চাতরা, কাশীশ্বর পন্ডিতের শ্রীপাট
শ্রীরামপুরে চাতরা চৌধুরীপাড়ায় কাশীশ্বর পন্ডিতের শ্রীপাট।
চাতরা বল্লভপুরে সেবা অনুপাম।
ভক্তগণ যে যে ছিলা কহি তার নাম।।
কাশীশ্বর, শঙ্করারণ্য, শ্রীনাথ আর।
শ্রীরুদ্রপন্ডিত আদি বাস সবাকার।। (শ্রীপাট পর্য্যটন)
কাশীশ্বর পন্ডিত ছিলেন মহাপ্রভুর গুরুদেব ঈশ্বরপুরীর সেবক। পরে ঈশ্বরপুরী অপ্রকট হলে তিনি নীলাচলে যান ও মহাপ্রভুর সেবক নিযুক্ত হন। বৃন্দাবনে শ্রীরূপ গোস্বামীপাদ গোবিন্দদেবজী বিগ্রহ প্রকট করলে মহাপ্রভূ গৌরগোবিন্দ বিগ্রহ সহ কাশীশ্বরপন্ডিত কে বৃন্দাবনে পাঠান। গোবিন্দদেবের পাশে গৌরগোবিন্দ বিগ্রহ রেখে তিনি সেবা করতে থাকেন। তিনি গোবিন্দদেবের প্রথম পূজারী ছিলেন।
ঈশ্বরপুরীর শিষ্য ব্রহ্মচারী কাশীশ্বর।
শ্রীগোবিন্দ নাম তার প্রিয় অনুচর।।
তাঁর সিদ্ধিকালে দোঁহে তার আজ্ঞা পাইয়া।
নীলাচলে প্রভুস্থানে মিলিল আসিয়া।।
গুরুর সম্বন্ধে মান্য কৈল দোঁহাকারে।
তাঁর আজ্ঞা মানি সেবা দিলেন দোঁহারে।।
অঙ্গসেবা গোবিন্দেরে দিলেন ঈশ্বর।
জগন্নাথ দেখিতে আগে চলে কাশীশ্বর।।
অপরশ যায় গোঁসাই মনুষ্য গহনে।
মনুষ্য ঠেলি পথ করে কাশী বলবানে।।
চৈ.চ আদি/১০/১০৬
শ্রীল প্রভুপাদ কৃত তাৎপর্য্য:- চৈ.চ আদি/১০/১০৬
নীলাচলে প্রধান ভক্তদের তালিকায় কাশীশ্বর গোস্বামী ছিলেন অষ্টাদশতম ও গোবিন্দ ছিলেন উনবিংশতিতম শ্রীপাদ ঈশ্বরপুরী এই জগৎ থেকে অপ্রকটের পূর্বে তাদের কে নীলাচলে শ্রীচৈতন্যমহাপ্রভুর কাছে যেতে আদেশ দিয়েছিলেন। সেই আদেশ পেয়ে তারা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কাছে এসেছিলেন। কাশীশ্বর ও গোবিন্দ দুজনেই ছিলেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর গুরু ভ্রাতা। তারা আসা মাত্রই মহাপ্রভু তাদের যথাযোগ্য সম্মান প্রদর্শন করেছিলেন। তাদের কে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু অত্যন্ত সম্মান করলেও শ্রীল ঈশ্বরপুরীর আদেশে তাদের সেবা গ্রহণ করতেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু গোবিন্দকে তার অঙ্গসেবা করতে দিলেন ও কাশীশ্বরকে জগন্নাথ মন্দিরে যাওয়ার সময় তার সামনে মানুষের ভিড় ঠেলে যাওয়ার পথ করে দেওয়ার সেবা দিলেন।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু যখন জগন্নাথ মন্দিরে যেতেন তখন যাতে কেউ তাকে স্পর্শ করতে না পারে সেজন্য অত্যন্ত বলবান কাশীশ্বর হাত দিয়ে ভিড় ঠেলে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর যাওয়ার পথ করে দিতেন।
কাশীশ্বর মহিমা কহিতে কেবা জানে।
শ্রী গৌর গোবিন্দ যে আনিল বৃন্দাবনে।
ভুপ্রিয় কাশীশ্বর বিদিত ভুবনে।
ভুপ্রিয় কাশীশ্বর বিদিত ভুবনে।
শ্রীরূপ সনাতন মগ্ন যার গুণে।। (ভক্তিরত্নাকর ৫/৪৪৪)
