।। ২।।
অহং সোমমাহনসং বিভর্ম্ম্যহং ত্বষ্টারমুত পূষণং ভগম্।
অহং দধামি দ্রবিণং হবিষ্মতে সুপ্রাব্যে যজমানায় সুন্বতে।।
অনুবাদ:- শত্রুহনন কারী চন্দ্রমাকে, আমিই ধারণ করি, আমিই ত্বষ্টা ও পূষা ও ভগকে ধারণ করি, যে যজমান যজ্ঞসামগ্রী আয়ােজনপূর্বক এবং সােমরস প্রস্তুত করে দেবতা দেরকে উত্তমরূপে সন্তুষ্ট করে, আমিই তাকে ফল দান করি। |
গৌড়ীয় ভাষ্য
“সোমং আহনসম" অর্থাৎ দেবশত্রুগণকে হত্যাকারী চন্দ্র দেব। পূষা, ত্বষ্টা ভগ ইত্যাদি সূর্য্য দেবের নাম। বিভর্ম্মি অর্থাৎ ধারণ করি।
চন্দ্র, পূষা, ত্বষ্টা ভগ আদি সমস্ত দেবগণ যে বিষ্ণুর থেকেই জাত ও বিষ্ণুর দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত তা পূর্বেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে। পুনরায় স্থূণানিখনন ন্যায়ে (একটি খুঁটি মাটিতে পোঁতার পর যেমন তাকে বারবার ঠুকে মজবুত করে পোঁতা হয়) সেই সিদ্ধান্তকে সুদৃঢ় করা হচ্ছে।
পরম পুরুষ বিষ্ণুর থেকেই সূর্য চন্দ্র ইন্দ্র অগ্নি বায়ূ সৃষ্টি হয়েছে যথা পুরুষ সূক্ত এ বলা হয়েছে—
চন্দ্রমা মনসো জাতশ্চক্ষোঃ সূর্যো অজায়ত
মুখাদিন্দ্রশ্চাগ্নিশ্চ প্রাণাদবায়ুরজায়ত।। (ঋগ্বেদ ১০/৯০/১৩, শুক্লযজুর্বেদ
অনুবাদ:- সেই পুরুষের মন থেকে চন্দ্র, চক্ষু থেকে সূর্য্য, মুখ থেকে ইন্দ্র ও অগ্নি এবং প্রাণ থেকে বায়ুর উৎপত্তি হল।
শুক্লযজুর্বেদ এ এই পুরুষ সুক্তের অন্তিম শ্লোকে বলা হয়েছে এই পরম পুরুষ হলেন বিষ্ণু। লক্ষ্মী ও ভূদেবী যার দুই পত্নী।
শ্রীশ্চ তে লক্ষ্মীশ্চতে পত্নৌ অহোরাত্রে পার্শ্বে নক্ষত্রাণি রূপমশ্বিণৌ ব্যাত্তম। শুক্ল যজুর্বেদ (৩১.২২)
পুরুষ বলতে যে বিষ্ণুকেই বোঝায় তা শতপথ ব্রাহ্মণে বলা হয়েছে—
পুরুষো হ নারায়ণোঽকাময়ত। (শতপথ ব্রাহ্মণ ১৩.৪.১)
অনুবাদ:- পরম পুরুষ নারায়ণ ইচ্ছা করলেন।
বিষ্ণুই সেই ব্রহ্ম যিনি সকল দেবতাগণের নিয়ন্ত্রক ও ধারক রূপে এই সূক্তে স্তুত হয়েছেন।
