প্রকট হয়েছে—
গোকুল মহাবন:- অন্তর্দ্বীপে যোগপীঠ 
মথুরা:- চাঁদকাজী র সমাধি
নন্দগ্রাম:- গোদ্রুম দ্বীপ
মধুবন:- পৃথুকুন্ড 
বহুলাবন:- কোলদ্বীপ 
ভদ্রবন:- জহ্নুদ্বীপ 
গিরি গোবর্দ্ধন:- কোলদ্বীপের  কুলিয়া পাহাড়পুর 
ভান্ডীরবন:- মোদদ্রুম দ্বীপ 
কাম্যবন:- মোদদ্রুম দ্বীপের মহৎপুর পান্ডবরা এখানে বাস করেছিল। 
তালবন:- মায়ামারীর মাঠ সীমন্তদ্বীপ 
বেলবন:- রুদ্রদ্বীপের বেলপুকুর 
খদিরবন:- চম্পাহাটি 
রাধাকুন্ড:- ঋতুদ্বীপ

সর্বপ্রথম নিত্যানন্দ প্রভূর শ্রীজীব গোস্বামীকে নিয়ে নবদ্বীপের তীর্থ সমূহ দর্শন করান। 
শ্রী ঈশান ঠাকুর শ্রীনিবাস আচার্য্য, নরোত্তম দাস ঠাকুর ও রামচন্দ্র কবিরাজকে নিয়ে নবদ্বীপ পরিক্রমা করান। 
নবদ্বীপের তীর্থ সমূহ লুপ্ত হলে শ্রীল সচ্চিদানন্দ ভক্তিবিনোদ ঠাকুর গৌরজন্মভূমি ও প্রাচীন তীর্থ গুলি উদ্ধার করে নবদ্বীপ মন্ডল পরিক্রমা পুনঃপ্রচলন করেন। 

সীমন্তদ্বীপ পরিক্রমা
গোদ্রুমদ্বীপ পরিক্রমা
মধ্যদ্বীপ পরিক্রমা
কোলদ্বীপ পরিক্রমা
ঋতুদ্বীপ পরিক্রমা
মোদদ্রুম দ্বীপ পরিক্রমা
জহ্নুদ্বীপ পরিক্রমা
রুদ্রদ্বীপ পরিক্রমা