গৌর গনোদ্দেশ দীপিকায় বলা হয়েছে— পূর্বে বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণের দুই প্রিয় সেবক ভৃঙ্গার ও ভঙ্গুর গৌরলীলায় কাশীশ্বর ও গোবিন্দ হয়ে প্রকট হয়েছেন।
পুরা বৃন্দাবনে স্থিত চেটৌ স্থিতৌ ভৃঙ্গার ভঙ্গুরৌ।
শ্রী কাশীশ্বর গোবিন্দৌ তৌ জাতৌ প্রভু সেবকৌ।।১৩৭
তার শ্রীপাট ও স্বরূপ সম্পর্কে দুটি মত দেখা যায়—বৈষ্ণবাচার দর্পণে- রসবতী সখী যে কাশীশ্বর ঠাকুর।চৈতন্যের শাখা বাস বল্লভপুর।।
চৈতন্য সঙ্গীতায়- কিঙ্কিণী মহাশয় চাতরায় উপনীত।কাশীশ্বর ঠাকুর বলি জগতে বিদিত।।
মতান্তরে চাতরা শ্রীপাট টি কাশীনাথ পন্ডিতের। তবে কাশীনাথ পন্ডিত সম্পর্কে যা জানা যায় তাতে মনে হয় তিনি নবদ্বীপ বাসী ছিলেন। এমন হতে পারে পরে তিনি নবদ্বীপের বাস ত্যাগ করে চাতরায় বসবাস করেন।
কাশীনাথ পন্ডিত
কাশীনাথ ছিলেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বিবাহের সংযোগ কর্তা ব্রাহ্মণ পন্ডিত। তিনি রাজপন্ডিত সনাতনকে তার কন্যা বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর সাথে মহাপ্রভুর বিবাহের পরামর্শ দেন।
কাশীনাথ ছিলেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বিবাহের সংযোগ কর্তা ব্রাহ্মণ পন্ডিত। তিনি রাজপন্ডিত সনাতনকে তার কন্যা বিষ্ণুপ্রিয়া দেবীর সাথে মহাপ্রভুর বিবাহের পরামর্শ দেন।
কাশীনাথ পন্ডিত শ্রীশচীর অজ্ঞাতে।
বিবাহ ঘটনা যত্নে কৈল তার সাথে।। ভক্তিরত্নাকর ১২/১৩৮১)
গৌরগণোদ্দেশ দীপিকা য় বলা হয়েছে—পূর্বে কৃষ্ণলীলায় যিনি সত্রাজিত ছিলেন ও নিজ কন্যা সত্যভামার সাথে শ্রীকৃষ্ণের বিবাহের সম্বন্ধ করেন গৌরলীলায় তিনিই কাশীনাথ পন্ডিত।
যশ্চ সত্রাজিতা বিপ্রঃ প্রহিতো মাধবং প্রতি।
সত্যোদ্বাহায় কুলকঃ শ্রীকাশীনাথ এব সঃ।। ৫০
কাশীশ্বর বা কাশীনাথ পন্ডিতের ভগ্নীর তিন পুত্র হয়। রামনাথ, রুদ্ররাম ও লক্ষণ। বাল্যকালে রুদ্রপন্ডিত চাতরায় তার মামা কাশীশ্বরের গৃহে প্রতিপালিত হন। রুদ্রপন্ডিত বল্লভপুরে রাধাবল্লভ ও লক্ষণ পন্ডিত সাঁইবোনায় শ্রীনন্দদুলাল বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন।
Gaur Vishnupriya Deity Worshipped by kashishwar Pandit |
চাতরা কাশীশ্বর পন্ডিতের শ্রীপাট মন্দির
মন্দিরে কাশীশ্বর পন্ডিতের সেবিত শ্রী গৌর বিষ্ণুপ্রিয়া, ও রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ আছে। মাঝের শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহ কাশীশ্বর পন্ডিতের সেবিত। বিগ্রহের পা ভেঙ্গে যাওয়ায় তার প্রতিমূর্তি পাশে রাধারানীর সাথে সেবা হচ্ছেন। প্রাচীন মূর্তিটি বিসর্জন দেওয়া হয়নি মাঝখানে রাখা হয়েছে। দুপাশে গৌর বিষ্ণুপ্রিয়া ও রাধাকৃষ্ণের প্রতিমূর্তি বিগ্রহ আছে। এখানে গৌর মূর্তিটি অপূর্ব সুন্দর বংশীধারী বিগ্রহ।