জৈমিনী আদি ঋষিদের মতে যজ্ঞ, দান ইত্যাদি পূণ্যকর্মের ফলে সৃষ্ট অপূর্ব ই ফলদান করে। কর্ম এর জন্য ই কর্মফল প্রাপ্ত হয় এর সঙ্গে ঈশ্বরের কোনো আবশ্যকতা নেই। কারন স্বর্গকামী পুরুষ যাগ করবে ইত্যাদি নির্দেশ রয়েছে যথা যজুর্বেদ ২.৫.৫ এ বলা হয়েছে যজেত স্বর্গকামঃ।
সেই শঙ্কা নিরাস করে এই সূক্তে ঋষিকা বাক বলছেন ব্রহ্ম ই যজ্ঞের ফলদান করেন। আমিই যজমান অর্থাৎ যজ্ঞফলকামী গণকে দ্রবিণং অর্থাৎ যজ্ঞফল দধামি অর্থাৎ দান করি। ব্রহ্মসূত্রেও সূত্রকার ফলমত উপপত্তেঃ (৩.২. ৩৭) সূত্রে বলেছেন জীবগণের ঐহিক ও পারলৌলিক ভোগ ও অপবর্গ রূপ ফল ও পরমেশ্বর এর থেকেই সম্পন্ন হয়ে থাকে। সর্বশক্তি সম্পন্ন পরমেশ্বরের পক্ষেই ফলদান সম্ভব।
বৃহদারণ্যক উপনিষদেও বলা হয়েছে ব্রহ্ম ই যজ্ঞের ফল দান করেন যথা—
স বা এষ মহানজ আত্মাঽন্নাদোবসুদানঃ (বৃহদারণ্যক ৪.৪.২৪)
অনুবাদ:- সেই এই মহান অজ আত্মাই অন্ন ও ধনদাতা।
এই যজ্ঞফলদাতা ব্রহ্ম হলেন স্বয়ং বিষ্ণু। যজ্ঞ হচ্ছে বিষ্ণুর উপাসনা। সকল যজ্ঞ মন্ত্র বিষ্ণুর স্তব কীর্তন। এবং যজ্ঞকারীই বৈষ্ণব। যজ্ঞকারী পুরুষ অর্থাৎ বৈষ্ণব কে বিষ্ণুই পালন, রক্ষা ও ফল দান করেন। কারন শতপথ ব্রাহ্মণ ও ঐতরেয় ব্রাহ্মণে বলা হয়েছে—
শতপথ ব্রাহ্মণ ১৪/১/১/৫
যজ্ঞো বৈ বিষ্ণুঃ
অনুবাদ:- যজ্ঞ বিষ্ণুর উদ্দেশ্যই করা হয়।
ঐতরেয় ব্রাহ্মণ ১/৩/৪
বৈষ্ণবো ভবতি বিষ্ণুর্বৈযজ্ঞ স্বয়মেবৈনং
তদ্দেবতয়া স্বেন চ্ছন্দসা সম্বর্দ্ধয়ত
অনুবাদ:- বিষ্ণুমন্ত্রে দীক্ষিত ব্যাক্তি বৈষ্ণব। যজ্ঞই বিষ্ণু। সেই বিষ্ণু স্বয়ং এর স্বয়ং। তিনি স্বয়ংই স্বাধীনভাবে সেই পুরুষের(বৈষ্ণবের) বর্ধন করে থাকেন।
ঋক বেদে ও বলা হয়েছে বিষ্ণুই যজমান দের কে যজ্ঞফল প্রদান করেন।
আ যো বিবায় সচথায় দৈব্য ইন্দ্রায় বিষ্ণুঃ সুকৃতে সুকৃত্তরঃ।
বেধা অজিন্বৎ ত্রিষধস্থ আর্যমৃতস্য ভাগে যজমানমাভজৎ।।
১.১৫৬.৫
অনুবাদ:- পরমধামে বাসকারী অতিশয় শোভনকর্ম্মা বিষ্ণু ইন্দ্রের সাথে মিলিত হয়ে আসেন। ত্রিভুবন তার আসন, আর্য্যগণের সহায়ক, ও তিনি যজমান গণকে যজ্ঞের ভাগ প্রদান করেন।
তাই শ্রীমদ্ভগবদগীতায় শ্রীকৃষ্ণ ও বলেছেন
অহং হি সর্বযজ্ঞানাং ভোক্তা চ প্রভুরেব চ।। (গীতা ৯.২৪)
<<Previous Next>>