মন্দিরে কাশীশ্বর পন্ডিতের সেবিত শ্রী গৌর বিষ্ণুপ্রিয়া, ও রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ আছে। মাঝের শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহ কাশীশ্বর পন্ডিতের সেবিত। বিগ্রহের পা ভেঙ্গে যাওয়ায় তার প্রতিমূর্তি পাশে রাধারানীর সাথে সেবা হচ্ছেন। প্রাচীন মূর্তিটি বিসর্জন দেওয়া হয়নি মাঝখানে রাখা হয়েছে। দুপাশে গৌর বিষ্ণুপ্রিয়া ও রাধাকৃষ্ণের প্রতিমূর্তি বিগ্রহ আছে। এখানে গৌর মূর্তিটি অপূর্ব সুন্দর বংশীধারী বিগ্রহ।
মন্দিরের সামনে দুটি দোলমঞ্চ আছে।
মন্দিরের মধ্যে একটি কুন্ড ও একটি সুড়ঙ্গ পথ আছে। এখন সাপের ভয়ে এটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রবাদ আছে একসময় মন্দিরের কাছ দিয়ে গঙ্গা প্রবাহিত হত। এখন গঙ্গা অনেক দূরে সরে গেছে।
মন্দিরের মধ্যে একটি কুন্ড ও একটি সুড়ঙ্গ পথ আছে। এখন সাপের ভয়ে এটিকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রবাদ আছে একসময় মন্দিরের কাছ দিয়ে গঙ্গা প্রবাহিত হত। এখন গঙ্গা অনেক দূরে সরে গেছে।
কিভাবে যাবেন:-
হাওড়া ব্যান্ডেল রেলপথে শ্রীরামপুর স্টেশনে এসে এই শ্রীপাটে যাওয়া যায়। চাতরা দোলতলা বললে টোটো বা রিকশায় স্টেশন থেকে এখানে আসা যায়।
হাওড়া ব্যান্ডেল রেলপথে শ্রীরামপুর স্টেশনে এসে এই শ্রীপাটে যাওয়া যায়। চাতরা দোলতলা বললে টোটো বা রিকশায় স্টেশন থেকে এখানে আসা যায়।
নিকটবর্তী দর্শনীয় স্থান:-
বল্লভপুর শ্রীপাট কি.মি
মদনমোহন মন্দির
মাহেশ শ্রীপাট
মহাপ্রভু বিশ্রাম স্থান
কানাইয়ালাল
বল্লভপুর শ্রীপাট কি.মি
মদনমোহন মন্দির
মাহেশ শ্রীপাট
মহাপ্রভু বিশ্রাম স্থান
কানাইয়ালাল
কানাইলাল বিগ্রহ
মহাপ্রভূ সন্ন্যাস নিয়ে পুরী যাওয়ার সময় বৈদ্যবাটী নিমাইতীর্থ ঘাট থেকে প্রাচীন কানাইয়ালাল মন্দিরে আসেন। শ্রীবিগ্রহটি প্রমান আকৃতির নটবর বেশে একলা শ্রীকৃষ্ণ। প্রাচীন মন্দিরটি গঙ্গা গর্ভে চলে যাওয়ায় শ্রীরামপুর যুগল আড্যি ফেরী ঘাটে এই বিগ্রহ সেবিত হচ্ছেন। ১৯৬২ সালে জগন্নাথ ও নিতাই গৌর বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। শ্রীরামপুর স্টেশন থেকে চাতরা যাওয়ার পথে ফেরীঘাটে এই বিগ্রহ দর্শনীয়।
Kanhaiya Lal |
মহাপ্রভু বিশ্রাম স্থল
পুরী যাওয়ার পথে বৈদ্যবাটী হয়ে এইখানে মহাপ্রভূ একদিন বিশ্রাম করেছিলেন বলে জনশ্রুতি। মন্দিরে নিতাই গৌর বিগ্রহ সেবা হচ্ছে। বহুদিন ধরে ভিক্ষা করে নিতাই গৌরের সেবা চলছিল। কিছু বছর হল মন্দির ট্রাস্টী তৈরী করে মন্দিরের সংস্কার করা হয়েছে। শ্রীরামপুর স্টেশন থেকে চাতরা যাওয়ার পথে ঠাকুরদাস বাবু লেন এ এই মন্দির দর্শনীয়।
Sri Chaitanya Mahaprabhu's Sitting Place |
Google Map Direction Of Kasishwar pandit sripat